Search This Blog

Monday, April 3, 2023


 ভ্যান গগের চিঠি

০০০০০০

হেগ, ২৯ সেপ্টেম্বর ১৮৭২

প্রিয় থিও,

তোর চিঠির জন্য ধন্যবাদ। তুই  নিরাপদে ফিরে এসেছিস শুনে আমি  স্বস্তি পেয়েছি  শুরুর কয়েকটা দিন তুই না থাকায় কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।   বিকেলে বাড়ি ফিরে তোকে দেখতে না পাওয়ার অনুভুতি ঠিক কেমন তা বলে বোঝাতে পারব না।   

আমরা সময় পেলেই একসাথে হাঁটতে যেতাম। মনে আছে আশা করি। দিনগুলো খুবই     আনন্দদায়ক ছিল।  প্রায়ই আমরা একটা দুটো  নতুন কিছু দেখতে পেয়েছি।   

কী বিশ্রী আবহাওয়া, ওস্টারউইকে  এদিকে সেদিকে যাওয়ার  সময়   তোর মনে নিশ্চয়ই চিন্তার উদ্রেক  হয়েছে। এখানে গতকাল প্রদর্শনী উপলক্ষে ট্রটিং রেস ছিল   কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে আলোকসজ্জা এবং আতশবাজির প্রদর্শনী স্থগিত করা  দেওয়া হয়।  ভালোই হয়েছে বন্ধ হয়ে, তুই ছিলি না, দেখতেও পেতিস না।   

 হ্যানেবেক্স এবং  রুসদের   পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ,

তোর স্নেহময় দাদা

ভিনসেন্ট

 

 ১ক

হেগ, ২৬ অক্টোবর, ১৮৭২

স্যার,

আমি দুঃখিত যে আমি আপনার নির্দিষ্ট করে জানানো জিনিসগুলোর একটাও  সংগ্রহ করতে পারিনি।   কারণ, যে দাম উল্লেখ করা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়েছে৷

জিনিসগুলো সব মিস্টার ভ্যান স্টোকাম কিনে নিয়েছেন,  যিনি কারও জন্য বিশেষ লাভেই ওগুলো সংগ্রহ করেছেন বলে মনে হছে।   

  কার জন্য কিনেছেন সেটা আমি জানি না। তবে আশা করছি সে খবর জোগাড় করে ফেলব।   যেহেতু আমি মিস্টার ভ্যান স্টোকামের ছেলেকে চিনি এবং উনি আমাকে ভিতরের খবর জানাবেন বলে কথা দিয়েছেন।   

আমি কিছু জানতে পারলেই  আপনাকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেব।   

নিলামে  জনসমাগম ভালোই হয়েছিল এবং আমি পরে শুনেছি যে,  দাম দেওয়া হয়েছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল৷

আনুমানিক ৩০  গিল্ডার   নির্দিষ্ট কিছু জিনিসের জন্য   প্রদান করা হয়েছিল।  

একান্ত অনুরোধ,  আপনি ডি জঙ্গ পরিবারকে আমার শ্রদ্ধা জানাবেন।  

আপনার, বিশ্বস্ত

অনুগত

ভি ডব্লিউ ভ্যান গগ

০০০০০

*এ চিঠি লেখা হয়েছিল মিস্টার হেন্ড্রিক ভার্জিলকে। যিনি হেলভয়ার্টের একজন প্রাক্তণ শিক্ষক। যিনি হেগে এক নিলামে উপস্থিত থাকতে না পেরে ভ্যান গগকে কাজটা করতে বলেছিলেন।

** ভ্যান স্টোকাম একজন খ্যাতনামা বুক ডিলার, পাবলিশার, প্রাচীন বইয়ের ক্রেতা এবং বিক্রেতা।


হেগ, ১৩ই ডিসেম্বর ১৮৭২

প্রিয় থিও,

সবেমাত্র বাবার চিঠিটা পড়লাম । দারুন খবর তো। তোকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমার মনে হয় ব্যাপারটা নিশ্চয়ই তোর ভাল লাগবে।

ওই কাজের ক্ষেত্রটা খুবই ভালো। তোর জন্য বেশ একটা আলাদা ব্যাপার হবে।

খুব ভাল লাগছে এটা ভেবে যে, এখন থেকে আমরা দুজনেই একই পেশায় এবং একই ক্ষেত্রে কাজ করব। এখন থেকে আমরা একে অপরকে নিয়মিত চিঠি লেখায় মন দেব, ঠিক আছে।

আশা করছি তুই চলে যাওয়ার আগে তোর সাথে আমার দেখা হবে। অনেক অনেক কথা বলার আছে। আমার বিশ্বাস ব্রাসেলস খুব মনোরম শহর। তবে প্রথম দিকে যে কেউই একটু অসুবিধা বোধ করতে বাধ্য। তাই কোন সমস্যা হলেই আমাকে জানাবি।

আপাতত এখানেই থামছি। আসলে খবরটা পেয়েই তোকে আমার প্রতিক্রিয়া জানানোর একটা চটজলদি প্রয়াস এটা। সত্যিই আমি যে কতটা আনন্দিত তা তোকে না জানিয়ে থাকতে পারলাম না।

শুভকামনা রইলো। আমার ওপর বিশ্বাস রাখিস।

তোর প্রিয় দাদা

ভিনসেন্ট

এই ভয়াবহ আবহাওয়ায় তুই প্রতিদিন ওইস্টারউইকের রাস্তায় হেঁটে বেড়াতে পারবি এটা জেনে আমার একটুও ঈর্ষা হচ্ছে না। রুস পরিবারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।

 

হেগ, জানুয়ারী ১৮৭৩

প্রিয় থিও,

 বাড়িতে শুনলাম তুই ব্রাসেলসে নিরাপদে পৌঁছে গিয়েছিস এবং   প্রথম দেখায় জায়গাটা তোর ভালো লেগেছে।   

  বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে,   শুরুতে পরিস্থিতি একেবারেই অন্যরকম মনে হবে তোর। কিন্তু   আশাহত হবি না একদম,  তুই  সফল হবিই। পরিস্থিতি কেমন থাকছে এবং তোর বোর্ডিং-হাউসের জীবন কেমন লাগছে  যত তাড়াতাড়ি সম্ভব  আমাকে চিঠি লিখে জানাবি।   

 আশা করছি  তুই ওখানে ভালোই মানিয়ে নিবি।  পা চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, তোর সাথে  শ্মিটের ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। খুব ভালো। ধরে নিচ্ছি ও   একজন ভালো মানুষ  এবং  আগামীদিনে তোকে সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করবে।   

ক্রিসমাসের সেই দিনগুলো কতই না আনন্দদায়ক ছিল।  প্রায়ই আমার ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। আশা করি তোরও ওই সব দিনের কথা চিরকাল মনে থাকবে।   কারণ  ওই দিনগুলোতেই তুই  শেষবার বাড়িতে ছিলি।   ওখানে কী ধরনের পেইন্টিং দেখতে পাচ্ছিস এবং  তার ভিতর কোন বিষয়টা তোর সুন্দর বলে মনে হচ্ছে, আমাকে কিন্তু  অবশ্যই   লিখে জানাবি।  

  বছরের শুরুটায় আমি ভালোই ব্যস্ত আছি।   নতুন বছরটা ভালোভাবেই শুরু হয়েছে। মাসে   ১০ গিল্ডার আয় বেড়েছে।    এখন মাসে ৫০ গিল্ডার উপার্জন করছি।   তার সাথেই  ৫০ গিল্ডার বোনাস পেয়েছি। দারুণ ব্যাপার, কি বলিস?  আশা করি নিজেকে এখন সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী বলতেই পারি।

আমি সত্যিই খুব খুশি যে, তুই   এই ফার্মের অংশ হয়ে কাজ করছিস। এ জায়গাটা এতই ভালো যে, কেউ এখানে  যত বেশি সময় ধরে কাজ করবে    ততই তার  উত্সাহ বেড়ে যাবে।   

শুরুটা হয়ত অন্য কাজের তুলনায় অনেক কঠিন, কিন্তু তুই যদি মাথা উঁচু করে রাখতে পারিস   তাহলে তোর অগ্রগতি কেউ আটকাতে পারবে না।   

'অ্যালবাম কোরোট' কী সেটা শ্মিটকে জিজ্ঞাসা করিস। এমিলি ভার্নিয়েরের লিথোগ্রাফি পিছু   খরচটাও জানতে হবে। আমাদের দোকানে এ  সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়।   আমি জানি ব্রাসেলসে এর ‘স্টক’ রয়েছে।

পরের বার যখন চিঠি লিখব, তখন   আমার আঁকা পোর্ট্রেট পাঠাব।   গত রবিবার ওটার কাজ করেছি।   

তুই কি এখনও প্যালেস ডুকাল যাওয়ার সময় পেয়েছিস?   সুযোগ পেলেই চলে যা।

আঙ্কল হেইন কেমন আছেন?  মানুষটার জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।  আশা করছি যে, উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।

আঙ্কেল সেন্ট  কি ব্রাসেলসে থাকছেন?

যাই হোক, ‘ওল্ড চ্যাপ’, ভালো থেকো। এখান থেকে তোর পরিচিত সবাই তাদের শুভেচ্ছা পাঠিয়েছে ।   আশা করি ওখানে তোর   সবকিছু একেবারে ঠিকঠাক চলবে। আমার পক্ষ থেকে শ্মিট আর এডুয়ার্ডকে শুভেচ্ছা জানাস।  তোর চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।   

বিদায়

তোর স্নেহময় দাদা

ভিনসেন্ট

  আমার ঠিকানাটা মনে আছে আশা করি,    ল্যাঞ্জ বেস্টেনমার্কট ৩২ বা মাইসন গোপিল অ্যান্ড সি, প্ল্যাটস।

 

