বিশ্ব ভূত কথা – ঘুমাতে যাওয়ার আগে
প্রথম অধ্যায়
প্রতিম দাস
<script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2639653522190376"
crossorigin="anonymous"></script>
সবার আগে জানিয়ে রাখি আমি একজন পাঠক।
গবেষক নই। ফলে নানান বইপত্র পড়ার সময় যে সমস্ত তথ্য পাই তাই আপনাদের সাথে ভাগ করে
নেওয়াটাই আমার উদ্দেশ্য। কারোর বিশ্বাসে আঘাত করা বা কাউকে বিশ্বাসী করে তোলার
কোনও উদ্দেশ্য আমার নেই।
বিশ্ব জুড়ে ভূতের নানা প্রচলিত গল্পগাছার জগতে
যাওয়ার আগে, এই সিরিজের প্রথম পর্বে ছোট ছোট কয়েকটা পোস্টে এ জগতে ভূত বা মৃত্যু পরবর্তী
জগত নিয়ে সাধারণত কী ভাবনা প্রচলিত আছে
সেটাই পেশ করার চেষ্টা করব।
বলা হয়ে থাকে ভূতের আলোচনায় দুটোই
বিষয়, ওদের অস্তিত্ব আছে এটা বিশ্বাস করা এবং না করা।
আর যদি ওদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন
তাহলেও দুটো কথা, হয় আপনি ওদের ভয় পান অথবা পান না।
যাকগে, ধরেই নিচ্ছি আপনাদের ভেতর
অধিকাংশই ওদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন – না মানে, তেনাদের অস্তিত্ব থাকতেও পারে এই
সম্ভাবনাতে। যাইহোক আগে থেকে বলে রাখছি এই সিরিজের লেখা যত এগোবে হয়ত ততই ভয়
আপনাদের বাড়বে। এমনও হতে পারে শুয়ে পড়ার পর আলো নেভানোর সাহসটাও হবে না।
আসলে একটা কথা কী জানেন, যারা বিশ্বাস করে, তাদের জন্য কোনও প্রমাণের
দরকার নেই। আর যারা বিশ্বাস করে না তাদের জন্য কোনও প্রমাণই যথেষ্ট নয়।
কী বললেন, আমি কোন দলে?
চরম অবিশ্বাসীর দলে। তারজন্যই তো এই
খোঁজ খবর শুরু করেছি। আশা রাখব আমার মতই খোলা মনে এই লেখাগুলো পড়বেন। তা সে আপনি
ভুতপ্রেতে বিশ্বাসী হন বা অবিশ্বাসী। এমন অনেক ‘গল্প’ আগামীদিনে বলব যা হয়তো
অবিশ্বাসীকে ‘বিশ্বাসী’ বানিয়ে দেবে! না সেটা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে হ্যাঁ,
হয়তো ভয় পেতে বাধ্য করবে!
আমরা কি কখনও নিশ্চিতভাবে জানতে পারব যে ভূত আছে?
দেখুন একজন ভাল পাঠক/গবেষক হতে হলে সংশয়বাদী হতেই হবে। কিন্তু নিজের বিশ্বাসকে
একমাত্র মাপকাঠি ধরে মানুষের বিশ্বাসকে ১০০ শতাংশ অবিশ্বাস করে চললে অনেক সত্যিই
তার চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। একজন পাঠক/গবেষককে হতে হবে ‘ওপেন মাইন্ডেড পার্সন’। আর
আমি সেটাই করার চেষ্টা করছি।
আমি ভূত দেখেছি কিনা জানতে চাইছেন?
না, আজ অবধি সে সৌভাগ্য হল না। আর
হলে তো আগের প্রশ্নতেই উত্তরটা উল্টো হত। কিন্তু অনেক অদ্ভুত এবং যুক্তি দিয়ে
ব্যাখ্যা করা যাবে না এমন গল্প কথা শুনেছি, পড়েছি।
হঠাৎ করে কোনও এক সময়ে অন্ধকারে একা
অবস্থায় গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসেনি?
হ্যাঁ তাও হয়েছে। এরকমটাও মনে হয়েছে
আমি একা থাকা সত্বেও যেন একা নেই। আরও কেউ বা কারা যেন অদৃশ্য রুপে আমার চারপাশে
বিরাজ করছে। কিন্তু সেটা যে ভূতের
অস্তিত্ব প্রমাণ দিচ্ছে তা বলে আমার মনে হয়নি।
তাহলে চলুন শুরু করা যাক সফর –
তার আগে আরও একটা কথা জানিয়ে রাখি,
আমি বেশ কিছু ইংরেজি শব্দই ব্যবহার করেছি লেখার সময়। কারণ তাদের বাংলা করলে হয়ত
আপনাদেরকে অভিধান খুলে বসতে হবে মানে বোঝার জন্য। অবশ্য উৎসুক পাঠক ইংরেজি শব্দটার
মানে জানার জন্য সে চেষ্টা করবেন অনেক সময় এটাও আমি জানি।
তাহলে আসুন আত্মাদের জগতে প্রবেশ করি!
আমাদের মাঝেই ভূতেরা বিচরণ করে!
