Search This Blog

Monday, November 27, 2017

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (১২৪-১৩৪) একাদশ অধ্যায় - ষষ্ঠ অভিযান “ইস্কেন্দারের সমাধি” [সম্পূর্ণ] প্রতিম দাস

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (১২৪-১৩৪)
একাদশ অধ্যায় - ষষ্ঠ অভিযান
“ইস্কেন্দারের সমাধি” [১-১১]
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০০
.
একাদশ অধ্যায় - ষষ্ঠ অভিযান
“ইস্কেন্দারের সমাধি”
ফ্র্যাঙ্কফুরট, জার্মানি
লাক্সর , ইজিপ্ট
১৯শে মার্চ, ২০০৬         
টারটারাসের আগমনের আগের দিন
০০০০০০০
মেসে টাওয়ার
ফ্র্যাঙ্কফুরট, জার্মানি
১৯শে মার্চ, ২০০৬, বিকেল তিনটে
টারটারাসের আগমনের একদিন  আগে
০০০০০০০০

যে সময়ে ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান ধ্বংস স্তুপে পরিণত হচ্ছে, ঠিক ওই একই সময়ে উইজার্ড, জো আর ফাজিকে লিমুজিনে করে নিয়ে ফ্র্যাঙ্ক ফুরট মিলিটারী বেস এয়ার ফিল্ড থেকে ফ্র্যাঙ্কফুরট শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সশস্ত্র রক্ষীদের পাহারায় ।
উইজার্ড এবং বাকি দুজন  রোমে ধরা পড়ার পর ওদের নিয়ে যাওয়া হয় জার্মানিতে ।  তারপর ফ্র্যাঙ্কফুরটের বাইরে অবস্থিত ওই বেসে রাত কাটিয়ে এখন ওদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইউরোপিয়ান কোয়ালিশনের হেড কোয়ার্টারে । মেসে টাওয়ার । সেন্ট্রাল ফ্র্যাঙ্ক ফুরট ।
মেসে টাওয়ার ইউরোপের অন্যতম সবচেয়ে বড় স্কাইস্ক্যাপার । ৫০ তলা উঁচু এবং এক বিশেষ কারনে এর পরিচিতি । এর মাথায় বসান আছে একটা দারুন সুন্দর কাঁচের পিরামিড । তার থেকেও বড় ব্যাপার – খুব মানুষ জানে – এই পিরামিডকে ভাগ ভাগ করা আছে গোল্ডেন ক্যাপ স্টোনের আদলে ।
আবার আরো একটা ব্যাপার এই যে যখনই কোনও পিরামিড সুউচ্চ কোনো টাওয়ারের মাথায় বসান হয় সেটা ওবেলিস্ক এর রুপ ধারন করে।
আসল কথা সবই সেই সূর্য উপাসনার প্রতীক ।
কন্সপিরেসী থিয়োরি অনুসারে বলা হয় জার্মানির মেসে টাওয়ার, লন্ডনের  দ্য ক্যানারী হোয়ারফ টাওয়ার এবং নিউ ইয়র্কের পুরোনো ওয়ার্ল্ড ফাইনান্সিয়াল সেন্টার – সবগুলো বানানো হয়েছে বিশাল মাপের কাঁচের বেলিস্কের আদলে । তিনে মিলে তৈরি করা হয়েছে এক আধুনিক  ‘সুপার ওবেলিস্ক’   ত্রয়ী । বানিয়েছে দুটো সূর্য উপাসক গোষ্ঠী – ক্যাথলিক চার্চ আর ফ্রি ম্যাসন।
হাতকড়া বদ্ধ অবস্থায় মেসে টাওয়ারের একেবারে ওপরের তলায় জো আর ফাজির সাথে নিয়ে আসার সময় উইজার্ড এই কথাগুলো ভাবছিল।
পিরামিড আকৃতির ছাদটার তলায় ওরা দাঁড়িয়েছিল। চারদিকে কাঁচের দেওয়াল । যার ভেতর দিয়ে গোটা ফ্র্যাঙ্কফুরট শহরটাকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছিলো ।
ফ্রানসিস্কো ডেল পিয়েরো ওখানেই অপেক্ষা করছিলেন ।
‘ম্যাক্সিমিলিয়ান এপ্পার! আমার পুরোনো সেমিনারী বন্ধু । তোমার মতো মনের মানুষকে  না পাওয়াটা চার্চের পক্ষে কত বড় অপ্রাপ্তি তা আমার চেয়ে ভালো আর কে বোঝে । হে আমার পুরোনো বন্ধু , তোমায় আবার দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে ।’
‘আমি তোমার বন্ধু নই মোটেই ফ্রানসিস্কোএসবের মানেটা কি?’
‘এসবের মানেটা কি? এসবের একটাই মানে ম্যাক্স-পাওয়ার...ক্ষ মতা । সেই চিরন্তন চাহিদা । যাকে পাওয়ার জন্য যত লড়াই । একজন মানুষের ওপর অন্য মানুষের শাসনের অধিকার। ইউরোপ বনাম আমেরিকা বলতে পারো । চার্চ বনাম ফ্রীম্যাসন বলতে পারো । কিচ্ছু যায় আসে না । সব এক ব্যাপার । শক্তি দখলের এক অন্তহীন যুদ্ধ যা চলে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে । চরম সেই মুহূর্ত যা ৫০০০ বছরে একবার ঘটে তা আবার আমাদের সামনে এসে উপস্থিত । এমন এক মুহূর্ত যা আমাদের দিতে পারে অ্যাবসলিউট পাওয়ার ... অসীম ক্ষমতা । টারটারাসের সেই ক্ষনের সাক্ষী হতে চলেছি আমরা।
উইজার্ড, জো এর দিকে তাকালেন, ‘আশা করছি এবার বুঝতে পারছো কেন আমি চার্চের যাজক হওয়ার রাস্তা থেকে সরে এসেছিলাম ।’ ডেল পিয়েরোর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কিন্তু এই মুহূর্তে আমেরিকানদের কাছে আছে চারটে টুকরো । তোমার কাছে একটা । বাকি দুটোর এখনো হিসাব মেলেনি ।’
‘ম্যাক্স, এই মুহূর্তে কার কাছে টুকরোগুলো আছে সেটা আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় । গুরুত্বপূর্ণ এটাই যে যখন টারটারাসের আগমন হবে তখন ওটা কার দখলে থাকবে,’ ডেল পিয়েরো উত্তর দিলেন। ‘তাছাড়া আমরা খুব শীঘ্রই সবকটা টুকরো পেয়ে যাবো । তোমাদের সাহসী উৎসাহী ক্যাপ্টেন ওয়েস্টের কারনে আপাতত জেনে গিয়েছি আলেকজান্ডারের সমাধির অবস্থান লাক্সরে । ঠিক কোনখানে সেটা জানা যাবে সকালে সূর্যোদয়ের সময়ের আলো লাক্সর মন্দিরের ওবেলিস্ক দের সাহায্যে। আর এই খবরটা আমেরিকানরাও জানে ।
‘ওরা যখন লাক্সরে আসবে আমরা থাকবো ওদের অভ্যর্থনার জন্য। একটু আগে বললাম না এখন টুকরোগুলো কার কাছে আছে সেটার থেকে গুরুত্বপূর্ণ টারটারাসের সময় ওগুলো কার কাছে থাকবে । আমরাই ওগুলোর দায়িত্বে থাকবো যখন টারটারাস তার কাজ করবে।’
‘আমরা?’ উইজার্ড বলে উঠলেন ।
‘ও হো তাই তো, আমার তরুণ বন্ধু এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্যর সাথেতো তোমার দেখাই হয়নি...’
ডেল পিয়েরো একটু সরে দাঁড়ালেন । দেখতে পাওয়া গেল একটা ছোট্ট ছেলেকে । কালো চুল, কালো চোখের মনি এবং কালো কুঞ্চিত ভুরু । উইজার্ডের দিকে এমন এক ভঙ্গীতে তাকিয়ে ছিল যার  একটাই অর্থ ক্ষমতার তাচ্ছিল্য ।
‘ম্যাক্স এপ্পার, পরিচয় করিয়ে দিই । এর নাম আলেকজান্ডার। অর‍্যাকল অফ সিয়ার ছেলে । থথের শব্দাবলী এবং টারটারাসের চলন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলতে পারো ।’
‘হ্যালো, মাই বয় ,’উইজার্ড বললেন ।
ছেলেটি কোনো উত্তর দিলোনা ।
ডেল পিয়েরো বললো, ‘ওকে জন্মের দিন থেকে বিশেষ দেখা শোনার মাধ্যমে বড় করে তোলা হয়েছে –’
‘সেই দিন ...হুম সেদিন তো তুমি ওকে ওর মায়ের কাছ থেকে কেড়ে...’
‘ওকে জন্মের দিন থেকে বিশেষ দেখা শোনার মাধ্যমে বড় করে তোলা হয়েছে আগামিকালের বিশেষ ঘটনার জন্য। থথ বিষয়ে ওর জ্ঞানের পরিধির মোকাবিলা করার মতো কেউ নেই। আগামীকালের অনুষ্ঠানের বিষয়ে ও যা জানে আর কেউ জানে না। এই ছেলের জন্মই হয়েছে শাসন করার জন্য । ওর মানসিকতাটাই একেবারে প্রকৃত শাসকের মতো । শারীরিকভাবে শক্তপোক্ত। সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম । বুদ্ধিমান ... সাথে সাথেই দুর্বলতা এবং বোকামোকে একদম প্রশ্রয় দেয় না।’
‘আমার তো ধারনা ছিল এ জগতের সেরা শাসকেরা দুর্বলদের রক্ষা করার দায়িত্বটাই বড় করে দেখেন । দুর্বলদের শাসন করার বদলে,’ উইজার্ড বললেন।
‘ওহ। ম্যাক্স, তোমার এই আইডিয়ালিজমটা আমার খুব ভালো লাগে বুঝলে! খুব মহান চিন্তা কিন্তু যুক্তির দিক থেকে একেবারে জঘন্য । এই থিয়োরীটা কেমন বলো দেখি – শক্তিশালীরা শাসন করবে আর দুর্বলেরা শাসিত হবে । কিছু মানুষের জন্মই হয় শাসন করার জন্য- আর বেশির ভাগ জন্মায় শাসিত হওয়ার জন্য । আগামীকালের পর থেকে তোমারও স্থান হবে ওই শাসিতের দলে ।’
জো তাকালো আলেকজান্ডারের দিকে । সে তাকানোর জবাব ছেলেটা ফিরিয়ে দিলো শীতল ভাবলেশহীন চোখে।
‘এই যে শুনছো, ‘জো ডাকলো, ‘ডুয়াল প্লেয়ার মোডে কোনোদিন স্প্লিন্টার সেল গেম খেলেছো?’
ডেল পিয়েরো ভ্রু কুঁচকে তাকালো , কথাটার মানে বুঝতে না পেরে । কিন্তু ছেলেটা জানে স্প্লিন্টার সেল গেম   কি জিনিষ।
‘ওটা একটা নিছক খেলার বস্তু । এই সব খেলার মাধ্যমে আমরা শাসকেরা জনগনকে খুশী রাখি এবং আনন্দ পেতে সাহায্য করি,’ ছেলেটি উত্তর দিলো । ‘গেমস আসলে বোকাদের জন্য । আমি ওসব গেমস খেলি না ।’
‘উত্তরটা কি ঠিক হলো? কিছু এমন গেমস ও আছে যা আমাদের অনেক কিছু শেখায় জীবনের চলার পথে কি করা উচিত না করা উচিত সে বিষয়ে,’ জো বল লো । ‘এই ব্যাপারটা তুমি কোনোদিন ভেবে দেখেছো কি?’
