#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৭৮-৭৯-৮০-৮১)
স প্তম অধ্যায় - লিলি নামের একটি মেয়ে - ২য় পর্ব
প্রতিম দাস
স প্তম অধ্যায় - লিলি নামের একটি মেয়ে - ২য় পর্ব
প্রতিম দাস
সপ্তম অধ্যায়
**লিলি – একটা মেয়ের নাম**
দ্বিতীয় পর্ব
ভিক্টোরিয়া স্টেশন, কেনিয়া
২০০৩-২০০৬
০০০০০
ভিক্টোরিয়া স্টেশন
দক্ষিন কেনিয়া
২০০৩-২০০৬
কেনিয়াতে ওয়েস্টদের দল যখন ছিল
তখন একটা বড় কাঁচের জার রাখা থাকতো কিচেনের রান্না ঘরের বেঞ্চের ওপর।
এটার নাম ছিল ‘শপথ জার’ । যখনই
দলের কোনও সদস্য লিলির সামনে নিজেকে
কোনো কারনে গালাগাল দিতো বা কোনো কারনে
দিব্যি কাটতো তখনই তাকে ওই জারে একডলার করে ফেলতে হতো জরিমানা রুপে।
আর যেহেতু দলের সবাই সেনা
বাহিনীর লোক তাই জারটা ভরে উঠতে খুব একটা সময় নিতো না। জারে যে অর্থ জমতো তা দিয়ে
লিলির জন্য খেলনা, বই বা ব্যালের পোশাক কেনা হতো ।
স্বাভাবিক ভাবেই , যেহেতু ওই
জারে অর্থ জমলে ওর নিজের লাভ হবে এটা লিলি বুঝে গিয়েছিল তাই ওর একটা মজার খেলাই
ছিল সদস্যদের দিকে নজর রাখা আর ডলার জমানোর ব্যবস্থা করা। সেরকম কোনও শব্দ
সদস্যদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসলেই লিলি চেঁচিয়ে উঠতো - ‘শপথ জার!’
ফার্মে নানান কাজ করার জন্য
লিলি পকেট মানিও পেতো ।
এটা ওয়েস্ট আর উইজার্ডের চিন্তা
ভাবনার ফসল। ওর চাইছিলো ওর উন্নতি – যা অবশ্য অতিরিক্ত মাত্রাতেই হচ্ছিল –
যদিও সেটা লিলিকে দেখা বোঝা যেতনা । মনে হতো এসব ওর কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার।
অন্যান্য সদস্যদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে ফার্মের কাজ করা – বিগ ইয়ার্সের সাথে গিয়ে
কাঠ নিয়ে আসা ... পুহ বিয়াকে তার কাজের জিনিষপত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করা ...
আবার কখনো কখনো ভাগ্য ভালো হলে ওয়েস্টের অনুপস্থিতিতে হোরাসকে খাওয়ানোর সুযোগ
পাওয়া । এসব
করে লিলি যেন ভাবতে পারে সেও সবার মতো কিছু না কিছু কাজ করছে এটাই ছিল উইজারড আর ওয়েস্টের ভাবনা। । পরিবারের
অন্যতম সদস্য রুপে সেও তার দায়িত্ব পালন করছে। এসবের ফলে লিলি সেরা মানুষে পরিনত
হওয়ার সুযোগ পাবে।
০০০০০
লিলি যত বড় হতে থাকলো, ততই
বাড়তে থাকলো ওর কৌতূহল । আর এর কারনেই ওর আশেপাশে থাকা দলীয় সদস্যদের বিষয়ে অনেক কিছুই জেনে
ফেললো ও ।
উদাহরণ স্বরুপ জেনে গেল,
সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর শেখের দ্বিতীয় সন্তান পুহ বিয়ার।
উইজার্ড কোন এক সময়ে ক্যাথলিক
যাজক হওয়ার জন্য পড়াশোনা শুরু করেছিলেন কিন্তু বেশি দূর এগোননি।
জানতে পেরেছিল জো একসময়ে সেনা
বাহিনী থেকে বিশেষ ভাবে ডাবলিনের ট্রিনিটী কলেজে ভর্তি হয়েছিল উইজার্ডের কাছে প্রত্নতত্ব
নিয়ে পড়ার জন্য।
জ্যাক ওয়েস্ট ও একই সময়ে ওখানে
পড়াশোনা করেছিল জো এর সাথে - ওকেও ওর দেশ থেকে পাঠানো হয়েছিল কানাডিয়ান প্রফেসরের
কাছে শিক্ষালাভ করার জন্য।
ওয়েস্টের নিজের দেশ । অস্ট্রেলিয়া।
লিলির অস্ট্রেলিয়া বিষয়েও খুব
কৌতূহল । কৌতূহলের মধ্যে ছিল আবার অনেক সংশয় । ওই দেশটার ৮০ ভাগ এলাকা প্রায়
মরুভূমি । তবু ওখানেই নাকি আছে সুপার মডার্ন, সিডনীর মতো সব শহর । বেলস আর বন্ডীর
মতো নামকরা সমুদ্রতট । উলুরু এবং গ্রেট
ব্যারিয়ার রীফের মতো অসাধারন প্রাকৃতিক সৃষ্টি । লিলি এটাও জানতে পেরেছে শেষেরটা আবার আধুনিক
প্রাকৃতিক আশ্চর্যের তালিকার অন্তর্ভুক্ত ।
