Search This Blog

Sunday, December 7, 2025

মোস্ট নটো্রিয়াস ডাবল এজেন্ট


মোস্ট  নটো্রিয়াস ডাবল এজেন্ট

 ১৯০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। প্যারিসে রাশিয়ান বিপ্লবীদের ‘কোর্ট অফ অনার’ একজন মানুষের ‘ডাবল এজেন্ট’ পরিচয় ফাঁস হওয়ার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। এর পরেই সেই মানুষটা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তার নিখোঁজ হওয়ার খবর বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। নিউইয়র্ক টাইমস-এর শিরোনামে লেখা হয়েছিল – ‘পুলিশ অ্যান্ড রেডস বোথ হান্ট আজেফ’ ‘আজেফ কোথায়?’ সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ‘কে প্রথমে তার কাছে পৌঁছাবে? কে তাকে হত্যা করবে, রাশিয়ান পুলিশ না বিপ্লবী?’ এর মাঝেই রাশিয়ার কিছু সংবাদপত্র দাবি করে যে, তাকে ইতিমধ্যেই খুঁজে বের করে যা শাস্তি দেওয়ার সেটাই দেওয়া হয়েছে। আবার অন্য কিছু সংবাদপত্র মানুষটাকে উরুগুয়ে, ভিয়েনা, সিম্ফেরোপল এবং নিসে দেখা গিয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ব্রিটেনের ইভিনিং নিউজ’ এক পা এগিয়ে লন্ডনের এক হোটেলে তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার দাবিও জানায়। সেই সাক্ষাৎকার নিশ্চিতভাবেই কাল্পনিক ছিল, কিন্তু ওই মানুষটার কৃতিত্ব তাতে খাটো করা যায় না। ওই সময় অবধি মানুষটা ছিল কোনও পুলিশ বিভাগের হয়ে কাজ করা সবচেয়ে সফল ‘ডাবল’ এজেন্ট। রাশিয়ায়, এরকম কাজ করা মানুষেরা খুব বেশি হলে দু’ থেকে তিন বছর কাজ করতে পারত ধরা পড়ার আগে অবধি। সেখানে আজেফ পনের বছর ধরে সফলভাবে দু’পক্ষের হয়েই কাজ করে গিয়েছিল। ধরা পড়ার সময় তার মাসিক আর্থিক প্রাপ্তির পরিমাণ ছিল এক হাজার রুবল

কে এই আজেফ?

তাকে বলা হয় মোস্ট নটোরিয়াস ডাবল এজেন্ট

ইয়েভনো আজেফ। জন্ম ১৮৬৯ সালে লিস্কাভায় এক দরিদ্র ইহুদি দর্জির পরিবারে। সাত সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। দেখতে ছিল অত্যন্ত সাধারণ। ছোটো থেকেই বিন্দুমাত্র দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো চেহারা ছিল না তার। সম্ভবত এটাই তাকে সুযোগ করে দিয়েছিল বিনা সন্দেহে এরকম কাজ করার ক্ষেত্রে। ১৮৯০ সালে পড়াশোনা শেষে সাংবাদিক ও ভ্রাম্যমাণ সেলসস্ম্যানের কাজ শুরু করে। পুলিসের বয়ান অনুসারে আজেফ, অনেক তরুণ রাশিয়ান ইহুদির মতোসরকারবিরোধী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে এমন একটা দলে যোগ দে যেখানে ভিন্নমতাবলম্বী সাহিত্য নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হতো। পুলিশ সেই দল ভেঙে দেয় এবং কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। পরিস্থিতি দেখে আজেফ ভয় পেয়ে আটশো রুল চুরি করে এবং জার্মানির কার্লসরুহ-তে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে যায় ড্যামস্ট্যাডে।

