Search This Blog

Thursday, July 20, 2017

আমেরিকায় কিডন্যাপিং – a true story - প্রতিম দাস

আমেরিকায় কিডন্যাপিং – a true story
প্রতিম দাস

১৮৭৪ সাল। ১৪ ডিসেম্বর, নিউইয়র্ক। আপার ইস্ট সাইড। সময় রাত। বৃষ্টি পড়ছে। ঘুম ভেঙে গেল মিঃ ভ্যান ব্রান্ট এর। কিসের একটা শব্দ হল যেন? ঝট করে উঠে বসলেন বিছানায়। এবার কানে এলো একটা মৃদু ‘ক্যাঁচ’ শব্দ। এতো সেলারের দরজার আওয়াজ। এতরাতে ওটার দরজা খুলছে কে? কোনো রকম আওয়াজ যাতে না হয় সেদিকে সজাগ থেকে বিছানা থেকে নামলেন মিঃ ব্রান্ট। হাতে নিলেন সাইড টেবিলে রাখা শটগানটা। সন্তর্পণে দরজা খুলে এগিয়ে গেলেন ছেলের ঘরের দিকে। ওকে ডেকে তুলে একে একে বড়ির তিন পরিচারককেও সঙ্গী করলেন। বললেন সন্দেহের কথা।
সশস্ত্র পাঁচটি মানুষ এবার এগোলেন সেলারের দরজার দিকে। একই রকম ভাবে কোন শব্দ না করে। অনুমানে ভুল হয়নি মিঃ ব্রান্ট এর দরজাটা খোলা। আশেপাশে কেউ নেই। কতজন ঢুকেছে ওটার ভিতর?
বেশী অপেক্ষা করতে হল না। এক এক করে দু জন মানুষ উঠে এলো ভুগর্ভস্থ কুঠুরিটা থেকে। কাঁধে মাল বোঝাই থলে। মিঃ ব্রান্ট সজোরে চেঁচিয়ে উঠলেন – হল্ট!! থামো!! উত্তরে এলো গুলি। আন্দাজে চালানো সেগুলি কারো গায়ে লাগলো না। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে গর্জে উঠলো মিঃ ব্রান্ট এর শটগান। কাতর শব্দ করে মেঝেতে পড়ে গেল একজন। দ্বিতীয় জন চকিতে মারলো ঝাঁপ খোলা জানলা দিয়ে। এর মধ্যেই অগ্নিবর্ষণ করে উঠলো জুনিয়র ব্রান্টের হ্যান্ডগান। লক্ষ্যভেদ বাবার মতই। দ্বিতীয় লোকটিও হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল লনের ঘাসে।
কাছে যেতেই যন্ত্রণা ক্লিষ্ট কণ্ঠ স্বরে লোকটি বললো – একটা ছাতা আনুন দয়া করে। আমার খুব ঠান্ডা লাগছে। আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই।
মিঃ ব্রান্টের ইশারায় একজন ভৃত্য নিয়ে এলো ছাতা।
মৃত্যুকালীন জবান বন্দিতে লোকটি বললো – আমার নাম জোশেফ ডগলাস। মৃত্যুর দরজায় দাঁড়িয়ে আমি মিথ্যে কথা বলবো না। আমার সঙ্গীর কাছ থেক যাচাই করে নিতে পারেন। ওর নাম উইলিয়াম মোসার। বাড়ি নিউইয়র্ক। আমার কোন চাল চুলো নেই। আমি ওর সাথেই থাকি... চরম যন্ত্রণায় মাঝে মাঝেই কথা থেমে যাচ্ছিলো লোকটার... আমার এক ভাই আর একটা বোন আছে। যদিও গত ২০ বছরে আমি একবারও ওদের দেখিনি। চুরি ডাকাতি আমার পেশা। সৎপথে খেটে রোজগার করা ৪০ ডলার আমার পকেটে আছে। দয়া করে ওটা আমার সৎকারে ব্যবহার করবেন। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই আমি জানিয়ে যেতে চাই আমরা চার্লি রসকে চুরি করেছিলাম।
বহুচর্চিত নামটি শুনেই মিঃ ব্রান্ট জানতে চাইলেন – কেন চুরি করেছিলে ওকে?
ডগলাসের সোজা সাপ্টা উত্তর – ডলারের জন্য।
চার্লি রস এখন কোথায় আছে? জানতে চাওয়া হলে ডগলাস জানালো – মোসারকে জিজ্ঞাসা করুন। ও বলতে পারবে।
মসার যে ইতিমধ্যে মারা গেছে সেটা জানালো হল ডগলাসকে।শুনে বিড়বিড় করে কিছু একটা বললো ডগলাস যা শোনা গেল না। পুনরায় জানতে চাওয়া হল, চার্লি রস এখন কোথায়?
