Search This Blog

Wednesday, May 16, 2018

এসেছিল...নাকি আসেনি! - প্রতিম দাস [ভূত/রহস্য কাহিনী]

এসেছিল...নাকি আসেনি!
প্রতিম দাস

‘আমি ভুতে বিশ্বাস করিনা । বিশ্বাস করিনা মানে বিশ্বাস করতে চাইনা । বিশ্বাস করতে চাইনা কারন আমার মন এর সম্ভাব্যতাকেই প্রশ্ন করতে চায় । চায় যুক্তি । আমার জীবনে একমাত্র মিস তনিমার ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল তার সেই অর্থে শক্ত পোক্ত কোনও যুক্তি খুঁজে বার করতে পারিনি । যদিও এটাও বলতে পারি একাধিক বিষয় আমার মনে জেগে উঠেছিল। সেখানে অনুশোচনা, তার জন্য মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা, হ্যালুসিনেশন, নিজেকে শাস্তি দিতে চাওয়া এমন কি ডুয়াল পারসোনালিটি  জাতীয় পয়েন্টও ছিল। দ্যাখ, আমি কিন্তু কোনো সাইক্রিয়াট্রিস্ট নই । প্রাইভেট ডিটেকটিভ । আমার ভাবনা বা আমার সিদ্ধান্তের সাথে তোদের মিল নাই হতে পারে । এখন তোরা চাইলে সে ঘটনার বিবরণ তোদের শোনাতে পারি ।’
এতগুলো কথা একটানা বলে  পি সি ওরফে প্রবাহ চাকলাদারদা আমাদের মুখের দিকে তাকালেন । পাড়ার মোড়ে বুদ্ধুদার গ্যারেজে রোজ সন্ধ্যায় আমাদের আড্ডা বসে। আর বাঙ্গালীর আড্ডা মানে একবার না একবার ভূতের কথা উঠবেই। আর আজতো লোডশেডিং হয়েছিল কিছু সময়ের জন্য ।   প্রবাহদা আমাদের আড্ডার সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য । একসময় প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সীতে চাকরী করেছেন । নানা রকমের গল্প উনার কাছ থেকে আমারা শুনলেও ভুত নিয়ে কিছু শুনিনি । তাই আজ যখন বিশান জানতে চাইলো , ‘প্রবাহদা ভুত বিষয়ে আপনার মতামত কি?’  তখন ওপরের কথাগুলো আমরা শুনতে পেলাম ।
উনি যে প্রশ্নটা করেছিলেন তার উত্তর দিলেন অরুপদা । ‘না শোনার মতো কোন কারন তো নেই প্রবাহদা। আপনি শুরু করুন ।’
‘ সালটা খুব ভুল না করলে ১৯৭৪ । মাস খানেক হলো চাকরীতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ দেখিয়ে প্রমোশন পেয়েছি সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর পদে । আলাদা কেবিন পেয়েছি । টিফিন আওয়ার হতে কিছুটা সময় তখনও বাকি । পিওন এসে একটা চিরকূট দিল । দেখলাম নাম লেখা আছে মিস তনিমা কর ।
বললাম, ‘পাঠিয়ে দাও।’
স্যুইং ডোর ঠেলে একটি বেশ সুন্দরী মহিলা ঘরে ঢুকলো  গায়ে গোলাপী রঙের কাশ্মীরী শাল জড়ানো অনুমান ২৬-২৭ বছর বয়স   । মাথায় এক ঢাল চুল। চোখের মনি কিঞ্চিৎ কটা । মুখে ও চোখে এমন একটা ভাব যা বলে বোঝানো কঠিন । এক কথায় যদি বলি বলতে হবে সন্ত্রস্ত । তাতে ও ঠিক বোঝানো যায় যায় না। ইংরেজি ‘হন্টেড’ শব্দটা ব্যবহার করলে বুঝতে সুবিধা হবে বোধ হয় । দৃষ্টি আমার দিকে থাকলেও কেমন যেন একটা উদাসী ছোঁয়া । মনে হচ্ছিল  চোখ যেন উনার নিজের নিয়ন্ত্রনে নেই ।  আমি বসেই ছিলাম মিস তনিমা ঘরে ঢোকার পরেও ।
 ওই দৃষ্টি দেখে মনের ভেতরটা কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল । ঈষৎ কাঁপা স্বরে বললাম, ‘ বসুন!’
‘ধন্যবাদ ।’ বলে আমার টেবিলের পাশের দিকে রাখা চেয়ারটায় বসলেন। হাতের ছোট অথচ দামি চামড়ার ব্যাগটা রাখলেন টেবিলের ওপর । ‘এখানে বসলে অসুবিধা নেইতো ...’ বলেই টেবিলের ওপর রাখা আমার নেমস্ট্যান্ডটার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে , ‘... মিঃ চাকলাদার?’  মিষ্টি সুরেলা গলা । সম্ভবত গানটান গাওয়ার অভ্যেস আছে ।  
‘না না অসুবিধা কিসের ।’  বুঝলি,  দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় বুঝেছি যারা মুখোমুখী না বসে পাশের চেয়ারে এসে বসে তাদের এমন কিছু গোপন কথা থাকে যা তারা যাকে বলছে সে ছাড়া  অন্য  কেউ শুনুক সেটা চায় না। অনুমান যে ভুল হয়নি সেটা কিছুক্ষন বাদেই বুঝতে পেরেছিলাম ।
দ্রতু ব্যাগটা খুলে পাঁচটা একশো টাকার নোট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন উনি । আমি টাকাগুলোর দিকে তাকালেও হাত দিলাম না
‘এতে হবে না ,  না?’
‘মানে?’
‘মানে , আপনি যে ভাবে দেখছেন তাতে ...’
‘কি দেখছি?’
‘নোটগুলো। আপনাদের ফি । আসলে কি জানেন আমার এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি দেওয়ার ক্ষমতা নেই ।’
‘মিস কর আমি মোটেই বিশেষ কিছু ভেবে ওগুলোর দিকে তাকাইনি। পাঁচশো টাকা হয়তো বেশীও হতে পারে আমাদের কাজের জন্য। ঠিক কি করতে হবে জানতে না পারলে তো বলা যাচ্ছে না আর আপনাকে কিছু দিতে হবে কিনা। আপানার সমস্যাটা কি যদি বলেন তো...’
‘আপনাকে একটা ভুত তাড়াতে হবে।’
‘কিইইই!!!??’
‘দয়া করে না বলবেন না মিঃ চাকলাদার,’ কাতরভাবে বলে উঠলেন উনি। ‘আমি সত্যিই চাই...’