১৮৯২ সালে জার্মানিতেই আজেফ তার দ্বৈত জীবন শুরু করে। ইউরোপের এলাকায় তখন অনেক রাশিয়ান বিপ্লবী রাজনৈতিকভাবে নির্বাসিত হয়ে জীবনযাপন করছিলেনরাশিয়ান সিক্রেট পুলিশ সংস্থা ওখরানার কর্মীরা ওদের দিকে সতর্ক নজরদারি বজায় রেখেছিল। তরুণ ‘বিপ্লবী’ আজেফের অবস্থা তখন শোচনীয়। অর্থ নেই, খাবার জুটছে না। সিদ্ধান্ত নেয় যে সমস্ত বিপ্লবীপন্থী মানুষদের ও দেখতে পায় তাদের গতিবিধির খোঁজখবর জানাবে পুলিসকে। পুলিশ বিভাগ আজেফের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারে সত্যিই এর পক্ষে এ কাজ সম্ভব। তাকে কাজে বহাল করে।

সাতবছর কেটে যায় এরকম টুকটাক কাজ করতে করতে। ১৮৯৯ সালে, ওখরানা [রাশিয়ান সিক্রেট পুলিস] নির্দেশে, আজেফ রাশিয়ায় ফিরে যায়। ওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মস্কোর বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করার। নিজের বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে ‘নর্দার্ন ইউনিয়ন অফ সোশ্যাল রেভোলিউশনারিজ’ এর নেতা আন্দ্রেই আরগুনভের বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠে সে। ওর কাছে সহজেই এসে যায় এই সংগঠনের একাধিক সদস্যর নামপুলিশ সহজেই ওইসব বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার করে।

১৯০১ সালে নিজের সংগঠনের হাল দেখে আজেফকে আরগুনভ তার ফরেন নেটওয়ার্কের প্রধান নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। আজেফের পোয়াবারো হয় এর ফলে। বিপ্লবী আন্দোলনের নানান তথ্য সে পাঠাতে থাকে পুলিস বিভাগে। কাজ দেখে সন্তুষ্ট হয়ে আজেফের মাসিক প্রাপ্তি পঞ্চাশ থেকে বেড়ে পাঁচশো রুবল হয়। এভাবেই আজেফ নজরে পড়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভায়াচেস্লাভ প্লেহভের।

১৯০ সালে আজেফ আরেক বিপ্লবী গোষ্ঠী, ‘সোশালিস্ট রেভোলিউশনারী’ সংগঠনের সদস্যপদ পায়। ‘ফাঊন্ডিং মেম্বার’ ছিল সে। এই সংগঠনের সামরিক শাখা, কমব্যাট অর্গানাইজেশনসন্ত্রাসবাদ এবং হত্যাকেই বেশি গুরুত্ব দিত তাদের কাজের পদ্ধতি হিসাবে। ‘সোশালিস্ট রেভোলিউশনারী’র এক সদস্য প্লেহভের পূর্বসূরীকে একটা চিঠি দেওয়ার ছল করে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গুলি করে হত্যা করেছিল। ওই চিঠিতে ওই সংগঠন তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, সেটাই লেখা ছিল।

 সোশালিস্ট রেভোলিউশনারী’ এর কমব্যাট অর্গানাইজেশন’ এর ডেপুটি কমান্ডার নিযুক্ত করা হয় আজেফকে। এই ব্যপারটা আজেফকে এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। যতদিন সে সাধারণ সদস্য ছিল খবর পাচার করতে অসুবিধা হয়নি। সংগঠনের নেতৃত্ব পাওয়ার পর সেই কাজ করাটা অনেকটাই সমস্যাজনক হয়ে পড়ে তার পক্ষে।