সময়ের সাথে সাথে লিলির ভেতর আর
অনেক প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিষয়ে । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর অবস্থান
কেমন সেটার সম্বন্ধে । অস্ট্রেলিয়াতে মাত্র ২০ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে । অথচ এটা
একটা বিশাল আকারের মহাদেশ , যাকে আবার বিশ্বের মানচিত্রে একটা ছোট দেশ বলে বিবেচনা
করা হয় ।
এ দেশের মিলিটারি ব্যবস্থাও বেশ
ছোটো আকারের, তবু তার একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে , পরিচিতি আছে বিশ্বের কাছে – বলা
হয়ে থাকে এক সময় এ দেশেই জন্ম নিয়েছিল বিশ্বের সবসেরা স্পেশ্যাল ফোরস, এস এ এস –
যেটার সদস্য ছিল ওয়েস্ট ।
আর একটা বিষয় লিলিকে আকর্ষণ করে
– বিশ শতকের সময়ে, অস্ট্রেলিয়া ছিল আ্মেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং অনুগত সহযোগী। ২য়
বিশ্ব যুদ্ধের সময় , কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কুয়েত, অস্ট্রেলিয়া ছিল প্রথম সারির দেশ
যারা আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছিল ।
আর এখন সে অবস্থা নেই।
এটাই ধাঁধায় ফেলে দেয় লিলিকে ।
ও ঠিক করে ওয়েস্টের কাছেই জানতে চাইবে এ বিষয়ে।
বৃষ্টি ঝরা একটা দিনে লিলি গিয়ে
ধকে ওয়েস্টের স্টাডিতে । দেখে অন্ধকারে পেন মুখে ধরে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে একমনে তাকিয়ে [ হোরাস
বসে আছে চেয়ারের পেছনের উঁচু জায়গাটায়] গভীরভাবে কিছু একটা চিন্তা করছে ওয়েস্ট ।
লিলি
ঘরটায় এদিক ওদিক ঘুরে দেখতে থাকলো । মাঝে মাঝে এটা সেটা বই নামিয়ে দেখছিল বুক সেলফ
থেকে। এর মাঝেই চোখ গেল হোয়াইট বোর্ডের সেই লেখাটার দিকে – ‘আমার জীবনের চারটে হারিয়ে যাওয়া দিন – করোনাডো?’
এখনো আছে ওটা । একই সাথে লক্ষ্য করলো সেই মরচে লাল রঙের জিনিষ ভরা জারটা সরিয়ে
ফেলা হয়েছে।
ওয়েস্ট
সম্ভবত ওর উপস্থিতি বুঝতে পারেনি, একভাবে কমপিউটার মনিটরের দিকেই তাকিয়ে ছিল।
লিলি
আস্তে আস্তে ওয়েস্টের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো । তাকালো স্ক্রিনের দিকে । কোনো একটা
দেওয়ালের গায়ে খোদাই করা বিরাট মাপের কিছু হিয়েরোগ্লিফিক্স লেখার ছবি দেখা যাচ্ছে
ওখানে। লিলি ঝটপট মনে মনে লেখাগুলোর মানে করে ফেললো –
স্ব
ইচ্ছায় প্রবেশ করো আনুবিসের আলিঙ্গনে, তবেই তুমি বেঁচে থাকবে রা’য়ের আগমনের পরেও ।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি প্রবেশ করো , তোমার লোকজনেরা এক হাজার বছর ধরে শাসন করবে সব
কিছু । কিন্তু তুমি বেঁচে থাকবে না । ভেতরে যদি একেবারেই প্রবেশ না করো না এখানে,
তাহলে এ জগতও থাকবে না।
‘কি
মনে হচ্ছে লেখাটার কি মানে লিলি ?’ ওয়েস্ট সহসাই জিজ্ঞেস করলো, মাথা না ঘুরিয়ে ।
লিলি
চমকে গেল । থমকে গেল বলাই ভালো পাথরের মূর্তির মতো । ‘আ...আমি জা...জানি না...’
ওয়েস্ট
ঘুরলো । ‘আমার মনে হচ্ছে এখানে মৃত্যু এবং তার পরবর্তী জীবন নিয়ে কিছু বলা হয়েছে।
আমুনের তরফ থেকে যীশুর মতো এক চরিত্র হোরাসকে উদ্দেশ্য করে । “আনুবিসের আলিঙ্গন”
এর একটাই অর্থ মৃত্যু । যদি হোরাস স্বইচ্ছায় মৃত্যু বরন করে, তাহলে সে আবার জীবিত
হবে এবং সেটা তার প্রজাদের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে । অনেকটাই যীশুর ক্রুশ বিদ্ধ হওয়ার মতো
ব্যাপার । যাকগে ওসব কথা থাক। কিড্ডো, কিছু দরকার আছে নাকি আমার সাথে?’
