অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য
কাগজের ঠোঙা থেকে পাওয়া -১
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০
শিরোনামটা দেখে অবাক লাগছে তাইনা ।
কিন্তু অদ্ভুত অজানা অনেক কিছু এভাবেই আমি পড়েছি ও জেনেছি । সে ভাবেই বেশ কিছু
অদ্ভুত এবং অবশ্যই অসমাপ্ত লেখা আমার হাতে এসে গিয়েছিল । অসমাপ্ত কেন তার উত্তর না
দিলেও চলে তবু বলেই রাখি । পর পর ঠোঙাতো কোনও দোকান থেকে আসেনা । তাই এসব লেখাগুলো
এক কৌতূহলের জন্ম দিয়েই শেষ হয়ে যায় । এই সিরিজে যে লেখাগুলো দেবো সেগুলো কোনও এক
অজানা লেখকের ডায়েরীর পাতা থেকে পাওয়া। যা পরিণত হয়েছিল ঠোঙ্গাতে । মুদিখানার মালপত্র
আনার পর ইংরেজি ভাষায় ওই লেখাটা প্রথম চোখে পড়ে আমার মায়ের। আ্মি পরের দিনই ছুটে
যাই দোকানটাতে। ভাগ্যক্রমে ক্রমানুসার বিহীন আরো কিছু পাতা বা ঠোঙা আমার হাতে আসে
। সেগুলোই সাজিয়ে লিখছি আপনাদের জন্য।
প্রথম যে পাতাটা পাই তার শুরু টা এরকম ।
‘... বলেন ওয়ারউলফ সত্যিই হয় । এক ধরণের মানসিক রোগ । যাকে
বলে লাইকানথ্রপি । বিশেষ কোনো কারনে কোনো মানুষ অত্যাচারিত হলে বা অত্যধিক
কুসংস্কার গ্রস্থ হলে বা হাই পাওয়ার ড্রাগ খেলে হ্যালুসিনেশ নের শিকার হয় । সে মনে
করে তার ক্ষমতা আছে রুপ পরিবর্তনের । যারা তাদের ওপর অত্যাচার করে তাদের ওপর
প্রতিশোধ নেওয়ার বাসনা জাগে তার । ইচ্ছে হয় তাদের রক্তমাংস খেতে। যদিও সেটা অনেক
ক্ষেত্রেই পারেনা । কিন্তু নিজেকে সামলাতেও পারে না । অসহায় মানুষ থেকে শুরু করে জীবজন্তুদের ওপর চলতে থাকে নারকীয় অভিযান।’
এতো দূর পর্যন্ত ঠিকই আছে । কিন্তু
তারপর যা লেখা ছিল সেটাই অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য ! যিনি লিখছিলেন তিনি কি গল্প
লিখছিলেন নাকি বাস্তব । কারন পরে এই
সুত্রে কিছু পড়া শোনা করতে গিয়ে দেখলাম একসময় ঠিক সেই বিশ্বাস ই প্রচলিত ছিল যা এই
লেখক লিখেছেন ।
চলুন বাকিটাও পড়া যাক –
‘বিজ্ঞ মানুষেরা তো বলেই খালাস । ওরা
কি জানেন সত্যিই ওয়ারউলফ হয় । না সেটা কোনো মানসিক রোগ নয় মোটেই । আমি নিজেইতো তার জলজ্যান্ত প্রমান । আমিওতো ওদের মতো অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছি । কাদের মতো? প্রশ্ন
জাগছে তাইনা? আপনি কি জানেন ১৫২০ থেকে ১৬৩০ সাল অবধি শুধু মাত্র ফ্রান্সেই ৩০
হাজার ওয়ার উলফ আক্রমণের ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছিল । এদের ভেতর সবচেয়ে কৌতূহল জনক ছিল পলিগনির এক মেষ পালক পিয়ের
বুরগটের কেসটা। যে আদালতে বিচারের সময় নিজের মুখে স্বীকার করেছিল, তার সাথে
শয়তানের সাক্ষাৎ হয়েছিল। এবং সেই নাকি তাকে রুপ পরিবর্তনের ক্ষমতা দেয় ।
জানতে চাওয়া হয়েছিল, কিভাবে সে
শয়তানের দেখা পায়?
