#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৮২-৮৩-৮৪-৮৫-৮৬-৮৭)
সম্পূর্ণ অষ্টম অধ্যায় - কাবুলের কৃষ্ণাঙ্গ পুরোহিত
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০০০
সম্পূর্ণ অষ্টম অধ্যায় - কাবুলের কৃষ্ণাঙ্গ পুরোহিত
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০০০
অষ্টম
অধ্যায়
কাবুলের
কৃষ্ণাঙ্গ পুরোহিত
আটলান্টিক
মহাসাগরের ওপরের আকাশপথ
১৭ই
মার্চ ২০০৬
টারটারাসের
আগমনের তিনদিন আগে
গুয়ান্তানামো বে তে ঝটিকা আক্রমণের বারো ঘণ্টা পর জামাইকার প্রান্তিক এলাকা কিংস্টনের বাইরের এক
এয়ার ফোরসের এলাকা থেকে হ্যালিকার নাসসাস উঠিয়ে নিলো উইজার্ড, লিলি আর হোরাস কে ।
প্রয়োজনীয় তেল এবং অন্যান্য সামগ্রীও নিয়ে নেওয়া হয়েছে । আপাতত উড়ে চলেছে আটলান্টিকের
ওপর দিয়ে ইউরোপ-আফ্রিকা অভিমুখে ।
আবার
সবাই বসে আছে মেইন কেবিনে । বৃত্তাকারে , ছড়িয়ে ।
সকলের
নজর একটাই মানুষের দিকে – মুল্লাহ মুস্তাফা জাঈদ, কাবুলের ব্ল্যাক প্রিস্ট বা
কৃষ্ণাঙ্গ পুরোহিত ।
গুয়ান্তানাম
বে থেকে পালিয়ে আসার পর , ওয়েস্ট একটা লাঠির মতো দেখতে এ এক্স এস-৯ ডিজিট্যাল স্পেক্ট্রাম
অ্যানালাইজার দিয়ে জাঈদের পুরো শরীর স্ক্যান করে ।
স্বাভাবিক
ভাবেই সন্ত্রাসবাদীটার ঘাড়ের কাছে লাঠিটা পৌছাতেই ওটাতে বিপদ সংকেত ধ্বনিত হয়
। জানিয়ে দেয় নিশ্চিত ভাবেই একটা জিপিএস লোকেটর মাইক্রোচিপ জাইদের চামড়ার ভেতরে বসানো
আছে।
সার্জারি
করার দরকার পড়েনি । ওয়েস্ট একটা ডিস্যাব্লিং গান থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ছঁড়ে দিয়ে
লোকেটর মাইক্রোচিপটাকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় । ওটা
পরিণত হয় একটা প্লাস্টিকের টুকরোতে ।
জাঈদ
আপাতত মেইন কেবিনে সবার নজরের সামনে – সবার
চোখ ওর দিকে থাকলেও জাঈদ তাকিয়ে আছে লিলির দিকে।
একটা
আহত হরিণ শিশুর দিকে একটা হায়েনা যে ভাবে তাকায় জাঈদের তাকানোর ধরনটাও সে রকম –
মুখে চোখে ফুটে উঠছে এক জান্তব ক্ষিধে, ইচ্ছে । সাথেই এক ধরনের অবিশ্বাস, যা বলছে,
আরে এরকম একটা খাদ্য এখানে ওর সামনে অবস্থান করছে!
জাঈদের
শারীরিক গঠন ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতন। যদিও এই মুহূর্তে ওকে স্নান করিয়ে পরিষ্কার জামা
কাপড় পড়ানো হয়েছে।
কামানো
মাথা, খোঁচা খোঁচা দাড়ি সমেত ছুঁচলো থুতনি, কোটরাগত চোখ আর শীর্ণ চেহারা । মানুষের চেয়ে ওকে ভুত বললে বোধ হয় ঠিক বলা হবে।
একটা হেঁটে চলে বেড়ানো কঙ্কাল । তিন বছর ধরে ক্যাম্প ডেল্টার সলিটারী কনফাইনমেন্ট
মানুষকে কি করতে পারে তার জলজ্যান্ত প্রমান।
কেবিনের
পরিষ্কার আলোতে একটা অদ্ভুত বিষয় সবার চোখে ধরা পড়েছে । জাঈদের বাঁ কানের অর্ধেকটা
চেঁছে কাঁটা ।
সাময়িক
ঘোর কাটার পর জাঈদ এক এক করে দলের বাকি সদস্যদের দিকে তাকিয়ে দেখলো ।
‘ আরে
বাঃ! দারুন ব্যাপার! ইন্টারেস্টিং ব্যাপার,’ বললো । ইঁদুরের দল গর্জন করছে । এ
বিশ্বের দুই সিংহ ইউরোপ আর আমেরিকার বিরুদ্ধে খেলায় নেমেছে।’
উইজার্ডের
দিকে তাকিয়ে বললো, ‘দেখতে পাচ্ছি কানাডাকে। আয়ারল্যান্ডও আছে,’ জো এর দিকে মাথা
ঝুঁকিয়ে বললো । ‘প্রাচীন লিপির বিদ্বান মানুষ আপনারা।’
স্ট্রেচকে
দেখেই নেমে গেল গলার স্বর, ‘ ইজ্রায়েলকেও দেখতে পাচ্ছি । কাটসা কোহেন, মাস্টার
স্নাইপার । অনেক
দিন পর দেখা হলো আমাদের। শেষ বার দেখা হয়েছিল কান্দাহারে, ২০০০ গজের ভেতরে পেয়ে
গিয়েছিলে আমাকে। কি করে মিস করেছিলে, এখনো ভাবনার বিষয়।’
স্ট্রেচ
গলা খাঁকারী দিলো । মুখের ভাব দেখেই বোঝা গেল মুস্তাফা জাঈদের প্রতি ওর বিতৃষ্ণার
পরিমাণ কতোটা ।
জাঈদ আধখানা
কানের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো, ‘আর একটু হলেই কাম তামাম ।’
স্ট্রেচ
গরগরে স্বরে বললো, ‘পরের বার সুযোগ পেলেই ...’
‘আহা...
আহা, কাটসা, আমি এখন তোমার অতিথি এবং খুব দামী অতিথি । আমাকে যে কাজের জন্য নিয়ে
এসেছো ওহে ইহুদী’ – জাঈদের চোখে শীতল ভাব – ‘ তাতে তোমার ব্যবহার আরো ভদ্র সম্মানজনক
হওয়া দরকার।’
এবার
চোখ পড়লো পুহ বিয়ারের ওপর ।
‘ আহ,
এই তো একজন ভালো মুসলমান । তুমি সেখ আনজার আব্বাসের ছেলে , তাই না ? গ্রেট
ক্যাপ্টেন রশিদ আব্বাস । কম্যান্ডার, এলিট ইউ এ ই ফার্স্ট কম্যান্ডো রেজিমেন্টের
...’
