Search This Blog

জানাঅজানা পৃথিবী- নানারকম নিবন্ধ ও বই এর খবর - প্রতিম দাস

অদ্ভুত ভারত
প্রতিম দাস

ভারতকে যুগে যুগে অন্যদেশের মানুষেরা এক বিশেষ পরিচয়ে চিনেছে। সেটা হলো এ দেশ জাদুর দেশ বা নানান অদ্ভুত আশ্চর্যের দেশ । কেন এরকম ভাবনা এসেছে তাদের মনে? বিদেশী পর্যটকদের লেখা নাড়াচাড়া করলে এর উত্তর খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়না । আসুন আজ সেরকম এক পর্যটকের লেখনীর কিছু অংশ পড়া যাক । প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি এরকম আর কিছু অদ্ভুত লেখনী আগামীদিনে নিয়ে আসবো আপনাদের সামনে ।
নিডাস নিবাসী গ্রীক চিকিৎসাবিদ টেসিয়াস ৪০০ খ্রিস্টপূর্বকালীন সময়ে তার ভারত ভ্রমনের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। তার লেখনী অনুসারে ভারত এই জগতের একেবারে পূর্বদিকে অবস্থিত একটি দেশ। টেসিয়াস ভারতে নিবাসী বিভিন্ন ধরণের মানুষদের একটা তালিকা বানিয়ে ছিলেন । যার ভেতর ছিল পিগমি প্রজাতির কথা । সেটা হতেই পারে । হয়তো বেঁটে মানুষদের একটা গোষ্ঠী সে সময়ে ভারতে ছিল। কিন্তু এরপর যে যে অদ্ভুত প্রজাতির মানুষদের কথা উনি লেখেন তা পড়লে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় ।
স্কিয়াপোড – এই প্রজাতির মানুষদের একটাই পা ।সে পায়ের পাতা এতোটাই চওড়া যে, সেটাকে ওই মানুষেরা রোদের হাত থেকে বাঁচতে ছাতার মতো ব্যবহার করে ।
সাইনোসেফালি – এই প্রজাতির মানুষদের মাথা কুকুরের মতো । এরা কথা বলতে পারেনা। কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে । শিকার করে নিজেদের উদর পূর্তি করে থাকে ।
মারটীখোরা – যাদের মুখটা মানুষের মতো, শরীর সিংহের আর কাঁকড়া বিছের মতো লেজ আছে ।
নাম উল্লেখ না করে একটি প্রজাতির কথা লিখেছেন উনি, যাদের কান এতটাই বড়ো যে, তা দিয়ে কনুই অবধি শরীর চাদরের মতো মুড়িয়ে রাখা যায় ।
ভারতে রাক্ষসও দেখেছিলেন উনি । যারা শয়তানের মতো বড় লেজবিশিষ্ট ।
ইউনিকর্ন বা এক শৃঙ্গ যুক্ত ঘোড়া এবং গ্রিফিন বা ঈগলের মতো মাথা ও ডানাওয়ালা সিংহেরা ভারতের বিভিন্ন স্থানে গুপ্তধন পাহারা দেয় ।
একটি অসাধারন জলপ্রপাতের কথাও উনি লিখেছেন । যার জল কলসিতে ভরে রেখে দিলে জমে সোনা হয়ে যায় । ওই জলপ্রপাতের নিচে জমে থাকা লোহা দিয়ে তলোয়ার বানিয়ে সেটা দরকার মতো পুঁতে ভারতের মানুষেরা ঝড় বৃষ্টি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করে ।
যেকোনো দেশের তুলনায় ভারতের সূর্য আকারে দশগুন বড় । সমুদ্রের জলের গভীরতা মাত্র চার আঙ্গুল । সে জল এতো গরম হয়ে থাকে যে তাতে কোনো মাছ থাকেনা ।
একটি বিশেষ প্রজাতির পিগমি মানুষদের কথাও উনি লিখেছেন । যারা উচ্চতায় দুই কিউবিট বা ৩৬ ইঞ্চি । চুল হাঁটু অবধি ঝোলা। দাড়ি মাটি ছুঁয়ে থাকে । অন্ডকোষসহ পুরুষদের যৌনাঙ্গ এতো বড়, যে সেটা গোড়ালি অবধি পৌছে যায়। এরা খুব ভালো তীরধনুক চালাতে জানে । রাজার ডাক পেলেই এদের তিন হাজার অধিবাসী নিজেদের দক্ষতার প্রদর্শন করে দেখায় ।
এসব পড়ে যদি মানুষ ভারতকে রুপকথা বা জাদুর দেশ বলে মনে করে তাহলে কি আর বলা যায় আপনারাই বলুন।
০০০০০
তথ্যসুত্র– Jadoowallahs, Jugglers and Jinns – a Magical History of India
ছবি - Nuremberg Chronicle, late fifteenth century