উত্তরে পিয়ের বলে, “ ইদানীং কালে আমার
ভেড়া চুরি হচ্ছিলো । কি করবে ভেবে না পেয়ে একদিন পাহাড়ের খাঁজে বসে জোরে জোরে বলে উঠেছি,
কেউ কি নেই যে আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে?
সহসা ওখানে তিনজন কালো পোষাক পড়া
মানুষের আবির্ভাব হয় । যাদের ঘোড়াগুলোর
রংও ছিল কালো। তারা আমাকে বলে , ‘যদি তুমি আমাদের প্রভুর প্রতি নিজের বিশ্বাস
অর্পণ করো তাহলে আজ থেকে আর কেঊ তোমার ভেড়াদের ক্ষতি করবেনা!’
ওদের কাছে শপথ করে বলি তারা যা বলবে তাতেই সে
রাজি। এরপর আমার আর একটাও ভেড়া চুরি যায়নি। ”
এর বেশী আর কিছু ঐ কাগজে লেখা ছিলনা
। মানে লেখা থাকলেও সে ঠোঙা আমি পাইনি ।
এরপর যেটা পেয়েছিলাম, সে গল্পটা শোনাবো ‘অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য’র পরের
পর্বে ।
অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য
কাগজের ঠোঙা থেকে পাওয়া -২
দুটো তিনটে ঠোঙার কাগজ পড়ার পর হঠাৎ
পিয়ের বুরগটের উল্লেখ আবার পেলাম । যেখানে সে আদালতের সামনে জানিয়েছে কিভাবে সে
নেকড়ের রুপে বদলে যেতো ।
‘জামাকাপড় সব খুলে ফেলতাম । তারপর
শয়তানের অনুচর যে বিশেষ মলমটা দিয়েছিল সেটা গোটা গায়ে মেখে নিতাম । ব্যাস বদলে
যেতাম । তারপর, অগুন্তি মানুষকে শেষ করে দিয়েছি । একদিন যারা আমাকে পাত্তা দেয়নি।
অত্যাচার করেছে আমার ওপর । সবাইকে শেষ করে দিয়েছি।’
সাথেই লেখা ছিল এই বাক্যটাও -
“শয়তানের প্রসাদ পেলে একজন মানুষ যে শুধু রুপ পরিবর্তনের ক্ষমতাই পায় তাই নয়, তাকে
সাহায্য করতে আরো কিছু ওয়ারউলফ তার পাশে এসে দাঁড়ায় । আমার পাশেও এরকম একজন আসতো
সাহায্য করতে। ”
ডায়েরীর পাতায় লেখক কি লিখছেন এরপর
সেটা দেখা যাক-
‘ পিয়ের যে ভাবে রুপ বদলাতো সেরকম
কিছু আমি পাইনি । আমি নিজেকে ভেড্রাং এর মতো নিজের ইচ্ছেতেই বদলে ফেলতে পারতাম।
আমার কথা পরে হবে, চলুন মিশেল ভেড্রাং এর
কাহিনী শোনাই। যে সাহায্য করতো পিয়েরকে । হ্যাঁ পিয়েরের কথা সত্যি, ওকে সাহায্য করতে যেত নেকড়েউপী ভেড্রাং !