এরপর ওদের মধ্যে হলো এক বিস্তৃত
আলোচনা অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকা সম্পর্ক নিয়ে । কিভাবে আমেরিকা একক সুপার পাওয়ারে পরিনত
হলো এবং অস্ট্রেলিয়া বুঝে গেল তার বন্ধু এখন পরিনত হয়েছে বিশ্বের স্বঘোষিত
অভিভাবকে । ‘ কোনো সময়ের এক ভালো বন্ধুর,’ ওয়েস্ট বললো, ‘ ভালোবাসাটা বড্ড চাপে
ফেলে দেয় । আসলে শত্রুর কাছ থেকে কঠিন
কোনো শিক্ষা লাভ করার থেকে সেটা বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়াই ভালো । ’
তারপর
ই ওয়েস্ট বিষয় বদলে ফেললো । ‘লিলি , তোকে একটা কথা বলার ছিল। যেমন ভাবে সব কিছু
ভেবে রেখেছি সেগুলো যদি সব ঠিকঠাক ভাবে হয়ে যায় ... হবেও আশা করছি । তাহলে আমি বেশ
কিছু দিনের জন্য দূরে কোথাও চলে যাবো –’
‘দূরে
কোথাও মানে?’ লিলি অবাক হয়ে কিছু একটা সন্দেহ করে জানতে চাইলো।
‘
হ্যাঁ । দূরে কোথাও , এমন কোনো জায়গা যেখানে কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না। অদৃশ্য হয়ে
যাবো।’
‘’
অদৃশ্য ...’ লিলি ঢোঁক গিললো।
‘তবে,
লিলি আমি চাইবো, তুই আমাকে খুঁজে বের করবি,’ ওয়েস্ট বললো হাসি মুখে। ‘এখন, আমি
বলতে পারবো না আমি কোথায় যাচ্ছি । তবে তোকে আমি সুত্র দিয়ে যাবো সেখানে পৌছানোর।
যদি তুই এই ধাঁধাটার উত্তর বার করতে পারিস তবেই আমাকে খুঁজে পাবি।’
ওয়েস্ট
লিলিকে একটা কাগজ দিলো, যেটার ওপর লেখা ছিল-
যেথায়
আমার নতুন নিবাস সেথায় একসাথে থাকে বাঘ আর কুমীর
খুঁজে
পেতে সেই স্থান মাঝিকে দাও অর্থ, এবার চলো সফরে, নাও সুযোগ
মৃত্যুর
হাঁয়ের ভেতর,
নরকের
মুখ গহ্বরে ।
সেখানেই
মিলবে আমার দেখা, এক বিরাট মাপের খলনায়কের ছত্রছায়ায় ।
‘সব
কিছুই ওতে বলা আছে কিড্ডো । চলো মাথা খাটানো শুরু হয়ে যাক ।’
লিলি
এক ছুটে বেরিয়ে গেল ওয়েস্টের স্টাডি থেকে, হাতে কাগজের টুকরোটা ।
ওয়েস্টের
ধাঁধা নিয়ে কয়েক মাস ধরে মাথা ঘামিয়ে চললো – এমন কি একটা একটা করে অক্ষর সার্চ
করলো গুগলে – যদি কিছু বার করা যায়।
ওর মনে
আরো অনেক প্রশ্ন ছিল, যদিও, সে সবের উত্তরও পেয়েও গেল।
যেমন
ওয়েস্ট কোথা থেকে হোরাসকে পেয়েছিল ।
‘হোরাসের
আগের মালিক ছিল হান্টসম্যানের শিক্ষক,’ আফ্রিকার সূর্যের আলো উপভোগ করতে করতে
উইজার্ডের কাছ থেকে এটা জানতে পারলো লিলি।
‘ সেই
জঘন্য লোকটার নাম ছিল মার্শাল জুডা । জুডা একজন আমেরিকান কর্নেল । ওয়েস্টকে করোনাডো
নামের এক স্থানে শিক্ষা দিচ্ছিলো কি করে আর ভালো সেনা হওয়া যায় ।
‘কাঁধে
হোরাসকে বসিয়ে নিয়ে করোনাডোর ঘাঁটিতে
ঘুরে বেড়াতো জুডা । মাঝে মাঝেই বাজখাঁই চিৎকার করে সেনাদলকে সতর্ক করে দিতো । সাথে
সাথেই নির্দেশ মতো কাজ না করলে হোরাসকে কষ্টদায়ক শাস্তি দিতো সেনাদের দেখিয়ে
দেখিয়ে। বলতো, ‘আনুগত্য পাওয়ার একমাত্র উপায় নিয়মানুবর্তিতা আর জান্তব শক্তি
প্রদর্শন।!’
