Search This Blog

Wednesday, February 7, 2018

খিল্লি করা ভা্লো...কিন্তু ... - প্রতিম দাস

[ বছরের শুরুতেই স্বয়ং Robert Burton Robinson এর কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছি তার লেখা অনুবাদ করা ও আপনাদের পড়ানোর । আজ ২য় গল্প “ April fool” গল্পের ভাবানুবাদ “খিল্লি করা ভালো...কিন্তু ... ” ]
খিল্লি করা ভা্লো...কিন্তু ...
প্রতিম দাস
‘আরে তোমার তো দেখছি খুবই অল্প বয়েস। ’
‘হ্যাঁ।’
‘তা কি কেস? খুন?’
‘হ্যাঁ।’
‘ বয়ফ্রেন্ড। তাই তো?’
‘কি করে বুঝলেন?’
বয়স্কা মহিলা কয়েদীটির মুখের বলিরেখা আর কুঞ্চিত হলো হাসির কারনে । ‘দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি রাস্তা ঘাটে চড়ে বেড়ানো মেয়ে নও । শিক্ষা দীক্ষার ছাপ স্পষ্ট। কি করেছিল বেজন্মাটা?’
‘বিরাট গল্প।’
‘ আমার অসুবিধা নেই । খরচ করার মত সময় এখন অঢেল। তোমারো তাই । অবশ্য তোমার যদি আপত্তি...’
‘নাহ...আপত্তি কিসের ।‘ একটা বড় করে শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকার পর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো মেয়েটা । ‘এসবের শুরু হয়েছিল সেই দিনটায় । যখন আমি হাইস্কুলে পড়ি ... লাস্ট ইয়ার ...’
০০০০০
‘মনে হচ্ছে ফেয়ারওয়েল ড্যান্স পার্টির জন্য যে যার মানুষ খুঁজে নিয়েছে?’ আমি বললাম ।
জেনিফার বললো, ‘হ্যাঁ । গত রাতে জনি আমাকে প্রপোজ করেছে ।’
হিদার বললো, ‘যাহ! আমি ওর সাথে যাবো ভেবেছিলাম!’
বললাম, ‘সে কিরে হিদার কি বলছিস তুই? অ্যাণ্ডির কি হলো?’
‘কিছুই হয়নি । তবু আশা করেছিলাম জনি একবার অন্তত আমাকে বলবে ওর সাথে যাওয়ার জন্য ।’
‘ তাই নাকি? তা তোর এই ইচ্ছেটা একবার অ্যাণ্ডিকে বলবো নাকি?’
‘তোর সাহস আছে বলার,’ হিদার বলে উঠলো ।
সবাই একসাথে হেসে উঠলাম। এপ্রিল চুপচাপ লাঞ্চ খেতে খেতে আমাদের কথা শুনছিল। ও খুব একটা কথা বলেনা । আমাদের গ্রুপটার সাথে আজ অবধি সেভাবে কখনোই নিজেকে মিশিয়ে নিতে পারেনি এপ্রিল । তবু ওকে আমাদের মধ্যে ডেকে নিতাম শুধু ওকে নিয়ে খিল্লি করবো বলে। ও অবশ্য সব বুঝেও কিছু বলতো না ।
‘কি রে এপ্রিল তোর কি খবর? কেউ বললো টললো?’ জানতে চাইলাম।
‘নাহ,’ এপ্রিল উত্তর দিলো । ‘ভালোই হয়েছে। জানিসই তো আমি নাচতেই পারি না ।’
‘আরে বাবা, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোমর দুলাতেও কি পারিস না নাকি?’
সবাই হেসে উঠলো ।
‘ নাচতে না জেনেও এসব পার্টিতে অংশ নেওয়া যায় । আরে বাবা , সামনের মানুষটাকে দুহাতে চেপে ধরবি হাগ করার মতো করে। তারপর কোমর দুলাবি একটু একটু ব্যাস ।’
এপ্রিল কোনো উত্তর দিলোনা দেখে বললাম, ‘কিরে তোর ভালো লাগেনা নাকি একজন ছেলে তোকে জড়িয়ে ধরে থাকবে?’
এপ্রিলের গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো ।
‘ কোনো ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকবে এটা একটা দারুন অনুভুতি । কি বলিস হিদার? ’
‘আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন?’ হিদার উত্তর দিলো ।
‘কারন তোর একজন স্টেডি বয়ফ্রেন্ড আছে । আর সে যে তোকে মাঝে মাঝেই জড়িয়ে ধরে সেটাতো আর মিথ্যে নয়।’
দলের বাকিরা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আমার কথায় ।
‘তাহলে এপ্রিল তোকে কেউ প্রপোজ করেনি বলছিস । বেশ । তুই এক কাজ কর তুই নিজেই কাউকে প্রপোজ করে দে।’
‘মনে হয় না সেটা ঠিক হবে?’ এপ্রিল উত্তর দিলো ।
‘কেন? এতে খারাপটা কোথায় ?’
এপ্রিল একটু ইতস্তত করে বললো, ‘আমি ঠিক বলতে পারবো না ...’
‘হ্যারির ব্যাপারে তোর কি মত?’ প্রশ্নটা ইচ্ছে করেই করলাম। জানি এটা ওকে তাতিয়ে দেবে । কারন হ্যারি হলো আমাদের স্কুলের সবচেয়ে সেরা । স্মার্ট, হ্যান্ডসাম, হট । মনে মনে যার একটু ছোঁয়া পেতে চায় সব মেয়েই ।