অতি কষ্টে দম নিয়ে ও জানালো – ঈশ্বরের দিব্যি আমি জানি না। পুলিস আমাদের খুঁজছে এটা জানতে পেরেই আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। মোসার ওকে কোথাও পাচার করে দিয়েছিল। তবে কিছু দিনের মধ্যেই চার্লি বাড়ি ফিরে যাবে।
এর কিছু সময় বাদে ডগলাস মারা যায়। গল্পের আকারে যে কাহিনী এখানে বলা হল তার সূত্র ধরেই ১৮৭৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী পেনসিলভানিয়ার আইন বিভাগ ‘কিডন্যাপিং’ কে অপরাধ বলে ঘোষনা করে। চার্লি রসের ঘটনাটি আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নথিবদ্ধ ‘কিডন্যাপিং’ এর তথ্য‘কিডন্যাপ’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ একটি শিশুকে ধরে বা উথিয়ে নিয়ে যাওয়া। সতের শতকের শেষ ভাগে উত্তর আমেরিকায় চাষাবাদের কাজে লাগানোর জন্য গৃহহীন শিশুদের চোরাগোপ্তা ধরে নিয়ে যাওয়াকে সেসময় বলা হত ‘কিডন্যাপ’।
চার্লি রস এর কিডন্যাপিং এর ঘ টনাটি ঘটে ১৮৭৪ সালে ফিলাডেলফিয়ার এক মফস্বল এলাকায়। মিঃ ক্রিশ্চিয়ান রস এর দুটি সন্তান। চার্লি রস, বয়স ৪ বছর। ওয়াল্টার রস বয়স ৬। ১৮৭৪ এর ১লা জুলাই সহসাই দু ভাই উধাও হয়ে যায় বাড়ির সামনে থেকে। শুরু হয় খোঁজা খুঁজি। ফলস্বরূপ ঐ দিনই ওয়াল্টারকে পাওয়া যায় পামার ও রিচমন্ড স্ট্রীটের কোনার দিকের ‘আন্ট সুসিজ’ এর মিষ্টান্ন দ্রব্য বিক্রির দোকানের সামনে থেকে। এই ওয়াল্টারই এ কাহিণীর শুরুর ঘটনাটি ঘটার পর জোসেফ ডগলাস ও উইলিয়াম মোসারকে শনাক্ত করেছিল এবং জানিয়ে ছিল এরাই তাদের দুভাইকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিল
১লা জুলাই বাড়ি ফিরে এসে ওয়াল্টার যা বলে তা এরকম – গত কয়েকদিন ধরেই দুটো লোক ওদের বাড়ির আশে পাশে ঘোরা ফেরা করছিল। লোভ দেখাচ্ছিল চকলেট কেক ইত্যাদি খাওয়ানোর, যদি ওয়াল্টাররা ওদের সাথে যায় তাহলে। চৌঠা জুলাই, আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উপ ল ক্ষ্যে খরচ করার জন্য যে ২৫ সেন্ট হাতে পেয়ে ছিল ওয়াল্টার সেটা দিয়ে ইচ্ছে মতো কিছু কেনার লোভে ওদের কথায় রাজী হয়ে যায় ও। লোক দুটোর সাথে গাড়ি আছে দেখে সঙ্গে নিয়ে যায় চার্লিকেও। ‘আন্ট সুসিজ’ এর দোকানের সামনে গিয়ে গাড়ি থামায় ওরা। তড়িঘড়ি গাড়ি থেকে নেমে দোকানে ঢুকে যায় ওয়াল্টার। একটু পরে বাইরে এসে দেখে গাড়ি নেই। চার্লিও নেই কোথাও।
এটা যে অপহরণের একটা ঘটনা ঘটেছে তা ঐ সময়ে কারো ভাবনাতেই আসেনি। কারন সাধারণত যে কিডন্যাপ তখন হত সে সময়ে সেটা অনাথ শিশুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ৩ রা জুলাই যখন অজস্র বানান এবং ব্যাকরনের ভুলে ভরা চিরকুটটি আসে তখন একটা ধারণা হয় আসলে ঠিক কি হয়েছে। চিরকূট টির বক্তব্য ছিল পরিষ্কার। কোন রকম খোঁজ খবর করার চেষ্টা করা হলে শিশুটিকে খুন করা হবে। যদি জীবন্ত ফিরে পেতে আগ্রহী থাকেন তাহলে অর্থ দিতে হবে।