‘
হান্টসম্যান এসব পছন্দ করতো না। ফ্যাল্কন টার ওপর জুডার নিষ্ঠুরতাও ওর ভালো লাগত
না। যে কারনে করোনাডো থেকে চলে আসার সময় , জুডার অফিসে রাখা খাঁচা থেকে পাখিটাকে
চুরি করে নিয়ে আসে হান্টসম্যান। তারপর থেকে জ্যাক হোরাসকে ভালোবাসা আর আদর দিয়ে
ট্রেনিং দেয় । আর তার প্রতিদানে হোরাস ফিরিয়ে দেয় নিজের আনুগত্য যতটা ওই ছোট্ট
প্রানের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ।
‘লিলি
তুমি যখন বড় হয়ে যাবে, তখন বুঝতে পারবে এই পৃথিবীর সব মানুষ মোটেই ভালো নয় । তারা
ভালোবাসার চেয়ে নিষ্ঠুরতা বেশী পছন্দ করে। ভাগ করে নেওয়ার বদলে শাসন করাতেই তাদের
বেশি অভিরুচি । বোঝে কম রাগ করতে জানে বেশী ।
‘এই সব
মানুষেরা নিজেদের কথাই বেশি ভাবে সব সময়। ওরা সব সময় চায় অন্যদের ওপর শাসন চালাতে
। আর সেটা মতেই বাকিদের ভালোর জন্য নয় , কেবলমাত্র নিজেদের ক্ষমতার চাহিদা
চরিতার্থ করার জন্য । লিলি একদিন তুমি খুবই বড় ক্ষমতার অধিকারী হবে – বিরাট ক্ষমতার – আমি
আশা করি তুমি আমাদের এখান থেকে আর কিছু শিখতে পারো বা না পারো , এটা মনে রাখতে
পারবে যে সত্যিকারের ভালো মানুষেরা অন্যের কথা ভাবে আগে তারপর ভাবে নিজের কথা ।
‘আর
তার উদাহরণ হিসাবে বলতে পারি বেশী দূর যেতে হবে না হান্টসম্যান আর হোরাসকেই
দ্যাখো। একটা নির্যাতিত পাখি তার নিষ্ঠুর মালিককে মেনে চলত শুধু মাত্র ভয়ে ।
কিন্তু একজন সত্যিকারের প্রভুর জন্য ওই পাখি প্রান দিতেও দ্বিধা করবে না।’
একদিন,
লিলি উইজার্ডকে সাহায্য করছিল প্রাচীন কিছু পুঁথি গুছিয়ে রাখার কাজে।
পাথর
বা মাটির ট্যাবলেট , ভূর্জ পত্রের পুঁথি ইত্যাদি
পুরনো জিনিষপত্র ওর খুব পছন্দের বিষয়। ওর কাছে এ সবের অর্থ প্রাচীন জগতের
নানান রহস্যের চাবিকাঠি।
ওই বিশেষ
দিনে উইজার্ড সেই সমস্ত পুঁথিগুলো একত্র করছিল যাদের সাথে প্রাচীন স্থপতি
ইমহোটেপের নাম জড়িয়ে আছে।
লিলি
দেখতে পেলো কিছু নকসা নুবিয়া নামে এক স্থানের একটি খনি এলাকার । যার ভেতরে চারটে
স্তর আছে এবং অনেক রকম বুবি ট্র্যাপের উল্লেখ করা আছে। সব ট্র্যাপ বা ফাঁদগুলোর বিষয়ে
বিস্তারিত বিবরণ লেখা আছে ওখানে। আবার
লুকানো স্টেপিং স্টোন থাকলে তাকে মোকাবিলা করার সুত্রও। যেমন একটায় লিলি দেখতে
পাচ্ছে ইজিপশিয়ান হিয়েরগ্লিফিক্সে লেখা আছে পাঁচটা নম্বর – ১-৩-৪-১-৪ । উইজার্ড
সেটাকে রাখল একটা বিশেষ ফাইলে যার নাম “ইমহোটেপ পঞ্চম”।
একইসাথে
ও দেখতে পেলো একটা খুবই পুরোনো আঁকা ।
যেটাকে দেখে প্রাচীন দিনের কোন সাপ লুডো খেলার ছক মনে হচ্ছিল। ওটার গায়ে লেখা ছিল “ জলপ্রপাতের প্রবেশ পথ – টলেমী সোতেরের সময়
ইমহোটেপ তৃতীয় দ্বারা এর নবনির্মাণ হয়েছে ”।
ওটা
দেখতে এরকম
উইজার্ড
লিলির এসব বিষয়ে আগ্রহ দেখে ওকে বিভিন্ন ইমহোটেপদের বিষয়ে অনেক কিছু জানালেন।
তৃতীয়
ইমহোটেপ ছিলেন আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট এবং তার বন্ধু প্রথম টলেমির সময়ের মানুষ। ওনাকে বলা হতো
“দ্য মাস্টার মোট বিল্ডার” বা সবসেরা পরিখা
নির্মাণকারী– উনি নিজের দরকারে নদীদের পথ বদলে দিতে সক্ষম ছিলেন পরিখা বা বাঁধ
বানিয়ে ।
‘এটা
জলপ্রপাতের প্রবেশ পথ,’ উইজার্ড বললেন, ‘প্রাচীন ব্যাবিলনে নিশ্চিত ভাবেই এটা ছিল