‘আমার জীবনে সাধারন মানুষের মতো দিন যাপন নেই।’
‘তোমার কি জানার ইচ্ছে হচ্ছে যে আমি ডুয়াল মোডে ওই স্প্লিন্টার সেল গেম খেলে কি শিখেছি?’
‘ইচ্ছে হলে জানান।’
‘ওই গেম খেললে শেখা যায় যে তোমাকে সাহায্য করার জন্য তোমার পেছনে কেউ একজন আছে,’ জো বললো। ‘ তারই প্রেক্ষিতে আলেকজান্ডার আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে  , যখন তুমি কঠিন কোনও সমস্যায় পড়বে তোমাকে কে সাহায্য করবে?’ ডেল পিয়েরোর দিকে তাচ্ছিল্যের চোখে তাকিয়ে বললো, ‘ওই লোকটা? নাকি...’ ঘরে উপস্থিত রক্ষীদের দিকে তাকিয়ে নিয়ে , ‘...ওই ওরা?’
ডেল পিয়েরো চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, ‘বেশ বেশ , তা এই মুহূর্তে তোমাদেরকে কে সাহায্য করবে সেটা আমি জানতে পারি কি?’
উইজার্ড শান্ত গলায় বললেন, ‘জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র।’
ডেল পিয়েরো মাথা নেড়ে বললো, ‘হুম... বিখ্যাত ক্যাপ্টেন ওয়েস্ট। গতকাল প্যারিসে হচই ঘটানোর পর তার   খবরতো বোধ হয় তোমাদের জানা নেই । একটু পিছিয়েই আছো । তোমাদের বন্ধু মিঃ ওয়েস্ট আজ দক্ষিন ইরাকে চলে গেছেন । ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান আবিষ্কার করার জন্য ।’
দারুন ব্যাপার...যাও জ্যাক যাও ...’ জো বললো ।
উইজার্ডের ভুরু কুঁচকে গেলো । উনি জানেন না ওয়েস্টের ইরাক অভিযানের বিষয়ে – জানেন না কেনিয়াতে আমেরিকানরা কি ঘটিয়েছে – জানেন না জিউসের টুকরোটার সাথে সাথেই উনি হারিয়েছেন জীবন সঙ্গিনী ডরিস এবং এই মিশনের অন্যতম সদস্য বিগ ইয়ার্সকে।
‘মিস কিসানে আমার ইচ্ছে হচ্ছে না তোমার আনন্দে জল ঢেলে দিতে তবুও না বলে পারছি না,’ ডেল পিয়েরো বললো । ‘যত দূর শুনেছি ইরাকে ক্যাপ্টেন ওয়েস্টকে প্রায় ১০০০০ আমেরিকান সেনার মুখোমুখি হতে হয়েছে । তারপর কি হয়েছে সেটা আমার ঠিক জানা নেই । আমাদের গোপন সংবাদদাতার খবর অনুসারে ওদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে।’
‘আর কিছু ...’ উইজার্ড কৌতূহলটাকে চাপতে পারলেন না ।
ডেল পিয়েরো উইজার্ডের দিকে একটা যোগাযোগ সংক্রান্ত প্রিন্ট ছুঁড়ে দিলেন – পনেরো মিনিট আগেই এসেছে ওটা – লেখা আছে –
TRANS INTERCEPT
SAT BT-1009/03.19.06-1445
A44-TEXT TRANSMISSION
FROM: UNKNOWN SOURCE/AIRBORNE ORIGIN (IRAQ)
TO: UNKNOWN DESTINATION, MARYLAND (USA)
VOICE 1[জুডা] হারিথা মিশন সাকসেস ফুল ।আমরা এইচ জি টুকরো দখল করতে পেরেছি । সাথেই পেয়েছি মেয়েটাকেও । আপাতত যাচ্ছি ইজিপ্টের দিকে । লাক্স রে ২০শে মার্চ রাত দুটোয় ল্যান্ড করবো । বলাই বাহুল্য ওখানে ভোর বেলায় অবশিষ্ট ওবেলিস্ক থেকে  দরকারি মাপজোক করে নেবো ।
VOICE 2 (USA): ছোটো দেশের সংগঠনের দলটার কি খবর?
VOICE 1[জুডা] এইচ জি এর ভেতরে ওদের সাথে মোলাকাত হয়েছে খুব একটা কিছু করতে পারেনি ওরা । ওয়েস্ট মারা গেছে । ওর সেরিবেল্লামের ভেতর বসানো ট্রেসার চিপ এই ব্যাপারটা কনফার্ম করেছে । পরের ধাপ রেডি তো?
VOICE 2 (USA): হ্যাঁ সব তৈরী । ইজিপশিয়ান সরকারকে জানানো হয়ে গেছে যে তোমরা লাক্সরে যাচ্ছো । ওরা বে ভালো ভাবেই সাহায্য করছে আমাদের। অবশ্য ভালো অর্থের বিনিময়ে । গিজাতে তোমার কথা মতো প্ল্যাটফর্ম খাড়া করা হয়ে গেছে । সাথেই পুরো এলাকাটা ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে । জনসাধারনের প্রবেশ নিষেধ। সংস্কারের কাজ চলছে এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে।
VOICE 1[জুডা] ধন্যবাদ । এখন থেকে পুরো ব্যাপারটা আরও বেশী গোপনীতার সাথে করতে হবে। এখানে বাকি কাজ সারার জন্য  ছোট্ট একটা দলের দরকার। ১০০ জন। তার বেশি না। আমি চাই না খুব বেশি মানুষের নজরে আসুক ব্যাপারটা।
VOICE 2 (USA): বেশ, সেটাই করা হবে।

  উইজার্ডের মুখটা বিষণ্ণতায় ভরে গেল ভয়ানক শব্দ তিনটে দেখে – ওয়েস্ট মারা গেছে ।
‘আমেরিকানদের আত্ম বিশ্বাসের মাত্রা টা একটু বেশী,’  সামনের দিকে এগিয়ে এসে ডেল পিয়েরো বললো । ‘ওরা যখন লাক্সরে পৌঁছাবে মাত্র ১০০ সেনা নিয়ে ওরা দেখতে পাবে তার চেয়ে তিন গুন বড় একটা সেনাবাহিনী ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। ক্যাপ্টেন ওয়েস্টের মৃত্যুর শোক পরে পালন কোরো এপ্পার । এই নাটকে এখনো তোমার আরো কিছু অভিনয় বাকি আছে – আমি তোমাকে একটু অন্যভাবে ব্যবহার করার কথা ভেবে রেখেছি।
‘এবার সময় হয়েছে এই সফরের শেষ অংশে পৌছানোর । আর সেই সময় টায় তুমি থাকবে আমার সাথে। এ সফর শেষ হবে আলেকজান্ডারের ভাগ্যের চরম প্রাপ্তির মাধ্যমে । সময় হয়ে গেছে আমেরিকান সেনাদের সাথে দেখা করার এবং টুকরোগুলো হাতিয়ে নেওয়ার । সময় হয়ে গেছে লাক্সরে যাওয়ার ।’
০০০০০
পুরোহিতের প্রবেশপথ
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান
পূর্ব হারিথা, ইরাক
১৯শে মার্চ, ২০০৬, স্থানীয় সময় সন্ধে ছ’টা
[দুপুর দুটো ফ্র্যাঙ্কফুরটের সময় অনুসারে]
টারটারাসের আগমনের একদিন আগে
০০০
এক ঘণ্টা আগের সময় ।
জিগুরাতের ওপর ভেঙে পড়লো অতিকায় স্ট্যালেক্টাইটের ঝুলন্ত উদ্যান । সব কিছু ভেঙে চুরে নেমে গেল পুরোহিতদের প্রবেশপথের চারকোনা সুড়ঙ্গ চুরমার করে । নিচে জ্যাক ওয়েস্ট আর পুহ বিয়ার মাথা নিচু করে এক পাথরের প্যাসেজ ওয়ে ধরে প্রানপনে ছুটে চলেছে । ওদের  পেছনে ওপরের চাপে ভেঙে যেতে থাকা এই প্যাসেজ ওয়ে যেন ধেয়ে আসছে ওদের গিলে খাওয়ার জন্য! ভেঙে পড়া ছাদ যেন কোনও রাক্ষসের ক্রমাগত বন্ধ আর খুলতে থাকা চোয়াল ।
নিক্ষেপ করা মিসাইলের শব্দ শুনেই ওয়েস্ট অনুমান করেছিল জুডার মতিগতি ।
পুহ বিয়ারের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ‘আমাদেরকে চিপে মেরে ফেলার ধান্দা করেছে ওই হতচ্ছাড়া জুডা! হাতে একদম সময় নেই, শুরু করো দৌড়াতে !’
সাথেই সাথেই শুরু হয়েছিল দুজনের দৌড়ানো। এখানেও ওদের সাথী সেই হোরাস ।
উলম্ব সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে নেমে আসার পর বেশ কিছু ফাঁদ এড়িয়ে ওরা এই আনুভূমিক প্যাসেজ ওয়েটায় পৌছায় ।
ঠিক তক্ষনি জিগুরাতের ওপর আছড়ে পড়ে ঝুলন্ত বাগান । শুরু হয় ধ্বংসলীলা – আর এভাবেই আপাতত ওয়েস্ট, পুহ বিয়ার আর হোরাস ঢুকে পড়েছে এখানে। আর অনেকগুলো চেনা ফাঁদ এড়িয়ে ভেঙে পড়তে থাকা ছাদের তলায় চেপ্টে মরার হাত থেকে বাঁচতে ওদের অদম্য প্রচেষ্টা চলছে ।
আর ঠিক এই কারনেই ওরা নিজেদের অজান্তেই পৌছে গেল পরবর্তী ফাঁদটার কাছে ।
হঠাৎ করেই ফাঁদটা ওদের সামনে এসে গেল – একটা মাপে ছোটো কিন্তু দারুন গভীর খাদ । কালো পাথুরে দেওয়াল এবং চোরাবালিতে ভর্তি মেঝে । ঠিক যেমনটা আগে দেখেছে ওরাওপরে ছাদের গায়ে সেই হাতল লাগানো । শেষ হয়েছে অপর প্রান্তে গিয়ে  আর এক দরজার মুখে। তিরিশটা মতো হাতল ঝুলে আছে ওখানে ।
তবে একটা বিরাট পার্থক্যও দেখা যাচ্ছে । এই খাদের দেওয়ালের খোদাই করা ছবিগুলো । এরকম আগে ছিল না। অনেক অনেক সাপের ছবি – দেওয়ালের ঠিক মাঝখানে একটা বিরাট মাপের সাপের প্রতিকৃতি দেখা যাচ্ছে যে জড়িয়ে ধরে আছে একটা গাছ কে ।
‘নিনগিজিডা, সর্প-দেবতা ...’ ওয়েস্ট বললো , বিরাট সাপটাকে দেখে । ‘এটাই নিনগিজিডার খাদ ...’
সহসাই  কিছু একটা নড়াচড়া করছে বলে মনে হলো ওয়েস্টের দেখতে পেলো অপর প্রান্তের দরজার কাছে একটা অবয়ব নড়াচড়া করছে ।
ঘুরে দাঁড়ালো অবয়বটা , তাকালো ওয়েস্টের দিকে, হাসলো বিকৃত ভাবে ।
মুস্তাফা জাঈদ ।
পেছন দিকে ক্রমাগত ভাঙতে থাকা সুড়ঙ্গের ছাদটাকে একাবার দেখলো ওয়েস্ট ।
‘জাঈদ! এই হাতলগুলো ধরার নিয়মটা কি?’