মিঃ ক্রিশ্চিয়ান রসের পাথরের বাড়িটি দেখলে তাকে  যথেষ্ট ধনী ভাবাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবটা একেবারে উল্টো। দেউলিয়া দশা। অপহরণকারীরা নিশ্চিত এটা জানতো না। অর্থের দাবি চিরকুটে থাকলেও পরিমানের কোনও উল্লেখ ছিল না। মিঃ রস এর তখন যা অবস্থা তাতে কোনরকম অর্থ দেওয়াই তার পক্ষে অসম্ভব। উনি হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে পুলিসের সাথে যোগাযোগ করলেন। অনেক কথাবার্তা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সংবাদপত্র মাধ্যমে অপহরণ কাণ্ড ও চিরকুটের বক্তব্য প্রকাশ করা হবে।
সবিস্তারে খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। প্রত্যক্ষভাবে যার কোন যোগ কিডন্যাপিং কান্ডের ছিল না। সে সময়ের আইন অনুসারে জনগনের সম্মতি ছাড়া কারো বাড়ি পুলিস সার্চ করতে পারতো না। চার্লি রসের অপহরণের ঘটনা জানতে পেরে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পুলিসের সহযোগিতায় এগিয়ে এলো। যে বা যারা সার্চ করানোর ক্ষেত্রে ইতস্তত করছিল, তারাও বাধ্য হল জনগণের চাপে পড়ে সার্চ করতে দিতে। আর এর ফলে শিশুটিকে না পাওয়া গেলেও উদ্ধার হল অনেক চোরাই মালপত্র।
প্রথম চিরকুট আশার তিন দিন পর এলো দ্বিতীয় চিরকুট। যাতে ২০ হাজার ডলার মুক্তিপণের দাবি। সাথেই গতানুগতিক হুমকি, শিশুটিকে মেরে ফেলার। সাথেই জানানো হল মিঃ রস যেন ‘দি ফিলাডেলফিয়া লেজার’ এ বিজ্ঞাপন দিয়ে জানান দেন যে উনি অর্থ দিতে রাজি।
পুলিশি গোয়েন্দাদের সাথে পরামর্শ করে মিঃ রস বিজ্ঞাপনটিতে লিখলেন সামর্থ্য অনুযায়ী নিয়মাবলী মানতে আমি রাজি। এ ধরনের ধোঁয়াশা পূর্ণ কথা লেখার কারন, গোয়েন্দারা চাইলেন অপহরণকারীদের পক্ষ থেকে আরো কিছু চিরকুট আসুক। যদি কোনও ক্লু মিলে যায়। তা ছাড়া মিঃ রস এর আর্থিক অবস্থা তো সত্যিই খারাপ।
উত্তর দ্রুতই এলো। এরকম কায়দা করা বিজ্ঞাপন দেখে অপহরণকারীরা অধৈর্য হয়ে পড়ছে। যা করার তাড়াতাড়ি করা হোক, না হলে......
মিঃ রস ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন এক কানাকড়িও তিনি অপহরণকারীদের দেবেন না।এই মরমে একটি বিজ্ঞাপন তিনি প্রকাশ করলেন সংবাদপত্রে। এর ফলে চার্লির জীবন যে আরও সঙ্কটে পড়ে গেল বলাই বাহুল্য। আর সে কথা ভেবে ভেবে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন মিঃ রসের স্ত্রী। মিঃ রসে সঙ্কল্প দারুন ধাক্কা খেল এর প্রেক্ষিতে। নতুন বিজ্ঞাপন দিলেন তিনি, অর্থ দিতে রাজি এটা জানিয়ে। উত্তরে যে চিরকুটটি এলো তাতে অপহরণকারীরা জানালো বর্তমান চন্দ্রপক্ষে কোনও রকম লেনদেন সম্ভব নয়।