হেগ, ২৮ জানুয়ারী, ১৮৭৩

  প্রিয় থিও,

  আমাকে এত তাড়াতাড়ি উত্তর দিয়েছিস বলে আমি খুব খুশি হয়েছি।  এটা জেনেও ভালো লাগছে যে সব কিছুই তোর মনের মতো হচ্ছে  এবং  ওই বোর্ডিং-হাউসে থাকতে পাওয়াটাকে তুই  সৌভাগ্য বলেই ধরে নিয়েছিস।  পরিস্থিতি কঠিন হলেও মনটাকে শক্ত রাখবি, একসময়   সবকিছুই ঠিক হয়ে যায়। জানিসই তো কেউই শুরুতে যা চায় ঠিক সেটাই করতে পারে না।

আঙ্কেল হেইনের জন্য খুব খারাপ লাগছে।  আন্তরিকভাবে চাইছি যে, উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।    কিন্তু থিও, আমার মন কু গাইছে, মনে হচ্ছে না কোনও আশা আছে।  গত গ্রীষ্মেও উনি  মনের দিক থেকে  দারুণ সুস্থ ছিলেন। অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষা    অনেক পরিকল্পনা ছিল ওর এবং আমাকে বলেওছিলেন যে, ব্যবসাও খুব   ভালো চলছে। বিষয়টা সত্যিই দুঃখজনক।

গত রবিবার আমি আঙ্কেল কোর-এর কাছে গিয়েছিলাম। খুব আনন্দে কেটেছে দিনটা।   বুঝতেই পারছিস আশা করি অনেক সুন্দর   সুন্দর জিনিস দেখেছি। আঙ্কল যে সবেমাত্র প্যারিস থেকে ফিরেছেন সেটা তো জানিস, ওখান থেকে  গেছেন এবং   দুর্দান্ত সব  শিল্প সামগ্রী এবং ছবি নিয়ে এসেছেন।   সোমবার সকালে আমস্টারডামেই ছিলাম,  আবার মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম।   তুই কি জানিস যে আমস্টারডামে  ট্রিপেনহুইসের জায়গায় একটা বড়, নতুন বিল্ডিং হবে?  ভাবনাটা আমার বেশ ভালো লেগেছে; ট্রিপেনহুইস খুব ছোটো জায়গা, একসাথে   অনেক পেইন্টিং এমনভাবে ঝুলানো থাকে যে, সবগুলো কেউ ভালোভাবে দেখতে পায় না।

  কীভাবে যে ক্লুইসেনারের সেই পেইন্টিংটা পাব, ওটা দেখতে চাই।  আমি ওর কয়েকটা মাত্র পেইন্টিং দেখেছ।   কাজগুলো আমার খুবই  সুন্দর মনে হয়েছে। আমাকে লিখে জানাস তো    আলফ্রেড স্টিভেনসের,    এটাও তো ওর   খ্রিস্টান নাম তাই না, বাকি পেইন্টিংগুলো কোথায় দেখতে পাব।   ‘রোট্টা’ পেইন্টিং  এর ছবি দেখেছি।   এমনকি ব্রাসেলস প্রদর্শনীতে পেইন্টিংটা দেখেওছি। তুই কোথায় কী দেখছিস আমাকে সব জানাবি কিন্তু। তোর অভিজ্ঞতার কথা আমাকে আনন্দ দেয়।  যে অ্যালবামের  নাম তুই জানিয়েছিস, আমি সেটার কথা বলিনি। ওটাতে শুধু  কোরোটের  লিথোগ্রাফ রয়েছে। যাইহোক তুই যে কষ্ট করে খোঁজ নিয়েছিস তার জন্য ধন্যবাদ।

  শীঘ্রই আনার কাছ থেকে একটা চিঠি পাব আশা করছি।     আজকাল লেখালিখির ব্যাপারে  খুব অলসতার পরিচয় দিচ্ছে। তুই ওকে একটা চিঠি দিয়ে   চমকে দিতে পারিস, ও নিশ্চিত খুব আনন্দ পাবে।  অবশ্য তুই তো কাজে খুব ব্যস্ত, তবে এ ব্যাপারটা ভালো।     

এখানে ভালো ঠান্ডা পড়েছে,   মানুষ ইতিমধ্যেই   স্কেটিং শুরু করে দিয়েছে।  আমি যতটা পারি হেঁটেই সব জায়গায় যাই।  তুই ওখানে স্কেটিং করার সুযোগ পাবি কিনা সেটাও জানাস। যে প্রতিকৃতিটা পাঠালাম সেটার কথা    বাড়িতে চিঠি লেখার সময় জানাবি না কিন্তু।বুঝতেই পারছিস ওটা  পা-এর জন্মদিনের জন্য।  ওটা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই তোকে অভিনন্দন জানাতে চাই।

আঙ্কল এবং  আন্টিকে   আমার তরফ থেকে আন্তরিক উষ্ণ শুভেচ্ছা,  মিস্টার শ্মিট এবং এডুয়ার্ডকেও।

 

 তোর স্নেহময় দাদা

ভিনসেন্ট

হ্যানেবিকেরা,  আন্ট ফি এবং রুসদের  সকলেই তোকে শুভেচ্ছা এবং ভালবাসা জানিয়েছেন। বিদায়,  তোর মঙ্গল কামনা করি।