অলংকৃত এক জলপ্রপাত। যার অবস্থান ছিল আজকের আধুনিক বাগদাদের কাছে। ওই দাগগুলো জলের
ধারার গতিপথ নির্দেশ করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ব্যাবিলন এলাকায় অনেক
খোঁড়াখুঁড়ি করেও এর কোন হদিশ মেলে নি ।’
লিলি
দিনের বাকি অংশটা উইজার্ডের স্টাডিরুমের এক কোনে রাখা বাক্স গুলো নাড়াচারা
করে কাটালো । অনেক পান্ডুলিপি পড়ে ফেললো , আবিষ্ট হয়ে থাকলো ওগুলো নিয়েই।
কানেই
ঢুকলো না জো এসে উইজার্ডের সাথে কথা বলা শুরু করেছে। কিন্তু ওয়েস্টের নাম যেই উচ্চারিত হলো
সঙ্গে সঙ্গে কান চলে গেল ওদের আলোচনায়।
জো বললো,
‘অনেকদিন পর আবার ওয়েস্টের দেখা পেয়ে ভালো লাগছে। অনেক বদলে গেছে যদিও সেই দিনগুলোর
তুলনায় যখন আমারা একসাথে ডাবলিনে পড়া শোনা করতাম। আগে তো কম কথা বলতোই , ইদানীং
আরো চুপচাপ হয়ে গেছে। আমি শুনেছি ও নাকি আর্মি থেকে অবসর নিয়েছে।’
লিলি
সব শুনছিল, যদিও ভান করছিল ও যেন পুঁথিগুলো পড়া আর দেখায় মেতে আছে।
উইজার্ড
হেলান দিয়ে বসলেন। ‘বাপরে, কবে কার কথা, ডাবলিন। কোন বছর যেন ছিল – ১৯৮৯? তোমরা
দুজনেই তখন কত অল্প বয়েসী । তার পর থেকে জ্যাক কত কত পথ পার করলো জীবনের ।’
‘বলুন
না আমাকে ওর কথা ।’
‘
ডেজারট স্টরম এর অভিযানের কিছু দিন পরেই ও আর্মি থেকে সরে আসে । ওয়েস্ট কেন এই
সিদ্ধান্ত নিলো এটা বুঝতে হলে তোমাকে আগে জানতে হবে কেন ও আর্মিতে যোগ দিয়েছিল ।
এর একমাত্র কারন ছিল বাবাকে খুশি করা এবং
সাথে সাথেই আক্রোশ ।
‘জ্যাকের
বাবা ছিলেন তাঁর সময়ের একজন সেরা সৈনিক । কিন্তু ওর থেকেও জ্যাক অনেক বেশি দক্ষ।
ওর বাবা চেয়েছিলেন হাই স্কুলের পাঠ শেষ করেই যেন জ্যাক সোজা মিলিটারিতে যোগ দেয় ।
কিন্তু জ্যাকের ইচ্ছে ছিল আরো পড়াশোনা করার, ইউনিভারসিটিতে যাওয়ার । কিন্তু ও
বাবার ইচ্ছেকেই মর্যাদা দেয় ... এবং খুব দ্রুতই বাবার থেকেও একজন দক্ষ সেনায় পরিনত
হয় ।
‘এস এ
এস রেজিমেন্টে জ্যাকের র্যাঙ্ক ক্রমশঃ
ওপরের দিকে উঠতে থাকে । মরুভূমি এলাকার অভিযানে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিতে থাকে
জ্যাক । ডেজারট সারভাইভ্যাল কোর্স করার সময় নতুন রেকর্ড স্থাপন করে – ৪৪দিন ও সবার নাগাল
এড়িয়ে থাকতে সমক্ষ হয় ।
‘কিন্তু
ওর বাবার মতো জ্যাকের মোটেই ভালো লাগে এই জীবনটা। এই জীবনযাত্রা ওকে যে ধরনের
মানুষে - একটা মারন যন্ত্র- পরিনত করতে থাকে তা ওর পছন্দ হয় না । যদিও ওর দক্ষতা
ওকে বানিয়ে দিয়েছিল অতিরিক্ত মাত্রার সফল মারন যন্ত্রে । ওর ওপরওয়ালারা এই
ব্যাপারটা ভালো ভাবেই জানতো, ফলে ওরা চিন্তাতেই ছিল যে ওয়েস্ট হয়তো আর্মি ত্যাগ
করবে – আর এই সময়েই ওরা ওকে পাঠায় আমার কাছে পড়াশোনা করার জন্য, ডাবলিনে। ওরা আশা করেছিল এর
ফলে ওয়েস্টের বুদ্ধিবৃত্তিগত চাহিদা মিটবে । মন শান্ত হবে এবং ও আবার আর্মিতে ফিরে
যাবে । আর আমি মনে
করি কিছু সময়ের জন্য সত্যিই ওর চাহিদা মিটেছিল ।’
‘দাঁড়ান
দাঁড়ান,’ জো বলে ওঠে । ‘জ্যাকের বিষয়ে কিছু পুরনো কথা আমার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে । ও
একবার বলেছিল ওর বাবা আমেরিকান । কিন্তু
তাহলে অস্ট্রেলিয়ান আর্মিতে যোগ দিলো কেন?’