‘ভুত-’
‘হ্যাঁ একটা ভুত যে ইতিমধ্যে একজন মানুষকে খুন করেছে এবং আরো দুজনকে খুন করবে বলে জানিয়েছে । ’
টেবিলের ড্রয়ার খুলে আমি সিগারেটের প্যাকেট বার করলাম । ধীরে সুস্থে সেটায় অগ্নি সংযোগ করেললাম, ‘মিস কর, ভুত তাড়ানো আমাদের কাজ নয় । সত্যিই যদি আপনার ওই ভুত কোন মানুষকে খুন করে থাকে তাহলে আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন। আপনার পুলিসের কাছে যাওয়া উচিত ছি...’
‘আমার পক্ষে পুলিসের কাছে যাওয়া সম্ভব নয় ।’
‘কেন নয়?’
একটু ইতস্তত করে মিস কর এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ঝুঁকে বললেন, ‘যদি আমি সেটা করি তাহলে আমি নিজেতো বটেই,  সাথে সাথে আমার ভাইদেরকেও ঝামেলায় ফেলবো ।’
‘কিসের ঝামেলা ?’
‘খুনের!’ বলেই ধপ করে চেয়ারে বসলেন ।
আমি সিগারেটে একটা বড় টান মেরে বললাম, ‘আপনি কি আমাকে আসল ঘটনাটা বলতে চান ?’
‘হ্যাঁ।’
‘সেটা করলে কোন ঝামেলা হবেনা বলে আপনার মনে হয়?’
‘ না হবে না । আমাকে সব খুলে বলতেই হবে । কারন কিছু একটা করা দরকার। আমার মনে হয়েছে আপনি সাহায্য করতে পারবেন । তবে আপনি যদি আমি যা বলবো সেটা পুলিসকে জানান তাহলে আমি সরাসরি বলে দেবো আমি কিছুই বলিনি । আর এর কোন প্রমান ও আপনার কাছে নেই । ফলে কেউ কোন ঝামেলায় পড়বে না।’
মানুষ ব্যক্তিগত নানারকমের সমস্যায় পড়লে আমাদের কাছে আসে। তার সমাধানের চেষ্টা করা আমাদের কাজ। কিন্তু সেই সমস্যার তালিকায় ভুত নেই। কিন্তু কেন জানি না কড়কড়ে একশো টাকার নোট গুলো দেখে আমার মনে হলো, কাজটা করা যেতে পারে। অতএব সিগারেটা অ্যাস্ট্রেতে চেপে ধরে নিভিয়ে নোটগুলোকে ড্রয়ারে রেখে বললাম, ‘ওকে, মিস কর, শুরু করুন আপনার গল্প ।’
‘ঠিক দু বছরের কিছু আগের নভেম্বরে এর শুরু । তার আগে জানিয়ে রাখি আমরা চার ভাই বোন। তিন ভাই আর আমি । আনন্দ সবার বড় । ও যখন মারা যায় ওর বয়েস হয়েছিল ৫০ বছর। ’
‘আর বাকিদের?’
‘জয়ন্তর বয়েস ছিল ৩৬ ।    সোমনাথের এখন ৩২  আর আমার   ২৯ ।’
‘জয়ন্তর বয়েস ছিল মানে?’
‘জয়ন্ত   সম্ভবত আত্মহত্যা করে – তিন সপ্তাহ আগে ।’
‘ওহো । আমি দুঃখিত মিস কর ।’
‘মিঃ চাকলাদার আমার মনে হয় আমাদের বিষয়ে আরো কিছু তথ্য আপনার জানা দরকার। আমি কি বলবো?’
‘অবশ্যই বলুন।’ আমি বললাম। আসলে মানুষ যত কথা বলবে ততই অজানা তথ্য সামনে এসে যাবে। এটাই গোয়েন্দাগিরির মূল ।
‘আনন্দ আমাদের চেয়ে বয়সে যে অনেকটাই বড় সেটা বুঝতেই পারছেন । প্রায় বাবার মতো ছিল ও আমাদের কাছে। অবিবাহিত, সফল ব্যবসারী । ফলে ভালো পয়সা জমিয়েছিল চিরকালই ও ব্যবসাটা ভালোই বুঝতোযে কারনে অর্থের অভাব কোনোদিন হয়নি ওর। আর আমরা সে ভাগ্য নিয়ে জন্মাইনি । ভালো রোজগারের চেষ্টা করলেও সফল হতে পারিনি। জয়ন্ত একটা জুতোর দোকানে কাজ করে । আর সোমনাথ ওষুধের দোকানে । আর আমি নাইটক্লাবে গান করি । স্বীকার করতে দ্বিধা নেই খুব ভালো নাইট ক্লাব নয় মোটেই সেটা ।’
‘কাজ কাজই । তার কোনও ছোট বড় নেই ।’
‘জানেন আমি গান গাওয়ার সাথে সাথে ওখানে আমি  মিমিক্রিও করি । যদিও সেটা করেও তেমন কিছু লাভ হয়না । ’
‘আনন্দ কিসের ব্যবসা করতেন?’
‘ঠিক কিসের করতো তা বলতে পারবো না। তবে অনেক কিছুই করতো একসাথে। আর এসব নিয়ে মেতে থাকতে গিয়েই সম্ভবত ও আর বিয়ে করেনি। আমাদেরকে ও ভালবাসতো   এটা ঠিক। তবে টাকা পয়সা দিয়ে সেভাবে সাহায্য কোনোদিন করেনি । খুব দরকার পড়লে যে একটু আধটু দিতো না তাও নয়। তবে উপদেশ আর সমালোচনা করতো মন খুলে। এটা বলবো না যে ও আমাদের সাথে বাজে ব্যবহার করতো তবে খুব ভালো ব্যবহার যে করতো তাও নয় । ঠিক কি বলতে চাইছি আশা করি বুঝতে পারছেন।’
‘একদম। কোনো অসুবিধাই হচ্ছে না মিস কর ।’
‘এবার উইলের কথা বলি তাহলে?’
‘উইল মানে?’
‘আমরা সব ভাই বোন মিলে একটা বিশেষ ধরনের ইচ্ছে প্রকাশক উইল বানিয়ে রেখেছি । আমরা একে বলি রেসিপ্রকাল উইল । এর মূল কথা কেউ একজন মারা গেলে তার সম্পত্তি বাকিদের ভেতর সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে। পারস্পরিক সমঝোতামূলক চুক্তিপত্র যাকে বলে। আপনি এরকম উইলের কথা শুনেছেন ?
‘হ্যাঁ ।’
‘ওকে। এবার মূল ঘটনায় আসি । গত বছর আনন্দ শেয়ার ফাটকা বাজারে টাকা লাগিয়ে বেশ বড় রকমের একটা দাঁও মারে । এর পরেই ও আমাদের সবাইকে দু সপ্তাহের জন্য কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে । সব খরচ ওর। কোথায় যাবে সেটাও ওই ঠিক করে । খুব পরিচিত একটা পাহাড়ী জায়গা । আমরা কোনোদিন যাইনি ওখানে। রীতিমতো তুষারপাত হয় ওখানে ।
‘গত বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় দু সপ্তাহের জন্য আমারা চারজনে সেখানে যাই । পাহাড়ের গায়ে একটা কাঠের লজে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল ।’ কথাগুলো বলতে বলতে অজানা এক আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিলেন মিস কর । কিছুক্ষনের জন্য চুপ করে বসে থাকলেন । তারপর আবার বলতে শুরু করলেন। ‘ঠিক বলতে পারবোনা কি ভাবে এই ভাবনা আমাদের ভেতর এসেছিল। হয়তো সকলেই কম বেশি একই কথা মনে মনে ভাবতাম । বিষাক্ত সেই ভাবনা আমাদের সকলের মনেই থাবা বসিয়েছিল । জয়ন্ত প্রথম বললো কথাটা ।’
‘কি বললো?’