 যদিও আজেফের এই পদপ্রাপ্তি দেখে প্লেহভের মনে হয় ওই সংগঠনের দিক থেকে তার আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। "আমার নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র," প্লেহভ এক ফরাসি সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বলেছিলেন। কিন্তু সোশালিস্ট রেভোলিউশনারী র সদস্যরা ইতিমধ্যেই তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছিল।নিজেকে বাঁচানোর জন্য আজেফ এই হত্যা পরিকল্পনার ব্যবহারিক দিকগুলোর দায়িত্ব অন্য সদস্যদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়। নিশ্চিত করে, যা ঘটছে বা ঘটবে তার বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে তার কিছুই জানা ছিল না এটাই যেন প্রমাণিত হয়। [যদিও মনে করা হয় এই হত্যা পরিকল্পনাও সাজিয়ে ছিল আজেফ নিজেই। গ্র্যান্ড ডিউক সেরগেই আলেজান্দ্রোভিচ কেই হত্যার পরিকল্পনা করেছিল এই আজেফ। যা সফল হয়। ] উল্টোদিকে বিপ্লবীদের বিষয়ে পুলিশকে সাধারণ এবং অস্পষ্ট তথ্য সরবরাহ করতে থাকে। জানিয়ে দেয় একটা গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসী হামলা ঘটতে চলেছে নাম না জানিয়ে এমন কিছু মানুষের বিষয়ে তথ্য জানায়, যারা ছিল বিপ্লবী সংগঠনের নিচুস্তরের কর্মী। রাস্তায় যাদের পিছু নিয়ে পুলিস সহজেই গ্রেপ্তার করে। ফলে সংগঠনের সদস্যদের মনে হয় এটা নিছক দক্ষ পুলিশি নজরদারির ফলাফল। কেউ ভাবতেই পারেনি কেউ তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। এছাড়াও নানান অছিলায় প্লেহভের উপর আক্রমণ করার দিন পিছিয়ে যেতে থাকে আজেফ। কিংবা, প্লেহভের গতিবিধি সম্পর্কে ভুল তথ্য সরবরাহ করে। প্লেহভকে বাঁচিয়ে রাখার এই চেষ্টা করে গিয়েছিল একটাই কারণে- ভালো করেই জানত ওই মানুষটার কারণেই সে নিরাপদে এভাবে কাজ করতে পারছে।

কিন্তু ওই যে বলে ভাগ্য। চাইলেও সবকিছু আটকানো যায় না। ১৯০৪ সালের জুলাই মাসে, আজেফ ওয়ারশ থেকে অন্য এক জায়গায় গিয়েছিল বিশেষ কাজে। ওই সময় তার বিপ্লবী সংগঠনে এক সদস্য সেন্ট পিটার্সবার্গের মধ্য দিয়ে যেতে থাকা প্লেহভের গাড়িতে বোমা মারে। বিস্ফোরণে প্লেহভ ছাড়াও চালক এবং ঘোড়াগুলোও মারা যায়। এই সফল হত্যাকাণ্ডর সূত্রে সোশালিস্ট রেভোলিউশনারী’দের বিপ্লবী মহলে মর্যাদা বেড়ে গিয়েছড়িয়া

আজেফের রক্ষক প্লেহভের মৃত্যু কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আজেফের জন্য একদিক থেকে আশীর্বাদেই পরিণত হয়েছিল। দলের নেতা হিসাবে এটা তার খ্যাতি বাড়িয়ে দেয়। হঠাৎ করেই যখন পুলিশের সাথে তার যোগাযোগ সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তখন বিপ্লবী মহলে একটা কথা ভাসতে থাকে, তাই যদি হবে, তাহলে প্লেহভকে হত্যার আদেশ কী করে জারি হলো?’ যদিও অনেকেই আজেফের চালচলনকে বিশ্বাস করতেন না। ভ্লাদিমির বার্টসেভ নামে একজন একগুঁয়ে সাংবাদিক আজেফের কার্যকলাপের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তার নানান ‘সোর্স’ ব্যবহার করেছিলেন। সেই সূত্রে যা প্রমাণ মেলে তা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজেফের গতিবিধির নানান খবর। তবুও আজেফের সোশালিস্ট রেভোলিউশনারী দলের সহকর্মীরা এসব কথা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে। এমনকি বার্টসেভের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে, আজেফকে কালিমালিপ্ত করার জন্য পুলিশের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে উনি এসব করছেন।