কোথায় গেল মোয়াই নির্মাতারা !!
প্রতিম দাস
০০০০০০০০
প্রশান্ত মহাসাগরে তাহিতি আর চিলির মাঝে ভেসে আছে তিনকোনা এক টুকরো ভুখন্ড । মোটামুটি অধিকাংশ মানুষ চেনেন সে দ্বীপটাকে । তার রহস্যময় বিশালাকৃতি মোয়াইগুলোর জন্য । দ্বীপটা থেকে সবচেয়ে কাছে যেখানে মানুষ বাস করে তার নাম পিটকারিন আইল্যান্ড,  দূরত্ব ১৯০০ কিমি ।
দ্বীপটির প্রচলিত রাপা নুই ভাষায় যাদের মোয়াই বলে ডাকা হয় তাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো মহাকাশভিত্তিক বিষয়কে উদ্দেশ্য করে তাকিয়ে আছে । উদাহরণস্বরুপ বলা যায় সাতজনের একটি দল তাকিয়ে আছে সেই বিন্দুর দিকে যেখানে সূর্য অস্ত যায় মহা বা জলবিষুবের সময় । মোয়াইগুলো বানানো হয়েছিল এক এক খন্ড লাভা পাথরের টুকরো থেকে । যার কোনো কোনোটা ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট উঁচু । বুঝতেই পারছি আপনারা ইতিমধ্যেই অনুমান করে নিয়েছেন আমি কোথাকার বা কিসের কথা বলছি । হ্যাঁ, ইষ্টার আইল্যাণ্ডের সেই সব মোয়াই বা দৈত্যাকার মূর্তির কথাই বলছি ।
একটা সময় পর্যন্ত মানুষের সামনে শুধু ওই বিশালকায় মাথা, বিরাট বিরাট চোখ, লম্বা নাক ঝোলা থুতনিওয়ালা মুখ গুলোর ছবিই আনা হয়েছে । আজ অবধি অনেকেই দেখেন নি ওদের বাকি অংশ ঠিক কেমন দেখতে । মাটি খুঁড়ে উঠিয়ে আনার পর তাদের চেহারা এখন আমাদের জানা । সেরকম একটা ছবি আমি এঁকে দিলাম এই পোস্টের সাথে । অনেক অনেক অসম্পূর্ণ মূর্তিও পাওয়া গেছে ওই দ্বীপে । সাথে এটা স্বীকার করে নেওয়াই ভালো ঠিক কি কারনে সেই আদি ইস্টারবাসীরা এগুলো বানিয়েছিলেন তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি । প্রচলিত উপকথা অনুসারে যেটা জানা যায় সেটাই এখনো সম্ভাব্য কারন বলে মেনে নেওয়া হয় ।
নানা রকম যে মতবাদগুলো প্রচলিত আছে, তার ভেতর একটা এরকম যে এরা ছিল অতি উন্নত একটা সভ্যতা । যারা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই এই কাজ শুরু করেছিল কিন্তু শেষ করতে পারেনি ভয়ঙ্কর রকমের  কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে।
০০০০০০
১৭২২ সাল । দিনটা ইস্টার সানডে । দক্ষিন প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে ওলন্দাজ জাহাজের একটা দল । নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন জ্যাকব রোজ্ঞেভিন । সেই সময়েই উনার প্রথম চোখে পড়ে ইস্টার দ্বীপ । সে এমন এক দ্বীপ যার অস্তিত্ব তার জানা কোনও নথি বা চার্টে নেই । জাহাজ নিয়ে একেবারে দ্বীপের কাছে পৌছাতে না পৌছাতেই   ওরা দেখতে পেলেন ছোট ক্যানো নৌকায় চেপে কিছু মানুষ ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। অতি সাধারন জীর্ণ পলকা সেসব ক্যানো লিখেছিলেন ক্যাপ্টেন রোজ্ঞেভিন । “ কোনোক্রমে লতাপাতা আর গাছের ডাল জড়িয়ে বানানো সে সব ক্যানোর ভেতরে ক্রমাগত জল ঢুকছিল । আদিবাসীরা একই সাথে দাঁড় বাইছিল আবার জল তুলে বাইরে ফেলতে ফেলতে এগিয়ে আসছিল । এসব দেখে আমি বুঝেছিলাম ওই দ্বীপে যারা বসবাস করে তারা খুবই গরীব ।”
মানুষগুলোর মুখ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিল উজ্জ্বল রঙ দিয়ে চিত্রবিচিত্র করা। কোনোরকম শত্রুতার ভাব তাদের তরফ থেকে দেখা না গেলেও ওলন্দাজ নাবিকেরা বন্দুক  সাথে নিয়েই দ্বীপের মাটিতে পা রেখেছিল ।  দ্বীপ অধিবাসীদের দেখে আন্দাজ করা যাচ্ছিলো তারা এর আগে এই দ্বীপের বাইরের কোনও মানুষ দেখেনি ।
দ্বীপে অবতরণের একটুবাদেই এক নাবিকের বন্দুক গর্জে ওঠে । ক্যাপ্টেনের লেখনী অনুসারে, সেই নাবিক নাকি জনৈক দ্বীপ বাসীকে তার দিকে পাথর ছোঁড়ার উদ্যোগ করতে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি । কি হয়েছে সেটা না বুঝেই বাকি নাবিকেরাও বন্দুক চালায় । দশবারো জন মারা যায় । আহত হয় বেশ কিছু ।এর পরেই আতঙ্কিত দ্বীপবাসীরা পালিয়ে যায় । ফিরেও আসে । সাথে নিয়ে আসে ফলমূল, মধু, ডিম ইত্যাদি । সেই চিরন্তন কাহিনী । শ্বেতাঙ্গদের দেবতা মনে করেছিল ওরা। তাদের ক্রোধ থেকে বাঁচতে ...
ক্যাপ্টেনের জার্নাল অনুসারে, দ্বীপটিতে সেই অর্থে আকর্ষণ করার মতো কিছু পাননি । তবে  সমুদ্রের তট জুড়ে সারি সারি বিশাল মূর্তিগুলো উনাকে অবাক করে দিয়েছিল । কিছুতেই ধারনা করে ঊঠতে পারেন নি এই হতদরিদ্র আদিবাসীগুলো কিভাবে এতো বড় বড় মনোলিথ মূর্তি নির্মাণ করলো । বড়গাছ বলতেতো দ্বীপে কিছুই ছিলনা । সব চেয়ে উঁচু যে গাছ উনি দেখেছিলেন তা উচ্চতায় ফুট দশেক হবে ।  তাহলে কিসের সাহায্যে নিয়ে এরা এগুলোকে খাড়া করলো ?
উনিই এ দ্বীপের নামকরন করেন ইস্টার আইল্যান্ড
০০০০০