‘বললো, আনন্দকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে ।’
‘আনন্দ তখন কোথায় ছিলেন?’
‘ওপরে ঘুমাচ্ছিলআমরা তিনভাই বোন নিচে ফায়ার প্লেসের সামনে বসে আগুন পোহাচ্ছিলাম । সাথে সামান্য উত্তেজক পানীয়ও ছিল। সেই পানীয়ও কিছুটা সহায়ক হয়েছিল আমাদের ভাবনা প্রকাশ করার ব্যাপারে। জয়ন্ত কথাটা বলামাত্র আমরা বাকি দুজন প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ওকে সায় দিয়েছিলাম। আমি আলাদা করে কাউকে দায়ী করতে চাই না। আমরা তিন জনেই দায়ী সব কিছুর জন্য। আমাদের তিন জনের কাছেই সেভাবে কোনোদিন টাকাকড়ি ছিল না। আর ওই মুহূর্তে একটা বিরাট অঙ্কের টাকা আমাদের সামনে ঝুলে ছিল টোপের মতো । বিরাট অঙ্ক। এতো বড় যে আমাদের সবার সব আশা পূর্ণ হতে দেরি হবে না।’ বলতে বলতেই আবার নিঃসীম এক আতঙ্কে থরথরিয়ে কেঁপে উঠলেন। মিস তনিমা। দুহাতে ঢাকলেন মুখ । 
কিছু সময় বাদে হাত সরিয়ে বললেন, ‘পরের দিন আমার সবাই  মিলে পাহাড়ে চড়লাম । আগের দিনেই এদিকে একবার এসেছিলাম। একটা জায়গা দেখেও গেছি। যেখানে একপাশে বিরাট খাদ নেমে গেছে কয়েক শত ফুট নিচে। ওপর থেকে পড়ে গেলে বাঁচার আশা খুব কম । ওখানে পাথরের গায়ে তুষার পাতের কারনে বরফ জমে ছিল ।
‘আনন্দ সেই খাদের কাছে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে দেখছিল খাদের গভীরতা । নিচ দিয়ে একটা শীর্ণ নদী বয়ে যাচ্ছিল দেখতে পাচ্ছিলাম। সহসা জয়ন্ত এসে দাঁড়ালো আনন্দর পেছনে । মারলো এক ধাক্কা ... আর্ত একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার অনুরনিত হ লো নির্জন চরাচরে । তারপর আর কিছুই শোনা গেল না ।
‘আমারা ফিরে এলাম। পুলিসের কাছে রিপোর্ট করলাম । জানালাম আনন্দ পা পিছলে পড়ে গেছে । পুলিস আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলো । জায়গাটা দেখলো । ব্যাস সব মিটে গেল ।’
‘কি মিটে গেল ?’
‘পুলিস সব দেখে জানিয়েছিল আমাদের কথাই সত্যি পাথরে জমা বরফে পা পিছলে আনন্দ নিচে পড়ে যায় ।’
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। টেবিল থেকে সরে গিয়ে পাইচারি করতে করতে মিস করের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এপাশে গেলাম। ওপাশে গেলাম । তনিমা একটুও নড়লেন না । টেবিলের ওপর হাতের ভর রেখে পাথরের মূর্তির মতো বসে থাকলেন । অগত্যা জানতে চাইলাম, ‘ হুম! বুঝলাম ঝামেলাটা কোথায় । তা এবার যদি দয়া করে বলেন কার ভুত কাকে খুন করেছে?’
একই রকম পাথরের মূর্তির মতো বসে থাকলেন মিস তনিমা কর। শুধু উনার ঠোঁট দুটো নড়লো, ‘আনন্দের ভুত জয়ন্তকে খুন করেছে!’
প্রায় চিৎকার করে বল লাম, ‘মিস কর একটু আগে আপনি বললেন, জয়ন্ত আত্মহত্যা করেছে !’
‘মাফ করবেন মিঃ চাকলাদার আপনার শুনতে ভুল হয়েছে।’
‘মানে?’
‘আমি বলেছিলাম সম্ভবত আত্মহত্যা করেছে জয়ন্ত।’
কি আর করি , গোমড়া মুখে নিজের ভুলটা স্বীকার করলাম । ‘হ্যাঁ আপনি তাই বলেছিলেন। কিন্তু সেটা কি করে বোঝা গেল?’
‘আমি কি তার ব্যাখা নিজের মতো করে দিতে পারি মিঃ চাকলাদার?’
 চেয়ারে গিয়ে বসলাম আবার কিছুক্ষন তনিমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, ‘‘হ্যাঁ বলুন না কি বলতে চাইছেন?’
‘আমি বড়বাজার নিমতলার কাছে ফড়িং দত্ত লেনের ১৭ বাই ৪ এর একটা একতলা বাড়িতে ভাড়া থাকি ।’
‘বাহ! খুব ভালো ’, কারনহীন ভাবে হেসে আমি ঠিকানাটা প্যাডে লিখে নিলাম।
‘আজ থেকে দুমাস আগে ১৭ই নভেম্বর ।  ঠিক যে তারিখে আনন্দ খুন হয়েছিল দুবছর আগে, সেই তারিখ ।  আনন্দ আমার সাথে দেখা করতে   এসেছিল।’
‘আনন্দ আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিল! মিস কর একটু আগে আপনি বললেন আনন্দ খুন হয়েছেন!’
মৃদু স্বরে তনিমা উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ বলেছি তো মিঃ চাকলাদার।’
‘আপনারা তাকে খুন করেছিলেন। তাহলে সে কি করে আসতে পারে?’
‘হ্যাঁ পারে।’
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, ‘কখন এসেছিল?’
‘দুপুরবেলায় । আমি বাজারে গিয়েছিলাম কিছু জিনিষপত্র কেনার জন্য । বাড়ি ফিরে এসে দেখি আনন্দ বসে আছে। চেয়ারে। শান্ত ভাবে । অপেক্ষা করছে । আমার জন্য !’
আমি প্যাডে লেখার ভান করতে করতে বললাম, ‘আপনি নিশ্চিত যে ওটা আনন্দই ছিল?’
‘হ্যাঁ আনন্দই ছিল, মানে আনন্দর ভূত!’
‘হ্যাঁ ভুতই তো হতে হবে। যাই হোক তাকে দেখতে কেমন ছিল?’