‘ ভুল
হচ্ছে, আমি সে নই,’ পুহ বিয়ার উত্তর দিলো । ‘রশিদ আব্বাস আমার দাদার নাম। আমি
জাহির আব্বাস, অনুগত সার্জেন্ট এবং শেখের দ্বিতীয় সন্তান ।’
‘শেখ
আল্লাহ’র একজন প্রকৃত পরিচারক,’ জাঈদ সম্মানের সাথে মাথা ঝুঁকালো। ‘ তার
উত্তরাধিকারি হিসাবে তোমাকেও আমার সম্মান জানাই।’
সবার
শেষে জাঈদ ওয়েস্টের দিকে ঘুরলো । হোরাস কে কাঁধে নিয়ে বসে ছিল ওয়েস্ট।
‘ আর
আপনি, জন ওয়েস্ট জুনিয়র ক্যাপ্টেন জন ওয়েস্ট জুনিয়র , অস্ট্রেলিয়ান স্যাসের সদস্য।
হান্টসম্যান। একটা নাম যা মিডল ইস্টে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় অশরীরীর মতো । আপনার কাজকর্মতো
লেজেন্ডে পরিনত হয়েছে। বাসরা থেকে আপনার পালিয়ে যাওয়া হুসেনের মনে একটা দাগ ফেলে দিয়েছিল। জানেন নিশ্চয় ।
যেদিন ধরা পড়ে সেদিন অবধি ওনার মনে মনে একটা চাহিদা ছিলই বিমানটা ফেরত পাওয়া ।
কিন্তু আপনিও এক দীর্ঘ সময়ের জন্য একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন । পৃথিবীর বুক থেকেই যেন হারিয়েই গেলেন । অতি মাত্রায় অদ্ভুত একটা –’
‘অনেক
বক বক হয়েছে,’ ওয়েস্ট বললো। ‘জিউস এবং
আরটেমিস আশ্চর্য দুটো কোথায় আছে?’
‘ আরে,
তাইতো। আমি দুঃখিত । প্রাচীন আশ্চর্য । টারটারাস চলে এলো বলে । হুম ম ম । মাপ
করবেন ক্যাপ্টেন ওয়েস্ট । আমি কিন্তু এখনো বুঝতে পারিনি আপনার এই বিশ্বাসের কারণটা কি
যে, আমি আপনাকে প্রাচীন আশ্চর্যগুলো খোঁজার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবো।’
‘
ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা এর মধ্যেই তিনটে ক্যাপস্টোন টুকরো হাতে পেয়ে গেছে,’
ওয়েস্ট মুখস্ত বলার মতো বলে গেল। ‘ওরা এসব কাজ করার জন্য ওদের কাছে সবরকম তথ্য
যেমন আছে তেমনি ওদের সরঞ্জাম ও অতি উচ্চমাত্রার । আর এর সাহায্যে ওরা পুরো ক্যাপস্টোনটাই
হাতিয়ে নিতে সক্ষম হবে। এটা শুনতে কেমন লাগছে?’
‘আর
বেশি কিছু না বললেও চলবে,’ জাঈদ বললো । ‘তা আমেরিকান বাহিনীর নেতৃত্ব কে দিচ্ছে?
মার্শাল জুডা?’
‘হ্যাঁ
।’
‘এক
সাঙ্ঘাতিক শত্রু। বুদ্ধিমান এবং হিংস্র । সাথেই খুনি মানসিকতা । তা আপনি কি জানেন
ওর একটা অদ্ভুত দুর্বলতা ও আছে?’
‘মানে?’
‘বেশি
উঁচুতে উঠতে ভয় পায়। না আমি অন্য দিকে চলে যাচ্ছি। আপনি আমাকে আপনাদের কাজ কি রকম
হয়েছে তার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন । আমার ধারনা আপনারা ক্যালিম্যাচুসের পাণ্ডুলিপি ব্যবহার
করছেন । তার মানে আপনারা কলোসাস কে খুঁজে পেয়েছেন সবার আগে? ডানদিকের লকেটটাই ছিল ওটা
তাই না?’
‘ইয়ে ... হ্যাঁ,’ ওয়েস্ট অবাক হয়ে বললো।
‘এর
পরেই আপনারা গিয়েছিলেন বাতিঘর আর সমাধি মন্দিরের টুকরো দুটোর খোঁজে, তাই না?’
‘
এভাবে পর পর যেতে হবে আপনি জানলেন কি করে?’
জাঈদ
নাটকীয় ভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো । ‘এটাই তো স্বাভাবিক । এভাবেই তো ওর বিন্যাস ।
ক্যালিম্যাচুসের পান্ডুলিপি লেখা হয়েছে থথের শব্দাবলী দিয়ে – সবচেয়ে প্রাচীন এবং
জটিল ভাষা । এই ভাষার নির্মাণ হয়েছে পর পর সাতটি উন্নত এবং জটিল স্তরে , যদি বুঝতে
চান । আপনাদের পক্ষের এই ভাষার অল্পবয়সী পাঠিকা’ – লিলির দিকে ইঙ্গিত করলো – ‘এক একবারে
এক একটি লেখাই পড়তে পারছে, তাই না? এর কারন ক্যালিম্যাচুসের পান্ডুলিপি লেখা হয়েছে
ক্রমশঃ জটিল হতে থাকা থথের ভাষায় । কলোসাসের বিষয়ে লেখা হয়েছিল “থথ ১” পদ্ধতিতে,
যা সবচেয়ে সহজতর। বাতিঘরের সুত্র “থথ ২”,
যা সামান্য কঠিন। অর্যাকল সব ভাষাই পড়তে পারবে কিন্তু এক বারে নয় । ’
উইজার্ড
উত্তেজনার চরমে পৌছে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি থথের শব্দাবলী পড়তে পারেন?’
‘হ্যাঁ,
আমি ওটার প্রথম চারটে সুত্র ডিসাইফার করতে পেরেছি।’
‘কিন্তু,
কিভাবে?’