ক্যাপ্টেন রোজ্ঞেভিনের অভিযানের  পর কেটে গেল ৫২ বছর । ১৭৭৪ সালে ওই দ্বীপে এসে পৌছালেন অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন জেমস কুক । উনি দেখতে পেলেন দ্বীপের অধিবাসীদের হাল আরো খারাপ হয়ে গেছে । আর মাত্র সাতশো মতো মানুষ বেঁচে আছে ।
উনি ভেবেছিলেন একসময় এখানে এক উন্নত সভ্য সভ্যতার মানুষদের বসবাস ছিল । যারা ওই সব মূর্তি বানাতো । আগ্নেয়গিরির তাণ্ডবে সব শেষ হয়ে যায় । তিনি একথাও লিখে যান যে বর্তমান অধিবাসীরা ওই সব মূর্তিতে হাত ছোঁয়ায়নি কোনোদিন । ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখেও সে সব সারানোর কোনও উদ্যোগ এদের ভেতর নেই ।
০০০০০
অনেক অনেক জল্পনা কল্পনা হয়েছে । রচিত হয়েছে কত গল্প কত মতবাদ । আজ সেরকমই একটি মতবাদের কথা জানাবো এখানে । যার মূল বিষয় কোথায় গেল বা কি হল সেই সব ইস্টার আইল্যান্ডবাসীদের যারা এগুলো বানিয়েছিল ।
সেভাবে এই রহস্য সমাধানের চেষ্টা কোনোদিন হয়নি । জল্পনা কল্পনাই হয়েছে বেশীরভাগ সময়ে।  কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের সহায়তায় আজ অনেক কিছুই জানা গেছে । অনুমান করা হচ্ছে মোটামুটি দশম শতাব্দীতে এই সব মূর্তি বানানো হয়েছিল পলিনেশিয় ঈশ্বর বা তাদের পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্য নিয়ে । প্রতিটা মূর্তির আলাদা আলাদা নাম আছে ওদের সংস্কৃতিতে ।
যে স্থানীয় উপকথা ওখানেপ্রচলিত আছে সেটা অনুসারে এই সব মূর্তি নির্মাণ করতেন মানা নামের এক জাদুশক্তি । মূর্তিগুলো রাতের বেলায় জীবন্ত হয়ে যে গোষ্ঠীর মানুষ ওগুলো নির্মাণ করাতো তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিতো ।
এর থেকে একটা অনুমান করে নেওয়া যেতেই পারে পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীগুলো একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার জন্য একের পর এক আরো বড় এবং নিখুঁত মূর্তি বানানোর পথে হাঁটতে থাকে। যার একটাই অর্থ অনেক অনেক গাছ কাটা ।
১৫০০ সাল নাগাদ সময় থেকে এসব মূর্তি বানানো বন্ধ হয়ে যায় । কারন বড় মাপের গাছ আর ছিলনা দ্বীপে ।
অনেক মূর্তি ওখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পৃথিবীর নানা দেশে। কোনো সময়েই সে কাজ সুষ্ঠ ভাবে করা সম্ভব হয়নি । বন্দুক দেখিয়ে সভ্য মানুষ ইস্টারদ্বীপের মানুষদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তাদের রক্ষক দেবতাদের ।