ভেড্রাং এর পছন্দের শিকার ছিল
তরুণীরা । সে তাদের ঘাড় মটকে
কণ্ঠনালী টেনে ছিঁড়ে বার করে রক্ত পান করতো ।
একবার পথ চলতি একটা মানুষকে আক্রমণ
করে সে নিজের বিপদ ডেকে আনে। যাকে ভেড্রাং আক্রমণ করেছিল সে ছিল যোদ্ধা । ভয় না
পেয়ে সেই মানুষটা নিজের অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে
নেকড়েরুপী ভেড্রাং এর পেছনের ডান পায়ে। আহত ভেড্রাং পালিয়ে যায় জঙ্গলের
ভেতরে। যোদ্ধা ছুটে যায় পিছু পিছু । অনেকটা যাওয়ার পর সে দেখতে পায় একটা কাঠের ঘর
। উঁকি মেরে দেখে ভেতরে এক মহিলা একজন পুরুষের ডানপায়ের ক্ষত পরিষ্কার করে দিচ্ছে
। ”
[ইতিহাস জানাচ্ছে মিশেল ভেড্রাং সহ
আরো দুই শয়তানকে সেসময় ‘হত্যা’ করা হয়েছিল ওয়ারউলফের রুপে মানুষ হত্যার দায়ে। - বর্তমান লেখক]
এরপর ওই ঠোঙ্গায় আর কিছু পাইনি । তবে
দ্বিতীয় পাতাটায় পেয়েছিলাম অজ্ঞাত লেখকের লিপিবদ্ধ আর এক রোমাঞ্চকর বিবরণ। আপাতত
সেটাই পড়ুন।
“ বিশ্বাস করবেনা কেঊ তবু শয়তানের
অস্তিত্ব যে আছে তার প্রমান অগুন্তি । যেমন ধরুন ১৫৭৩ সালে ফ্রান্সের ডোল এর কাছের
এক গ্রামের ঘটনাটা । কোনো এক দানবিক শক্তিধর পশু একের পর এক শিশু উঠিয়ে নিয়ে চলে
যাচ্ছিলো । পরের দিন বেচারাদের রক্তমাখা পোশাকটাই শুধু পাওয়া যেত ।
একদিন একদল গ্রামবাসী সন্ধে লাগার
মুহূর্তে কাছের এক বাজার থেকে ফিরে আসার সময় দেখতে পায় অতিকায় এক নেকড়ে কড়মড় করে চিবিয়ে
কি যেন খাচ্ছে । ওদের পায়ের শব্দ পেয়ে পশুটা ঘুরে তাকালে ওরা অবাক হয়ে দেখে
নেকড়েটার মাথাটা প্রায় মানুষের মতোই । যার সাথে মিল আছে গাইলস গারনিয়ার নামের এক
মানুষের। গ্রামবাসীদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি এই সেই দানব যে তাদের বাচ্চাদের উঠিয়ে
নিয়ে যায় । বেশী সাহস না দেখিয়ে ওরা ফিরে যায় গ্রামে।
পরেরদিন সকালে হানা দেয় গারনিয়েরের
বাড়ীতে। ধরা পড়ে গারনিয়ের স্বীকার করে সব । জানায়, দারিদ্রা আর ক্ষুধার জ্বালায় সে
এক শয়তানী সত্তার সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়েছে। যার সাথে তার দেখা হয়েছিল জঙ্গলের ভেতর।
গারনিয়েরকে সেই সত্তা এক ধরণের জিনিস দেয় গায়ে মাখার জন্য । যেটা মাখলেই সে নেকড়ে
রুপ প্রাপ্ত হয়। এখন তার আর ক্ষিধের সমস্যা নেই । অর্থ উপার্জনেরও দরকার হয়না ।
গারনিয়েরকে গ্রামবাসীরা জীবন্ত
পুড়িয়ে মেরে ছিল। ”
আগের দিনের লেখায় জানিয়েছিলাম অজ্ঞাত
লেখকের লেখা পড়ে আমি নিজেও কিছু খোঁজ খবর নিতে শুরু করি । সেই সুত্রেই জানতে পারি
কেন নেকড়ের রুপেই বদলে যাওয়ার কিংবদন্তী সৃষ্টি হয়েছে । কেন অন্য জন্তুতে বদলায়না
কেউ? উত্তর থাকবে অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্যর
আগামী পর্বে ।সাথেই থাকবে আর এক ওয়ার উলফের কাহিনী।
অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য
কাগজের ঠোঙা থেকে পাওয়া -৩
লাইকানথ্রপির ইতিহাস খুঁজে দেখছিলাম