‘একেবারে সেই রকম যে রকমটা মারা ওকে মরার দিন সকালে দেখেছিলাম। যে পোশাক ছিল পরনে একেবারে সেটাই মোটা খদ্দরের পাঞ্জাবী । সারজের প্যান্ট । গায়ে মোটা চাদর । পায়ে বুট । মাথায় হনুমান টুপি ।
‘উনি আপনার সাথে কথা বললেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘গলার স্বর কেমন ছিল?’
‘সেই গম্ভীর বাজখাঁই স্বর। তবে ওই দিন গলায় মিশে ছিল দুঃখ । হতাশা । তবে রাগ ছিল না।’
‘কি বললেন উনি?’
‘বললো, ফিরে এসেছি । প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য!’ আবার কেঁপে উঠলেন মিস কর। মুখে ফুটে উঠলো সীমাহীন আতঙ্ক । ‘  ঠিকএটাই বলেছি  ও । প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছে। প্রথমে মারবে জয়ন্তকে... তারপর সোমনাথকে এবং সব শেষে আমাকে !! বলেই উঠে দাঁড়ালো রান্নাঘরের পাশের দরজার কাছে গেল এবং ওটা খুলে বেরিয়ে গেল বাইরে।’
‘আর আপনি?’
‘আমি   ফোন করে দাদাদের ডাকলাম। ওরা এলো । খুলে বললাম সব কিছু । ওরা অবশ্য আমার কথায় বিশ্বাস করেনি । বলেছিল সবই নাকি আমার কল্পনা। আসলে আমি ওই ঘটনার জন্য মানসিক চাপে ভুগছি । আমার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। আমি কিছুই করতে পারলাম না । পারলাম না জয়ন্তর খুন হওয়া –’
‘আত্মহত্যা মিস কর! সম্ভাব্য আত্মহত্যা ।’
‘আপনি তো জানেননা মিঃ চাকলাদার জয়ন্ত কিভাবে মারা যায়। ওর হাতের কব্জি কাটা ছিল । কিন্তু কি দিয়ে কাটা হয়েছে তা খুঁজে পাওয়া যায়নি ওর আশেপাশে বা ওর বাড়ীতে ।’
আমি আবার একটা সিগারেট ধরালাম। পর পর গোটা কয়েক বড় বড় টান মেরে ওটাকে ঠেসে দিলাম অ্যাস্ট্রের ভেতরে। তারপর জানতে চাইলাম, ‘মিস কর, সে সময় আপনি যখন কিছুই করেন নি তাহলে এতদিন পর কিছু করতে চাইছেন কেন?’
‘কারন গত রাতে আনন্দ আবার এসেছিল আমার বাড়ীতে । সেই একই চেয়ারে বসেছিল । একই পোশাক পড়ে । বললো, জয়ন্তর খেল খতম হয়ে গেছে – এবার সোমনাথের পালা । তারপরেই উঠে আগের দিনের মতো চলে গেল!’
‘আপনি?’
‘আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম । একাই থাকি । তাই নিজে নিজেই জ্ঞান ফিরে আসতেই আমি দ্রুত গিয়েছিলাম সোমনাথের কাছে। রাতের তোয়াক্কা না করেই । আমি যেখানে গান করি তার কাছেই একটা বাড়ীতে থাকে ও । বার বার ডোরবেল বাজিয়ে ওর ঘুম ভাঙ্গাই । সব কিছু বলি । কিন্তু এবারেও ও আমার কথায় পাত্তা দেয়নি । বলে ও নিজেই এবার ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করবে আমার জন্য।  বাড়ী ফিরে আসি এবং  ভাবতে থাকি কি করবো ।    প্রায় হঠাৎ করেই একটা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাতে গিয়ে আপনাদের বিজ্ঞাপন দেখতে পাই । প্লিজ, মিঃ চাকলাদার ! আপনারা কি আমায় সাহায্য করবেন না ? কিছু অন্তত করুন ।’
‘ঠিক আছে দেখছি কি করা যায় ।’ বললাম মিস করকে । তারপর আর কিছু প্রশ্ন করে দরকারি ঠিকানা আর ফোন নম্বর জেনে নিলাম উনার কাছ থেকে। একই সাথে আমার ভিজিটিং কার্ডে নিজের বাড়ীর ফোন নম্বর লিখে দিলাম উনাকে। বললাম, ‘এখানকার ফোন নম্বরতো ওই ম্যাগাজিনেই পেয়ে যাবেন। এটা আমার বাড়ীর নম্বর । দরকার পড়লেই ফোন করবেন ।’
কৃতজ্ঞতার একটা হাসি হেসে উনি ধন্যবাদ জানাতেই বললাম, ‘চলুন যাওয়া যাক।’
‘কোথায়?’
‘আপনার বাড়ীতে । অসুবিধা নেই আশা করি।’
‘না না অসুবিধা কিসের । আপনারা কি সব সময়েই এতো দ্রুত কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন?’
‘তা বলতে পারেন। এটাই আমাদের কাজের ধরন ।’
*****
একতলা বাড়িটায় একটা শোবার ঘর । একটা ছোট্ট বৈঠকখানা, রান্নাঘর এবং বাথরুম । পেছন দিকে খানিকটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা উঠোনের মতো আছে । রান্নাঘরের গায়ের দরজা খুলে ওখানে যাওয়া যায় । জানলা গুলোয় মোটা শিক লাগানো । না ভেঙে ওই সব জায়গা দিয়ে কারোর আসার উপায় নেই।  পেছনের ফুট ছয়েক উচ্চতার পাঁচিল ঘেরা জায়গাটায় যেতে যে দরজাটা সেটার ছিটকিনির অবস্থা মোটেই ভালো নয় । ওপাশ থেকে জোরে ঠেলতেই খুলে গেল । সেটা দেখে মিস কর বললেন, ‘ছিটকিনিটা কমজোরি আছে । তাই এদিক দিয়ে হুড়কো লাগানোর ব্যবস্থা করে নিয়েছি ।
বললাম, ‘ভালোই করেছেন । একটু মনে করে দেখুন তো গতকাল রাতে বা আগের দিন যেদিন আনন্দ এসেছিলেন বলে আপনি জানাচ্ছেন ওই হুড়কো লাগানো ছিল কিনা ? এখন তো দেখছি লাগানো নেই ।’
একটু থমকে গেলেন যেন মিস কর তারপর সুরেলা স্বরে জবাব দিলেন, ‘আসলে খুব বেশিদিন ওটা লাগাইনি। তাই মাঝে মাঝে ভুলে যাই ।‘
‘হুম। বুঝলাম। দেখুন, আমি জানিনা কে আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিল । ভুত না অন্যকিছু । কিন্তু একটু সুস্থ সবল মানুষের পক্ষে ওই দেওয়াল টপকে দরজা ঠেলে ভেতরে চলে আসা বা বেরিয়ে যাওয়াটা খুব একটা কঠিন কিছু নয়।’
কোনো কথা না বলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন মিস কর।
বললাম, ‘একটা ফোন করতে পারি?’
মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই । অফিসে ফোন করে আমার সহকারী গুপ্তকে বললাম , বড় বাজার নিমতলার কাছে ফড়িং দত্ত লেনের ১৭ বাই ৪ এ একবার আসতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভবআসার পথে দুটো ভালো ছিটকিনি আর তোমার যন্ত্রপাতির ঝোলাটা নিয়ে এসো ।
আধ ঘন্টার ভেতরেই গুপ্ত এসে হাজির হলো । আর আধ ঘণ্টার মধ্যেই ওই দরজা এবং বাড়ীতে ঢোকার দরজায় ছিটকিনি দুটো লাগানো হয়ে গেল।
কাজ সেরে ও বিদায় নিতেই বললাম , ‘এবার থেকে একটু সাবধানে থাকবেন। আর ছিটকিনি লাগাতে ভুলবেন না। আমার অনুমান ভুল না হলে আর আনন্দর ভুত এ বাড়ীতে আসবে না।’
‘অবশ্যই লাগাবো মিঃ চাকলাদারবলছিলাম কি, অসুবিধা না থাকলে আজ রাতে আসুন না আমার নাইট ক্লাবে । খুব খারাপ লাগবে না বোধ হয় ।’
‘চেষ্টা করবো । কটায় শুরু আপনার শো ?’
‘রাত সাড়ে ন’টায় ।’

*****
সোমনাথের দোকানের ঠিকানা জেনে নিয়েছিলাম আগেই। গেলাম সেখানে এখনো যে এরকম ওষূধের দোকান এ শহরে আছে জানা ছিল না আমার । হাতে বানানো আয়ুর্বেদিক ঔষধ । ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো দোকানটার কাছে যেতেই । খুব ভালো যে চলে না সেটা দোকানের দশা দেখেই বুঝতে পারছিলাম । ছোট খাটো দৈহিক গড়নের সোমনাথ দোকানে একাই ছিল । আমাকে প্রথমে ক্রেতা ভেবেছিল তারোপর আসার উদ্দেশ্য জেনে বললো , ‘ ভেতরে আসুন। বসে কথা বলা যাক ।’
ভেতরে হাতলবিহীন কাঠের চেয়ারে বসলাম। জানতে চাইলেন, আমি চা খাবো কিনা । ইচ্ছে থাকলেও এই গন্ধের ভেতর চা খাওয়া সম্ভব নয় । সেটা জানিয়ে  সিগারেটের প্যাকেট বার করে সোমনাথের দিকে এগিয়ে ধরে বললাম, ‘অসুবিধা নেই তো?’ হাত বাড়িয়ে সিগারেট তুলে নেওয়াতেই বুঝে গেলাম উত্তর কি ।
পকেট থেকে লাইটার বার করে উনারটা জ্বালিয়ে দিয়ে নিজেরটা ধরালাম । তারপর আসতে আসতে যা যা হয়েছে সেগুলো বললাম। মিস কর যে আমাকে  এই কাজের জন্য পাঁচশো টাকা ফি দিয়েছেন সেটাও জানিয়ে দিলাম ।
নিজের সিগারেত শেষ করে পকেট থেকে বিড়ি বার করে ধরালেন সোমনাথ । বার দুয়েক টান মেরে বললেন, ‘আশা করছি আপনি কিছুটা হলেও ধারনা করতে পারছেন ওকে নিয়ে কি পরিমাণ দুশ্চিন্তায় আছ আমি !’
কিছু না বলে সামান্য মাথা নাড়লাম আমি।
‘ও যে অসুস্থ সেটা বোধহয় আপনি ধরতে পেরেছেন।’
আমি আবার একটু মাথা নাড়িয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, ‘মিঃ কর বেড়াতে গিয়ে ঠিক কি হয়েছিল আপনি কি বলবেন?’
‘বড়দার সাথে কি হয়েছিল সেটা জানতে চাইছেন তো?’
আমি এবারেও কথা না বলে শুধু মাথা ঝোঁকালাম।
‘দুর্ঘটনাটা যখন ঘটে তখন আমরা বড়দার আশে পাশে ছিলামই না। সকালে ঘুম থেকে উঠে ও একা একাই ওই খাদের এলাকায় বেড়াতে যায়। আমরা কটেজেই ছিলাম। বড়দার মৃগী রোগ ছিল । সম্ভবত সেটার কারনেই ও খাদে পড়ে যায়। কটেজ থেকে হাত পঞ্চাশেক দূরে ছিল খাদটা। আমরা পড়ে যাওয়ার পরে ওর আর্ত চিৎকারের প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসি । ততক্ষণে অবশ্য ...’ খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর সোমনাথ পুনরায় বলতে শুরু করলেন, ‘ জয়ন্ত সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় পুলিসের কাছে ব্যাপারটা জানানোর জন্য। পুলিস এসে তল্লাসি শুরু করে । খাদের গায়ে পাথরে আটকে থাকা বড়দার চাদরটা দেখতে পেয়ে বুঝতে অসুবিধা হয়নি কি হয়েছে ।’
‘শরীরটা পাওয়া গিয়েছিল?’
‘না । ওই দুর্গম খাদে নেমে শরীর তুলে আনার সরঞ্জাম পুলিসের কাছে ছিল না ।’
‘মিঃ কর আপনি কোন আন্দাজ করতে পারেন আপনার বোন এরকম একটা আজগুবী গল্প কেন বলছে?’
‘নার্ভাস ব্রেকডাউন ছাড়া আর কোন উত্তর আমার কাছে নেই।’
‘কিন্তু তারতো একটা কারন থাকবে? এমন কিছু যা ওর এই নার্ভাস ব্রেক ডাউনের কারন?’