১৭৯০ সালে এইচ এম এস বাউন্টি নামে একটা জাহাজে করে পিটকারিন আইল্যান্ড থেকে আগত মানুষেরা এখানে আক্রমণ চালিয়েছিল তার হদিশ আছে । ১৮০৫ সালের পরবর্তী সময়ে দক্ষিন আমেরিকার ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা একাধিকবার এখানে হানা দিয়ে অনেককে ধরে নিয়ে যায় । ফলে প্রাচীন এক সভ্যতার শেষ বংশধরদের সংখ্যা ক্রমশই কমতে থাকে ।  কিন্তু এতো বর্তমান অধিবাসীদের কি পরিণতি হলো তার কথা । আসুন এবার দেখা যাক আধুনিক বিজ্ঞান গবেষনায় কি পাওয়া গেছে যা সেই আদি ইস্টার বাসীদের মূর্তি বানানো বন্ধ করা এবং অবলুপ্তির কারন ।
সমগ্র দ্বীপের নানা স্থানের মাটি খুঁড়ে একাধিক রকমের নমুনা সংগ্রহ করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন একসময় এই দ্বীপে ছিল ঘন জঙ্গল ।ছিল নানা রকমের গুল্ম লতাপাতা এবং জীবজন্তু । মাটির অনেকটা নিচে এক স্তরে তারা খুঁজে পেয়েছেন এমন এক ধরনের গাছের পরাগ রেনুর অস্তিত্ব যার সাথে চিলিয়ান ওয়াইন পাম গাছের মিল  আছে । যে গাছ উচ্চতায় ২৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুঁড়ি মোটা হয় ছয় ফুট মতো । এইসব গাছের গুঁড়িকে অনায়াসের ব্যবহার করা যায় রোলার হিসাবে । ৮০ টন অবধি ওজনের জিনিষ চাপিয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এছাড়াও পাওয়া গেছে হাউহাউ গাছের পরাগ রেনু । পলিনেশিয়ার নানান এলাকায় এই গাছ ব্যবহার হয় শক্ত পোক্ত দড়ি বানানোর জন্য।
মাটি খুঁড়েই আবিষ্কার হওয়া রান্নার বাসনপত্রর গায়ে লেগে থাকা খাবারের ডিএন এ পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন আদি ইস্টার বাসীরা কলা, লাল আলু, আখ এবং ট্যারো শিকড় খেত ।
মাটির স্তরে স্তরে জমে থাকা অতীত ইতিহাসের নানা সুত্র বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে জানা গেছে ক্রমাগত জঙ্গল কেটে ফেলার কারনে কমতে শুরু করেছে খাদ্যের যোগান । পাওয়া গেছে অত্যধিক পরিমাণে কাঠ কয়লা । অর্থাৎ শুধু মূর্তি নির্মাণের জন্যই নয় খাদ্য নির্মাণ ক্ষেত্রেও ব্যাপক ভাবে কাঠের ব্যবহার শুরু হয়েছিল একটা সময়ে। বনজ খাদ্যে টান পড়ার ফলে আদি অধিবাসীরা এক সময় ডল ফিনের মানস খেতে শুরু করে । যার প্রমান মিলেছে মাটি খুঁড়েই পাওয়া হাড় পরীক্ষা করার পর । আর সেই ডঃলফিন শিকার করার জন্য তাদের যেতে হতো গভীর সমুদ্রে । এর জন্য দরকারি যে ক্যানো তারা বানাতো তাও তৈরি হতো ওই কাঠ দিয়েই ।
একসময় ক্যানো বানানোর উপযুক্ত পাম গাছও আর রইলোনা দ্বীপটিতে । খাদ্যাভাস যে দারুনভাবে বদলে গিয়েছিল তার প্রমান মেলে ১৭৮৬ সালে ফরাসী অভিযাত্রী লে কোমতে ডে লা পেরোজের ডায়েরীর লেখা থেকে। জানা যাচ্ছে ওই সময়ে দ্বীপ বাসিদের অন্যতম প্রধান খাবার শামুক বা ঝিনুকের মাংস ।
 খাদ্যই তো মানুষের বেঁচে থাকার টিকে থাকার আসল উপাদান । সেটা না থাকলে আর বাকি কাজ কিভাবে হবে । ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দানবা কৃতি রক্ষক মূর্তিদের নির্মাণ কাজটাও । আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ‘মানা’ নামে পরিচিত সেই সব দক্ষ জাদুকর মূর্তি নির্মাতারা ।
তবে এটা স্বীকার করতেই হবে মূর্তিগুলো ঠিক কি কারনে আকাশের গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান অনুসারে সাজানো আছে তার সদুত্তর বিজ্ঞানী গবেষক রা আজও দিতে পারেন নি । কারন সেই অর্থে কোনো লিখিত লিপি বা ওই ধরনের কিছু ওখান থেকে পাওয়া যায়নি ।
সব হারিয়ে গেছে শুধু থেকে গেছে কিছু উপকথা আর মোয়াইগুলো । দ্বীপ ও তার অধিবাসীদের রক্ষা করার ভাবনা থেকে যাদের নির্মাণ করা হয়েছিল তারাই আসলে হয়ে দাঁড়িয়েছিল এক “বুদ্ধিমান কিন্তু অদূরদর্শী” জনজাতির বিলুপ্তির কারন ।