‘আমি
নিজে নিজে চেষ্টা করে শিখেছি,’ জাঈদ বললো । ‘ ধৈর্য আর নিয়মানুবর্তিতা । ওহো ভুলেই যাচ্ছিলাম পশ্চিমী
সভ্যতায় তো আবার এ দুটোকে ইদানীং কালে
দক্ষতা রুপে সম্মান দেওয়া হয় না ।’
‘ আপনি
কি করে জানতে পারলেন সমাধি মন্দিরের টুকরো বাতিঘরের টুকরোর সাথেই রাখা আছে?’ জো
জানতে চাইলো ।
‘দীর্ঘ
৩০ বছর ধরে বেনবেন এর সাথে সম্পর্কিত সব পুঁথি, খোদাই লিপি এবং নানান তথ্যাদি যা
আমার নাগালে এসেছে আমি সব মন দিয়ে অধ্যয়ন করেছি। যার মধ্যে কিছু অত্যন্ত
দুস্প্রাপ্য এবং বিখ্যাত ।
ক্যালিম্যাচুসের পাণ্ডুলিপিও ছিল সেখানে। নবম শতাব্দীর একটি কপি। এছাড়াও কত
শত লেখনী। যেখানে মানুষেরা তাদের কাজের বিবরণ নথিভুক্ত করে গেছেন। কেউ জানিয়েছেন
পুরো একটা নকল পাথুরে দেওয়ান বানানোর কথা, আবার কেউ লিখে গেছেন শ্বেত পাথরের
স্তম্ভকে স্তিমিত থাকা আগ্নেওগিরির ভেতরে নিয়ে যাওয়ার বিবরণ। আমার সংগ্রহ তালিকা
বিরাট।’
‘ক্যালিম্যাচুসের
পান্ডুলিপি জিউস আর আরটেমিসের টুকরো খোঁজার ক্ষেত্রে কোনও সূত্রই দিতে অক্ষম,’
ওয়েস্ট বললো । ‘জিউসতো হারিয়ে গেছে । আর আমাদের ধারনা আরটেমিস এর টুকরো
লুকানো আছে সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকার কোনো এক স্থানে।
কিন্তু স্থানটা সঠিক ভাবে বুঝতে পারছি না। আপনি কি জানেন ও দুটো কোথায় আছে?’
‘জাঈদের
চোখ কুঁচকে গেল । ‘সময় এবং যুদ্ধ এই দুটো টুকরোকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে
গেছে । কিন্ত হ্যাঁ, আমি জানি , বিশ্বাস করি যে ওদুটো এখন কোথায় আছে।’
পুহ
বিয়ার সামনের দিকে ঝুঁকে এলো । ‘আপমি যদি এতো কিছু জানতেন , তাহলে এগুলো উদ্ধার
করার জন্য নিজে কোনোদিন চেষ্টা করেন নই
কেন?’
‘হে
আমার মুসলিম বন্ধু, আমার সামর্থ্য থাকলে আমি অবশ্যই চেষ্টা করতাম,’ জাঈদ মোলায়েম
স্বরে উত্তর দিলো । ‘ কিন্তু আমি সে সময়ে আজকের মতো সক্ষম ছিলাম না।’ কথাটা বলেই
জাঈদ ডানপায়ের প্যান্ট ওপর দিকে ওঠালো । দেখা গেল আগুনে ঝলসে পুড়ে যাওয়া পায়ের
নিম্নভাগ।
‘১৯৮৭
সালে সোভিয়েতদের ফ্র্যাগমেন্টেশন গ্রেনেডের উপহার । অনেক বছর আমি এর জন্য হাঁটা
চলাই করতে পারিনি । আর যে মানুষ ঠিক মতো হাঁটতে পারেনা তার পক্ষে ফাঁদে ভরা এলাকা
মোটেই ভালো কিছু নয় । ৯০ সালের ভেতর আমার পেশীগুলো পুনরায় ঠিকঠাক শক্তি ফিরে পায়। এসময়ের
মধ্যে আমি ক্যাপস্টোন নিয়ে অনেক পড়াশোনা করে ফেলি। নিউ ইয়র্ক আর ওয়াশিংটন ডিসিতে
যখন আক্রমণ হয় সে সময়ে আফগানিস্থানে আমি মুজাহিদিনদের একটা দলকে ট্রেনিং দিতেও শুরু
করে ছিলাম ক্যাপস্টোনের টুকরোগুলো উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু এর পরেই ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ঘটে আর
সারা আফগানিস্থানে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা । আমি আমেরিকানদের হাতে ধরা পড়ি । এখন অবশ্য আমার পা অনেক
শক্ত ।’
‘জিউস
আর আরটেমিসের টুকরো দুটো,’ ওয়েস্ট বলে ওঠে, ‘এখন কোথায় আছে?’
জাঈদ
একটা ধূর্ত হাসি হালো । ‘মজার
ব্যাপার কি জানেন, ওই দুটো টুকরো কোথাও লুকানো ও নেই বা কিছুর আড়ালে রাখাও নেই।
দুটোই একেবারে চোখের সামনে রাখা আছে – শুধু জানতে হবে ঠিক কোথায় তাকানো দরকার।
আরটেমিসের টুকরোটা , হ্যাঁ, রোমের সেন্ট পিটারস এই রাখা আছে। আমুন-রা প্রথার
সবচেয়ে পবিত্র স্থানে । আর জিউসের
টুকরোটা ...’
জাঈদ
চেয়ারে হেলান দিয়ে স্মৃতি থেকে চেনা কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করলো –
‘কোনো বজ্রই
ছিলনা তার হাতে, ছিল কোনো অভিশাপের জোর ,
কোনো জয়ই
করেনি সে অর্জন ।
অবশ্যই সেই
একমাত্র বিজয় যা তার ডান হাতে ছিল...
তাকে বানিয়েছিল
মহান,
ওহে ডানাওয়ালা
মানবী, কোথায় যাচ্ছ তুমি উড়ে? ’
জাঈদ ওয়েস্টের
দিকে তাকালো। ‘কেবলমাত্র ডান হাতের সেই বিজয় ওকে বানিয়েছিল মহান।’
ওয়েস্ট লাইনটার মানে এবার
বুঝতে পারলো । ‘ অলিম্পিয়াতে জিউসের মূর্তির ডান হাতে ছিল আর একটা ছোট মূর্তি
। “ডানা ওয়ালা বিজয়িনী” – গ্রিসের দেবী নাইকি। এক মহিলা যার পিঠে ডানা ছিল। পরীর
মতো বা জাহাজের সামনে লাগানো মূর্তিগুলোর মতো । জিউসের মূর্তিটা ছিল অতিকায়, ফলে
ডানাওয়ালা বিজয়িনীর মূর্তিটার মাপ ছিল প্রমান সাইজের একজন নারীর মতোই ।’
জাঈদ বললো,
‘একদম ঠিক । আর এই ডানাওয়ালা বিজয়িনীই যদি ওকে মহান বানিয়ে থাকে তাহলে আমাদের
জিউসের দিকে নজর দেওয়ার দরকার নেই । এর পরেই কবিতায় জানতে চাওয়া হয়েছে , কোথায় সে
উড়ে গেল?