‘সঠিক
প্রশ্ন,’ উইজার্ড বল লো, ‘ঘটনা হল এই যে জ্যাকের মা কিন্তু আমেরিকান নন। বাবাকে
খুশি করতে মিলিটারীতে যোগ দিলেও , সেই পিতার ভাবনার ওপর আক্রোশ থেকেই ও সিদ্ধান্ত
নেয় মায়ের দেশ অস্ট্রেলিয়ার আর্মিতে যোগ দেবে।‘
‘আচ্ছা
... বুঝলাম,’ জো বললো ।
উইজার্ড
বললেন, ‘ যাই হোক, তুমি তো জানোই জ্যাকের মনের স্তরটা অতি উচ্চমাত্রার। ভাবনার
তীক্ষ্ণতাও অনেক বেশী। আর সেটা থেকেই ও আর্মির জীবনটাকে সমালোচনার চোখে দেখতে শুরু করে।
ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হয় এর থেকেই ও ঝুঁকে পড়ে
প্রাচীন ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ব নিয়ে পড়াশোনার দিকে।
‘এর পর
স্বাভাবিক ভাবেই এ বিষয়ে জ্যাকের মানসিকতা আরো কঠোর হয়ে যায় যখন ওর ওপরওয়ালারা ওকে
পর পর কয়েকটা মাল্টি ন্যাশন্যাল স্পেশ্যাল ফোরসের এক্সারসাইজ এর জন্য করোনাডোতে
পাঠায় ১৯৯০ সালে – এগুলোর পরিচালনার দায়িত্বে থাকে আমেরিকানরা তাদের “সিল” ঘাঁটিতে
। যেখানে ওরা ওদের সমস্ত মিত্র দেশগুলোকে ডেকে পাঠায় এক অতি উচ্চ মানের ওয়ার-গেমসে
অংশ নেওয়ার জন্য। ছোট দেশগুলোর কাছে এগুলো ছিল দারুন রকমের সু্যোগ । অস্ট্রেলিয়া
পাঠায় ওয়েস্টকে । ১৯৯০ সালে এসব এক্সারসাইজগুলো নিয়ন্ত্রন করার দায়িত্ব ছিল
মার্শাল জুডার ওপর । যার চোখে খুব সহজেই জ্যাকের দক্ষতা ধরা পড়ে।
‘
কিন্তু এও করোনাডোতেই কিছু একটা ঘটেছিল যার খবর আমিও ঠিক মতো জানিনা। জ্যাক আহত হয়
একটা হেলিকপ্টার আযক্সিডেন্টে । অজ্ঞান অবস্থান ওকে নিয়ে আসা হয় বেস হাসপাতালে । চারদিন
ওখানে অজ্ঞান অবস্থাতেই পড়ে থাকে জ্যাক।
জ্যাকের জীবনের চারটে হারিয়ে যাওয়া দিন। ওর জ্ঞান ফিরলে ওকে দেশে ফেরত
পাথান হয়। তেমন কোনো বড় আঘাত ছিল না শরীরে । কয়েক মাস পরেই ও আবার কাজে যোগ দেয় ।
আর সেই সময়টা ছিল ১৯৯১ সালের ডেজারট স্টরম অভিযানের সময় ।
‘
জ্যাক ওয়েস্ট ছিল ১৯৯১ সালে ইরাকের মাটিতে সেইসব প্রথম মানুষদের একজন , যারা
কমিউনিকেশন টাওয়ারগুলো ধ্বংস করেছিল। দু সপ্তাহ বাদে ও দেখতে পায় ওকে কাজ করতে
হচ্ছে জুডার অধীনে। যতটা জানি জুডা নিজেই নাকি পেন্টাগনের কাছে আবেদন করেছিল
জ্যাককে ওর অধীনে পাঠানোর জন্য । অস্ট্রেলিয়া – চিরদিনই আমেরিকার অনুগত ছিল – চাহিদা মেনে
নেয়।
‘ডেজারট
স্টরম অভিযানে জ্যাক নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে নাম কামায় । শত্রু ব্যুহের ভেতর
ঢুকে কিছু অবিশ্বাস্য কাজ করে । যার ভেতর ছিল বাসরর স্কাড বেশ থেকে ধারণাতীত উপায়ে
পালিয়ে যেতে সক্ষম হওয়া। জুডা আর তার আমেরিকান বাহিনী ওকে একা ফেলে চলে আসে ও মারা
গেছে ধরে নিয়ে ।
‘কিন্তু
সব কিছু সমাপ্ত হলে দেখা যায় জ্যাক নিজের দেশে ফিরে এসেছে। সোজা যায় নিজের কম্যান্ডিং
অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনেরাল পিটার কসগ্রোভের কাছে । জানায় সে আর রেজিমেন্টের সাথে নিজের
কন্ট্র্যাক্ট রিনিঊ করতে রাজি নয় ।
‘কসগ্রোভ