। গ্রীক পুরাণ অনুসারে জিউসকে বলা হতো এমন এক সত্তা যিনি সব কিছু জানেন ।
আরকাডিয়ার রাজা লাইকায়ন সেটা পরীক্ষা করার জন্য নিজের ছেলে নিক্টীমাসের মাংস
রান্না করে জিউস কে খেতে দেন। এই জঘন্য অপরাধের কারনে রাজা লাইকায়নকে নেকড়ের রুপে
বদলে দেন জিউস । এটা ছিল প্রাথমিক সুত্রপাত এই বিশ্বাসের ।
কিন্তু নেকড়েই কেন? মনে রাখতে হবে,
এই সেই প্রানী যারা আদিম মানুষদের প্রথম পোষ্য হয়েছিল । মানুষ নিজের চোখে দেখেছিল
এদের আচরণ। যাতে মিশে ছিল একই সাথে হিংস্রতা ও চাতুর্য । সেই অর্থে আর কোনও
শক্তিশালী তথা আক্রমনাত্বক প্রানীর আচরণ এভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পায়নি মানুষ
। নিশ্চিতভাবেই কিছু মানুষের মনে এই ইচ্ছে জারিত হয়েছে যে যদি নেকড়ের মতো হতে
পারতাম তাহলে অনেক কছু করা যেত। গোটা বিশ্বে অনেক আদিবাসী গোষ্ঠীর টোটেম এই নেকড়ে
বা উলফ । প্রতিটি মানুষের ভেতরে দ্বৈত সত্তা অবস্থান করে । ভালো এবং মন্দ। ক্রমাগত
অত্যাচারিত হতে থাকা মানুষেরাই যে বেশী ওয়ার উলফ হয়েছে এটার সাক্ষী ইতিহাস । মানুষ
রুপে কিছু করতে না পেরে সে মনে মনে নির্মাণ করেছে আর একটা জগত । নিত্য দিনের দেখা
নেকড়ের আচরণ টাই তাকে প্রভাবিত করেছে বেশী । আর এভাবেই কোনও এক সময়ে কোনও এক মানুষ
নেকড়ের মত আচরণ করেছে । আর তার সুত্রেই জন্ম নিয়েছে কিংবদন্তী । যা লেখকদের উর্বর
মস্তিস্কের জল সিঞ্চনে রুপ নিয়েছে ওয়ার উলফের ।
তবে এটাও দেখা যাচ্ছে ইউরোপ বা
পাশ্চাত্যে সেভাবে না পাওয়া গেলেও ভারতীয় উপমহাদেশ সংলগ্ন এলাকায় বাঘ, ভাল্লুক বা
অন্য কোন জন্তুতে রুপান্তরের কাহিনী।
বিশ্বাস বড় বিষম বস্তু ।
ঠোঙা বানানো হয়েছিল যে ডায়েরী থেকে
সেই ডায়েরীর সব পাতা আমি পাইনি সেতো আগেই জানিয়েছি । ফলে জানতেও পারিনি মানুষটা নিজের বিষয়ে যে ইঙ্গিত
দিয়েছিলেন তার চুড়ান্ত ফলাফল কি হয়েছিল , কিন্তু পেয়েছিলাম আরো দুটি ওয়ারউলফ ঘটনার কথা । আসুন সেগুলোই
তুলে ধরি আপনাদের সকাশে।
“ ১৫৮৯ সাল, বেডবার্গ , জার্মানি।
মানুষ উপস্থিত হয়েছে এক ওয়ার উলফের মৃত্যুদন্ড দেখার জন্য। যার বিষয়ে প্যাম্ফলেটে লেখা হয়েছে , ‘পিটার
স্টাব/স্ট্যাম্প নামের এই শয়তান গত ২৫ বছর ধরে ডাইনী বিড্যার চর্চা করে চলেছে,।
ভালো কে তাকিয়ে দেখুন ওর সাথে এক নেকড়ের কি অদ্ভুত মিল। এর হাতেই মারা গেছে অনেক
অনেক মানুষ আর প্রানী ।’
দীর্ঘসময় ধরে বেডবার্গের মানুষ
আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল এক নেকড়ের আক্রমণে। সে তাদের পোষাগবাদি পশু যেমন তুলে নিয়ে
যেতো, তেমনই আক্রমণ করতো মানুষকেও । কেউ ভাবেওনি এসব কাজ নেকড়ে নয় করছিল এক
ওয়ারউলফ।
পেশায় পিটার ছিল এক কাঠুরে । বিকৃত
দর্শন এবং রুক্ষ স্বভাবের মানূষ । উপযুক্ত প্রমান পেয়ে এক বিরাট মাপের হানাদার
বাহিনী বেশ কিছু হাঊন্ড কুকুর নিয়ে ঘিরে ফেলে পিটারের বাসস্থান । প্রত্যক্ষদর্শীর