‘এবার কথা ৎলো , আমার মনে
হয় আপনি জানেন প্রাচীন গ্রীসে এধরনের অনেক ডানাওয়ালা বিজয়িনীর মূর্তি পাওয়া গেছে ।
তবে জিউসের মূর্তির নির্মাতা ফিডিয়াস এর কাজের পর্যালোচনা করে আমি একটাই ডানাওয়ালা বিজয়িনী মূর্তির খোঁজ পেয়েছি যাতে ওই মানের
শিল্প আছে। নিখুঁত লাইন, নিখুঁত অবয়ব এবং শ্বেত পাথরের গায়ে ভিজে কাপড়ের এফেক্টের
অসম্ভব নিপুণ খোদাই কর্ম ।
‘যে নমুনা আমি
খুঁজে পেয়েছি সেটা বর্তমান পৃথিবীতে প্রাচীন গ্রীক স্কাল্পচারের সবচেয়ে
উৎকৃষ্ট কাজ । যদিও পশ্চিমী বিদ্বানরা ওটাকে কোন এক অজানা শিল্পীর কাজ বলেই ছাপ্পা
মেরে দিয়েছেন। ১৮৬৩ সালে ওটার ওটা খুঁজে বার করেন এক ফরাসী প্রত্নতত্ববিদ , চারলস
চ্যাম্পয়সিউ –’
‘এ হতেই পারে
না ...’ উইজার্ড ঢোঁক গেলেন বিষয়টা বুঝতে পেরে । ‘এটা মোটেই হতে...’
জাঈদ মাথা
ঝোঁকায় । ‘সেইটাই । চ্যাম্পয়সিউওটাকে খুঁজে পান স্যামোথ্রেস নামের এক গ্রীক দ্বীপে
। যে কারনে আজ ওই স্ট্যাচুর পরিচিত নাম স্যামোথ্রেসের ডানাওয়ালা বিজয়িনী।
‘ওটাকে
ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়া হয় , যেখানে ওটার শিল্পের প্রকৃত মর্যাদা মেলে। যে কারনে ওটার
স্থান হয় ল্যুভর মিউজিয়ামে। আজ অবধি ওটা ওখানে তার সব মহিমা নিয়ে বিরাজ করছে ডারু
স্টেয়ারকেসের একেবারে ওপরে । প্যারিসে,
ল্যুভরের ডেনন উইং এর উঁচু গম্বুজাকৃতি ছাদের নিচে ।’
হ্যালিকারনাসসাস
চললো ইউরোপ অভিমুখে ।
সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়েছে দলকে দুভাগে ভাগ করা হবে ।
ওয়েস্ট এর
নেতৃত্বে একটা দল যাবে প্যারিসে জিউসের টুকরোটা হাসিল করার জন্য । অন্যদিকে
উইজার্ড যাবে ছোট দল নিয়ে রোমে । আরটেমিসের টুকরো উদ্ধারে। জাঈদ হ্যালিকারনাসসাসেই
থাকবে স্কাই মনস্টারের সাথে । নিরাপদে ...বন্দী অবস্থায় ।
দলের সবাই
আপাতত বিমানের এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। কেউ বিশ্রাম নিচ্ছে। কেউ
গবেষনায় ব্যস্ত । আবার কেউ আগত মিশনের ভাবনায় মশগুল।
পুহ বিয়ার তার
বন্দুকগুলো দেখে শুনে নিচ্ছিলো চেয়ারের সাথে হ্যান্ডকাফ বদ্ধ অবস্থায় থাকা মুস্তাফা জাঈদের কাছে বসে ।
জাঈদ ফিসফিস
করে ডাকলো, ‘হ্যালো, ভাই বেরাদর । আল্লাহ তোমায় অনেক রহমত করুন এবং সুখে রাখুন।’
‘আপনাকেও,’
পুহ বিয়ার অভ্যাসসিদ্ধ ভাবে একজন একনিষ্ঠ ধর্মীয় মানুষ রুপে উত্তর দিলো।
‘তোমার পিতা ,
শেখ , একজন খুব ভালো মানুষ,’ জাঈদ বললো। ‘একজন প্রকৃত মুসলমান।’
‘ কি বলতে
চাইছেন বলুন তো?’
‘ওই ইহুদিটার
উপস্থিতি আমার ঠিক ভালো লাগছে না,’ জাঈদ সোজাসুজি বললো , স্ট্রেচের দিকে মাথা নেড়ে
। যে মেইন কেবিনের শেষের দিকে বসেছিল। ‘আমি বুঝতে পেরেছি যে তোমার পিতা এই পশ্চিমীদের সাথে যুক্ত হয়েছেন ভালো কাজ
করার জন্য । কিন্তু আমার বিশ্বাস হয়না উনি ওই ইহুদী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে
পছন্দ করতেন।’
পুহ বিয়ার
উত্তর দিলো, ‘এই মিশনে ইজ্রায়েলিদের ডাকা হয়নি । যেকোনো ভাবেই হোক ওরা আমাদের মিশনের
খোঁজ পেয়ে যায় – হুমকি দেয় আমাদের মিশনের কথা ফাঁস করে দেবে যদি না আমরা ওকে দলে
নিই ।’
‘তাই নাকি?
একেবারে যা ওদের স্বভাব সেটাই করেছে,’ জাঈদ হিসহিসে কন্ঠে বললো। ‘ বেরাদর আমি খুব খুশি
যে তুমি এই মিশনে কাজ করছো। ক্যাপস্টোনকে দ্বিতীয়বার একত্র করাটা মানব ইতিহাসের এক
বিশাল মুহূর্ত হিসাবেই ধরা যেতে পারে। সব
কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার আগে , সকলেই যে যার নিজের আসল রুপটা দেখিয়ে দেবে। যখন সময়
আসবে আল্লাহর অনুচরদের একসাথে কাজ করতে হবে।’
পুহ বিয়ার
নিচের দিকে দৃষ্টি নামালো ।
বিমানের শেষ
প্রান্তে ওয়েস্টের অফিসের ভেতরে , উইজার্ড, জো, বিগ ইয়ার্স আর ওয়েস্ট- হ্যামিল
কারের ভুলে যাওয়া বাসস্থানে পাওয়া -
বাদামি রঙের চামড়ায় বাঁধানো ডায়েরিটা পড়ায় ব্যস্ত। হারম্যান হেসলারের নোট
বুক। যেখানে বিস্তারিত ভাবে উনি লিখে গেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তাদের সাতটি
প্রাচীন আশ্চর্য খোঁজার বিবরণী ।
জার্মান ভাষা
থেকে অনুবাদ করার পর , ওরা অনেক ত থ্য খুঁজে পেলো যা ভালোই বোঝা যাচ্ছে –
থথের ভাষা –
নানান ধরনের কথ্য ভাষার প্রয়োগ, ক্রমাগত জটিল ...