কিন্তু বার্টসেভের কাছে এমন অনেক প্রমাণ ছিল, যার ভিত্তিতে তাকে বিচারসভার সামনে হাজির হতে হয়। সেসব অভিযোগ খণ্ডন করার জন্য। প্যারিসে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সোশালিস্ট রেভোলিউশনারী দলের তরফ থেকে এক কমিটি গঠন করা হয়। নানান তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা - যারা সকলেই ছিলেন আজেফের দীর্ঘদিনের সহকর্মী – তারা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন যে, সমস্ত অভিযোগ সত্যি। আজেফ প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাসঘাতক। এসব সত্ত্বেও আজেফ সেই কমিটিকে কোনওভাবে রাজি করায়, তাকে রাশিয়া ফিরে যেতে দেওয়ার জন্য, যাতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার উপযুক্ত নথি পেশ করতে পারে। বলেছিল জলদিই গুলো নিয়ে ফিরে আসবে। ওই রাতেট্রেনে চেপে পালায় আজেফ। স্ত্রী লিউবা ম্যাঙ্কিনকে বলেছিল ভিয়েনা পৌঁছে চিঠি পাঠাবে। ওই সময় তার কাছে ছিল রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারি করা একটা জাল পাসপোর্ট এবং আর প্রচুর অর্থ। বছরের পর বছর ধরে এরকম একটা দিন আসতে পারে জেনেই আজেফ ওই অর্থ জমিয়েছিল।

আজেফের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে দলের সেন্ট্রাল কমিটি । চেষ্টা করা হয় ফ্রান্সের এক নির্জন ভিলায় তাকে নিয়ে এসে কাজ সম্পন্ন করার। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। সেদিন আজেফ মোটেই ভিয়েনা যায়নি। গিয়েছিল তার জার্মান উপপত্নীর গ্রাম ফ্রিডরিচসডর্ফে। কর্মজীবনের মতোই ব্যক্তিগত জীবনেও আজেফের গোপন পরিবার ছিল। এই মহিলার নাম হেডি ডে হিরোএকজন ক্যাবারে গায়িকা, সেন্ট পিটার্সবার্গে যাকে অনেক মানুষই চিনতেন

সংবাদপত্রের হৈচৈ থেমে যাওয়ার পর, আজেফ এবং হেডি ইউরোপ ভ্রমণ শুরু করে। এটাকে , এক ধরণের মধুচন্দ্রিমা যাপন বলাই যায়। হেডিকে দামি দামি গয়না কিনে দেয় এবং নিজে মেতে ওঠে জুয়া খেলায়। যে হোটেলেই আজেফ ঘর ভাড়া নিত, সেখানে থাকা মানুষদের তালিকা পরীক্ষা করে দেখে নিত। সবসময় ভয় পেত সোশালিস্ট রেভোলিউশনারী র সদস্যরা হয়তো তার পিছু নিয়েছে ।

এই সময়ে স্ত্রীকে অনেকগুলো চিঠি লিখেছিল বলে জানা যায়। যেখানে জানিয়েছিল পুলিসকে সে যত না সাহায্য করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেছে বিপ্লবীদের জন্য। আশা করেছিল, স্ত্রীকে লেখা এই সব কথা দলের কাছে পৌঁছাবে এবং তারা তাকে ক্ষমা করে দেবে। তার স্ত্রী অবশ্য তার এই দ্বৈত জীবনের কথা জানতন না বলেই জানিয়েছিল এবং সব সম্পর্ক ছিন্ন করে আমেরিকা চলে যায়।

এভাবে দীর্ঘ সময় ঘুরে বেড়ানোর পর আজেফ এবং হেডি বার্লিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেযেখানে তাদের পরিচয় ছিল মিস্টার এবং মিসেস নিউমায়ার হিসেবে১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে অবধি ওরা বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু সমস্য হলো আর্থিক ব্যাপারে। পুঁজি খুব একটা কমেনি, কারণ স্টক মার্কেটে অর্থ লগ্নী করত আজেফ।। সেসব ভালো পরিমাণেই ছিল আজেফের কাছে। কিন্তু তার পুঁজির বেশিরভাগটাই ছিল রাশিয়ান বন্ড, যা হঠাৎ করেই ওই সময়ের জার্মানিতে প্রায় মূল্যহীন হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে আজেফ একটা ছোট্ট দোকানে হেডির সেলাই করা পোশাক বিক্রি করা শুরু করে।

১৯১৫ সালে জার্মান কর্তৃপক্ষ আজেফকে একজন বিপজ্জনক বিদেশী শত্রু হিসেবে গ্রেপ্তার করে। স্যাঁতস্যাঁতে কারাগারে থাকার সময় কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে আজেফ। ১৯১৭ সালে অসুস্থতার কারণে মুক্তি পা। এর কিছুদিন বাদে ১৯১৮ সালের ২৪শে এপ্রিল মারা যায় সে। ফ্রিডফ উইল্মার্সডফ এর নামহীন এক কবরে তাকে সমাহিত করা হয়। সে কবর কোথায় সেটা কেবলমাত্র হেডিই জানতেন।