বিবরণ থেকে জানা যায় সেই কুকুরদের সাথে অমানুষিক শক্তিতে লড়ে গিয়েছিল মানুষটা ।
কোলনে তার বিচার হয় । সেখানে সে
স্বীকার করে শয়তানের সাথে তার চুক্তি হয়েছিল । শয়তান তাকে দিয়েছিল নেকড়ের রুপ
ধারনের ক্ষমতা এবং মানুষ খুন করার নির্দেশ ।
এরপরেও যদি বিশ্বাস না করেন যে এ
জগতে শয়তানের আগমন ঘটে তাহলে আমি কি করতে পারি । আমিওতো সুযোগ পেয়েছিলা শয়তানের
মহিমা দেখার ।
১৬০৩ সাল, ফ্রান্স, বোরডু।
বিচার হয়েছিল জিন গ্রেনিয়ারের ।
ভাগ্য ভালো ছিল তার মৃত্যু দন্ড হয়নি । বিচারকদের মনে হয়েছিল জিন পরিস্থিতির শিকার
হয়েছেী। মৃত্যু দন্ড না দিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় একটি মনাস্ট্রিতে।
জিনও শুনিয়েছিল তার সাথে শয়তানের
অনুচরের বা স্বয়ং শয়তানের সাক্ষাতের ঘটনা । কর্মহীন জিনের সামনে একদিন আবির্ভাব
হয়েছিল লর্ড অফ দ্য ফরেস্টের । বরফ শীতল হাতের অধিকারী সেই লম্বা কালো ঘোড়ায় সওয়ার
মানুষটা তাকে এই নামই বলেছিল। এক বিশেষ মলম আর নেকড়ের চামড়ার পোশাক দিয়েছিল তাকে ।
সাথেই শিখিয়ে দিয়েছিল রুপ বদলের জাদুমন্ত্র ।
জিন ধরা পড়ার সময়ে আশেপাশের অনেক কেই
আঁচড়ে কামড়ে দিয়েছিল । জানিয়েছিল, ওই সময় তার কোনও তরুণীর রক্তমাংস খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে ।
ওকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয় তা না হলে ওর মতো আরো নয়জন নেকড়ে মানব এসে সবাইকে খতম করে
দেবে।
বিচারসভায় সে বলেছিল ওই নয়জন যে কোনো
অভিযানে তার সাথে থাকতো ।”
আজকের লেখার শুরু করেছিলাম
লাইকানথ্রপির সুত্রপাত খোঁজা নিয়ে। এই নিবন্ধের সমাপ্তি টানছি, আর একটি প্রশ্নের
উত্তর দিয়ে । কেন পশুর রুপই নেওয়ার ভাবনা আসে ? আসলে মানুষ রুপে আমরা অনেক কিছুই
করতে পারিনা । কিন্তু মানসিকভাবে পশু হয়ে যেতে পারলে আর কোনও বাধা নিষেধ মনে কাজ
করেনা । মনকস্তত্ব গবেষনা অনুসারে জানা গেছে, এই রোগে আক্রান্ত মানুষরা মনে করে,
পশু রুপে যাই দোষ করিনা কেন তার দায়ভার আমার মানব সত্তার গায়ে পড়বেনা।
ব্রেইনওয়াশ করে কত কিছুইতো করানো যায়
। শয়তান রুপে যাদের সম্মুখীন ওই মানুষেরা হয়েছিল তারা যে আসলে এক প্রকার
মনুষ্যবেশী শয়তান ছিলনা সেটা কে বলতে পারে? যারা নিজেদের স্বার্থে [কি সেই স্বার্থ
সেটা এক মাত্র সেই সময়ের সামাজিক বা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিচার করলে হয়তো জানা
যাবে] কিছু মানুষকে ওষুধ খাইয়ে বা যেভাবেই হোক এগুলো করিয়ে নিতো । অন্তত দল বদ্ধ
ওয়ার উলফদের ঘটনাগুলো কিছুটা যেন সেদিকেই ইঙ্গিত করে । এসবই আমার অনুমান মাত্র ।
ঠোঙার ডায়েরীর সব পাতা পাওয়া গেলে হয়তো এক অন্য রহস্য উন্মোচিত হতো। যার আর কোনো
উপায় নেই ।
অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্যর
এই ভাগ এখানেই শেষ । ফিরে আসবো অন্য কোনো অদ্ভুত-অবিশ্বাস্য কাহিনী নিয়ে ইতিহাসের
পাতা থেকে ।