‘আমাদের বিশেষ ধরনের উইলের কথা নিশ্চয় তনু আপনাকে বলেছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘পুলিসী ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর আনন্দর আইনজীবী আমাদের তিন ভাইবোনকে একটি করে ১ লাখ  ৫৭হাজার   টাকার   চেক দেন । উনার কথানুযায়ী আনন্দর যাবতীয় ধার বাকি মিটানোর পর এই টাকাই আমাদের প্রাপ্য হয়েছে। আমি আর জয়ন্ত সেটাকা ব্যাঙ্কে জমা করে দিলেও আজ অবধি একটা টাকাও খরচা করিনি  । কি রকম একটা অস্বস্তি অনুভব করেছি। যে কারনে আজ ও আমি এই কাজ করেই দিন চালাচ্ছি । কিন্তু তনু তা করেনি । টাকা পেয়েই ও কাজ ছেড়ে দেয় । শুরু করে বিলাস বহুল জীবন যাপন । একা একাই দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে । নিট ফল টাকা শেষ । আবার আগে অবস্থায় ফিরে আসে । বাধ্য হয় ওই নাইটক্লাবে গান করতে । সম্ভবত এটাই ওর নার্ভাস ব্রেক ডাউনের কারন। সেখান থেকেই কোনও ভাবে ওর মনে বড়দাকে আমরা খুন করেছি এই ভাবনা ঢোকে । সাথেই ভূতের গল্পটাও বানায় ।’
‘তা নয় বুঝলাম কিন্তু জয়ন্তবাবুর ব্যাপারটা কি? ওর আত্মহত্যা? ’
‘বলার মতো তেমন কিছু আছে বলে তো আমার মনে হয় না। জয় সাধাসিধে মানুষ ছিল । আত্মহত্যা করার আগে ও জানতে পারে ওর দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। আমি বলেছিলাম বড়দার সুত্রে পাওয়া টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু করেনি । মাঝে মাঝেই অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে হাসপাতালে  ভর্তি  হয়েছে । হয়তো সেদিন আর সহ্য করতে প্পারেনি ...’ দুহাতে মুখ চেপে বসে থাকলেন সোমনাথ ।
 ‘হ্যাঁ শুনেছি উনার   কব্জি  কাটা ছিল। কিন্তু কি দিয়ে কেটেছিলেন সেটার হদিশ পাওয়া যায় নি!’
মুখ থেকে হাত সরিয়ে বিষণ্ণ হাসি হাসলেন সোমনাথ । ‘আপনি কি জানেন ওর বডির কাছেই একটা দাড়ি কামানোর রেজর পাওয়া গিয়েছিল খোলা অবস্থায় । ব্লেড ছাড়াই ।’
‘তাতে কি প্রমানিত হয়?’
‘ জয়ের আত্মহত্যা করেছিল বাথরুমে । শরীরটা পড়ে ছিল বাথরুম প্যানের কাছে । পুলিসের ভাবনা অনুসারে ওই রেজর থেকে ব্লেড খুলে নিয়ে জয় হাতের কব্জি কাটে । তারপর ওর হাত থেকে ব্লেড পড়ে যায় প্যানের ভেতরে । রক্ত ধোয়ার সময় সে ব্লেড চেম্বারে চলে যায় ।’
আমি উঠে দাঁড়ালামঅনেক ধন্যবাদ সোমনাথ বাবু ।’
একটু ইতস্তত ভাব নিয়ে সোমনাথ বলেন, ‘মিঃ চাকলাদার!’
‘বলুন।’
‘অসুবিধা না হলে আপনি ওই পাঁচশো টাকা তনুকে ফিরিয়ে দেবেন প্লিজ?’
‘কেন?’
‘ওর একজন গোয়েন্দা নয় । ডাক্তারের দরকার । আমি নিজেই কয়েক জনের সাথে কথা বলেছি এ নিয়ে। ও নিজে না গেলে আমি ওকে জোর করে নিয়ে যাবো ।’
বুঝতে পারলাম বোনের প্রতি দাদার স্নেহের দিকটাকে । প্রফেশন্যাল হলেও আমিও তো মানুষ । বললাম, ‘ওকে, তাই হবে মিঃ কর। আপনার কথার অর্থ আমি বুঝতে পারছি ।’
‘দুহাতে আমার হাত দুটো চেপে ধরে সোমনাথ বলে উঠলেন, ‘অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মিঃ চাকলাদার ।’
‘এই মুহূর্তে টাকাটা আমার কাছে নেই । আর আমি ওটা মিস করকে ফেরত দিতেও পারবো না । তাতে উনার মনে অন্য রকম ছাপ পড়বে।   আজ রাতেই আপনাকে টাকাটা ফেরত দিয়ে আসবো । আপনার বাড়ীতে । ঠিকানা মিস কর আমাকে বলে দিয়েছেন । আপনি তো নিচের তলার সামনের ঘরেই থাকেন?’  
 ‘ হ্যাঁ । ঢোকার দরজাও রাস্তার ওপরেই ।   বলছিলাম যে, আমার তো ফিরতে রাত হয়। ১০টা বেজে যায় । ও হ্যাঁ আর একটা কথা । আপনি আমাকে চারশো টাকা ফেরত দিলেই হবে   । বাকিটা আপনার একদিনের খাটা খাটনির পারিশ্রমিক আমাদের তরফ থেকে ।
‘ অসুবিধা নেই আমি তার পরেই যাবো
*****
পকেটে চারশো টাকা নিয়ে ঢুকলাম মায়বিনী রাত নাইট ক্লাবে । ঘড়িতে তখন ৯টা বেজে ২৫ মিনিট । দেওয়ালের দিকের একটা টেবিল বেছে নিয়ে বসলাম। ওয়েটার কে আমার প্রিয় পানীয় দিতে বললাম এক পেগ সাথে ফিস বল ।
ঠিক সাড়ে ন’টাতেই মঞ্চে এলেন মিস তনিমা কর। পরের দেড় ঘণ্টা আর দুপেগ পানীয় নিয়ে ভালোই কেটে গেল। গানের গলাটা সত্যিই ভালো । সাথে প্রশংসা করার মতো মিমিক্রি করেন মহিলা। এর মাঝে আধঘণ্টার একটা বিরতি ছিল । ম্যাজিক দেখালেন একজন । শো শেষ হওয়ার আগেই উঠে পড়লাম । চললাম সোম নাথের বাড়ীর উদ্দেশ্যে ।
দোতলা বাড়ীটা ।   দরজার পাশে বেল লাগানো । টিপলাম । ডিং ডং শব্দ ভেসে এলো ভেতর থেকে। সেকেন্ড কুড়ি হয়ে গেল । আবার টিপলাম । আবার ভেসে এলো একই শব্দ। আরো তিরিশ সেকেন্ড অপেক্ষা করে দরজায় টোকা দিতে যেতেই বুঝতে পারলাম দরজাটা খোলা । ভেতরটা অন্ধকার । পকেট থেকে পেন্সিল টর্চ বার করে জ্বালালামবাঁপাশেই দেখতে পেলাম সুইচ বোর্ড । পর পর দুটো স্যুইচ অন করলাম টর্চের পেছনটা দিয়ে । আলো জ্বলতেই দেখতে পেলাম সামনের চেয়ারে হেলান দিয়ে উল্টোদিকের ফাঁকা চেয়ারটার দিকেই তাকিয়ে বসে আছেন সোমনাথ । সামনে ফাঁকা গ্লাস, একটু পানীয় তখন অবশিষ্ট আছে সেখানে । পড়ে আছে বিড়ির প্যাকেটটাও দেশলাই সমেত । কাছে গিয়েই বুঝলাম সে দেহে প্রান নেই ।
দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে প্রায় দৌড়ে  পৌছালাম রাস্তার মোড়টায় । দুটো রিক্সা দাঁড়িয়ে ছিল । একটাতে চেপে জলদি থানায় যাওয়ার নির্দেশ দিলাম ।  চলতি গোয়েন্দা গল্প পড়ে পড়ে মানুষের ধারনা হয়েছে প্রাইভেট ডিটেকটিভদের সাথে পুলিসের সম্পর্ক ভালো থাকে না। আমাদের বস অবশ্য এদিক থেকে করিতকর্মা মানুষ । ভালো সম্পর্ক বানিয়ে রেখেছেন থানার সাথে । ফলে কিছুক্ষনের ভেতরেই অল্পবয়েসী অফিসার ইন চার্জ সৌরভ দুজন কনস্টেবলকে নিয়ে রওনা দিলেন আমার সাথে ।
সৌরভের সাথে আমার আগে থেকেই পরিচয় থাকায় যাওয়ার পথেই ওকে মোটামুটি কি দেখেছি জানালাম । কি করে দেখলাম তার উত্তরে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলা, ‘তুমি , ভুতে বিশ্বাস করো?’