অর্যাক ল কে
খুঁজে বার করতে হবে সঠিক অনুবাদ করার জন্য...
ক্যাথলিক
চার্চ = আমুন-রা এর প্রাচীন ধর্ম বিশ্বাস
ক লোসাস –
তৃতীয় লকেট
৮৫ খ্রিষ্ট
পূর্বে হওয়া রহস্যময় ভবন অভিযান
·
ষষ্ঠ ইমহোটেপ
+ ১০,০০০ কর্মী
·
সকলেই গিয়েছিল
পশ্চিম দিকে কার্থেজের কাছে কোন এক সামুদ্রিক গোপন এলাকায়
·
রসেট্টা তে এক
কর্মীর কাছ থেকে একটা প্যাপিরাসের টুকরো পাওয়া যায় যা প্রমান দিচ্ছে ওই মানুষটি এর
সাথে যুক্ত ছিল।
·
এক অভূতপূর্ব
স্থাপত্য নির্মাণের কাজ । একটা সম্পূর্ণ সামুদ্রিক খাঁড়ি ফাটলের মুখকে অদৃশ্য করে
দিয়ে পাথুরে দেওয়ালের ছদ্মবেশে ঢেকে দেওয়া।
·
যারা দুটো
বিশেয়াহ ভাবে লুকানো গুপ্ত ধন কে এই পবিত্র ক ক্ষে রেখে আসে তাদের সবাই কে মেরে
ফেলা হয় ।
·
বাতিঘর আর
সমাধি মন্দিরের ক্যাপ স্টোন টুকরো ???
এর ভেতরেই
পাওয়া গেলো একটি টেলিটাইপড আদেশপত্র যা পাঠিয়েছিলেন হাইনেরিখ হিম লার । যার
মর্মার্থ – হেসলার কে অনুমতি দিচ্ছেন একটা ইউ-বোট নিয়ে পুরো উত্তর আফ্রিকার
ভূমধ্যসাগরীয় তট এলাকা পরীক্ষা করে নকল
পাথুরে দেওয়াল খুঁজে দেখার।
ওখানে হাতে
লেখা কিছু হিয়েরগ্লিফিক্স ও ছিল যার অর্থ উইজার্ড পড়ে শোনালেন –
‘ মানুষের
পছন্দ
দুটোর ভেতরে
থেকে যে কো নো একটা আচার প্রথাকে বেছে
নিতে হবে
একটা আনবে
শান্তি
অন্যটা দেবে
শক্তি
চুড়ান্ত দিনে
সিদ্ধান্ত
নিতে হবে,
একটা পছন্দ
বেছে নিতে হবে স্বয়ং রা’য়ের উপস্থিতিতে
যা নিশ্চিত
করে দেবে মানুষের ভাগ্য কে।’
উইজার্ড হেলান
দিয়ে বসলেন। ‘এটা সেই দুটো মন্ত্র পাঠের ইঙ্গিত – আচার প্রথা । কেবল
মাত্র একটা মন্ত্রকেই উপ্সথাপিত করা যাবে যখন ক্যাপ স্টোনকে রাখা হবে গ্রেট
পিরামিডের ওপরে। ’
ওরা আর কিছু
লেখা পেলো । সেগুলোর কি অর্থ সেটা অবশ্য বোঝা গেল না । হয়তো কোন এক অশুভ মন্ত্রের
কথা বলা হয়েছে –
তৃতীয়
ইমহোটেপের সমাধি থেকে পাওয়া প্রথম লেখনী
“কি
অবিশ্বাস্য কাঠামো অবয়ব ছিল এটা,
একেবারে আয়নার
প্রতিবিম্ব যেন,
প্রবেশ এবং
প্রস্থান একেবারে এক রকম।
আমার কাজটা
আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে – এটাই আমার জীবনের সব সেরা কাজ – যাকে লুকিয়ে রেখে দিতে
হচ্ছে ।
কিন্তু আমি
আমার দায়িত্ব পালন করেছি।
আমরা বিরাট
সেই আর্চ অয়েকে বন্ধ করে দিয়েছি ভুমিধ্বস ঘটিয়ে।
তবে
আদেশানুসারে পুরোহিতের ঢোকার পথ খোলাই থাকলো যাতে তারা
ভেতরের জিনিষ
পত্রের দেখভাল করতে পারে – পুরোহিত দের বলে দেওয়া হয়েছে
কিভাবে ফাঁদ
গুলো সেট করা আছে ।”
তৃতীয়
ইমহোটেপের সমাধি থেকে পাওয়া দ্বিতীয় লেখনী
“ কেবল মাত্র
সাহসী আত্মা যাদের আছে
তারাই পার হতে
পারবে ডানা ওয়ালা সিংহের কুয়ো ।
কিন্তু নিন
গিজিডার খনি থেকে সাবধান থেকো
যারা প্রবেশ
করবে সর্প -প্রভুর গর্তে
আমি এটা ছাড়া
আর কোন রকম উপদেশ দিচ্ছি না
সমস্ত আশা
পরিত্যাগ করো
ওখান থেকে
পালানোর যে কোনোই পথ নেই । ”
ডানাওয়ালা
সিংহ – পারসিয়া/মেসোপটেমিয়াতে এধরনের আসিরিয়ান মূর্তি দেখা যায় ।
নিনগিজিডা –
আসিরিয়ানদের সরীসৃপ এবং সাপের দেবতা।
সম্ভাব্য
রেফারেন্স ব্যাবিলনের এইচ জি ???