৩০শে জুলাই এলো নতুন নির্দেশ। মিঃ রসকে নিউইয়র্কগামী রাতের ট্রেনে একটি সাদা স্যুটকেসে দাবির অর্থ নিয়ে উল্লেখিত দিনে যেতে হবে। শেষ কামরার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। নির্দিষ্ট আলোকসঙ্কেত পেলেই ছুড়ে দিতে হবে স্যুটকেসটি।
বোঝা গেল চন্দ্রালোক বিহীন রাতের অপেক্ষায় ছিল দুষ্কৃতীরা। যে কারনে বিগত চন্দ্রপক্ষের দিন গুলিতে লেনদেন করতে চায়নি। যদি কেও ফলো করে। মিঃ রস নির্দেশ অনুসারে কাজ করলেও অপহরণকারীদের দেখা মিলল না। কেও এলোনা আলোক সঙ্কেত দেখাতে। অবশ্য সেদিন স্যুটকেসটিতে কোন অর্থ ছিল না। বদলে ছিল কেবলমাত্র একটি চিরকূট। যাতে লেখা ছিল... অর্থ আর চার্লির আদান প্রদান একসাথে করতে হবে।
কেন কে আসেনি তার উত্তর সহ চিরকুটও এসে গেল এবার। লেখা ছিল পুলিসের সাহায্য নিয়ে আমাদের ধরার পরিকল্পনা করেছিলেন।তাই আমরা এ ফাঁদে পা দিলাম না। সাবধান। দ্বিতীয়বার এই চেষ্টা করলে শিশুটির মৃত্যু অবধারিত।
এবার স্যুটকেসে যে চিরকুট ছিল তা প্রকাশ করা হল সংবাদ পত্রে। যার উত্তর এলো, সম্ভব নয়।
ইতিমধ্যে নিউইয়র্ক পুলিস এক ‘ইনফরমার’ এর কাছ থেক একটা খবর পেলসে জানিয়েছে, চিরকুটগুলোর হাতের লেখা উইলিয়াম মোসার নামে একটা লোকের। আরো জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে এই মোসার ও তার সঙ্গী জোসেফ ডগলাস ছক কষে ছিল এক মিলিওনেয়ার এর সন্তান কে অপহরণ করার। ওকেও ‘অফার’ দিয়েছিল সহযোগী হওয়ার জন্য। এই তথ্যটি নিঃসন্দেহে আশার আলো দেখালো।
ইনফরমারের কথা অনুসারে ফিলাডেলফিয়ার ২৩৫ মনরো স্ট্রীটে হানা দিল পুলিস। ওখানেই  সপরিবারে বসবাস  করতো মোসার। সাথেই থাকতো ডগ লাস। অর্থাৎ একাহিনীর প্রথমাংশে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে থাকা ডগ লাসের স্বীকারোক্তি সত্যই ছিল। যদিও ঘটনাটি ঘটতে এখনও অনেক দেরী। মনরো স্ট্রীটের বাড়িতে অবশ্য কাওকেই পাওয়া গেল না। প্রতিবেশীদের কথানুযায়ী ওরা নিউইয়র্ক চলে গেছে।
এসময়ে মিঃ রস পেলেন শেষ চিরকুটটি। লেখা ছিল ‘দি নিউইয়র্ক হেরাল্ড’ এ বিজ্ঞাপন দিন কবে আপনি ‘সল অফ টারমাথ-ফিফথ অ্যাভিনিউ’ হোটেলে অর্থ নিয়ে আসবেন এবং কোন রুমে থাকবেন।
১৫ নভেম্বর তারিখ ও রুম নম্বর জানিয়ে হোটেলে অপেক্ষায় থাকলেন মিঃ রস। ব্যর্থ হল প্রতীক্ষা। এলোনা কেই।
এর একমাস পরে ঘটে মিঃ ব্রান্ট এর বাড়ির ঘটনাটি। মৃত্যুকালীন জবান বন্দীতে ‘কিছু দিনের মধ্যেই চার্লি বাড়ি ফিরে যাবে’ ডগলাস জানিয়ে ছিল। কিন্তু সে কোথায় আছে আর কিভাবেই বা ফিরে যাবে বলার জন্য বেঁচে থাকেনি। ডগলাসের ঐ কথার ভিত্তিতে চার্লি যে বেঁচে আছে এই আশায় সারাজীবন মিঃ রস ছেলের খোঁজ চালিয়ে গেছেন। চার্লি ফিরেও আসেনি, ওর কোন খোঁজও মেলেনি। কি হল তাহলে চার্লি রসের???