Giant Head from Olmec Civilization
সমুদ্রের উচ্চতা যখন কম ছিল তখন এশিয়ার উচ্চভূমি থেকে সেই পথ পাড়ি দিয়ে বেরিং স্ট্রেটের শুকনো জমিতে পদার্পণ করেছিল একদল মানুষ। এরাই ছিল আদি আমেরিকান। পরবর্তী কয়েক হাজার বছরে এরা ছড়িয়ে পড়ে নানান এলাকায়। এদের জীবনধারণের মূল সূত্র ছিল মূলত শিকার এবং মাছধরা । মেসোমেরিকা এবং পেরুতে এদের কারনেই সুত্রপাত হয় এক নতুন সভ্যতার। 
মেসোমেরিকাতে ৯০০০ বছর আগে সেই আদি আমেরিকানরা ভুট্টা, বাজরা, বিনস, কুমড়ো ইত্যাদিএ চাষাবাদ করতো। মাটিরপাত্র বানাতে জানতো । বুনতে পারতো পোশাকের কাপড় ।
এদের ভেতর থেকেই প্রাথমিক স্তরের এক সভ্যতার বিকাশ ঘটে। যাদের নাম ওল্মেক ।যথান পশ্চিম মেক্সিকো ।
ওল্মেকরা সেই সময়ে বিশাল মাটির পিরামিড জাতীয় স্থাপত্য ছাড়াও বানিয়েছিল পাথরের অনেক মূর্তি। এই লেখার সাথে যে আঁকাটি দিয়েছি সেটা ওই রকম এক দানবিক মূর্তির মস্তক । যার উচ্চতা প্রায় তিন মিটার ।
ছবি ও লেখার তথ্যসূত্র – Kingfisher Illustrated History of the World
কালারড পেন্সিল...এ৪ ...২০১৮

বিস্তৃত অর্থে, "ধর্ম" শব্দটির অর্থ জীবনে চলার পথে অভিজ্ঞতা সুত্রে পাওয়া নানা বিভ্রান্তিকর রহস্যময় পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সঙ্গতিপূর্ণ বিশ্বাস বা শিক্ষা লাভ । । শব্দটির উৎপত্তি একটি প্রাচীন ল্যাটিন শব্দ রেলিগো থেকে । যার অর্থ "বেঁধে ফেলা " বা "বাধ্য করা"। একই ধরণের তত্ত্বে বিশ্বাসী ব্যক্তিরা একত্রিত হয়ে নানান বিভ্রান্তিকর প্রশ্নগুলির একটি অনুসন্ধান করার চেষ্টা করবেন এটাই ধর্মের মূল সুত্র। 
জীবনের উৎপত্তি কিভাবে ? মানুষ হতে চাওয়ার মানে কি? মানুষের চেয়েও বড় কোনো শক্তি আছে কি যা সব কিছুর জন্য দায়ী ? একজন ভালো ব্যক্তির আচরণ ঠিক কেমন হওয়া উচিত? আমরা যেটুকু দেখতে পাই জীবন কি কেবলই সেটুকুই নাকি আরো বেশী কিছু অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য? সেই অপেক্ষার পথের যাত্রাটা কেমন? পার্থিব জীবনের প্রত্যাশার বাইরে হাঁটতে কতটা দু: সাহস দরকার? এই ধরণের নানা প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তরগুলির জন্য যে অনুসন্ধান তা এক জটিলপ্রক্রিয়া । এর জন্য সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এই তিনটি উতস থেকে সুষম মানে জ্ঞান আহরণ করা দরকার। এর মধ্যে কোন একটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিলেই ধর্ম নামক বিষয়টি সংকীর্ণতার নিগড়ে বাঁধা পড়ে যায় । 
ধর্ম ও সংস্কৃতি সবসময় একে অপরকে প্রভাবিত করে । আমরা যদি নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে বেশী মাত্রায় সচেতন হয়ে উঠি তাহলে ধর্ম নামক বিশাল বিষয়টাকে একটা গন্ডিতে আটকে ফেলবো । শুধু ঐতিহ্যকে মাপকাঠি খাড়া করে যদি ধর্ম পালন বা চিরন্তন প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে যাই তাহলে সংরক্ষকামী মানসিকতার জন্ম হবে । ফলে নিজের পরিবার এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের ভেতরেই সব কিছু আটকে থেকে যাবে । আবার কেবলমাত্র ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিলে অবস্থা পুকুরের বাঁধা জলের মতো হয়ে যাবে। ধর্ম তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলবে । আমিতো এইভাবেই সব কিছু এতোদিন করেছি অতএব এখনো তাই হবে- এই মানসিকতা ধর্মের পক্ষে খুব ক্ষতিকর । 
ধর্মতো কেবল মাত্র নিজের জন্য নয় এক বিশাল সমাজের জন্য । সব মানুষের জন্য । শুরুতেই বলেছি ধর্ম আসলে এক অনুসন্ধান । সেই অনুসন্ধান কখনোই সার্থক হবেনা যদিনা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার থেকে প্রয়োজনীয় ইতিবাচক দিকটাকে খুঁজে নিয়ে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যর প্রেক্ষিতে তাকে যাচাই করি । আজ ধর্ম নিয়ে এতো হানাহানির একটাই কারন আমরা ওই তিনটি সুত্রকে কখনোই একসাথে ব্যবহার করছিনা। স্বার্থ বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে । অনুসন্ধান পথ খুঁজে পাচ্ছেনা। 
ধর্ম প্রায়শই জীবনকে একটি মাত্র উদ্দেশ্য বা সত্যের দিকে নিয়ে যায়, বেশীর ভাগ সময়ে কোনো ভ্রান্ত বিশ্বাস সত্য রুপে প্রতিভাত হয় ধর্মের মোড়কে । আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে সেই ভ্রান্ত বিশ্বাস মানুষকে আকর্ষণ করে বেশি পরিমাণে । এক অর্থে তা মানুষকে নিস্তেজ করে দেয় । 
চেয়ে বা না চেয়ে সব মানুষই নানা প্রশ্নের সন্ধান করে চলে সারা জীবন । তার ভেতর থেকে ইতিবাচক সমাজের জন্য ভালো কিসে হতে পারে এরকম প্রশ্নের উত্তর খোঁজাটাই মানুষকে বেঁধে দেয় এক সর্বজনীন ধর্মের বন্ধনে । যেখানে সমপরিমাণে মিলে মিশে থাকে পূর্বকথিত তিনটি সূত্র । যা সমাজের ভালো করে তাতো পক্ষান্তরে ব্যক্তি মানুষেরো মঙ্গল সাধন করে । এটা যখন উপলব্ধি হয় তখন শুরু হয় প্রকৃত ধর্ম চর্চা । 
০০০০০০
না এতো বড় বড় ওজনদার কথাগুলো সব আমার নয় । পাতা উল্টাচ্ছিলাম The Handy Religion Answer Book এর। তার প্রাথমিক কয়েকটা এন্ট্রি পড়ে মনে হলো যেটুকু পড়লাম বা বুঝলাম সেইসব থেকে আপনাদের সাথে কিছু কথা শেয়ার করে নিই । বলা যায়না বইটা পড়ার ইচ্ছে জাগতে পারে আপনাদের । ৫৮২ পাতার সুবিশাল এই বইয়েতে পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলি নিয়ে ১২০০ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে । প্রকাশিত হয়েছিল আমেরিকার Visible Ink থেকে ২০০২ সালে। লেখক John Renard ।
এই বইটির সন্ধান দেওয়ার জন্যেও প্রীতম চট্টোপাধ্যায় ধন্যবাদ।


“লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের একটি ঘর । একজন মানুষ মৃত্যুশয্যায় । উপভোগ্য জীবন কাটিয়েছেন মানুষটা । সফল জীবন বলা যেতেই পারে। তার সঙ্গীতের জাদুতে মেতে যেত যে কোন মিউজিক হল । সম্রাট ছিলেন উনি মঞ্চের। গায়ক হিসাবে কোনো সম্মানই তার অধরা ছিলনা। পারিবারিক জীবনেও মানুষটা ছিলেন অত্যন্ত সুখী । মৃত্যু তাকে আলিঙ্গন করেছে। কিন্তু তার মুখে চোখে এখনো সফল জীবনের ছাপ বর্তমান । যবনিকা নেমে আসছে সেখানে – অন্তিম পরিণতির। হাসপাতালের জানলাগুলোর বাইরে এখন অন্ধকার । শুধু একটা জানলার বাইরের দিকে একটি মাত্র আলো জ্বলছে। সেই আলোর নিচে দেখা যাচ্ছে একটি শিশুকে । ঠান্ডায় কাঁপছে ঠকঠক করে। কুঁকড়ে আছে কোনো এক অজানা ভয়ে। কাঁদছে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে... যে মানুষটা মারা যাচ্ছে আর সে শিশুটি জানলার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তাদের দুজনেরই একই নাম – চার্লস চ্যাপলিন ।”
নাটকীয়, সিনেমাটিক এই লেখা কিন্তু চার্লস চ্যাপলিনের নিজের নয়! ১৯৩১ সালের ৯ই মে এই লেখা বেরিয়ে আসেনি তৎকালীন কোনো নামজাদা সাহিত্যিকের হাত দিয়ে । যদিও যিনি লিখেছিলেন তিনি বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় এক খ্যাতনামা মানুষ । উইন্সটন চার্চিল ।
২০১৭ সালে প্রকাশিত Charlie Chaplin, A Political Biography
from Victorian Britain to Modern America বই থেকে প্রথম নিবন্ধের একটু খানি অক্ষম অনুবাদ করলাম । লেখক সংকলক Richard Carr
চ্যাপলিন ও রাজনীতির জগতের নানা জানা অজানা তথ্যর ভান্ডার এই বই ।