কয়েকটা পাতার
পর পাওয়া গেল দুটো হাতে আঁকা ছবি। যার ওপর লেখা আছে “ নিরাপদ রাস্তা”
এরপরে আছে আরো
একটা লেখনী, যা দেখে উইজার্ড বলে উঠলেন, ‘আরে, এতো সেই প্রার্থনাগুলোর একটার
বর্ণনা যা চরমতম দিনে পড়া আবশ্যক বলে মনে করা হয়।’
লেখনী –
“শক্তিলাভের
আচার প্রথা
রা’য়ের সর্ব
উচ্চ আসনে,
বলিপ্রদত্ত
নির্বাচিতর হৃদয়ের নিচে
যে শুয়ে আছে
প্রতিহিংসাকামী আনুবিশের হাতের ওপর,
ঢেলে দাও
মৃত্যুর দেবতার হৃদয়ে
তোমার মাতৃভূমির
কিছু পরিমাণ [ডেবেন] মাটি
পাঠ করো সেই
শয়তানী শব্দ গুলো
তাহলেই এ
জগতের সমস্ত ক্ষমতা হয়ে যাবে তোমার
এক হাজার
বছরের জন্য ”
‘ “তোমার
মাতৃভূমির কিছু পরিমাণ [ডেবেন] মাটি” ?’ বিগ ইয়ার্স ভ্রু উঁচিয়ে বললো, ‘এর মানে টা
কি?’
জো জানালো, ‘
ডেবেন প্রাচীন ইজিপশিয়ানদের মাপের একক । মোটা মুটি ১০০ গ্রাম। আমার মনে হয় এর অর্থ
–’
আর ঠিক তখুনি
উইজার্ড প্রায় লাফিয়ে উঠে পড়ের লেখনীটা পড়তে শুরু করলেন –
‘সেন্ট মার্ক এর গোপন গসপেল থেকে
বিচার দিবসের
ভোরের বেলায়
সেই ভয়ঙ্করতম
দিন,
একমাত্র
মন্দির যা উভয়ের নাম বহন করে,
রা’য়ের
ক্ষমতাকে সুত্রবদ্ধ করে মহান রামেসিসের চোখের মতো
সুউচ্চ
মিনারের সুঁচে
দ্বিতীয়
প্যাঁচাকে প্রথমে
আর তৃতীয়কে
দ্বিতীয়ের স্থানে ...
... যেখানে
ইস্কেন্দারের সমাধি উন্মোচিত হয় ।
সেখানেই খুঁজে
পাবে প্রথম টুকরোটাকে ।’
এই লেখনীর
তলায় হেসলার নোট করেছেন –
ইস্কেন্দারের
সমাধি – আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের কবরখানা । আলেকজান্ডারের সাথে সমাধি দেওয়া হয়েছিল
প্রথম টুকরোটাকে।
উইজার্ড পেছন
দিকে হেলান দিয়ে বসলেন, চোখ বিস্ফারিত।
‘সেন্ট মার্ক
এর গোপন গসপেল।’ জো ওয়েস্টের দিকে তাকালো । ‘ যে গসপেল কে মানা হয় না।’
বিগ ইয়ার্স বললো,
‘একটু খুলে বলো ।’
ওয়েস্ট বললো,
‘ এ খবর খুব বেশি মানুষ জানে না। সেন্ট মার্ক যখন ইজিপ্টে ছিলেন তখন দুটো গসপেল
লিখে ছিলেন । প্রথম
গসপেল যেটার কথা আপামর বিশ্ব জানে। যা বাইবেলে আছে। দ্বিতীয় গসপেল, যখন উনি সর্বসমক্ষে
আনেন তখন সেটা এক বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করে ।
প্রায় সব কটি কপি পুড়িয়ে ফেলা হয় খ্রিস্টান আন্দোলনের শুরুর সময়ে। আর স্বয়ং সেন্ট মার্ককে
মানুষের ছোঁড়া পাথরের আঘাত সহ্য করতে হয়।’
‘কেন?’
জো উত্তর দেয়,
‘ কারন একটাই। এতে এমন অনেক অজানা ঘটনার কথা বলা হয়েছিল যা যীশু তার জীবনে করে
ছিলেন। নানান আচার প্রথা পালন। মন্ত্র পাঠ । বিদঘুটে সব ব্যাপার স্যাপার । আর এর
ভেতর ছিল তথাকথিত সমকামিতার উল্লেখ।’
‘কি?’ বিগ
ইয়ার্স প্রায় চিৎকার করে উঠলো ।
জো বললো, ‘ওই গস
পেলের একটা অধ্যায়ে আছে যীশু একজন অল্প বয়সী পুরুষের সাথে কোথাও চলে যান। মার্কের
কথা অনুসারে ওই অল্পবয়সী পুরুষকে ‘আদিম
প্রাচীন পদ্ধতিতে” দীক্ষা দেন । কিছু বিকৃতমনা কল্পনাবিলাসী লেখক এটাকে সমকামিতা
বলে দেখাতে চেয়েছেন। যদিও বিদ্বানরা একেই বলেছেন আমুন-রা প্রথার বিশেষ আচার পালন।
আর এটাকেই পরে ফ্রিম্যাসনরা নিজেদের রীতি নীতির ভেতর সংযুক্ত করে। এর ফলে আর একটা
সূর্য উপাসনার বিশ্বাসের জন্ম হয় প্রাচীন ইজিপ্টের ভাবনা চিন্তা থেকে।’
ওয়েস্ট বললো,
‘বুঝতে পারলে কেন একে মান্যতাহীন গসপেল বলা হয়?’
‘হুম,’ বিগ
ইয়ার্স বললো। ‘ আমি তো জানতাম ফ্রি ম্যাসনরা অ্যান্টি-ক্যাথলিক ।’
‘ঠিকই জানো,’
জো বললো । ‘কিন্তু ফ্রি ম্যাসনদের এই ঘৃণাটা অনেকটা ভাইবোনদের ভেতর থাকা ঘৃণার মতো
। ওরা আসলে একে অপরের শত্রু ভাবাপন্ন ভাইয়ের মতো, যাদের জন্ম হয়েছে একই ধর্মের উৎস
থেকে। ঠিক যেমনটা জেরুজালেম এক পবিত্র স্থান ইসলাম এবং ইহুদিদের কাছে । ঠিক
সেভাবেই ক্যাথলিক আর ফ্রিম্যাসনরা এক আদি উৎস বহন করে চলেছে। দুটো বিশ্বাস, যার জন্ম
একটাই বিশ্বাস থেকে – ইজিপশিয়ানদের সূর্য উপাসনা। একই পথের পথিক হয়েও ওরা নিজের
নিজের বিশ্বাসকে দুটো আলাদা পদ্ধতিতে ব্যাখা করে। ’
ওয়েস্ট বিগ
ইয়ার্সের বাহুটে আলগা চাপড় মেরে বললো, ‘একটু জটিল ব্যাপার, বাডি । ব্যাপারটাকে এই
ভাবে ভাবো – আমেরিকা একটা ম্যাসোনিক দেশ এবং ইউরোপ একটা ক্যাথলিক দেশ । আর তারা
আপাতত লড়াই করছে তাদের নিজ নিজ বিশ্বাসের সেরা উপহার পাওয়ার জন্য ... ক্যাপ
স্টোন।’
বিগ ইয়ার্স বললো,
‘তুমি বলছো আমেরিকা একটা ম্যাসনিক দেশ। আমারতো মনে হয়ে দেশটা একটু বেশি মাত্রায় খ্রিস্টান
ভাবাপন্ন। বাইবেল এর ব্যাপক ব্যবহার সেটাই বলে।’
জো উত্তর দেয়,
‘এর একমাত্র কারন জনগণের বেশীর ভাগ খ্রিস্টান । কিন্তু তার মানে এই নয় যে দেশটাও
তাই। একটা দেশ আসলে কি? এক দল মানুষ যারা একটা কমন ঐতিহ্যর কারনে একত্রিত থাকে
মিউচু্য়াল উন্নতি এবং সুরক্ষার স্বার্থে । আর ওখানেই আছে আসল কথা বা কিওয়ার্ডটা,
সুরক্ষা । ভেবে দেখো, দেশের সেনা থাকে , ধর্মের থাকে না । সমগ্র সেনাবাহিনীকে আদেশ
দেয় কে , কি নামে ডাকি তাকে ... ইউনাইটেড স্টেটস ?’