‘দরকার পড়লে করি বৈকি । কেন? তুমি কি আমাকে ভূতের গল্প শোনাবে নাকি প্রবাহদা?’
‘তা বলতে পারো ।’ শুরু থেকে সব কথা জানালাম ওকে।
‘আইব্বাস ! তাহলে তো সময় নষ্ট না করে আগে মিস তনিমা করের সাথে দেখা করা দরকার মনে হচ্ছে । দাস, রায় তোমরা পাহারায় থাকো । আমি যাওয়ার পথে লোক পাঠিয়ে দিচ্ছি ।’
‘কোথায় যেতে চাইছো তুমি?’
‘নাইটক্লাব। যেটুকু খবর আছে তাতে প্রায় দেড়টা দুটো পর্যন্ত শো চলে ।’
*****
পাওয়া গেল মিস তনিমা করকে । সৌরভ নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলো শো শুরু হওয়ার পর থেকে উনি এখান থেকে একবারও বেরিয়েছিলেন কিনা? সরাসরি না বলে দিলেন মিস কর । নাইটক্লাবের সাথে যুক্ত কর্মচারী বা অন্য পারফরমারদের জিজ্ঞেস করে কিছুই জানা গেল না। কারন যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল । তবে এটা প্রমান হলো তনিমা কর তার শোর এর নির্দিষ্ট বিরতিগুলোর সময় পার করে কাঁটায় কাঁটায় যখন মঞ্চে প্রবেশ করা দরকার তখন  করেছেন ।   
আমি জানতে চাইলাম, ‘সৌরভ, তুমি কি মিস করকেই সন্দেহ করছো?’
‘তা ছাড়া আর উপায় কি বলুন।  আপনি দেখেছেন কিনা জানিনা মিস করের ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে একটা করিডোর আছে । সেটা ধরে ১০-১২ পা হাঁটলেই একটা দরজা আছে পেছনের রাস্তায় বের হওয়ার । ওই রাস্তা থেকে মিঃ সোমনাথের বাড়ী যেতে মিনিট দশেক লাগে ।’
‘হুম, বুঝলাম। তা এখন কি করবে ?’
‘ আপাতত কিছু না ,’ বলেই মিস করের দিকে ঘুরে বললো। ‘ আপনার শো তো   শেষ   মিস কর?’
‘না আর একটা পারফরম্যান্স বাকি আছে ।’
‘ওকে । ওটা শেষ করে সোজা বাড়ী চলে যাবেন । ওখানেই থাকবেন। কোথাও পালানোর চেষ্টা করবেন না।’
‘পালাবো! কেন?’
‘সেটা আপনিই ভালো জানেন।’ সৌরভ কেটে কেটে উত্তর দিলো । ‘চলুন প্রবাহ দা । আপাতত আমাদের এখানে আর কোন কাজ নেই
থানায় ফিরে আসার পর সৌরভ বললো, ‘প্রবাহ দা আমি নিশ্চিত ওই মহিলাই সব কিছু করছেন। যদিও প্রমান নেই কিছুই । আমি উনার ওপর নজর রাখার ব্যবস্থা করছি। ’
‘হ্যাঁ সেটা তো করতেই হবে। খুনী যদি অন্য কেউ হয়। সে ভুতই হোক বা মানুষ এবার তো তার টার্গেট মিস কর স্বয়ং।’
‘কিন্তু তুমি মিস করকে সন্দেহ করছো কেন?’
‘আপনার মতো গোয়েন্দার কাছে এ প্রশ্ন আশা করিনি। পারস্পরিক সমঝোতামূলক চুক্তিপত্রর কথাটা কি ভুলে গেলেন?’
‘না ।’
‘বড় ভাই মারা যেতে সেই উইল অনুসারে সম্পত্তি ভাগ হয়েছিল বাকি তিন ভাইবোন এর ভেতর । এবার এক এক করে দুই ভাই মারা গেলো । লাভটা কার? এ তো সিম্পল ইক্যূয়েশন প্রবাহদা?’
 রাত জাগার ছাপ পড়েছিল আমার মুখে চোখে । সম্ভবত সেটা দেখেই সৌরভ বললো, ‘আপনি বাড়ি যান দাদা। বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি । ’
০০০০০
বাড়ি যখন এলাম তখন ঘড়ির কাঁটা তিনটের ঘর পেরিয়ে গেছে ।
মুখ হাত ধুয়ে এক গ্লাস জল খেয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে সবে বিছানায় যাওয়ার উদ্যোগ করছি ফোন বেজে উঠলো । উঠে গিয়ে রিসিভার তুলে কানে ঠেকালাম । ওপ্রান্তে মিস কর ।
‘মিঃ চাকলাদার! সম্ভব হলে এক্ষুনি আমার বাড়ীতে আসুন। প্লিজ!’ উচ্চারনে এমন একটা আতঙ্কের ছোঁয়া মিশে ছিল যে আমার গায়ের রোম খাড়া হয়ে গিয়েছিল ।
‘কি ব্যাপার ? কি হয়েছে মিস কর?’ জানতে চাইলাম।
‘সে ফোন করেছিল?’
‘কে?’
‘আনন্দ!’
‘কখন?’
‘এইতো, একটু আগেই। বললো সে আসছে... আমার জন্য।’ কথা কেঁপে গেল মিস করের ।
‘মিস কর!’ কোনো সাড়া পেলাম না । ‘মিস কর!’
ক্ষীনস্বর ভেসে এলো, ‘বলুন...’
‘আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘আপনি দরজার ছিটকিনি ভালো করে লাগিয়ে দিন।’
‘দিয়েছি। আপনাকে ফোন করার আগেই।’
‘একমাত্র আমার ডাক ছাড়া কা্রো ডাকে সাড়াও দেবেন না দরজাও খুলবেন না । আপনি আমার গলা চিনতে পারবেন আশা করি?’