অন্তত,
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এটাই দাবি করে আসছে। লিখিত শব্দের অনেক আগে থেকেই লোককথায় ভূতের
গল্প নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ‘অ্যানিমিস্টিক’ সমাজের মানুষেরা প্রায়শই তাদের
পূর্বপুরুষদের ভূত দেখতে পেত। ভবিষ্যতের পূর্বাভাস জানতে, প্রাচীন সমাজের ‘বিজ্ঞ’ ব্যক্তিরা আত্মাদের আবাহন করতেন।
আপনি কি ভূতে বিশ্বাস করেন? ভূতের অস্তিত্ব আছে?
এই দুটো প্রশ্নের উত্তরে যারা বলছেন, একেবারে না, কোনভাবেই না, তাদের জন্য দু একটা
বিষয় জানাই যা একদা মানুষ বিশ্বাস করত অনিবার্য সত্য হিসাবে।
এই পৃথিবী সমতল।
সূর্য ও বাকি নক্ষত্রগুলো পৃথিবীর
চারদিকে ঘোরে।
চাঁদ সবুজ পনির দিয়ে তৈরি।
আজ কিন্তু, তিনটেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কী বললেন? আমরা এখনও পুরো চাঁদ ভাল করে ঘুরে দেখিনি। একদম
ঠিক। অন্বেষণ চলছে। আর সেই জন্যই আমার মত চরম অবিশ্বাসী এই লেখা
লিখছে।
আমি জানি আপনাদের ভেতর বেশির ভাগ
মানুষ কী পড়তে চাইছেন। নির্ভেজাল ভূতের গল্প! ঠিক বলছি তো?"
চিন্তা করবেন না, প্রচুর ভৌতিক গল্প আসবে, যদি সফরে সঙ্গী হয়ে থাকেন আগামী
দিনগুলোতে। গবেষকদের মতে নথিভুক্ত থাকা সবচেয়ে প্রাচীন গল্পটাও বলব আপনাদের। কিন্তু, তার আগে আমরা ভুতুড়ে জগতের নানান কিংবদন্তিগুলো যে পটভূমিতে বিকশিত হয়েছে সেটাকে
একটু নেড়েচেড়ে দেখব। সোজা কথায় ভূত বিষয়ক নানা তত্ত্ব। এই আলোচনায় আমরা একটু উঁকিঝুঁকি
দেব অতীতের নানা সভ্যতায় মৃত্যুর পরেও ‘বেঁচে’
থাকার বিষয়ে মানুষ কী ভাবত এবং তারা কী বিশ্বাস করত, সেই বিষয়ে। অথবা মরে যাওয়ার
পরে যদি আমরা ফিরেও আসি, তাহলে আমরা কোন
রূপে ফিরে আসব?
ভূতেদের জগতে ঢুকে পড়ার আগে আরও একটা
কাজ করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত হতে
হবে যে আমি লেখার ভেতর যে সমস্ত শব্দ ব্যবহার করব তার সঠিক অর্থ যেন আপনাদের
বোধগম্য হয়।
ভুতুড়ে বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় কিছু সাধারণ শব্দ আমাদের সামনে এসে যায় যার মানে বোঝা নিয়ে দ্বিমত ঘটে। আজ দেখে নেওয়া যাক সেরকম কিছু শব্দ।
অতিপ্রাকৃত?
বেশিরভাগ গবেষক এবং আত্মা দর্শন
বিষয়ক গবেষকেরা ‘সুপারন্যাচরাল’ বা অতিপ্রাকৃত শব্দটি এড়িয়ে যান। আমি জানি না কেন।
এই শব্দের স্পষ্ট অর্থ হল: আমাদের চেনা জানা পরিচিত জগতের ভেতর ঘটে যাওয়া এমন বিষয় যার ব্যাখ্যা অসম্ভব। শব্দটা এসেছে ল্যাটিন ‘সুপার’ থেকে। যার ইংরেজি
অর্থ ‘অ্যাবভ’ এবং ‘নাস্কি’, যার অর্থ ‘টু বি বর্ন’। অর্থাৎ দুটোকে এক করে এটাই বলা যায়,
এমন কিছু যার জন্ম আমাদের ভাবনার বাইরে। বা বলতে পারি, এর সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু
কীভাবে তা জানি না। আমরা যা জানি বা বুঝি
তার বাইরে এর অবস্থান।
ভূত বিষয়ে আলোচনা বেশ কিছু পরিমাণে উদ্ভট এবং প্রশ্ন
উদ্রেককারী বিষয় বলেই হয়ত এই অতিপ্রাকৃত শব্দটাকে ওর সাথে জুড়তে চান না অনেকে।
একাধিক গবেষকের মতে ‘অতিপ্রাকৃত’ শব্দটাকে
একটু বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। যার সাথে ঐশ্বরিক, গুপ্তজ্ঞান এমনকি
শয়তানের সম্পর্ক জড়িয়ে আছে বলেই ভাবা
হয়। হয়তো এই কারণেই ‘সুপারন্যাচরাল’ শব্দর
বদলে ‘প্যারানরমাল’ শব্দটা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।
বেশিরভাগ মানুষ যারা ভূতের বিষয়ে
আগ্রহী তারা একইসাথে সব রকম সাইকিক ঘটনার প্রতিও এক ধরণের স্বাভাবিক আগ্রহ বোধ করেন। রয়েছে। প্যারাসাইকোলজির একটা
শাখা মনের দ্বারা সৃষ্ট সেই সব ঘটনার প্রমাণ খোঁজে যাদের ব্যাখ্যা করা যায় না।
সাধারণ মানুষের ভাষায় এর নাম ‘ই এস পি’ বা ‘এক্সট্রা সেন্সরি পারসেপশন’ এর
অধ্যয়ন। ‘সাইকিক ফেনোমেনা’র মূলত তিনটে
ভাগ আছে যাকে আমরা মোটামুটি চিনি। আর সে সবের সুত্রেই ভৌতিক বা প্যারানরম্যাল
ঘটনাগুলোকে ব্যখ্যা করার চেষ্টা চালানো হয়।
টেলিপ্যাথি – চেনা জানা পাঁচ
ইন্দ্রিয়র বদলে অন্য কোনও ভাবে যোগাযোগ
স্থাপন করা। সাধারন ভাবে যাকে ‘মাইন্ড রিডিং’ বলা হয়।
ক্লেয়ারভয়েন্স - এমন বস্তু বা ঘটনা
দেখা যা কেউ জানে না এবং পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুধাবন করা যায় না; উদাহরণ স্বরূপ, ভবিষ্যতের
পূর্বাভাস।
সাইকোকাইনেসিস – যে কোনও বস্তুকে
একাকী মনের শক্তিতে নড়ানো।
আধুনিক অ্যানথ্রপলজির স্রষ্টা ই বি
টাইলরের মতানুসারে ‘অ্যানিমিজম’ হল এ জগতের প্রথম ধর্ম বিশ্বাস। যেখানে বিশ্বাস
করা হয় মানব শরীর ছেড়ে গিয়েও আত্মা ‘বেঁচে’ থাকে। তার লেখা ‘প্রিমিটিভ কালচার’
[১৮৭১] বইতে উনি এই তত্ত্বর বিষয়ে
জানিয়েছেন। প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরেছেন একাধিক আদিবাসি সমাজের উদাহরণ। উনি দু ধরণের
আত্মার কথা বলেছেন –
এক, যারা মানুষের মৃতদেহ থেকে বেরিয়ে
আসে এবং দুই, যাদের নিজস্ব ‘জীবন’ আছে।
বর্তমান সময়ে এসে তার অনেক ভাবনাই
নস্যাৎ হয়ে গেছে । কিন্তু প্রাথমিক যে ধারণা তিনি দিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর আত্মা
জাতীয় কিছুর অস্তিত্ব আছে এবং তাদের সাথে জীবিত মানুষ যোগযোগ করতে পারে, তা আজও
মুছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। কী করেই বা সম্ভব,
এই ধারণার জন্মই তো হয়েছে সভ্যতার আদিতে। যা নিয়ে তর্ক বিতর্ক সমান তালে চলছে।
প্রথম শতাব্দীর সূচনা হতেই সেই সময়ের অনেক ইতিহাসবিদ শুরু
করেন জনপ্রিয় ভূতের গল্পগাছা এবং কিংবদন্তি নথিবদ্ধ করার কাজ।
দু হাজার বছর পার হয়ে এসেও, আমাদের সেই বিষয়ে কৌতূহল আজও অব্যাহত রয়েছে। প্রচুর প্রচুর
আধিভৌতিক এবং ভুতুড়ে ঘটনার রিপোর্ট আমরা শুনেছি এবং পড়েছি। যাদের
আমরা উপেক্ষা করতেই পারি। যে সবের দ্বারা একটাই বিষয় ‘যেন’ সামনে আসে - কিছু একটা তো
অবশ্যই আছে! আর এটাই ফলে ফুলে বিকশিত হয়েই চলেছে।
এখন প্রশ্ন হল এত এত মানুষ কী দেখেছে
বা কী শুনেছে বা কিসের অভিজ্ঞতা লাভ
করেছে? কিন্তু তারও আগে যে প্রশ্ন সেটারও কোনও সমাধান নেই বা করা সম্ভব নয়। আদপেই তারা কিছু দেখেছিল কি?
আশা করি, যেদিন এই লেখা শেষ হবে সেদিন আমি [এবং আপনারাও ] মনের ভেতর জমে থাকা এরকম অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাব।
সব ভূতই আসলে অ্যাপারিশন, কিন্তু সব অ্যাপারিশন ভূত নয়
‘অ্যাপারিশন’ বলেও একটা শব্দ আছে যার
অর্থ আবির্ভাব। বা বলা যেতে পারে ভোজবাজির
মত হঠাৎ রুপ পরিগ্রহ করা। ভূত কি এরকম কিছু ব্যাপার?
বেশিরভাগ মানুষই ভূত শব্দটি ব্যবহার
করে সেই বস্তুর ক্ষেত্রে যা কোন মৃতদেহ থেকে বের হয়ে আসে। সোজা কথায় তারা আসলে যা
বোঝাতে চান তা হল মৃত ব্যক্তির বা প্রানীর
আত্মা। এখন প্রশ্ন হল কিসের ভূত দেখা যায়
তাহলে?