জেনিফার কনুই দিয়ে এক গুঁতো মারলো আমাকে । কারন ও ভালো করে জানে আমার মনের ইচ্ছেটা। আমি নিজেই এই পার্টিতে হ্যারির সাথে নাচতে চাই ।
‘হ্যারিকে ভালোই লাগে,’ বললো এপ্রিল । ‘ওর সঙ্গে নাচা যেতেই পারে।’
‘এই তো আসল কথা বোঝা গেল? হেভি হট কি বলিস?’ হিদার বললো ।
‘বেশ তাহলে তাই হোক,’ আমি বললাম। ‘তোর যখন হ্যারিকে ভালো লাগে ওকে গিয়ে সোজা বল যে তুই ওর সাথে নাচ করতে চাস।’
‘হুম, কিন্তু কি করে বলবো বুঝতে পারছি না,’ এপ্রিল উত্তর দিলো । ‘আসলে ছেলেদের সাথে কথা বলতে গেলেই আমি নারভাস হয়ে যাই।’
‘ও তাই বুঝি,’ জেনিফার আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো, ‘ তাহলে থাক । চেষ্টা করে লাভ নেই ।’
কিন্তু আমার মাথায় এই বদমায়েশি খেলার ছক যখন তৈরী হয়েছে এটা খেলবোই । ‘তোর কি দরকার জানিস এপ্রিল? একটা ধাক্কা।’
‘মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?’
‘ মানে এটাই বলতে চাইছি যে হ্যারির সাথে কথা বলার একটা সুযোগ বা পরিস্থিতি তৈরী করতে হবে । আরে- তাই তো ! এটা মনে হচ্ছে ভালোই কাজ করবে। তুই একটা কবিতা লিখেছিস বললি না কালকে? ’
‘হ্যাঁ।’
কবিতাটা কালকে আমি দেখেওছি । একেবারে কাঁচা হাতের গদগদ প্রেম রসে ভরা। ওটা যদি কবিতা হয় তাহলে আমি সাহিত্যের স বুঝিনা ।
‘তুই ওটাই দিয়ে দে হ্যারিকে। একটা খামে পুরে ,ওপরে হ্যারির নাম লিখে ওকে পাঠিয়ে দে। ভেতরে লিখে দিবি টা স্পেশ্যালি ওর জন্যই লিখেছিস । আমি সিওর ওটা পড়লেই ও তোকে ডাকবে কথা বলার জন্য। তুই তখন চোখ কান বুঁজে ড্যান্সে ওর সাথে যাওয়ার প্রস্তাবটা দিয়ে দিবি । আমি এটাও সিওর যে ও তোকে ফেরাবে না। কারন আমি জানি ও কবিতা ভালবাসে ।’
‘আসলে কি জানিস । আমি না ওই কবিতাটা ওকে ভেবেই লিখেছি ।’
কথাটা শুনে আমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার দশা । বোঝো ঠ্যালা ইয়ার্কিটা মেরে তাহলে লাভ কি হলো । তারপরেই মনে হলো । ইয়ার্কি আর হলোটা কি । গল্পর আসল ভাগই তো বাকি । ওই কবিতা পড়ে হ্যারি ওকে ডেকে যে পাঠাবে তা জানি। তারপর যেটা ঘটবে সেটা ভাবতেই আমার পেটের ভেতর হাসি কুল কুলিয়ে উঠছে।’
‘খামটা ওকে দেবো কি করে?’ এপ্রিল জানতে চাইলো ।
‘আরে সে দায়িত্ব আমার ।’
০০০
ক্লাস শেষে জ্যাককে দিয়ে খামটা পাঠিয়ে দিলাম হ্যারির হাতে । তারপর বেরিয়ে গেলাম ক্লাস থেকে । কিছু বাদেই জ্যাক ফিরে এলো । বললো, ‘এপ্রিলকে ডাকছে হ্যারি ।’
ওদের দুজনকে একা ছেড়ে আমরা একটু দূরে দাঁড়ালাম । কি কথা হলো ওদের ভেতর শুনতে পেলাম না। দেখলাম হ্যারি আর একবার খামের ভেতরের কাগজটা বার করে পড়লো । কিছু একটা বললো । তার পরেই ঘুরে দাঁড়ালো এপ্রিল । ওর চোখে জল । কিছু না বলে একছুটে আমাদের পাশ দিয়ে ছুটে চলে গেল । আমরা হো হো করে হেসে উঠলাম।
০০০০০
বয়স্কা মহিলা বললেন, ‘ও তাহলে সে রাতে তোমার সাথেই নেচেছিল হ্যারি । পরে তোমরা বিয়ে করবে ঠিকও করেছিলে নিশ্চয় । সম্ভবত সেটা হয়নি । হ্যারি অন্য কারো সাথে ... আর সেটা সহ্য করতে না পেরে তুমি ওকে খুন করেছো ।’
‘ অন্য কারো সাথে হলে হয়তো খুনটা করতাম না । ও এপ্রিলকেই ...।’
‘এ বাবা সে কি!’
‘ হ্যাঁ । সেদিন এপ্রিল কেঁদেছিল আনন্দে । কষ্টে নয় । ওই কবিতাটা হ্যারির এতোই ভালো লেগেছিল যে ওই এপ্রিলকে নাচের পার্টনার হওয়ার জন্য প্রপোজ করে । আর সেটা শুনেই এপ্রিল কেঁদে ফেলেছিল । সে রাতে আমি জ্যাকের সাথে নাচ করেছিলাম। কিন্তু চোখ ছিল হ্যারির দিকে ।’
‘অর্থাৎ তোমার করা ইয়ার্কি তোমার দিকেই ফিরে আসে ?’
‘হ্যাঁ । এপ্রিলকে বোকা বানাতে গিয়ে নিজেই বোকা বনে গিয়েছিলাম । কিন্তু হ্যারি আমার ছাড়া আর কারো হতে পারে না । হতে দিই নি । ’
সমাপ্ত