‘হ্যাঁ মিঃ চাকলাদার।’
‘ওকে । আপনি অপেক্ষা করুন আমি যাচ্ছি ।’
ফোনের রিসিভার নামিয়ে আবার উঠালাম । সৌরভকে ফোন করলাম । সবকিছু বলে পর্যাপ্ত পুলিস নিয়ে মিস করের বাড়ীর কাছে যেতে বলে আমিও রওনা দিলাম ।
০০০০০
খুব দ্রুতই ওখানে পৌছে গেছে সৌরভ । সাথে চারজন   সশস্ত্র পুলিস । আরো তিনজনকে পাঠিয়ে দিয়েছে পেছনের পাঁচিলের দিকে ।
সদর দরজার কাছে গিয়ে বেল বাজালাম ।
ভেসে এলো গম্ভীর পুরুষ কণ্ঠ । ‘কে? কাকে চাই?’
‘আমি প্রবাহ চাকলাদার । মিস করের সাথে একটু কথা বলতে চাই।’
‘সে এখানে নেই।’
‘  আপনি যেই হোন । জানিনা কেন মিথ্যে কথা বলছেন।’
‘তনি আপনাদের সাথে কথা বলতে চায় না ।’
‘আপনি কে বলুন তো?’
‘সেটা জেনে আপনার কি দরকার?’ তার পরেই ভেসে এলো বাজখাঁই চিৎকার, ‘যান, চলে যান এখান থেকে।‘
‘সরি মিস্টার । সেটা করতে পারছি না।’ বলেই দরজায় ঘা মেরে বললাম । ‘দরজা খুলুন!’
রাগে চিড়বিড়িয়ে উঠে সেই অদৃশ্য কণ্ঠ বলে উঠলো, ‘ওই ভাগ এখান থেকে ! সরে যা দরজার ওদিক থেকে। আমার হাতে বন্দুক আছে। চালিয়ে দেবো ।’
এবার সৌরভ বলে উঠলো, ‘দরজাটা ভালোয় ভালোয় খুলে দিন । এ বাড়ী পুলিস ঘিরে ফেলেছে । আপনার পালানোর পথ বন্ধ ।’
আবার গর্জে উঠলো কণ্ঠ, ‘ওসব পুলিস ফুলিসের ভয় দেখাবেন না। আমি শেষ বারের মতো বলছি দরজার কাছ থেকে সরে যান না হলে গুলি চালাবো।’
সমান তেজে সৌরভ বলে ঊঠলো, ‘ আমিও আপনাকে একটা সু্যোগ দিচ্ছি মিস্টার। তিন গুনতে গুনতে দরজা খুলুন না হলে আমরাই গুলি চালাবো ।’
আমি ডাক দিলাম, ‘মিস কর! মিস কর!’
ভেসে এলো সেই হাড় হিম করা শীতল কন্ঠ । ‘কাকে ডাকছেন সে আর বেঁচে নেই?’
সৌরভ চিৎকার করে বললো, ‘এ্যা আ আ আক!’
কোনো আওয়াজ নেই দরজা খোলার ।
‘দুইইইই!’
ভেসে এলো জান্তব হাসির শব্দ।
‘তিইইইন!’
বেড়ে গেলো সে হাসির মাত্রা।
সৌরভ ইশারা করলো এক জন পুলিসকে দরজার দিকে আঙুল তুলে ।  কাঁধে ঝোলা কারবাইন তাক করলো পুলিসটা  । 
‘শেষবারের মতো বলছি দরজা খোলো !’ সৌরভ হাঁক পাড়লো ।
উত্তর এলো না  কোনো । আঙুল টা আর এক বার নড়ে উঠলো সৌরভের । এক ঝাঁক বুলেট ছূটে গেল দরজার ভেদ করে । কানে তালা লেগে গেল তার শব্দে। সেকেন্ডের ভেতরে ওদিক থেকে ভেসে এলো এক মরনান্তিক চিৎকার । তার পরেই ধপ করে একটা শব্দ । সেকেন্ড পাঁচেক অপেক্ষা করে সৌরভ আবার হাত তুলে ইশারা করলো । তিন জন পুলিস এক সাথে ছুটে গিয়ে কাঁধ দিয়ে মারলো সজোরে ধাক্কা । একবারে কিছু হলোনা । মজবুত ছিটকিনি আর হুড়কো সামলে নিলো সে আঘাত। কিন্তু বার পাঁচেক ওই ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা ছিলনা ওদের ।
দরজা খুলে যেতেই দেখতে পেলাম মেঝেতে পড়ে আছেন মিস কর । রক্তের ধারা বয়ে যাচ্ছে ঘরের ড্রেন অভিমুখে । কাছে গিয়ে পরীক্ষা করতেই বোঝা গেল যে আঘাত ওর এই অবস্থা করেছে সেটার কারন কারবাইনের বুলেট!
ঘরে আর কেঊ ছিল না। পেছনের উঠোনে যাওয়ার রাস্তা যেমনকার তেমনি বন্ধ । বন্ধ ছিল জানলাগুলোও ।  
অবাক হয়েছিলাম আমারা সবাই । সৌরভের চোখেমুখে অবিশ্বাস, আতঙ্ক, প্রশ্নর ছাপ পড়েছিল স্পষ্ট । বাকি পুলিসরাও থ মেরে গিয়েছিল ঘটনার প্রেক্ষিতে। কথা না বললেও সবার মনেই যে প্রশ্নের ঝড় উঠেছিল তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না ।
‘প্রবাহদা কি হলো বলুন তো?’
বার কয়েক ঢোঁক গিলে‘ বললাম, ‘আমি ভুতে বিশ্বাস করি না সৌরভ। কিন্তু...’
০০০০০
‘ভুতে আমি আজ ও বিশ্বাস করিনা । কারন সেই সম্ভাবনার প্রতিই আমার মন সায় দিতে নারাজ। আমি খুঁজেছি এর অন্য রকম যুক্তি গ্রাহ্য উত্তর । মিস তনিমা করের ক্ষেত্রেও জোড়াতালি দিয়ে সে রকম একটা উত্তর আমি খাড়া করেছিলাম। পরে সৌরভকে বলেও ছিলাম।’
‘কি যুক্তি প্রবাহদা?’ জানতে চাইলাম আমি।
‘গিলটি কন্সাসনেস । প্রচুর পরিমাণ অর্থ হাতে পেয়ে তাকে টিকিয়ে রাখতে না পেরে মিস করের অবচেতন মন জন্ম দিয়েছিল আনন্দের প্রেতাত্মার । আর অর্থের লোভে এক এক করে খুন করে ছিল নিজের ভাইদের । হয়তো সে সময় তার অবচেতন মন তাকে ভাবতে সাহায্য করেছিল যে সে তনিমা নয় । আর তনিমার মনটা জ্বলে পূড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিলো অনুশোচনায়। তার থেকেই জন্ম নেয় নিজেকে শাস্তি দেওয়ার ভাবনা । সবটাই ডুয়াল পারসোনালিটির খেল । আবার নাও হতে পারে। এ বিপুলা জগতের কটা রহস্যই বা আমরা বুঝতে পারি ।’

সমাপ্ত