আর আমার মধ্যে চেনা শোনা ছিল অনেক দিন থাকেই। খুব বুদ্ধিমান মানুষ । আমার কাছ
থেকেই জানতে পারে আমাদের এই আগত মিশনের ব্যাপারে । প্রায় সাথে সাথেই কসগ্রোভ ওয়েস্টকে স্বস্তিতে রাখার নিরাপদে রাখার প্ল্যান করে ফলে এবং ওয়েস্টকে
আমার দলে অন্তর্ভুক্ত করে দেয় । এক দীর্ঘকালীন গুরুত্বপূর্ণ মিশনে । যে মিশনের
সুত্রে জ্যাক আমার সাথে শুরু করে প্রত্নতাত্বিক গবেষনা ক্যাপস্টোন খুঁজে বার করার।
‘আর
এভাবেই ওয়েস্ট আর আমি আবার একসাথে কাজ করার সুযোগ পাই । এভাবেই আমরা খুঁজে বার করি
আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারের দুষ্প্রাপ্য পুঁথি গুলো এবং খুঁজে পাই লিলিকে আর ওর
দুর্ভাগ্যের শিকার হওয়া মাকে । আর এই জন্যেই ওয়েস্ট আজ এই মিশনে আমার সাথে কাজ
করছে।’
এরপর
আর অনেক এটা সেটা কথা বলে জো চলে যায়।
উইজার্ড
তার কাজে মন দেন ... এই সময়েই তার মনে পড়ে লিলি এখনো ওই কোনাতেই বাক্সগুলোর কাছে বসে আছে।
তাকান ওর দিকে।
‘আরে ,
লিলি , আমি তো একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি ওখানে আছো । একেবারে ইঁদুরের মতো
লুকিয়ে চুপচাপ বসেছিলে । আমি জানি না আমাদের কথা তোমার কানে গেছে কিনা, যদি গিয়ে থাকে
তাহলে ভালোই হয়েছে। হান্টসম্যান বিষয়ে
এসব কথা তোমার জানা দরকার। কারন ও অত্যন্ত ভালোমানুষ । খুবই ভালো মানুষ । কোনও সময় নিজে মুখে হয়তো বলে না কিন্তু জেনে
রাখো লিলি জ্যাক কিন্তু তোমাকে অবিশ্বাস্য রকমের ভালবাসে – সেই দিন থেকে যেদিন ও
প্রথম তোমাকে হাতে তুলে নিয়েছিল
আগ্নেওগিরির ভেতরে । জ্যাক তোমার কথা যতটা ভাবে ততটা এ বিশ্বের আর কিছুর
কথা ভাবে না।’
০০০০০
ওটা ছিল
লিলির কাছে অনেক কিছু জানার ও বোঝার দিন।
তবে
সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল সেটা যেদিন ও ওয়েস্টের প্লেনটার বিষয়ে নানান তথ্য জানতে পারে ।
হ্যালিকারনাসসাস
অনেক দিন ধরেই একটা বিষ্ময়ের ব্যাপার লিলির কাছে। যেদিন থেকে ও জাম্বো জেট ব্যাপারটা
কি বুঝতে পেরেছে সেদিন থেকে – আর এর দাম কিরকম হতে পারে সেটা জানার পর থেকে – আর
সেটাই ওকে অবাক করে দিয়েছে একটা মানুষ কি করে একটা ৭৪৭ বিমানের মালিক হতে পারে।
একদিন
ব্রেকফাস্টের সময় লিলি জানতে চেয়েছিল, ‘ওই প্লেনটা আপনি কোথা থেকে পেলেন?’
টেবিলে
বসে থাকা জো, স্ট্রেচ আর উইজার্ড প্রশ্ন টা শুনে হাসি চাপার চেষ্টা করছিল ।
ওয়েস্টের
মুখটায় ছিল দুষ্টুমির ছাপ । ‘কাউকে বলে দিও না কিন্তু, আমি ওটা চুরি করেছি।’
‘আপনি
ওটা চুরি করেছেন? একটা গোটা এরোপ্লেন আপনি চুরি করেছেন! চুরি করাটা কি ভালো কাজ?’
‘না
মোটেই ভালো কাজ নয়,’ জো বললো । ‘তবে হান্টসম্যান হ্যালিকারনাসসাসকে চুরি করেছিল খুব খারাপ
একজন মানুষের কাছ থেকে ।’
‘কে
সে?’
‘উইজার্ড
উত্তর দিলো, ‘সাদ্দাম হুসেন নামের একজন মানুষ । ইরাকের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি,
সাঙ্ঘাতিক ধরনের একজন মানুষ । ১৯৯১ সালে হান্টসম্যান ওটা চুরি করে ।’
লিলি
জানতে চাইলো, ‘আপনি মিঃ হুসেনের প্লেন চুরি করেছিলেন কেন?’
ওয়েস্ট
একটু সময় নিলো উত্তর দেওয়ার জন্য। আসলে লিলিকে বলার জন্য কথা গুলো সাজিয়ে নিলো
সাবধান ভাবে।
‘সেই
সময়ে আমি ছিলাম এমন একস্থানে যার নাম বাসরা । ভালোই ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম। আর সেই
ঝামেলা থেকে বেঁচে বেরিয়ে আসার একমাত্র
রাস্তা ছিল মিঃ হুসেনের ওই প্লেন। ওই প্লেনটা ওখানে রাখা ছিল যদি দেশ ছেড়ে মিঃ
হুসেনের পালানোর দরকার পড়ে সেজন্য।’ ওয়েস্ট চোখ টিপলো । ‘ আমি এটাও জানতাম ইরাকের
বিভিন্ন স্থানে এরকম প্লেন বেশ কিছু রাখা ছিল ওই একই কারনে ব্যবহার করার জন্য ।
ফলে এই একটা বিমান ওর কাছ থেকে নিয়ে নিলে ওনার তেমন কোন সমস্যা হবে না বলেই আমার
মনে হয়েছিল।’
‘প্লেন
টার নাম হ্যালিকারনাসসাস দিয়েছেন কেন? ওই নামের জায়গাতেই তো একটা সমাধি মন্দির আছে
, তাই না?’
ওয়েস্ট
হাসলো লিলির অতি সহজে ইতিহাসের সুত্র টেনে আনা দেখে। ‘আমি ঠিক জানি না , থাকলেও
থাকতে পারে। মিঃ হুসেন ওটাকে ওই নামেই ডাকতেন । আমিও ওই নামটাই রেখে দিয়েছি। আমি
জানিনা কেন উনি এই নামটা রেখেছিলেন। তবে মিঃ হুসেন নিজেকে মনে করতেন পারস্যের একজন
সেরা শাসক । ওই মৌসোলাস বা নেবুচ্যাডনেজারের মতো । যদিও উনি মোটেই ওদের মতো ছিলেন
না। একজন বড়সড় গুন্ডা বলা যেতে পারে ওনাকে ।’
ওয়েস্ট
উইজার্ডের দিকে ঘুরে তাকালো । ‘হ্যালিকারনাসসাসের কথায় মনে পড়লো , নতুন করে
সাজানোর কাজ কতো দূর? মার্ক ৩ রেট্রোগ্রেডগুলো লাগানোর ব্যবস্থা করেছেন?’
‘প্রায়
হয়ে এসেছে,’ উইজার্ড বললেন। আমরা ওটার ওজন তিনভাগের একভাগ কমাতে পেরেছি। আটটা
এক্সটারনাল রেট্রোগ্রেড থ্রাস্টার লাগানো হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখাও হয়েছে । আর
মার্ক ৩ গুলো ৭৪৭ এর পুরোনো ইঞ্জিনের সাথে ভালোই কাজ করছে –ওটার ভারসাম্য সত্যিই
অসাধারন । ভি টি ও এল এর জন্য দারুন, যদি তোমার কাছে পর্যাপ্ত ফুয়েল থাকে। এই
শনিবার আমি আর স্কাই মনস্টার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করবো। ওই দিন ইয়ার প্লাগ পড়ে
থেকো সবাই।’
‘অবশ্যই।
আমাকে জানিয়ে দিও আগেভাগে।’
লিলি
বুঝতে পারলো না ওরা কি নিয়ে কথা বলছেন।
ও, আর
একটা কথা... ব্যালের প্রতি লিলির উৎসাহ একই রকম বজায় আছে।
ও অনেকগুলো
শো করেছে – এমন শো যেখানে ওর জন্য বানানো হয়েছিল ছোট্ট স্টেজ । ব্যবস্থা ছিল
কারটেন খোলা বন্ধর। সবকটা শো দেখেই দলের সদস্যরা দারুন ভাবে হাততালি দিয়ে ওকে উৎসাহিত
করেছেন।
এরকম
এক শোয়ে , লিলি বড়মুখ করে ঘোষণা করে ও ব্যালে নাচের এক কঠিন মুদ্রা বুড়ো আঙ্গুলের
ওপর দাঁড়িয়ে থাকা টানা এক মিনিট ধরে করে দেখাবে। যদিও ৪৫ সেকেন্ডের বেশী পারেনি,
আর তার ফলে বেচারি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিল।
সকলেই
অবশ্য অনেক অনেক প্রশংশা করেছিল।
যেমন
একটি পরিবারের সদস্যরা করে থাকে অন্যদের জন্য।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
[সপ্তম অধ্যায় শেষ । অষ্টম অধ্যায় “কাবুলের
কৃষ্ণাঙ্গ পুরোহিত” । https://amarkolponarjogot.blogspot.com/2017/10/blog-post.html