‘ না, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং তার উপদেষ্টা
মণ্ডলী।’
‘ঠিক তাই । আমেরিকার মানুষেরা অবশ্যই সাচ্চা খ্রিস্টান । কিন্তু
আমেরিকার নেতারা সেই জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকে বেশীর ভাগ সময়েই ফ্রিম্যাসন।
ওয়াশিংটন, জেফারস্ন, রুজভেল্ট , বুশেরা । ২০০ বছর ধরে ফ্রিম্যাসনেরা ইউনাইটেড
স্টেটস অফ আমেরিকার সেনাবাহিনিকে ব্যবহার করে চলেছে নিজেদের স্বার্থে নিজেদের কাজে
। কি মজা তাহলে বোঝো , একটা ধর্মবিশ্বাসের নিজস্ব সেনা বাহিনী । আর তার কথা জনগন
জানেই না ।’
ওয়েস্ট বললো,
‘তুমি একটু খুঁটিয়ে দেখলেই আমেরিকার নানান
জায়গায় ম্যাসোনিক পদ্ধতিতে ক্যাপস্টোনের উপাসনা দেখতে পাবে। তা নাহলে বছরের পর বছর
ধরে কেন আমেরিকান ফ্রিম্যাসনরা সাতটা প্রাচীন আশ্চর্যর প্রতিরুপ বানিয়েই চলেছে ।’
‘ হতেই পারে
না...’
ওয়েস্ট
আঙ্গুলের কড় গুনে বলতে থাকলো, ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি বানিয়েছিলেন বিখ্যাত ফরাসী ফ্রিম্যাসন,
ফ্রেডেরিখ-আউগুস্ত বারথোল্ডি । কলোসাস অফ রোডসের প্রায় প্রতিরুপ। এমন কি হাতে
মশালটাও বাদ যায় নি । নিউইয়র্কের উলউওরথ বিল্ডিং
বাতিঘরের একেবারে কপি। ফোরটনক্স এর ফ্লোর প্ল্যান হুবহু হ্যালিকারনাসসাসেরর সমাধি
মন্দিরের মতো। স্ট্যাচু অফ জিঊস , সিংহাসনে আসীন এক বিশাল মাপের অবয়ব , লিঙ্কন
মেমোরিয়ালের মূর্তি । আরটেমিসের মন্দিরকে খুঁজে পাবে সুপ্রীম কোর্টে ।
‘ব্যাবিলনের
ঝুলন্ত উদ্যানের হুবহু বানানো হয়নি, এর একটাই কারন এটা ঠিক কেমন দেখতে ছিল কেউ
জানে না । যে কারনে সেটাকে সম্মান জানিয়ে এক বিশেষ ধরনের বাগানের পরিকল্পনা করেন
জর্জ ওয়াশিংটন। আর সেটা বানানো হয় হোয়াইট হাউসে । আর সেটাকে প্রসারিত করেন থমাস জেফারসন এবং পরে ফ্র্যাঙ্কলিন
রুজভেল্ট। জন এফ কেনেডি ছিলেন ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট। চেষ্টা করেছিলেন বাগানটাকে
নিশ্চিহ্ন করার , পুরো
পুরি পারেন নি । উনি
নেই কিন্তু বাগানটা থেকে গেছে। যাকে ইদানীং কালে রোজ গারডেন নামে ডাকা হয়।’
বিগ ইয়ার্স হাত গুটিয়ে কোলের ওপর রেখে বললো, ‘আর গ্রেট
পিরামিড, সেটা কোথায় ? আমেরিকাতেতো কোথাও
পিরামিডের মতো কোনো স্থাপত্য দেখেছি বলে
মনে পড়ছে না। ’
‘একদম ঠিক বলেছো ’ ওয়েস্ট বললো । আমেরিকাতে
বিশাল পিরামিডের মতো কিছু নেই। কিন্তু যখন ইজিপশিয়ানরা পিরামিড বানানো বন্ধ করলো
তখন ওরা কি বানানো শুরু করলো জানো?’
‘কি?’