*৭৫০০ খ্রীঃপূঃ নীলনদ উপত্যকার পশুপালক ও শিকারীরা সূর্যের আলো থেকে নিজেদের চামড়া বাঁচাতে ক্যাস্টর বীজ নিংড়ে বানানো তেল গায়ে মাখতেন !
**২য় শতকে মেরিডা, স্পেন এ রোমাণ ইঞ্জিনীয়াররা দূটো ইরিগেশন ড্যাম বানিয়েছিলেন যা আজ ও কাজ করে চলেছে !
***উত্তর আফ্রিকাতে পাওয়া যায় রানা গোলিয়াথ প্রজাতির ব্যাঙ । যাদের ওজন তিন কেজির বেশী হয়!
****ক্যাঙ্গারুর ক্ষমতা আছে বাচ্চাদের প্রয়োজন মতো আলাদা আলাদা স্তন থেকে আলাদা আলাদা মাত্রার ফ্যাট ও প্রোটিন সমৃদ্ধ দুধ নিঃসরণ করার !
*****জূয়ারীদের জন্য প্রথম প্র্যাক্টিক্যাল গাইড বুক লিখেছিলেন ইতালিয়ান ডাক্তার ও অঙ্কবিদ জেরেনিমো কারডানো [১৫০১-১৫৭৬] । বইটির নাম বুক অফ গেমস অ্যান্ড চান্স!
মাত্র পাঁচটা নমুনা দিলাম ৪৩২ পাতার নানা রকম ছবি দিয়ে সাজানো দু হাজারেরও বেশী অদ্ভুত সব তথ্য দিয়ে সাজানো  বইটি থেকে । নাম Reader's Digest Book of Facts । প্রথম সংস্করণ । ১৯৮৫ । বইটি ছাপানো হয়েছে গ্রেট ব্রিটেনে ।
অজানা তথ্য জানার মতো থ্রিলার বোধহয় আর কিছু নেই । যারা সেই স্বাদ পেতে চান চেষ্টা করে দেখতে পারেন বইটি সংগ্রহ করার ।  


চমকপ্রদ কবর শিরোবয়ব 

কবরের মধ্যে থাকা দেহর মুখের ওপরে রাখা বা পাওয়া মুখোস হিসাবে আমাদের যে নামটা প্রথমেই মনে আসে সেটা তুতেনখামেনের সেই সোনার মুখোশটা । মায়া সভ্যতা থেকে প্রাপ্ত এই মুখটাও সৌন্দর্যের দিক থেকে কিছু কম নয় বলেই আমার ধারনা । মোজাইক পদ্ধতিতে নির্মিত তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত জেড পাথর, সমুদ্রের শামুক ও শঙ্খ এবং নানা রকমের পাথর দিয়ে তৈরি টিকাল রাজার মৃতদেহের মুখের উপর রাখা এই মুখোশ এককথায় অসাধারণ সুন্দর শিল্প নমুনা । 

তথ্য এবং ছবি রেফারেন্স ম্যাগনিফিসেন্ট মায়া বই থেকে 

colored pencil... 2018

আমার আঁকা   যে ছবিটা ওপরে  আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সেটার সূত্রও পেয়েছি Kinghfisher Illustrated History of the World বই থেকে। মুল মূর্তি চীনা মাটির তৈরী। প্রাপ্তিস্থান চীন। ৮০ খ্রিষ্ট পূর্ব সময়ে হান যুগে নির্মিত এক ঘোড়ায় চড়া মানুষ। লক্ষনীয় বিষয় এই যে ঘোড়ার সাথে কোনো 'স্টিরাপ' নেই।
গবেষকদের অনুমান খ্রিষ্ট পূর্ব ২য় শতকেই ভারতে স্টিরাপের ব্যবহার শুরু হয়েছিল । যা চীনে চতুর্থ খ্রীষ্টাব্দের আগে চালু হয়নি ।
এরকম নানা তথ্য ও ছবিতে বইটি জমজমাট। 
প্রাপ্তি স্থান আমাজন।
কালারড পেন্সিল এবং কালো জেল পেন ... ২০১৮