জাঈদ ওয়েস্টের দিকে শয়তানি চোখে তাকালো । ‘এইরে আমার মনে হচ্ছে তোমাকে সে কথা জানানোর ইচ্ছে আমার নেই!   তুমি আমাকে গুয়ান্তানামো বে থেকে উদ্ধার করেছিলে বলে  অনেক ধন্যবাদ । তোমার জন্য আমি ক্যাপস্টোন উদ্ধারের একটা অভিযানে অন্তত যোগ দিতে পেরেছি। অবশ্য তার জন্য আমি আমার জানা সমস্ত জ্ঞান উজাড় করে দিয়েছিলাম । যেগুলো তোমাদেরকে জ্ঞানী প্রফেসর এপ্পার জানাতে ভুলে গিয়েছিলেন। টারটারাসকে নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য তোমার মেয়েটাকে বলি দেওয়া হবে সম্ভবত । যাকগে, ধন্যবাদ এবং বিদায় । এখন নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নাও বাপু !’
কথা শেষ করেই ওখান থেকে অদৃশ্য হলো সন্ত্রাসবাদী জাঈদ । চলে গেল ওদিকের প্যাসেজওয়ে দিয়ে ... ওয়েস্ট আর পুহ বিয়ারকে জীবনমরণের কার্নিশে দাঁড় করিয়ে রেখে।
‘হান্টস ম্যান! এবার কি করবো আমরা?’
ওয়েস্ট মাথা ঘুরিয়ে দেখলো ভেঙে পড়তে আর খুব  বেশি বাকি নেই সুড়ঙ্গের ছাদ ওদের পেছনে।
এখানে থাকার অর্থ যেচে মৃত্যু বরন করা ।
তাকালো সামনের দিকের গভীর খাদটার দিকে ...নিনগিজিডার খাদ ...নাজি ডায়েরীর পাতা থেকে লেখাগুলো ভেসে এলো ওর মাথায় –
“কিন্তু নিনগিজিডার খনি থেকে সাবধান থেকো
যারা প্রবেশ করবে  সর্প -প্রভুর গর্তে
আমি এটা ছাড়া আর কোন রকম উপদেশ দিচ্ছি না
সমস্ত আশা পরিত্যাগ করো
ওখান থেকে পালানোর যে কোনোই পথ নেই ।”
এর অর্থ এই খাদে প্রবেশের অর্থ মৃত্যু।
এদিকেও মৃত্যু...ওদিকেও মৃত্যু ।
সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
‘কিচ্ছু করার নেই ,’ ওয়েস্ট বললো। ‘ হাতল ধরেই বাঁচতে হবে ...চলো!’
ওরা ঝুলে এগোতে থাকলো , নিচে চোরাবালির হাতছানি । গোটা ছয়েক হাতল পার হতেই পেছনের সুড়ঙ্গ পুরো ভেঙে গেল।
আট নম্বর হাতলটায় ওয়েস্টের হাতের টান পড়তেই ওটা খুলে চলে এলো ... ওয়েস্ট পড়তে শুরু করলো  
পুহ বিয়ার ওটা বাদ দিয়ে নবমটাকে ধর লো...তারপর দশমটাতে টান দিতেই ... শুরু হলো পতন । ওয়েস্টের পেছনে পেছনেই, চোরাবালি অভিমুখে ...নিনগিজিডার খাদের দিকে...যেখান থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই।
বড় সড় মাপের দুটো থপাক শব্দ করে ওরা এসে পড়লো চোরাবালির ওপর।
ওয়েস্ট পড়লো পিঠের দিক করে ...যতটা পারলো প্রসারিত করলো শরীরকে যাতে ডুবে না যায় সঙ্গে সঙ্গে ... অদ্ভুত ব্যাপার...ফুট চারেক নিচেই ওর পা ঠেকলো শক্ত মেঝের ওপর।
ওরা এখানে দাঁড়াতে পারছে!
খাদের নিচে বুক পর্যন্ত বালির ভেতরে দাঁড়িয়ে গেল ওয়েস্ট আর পুহ বিয়ার।
ওদের চারপাশের দেওয়াল ডিওরাইটে বানানো, খাড়া এবং মসৃণ।
‘খুব একটা খারাপ না  কি বলো ...’ পুহ বললো। ‘আমি তো বুঝতে পারছি না ইমহোটেপ এটা থেকে  পালানো অসম্ভব লিখে ছিলেন কেন –’
আর প্রায় সাথে সাথেই উত্তরটা পেয়ে গেল পুহ ...ওপরের হাতল লাগানো ছাদ শুরু করলো নিচের দিকে নামতে । ছাদটা এই খাদের চারদিকের দেওয়ালের সাথে একেবারে নিখুঁত ভাবে সমান ।
ওই নেমে আসতে থাকা ছাদের কারনটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় – দুটনের ওই পাথরের চাঙড় – ওয়েস্টদের চোরাবালির ভেতরে ঠেঁসে ধরে চেপ্টে মেরে দেবে।
পরিস্থিতি দেখে বিদ্যুতের গতিতে ওপর দিকে উড়ে চলে গেল হোরাস । ওর লক্ষ্য জাঈদ যে পথে পালিয়েছে এই দরজা । সেটা করতে সক্ষমও হলো ছোট্ট ফ্যাল্কনটা ছাদ নেমে এসে দরজার মুখটা বন্ধ করার আগেই ওটা ঢুকে গেল ভেতরে।
ভেতরে বসে ফ্যাল্কনটা দেখতে পাচ্ছিলো কি কারিগরীতে পাথরের চাঙরটা নিচে নামছে – ছাদটা ঝুলে আছে  ছাদের গায়ে আটকানো শ্যাফটের সাথে লাগানো দুটো মোটা শিকলের সাহায্যে ঘড়াং ঘড়াং শব্দ করে ওটা নামছে নিচের দিকে ।
নিচে পুহ বিয়ার দেখতে পেলো কিছু একটা যেন নড়ছে ।
একটা বুটিদার ছোপ ছোপ শরীর ...বিরাট মাপের একটা পাইথন বেরিয়ে আসছে দেওয়ালের গায়ের একটা গর্ত দিয়ে । নেমে পড়লো চোরাবালির ভেতরে !
‘হান্টস ম্যান!’
‘দেখেছি...আর তিনটে আছে এপাশে ওপাশে!’ নামতে থাকা ছাদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো, ‘হোরাস! বালতিটাকে রিসেট করে দে! রি-সেট !’
খাদের দেওয়ালের গায়ে আর তিনটে গর্ত ... সেখান দিয়েও এবার বেরিয়ে আসছে একই রকম সরীসৃপ দেহাবয়ব ...বিশাল পাইথন।
‘নিনগিজিডা...’ ওয়েস্ট বললো, সাপগুলোর দিকে তাকিয়ে। ‘আসিরিয়ানদের সর্প-দেবতা । একই সাথে এদের জীবন বৃক্ষের দেবতাও বলা হয়ে থাকে। খ্রিষ্টান ধর্ম এই ভাবনাটাকে চুরি করে ইডেনের স্বর্গ উদ্যানে বসিয়ে দিয়েছিল । যে গাছ থেকে আপেল খাওয়ার জন্য ইভকে প্রলোভিত করে   ।
ছাদটা এই মুহূর্তে অর্ধেক পথ নেমে চলে এসেছে।
সাপগুলোও আস্তে আস্তে চোরাবালি ঠেলে এগিয়ে আসছে শিকারের উদ্দেশ্যে।
এর মধ্যে একটা ওয়েস্টের ডান পা জড়িয়ে উঠে এলো সামনের দিকে। বিশাল মুখটা খুললো গ্রাস করার মানসিকতায় । ওয়েস্টের কাছে বন্দুক নেই ওটাকে গুলি করার জন্য । কোমরে ঝুলানো এক্স বারটাকে হাতে নিয়ে গুঁজে দিলো ওটার মুখের ভেতরে । সাপটা বাস্তবিক পক্ষেই থতমত খেয়ে গেল । হাঁ মুখের ভেতর এক্স বারটা এমন ভাবে আটকে আছে যে মুখ বন্ধ করতেই পারছে না। ওয়েস্টের শরীর ছেড়ে পাগলের মতো মাথা ঝাড়তে ঝাড়তে ওটা নেমে গেল বালির ভেতরে।
‘হোরাস!’ ওয়েস্ট চিৎকার করে উঠলো । ‘ ওপরে তুই কি করছিস এতোক্ষন ধরে?’