বিগত কয়েকশো বছর ধরে যে সমস্ত ঘটনার কথা আমরা শুনেছি বা পড়েছি, তার বেশিরভাগ
ক্ষেত্রেই এমন বস্তুর কথা উল্লেখ করা
হয়েছে যা কখনোই মানুষ নয় বা কোন প্রাণী নয়।
উদাহরণস্বরূপ, প্রচুর মানুষ ভুতুড়ে ট্রেন বা অন্যান্য যানবাহন বা বাড়ি বা
পোশাক বা আসবাবপত্রের কথা বলেছে। এসব কিন্তু মানুষ নয় বা কোনও প্রানী নয়। ওই সব বস্তুর নিশ্চিত ভাবেই কোনও আত্মা বলতে আমরা যা বুঝি তা নেই।
কারণ ওগুলো জীবিত কিছু নয়। আর ভূত বিশ্বাসীদের মতে আত্মা বা ওই জাতীয় কিছু
একটাই হল ভূত।
সম্ভবত এরকম যাবতীয় বিভ্রান্তি এড়ানোর
জন্যই,
প্যারানরমাল তদন্তকারীরা দেহ বিচ্ছিন্ন আত্মার চাক্ষুষ
চেহারা দর্শনকে ‘অ্যাপারিশন’ শব্দ দ্বারা অভিহিত করতে পছন্দ করেন। যার ভেতর সমস্ত ধরণের অশরীরীদের আবির্ভাবকেই এক্তিয়ার ভুক্ত করা যায়। তা সে মানুষ হোক বা না হোক।
কারণ সবই তো আবির্ভাব। দেবদূত শরীর ধারণ করলে সেটাও আবির্ভাব। কিন্তু
তাকে ভূত বলা যাবে না । আবার ব্যাখা করা যায় না এমন বিষয়ের তালিকাভুক্ত করতে কোন
অসুবিধাও হবে না।
অতএব এটা বলতেই পারি: সব ভূতই আসলে অ্যাপারিশন বা আবির্ভাব, কিন্তু সব অ্যাপারিশন ভূত নয়। আপনাদের বিভ্রান্তি বাড়ানোর
জন্যই অ্যাপারিশনের আর কিছু প্রতিশব্দ জানাই এবার, যাদের সবগুলোকেই নানান ক্ষেত্রে
‘ভূত’ বোঝানোর জন্যই ইংরেজিতে ব্যবহার করা
হয়।
নাইটশেড, ফ্যান্টাজম, ফ্যান্টম, শেড,
শ্যাডো, স্পেকটার, স্পুক, ভিশন এবং রেইথ।
এরকম নানান ধরণের ভূত আছে সারা
পৃথিবী জুড়ে এবং তারা নানান ধরণের
সময়সূচী ব্যবহার করে থাকে নিজেদের আবির্ভূত করার জন্য।
কারও কারও দেখা মিলেছে মাত্র একবারই । ১৮২৪ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর রাতে
ইংল্যান্ডের কাম্বারল্যান্ডে কর্বি ক্যাসলে একটা ছেলের উজ্জ্বল আলক বিচ্ছুরণকারী
শরীর সহযোগে আবির্ভাব হয়েছিল। কেউ কেউ
আবার একটা নির্দিষ্ট তারিখ বা রাতে উপস্থিত হয়। ইন্ডিয়ানোলা আইওয়ার সিম্পসন
কলেজে ১৩ তারিখ এবং শুক্রবার ‘ম্যাচ’ করলেই এক মহিলা ভূতের আগমন হয়। এরকম অনেক ঘটনার কথা যে,
আপনারাও জানেন তা বলাই বাহুল্য।
কিছু কিছু আবির্ভাব ঘটে প্রতি বছরে
নির্দিষ্ট দিনে। আবির্ভাব বার্ষিকী বলতেই পারি।
এরকম এ্কাধিক ভূতের গল্প আপনারা যে ভুরি ভুরি শুনেছেন তাও আমি জানি।
আবার অনেক ভূত একটা নির্দিষ্ট স্থানে
বারংবার দেখা দিয়েই চলে। এরকম সব ভূতেদের কথা শোনাব আগামীদিনে।
প্যারানরমাল পরিভাষায়, যে ‘সৌভাগ্যবান’ ব্যক্তি এরকম আবির্ভাব দেখেন বা দেখতে পান তাকে বলা হয় ‘পার্সিপিয়েন্ট’।
যে চেহারাটাকে দেখা যায় তার পরিভাষা হল ‘এজেন্ট’। এই এজেন্ট শব্দটা সাধারণত সেই
সব ক্ষেত্রেই বেশি ব্যবহার হয় যখন সেই অজ্ঞাত সত্ত্বা নিজের ইচ্ছায়
নিজেকে প্রকাশ করে এবং কোনও একটা বার্তা
প্রদান করতে চায়।
যে বা যারা ভূতে বিশ্বাস করেন তারা ভূতের
অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য কোন শক্তপোক্ত ভিত্তির প্রমাণ দাবি করেন না। সেসব তাদের প্রয়োজন হয়
না। বিপরীতে, ঠিক কি ধরণের প্রমাণ বা কোন মাত্রার
প্রমাণ আপনি দাখিল করবেন একজন ভূতে অবিশ্বাসীকে বিশ্বাসী বানানোর জন্য? তার ধারনা
করা খুব মুস্কিল। কাজটা কেন কঠিন সেটাও
একটু দেখে নেওয়া যাক।
আসলে বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসীদের আলাদা করাটাই কঠিন। মৃত্যুর পরে জীবন আছে কি নেই ? এটা যদি প্রথম প্রশ্ন হয় সেক্ষেত্রেই তো সমস্যা জন্ম নেয়। কেন?