উইলিয়াম ওয়েস্টার ভেল্ট। মোসার এর শ্যালক। নিউইয়র্কে যে বাড়িতে মোসার আর ডগলাস থাকতো সেখানেই থাকতো ওয়েস্টার ভেল্ট। পুলিসের কাছে সে জানিয়েছিল মোসাররা যে শিশুটাকে অপহরণ করেছে সেটা ও জানতো। ওয়েস্টার ভেল্টএর কথানুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর মোসার নাকি ওকে বলেছিল সরাসরি শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই অর্থপ্রাপ্তির। কিন্তু ভেল্ট জানত না শিশুটিকে  কোথায় লুকিয়ে রাখা আছে। তবে ওর ধারনা যেদিন মিঃ রস সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেন এক কানাকড়িও উনি দেবেন না এটা জানিয়ে তার পরের দিনই মোসার শিশুটিকে খুন করে।
অপহরণের সাক্ষী হয়েও তথ্য গোপনের দায়ে সাত বছরের কারাদন্ড হয় ওয়েস্টার ভেল্ট এর।
অসমর্থিত তথ্য অনুসারে ওয়েস্টার ভেল্টই চার্লি রসের হত্যাকারী। অপহরণের পর মোসাররা চার্লিকে ওয়েস্টার ভেল্ট এর জিম্মায় রেখে দেয়, নিউইয়র্কে। নিজেরা চলে যায় ফিলাডেলফিয়ায়। চালাতে থাকে চিরকুট পাঠানোর কাজ ও অর্থ আদায়ের পরিকল্পনা। এদিকে সময়ের সাথে সাথে পুলিসি হানাদারি বাড়তে দেখে চার্লিকে খুন করে ইষ্ট নদীতে ফেলে দেয় ওয়েস্টার ভেল্টমোসারদের জানায়, চার্লিকে সে কোন এক আত্মীয়ের কাছে রেখে এসেছে। সময় মতো এনে দেবে।

এই প্রমানবিহীন অংটুকুর কতটুকু সত্যি বা মিথ্যে তা জানা যায়নি। কারন সাত বছরের কারাবাসের মেয়াদ ফুরাতেই বেমালুম গায়েব হয়ে যায় ওয়েস্টার ভেল্টফলে যাচাই করার কোন সুযোগই পাওয়া যায়নি। কিন্তু যথেষ্টই বিশ্বাস জাগায় এই অসমর্থিত তথ্যটি। আজও আনসলভড কেস হিসাবেই থেকে গেছে চার্লি রসের অপহরণ কান্ড।
সমাপ্ত

Sunday, July 16, 2017

ইচ্ছেপুরন -প্রতিম দাস[কল্প বিজ্ঞানের গল্প]

ইচ্ছেপুরন
প্রতিম দাস
----------------
মাম্পু, ওঠ ওঠ, স্কুল যেতে হবে না নাকি ? সাড়ে ছটা বেজে গেছে...... হে ভগবান মেয়ের যে কি হবে, Exam-এর আর কদিন বাকি, খেয়াল আছে ?” রোজ সকালে এই কথাগুলো মাম্পুর মায়ের মুখে শোনা যায় এটা মিসেস চক্রবর্তীর দুঃখের বহিঃপ্রকাশ সারাদিনে কথাগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেকবারই শোনা যায় চলতি সময়ের ইঁদুর দৌড়ে নিজের মেয়েকে চৌখোস করতে যা যা করার প্রয়োজন সব চেষ্টাই করে চলেছেন--- আঁকা, নাচ, গান, সাঁতার এবং অবশ্যই লেখাপড়া কিন্তু মাম্পুর কোনো কিছুতেই আগ্রহ নেই, একমাত্র কার্টুন চ্যানেলগুলো ছাড়া ওয়ান-টুতে পড়ার সময় তবু একটু মনোযোগ ছিল, এখন তার ১০% নেই করতে হয় তাই করে আঁকার স্যার, গানের দিদিমণি, পড়ার মিসের সাথে সাথে স্কুল থেকেও ইদানিং গার্জেন কল আসছে প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটাই কথা,বড্ড অমনোযোগি আঁকার স্যার তো গত সপ্তাহে বলেই দিলেন—“ বৌদি মাম্পুর আঁকাটা বন্ধ করে দিন, অন্য কিছু হয়তো হতে পারে, আঁকানো জোর করে সম্ভব না নিয়ে মাম্পুর বাবাকে কিছু বলতে গেলেই উনি বলেনওটা তোমার দপ্তর, সারাদিনের খাটুনির পর নিয়ে মাথা ঘামাতে পারব না টাকাকড়ি যা লাগে দিয়ে দেব, বাকি দায়িত্ব তোমার
এমতাবস্থায় একদিন ফোন এল মিঃ অরিজিত সান্যালের, মিসেস চক্রবর্তীর ভাই থাকেন জাপানে, রোবোটিক সাইন্সের পৃথিবী-সেরাদের অন্যতম আর তার জন্যই বিশেষ সম্মান দিয়ে জাপানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওনাকে, জাপান গভমেন্টের বিশেষ প্রকল্পে, তা প্রায় বছর ছয়েক হয়ে গেলো নমাসে ছমাসে দেশে আসেন মানুষটা ফোনে অবশ্য মাঝে মাঝে কথা হয়
দুচারটে মামুলি কথাবার্তার পর অরিজিত বাবু জানতে চাইলেন, “ আমার ভাগ্নির খবর কি ? পড়াশোনা ঠিকঠাক করছে তো ?”
এতোদিন সংকোচবশে মাম্পুর কথা কিছু বলেননি ভাইকে মিসেস চক্রবর্তী আজ আর সামলাতে পারলেন না, বলেই ফেললেন, “খুব চিন্তায় আছি রে অরু, কি যে হবে
--- “কেন রে, কি আবার হোলো ?”
 “টিভি দেখা ছাড়া আর কিছুই তো মন দিয়ে করছে না অরু তুই তো বড় বিজ্ঞানী, একটা কিছু করতে পারিস না মাম্পুটার, এমন কোনো ওষুধ-টোষুধ আবিষ্কার হয়নি যাতে একটু মনোযোগী হয় মেয়েটা ?” “দিদি অযথাই তুই চিন্তা করছিস, বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে
 “তুই তো বলেই খালাস, আমার জ্বালা তুই কি বুঝবিকথার মোড় অন্যদিকে যাচ্ছে দেখে অরিজিত বাবুদেখছি কি করা যায়বলে ফোনটা কেটে দিলেন
এর দিন সাতেক পর একটা মেসেজ এলো মিসেস চক্রবর্তীর ফোনে--- দিদি সামনের সপ্তাহে আমি ভারতে আসছি তোর কাছেই যাব সবার আগে.........
একটি সুটকেস আর ল্যাপটপ সমেত অরিজিত বাবু নামলেন ট্যাক্সি থেকে , মাম্পুদের বাড়ির সামনে। গতকাল রাতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এয়ারপোর্ট এ নামার  পর হোটেলে রাত্রি যাপন করে সকালের ট্রেনে চলে এসেছেন ৭০ কিমি. দূরের দিদির বাড়িতে। ট্রেন থেকে নেমেই ফোন করে দিয়েছিলেন, ফলে ডোরবেল বাজতেই মাম্পু ছুটল। মামা এলেই একটা না একটা নতুন খেলনা প্রাপ্তি হবে এটা ও জানে। এমন সব খেলনা যা বন্ধুদের নেই। ফলে ওর আগ্রহ একটু বেশি।
দুদিন পর...।
মাম্পুর বিষয়ে যাবতীয় অভিযোগ ও চিন্তার কথাবার্তা সবই বলা সারা মিসেস চক্রবতীর। কাকুতিমিনতি করেছেন ভাই এর কাছে কিছু একটা করার জন্য। অরিজিত বাবু হ্যাঁ বা না কিছুই বলেন নি।
ঘটমান দিনের সকাল বেলায় উনি মাম্পুকে বললেন – চল আজ কলকাতা বেরিয়ে আসি। কিরে দিদি তোর আপত্তি নেই তো ? নিয়ে যাবো ?
-কি আর বলব, একে মা মনসা তায় ধুপের গন্ধ। আমি বারন করলে যেন শুনবে !!
একদিন পর...
সেই হোটেল এবং সেই ঘর যেখানে অরিজিত বাবু ছিলেন তিন দিন আগে।
ল্যাপটপ এ কাজ করতে করতে মাম্পুকে প্রশ্ন করলেন অরিজিত বাবু –  আমার সাথে জাপান যাবি মাম্পু?
বিন্দুমাত্র সময় চিন্তা না করে মাম্পু বলল – যাবো, নিয়ে যাবে মামু, সত্যি?
-এক বছরের জন্য কিন্তু? মা বাবা বন্ধু কারো সাথে দেখা হবে না। কথাও বলতে পারবি না, এমনকি ফোন করাও যাবে না।
কিছুদিন বাদেই এক্সাম এটা ভেবে নিয়ে এবারেও বেশি সময় নিলনা মাম্পু সম্মতি জানাতে।
-ইঞ্জেকশান নিতে ভয় পাস?
-না তো। কেন মামু?
-বিদেশে যেতে হলে মেডিকেল টেস্ট দিতে হয় তাই...
-তাই বুঝি?
- হুম । শোন তুই ওই বিছানায় শুয়ে পর, আমি টেস্টটা করে নি তাহলে...