হোরাস এবার উড়ে যায় মোটা শিকল আটকানো শ্যাফটের ভেতর দিয়ে ওপরের দিকে । যার সাথে জুড়ে আছে একটা বড় মাপের ব্রোঞ্জের পুলি । সেটা   আবার নেমে গেছে আর চওড়া অন্য একটা শ্যাফটের কাছে ।
পুলির ওপর দিয়ে শিকলটা পাক খেয়ে নেমে গেছে অন্য শ্যাফটটার কাছে , যার অন্যপ্রান্তে সংযুক্ত আছে ...একটা বিরাট মাটির বালতি। দশ ফুট চওড়া – নিশ্চিতভাবে এই জগতের সবচেয়ে বড় বালতি । ওর পাশ দিয়েই বয়ে যাচ্ছে একটা ছোট্ট কিন্তু প্রবল ধারার   জলপ্রপাত । যার জল এসে পড়ছে মানব নির্মিত এক নালায় ।
এই মুহূর্তে বালতিটা শক্ত সমর্থ কব্জার ওপর ঝুলে আছে , কাত হয়ে, সমকোণের ভঙ্গীতে । ওপরের খোলা অংশ চলে এসেছে এক পাশে। সোজা করে ওটাকে রাখা  হলে ওটায় জল প্রপাতের জল ভর্তি হতে থাকবে ... ভর্তি হলেই ... শিকলের টানে ... উঠিয়ে নেবে নিচের দিকে নামতে থাকা নিনগিজিডা খাদের ছাদটাকে।
এর পরিচিতি ‘ওয়াটার বেসড মেকানিজম’ নামে। ইজিপ্টের সব ছাদ নেমে আসার ফাঁদ এভাবেই কাজ করে ।
সহজ সরল এই পদ্ধতির আবিষ্কারক ছিলেন প্রথম ইমহোটেপ। এর জন্য মাত্র তিনটে জিনিষ দরকার – মাধ্যাকর্ষণ, জল ... আর একটা পুলি ।
ওয়েস্ট অষ্টম হাতলটা টেনে জল ভর্তি বালতিকে আটকে রেখেছিল যে টুকরো তাকে সরিয়ে দিয়েছিল ।
যখন জল ভর্তি ছিল তখন ওই বিশাল বালতি তার সমপরিমাণ ওজনের ছাদটাকে আটকে রেখে দিয়েছিল, শিকলের বাঁধনে । কিন্তু টুকরো সরে যেতেই ওটা কাত হয়ে যায় , বালতির জল কমে যাওয়ার সাথে সাথেই টান কমে যায়। ঢিলে হয় শিকল... নামতে শুরু করে ছাদটা ।
দ্বিতীয় একটা ট্রিগার স্টোন আছে এই খাদের মেঝেতে – রিসেট ট্রিগার স্টোন – যেটা চালু হবে যখন ওই পাথরের ছাদ এসে ধাক্কা খাবে মেঝেতে। আবার সোজা হয়ে যাবে বালতি। ভর্তি হতে থাকবে জল । তার চাপে ওপরে উঠে যাবে মেঝে , অপেক্ষা করবে আবার কারো ভুলের ।
সত্যিই এই নিনগিজিডার খাদ থেকে পালানোর উপায় নেই। কোনও কৌশল নেই এর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার।   কোনও ধাঁধার সমাধান করে একে আটকানো যায় না। কোনও বিশেষ দরজা নেই যা পালাতে সাহায্য করবে।  এখানে একবার পড়ে গেলে তোমার পালানোর সব পথ বন্ধ ।
তবে তোমার কাছে যদি হোরাসের মতো বন্ধু থাকে তাহলে অনেক কিছুই হতে পারে ।
দ্রুত উড়ে গেল হোরাস শিকল বাঁধা শ্যাফটের পাশ দিয়ে । পার হলো পুলি । সোজা এগিয়ে গেলো বিশাল মাটির বালতিটার দিকে ।
নামলো ওটার কাছে । পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল । তাকাল এদিকে ওদিকে ...খুঁজছিল সেই টুকরোটাকে যা দিয়ে আটকানো ছিল ওই দৈত্যাকার বালতি ।
ওদিকে খাদের ভেতরে ছাদ নেমে আসছিল দ্রুতআর মাত্র সাতফুট বাকি ।
বাকি পাইথনগুলো এদিকে ওদিকে পাক মারছে । ঘুরপাক খাচ্ছে ওয়েস্ট আর পুহ এর চারদিকে।
সহসাই একটা প্রায় লাফিয়ে ঢুকে গেল বালির ভেতরে – অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মুখ তুলে বেরিয়ে এলো পুহ এর একপাশে ! জড়িয়ে ধরলো পুহকে , চেষ্টা চালালো ওর শরীরের হারগুলোকে চেপে ভেঙে দেওয়ার। ইতিমধ্যে পু হাতে নিতে পেরেছে ওর কে-বার চাকুটা । শরীরের ওপর থেকে চাপ কমতে শুরু করলো সাপটার । কিছুক্ষনের ভেতরেই দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাইথনের মাথাটা পড়ে গেল চোরাবালির ভেতরে ।
ছাদ নেমে আসছে ।
আর পাঁচ ফুট ।
ওয়েস্টের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও সত্যিই এবার চিন্তায় পড়েছে ।
চার ফুট ।
বাকি পাইথন দুটো যেন বুঝতে পারলো  কি হতে চলেছে। অতি দ্রুত ওরা ফিরে গেল নিজেদের গর্তের ভেতরে ।
তিন ফুট ।
‘হোরাস...!’ আর্ত চিৎকার ছাড়লো ওয়েস্ট ।

বালতির শ্যাফটটার কাছে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে হোরাস খুঁজছিল নির্দিষ্ট টুকরোটাকে অনেক বার এই ব্যাপারটা ওকে শেখানো হয়েছে।
হ্যাঁ ওইতো এবার ও দেখতে পেয়েছে , যা ও খুঁজছিল – একটা ছোট্ট হুকের মতো । ওটা খুলে যেতেই কাত হয়ে গিয়েছিল বালতিটা ।
ছোট্ট ঠোঁটে করে হুকটাকে উঠানোর জন্য এগিয়ে গেলো   হোরাস ।

আর মাত্র দু ফুট...
ওয়েস্ট বললো, ‘হোরাস! কাম অন ! আমি জানি তুই এটা করতে পারবি! অনেকবার করে দেখিয়েছিস অভ্যাস করার সময় !’
এক ফুট...
এই মুহূর্তে ওয়েস্ট আর পুহ নিজেদের শরীর বালির ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে শুধু মুখটাকে উঠিয়ে রেখেছে ।
ছয় ইঞ্চি ...
‘বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে নাও পুহ !’
দুজনেই জোরে শ্বাস টেনে যতটা সম্ভব অক্সিজেন ভর্তি করে নিলো ফুসফুসে ।
ওদিকে বালতির শ্যাফটের কাছে  হোরাস আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রিসেট হুকের টুকরোটাকে মুখে তোলার  । কিছুতেই উঠাতে পারছে  না ওটাকে। ওর পক্ষে বেশ বড় ওটা ।
খাদের ভেতরে নেমে আসা ছাদ থেকে গেল চোরাবালির স্তরে ... শুরু করলে ডুবতে ... চাপ বাড়তে থাকলো ওয়েস্ট আর পুহের ওপর –
-নাছোড়বান্দা প্রচেষ্টার ফল পেলো হোরাস...উঠেছে হুকটা...ধরতে পেরেছে ঠোঁট দিয়ে ...উঠাতেও পেরেছে মাটি থেকে!
পরের  কাজটা করা ওর পক্ষে খুব সোজা ছিল। আর তার ফলটাও পাওয়া গেল খুব তাড়াতাড়ি ।
শব্দহীন একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বিশাল খালি বালতিটা আবার সোজা হয়ে গেল। আর সাথেই সাথেই ওর খোলা মুখের ভেতর এসে পড়তে শুরু করলো ছোট্ট জলপ্রপাতের জলের চাপ।
জলে ভর্তি হতে থাকলো বালতি।
আর এই ওজনের সাথেই এবার চাপ সৃষ্টি হল উলটো পথে ... শিকল আবদ্ধ বালতি নামতে শুরু করলো নিচে...
... পুলির সহায়তায় ওদিকে টান পড়লো দুটি শিকলে ঝুলতে থাকা খাদের ছাদে ...উঠতে থাকলো ওটা ওপর দিকে ...
...উঠতে থাকলো চোরাবালির ভেতর থেকে!
ওয়েস্ট আর পুহ বিয়ার প্রায় ছিটকে বেরিয়ে এলো বালির তলা থেকে, একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য।
যেহেতু হাতের কাছেই এখন ছাদটা তাই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওরা একেবারে শেষের দিকের দুটো হাতল আঁকড়ে ধরলো । জলের চাপে উঠতে থাকা ছাদের সাথে সাথে ওরাও উঠতে শুরু করলো ওপরের দিকে ।
জল কারিগরির নিখুঁত ব্যবস্থায় ছাদটা পৌঁছে গেল ওর নিজের জায়গায় । ওয়েস্ট আর পুহ এর সামনে এখন নিষ্ক্রমণের সুড়ঙ্গপথের মুখ –যেখানে বসে আছে হোরাস । কাজটা ঠিকঠাক করতে পারার আনন্দ এবং গর্ব ওর চোখে । তাকাল ওয়েস্টের দিকে।
ওয়েস্ট একটা দল খেয়ে লাফ দিয়ে ঢুকে পড়ে সুড়ঙ্গের ভেতর । সাথে থাকা খাবারের টুকরো এগিয়ে ধরে হোরাসের দিকে ।
কপ করে ধরে গিলে নেয় হোরাস টুকরোটা।
‘থ্যাঙ্ক ইউ হোরাস । দারুন ,’ ওয়েস্ট বলে, ‘আমাদের জীবন বাঁচিয়েছিস তুই । ইমহোটেপের ধারনাতেই ছিল না যে তোর মতো বন্ধু কার থাকতে পারে । চল এবার এই নরক থেকে পালানো যাক ।’
পুরোহিতদের নিষ্ক্রান্তপথ  ধরে প্রায় বুলেটের গতিতে ওয়েস্ট, পুহ আর হোরাস  এগোতে থাকলো বাইরে যাওয়ার জন্য প্রায় বুলেটের গতিতে।
দশ মিনিট পর ওরা এসে দাঁড়ালো খোলা আকাশের নিচে রুক্ষ এলাকায় পাহাড়ের ফাতলের ভেতর দিয়ে। জনমানবহীন বা বলা যেতে পারে একেবারেই জীবনের স্পন্দন বর্জিত এক এলাকা । প্রকৃতি এখানে মৃত। এলাকাটা ঝুলন্ত উদ্যানের ইরান প্রান্তেঅনেক অনেক দূরে ইরাকের সেই জলপ্রপাত সহ পাহাড়ের প্রবেশ পথ থেকে।
স্থানটা এতোটাই বসবাসের অনুপযোগী , বন্ধুর যে গত ২০০০ বছরে এখানে কোনো মানুষের পা পড়েনি।
একটা ভাবনা মাথায় আসতেই ওয়েস্ট থমকে গেল ।
মুস্তাফা জাঈদের টিকিও দেখা যাচ্ছে না আশে পাশে ।
জাঈদ গেলোটা কোথায়? তবে কি কোনো ভাবে ও ওর সন্ত্রাসবাদী দোস্তদের জানিয়ে রেখেছিল এই জায়গা থেকে ওকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য?