ভূতে বিশ্বাস অবিশ্বাসের ভিত্তিতে যে ধরণের মানুষদের দেখা মেলে তারা হল -
কিছু মানুষ মৃত্যুর পরেও জীবন থাকে
এটা বিশ্বাস করেন না, ফলে ভূত হয়ে ফিরে আসারও সম্ভবনাতেও তাদের বিশ্বাস নেই।
কিছু মানুষ মৃত্যুর পর একটা জীবন আছে
এটা বিশ্বাস করেন, কিন্তু তারা আবার
এটা বিশ্বাস করতে পারেন না যে, মৃত ব্যক্তি ভূত রুপে জীবিত জগতে ফিরে আসতে পারে।
কিছু মানুষ মৃত্যুর পরে জীবন আছে এটা
বিশ্বাস করে এবং এটাও বিশ্বাস করে যে, মৃত
ব্যক্তি ভূত হয়ে ফিরে আসতে পারে।
এই তিন ধরণের বাইরেও এক ধরণের মানুষ
আছে। যারা মৃত্যুর পরে জীবন আছে এটা
বিশ্বাস করে বা করে না, কিন্তু এটা বিশ্বাস করে যে, অন্যান্য ধরণের অশরীরী আছে। তারা হল দেবদূত বা ডেমন জাতীয় কিছু। যারা
নিজেদেরকে মানুষের রুপে বদলে ফেলতে পারে।
যদিও তারা সঠিক অর্থে ভূত নয় ।
আবার আর এক ধরণের বিশ্বাসী আছে, যারা
মনে করেন জীবিত মানুষ একস্থানে অবস্থান করেও অন্য স্থানে নিজের রূপের আবির্ভাব
ঘটাতে পারেন [ এটা কে কি বলব, ভূত?]
আবার আক্ষরিক অর্থেই সেই
সমস্ত লোকেরাও আছে [আমার মত!] যারা কিছুতেই বিশ্বাস করে না: মৃত্যুর পরে জীবন, ভূত, স্বর্গীয় আত্মা, অথবা ডেমন ডেভিল। অস্বাভাবিক কিছু যে এরকম মানুষদের চোখে পরে না
বা তারা অনুভব করে না তা হয়ত নয়। কিন্তু
তারা জোর দিয়ে বলে যে, এসবের পেছনে নিশ্চিত কোনও যৌক্তিক, প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা আছে।
এবার এত রকমের বিশ্বাসী অবিশ্বাসী
মানুষকে ভূতের অস্তিত্ব প্রমান করা না করার দায়িত্ব নেওয়া আর সামনে খাদ আছে জেনেও
এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া একই ব্যাপার। তার চেয়ে কাঊকে কিছু বিশ্বাস করানোর
চেষ্টা না করে একটা সফরে অংশ নেওয়াই ভাল। যেখানে অনেক অনেক অদ্ভুত তথ্য জানা যাবে
জানানো যাবে।
জীবনের পরে, তাহলে কী?
বুঝতে অসুবিধা নেই ভূতে বিশ্বাসটা
আসলে পরকালে বিশ্বাসের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। যদি কোন কিছুর অস্তিত্বই আর
মৃত্যু পর অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে এমন কিছু হতে পারে না যাকে আমরা ভূত বলে জানি। ফিরে আসার মত সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবে কিছুই
থাকবে না।
সময়ের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হওয়ার সূচনা
কাল এবং তারও যুগ যুগান্তর আগে থেকে মানুষ ভাবতে শুরু করেছে, যখন আমরা মারা যাই তখন আমাদের আসলে
কি হয়? একবার না একবার সারা জীবনে মানুষ এ চিন্তা করতে বাধ্য। সে আপনি যতই কোনও
বিশেষ দর্শন বা ধর্মের যুক্তি মেনে জীবন যাপন করুন না কেন। আর এই চিরন্তন প্রশ্নের সর্বোত্তম তাত্ত্বিক কোন
উত্তর আজও কেউ দিতে পারেনি। কেন পারেনি? কারণ আজ অবধি আমরা এমন কোনও মানুষের
দেখা পাইনি যিনি মরে যাওয়ার পর এ জগতে ফিরে এসে তার অভিজ্ঞতা আমাদেরকে বলেছেন।
অর্থাৎ এটা মানতেই হবে, জীবন পরবর্তী
সময়ে ঠিক কি হয় এটা যেমন আপনি নিশ্চিত ভাবে জানেন না তেমনই আর কেউ জানে না। সবতাই কল্প জগতে বিচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এই জগতের মত সব কিছুই কি সেখানে আছে?
কিছু মানুষ বিশ্বাস করতে চান বা তার ভিত্তিতেই
জীবন যাপন করেন যে, এই জীবন যা যা কিছু আমাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে তার সব
কিছুই পরের জীবনেও আছে। বা তার চেয়ে কিছু বেশিই আছে। ঠিক বলছি তো?
ইতিহাসে যে সমস্ত সভ্যতা সংস্কৃতির
তথ্য পাওয়া যায় তাদের প্রায় সবগুলোই, মৃত্যুর পরে কোনও না কোনও রকম জীবনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। বিশ্বাস অনুসারেই মৃত্যুর পরে আত্মা তার প্রাপ্য জীবন লাভ
করে এটাও মানেন অনেকেই। এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে এসব ভাবনা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত
হয়। চলুন এরকম কিছু বিশ্বাস জানা যাক -
আত্মা বর্তমান জীবনের মতই অনুরূপ
অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকে, শুধু জগতটা
বদলে যায়।
জীবিত থাকার সময় করা কাজের ভিত্তিতে আত্মার বিচার করা হয় এবং তার
ওপর নির্ভর করে "স্বর্গ" না "নরক" কোথায় তার স্থান হবে।
আত্মাকে ধারাবাহিক পুনর্জন্ম পদ্ধতি অনূসরণ করতে হয়। এর সূত্রে উচ্চতর আধ্যাত্মিক জগতের পথে সে এগিয়ে যায়। দিকে উন্নতির চেষ্টা করে
আত্মা বিশেষ পুনর্জন্ম বা পুনরুত্থানের
জন্য অপেক্ষা করে।
প্রায় প্রতিটা সমাজে এক শ্রেণীর
মানুষ থাকেন যারা মৃতদের আত্মার সাথে
যোগাযোগ করতে পারেন। উপজাতীয় আদিবাসি সমাজে এদের পরিচিতি ‘শামান’ নামে। যাদের
আমরা ওঝা বলতেই পারি। আবার এক অর্থে পুরোহিত বললেও ভুল বলা হয় না। এদেরকে ‘অর্যাকল’
নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এই মানুষ গুলো জীবিত এবং মৃত জগতের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বার্তাবাহক হিসাবে কাজ করেন। জীবিত
মানুষদের জন্য এরা মৃতদের তরফ সতর্কবার্তাও
বহন করে এনে দেন।
‘নেক্রোম্যান্সার’ নামেও এক ধরণের মানুষের
অস্তিত্ব বিভিন্ন সমাজে আছে। যারা মৃতদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে ভবিষ্যত
সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। কিছু কিছু
সমাজ ব্যবস্থায় এই জাতীয় মানুষেরা মৃত মানুষের আত্মীয়ের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেন,
পরবর্তী জগতে মৃতের শাস্তি কম করে দেওয়ার ব্যস্থা করার জন্য। ‘মিডিয়াম’ নামে
পরিচিত কিছু মানুষ জীবিত এবং মৃতদের জগতের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে
কাজ করেন। বিশেষ করে প্রিয়জনদের আত্মার
সাথে যোগাযোগ করার জন্য। এ নিয়ে আগামীদিনে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আমরা কোন পথে যাব?
আত্মা যদি মৃত্যু্র হাত থেকে বেঁচেই যায়, তাহলে সে যায় কোথায়? সাধারন বিশ্বাস
অনুসারে এক নতুন জগতে। আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে, সে জগত এক
সমাজ থেকে অন্য সমাজে অসাধারণ রকমভাবে
বৈচিত্র্যময় ভাবে নব নব রুপে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে।
প্রাচীন গ্রীসের মানুষেরা এক
আন্ডারওয়ার্ল্ড বা ভূগর্ভস্থ জগতের কথা লিখেছিল যা আক্ষরিকভাবেই পৃথিবীর নীচে পাওয়া
যায়। তাদের বিশ্বাস অনুসারে পৃথিবীর বুকে অবস্থিত নানান পাহাড়ি গুহা, ফাটল ইত্যাদির সাহায্যে
সেই সাম্রাজ্যের অধিপতি হেডিসের জগতে
প্রবেশ করা যায়।
অ্যানিমিস্টিক সমাজ বিশ্বাস করে যে,
তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের আত্মা সবসময় অদৃশ্য রুপে তাদের আশেপাশেই থাকে।