 ১৯১৮ সালের বসন্তকাল - রুশ বিপ্লব সাফল্য লাভ করে। এমন এক বিপ্লব যাকে সফল এবং অসফল দুটো কাজ করার জন্যই চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল বলা যায়।

 ০০০০০০

ইয়েভনো আজেফ সেই অর্থে অসাধারণ কোনও গুপ্তচরও ছিল না, প্রতারণার কাজেও সেই অর্থে ওস্তাদ ছিল না - তাহলে এতদিন ধরে তার দ্বৈত জীবন কীভাবে চালিয়ে গিয়েছিল?

মধ্যমপন্থা বলে একটা শব্দ আছে। আজেফকে সেটাই বাঁচিয়ে দিয়েছিল। শুরু থেকেই সে ছিল পরিশ্রমী মানুষ। এমনভাবে কাজ করত পুলিশ এবং বিপ্লবী উভয়ের জন্যই কিছু না কিছু সাফল্য এনে দিত। এই ছোটো ছোটো সাফল্য উভয় পক্ষর কাছেই বাড়িয়ে দিয়েছিল তার বিশ্বাসযোগ্যতা ও সদিচ্ছার মাত্রা। আজেফ নিজের হাতে কখনও বোমা বা বন্দুক চালায়নি। সন্ত্রাসবাদের মতো কাজ করার বুকের পাটা তার ছিল না। রাজনৈতিকভাবে ছিল উদাসীন - বিপ্লবে আগ্রহী ছিল না, আবার জার শাসনের প্রতিও নিবেদিতপ্রাণ ছিল না। উভয় ক্ষেত্রেই একটা ভারসাম্য বজায় রাখতে চেয়েছিল । সেই অর্থে কোনও আদর্শ অনুসরণ করত না বলে স্পষ্টতই বিবেকের কোনও যন্ত্রণা অনুভব করত না। এই জটিল আনুগত্য তাকে কেবলমাত্র তখনই সমস্যায় ফেলে দিত যখন আজেফ বুঝত তার নিজের নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে। আজেফের মানসিকতা বর্ণনা করতে গিয়ে লিওন ট্রটস্কি বলেছিলেন - ‘চতুর হওয়া এবং সূক্ষ্মতার সঙ্গে কাজ করা মানেই সবসময় সুবিধাজনক পরিস্থিতি নয়। আজেফ যদি সূক্ষ্মতা মেশানো কার্য পদ্ধতির জাল বোনার চেষ্টা করত, তাহলে সে নিশ্চিতভাবেই নিজের জালে জড়িয়ে পড়ত। শারীরিক এবং মানসিক স্তরে সে কতটা নিচ প্রবৃত্তির সেটা সবাইকে বুঝতে দিয়েই কাজ করে গিয়েছিল সবসময়। সকলেই তার সহজ সরল কাজের পদ্ধতি দেখে ভেবেছে, এ যা করে তাতে কোনও ভুল থাকে না। আর এটাই ওকে ঢাল হয়ে বাঁচিয়ে দেয়

শুরুতে যে ইভিনিং নিউজের সাক্ষাৎকারের কথা বলা হয়েছে, সেখানে আজেফ নাকি বলেছিল, “আমি তো আমার নীতি থেকে ভ্রষ্ট হইনি, কারণ আমার কোনোদিনই কোনও নীতি ছিল না। একজন বিপ্লবী এবং একজন গুপ্তচর হিসেবে আমি আমার আমার অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় সবসময় পেশ করেছি...’ এই বয়ান সত্যি হোক বা মিথ্যে এটা কিন্তু ট্রটস্কির বিশ্লেষণের সঙ্গে ভালোভাবেই খাপ খায়।

০০০০

একাধিক বই লেখা হয়েছে এই মানুষটাকে নিয়ে। সেসব থেকে এবং রিডার্স ডাইজেস্ট থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই নিবন্ধ লেখা হয়েছে।

ছবি সৌজন্য ইন্টারনেট