সম্ভবত এটাও হতে পারে, জাঈদ   বিশেষ কোন লোকেটর সিগন্যাল অন করে দিয়েছিল ওর সেই সৌদি আরবের গুহার গোপন আস্তানায়। ওয়েস্ট দেখেছিল ওখানে থাকার সময় জাঈদ ট্রাঙ্কটা আনার সয় এটা ওটা নাড়াচাড়া করছিল। এমন কি মিহি বালি ভর্তি ব্ল্যাক জেড বাক্সটা খুলে দেখাও ওর নজ র এড়ায় নি।
নিশ্চিত ভাবেই ওই ধূর্ত মানুষটা এরকম কোনও সিগন্যাল পাঠায় যার মাধ্যমে জানিয়ে দেয় ওকে হ্যালিকারনাসসাসে করে ইরাক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।
প্রাথমিক ভাবে সেসময় ওর মনে হয়েছিল সিগন্যালটা বোধ হয় স্ট্রেচ পাঠাচ্ছে ইজ্রায়েলীদের উদ্দেশ্যে, লোকেশন এর হদিশ দেওয়ার জন্য।
কিন্তু উদ্যান এলাকায় অ্যাভেঞ্জারের বলা কথা থেকে ওয়েস্ট তার ভাবনার ভুলটা ধরতে পারে । ওদের সাথে প্রথম দেখা হতেই স্ট্রেচকে উদ্দেশ্য করে অ্যাভেঞ্জার বলেছিল – ক্ষমা চাইছি তোমাকে এভাবে চমকে দিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য ।
অর্থাৎ ইজ্রায়েলীদের এই সহসা আগমনের সংবাদ স্ট্রেচ জানতো না।
ইজ্রায়েলিরা ওকে ট্র্যাক করছিল সেটা ও জানতোই না । ওয়েস্ট এখন বুঝতে পারছে ইজ্রায়েলীরা স্ট্রেচকে একেবারে প্রথম দিন থেকে লক্ষ্য রেখে যাচ্ছিলো, বিশেষ  কোনো “বাগ” প্রযুক্তির সাহায্যে । সম্ভবত এমন কোনো সারজিক্যালি-ইমপ্ল্যাণ্টেড লোকেটর চিপ যা স্ট্রেচ নিজেও জানে যে সে বহন করে চলেছে।
হ্যালিকারনাসাস থেকে জাঈদ সিগন্যাল পাঠিয়েছিল – ওর সাথীদের উদ্দেশ্যে – এ নিয়েও একটা সংশয় হচ্ছে ওয়েস্টের মনে।
অন্য একটা ভাবনা ওই বিশেষ সিগন্যাল সম্বন্ধে,  যা ও ধরতে পেরেছিল সেদিন , এই মুহূর্তে ওর মাথায় খেলা করছে। আর সে ভাবনা মোটেই ভালো কিছু নয়।
 কিন্তু তার থেকেই আপাতত এই মুহূর্তে আর একটা বিষয় ওকে উদ্বিগ্ন করছে ... গুয়ান্তানামো বে থেকে চুরি করে এনে ও তো জগতের বুকে প্রকৃতপক্ষেই এক জঘন্যতম সন্ত্রাসবাদীকে ছেড়ে দিলো ।
জাঈদ এক্ষুনি ক্যাপস্টোন হাসিল করার চিরন্তন স্বপ্ন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবেনা । কারন ও জানতে পেরে গেছে যে শেষ টুকরোটা হাসিল করা সম্ভব । খুব কাছেই আছে ওগুলো । সন্ত্রাসবাদীটা এবার নিজেও একটা চেষ্টা চালাবে। হয়তো এই মারন খেলা শেষ হওয়ার আগেই ওকে আবার দেখা যাবে।
ওয়েস্ট, স্কাই মনস্টারের সাথে রেডিও মাধ্যমে যোগাযোগ করে এই উপত্যকার কাছেই কোনও সমতল এলাকায় হ্যালিকারনাসসাসকে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিলো । তারপর ওরা শুরু করলো পথ চলা উপত্যকা পার হওয়ার । হেঁটে ।
ক্ষ্য করেনি উঁচু পাহাড়ের আড়াল থেকে একটা একাকী অবয়ব ওদের দিকে নজর রাখছে ।
দেখতে পায়নি অবয়বটা বিপদের আশংকাহীন দুরত্ব বজায় রেখে এগিয়ে চলেছে ওদের সাথে ।
রো পঁচিশ মিনিট পর ক্লান্ত, বিধস্ত, ধুলো বালি মাখা নোংরা শরীর নিয়ে ওয়েস্ট, পুহ বিয়ার আর হোরাস হ্যালিকারনাসসাসের পেটের তলার র‍্যাম্পটা  দিয়ে ঢুকে পড়লো ভেতরে ।
প্রধান কেবিনে দারুন ভাবে চিন্তায় মগ্ন ওয়েস্টের দিকে তাকিয়ে ছিল স্কাই মনস্টার আর পুহ বিয়ার।
‘যা কিছুই আমার করিনা কেন, আগেভাগেই জুডা সেটা জানতে পেরে যাচ্ছে,’ ওয়েস্ট বললো। ‘আমরা সুদানে নামার কিছু বাদেই ওরা ওখানে পৌঁছে গেল। তিউনিশিয়াতেই একই ঘটনা।  কেনিয়াতে, নরকের কীটটা আমরা যাওয়ার আগেই পৌঁছে গিয়েছিল । অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য । আর সেই একই জিনিষ হল ইরাকেও ।’
পুহ বিয়ার বললো, ‘মনে হচ্ছে যেন ওর দলের কেউ সবসময় আমাদের সাথে সাথে আছে । একটা ট্রেসিং সিগন্যালের মতো ।’
ওয়েস্ট ঠোঁট কামড়ে ধরলো , জুডার কটূক্তিটা বলে উঠলো , ‘ “এমন  কোনো জায়গা নেই যেখানে তোমাকে আমি অনুসরণ করে যেতে পারবো না। জ্যাক, এ পৃথিবীতে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তুমি লুকিয়ে থাকতে পারো ।” আমার তো মনে হচ্ছে সত্যিই প্রথম থেকে ওর চরকে আমাদের ভেতর সেট করে দিয়েছিল।’
‘মানে? কি বলছো তুমি? কিভাবে? কে?’
ওয়েস্ট এক দৃষ্টে পুহ বিয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকলো ।
‘চারটে হারিয়ে যাওয়া দিন, পুহ । আমার জীবনের চারটে হারিয়ে যাওয়া দিন ।’
‘কি সব উলটো পালটা বকছো হান্টস ম্যান, কিছুই তো বুঝতে পারছি না?’ স্কাই মনস্টার বললো ।
‘জাইদের ঘাড়ে একটা চিপ বসানো হয়েছিল যখন ও কিউবায় বন্দী ছিল । যাতে ওটার সাহায্যে যে  কোনো স্থান বা সময়ে ওকে খুঁজে বার করতে পারে আমেরিকারা । আমি আমার জীবনের চারদিনের কোন খবর হাল হদিশ জানিনা ওই চারদিন আমার শরীর আমেরিকানদের দখলে ছিল পুহ ।’
ওয়েস্ট ঝট করে উঠে দাঁড়ালোহাতে নিলো এ এক্স এস-৯ ডিজিট্যাল স্পেক্ট্রাম আ্যনালাইজারটাকে – সেই বাগ ডিটেক্টর যা দিয়ে জাঈদের ঘাড়ের লোকেটর চিপটাকে খুঁজে বার করেছিল।
ওটাকে অন করে, পুহ বিয়ারের সারা শরীর চেক করলো। কিছুই পাওয়া গেল না । কোনও বাগ নেই ।
স্কাই মনস্টারের পালা এলো। একই ব্যাপার কিছু পাওয়া গেলো না।
ওয়েস্ট ওদের দুজনের দিকে তাকালো ...
...নিজের দিকে লোকেটরটাকে ঘুরালো, সারা শরীরের ওপর দিয়ে বুলালো ওটাকে।
দু পা – কিছু নেই।
কোমর – কিছু নেই ।
বুক – কিছু নেই
যেই স্পেকট্রাম অ্যানালাইজারটা যেই ওয়েস্টের মাথার উচ্চতায় উঠলো সাথে সাথেই ওটার সিগন্যাল বিপ বিপ করতে শুরু করে দিলো ।
পুহ বিয়ার আর স্কাই মনস্টার ঢোঁক গিললো , বাক্য হারা ।
ওয়েস্ট চোখ বুঁজে মনে মনে নিজেকে একটা খারাপ গালাগাল দিলো ।
সব সময় ও ভেবে এসেছে ওদের মধ্যে একজন বিশ্বাসঘাতক আছে – সন্দেহ গেছে স্ট্রেচ বা জাঈদের দিকে – কিন্তু এরকম কেউ ছিলই না আসলে।
ও নিজেই সেই কাজ করে গেছে ।
প্রত্যেকবার ওর সাহায্যেই আমেরিকানরা সঠিক জায়গায় পৌঁছে গেছে ।
জীবনের চার চারটে দিন। করোনাডো ওয়ার গেমসে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটার পর সেই চারটে দিন... যখন ও থাকতে বাধ্য হয়েছিল আমেরিকান মিলিটারী হাসপাতালে ।
ওই চারদিনের ভেতরেই আমেরিকানরা ওর শরীরে মাইক্রোচিপটা সেট করে দেয় । যাতে সারা জীবন ধরে ওকে ট্র্যাক করতে পারে ।
কেন? কে জানে। হয়তো হয়তো সে অন্যদের চেয়ে একটু বেশি বুদ্ধিমান ছিল তাই ।   এটাই কি ওদের  নীতি ?  বন্ধু হোক বা শত্রু সকলের খোঁজ নিজের হাতের ভেতরে রাখা
ওয়েস্ট বিশ্বাস করতে পারছিল না। অস্ট্রেলিয়া সেই সময় আমেরিকার দারুন বন্ধু ছিল। আর তার প্রতিদান এইভাবে দেওয়া হয়েছিল। বোঝাই যাচ্ছে শত্রু হোক বা বন্ধু সকলের দাম আমেরিকার কাছে এক । বা তার থেকেই সোজা করে বললে বলতে হয়, আমেরিকা নিজের সীমানার বাইরে অবস্থানকারী সব মানুষকেই তাদের শত্রু বলে মনে করে।
জুডার কথা ভাবার চেষ্টা করলো ওয়েস্ট । কল্পনার চোখে দেখার চেষ্টা করলো জুডার কাছে থাকা আর পাঁচটা সামগ্রীর ভেতরে রাখা আছে একটা জিপিএস কানেক্টেড কমপিউটার । ওর ভেতর একটা ম্যাপ দেখা যাচ্ছে এই পৃথিবীর । সেখানে একটা ছোট্ট বিন্দু টিক টিক করছে , যে আসলে জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র – একটা বিন্দু যা ওর প্রতিনিধিত্ব করছে প্রায় ১৫ বছর ধরে ।
আমেরিকারা কেনিয়ার তথাকথিত গোপন ডেরার হদিস জানত একেবারে প্রথম দিন থেকে।
আর ঠিক সেভাবেই সুদানের খনির কাছে যাওয়ার সংবাদ জেনে গিয়েছিল ওরা।  তিউনিশিয়ার খাঁড়িতে যেতে হবে এই খবর যা কেবলমাত্র ও নিজে আর উইজার্ড ছাড়া কেউ জানতোনা সেটাও ট্রেস করে ফেলে । তারমানে আমেরিকানরা এটাও ভালো করেই জানে যে জাঈদকে গুয়ান্তানামো বে থেকে সরিয়েছে ওয়েস্ট  । যেটা নিশ্চিত ভাবেই ওদের ভালো লাগেনি ।
ওয়েস্ট তাকাল পুহ আর স্কাই মনস্টারের দিকে । ওরা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না কাছেই রাখা ছিল ই এম পি বন্দুকটা । এটা দিয়ে জাঈদের ঘাড়ের চিপটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিল।
ওটাকে নিজের মাথার দিকে তাক করে ধরলো ওয়েস্ট –

-চাপ দিলো ট্রিগারে ।
প্রায় সেই মুহূর্তেই ,বাসরায় অবতরণ করা একটা ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের ভেতরে পোর্টেবল জিপিএস কম পিউটারের স্ক্রিনের দিকে নজর রাখা টেকনিশিয়ান বলে ঊঠলো –
‘কর্নেল জুডা স্যার! জ্যাক ওয়েস্টের লোকেটর চিপটার সিগন্যাল এক্ষুনি বন্ধ হয়ে গেল।’
‘সিগন্যাল থেমে যাওয়ার মুহূর্তে ওর অবস্থানটা বলো।’
‘জিপিএসের হিসেব অনুসারে জায়গাটা ঝুলন্ত উদ্যানের এলাকার ভেতরেই ,’ টেকনিশিয়ান জানালো ।
জুডা হাসলো । ‘ট্রেসার চিপটা বায়ো মেট্রিক । সেট করা ছিল ওর মস্তিস্কের জীবন্ত টিস্যুর সাথে । যদি ওয়েস্ট মারা যায় , ট্রেসার চিপটাও নষ্ট হয়ে যাবে সাথে সাথেই । নিশ্চিতভাবেই জিগুরাত ভেঙে পড়ার সময় ও দারুন ভাবে আহত হয় । এতোক্ষণ বেঁচে ছিল পাথরটাথর চাপা পড়ে । রেস্ট ইন পিস জ্যাক... জানতেও পারলে না নিজের অজান্তেই তুমি সব মিশনে আমাদের সাহায্য করে গিয়েছো । ভাগ্য ভালো যে আমাদের আর তোমাকে দরকার নেই । কালিস । দলের লোকেদের খাওয়ার ব্যবস্থা করো । তারপে অস্ত্রশস্ত্র গুছিয়ে নিতে বলো। আমরা লাক্সরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবো ।’
০০০০০০০০০০০০০০০০
লাক্সর মন্দির
পূর্ব প্রান্ত, লাক্সর
হাতসেপসুতের সমাধি মন্দির

পশ্চিম প্রান্ত, লাক্সর
০০০০
লাক্সর ইনটারন্যাশন্যাল এয়ারপোর্ট
লাক্সর । দক্ষিন ইজিপ্ট
২০শে মার্চ, ২০০৬, রাত দুটো
টারটারাসের দিন
০০০০
টারটারাস সৌর কলঙ্ক পৃথিবীর দিকে তাকানোর আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি । দক্ষিন ইজিপ্টের লাক্সর এয়ারপোর্টে রাতের এই বিশেষ সময়ে  ৩০০ ইউরোপিয়ান সেনা প্রস্তুত আগত ১০০ আমেরিকান সেনা দলটিকে শেষ করে দেওয়ার অভিপ্রায়ে ।
নীলনদের দ্বারা বিভক্ত লাক্সর শহরটি আকারে বে বড়। মূলত পর্যটনের ওপরেই নির্ভরশীল । নদের পূর্ব তীরে অবস্থিত ক্কারনাক আর লাক্সর মন্দির । ইজিপ্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি পর্যটন স্থল। নীল নদের আর মন্দিরের মাঝখান দিয়ে তীর বরাবর চলে গেছে এক সুন্দর রাস্তা । নাম করনিশে।
লাক্সরে পশ্চিম প্রান্তে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় উঁচু বাদামী পাহাড়ের সারি সাথেই রুক্ষ পর্বত মালা উঠে গেছে মরুভূমির ওপর থেকে। এসবের মাঝে প্রথম যে উপত্যকার অবস্থান তার নাম ভ্যালি অফ দ্য কিংস – অনেক অনেক ধরনের সমাধি মন্দিরে পরিপূর্ণ । এক সময় এসবই ভর্তি ছিল   ফ্যারাওদের জাঁক জমক পূর্ণ সম্পদে । এটাই তুতান খামেনের সমাধি ক্ষেত্র । এখানেই কবর দেওয়া হয়েছিল গ্রেট রামেসিসকে । আর কত শত নামিদামী মানুষ শেষ নিদ্রায় শায়িত ছিলেন এখানে। এখনো প্রায় প্রতি বছর নতুন নতুন সমাধিস্থল আবিষ্কার হচ্ছে ।
এই  পশ্চিম প্রান্তেই প্রাচীন ইজিপ্টের এক রহস্যময় স্থানের অবস্থান। হাতসেপসুতের সমাধি মন্দির। নির্মাণ করেছিলেন বুদ্ধিমতী মহিলা ফ্যারাও হাতসেপসুত।
পাহাড়ের কোলে বিরাট পাথুরে এলাকায় হাতসেপসুতের এই সমাধি মন্দির নির্মিত হয়েছে তিনটে অতিকায় স্তরের বারান্দার মতো চত্বর নিয়ে । ঠিক যেন বিরাট এক সিঁড়ির তিনটে ধাপ।  একটার সাথে আর একটা ধাপ যুক্ত হয়ে আছে এক অতি বিশাল ঢালু পথ দ্বারা।
উদিত সূর্য এবং লাক্সর মন্দিরের দিকে গর্বিত ভঙ্গীতে মুখ তুলে যেন চেয়ে আছে সমাধিস্থলটা । আকারের তিনটে ফুটবল মাঠের সমান ।এরকম কিছু সারা ইজিপ্টে নেই ।
একই সাথে এটা কুখ্যাত ।
১৯৯৭ সালে ছয় ইসলামী আতঙ্কবাদী ঠাণ্ডা মাথায় মেশিন গান চালিয়ে এই চত্বরে হত্যা করে ৬২ জন পর্যটককে। সন্ত্রাসবাদীরা প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় নিরস্ত্র পর্যটকদের । বাধ্য করে মন্দিরের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে ।
এভাবেই প্রাচীন ইতিহাসের সাথে সাথেই বর্তমানেও লাক্সর তার ছাপ রেখেছে ।

লাক্সর এয়ার পোর্ট পূর্বদিকে অবস্থিত। আমেরিকান প্লেনগুলো এক এক করে নামলো রাতের অন্ধকারে । ডানায় সংযুক্ত আলো জ্বলছিল দপ দপ করে। দুটো সি-১৩০ হারকিউলিস কার্গো বিমান নামার পরেই ওর পেছনে নামলো একটা ছোটো লিয়ার জেট প্লেন।
খুব অল্প সংখ্যক সেনা – উপস্থিত হয়েছে বেশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে টুকরোগুলোকে নিরাপদে সঠিক স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ঠিক যেমনটা মার্শাল জুডা বলেছিল তার ইন্টারসেপেটেড বার্তায় ।
ইজিপ্সিয়ান সরকার আমেরিকার সাপোর্ট আর   অর্থের  লোভে একটা প্রশ্ন ও করেনি সেনা বাহিনির ইজিপ্টে আসার বিষয়ে ।
সাথেই এটাও অগোচরে থেকে গেছে ইজিপ্ট সরকারের যে সেই আমেরিকান বাহিনীকে শেষ করার জন্য ইউরোপীয়ানদের এক বিরাট দল অপেক্ষা করছে লাক্সর এয়ার পোর্ট ঘিরে।
এয়াপোর্টের বাইরে এক বড় টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারের ওপর বসে আছে ফাদার ফ্রান্সিসকো ডেল পিয়েরো । অপেক্ষা করছে জার্মান আর ফ্রান্সের বাহিনীর কাজ শুরু করার । সাথেই আছে উইজার্ড, জো আর ফাজি – হ্যান্ডকাফ লাগানো । নড়া চড়ার উপায় নেই । ওরাও অপেক্ষা করছে উদ্বিগ্নভাবে ।
ল্যান্ড ক্রুজারে আছে আলেকজান্ডার নামের ছেলেটাও। আর সাথেই একটা বড় ষ্টীলের ট্রাঙ্কে আছে ক্যাপস্টোনের একটা টুকরো । আরটেমিস মন্দিরের টুকরো । যা খুলে নেওয়া হয়েছে সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকার সেই বেদী থেকে ।
০০০০০
রানওয়েতে প্রথম হারকিউলিসের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দুটো মরুভূমি উপযোগী ছদ্মবেশে ঢাকা হামভি । গিয়ে দাঁড়ালো লিয়ার জেটের দুপাশে – ওই জেটের ভেতরেই আছে আমেরিকানদের কাছে থাকা টুকরোগুলো ।
সারি বেঁধে সেনা নেমে এলো লিয়ার জেট থেকে । নানান আকৃতির পাঁচটা স্যামসোনাইট বাক্স বয়ে আনা মানুষদের পাহারায় । বাক্স গুলো চাপানো হল তৃতীয় একটা হামভিতে  - কালো রঙের – এক্ষুনি এসে দাঁড়ালো ওটা।
টুকরোগুলো এসে গেল।
ইউরোপীয়ানরা তৈরী ফাঁদ পেতে – এক অপার্থিব নীরবতা ছেয়ে আছে আশেপাশে ।
ছায়ার ভেতরে মিশে ছিল  ওরা, লুকিয়ে ছিল – ফরাসী আর জার্মান কম্যান্ডোর দল – কালো পোশাক, চোখে নাইট ভিশন গগস । সময় নষ্ট না করে হাতের আগ্নেয়াস্ত্র ঝলসে উঠলো ওদের, একসাথে চারদিক থেকে ।
লিয়ার জেট থেকে নেমে আসা সেনার দল কিছু করার সুযোগ পেলো না।
রক্ত স্রোত আর বুলেটের বন্যায় এক এক করে সব লুটিয়ে পড়লো এয়ারপোর্টের জমিতে। হামভির ড্রাইভারগুলো প্রান হারাল সবার শেষে ।
এক মিনিটের ভেতরে সব খতম ।
অনেকগুলো “ক্লিয়ার” শব্দ উচ্চারন শোনার পর ডেল পিয়েরো ঢুকলো রঙ্গমঞ্চে ।
লিয়ার জেতের পাশে রাখা কালো হামভিটার কাছে গেল। ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল ফ্রান্স-জারমান যৌথ বাহিনী।
সন্তুষ্টির এক চুড়ান্ত হাসি মুখে ঝুলিয়ে ডেল পিয়েরো এগিয়ে গেলো হামভির পেছনের দরজার কাছে । পাল্লা খুলে সামনে রাখা স্যামসোনাইট বাক্সটার ঢাকনা খুলেই –
-দেখতে  পেলো ভেতরে কিছু ভাঙ্গাচোরা ইঁট আর পাথরের টুকরো রাখা । সাথেই একটা চিরকুট,  “সাবধান, ফাদার ডেল পিয়েরো। অযথা রক্তের দাগ নিজের হাতে লাগিয়ো না । জুডা ।”
ডেল পিয়েরোর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ।
ঘুরে তাকালো এদিকে ওদিকে –
-ওর চারদিকে এখন শুধুই কানে তালা লাগিয়ে দেওয়া স্নাইপার রাইফেলের গুলি চলার শব্দ – কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে ওর চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা দশ কম্যান্ডোর মাথা ফেটে গেল রক্তের ফোয়ারা ছুটিয়ে । ওদের দেহগুলোও প্রানহীন পুতুলের মতো লুটিয়ে পড়লো শত্রুপক্ষের কম্যান্ডোদের পাশে।
ডেল পিয়েরোকে মারা হয়নি । দাঁড়িয়ে আছে একা । নিপুণ পরিকল্পনা মাফিক নিখুঁত লক্ষ্যভেদ
চারদিকে রক্ত, হাড় আর ঘিলুর ফোয়ারা ছিটিয়ে পড়েছে ...কিছু এসে লেগেছে ডেল পিয়েরোর গায়ে মুখে ।
ওই সময়ে ১০০০ আমেরিকান সেনা লাক্সরের নানান কাদামাটির ইটের বাড়ী আর নর্দমার আড়ালে লুকিয়ে ছিল তারা বেরিয়ে এলো ।
এরাও আচরণে নৃশংস, মায়াদয়াহীন – একইরকম বলাই যায় ইউরোপীয়ান সেনাদের মতো । কাউকেই রেহাই দিলো না ওরা। যারা আত্মসমর্পণ করলো তাদেরকেও শেষ করে দিলো ।
ডেল পিয়েরো আর ওর ল্যান্ড ক্রজারের ভেতর আটকে থাকা চারজন ছাড়া ইউরোপিয়ানদের বাহিনীর আর কে বেঁচে থাকলো না ।
উইজার্ড, জো, ফাজি আর সেই ছেলেটা, আলেকজান্ডার যার নাম ।

এবার লাক্সরে এসে নামলো আসল আমেরিকান কনভয় ।
প্রথমে যেটা এসেছিল সেটা ফাঁদ ...নকল । আত্মঘাতী বাহিনীলুকিয়ে থাকা ইউরোপীয়ান বাহিনীকে শেষ করার টোপ ।
এখন এয়ারপোর্ট নিরাপদ। দ্বিতীয় লিয়ার জেটে চেপে এলো   জুডা । সাথেই এলো দুটো এফ-১৬ এবং ছটা অতিকায় হারকিউলিস কার্গো বিমান।
একের পর বিমানগুলো নেমে এলো লাক্সরের মাটিতে । রাতের আকাশ চকচক করে উঠছিল ওদের নেমে আসার মুহূর্তের আলোর ঝলকানিতে ।
প্রথম “নকল” লিয়ার জেটটার পাশেই এসে দাঁড়ালো জুডার লিয়ার জেট ...
...যেখানে ডেল পিয়েরো দাঁড়িয়ে আছে বমাল সমেত ধরা পড়া চোরের মতো । চারপাশে পড়ে আছে মৃতদেহ। সব কিছুকে ঘিরে আছে আমেরিকান সিয়েফ বাহিনী ।
জুডা প্রাইভেট জেট থেকে বেরিয়ে এলো , শীতল চোখে তাকালো ডেল পিয়েরোর দিকে। ভালো করে তাকিয়ে দেখলো মুখে লেগে থাকা রক্তর ছিটে গুলোকে ।
‘ফাদার ডেল পিয়েরো । আমার প্রাক্তন শিক্ষক । খুব ভালো লাগছে আপনাকে দেখতে পেয়ে। আপনি আমার ওয়ার্নিংকে পাত্তা দিলেন না । বলে ছিলাম ছিটকে যাওয়া রক্ত থেকে সাবধানে থাকবেন।’
ডেল পিয়েরো কোন উত্তর দিলো না ।
ঠিক তখনি, জুডার পেছন থেকে এক বুড়ো মানুষ সামনে এসে দাঁড়ালো। বুড়ো মানুষটার চেহারা রুক্ষ, গায়ের চামড়া কুঁচকানো, ন্যুব্জ । টাক মাথা । তাতে কালো কালো ছোপ । পরনে চামড়ার কোট । মোটা লেন্সের চশমা চোখে, যার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে দুটো শয়তানি চোখ ।
জুডা বললো, ‘ফাদার, আমার মনে হয় না হ্যান্স কোয়েনিগ এর সাথে আপনার নো সাক্ষাৎ হয়েছে । ১৯৪৫ সাল থেকে উনি আমারিকার অতিথি হয়ে আছেন । এবং দীর্ঘকাল ধরে ক্যাপস্টোনের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।’
ডেল পিয়েরো ঢোক গিললেন, ‘কোয়েনিগ আর হেসলার । দুই নাজি প্রত্নতত্ববিদ...’
‘কর্নেল জুডা!’ ক্যাল কালিস ল্যান্ড ক্রুজারের পেছন থেকে হাঁক দিলো । বিরাট চারচাকার গাড়িটার পেছনের দরজা খুলে স্টিল কেস থেকে বার করেছে আরটেমিসের টুকরোটাকে । ‘আমরা ইউরোপিয়ানদের টুকরোটা পেয়েছি । সাথেই আছে ছেলেটাও ...এবং আরো কয়েকজন... ওয়েস্টের দলের লোক ।’
কালিস আলেকজান্ডারকে বার করে আনলো । ওর দলের লোকেরা বার করে আনল হ্যান্ড কাফ আবদ্ধ উইজার্ড, জো আর ফাজিকে।
জুডা মুচকি হাসলো । ‘আরে এ কি কান্ড! এই সব ভালোমানুষগুলোকে আপানার মিশনে নিয়ে এসেছিলেন কেন ফাদার? আমার মনে হচ্ছে ঠিক যে কারনে আমি আপনাকে আমার সাথে নিয়ে যাব ঠিক সেই ভাবনা আপনার ছিল ওদের বিষয়ে ।’
ডেল পিয়েরোর চোখে ফুটে উঠলো আতঙ্কের ছায়া ।
জুডা ব্যাপারতাকে বেশ উপভোগ করছিল। ‘ বাইবেল কি বলেছে ফাদার? তোমার সাথেও সেই  ব্যবহার করা হবে যা তুমি অন্যদের সাথে করেছো। কি অদ্ভুত তাই না?’
এবার তাকাল ছেলেটার দিকে। তাকালো বয়স্ক নাজি অভিযাত্রী কোয়েনিগ।
‘এই তাহলে এই ছেলে। অর‍্যাকলের পুত্র। আলেকজান্ডার, তাই তো ?’ জুডা সম্মানের ভঙ্গীতে মাথা ঝুঁকালো । ‘আমার নাম মার্শাল জুডা । ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকার প্রতিনিধি । এটা আমার সৌভাগ্য যে আমি তোমার দেখা পেলাম।’
ছেলেটা – ভয়ডরহীন – সোজা জুডার চোখের দিকে তাকালো, কিছু বললো না ।
জুডা পুনরায় বললো, ‘ আমার আরো একটা সৌভাগ্য । এই প্রথম আমি তোমার সাথে তোমার বোনের দেখা করিয়ে দিতে পারছি।’
বলেই জুডা একটু সরে দাঁড়ালো । ওর পেছনেই দুঃখিত মুখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল... লিলি ।
০০০০০
ভোর হচ্ছে লাক্সরে । হাল্কা কুয়াশা ছড়িয়ে আছে চারপাশে ।
এই অপার্থিব কুয়াশা ভেদ করে এগিয়ে যাচ্ছিলো ভারি ভারি অনেক গাড়ীর একটা কনভয়ওদের হেডলাইটগুলো থেকে বিচ্ছুরিত আলো বড় বিমের মতো সামনের দিকে ঝক ঝক করছে।
আমেরিকান সেনাবাহিনী এগিয়ে চলেছে লাক্সর মন্দিরের দিকে।
নীলনদের পাশে অবস্থিত মন্দিরটি – অতিকায় তিনকোনা দরজাটার দুপাশে বিশালকায় দুটি দ্বিতীয় রামেসিসের মূর্তি । বসে আছে একই রকম দেখতে দুটো সিংহাসনে। সামনেই একাকী ওবেলিস্ক দাঁড়িয়ে আছে গর্বের সাথে । এর জুড়িদারকে অনেক দিন আগেই এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্যারিসে ।
ফ্লাড লাইটের আলোয় ভেসে যাওয়া মন্দিরের চত্বরে এই মুহূর্তে আমেরিকান সেনাবাহিনী একটা মোবাইল ক্রেন খাড়া করছে । বর্তমান ওবেলিস্কটার পাশে একেবারে ঠিক সেই জায়গায় যেখানে একসময় ছিল ওর যমজ ওবেলিস্কটা ।
ক্রেনের সাথে ঝুলছে একটা চেরী পিকার আসন । সেরকম নয় যেরকমটা সাধারন কাজের সময় ব্যবহার করে থাকে ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরা । এই আসনটায় একসাথে তিন চার জন মানুষ জায়গা নিতে পারবে। জুডা, কালিস আর কোয়েনিগ চাপল ওটাতে ।
‘হের কোয়েনিগ,’ জুডা জানতে চাইলো , ‘আপনার সহকর্মীর ডায়েরীর কপিটা এনেছেন তো?’
বুড়ো কোয়েনিগ গোপনে কপি করা হেসলারের ডায়েরীর নকলটা বার করে দেখালো  । হিসহিসে স্বরে বললো, ‘সব সময় ওটা আমার কাছেই থাকে হের জুডা ।’
ক্রেনে করে ওঠার সময় পাশে ওবেলিস্কটার হিয়েরো গ্লিফিক্স গুলো নিরীক্ষণ করতে করতে কোয়েনিগ ডায়েরীর দরকারি পাতাটা খুললো ।
“সেন্ট মার্ক এর গোপন গসপেল থেকে -
বিচার দিবসের ভোরের বেলায়
সেই ভয়ঙ্করতম দিন,
একমাত্র মন্দির যা উভয়ের নাম বহন করে,
রা’য়ের ক্ষমতাকে সুত্র বদ্ধ করে মহান রামেসিসের চোখের মতো
সুউচ্চ মিনারের সুঁচে
দ্বিতীয় প্যাঁচাকে প্রথমে
আর তৃতীয়কে দ্বিতীয়ের স্থানে ...
...সেখানেই ইস্কেন্দারের সমাধি উন্মোচিত হবে
সেখানেই খুঁজে পাবে প্রথম টুকরোটাকে ।”
একাকী ওবেলিস্কটার গায়ে দেখা গেল খোদাই করা তিনটে প্যাঁচা, বসে আছে পাশাপাশি। প্যারিসের ওবেলিস্কটায় ওয়েস্ট যা করেছিল এখানেও জুডা সেটাই করলো । দ্বিতীয় প্যাঁচার ওপরে অবস্থিত সূর্য সম পাথরের প্লাগ স্টোনটাকে খুললো। অন্যদিকেও ছিল একই রকম আর একটা প্লাগ স্টোন । খুললো সেটাকেও –
-এদিক থেকে ওদিকে একটা নলাকৃতি ফাঁকা স্থান , চলে গেছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ... ঠিক যেমন দেখেছিল ওয়েস্ট ।
জুডা এবার ক্রেন বাস্কেটটাকে নিয়ে এলো সেই স্থানে যেখানে এক সময়   অন্য ওবেলিস্কটা – যেটা এখন প্যারিসে – অবস্থান করতো।
‘হের কোয়েনিগ আপনার কাছে মাপটা আছে?’
‘একেবারে মিলিমিটার মেপে, হের জুডা।’
আবার সিজিয়াম আলটিমিটার এবং ডিজিট্যাল ইনক্লাইনো মিটার দিয়ে নিখুঁত কোন এবং উচ্চতা মেপে নিয়ে ওরা একটা পাইপের মতো সিলিন্ডার সেট করলো ট্রাইপডে নিজেদের বাস্কেটের ওপর । সেট করা হলো আনুভুমিক ভাবে । মেপে জুকে একেবারে সেই স্থানে যেখানে প্যারিসের ওবেলিস্কটা থাকলে ওটার তৃতীয় প্যাঁচার ওপরের স্থানে নলাকৃতি গর্তটা থাকতো ।
ঠিকঠাক সেট হয়ে যেতেই সকালের সূর্যের কমলা আলোর ছটা দেখা গেল পূর্ব প্রান্তে । ভোর হলো টারটারাসের আগমনের দিনে ।
উদিত সূর্যের আলোর ক্ষমতার জোর অনুভব করলো সকলে।
টারটারাসের দিনে সূর্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম , ভয়ঙ্কর । স্থানে স্থান জমে থাকা কুয়াশার গায়ে   রামধনুর জন্ম দিয়েই তাকে মুছে দিচ্ছিল
এবার আলো এসে পড়লো ওবেলিস্ক এর শীর্ষবিন্দুতে – ঝকমক করে উঠলো পুরো স্থাপত্যটা – আস্তে আস্তে নামতে থাকলো আলো ।
দমবন্ধ করে আমেরিকান সেনারা দেখছিল আলোর নিম্ন চলন ।
বাস্কেটের ওপর দাঁড়িয়ে বিজয়ীর ভঙ্গীতে দেখছিল জুডা।
নিচে একটা হামভির ভেতর থেকে গম্ভীর নিস্তব্ধ হয়ে সবকিছু দেখছিল উইজার্ড।
একসময় আলো নেমে এসে ঢুকে পড়লো একাকী ওবেলিস্কটার নলের ভেতরে...চলে গেল ভেতর দিয়ে ...
...ওখান থেকে আলোর দন্ড বেরিয়ে  এসে ঢুকে গেল জুডার সেট করা ক্রেনের বাস্কেটে রাখা পাইপের ভেতরে ...
... জমে থাকা অপার্থিব কুয়াশা ভেদ করে একটা সরু লেজার রশ্মির মতো আলোকন্ড সূর্যের সাত রঙ গায়ে মেখে এগিয়ে গেল সামনের দিকে।
সেই রামধনু রঙা আলোর দন্ড মন্দির পার হয়ে একেবারে সোজা চলে গেল পশ্চিম প্রান্তে , নীলনদ পার হয়ে সামনের দিকে...
সেই বাদামী পাহাড়ী অঞ্চলে যে ঘিরে রেখেছে ভ্যালি অফ কিংস কে ।
শুধু তাই নয় ।
আর পরিষ্কারভাবে বললে বলতে হবে...