অকাল্টিস্ট এবং ক্যাবালিস্টরা
পৃথিবীর চারপাশে এক অদ্ভুত স্তর বা মালভূমি জাতীয় স্থানের বর্ণনা দিয়েছেন, যা আত্মাদের বাসভুমি। সেখানেও স্তর ভেদ আছে আত্মার গুণ মান
অনুসারে।
অধিকাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আকাশে
অবস্থিত স্বর্গের ধারণায় বিশ্বাসী। তারা মনে করেন যারা এ জগতে ভালো কাজ করেন তাদের
জন্য ওখানে পরকালে বাসস্থান সংরক্ষিত থাকে। আকাশের অবস্থান যেহেতু ওপরে তাই জাহান্নাম বা নরকের অবস্থান নিচে। উল্লেখ্য নিচে
মানে এখানে আক্ষরিক অর্থে কিন্তু মাটির নিচে নয়।
কিছু সংস্কৃতিতে মৃত ব্যক্তির
আত্মাকে অদৃশ্য ‘নিদার-ওয়ার্ল্ড’ বা অজ্ঞাত জগতে আটকা পরে থাকতে হয় বিচারের বা
পুনর্জন্মের জন্য।
অন্য সেই জগতে আত্মা কীভাবে পৌঁছবে
সেটা নিয়েও নানা সমাজে নানা মতের প্রকাশ দেখা যায়।
ফারাওদের সময় মিশরে, সমাধি কক্ষর দেওয়াল এবং ‘সারকোফাগি’ বা শবাধারের গায়ে হিয়ারোগ্লিফ অক্ষর মালা দিয়ে সজ্জিত করা
হত। সম্মিলিতভাবে আজ সেই সব লেখা ‘বুক অফ
দ্য ডেড’ হিসাবে পরিচিত। সেখানে পরিষ্কার ভাবে লেখা আছে পরবর্তী জগতে যাওয়ার পথ।
আগে তার বিচার হবে এবং সেই আত্মা অন্য
জগতে পুনর্জন্ম লাভ করবে। সেই সময়ের জাদুকর-পুরোহিতরা মৃতের যাত্রাপথ সুগম করার
জন্য নানান আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা সহ শবদেহকে মমিতে
পরিণত করত।
প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে,
আত্মার দুটো অংশ, বা এবং কা। ‘বা’ মানুষের বৈশিষ্ট্য, এবং
ব্যক্তিত্বকে ধারণকারী শক্তি এবং ‘কা’ জীবন স্রোত। এই দুই অংশরই
ক্ষমতা ছিল রাতের বেলায় সমাধি ত্যাগ করে জীবিতদের জগতে বিচরণ করার।
একটি মিথ অনুসারে আত্মাকে একটা নদী পার হয়ে যেতে হয় শেষ বিচার লাভের জন্য। এর সুত্রপাতও হয়েছিল
মিশরে ফারাওদের সময়কালেই। ধ্রুপদী গ্রীস সংস্কৃতিতে এই ভাবনার প্রসারণ ঘটে। তারা বলে, আত্মাকে একটি ছোট
নৌকায় করে স্টিক্স নদী পার হয়ে হেডিসে যেতে হবে। এই নৌকার চালক চ্যারন/ক্যারণ।
এই কিংবদন্তি রোমান সমাজেও অনুমোদিত হয় এবং
পুরাণে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
খ্রিস্টধর্মের সূচনা কালে যে বিষয়টা এই ধর্মের প্রতি মানুষের আগ্রহর একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেটা হল, সেন্ট
অগাস্টিনের এক বিশেষ ঘোষণা। মৃত্যু পরবর্তী সময়ে বিচারের জন্য কোনও নদী পার হওয়ার
দরকার নেই বা কোনও নৌকাচালকের মুখোমুখি হতে হবে না। কারণ স্টিক্স বলে কোনও নদী নেই।
আত্মার অস্তিত্ব উদযাপন
মৃতদের অস্তিত্বকে সম্মান জানানো এবং
তাকে রক্ষা করার উৎসব হাজার হাজার বছর আগের
সংস্কৃতি। প্রাচীন গ্রিসের মানুষেরা ফেব্রুয়ারির শুরুতে বা মার্চের প্রথম দিকে অ্যান্থেসটেরিয়া
পালন করত। যেখানে তাদের পূর্বপুরুষদের
আত্মাকে নিজ নিজ বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করার
আমন্ত্রণ জানাত। উৎসব শেষে ভদ্র নম্রভাবে তাদের পুরো এক বছরের জন্য বিদায় নেওয়ার
কথা জানাত। বোঝাই যাচ্ছে এর পেছনে থাকত
একটাই আশা, খাওয়া দাওয়া করে সন্তুষ্ট
ভূতেরা যেন কোন রকম শয়তানি আচরণ না করে।
প্রাচীন রোমানরা বিভিন্ন ধরণের আত্মায় বিশ্বাস করত। ‘লারেস’ গোত্রের আত্মাদের ভাল প্রকৃতির
বলেই মনে করা হত। তাদের নিজেদের বাড়ি এবং
এলাকায় আসার জন্য আবাহন করা হত। যেখানে তারা মানুষের অভিভাবক দেবদূতের মত বলে
বিবেচিত হত। বেশির ভাগ পরিবারের নিজস্ব ‘লারেস’
থাকত। যা আসলে কোন এক মৃত আত্মীয়র আত্মা।
আবার পুর জনগোষ্ঠীকে সাহায্যকারী এই ধরণের আত্মাও যে ছিল তার উল্লেখ মেলে।
আর এর উল্টো দিকে ছিল ‘লার্ভা’ বা মন্দ আত্মা। যারা অন্যদের ভয় দেখানোর সাথে সাথে ক্ষতি করারও চেষ্টা করত। যেসব মানুষ
কোন জীবিত পারিবারিক সদস্য না থাকা অবস্থায় মারা যেত, তাদের আত্মারাই এই ধরণের ভূতে
পরিণত হত বলে বিশ্বাস করত তারা। আবার যারা অকালে, হিংস্রতার
কারণে খুন হয়ে বা জলে ডুবে মারা যেত তারাও লার্ভা ভূতে পরিণত হত বলে মনে
করা হত। মে মাসের শুরুতে এই অশুভ আত্মাদের
জন্য প্রতি বছর তিন দিনের ‘পার্টি’ দেওয়া হত। এই আশায় যে তারা খুশি হয়ে চলে যাবে এবং কোন রকম অত্যাচার
করবে না।
আজও অনেক সংস্কৃতিতেই মৃতকে সম্মান
জানাতে বার্ষিক মৃত্যু দিবস পালন করা হয়ে থাকে। সাধারণত, এই সব উৎসবের মূল
উদ্দেশ্য থাকে, আত্মাদের খেতে দেওয়ার অছিলায় আত্মীয় বন্ধু সহযোগে একটা দারুন ভোজের
আয়োজন করা।
চীনারা, যারা
তাদের পূর্বপুরুষদের সম্মান করার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত, আত্মাদের সম্মান করার জন্য তিনটি বিশেষ আচার
অনুষ্ঠান পালন করে। হিন্দুদের ভেতর
শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানকে সম্মান জানানোর অনুষ্ঠান বলেই বিবেচনা করা হয়। হাঙ্গেরিতে দু সপ্তাহ ধরে দারুণ রকম খানাপিনা
সহযোগে ভূত উৎসব বা ঘোস্ট ফেস্টিভ্যাল পালন করে।
বংশধর বিহীন রুপে মারা যাওয়া
মানুষদের আত্মাদের এই অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়।
মৃতদের জন্য উৎসবের সবচেয়ে
চিত্তাকর্ষক দিন সম্ভবত মেক্সিকোতে পালিত হয়। যেখানে ২রা নভেম্বর ‘এল দিয়া দে লস মুর্তেস’
উদযাপন করা হয়। যার সূচনা হ্যালোইনের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায়। মেক্সিকান ‘ডে অফ
ডেড’ সমগ্র পরিবারের জন্য পুনর্মিলন এবং ভোজসভার বিশেষ দিন। ওইদিনের সাজসজ্জায় কঙ্কালের ভয়ঙ্কর সব ছবি ব্যবহার করা হয়।
এমনকি আসল মাথার খুলিও থাকে সেখানে। যা কবর থেকে উঠিয়ে
নিয়ে আসা হয়। আত্মীয়দের কবরখানার কাছে
আয়জন করা হয় পিকনিক। আর এসবের সেই একটাই উদ্দেশ্য, আগামী এক বছর তারা যেন আরাম করে
শুয়ে থাকেন। মানুষের জীবন যাত্রায় ব্যাঘাত না ঘটান।
ট্রিক ওর ট্রিট!
হ্যালোইন বা অল হ্যালোস ইভ, সম্ভবত মৃতদের জন্য সবচেয়ে পরিচিত উৎসব। এই পৌত্তলিক অনুষ্ঠানটার সূত্রপাত
হয়েছিল কেল্টিকদের আবাসস্থলে। যা পালিত হত
৩১শে অক্টোবর শরৎকালের ফসল ঘরে তোলা এবং শীতের সূচনা উপলক্ষে। ওদিকে, ভ্যাটিকানে, পোপ চতুর্থ বনিফেস সপ্তম শতাব্দীতে রোমান ফেরালিয়াকে [যা ছিল মৃতদের শান্তি প্রদান
করার জন্য আয়োজিত আরেকটা পৌত্তলিক উৎসব।] প্রতিস্থাপন করার জন্য ‘অল সেন্ট ডে’ চালু
করেছিলেন। যা পালিত হত ২১শে ফেব্রুয়ারি। পোপ চতুর্থ বনিফেস পরে এই উৎসবের তারিখ পরিবর্তন করে ১লা নভেম্বর করেন।
তারপর আসতে আসতে সময়ের ধারায় কেল্টিক, পৌত্তলিক এবং খ্রিস্টান উৎসব সব মিলে মিশে একটা বড় উৎসবে
পরিণত হয়। যার নাম হ্যালোইন।
আপাতত এখানেই ভূত কথার প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত
হল। এর পরের অধ্যায় থেকে আমরা নেড়ে চেড়ে দেখব প্রাচীন গ্রীসে নথিভুক্ত হয়ে থাকা কিছু ভূতের গল্প। যেখানে আমরা দেখব কীভাবে সেই সব
ভুতুড়ে সন্ত্রাসের কাহিনিগুলোকে সেই সময়ের মানুষ গ্রহণ করে। যা পরে খ্রিস্টান
চার্চ দ্বারা অভিযোজিত হয়। এরকম নানান
বিষয়।
২য় অধ্যায় এর লিঙ্ক