মাম্পু শুয়ে পড়লো বিনা বাক্য ব্যয় করে ।ঘরের এক কোনে রাখা বড় বাক্সটা খুলে যে সিরিঞ্জটা বার করলেন অরিজিত বাবু সেটা আমাদের চেনাজানা সিরিঞ্জের মতো নয়। আকারে বেশ বড়। দেখতেও অদ্ভুত।
ইঞ্জেকশান দেওয়ার মিনিট কয়েকের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল মাম্পু। এবার বড় বাক্সটা থেকে আর একটা বাক্স বার করলেন অরিজিত বাবু। ডাটা কেবল দিয়ে ওটাকে সংযুক্ত করলেন ল্যাপটপ এর সাথে। আর ভ্যাকুয়াম নোড লাগান বেশ কিছু কেবল লাগালেন মাম্পুর  শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। সবগুলোই আবার জোড়া হল ওই বিশেষ বাক্সে।
ঘরের কোনের বড় বাক্সটা থেকে এবার বার করলেন আর একটি বাক্স।  ঢাকনা খুলে বার করে আনলেন বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। ও দিকে ল্যাপটপের স্ক্রীন এ ফুটে উঠেছে একটি মানবদেহর আকৃতি। আশেপাশে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বাইনারি সংখ্যাদের হিসাবনিকাশের নাচানাচি।
ঘণ্টা দুয়েকবাদে...
কাজ শেষ... ল্যাপটপ অফ করে সব যন্ত্রপাতি গুছিয়ে নিলেন অরিজিত বাবু। এই সময় কেও এই ঘরে ঢুকলে অবাক হয়ে যেত নিশ্চিতভাবে...
পরের দিন...
-মাম্পু চল এবার বাড়ী ফেরা যাক !
-সে কি তুমি যে বলেছিলে জাপান নিয়ে যাবে!
-যাবোই তো। তার আগে তোর মা বাবার সাথে কথা বলতে হবে না ... ভিসা পাসপোর্ট সব করতে হবে তো নাকি?
- হ্যাঁ, ঠিক বলেছ মামু। ওদের তো বলতে হবেই ...
মনের মতো উত্তর পেয়ে চোখ দুটো চকচক করে উঠলো অরিজিত বাবুর।
পরের ট্রেন ধরেই মাম্পুরা বাড়ি ফিরল। অরিজিত বাবু আর্জেন্ট কাজ এর নির্দেশ এসেছে জানিয়ে পরের ট্রেনেই কলকাতা চলে গেলেন। সোজা হোটেলে।
দিন সাতেক পর জাপানগামী বিমানে উঠতে দেখা গেল মিঃ অরিজিত সান্যাল কে, সাথে একটি ছোট্ট মেয়ে।
.......
 ইউনিট টেস্ট এ রেজাল্ট খারাপ করলেও হাফ ইয়ারলি এক্সাম এ সবাইকে চমকে দিয়ে মাম্পু ২য় হল। একই সাথে আঁকা গান নাচ সব কিছুতেই অভাবনীয় উৎসাহ দেখা গেল।
এরকম পরিস্থিতিতে একদিন ফোন এলো অরিজিত বাবুর ... কি রে দিদি কেমন আছিস ? মাম্পুর খবর কি?
উচ্ছাসে ফেটে পড়লেন মাম্পুর মা – অরু কলকাতায় নিয়ে গিয়ে তুই কি তুক তাক করলিরে ভাই!! আমার মাম্পু  আর সে মাম্পু নেই... কি বাধ্য হয়ে গেছে কি বলবো...
-      তাহলে তো তোর সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে কি বলিস?
-      হয়েছে মানে ...একশয় দু’শ ভাগ ... সব তোর কৃতিত্ব ...
-      শোন তোকে একটা কাজ করতে হবে।
-      -কি কাজ?
-      মাম্পু মাসে মাসে যা নাচ গান আঁকা ইত্যাদি শিখছে তার ভিডিও করে আমাকে পাঠাতে হবে। রেকর্ড করে মেল করে দিবি।
-      কেন রে, কী জন্যে ?
-      কী জন্যে আবার, ভাগ্ণীটার উন্নতি দেখার ইচ্ছে হতে পারে না নাকি আমার?
......।
এভাবেই কেটে গেল এক বছরের কিছু বেশি সময়। মাম্পু এই মুহূর্তে একটি নামি স্কুলে অ্যাডমিশন পেয়েছে নিজের যোগ্যতায়। আজ ওদের ছুটি। সময় কাটাতে ছবি আঁকছিল ও। কার্টুন আর আগের মত অত দেখে না। ডোরবেল বাজলো। মিসেস চক্রবর্তী নিজেই গেলেন দরজা খুলতে...
খুলেই চমকে গেলেন ...
-অরু তুই খবর না দিয়ে... ও ওটা কে!!!
-মা আমাকে চিনতে পারছ না... এ কি গো ... একবছরে আমাকে ভুলে গেলে!!!
- এ কে ... আ... আ...আমি তো কিছুই ... কথা আটকে গেল মিসেস চক্রবর্তীর।
-ভেতরে ঢুকতে দিবিতো নাকিরে বাবা?
যন্ত্রের মত পিছিয়ে গেলেন মাম্পুর মা ...
দু ঘণ্টা পর ...
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে গল্পে মত্ত দুই মাম্পু। একজন আসল আর একজন অরিজিত বাবুর তৈরি হিউম্যানয়েড। উনি সফল এত দিনের গবেষণায়। হাতেকলমে এক্সপেরিমেন্ট এর এমন সুযোগ আসবে ভাবতে পারেননি। দিদির সমস্যা্টা শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।নিজের দেশ ছেড়ে জাপানে গিয়ে এতবছর থাকাটা উসুল হল এতদিনে।
হোটেলের ঘরে বড় বাক্সে নিয়ে এসেছিলেন হিউম্যানয়েড এর টুকরো গুলো। সেগুলো জোড়া দিয়ে নিজস্ব উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে আসল মাম্পুর ব্রেইন এর ভার্চুয়াল ম্যাপিং প্রতিস্থাপন করেন  হিউম্যানয়েড মাম্পুর মাথায়। শারিরীক আকৃতি এবং অন্যান্য সব কিছুর কপি বানান হয় থ্রিডি প্রিন্টারএ । বায়ো জেনেটিক্যাল ল্যাটেক্স এর প্রলেপ স্নান এর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করেনি। খাওয়া এবং প্রাত্যহিক কাজকর্মর জন্য কিছু প্রোগ্রাম সেট করে দিয়েছিলেন মিঃ সান্যাল। যাতে হিউম্যানয়েড মাম্পুকে কেও সন্দেহ না করে। আর বিশেষ কিছু প্রোগ্রাম এর ফলে ওর সবকিছুর রেজাল্ট অত ভাল হয়েছে ... পরমাণু শক্তিতে চালিত ব্যাটারির কারনে দরকার হয়নি চার্জ এর, এখনও এক বছর হেসে খেলে চলে যাবে।
সব কথা শুনে কপাল চাপড়ে মাম্পুর মা বললেন - এ তুই কি করলি অরু ? আসল মাম্পু তো কিছুই জানে না। আমাকে কি সারাজীবন ওই নকল মাম্পুকেই মানুষের সামনে দেখাতে হবে?
-      প্র্যাক্টিক্যালি সেটা তুই করতেও পারবি না।
-      ক.. কেন?
-      ওর তো বয়েস বাড়বেনা, শারীরিক বদল ও হবে না।
-      তাহলে কি হবে???
-      চিন্তা করিস না দিদি।এই একটা বছরে তোর আসল মাম্পু অনেক্তাই বদলে গেছে। প্রথম প্রথম যা ইছে করার সুযোগ পেয়ে ওর ভালই লাগতো। কিন্তু মাস দেড়েক পরেই একঘেয়েমি আসে। বায়না ধরে আমায় ফিরিয়ে দিয়ে এসো। তখন ওকে সব বুঝিয়ে বলি। সহজ ভাবে যতটা বলা যায়। মনে করিয়ে দিই দেশে এক বছরের আগে কোনোভাবেই ফেরা যাবেনার শর্ত।একই সাথে একটা মিথ্যেও বলি ওকে , ঠিক ঠাক পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজ করলে তবেই দেশে ফেরা যাবে , না হলে সারা্জীবন এখানেই থেকে যেতে হবে।
-      বুঝলাম। কিন্ত এই মাম্পু যা যা জানে সেগুলো আসলজন কি করে জানবে?
-      আরে এই জন্যই তো মাসে মাসে তোকে ভিডিও গুলো পাঠাতে বলেছিলাম । আমার আসল ভাগ্নি সব শিখে নিয়েছে।
-      অরু ওই মাম্পু্টার কি হবে এখন?
-      কি আর হবে , ওর এখানের কাজ শেষ। ওকে এবার শাটডাউন করে দেব।

কথাটা শুনে কিছুটা সময় পাথরের মত বসে থাকলেন মিসেস চক্রবর্তী। চোখের কোন দুটো চিকচিক করে উঠলো । অনুভুতিটা দুঃখের না আনন্দের ঠিক বুঝতে পারছিলেন না উনি ...

সমাপ্ত