সেই আলোর দণ্ড গিয়ে পড়লো সেই পাহাড়ী এলাকার এক বিশেষ স্থাপত্যের ওপর – একামেবঅদ্বিতীয়ম এক ইজিপশিয়ান স্থাপত্য । যার দেহে অবস্থান করছে তিনটে বিশাল বিশাল ধাপ এবং এক ওপরে উঠে যাওয়া ঢালু পথ ।
হাতসেপসুতের সমাধি মন্দির ।
০০০০০
হাতসেপসুত সমাধি মন্দিরের অভ্যন্তর
লাক্সর ইজিপ্ট
২০শে মার্চ, ২০০৬, সকাল ৬-৩০ টা
টারটারাসের দিন
০০০০
আমেরিকানরা দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
বিশাল স্থাপত্যটার বামপ্রান্তের নিচের ধাপে একটা একাকী আর্চওয়ের ওপর গিয়ে পড়েছে সূর্যের আলো থেকে সৃষ্ট সেই সরু আলোর রেখা ।
আবিষ্কার হয়েছে একটা দরজা । এক গোপন করে রাখা দরজা সাধারন ভাবে দেখে যাকে এতোদিন মনে হয়েছে দেওয়ালের একটা অংশ । দরজা বলে চেনা গেছে সেই চিরন্তন সাবধানবানীর ছবিটা ওপরের দিকে উৎকীর্ণ থাকার কারনে।


ছবিটা দেখতে পেয়েই মার্শাল জুডার চোখ চকচক করে উঠলো ।

সময় নষ্ট না করে আমেরিকানরা ঢুকে গেল ভেতরে।
ফাঁদ অপেক্ষাতেই ছিল।
প্যাসেজওয়েটা সাঙ্ঘাতিক সব সুইং ট্র্যাপে পরিপূর্ণ । লম্বা ঝুলন্ত ধারালো পাত ধেয়ে এলো ছাদের ওপর থেকে । নিমেষে বিচ্ছিন্ন হলো এক সেনার মুন্ড ।
এরপরেই একটা আধডোবা কক্ষ, যার মধ্যে সাজিয়ে রাখা আছে পা কেটে দেওয়ার প্রযুক্তিতে সেট করা ধারালো সব চাকু । তবে কোয়েনিগ এসব ফাঁদগুলোর বিষয়ে আগে ভাগেই সতর্ক করে দিতে পেরেছিলেন তার দীর্ঘ গবেষনার সুত্রে। সাথেই জানতেন নিরাপদ রাস্তা কোথায় এবং কিভাবে পাওয়া যাবে।
এভাবে চলতে চলতে জুডা পাথরের এক দরজা পার হয়ে উপস্থিত হলো একটা প্ল্যাটফর্মের ওপর । যেখান থেকে দেখা যাচ্ছে একটা বেশ বড় মাপের গুহা ।
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের মহাকায় গুহার মতো মাপে অত বড় না হলেও এই নতুন গুহার বৈশিষ্ট্য হলো এর শিল্পকলা।
পাথরের সব দেওয়াল মানুষের হাতে অলঙ্কৃত। একটুও জায়গা ফাঁকা ছাড়া নেই।
দেখে মনে হচ্ছে এ যেন এক ভূগর্ভস্থ ক্যাথিড্রাল। উঁচু দেওয়াল, গোলাকৃতি ছাদ । চারটে বড় মাপের জলাধার এমন ভাবে সাজানো আছে যার ফাঁকের রাস্তা ওপর থেকে দেখলে এক বিরাট মাপের ক্রশ বলে মনে হবে। বড় বড় স্তম্ভ ধারন করে আছে সুউচ্চ সিলিংটাকে ।
ক্রশের সংযোগ স্থলটা এই গুহার প্রধান দ্রষ্টব্য স্থান। ওখানে অবস্থান করছে একটা ঘনক আকৃতির প্ল্যাটফর্ম। যার চার কোনে চারটে ওবেলিস্ক । প্ল্যাটফর্মের ওপরে রখা আছে একটি কারু কাজ খচিত কাঁচের সারকোফেগাস যার ভেতরে রাখা হয় মৃতদেহ ।
কারুকাজ করা কথাটা দিয়ে সবটা সৌন্দর্য বোঝানো সম্ভব নয়।
সোনা এবং কাঁচ দিয়ে বানানো সারকোফেগাসটা রাখা আছে যে আচ্ছাদনটার তলায় সেটাও নির্মিত হয়েছে সোনা দিয়ে । আছাদন বা ছাঊনীটাকে ধারন করে আছে যে স্তম্ভগুলো সেগুলো সোজা নয় । এঁকে বেঁকে জড়িয়ে জড়িয়ে উঠেছে । মনে হচ্ছে যেন লতানো গাছের কঠিন অনড় রুপ।
কোয়েনিগ একটা শ্বাস নিয়ে বললেন, ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের কফিন ...’
উইজার্ড সমর্থন করে বললেন , ‘বলাই ছিল ওটা কাঁচ দিয়ে বানানো হয়েছিল।’
জুডা বলে উঠলো, ‘আরে , এটা তো চেনা চেনা মনে হচ্ছে ...’
ওদের পাশেই ছিল ফ্রান্সিস কো ডেল পিয়েরো – বাকি সঙ্গীদের মতোই হ্যান্ডকাফ আবদ্ধ । মাথা ঝুঁকিয়ে সমর্থন জানালেও কথা বললো না। যেন চাইছে সকলের ভেতর থেকেও না থাকার ভান করতে ।
জুডা কোয়েনিগের দিকে ফিরলো ।
‘লেজার সার্ভে যন্ত্রটা দিয়ে একটু মাপজোক করে নিন। আমি এই কক্ষ কতটা লম্বা, চওড়া এবং  উঁচু সেটা জানতে চাই। ’
কোয়েনিগ সেটাই করলেন।
এক মিনিট বাদে জানালেন, ‘১৯২ মিটার লম্বা, ১৬০ মিটার চওড়া এই কক্ষএক এবারে মাঝখানে এটির উচ্চতা ১৩৫ মিটার।’
উইজার্ড খুঁক খুঁক করে হেসে উঠলেন।
কোয়েনিগ ঘুরে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, ‘এতে হাসির কি হলো?’
‘আমাকে একটু আন্দাজ করতে দিন,’ উইজার্ড বললেন । ‘কফিনের ওপর অ্যাঁকাব্যাঁকা থামের যে ছাউনী সেটা ...হু... ২৯ মিটার উঁচু।‘
কোয়েনিগ লেজার যন্ত্রে মেপে দেখে উইজার্ডের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ তাই দেখাচ্ছে একেবারে ২৯ মিটার । আপনি বুঝতে পারলেন কি করে?’
উইজার্ড উত্তর দিলেন, ‘এর কারন এই গুহার মাপ একেবারে রোমের সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকার মাপের হুবহু নকল । 
জুডা ডেল পিয়েরোর দিকে তাকালো । ডেল পিয়েরো মাথা আরো নিচু করলো, মনে হচ্ছে পারলে মাটিতে মিশে যাবে ।
উইজার্ড বলতে থাকলেন, ‘রোমান ক্যাথলিক চার্চের সব কিছুই যদি ইজিপশিয়ান সূর্য উপাসনার পুনঃ নির্মাণ হয় তাহলে সেন্ট পিটারস কি তার থেকে দূরে থাকতে পারে? ওটার মাপজোক এই পবিত্রস্থানের হুবহু নকল করেই করা হয়েছিল। এই সেই স্থান যেখানে রাখা আছে ক্যাপ স্টোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটাকে । ওপরের ছোট্ট পিরামিডটাকে ।’

এবার ওরা এগিয়ে গেল এই কক্ষের মুল আকর্ষণটার দিকে। কাঁচ আর সোনা দিয়ে সাজানো এবং বানানো কফিনটার উদ্দেশ্যে ।
কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে সাদা পাওডারের মতো কিছু পদার্থ । একদা সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা রুপে পরিচিত মানুষের শেষ চিহ্ন। এমন এক মানুষ যিনি ক্যাপস্টোনকে সাত ভাগে বিভক্ত করে তৎকালীন সময়ের নানান স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
আলেকজান্ডার দি গ্রেট ।
একটা ব্রোঞ্জের ম্যাসিডোনিয়ান শিরস্ত্রান আর একটা রুপোর তরবারি রাখা আছে সাদা ধুলোটার ওপর।
আর এই সাদা ধুলোর ভেতর থেকেই একটু খানি মাথা তুলে আছে – যা হয়তো কোন একসময়ে মৃত মানুষটার বুকের ওপর রেখে দেওয়া হয়েছিল । সময়ের সাথে সাথে দেহাবশেষ পরিণত হয়েছে ধুলোতে । ২০০০ বছরের পথ চলায় ওটা ডুবে গেছে তার ভেতরে – একটা ছোট্ট সোনালী অংশ ।
সেই সোনালী পিরামিডের মাথা ।
একেবারে ওপরে যা থাকে ক্যাপস্টোনের ।
দেরী না করে জুডা আদেশ দিলো কফিনটার ঢাকনা খোলার । চারজন আমেরিকান সেনা এগিয়ে গিয়ে ধরলো চারটে কোনা।
ডেল পিয়েরো তড়িঘড়ি এগিয়ে গেলো সামনে, ‘দয়া করে একটু যত্ন নিয়ে কাজটা করো!’
লোক গুলো ওর কথায় পাত্তা ন দিয়ে গায়ের জোরে ঢাকনাটা খুলে ফেললো।
উদ্বিগ্নতায় ভরা এক রাশ দৃষ্টির সামনে দিয়ে জুডা এগিয়ে গেলো কফিনটার দিকে।  দাঁড়ালো ওটার কাছে । হাত চুবিয়ে দিলো আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের দেহাবশেষের ধুলোর ভেতরে, এবং টেনে বার করে আনলো...
...গোল্ডেন ক্যাপস্টোনের শেষ টুকরোটাকে।
পিরামিডের মতো আকৃতি । সাথেই আছে একটা বর্গাকার পেপারব্যাক বই এর মতো ভিত্তি । যা থেকে নির্গত হয় শক্তি ।
তার থেকেও বড় কথা ।
এর থেকে নির্গত হয় এক শক্তি এবং এক শিল্প কারিগরি কলা এবং এক জ্ঞান যা এর আগে কোনো মানব সন্তান নির্মাণ করতে পারেনি
এর ভাবনা চিন্তা মানুষের নাগালের বাইরে । মানুষের সমস্ত লব্ধ জ্ঞান একত্রিত করেও একে বোঝা সম্ভব নয় ।
একেবারে ওপরে যে স্ফটিক লাগানো আছে সেটা হীরের মতো ঝকমক করছে। ওই স্ফটিক সম্পূর্ণ পিরামিডটাকে ভেদ করে একেবারে নিচে নেমে গেছে ।
জুডা ওটার দিকে পরম সন্তুষ্টির চোখে তাকালো ।
এখন ওর দখলে এসে গেছে গোল্ডেন ক্যাপস্টোনের সাত সাতটা টুকরোই । আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের পর আর কেউ যা করতে পারেনি ।
মুখে ফুটে উঠলো হাসি ।
‘এবার সময় হয়েছে রা এর ক্ষমতা দখল করার । গিজাতে দুপুর বেলায় আগমন হবে টারটারাসের। চলো এবার গিজায় যাওয়া যাক। হাজার বছরের ক্ষমতা দখল করার জন্য । ’
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
সমাপ্ত হলো একাদশ অধ্যায় ।  
  অন্তিম অধ্যায়, সপ্তম অভিযান -দ্যা গ্রেট পিরামিড