‘ওবেলিস্ক। ওবেলিস্ক হয়ে
দাঁড়ালো সূর্য-উপাসনার মূল চিহ্ন। আমেরিকা এরকমই এক অতিকায় ওবেলিস্ক বানিয়েছে – ওয়াশিংটন
মনুমেন্ট । যার উচ্চতা ৫৫৫ ফুট । ইন্টারেস্টিং ব্যাপার এই যে গ্রেট পিরামিড ৪৬৯ ফুট
লম্বা। ৮৬ ফুট ছোটো ওয়াশিংটন মনুমেন্ট এর চেয়ে । কিন্তু যে বেস বা গিজা
উপত্যকার ওপর গ্রেট পিরামিডের অবস্থান সেটার উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৮৬
ফুট । যার অর্থ দুটোকে যোগ করলে সেই একই উচ্চতা পাওয়া যাচ্ছে।’
এইসব কথাবার্তা চলার মাঝেই
উইজার্ড নোট বইটার পাতা উলটে উলটে দেখছিলেন।
‘একমাত্র
মন্দির যা উভয়ের নাম বহন করে...’ বিড় বিড় করলেন । তারপরেই চোখ চক চক করে
উঠলো । ‘এটা লাক্সর। লাক্সর এর মন্দির ।’
‘আরে হ্যাঁ,
তাই তো। দারুন ভাবনা, ম্যাক্স । খুব ভালো!’ জো উইজার্ডের কাঁধে আলতো টোকা মেরে বললো
।
‘মনে হচ্ছে
এটা ঠিকঠাক মিলে যাবে ...’ ওয়েস্ট বললো ।
‘কি মিলে যাবে
?’ বিগ ইয়ার্স আবার জিজ্ঞেস করলো কথার মাথামুণ্ডু বুঝতে না পেরে।
‘দক্ষিন
ইজিপ্ট লাক্সারে আছে আমুন এর মন্দির, যাকে সকলে লাক্সারের মন্দির বলেই চেনে,’ জো জানালো । ‘ইজিপ্টের
অন্যতম সবচেয়ে বড় ট্যুরিস্ট স্পট । বিখ্যাত মন্দিরটার মূল আকর্ষণ এর বিশাল
আকৃতির প্রবেশ পথ । দ্বিতীয় রামেসিসের
দুটো অতিকায় বসে থাকা স্ট্যাচু আর ওদের সামনে দন্ডায়মান একাকী ওবেলিস্ক। এর অবস্থান নীলনদের উত্তর প্রান্তে
লাক্সারে , বা – সে সময়ে যে নামে ডাকা হতো – থিবস।
‘লাক্সারের
মন্দিরটা নির্মিত হয়েছিল দ্বিতীয়
রামেসিসের আগের কয়েকজন ফ্যারাও দ্বারা । পরে দ্বিতীয় রামেসিস একে পুনঃ নির্মাণ করেন
এবং নিজের বলে ঘোষনা করে দেন । কিন্তু বলা হয়ে থাকে এই মন্দির নির্মাণে
আলেকজান্ডারেরও হাত ছিল । আর এই কারনেই –’
‘ – সারা বিশ্বে এটা একমাত্র
মন্দির যেখানে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট কে ফ্যারাও বলে উল্লেখ করা আছে,’ উইজার্ড বললেন
। ‘এক মাত্র লাক্সারেই আলেকজান্ডারের নাম হিয়েরোগ্লিফিক্স ভাষায় খোদাই করা আছে । গোলাকৃতি
অলঙ্কৃত একটি ফ্রেমে । একমাত্র মন্দির যা উভয়ের নাম বহন করে । লাক্সারের মন্দিরই একমাত্র মন্দির যা এক সাথে দ্বিতীয় রামেসিস আর
আলেকজান্ডারের নাম ধারন করে আছে ।’
বিগ ইয়ার্স
প্রশ্ন করলো ‘ তাহলে ওই “রা’য়ের ক্ষমতাকে
সুত্র বদ্ধ করে মহান রামেসিসের চোখের মতো সুউচ্চ মিনারের সুঁচে” কথার কি মানে?’
ওয়েস্ট বললো,
‘সুউচ্চ মিনারের সুঁচ ওই ওবেলিস্ক। রা এর ক্ষমতা , আমার ধারনা অনুসারে সূর্যের আলো
। মহাবিচারের ভোরের সূর্যালোক – অর্থাৎ দিনটা টারটারাসের ঘূর্ণনের দিন । ওই কবিতা
আমাদের জানান দিচ্ছে ভোরের সূর্যালোকে ওবেলিস্কগুলোর দুটো বিশেষ স্থানে অবস্থিত ফুটোর ভেতরে দিয়ে
আলো গিয়ে পড়বে এমন এক স্থানে যা জানিয়ে দেবে সমাধির স্থান।’
বিগ ইয়ার্স জো
এর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আচ্ছা তুমি তো বললে লাক্সারে মাত্র একটাই ওবেলিস্ক আছে ।’
জো মাথা
ঝুঁকিয়ে বললো, ‘হ্যাঁ ঠিক কথা।’
‘ তাহলে তো আমরা
প্যাঁচে পড়ে যাচ্ছি । দুটো ওবেলিস্ক না থাকলে, আমরাতো সূর্যের আলো ওদের ফুটোর ভেতরে
দিয়ে যাওয়া দেখতে পাব না। ফলে আলেকজান্ডারের সমাধি খুঁজে বার করাও যাবে না।‘
‘ঠিক তা নয় ,’
উইজার্ড বললেন চকচকে চোখে ওয়েস্ট আর জো এর
দিকে তাকিয়ে।
ওরা উইজার্ডের
দিকে তাকিয়ে হাস লো ।
শুধু বিগ
ইয়ার্স কিছুই বুঝতে পারলো না।
‘কি? ব্যাপারটা
কি?’
উইজার্ড বললেন,
‘লাক্সার মন্দিরের দ্বিতীয় ওবেলিস্কটাও এখনো আছে বিগ ইয়ার্স । শুধু নিজের জায়গায়
নেই।’
‘কোথায় আছে
তাহলে?’
উইজার্ড
উত্তরে বললেন, ‘ প্রাচীন ইজিপ্টের অনেক ওবেলিস্কের মতোই এটাও একটা পশ্চিমী দেশকে
দিয়ে দেওয়া হয় । তেরোটা ওবেলিস্ক রোমে চলে যায় , ক্যাথলিক চার্চের সূর্য উপাসকরা ওগুলো গ্রহণ
করেন। দুটো যায় লন্ডন আর নিউইয়র্কে – এই দুটোকে একত্রে বলা হয়ে থাকে ক্লিওপেট্রার
সূঁচ । লাক্সার মন্দিরের দ্বিতীয় ওবেলিস্কটাকে ১৮৩৬ সালে দিয়ে দেওয়া হয় ফ্রান্সকে। প্যারিসের একেবারে
মাঝখানে প্লেস ডে লা কনকর্ডে যা এখন গর্বের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। ল্যুভর থেকে ৮০০
মিটার দূরে।’
‘জিউসের টুকরো
আর ওবেলিস্ক,’
জো বললো । ‘যা বুঝছি তাতে ডাবল-ট্রাবল হতে চলেছে প্যারিসে।’
ওয়েস্ট নিজের
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো ।
‘প্যারিস!’ বললো, ‘জানে
না ওকে আঘাত করার জন্য
কি বা কারা যাচ্ছে !’
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
[সমাপ্ত
অষ্টম অধ্যায় । নবম অধ্যায় -চতুর্থ অভিযান “জিউসের
স্ট্যাচু এবং আরটেমিসের মন্দির” https://amarkolponarjogot.blogspot.com/2017/10/blog-post_13.html]
No comments:
Post a Comment