১২৯৪ সালে কুবলাই খানের মৃত্যুর পর চীনে সেই ভাবে কোন ভাল শাসক ছিল না । যারা এসেছিল তারাই ছিল খুব দুর্বল । সেই ভাবে শাসনের ক্ষমতা তাদের ছিল না । চীনের মানুষরা এই বিদেশীদের শাসনে হয়ে পড়েছিল অতিষ্ঠ । অগত্যা তারা নিজেদেরই দেশ থেকে একজন শাসককে খুঁজে নেয় যিনি একদিকে ছিলেন একজন সাধু এবং ভিখারী । সাথে সাথেই ছিলেন ডাকাতদের নেতা। তার সাথে ছিল একটা নিজস্ব দল এবং সে দল চালানোর খুব ভালো ক্ষমতা ছিল সেটাও প্রমাণিত হয়েছিল । ১৩ বছর ধরে চেষ্টা করার পর তারা বেইজিং দখল করে এবং মোঙ্গলদেরকে মঙ্গোলিয়ায় ফেরত পাঠিয়ে দেয় । শুরু হয় মিং সাম্রাজ্যের পথ চলা । তার রাজধানী হয় নানজিং । সম্রাট এর নতুন নাম হয় হাঙ্গ উ । ৩০ বছর ধরে তিনি সাম্রাজ্য চালিয়েছিলেন ।
এই সম্রাট তার আমীর ওমরাহদের ছেলেদের জন্য একটা সিভিল সার্ভিসের কলেজ চালু করেছিলেন । সেই সময় সেখানে সাধারন মানুষদের ছেলেমেয়েরা পড়ার সুযোগ পেত না । আবার একেবারেই পেত না বললেও ভুল হয় । খুব প্রতিভাবান কাউকে পাওয়া যদি যেত তাহলে তাকে সেখানে পড়ার সুযোগ দেওয়া হতো । সেই সময় গোটা দেশজুড়ে আশিহাজার থেকে এক লাখ পর্যন্ত সিভিল সার্ভিসের পোস্ট ছিল । সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করতে হলে সাহিত্য এবং দর্শনের জ্ঞান ভালোভাবে থাকা দরকার ছিল । যারা চাকরি পেত তাদের সেই অর্থে তেমন কোনো ক্ষমতা ছিল না । সবাইকে সম্রাটের কথায় চলতে হতো এবং সম্রাটের তোষামোদি করাটাই মূলত তাদের কাজ ছিল ।
সাথে যে ছবিটা আমি   দিয়েছি সেটা সেই সাধু- ডাকাত সর্দার- সম্রাটের । তার নানা রকম মূর্তি নানারকম ধাতু বা কাঠ থেকে খোদাই করে সেই সময় বানানো হয়েছিল । তথ্য সংগ্রহ এবং ছবি রেফারেন্স Kingfisher's Illustrated history of the world বই থেকে ।
Gel pens and colored pencil...a5...2018



The Helgo Treasure: A Viking Age Buddha
৬-১১ শতকে সুইডেনের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা বানিজ্যের কেন্দ্র ছিল আইল্যান্ড অফ হেল্গো । সেখানেই লেক মালারেন এলাকায় খনন কাজ চালিয়ে বেশ কিছু প্রত্ন বস্তু পাওয়া যায় । যার মধ্যে ছিল এই পোস্টের ছবির মূর্তিটি । ব্রোঞ্জের তৈরী বুদ্ধ মূর্তি । গবেষকদের মতে সম্ভবত কাশ্মীরে নির্মিত এই মূর্তি সুইডেনে পৌঁছে ছিল সে সময়ের ভাইকিং ব্যবসায়ীদের হাত ধরে । যারা রাশিয়ার ভলগা নদীতে জাহাজ ভাসিয়ে আসতো ভারতের এলাকায় ।
এবার জানাই কোথা থেকে আঁকলাম এ ছবি । নতুন একটা বই এসেছে আমার সংগ্রহে । The kingfisher Illustrated History of the World ৭৬০+ পৃষ্ঠার এক রয়্যাল বই । তারই পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে প্রচুর ছবি আর তথ্য । সেখান থেকেই একটা তুলে ধরলাম আপনাদের জন্য। 
Coloured Pencil on paper…2018

A Deity of Human Sacrifice from Maya Civilization 
মায়া সভ্যতার সময়ে যুদ্ধে শত্রুকে মেরে ফেলার চেয়ে জখম করে ধরে আনার চেষ্টা থাকতো বেশি । কারণ বন্দীদের দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া যাবে । অথচ মাত্র ৩০-৪০ বছর আগেও বিশেষজ্ঞরা মায়া অধিবাসীদের রক্তলোলুপ জাত বলে মনে করতেন না । ১৯৭৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ নরম্যান হ্যামন্ড একাধিক খনন কাজ করেন। আর তার থেকেই এই সত্য উদঘাটিত হয় । এর আগে নানা ছবিতে মায়াদের মানুষ বলির উল্লেখ পাওয়া গেলেও তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি । মনে করা হতো এরা ছিল " the greatest race ever lived on this earth" । কুয়েল্লা নামক এক স্থানে একসাথে ৩২ টি নর কঙ্কাল পাওয়া যায় । যাদের বয়স ২৪০০ বছরেরও বেশি ।এ নিয়ে বিস্তৃত গবেষণায় মায়াদের রক্তলোলুপ আচরণের প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয় ।সাথের ছবিটা ওদের এক দেবতার যিনি অদ্ভুত এক টুলের উপর বসে দুহাতে আঁজলা করে ধরে আছেন উৎসর্গ করা নর করোটি । আসল মূর্তিটি টেরাকোটার । পাওয়া গিয়েছিল টিকালের এক রাজার কবরের ভেতর থেকে ।অনুমান করা হয় প্রতিবেশী রাজ্য ঊয়াকসাতুন জয়ের পর আজ এই দেবতাকে বিজিত রাজার কাটা মুন্ডু উৎসর্গ করেছিলেন টিকাল রাজ । এটা তারই প্রতীক ।
Information and Photo ref. from the book "Magnificent MaYa"
OIl pastel and Crayons on paper ...a4...2018







2 comments:

  1. অসাধারন তথ্য বহুল লেখা। অনেক কিছু জানতে পারলাম। তবে গোটা বিশ্বের খবর তো যদি একটু বিভাগ হিসাবে হয় আরো ভালো লাগবে।

    ReplyDelete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete