Search This Blog

Thursday, September 28, 2017

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৭৮-৭৯-৮০-৮১) স প্তম অধ্যায় - লিলি নামের একটি মেয়ে - ২য় পর্ব - প্রতিম দাস

 #প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৭৮-৭৯-৮০-৮১)
স প্তম অধ্যায় - লিলি নামের একটি মেয়ে - ২য় পর্ব
 প্রতিম দাস

সপ্তম অধ্যায়
**লিলি একটা মেয়ের নাম**
দ্বিতীয় পর্ব
ভিক্টোরিয়া স্টেশন, কেনিয়া
২০০৩-২০০৬
০০০০০
ভিক্টোরিয়া স্টেশন
দক্ষিন কেনিয়া
২০০৩-২০০৬
কেনিয়াতে ওয়েস্টদের দল যখন ছিল তখন একটা বড় কাঁচের জার রাখা থাকতো কিচেনের রান্না ঘরের বেঞ্চের ওপর।
এটার নাম ছিল ‘শপথ জার’ । যখনই দলের কোনও সদস্য লিলির সামনে নিজেকে কোনো কারনে গালাগাল দিতো বা কোনো কারনে দিব্যি কাটতো তখনই তাকে ওই জারে একডলার করে ফেলতে হতো জরিমানা রুপে।
আর যেহেতু দলের সবাই সেনা বাহিনীর লোক তাই জারটা ভরে উঠতে খুব একটা সময় নিতো না। জারে যে অর্থ জমতো তা দিয়ে লিলির জন্য খেলনা, বই বা ব্যালের পোশাক কেনা হতো ।
স্বাভাবিক ভাবেই , যেহেতু ওই জারে অর্থ জমলে ওর নিজের লাভ হবে এটা লিলি বুঝে গিয়েছিল তাই ওর একটা মজার খেলাই ছিল সদস্যদের দিকে নজর রাখা আর ডলার জমানোর ব্যবস্থা করা। সেরকম কোনও শব্দ সদস্যদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসলেই লিলি চেঁচিয়ে উঠতো - ‘শপথ জার!’
ফার্মে নানান কাজ করার জন্য লিলি পকেট মানিও পেতো ।
এটা ওয়েস্ট আর উইজার্ডের চিন্তা ভাবনার ফসল। ওর চাইছিলো ওর উন্নতি – যা অবশ্য অতিরিক্ত মাত্রাতেই হচ্ছিল – যদিও সেটা লিলিকে দেখা বোঝা যেতনা । মনে হতো এসব ওর কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। অন্যান্য সদস্যদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে ফার্মের কাজ করা – বিগ ইয়ার্সের সাথে গিয়ে কাঠ নিয়ে আসা ... পুহ বিয়াকে তার কাজের জিনিষপত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করা ... আবার কখনো কখনো ভাগ্য ভালো হলে ওয়েস্টের অনুপস্থিতিতে হোরাসকে খাওয়ানোর সুযোগ পাওয়া এসব করে লিলি যেন ভাবতে পারে সেও সবার মতো কিছু না কিছু কাজ করছে এটাই ছিল উইজারড আর ওয়েস্টের ভাবনা। পরিবারের অন্যতম সদস্য রুপে সেও তার দায়িত্ব পালন করছে। এসবের ফলে লিলি সেরা মানুষে পরিনত হওয়ার সুযোগ পাবে।
০০০০০
লিলি যত বড় হতে থাকলো, ততই বাড়তে থাকলো ওর কৌতূহল । আর এর কারনেই ওর আশেপাশে থাকা দলীয় সদস্যদের বিষয়ে অনেক কিছুই জেনে ফেললো ও
উদাহরণ স্বরুপ জেনে গেল, সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর শেখের দ্বিতীয় সন্তান পুহ বিয়ার।
উইজার্ড কোন এক সময়ে ক্যাথলিক যাজক হওয়ার জন্য পড়াশোনা শুরু করেছিলেন কিন্তু বেশি দূর এগোননি।
জানতে পেরেছিল জো একসময়ে সেনা বাহিনী থেকে বিশেষ ভাবে ডাবলিনের ট্রিনিটী কলেজে ভর্তি হয়েছিল উইজার্ডের কাছে প্রত্নতত্ব নিয়ে পড়ার জন্য।
জ্যাক ওয়েস্ট ও একই সময়ে ওখানে পড়াশোনা করেছিল জো এর সাথে - ওকেও ওর দেশ থেকে পাঠানো হয়েছিল কানাডিয়ান প্রফেসরের কাছে শিক্ষালাভ করার জন্য।
ওয়েস্টের নিজের দেশ । অস্ট্রেলিয়া।
লিলির অস্ট্রেলিয়া বিষয়েও খুব কৌতূহল । কৌতূহলের মধ্যে ছিল আবার অনেক সংশয়ওই দেশটার ৮০ ভাগ এলাকা প্রায় মরুভূমি । তবু ওখানেই নাকি আছে সুপার মডার্ন, সিডনীর মতো সব শহর । বেলস আর বন্ডীর মতো নামকরা সমুদ্রতট ।  উলুরু এবং গ্রেট ব্যারিয়ার রীফের মতো অসাধারন প্রাকৃতিক সৃষ্টি লিলি এটাও জানতে পেরেছে শেষেরটা আবার আধুনিক প্রাকৃতিক আশ্চর্যের তালিকার   অন্তর্ভুক্ত ।
সময়ের সাথে সাথে লিলির ভেতর আর অনেক প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিষয়ে । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর অবস্থান কেমন সেটার সম্বন্ধে । অস্ট্রেলিয়াতে মাত্র ২০ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে । অথচ এটা একটা বিশাল আকারের মহাদেশ , যাকে আবার বিশ্বের মানচিত্রে একটা ছোট দে বলে বিবেচনা করা হয় ।
এ দেশের মিলিটারি ব্যবস্থাও বেশ ছোটো আকারের, তবু তার একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে , পরিচিতি আছে বিশ্বের কাছে – বলা হয়ে থাকে এক সময় এ দেশেই জন্ম নিয়েছিল বিশ্বের সবসেরা স্পেশ্যাল ফোরস, এস এ এস – যেটার সদস্য ছিল ওয়েস্ট ।
আর একটা বিষয় লিলিকে আকর্ষণ করে – বিশ শতকের সময়ে, অস্ট্রেলিয়া ছিল আ্মেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং অনুগত সহযোগী। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় , কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কুয়েত, অস্ট্রেলিয়া ছিল প্রথম সারির দেশ যারা আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছিল ।
আর এখন সে অবস্থা নেই।
এটাই ধাঁধায় ফেলে দেয় লিলিকে । ও ঠিক করে ওয়েস্টের কাছেই জানতে চাইবে এ বিষয়ে।
বৃষ্টি ঝরা একটা দিনে লিলি গিয়ে ধকে ওয়েস্টের স্টাডিতে । দেখে অন্ধকারে পেন মুখে ধরে  কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে একমনে তাকিয়ে [ হোরাস বসে আছে চেয়ারের পেছনের উঁচু জায়গাটায়] গভীরভাবে কিছু একটা চিন্তা করছে ওয়েস্ট ।
লিলি ঘরটায় এদিক ওদিক ঘুরে দেখতে থাকলো । মাঝে মাঝে এটা সেটা বই নামিয়ে দেখছিল বুক সেলফ থেকে। এর মাঝেই চোখ গেল হোয়াইট বোর্ডের সেই লেখাটার দিকে – ‘আমার  জীবনের চারটে হারিয়ে যাওয়া দিন – করোনাডো?’ এখনো আছে ওটা । একই সাথে লক্ষ্য করলো সেই মরচে লাল রঙের জিনিষ ভরা জারটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
ওয়েস্ট সম্ভবত ওর উপস্থিতি বুঝতে পারেনি, একভাবে কমপিউটার মনিটরের দিকেই তাকিয়ে ছিল।
লিলি আস্তে আস্তে ওয়েস্টের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো । তাকালো স্ক্রিনের দিকে । কোনো একটা দেওয়ালের গায়ে খোদাই করা বিরাট মাপের কিছু হিয়েরোগ্লিফিক্স লেখার ছবি দেখা যাচ্ছে ওখানে। লিলি ঝটপট মনে মনে লেখাগুলোর মানে করে ফেললো –
স্ব ইচ্ছায় প্রবেশ করো আনুবিসের আলিঙ্গনে, তবেই তুমি বেঁচে থাকবে রা’য়ের আগমনের পরেও । ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি প্রবেশ করো , তোমার লোকজনেরা এক হাজার বছর ধরে শাসন করবে সব কিছু । কিন্তু তুমি বেঁচে থাকবে না । ভেতরে যদি একেবারেই প্রবেশ না করো না এখানে, তাহলে এ জগতও থাকবে না।
‘কি মনে হচ্ছে লেখাটার কি মানে লিলি ?’ ওয়েস্ট সহসাই জিজ্ঞেস করলো, মাথা না ঘুরিয়ে ।
লিলি চমকে গেলথমকে গেল বলাই ভালো পাথরের মূর্তির মতো । ‘আ...আমি জা...জানি না...’
ওয়েস্ট ঘুরলো । ‘আমার মনে হচ্ছে এখানে মৃত্যু এবং তার পরবর্তী জীবন নিয়ে কিছু বলা হয়েছে। আমুনের তরফ থেকে যীশুর মতো এক চরিত্র হোরাসকে উদ্দেশ্য করে । “আনুবিসের আলিঙ্গন” এর একটাই অর্থ মৃত্যু । যদি হোরাস স্বইচ্ছায় মৃত্যু বরন করে, তাহলে সে আবার জীবিত হবে এবং সেটা তার প্রজাদের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে । অনেকটাই যীশুর ক্রুশ বিদ্ধ হওয়ার মতো ব্যাপার । যাকগে ওসব কথা থাক। কিড্ডো, কিছু দরকার আছে নাকি আমার সাথে?’
এরপর ওদের মধ্যে লো এক বিস্তৃত আলোচনা অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকা সম্পর্ক নিয়ে । কিভাবে আমেরিকা একক সুপার পাওয়ারে পরিনত হলো এবং অস্ট্রেলিয়া বুঝে গেল তার বন্ধু এখন পরিনত হয়েছে বিশ্বের স্বঘোষিত অভিভাবকে । ‘ কোনো সময়ের এক ভালো বন্ধুর,’ ওয়েস্ট বললো, ‘ ভালোবাসাটা বড্ড চাপে ফেলে দেয় । আসলে শত্রুর কাছ থেকে কঠিন  কোনো শিক্ষা লাভ করার থেকে সেটা বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়াই ভালো । ’
তারপর ই ওয়েস্ট বিষয় বদলে ফেললো । ‘লিলি , তোকে একটা কথা বলার ছিল। যেমন ভাবে সব কিছু ভেবে রেখেছি সেগুলো যদি সব ঠিকঠাক ভাবে হয়ে যায় ... হবেও আশা করছি । তাহলে আমি বেশ কিছু দিনের জন্য দূরে কোথাও চলে যাবো –’
‘দূরে কোথাও মানে?’ লিলি অবাক হয়ে কিছু একটা সন্দেহ করে জানতে চাইলো।
‘ হ্যাঁ । দূরে কোথাও , এমন কোনো জায়গা যেখানে কেউ আমাকে খুঁজে পাবে নাঅদৃশ্য হয়ে যাবো।’
‘’ অদৃশ্য ...’ লিলি ঢোঁক গিললো।
‘তবে, লিলি আমি চাইবো, তুই আমাকে খুঁজে বের করবি,’ ওয়েস্ট বললো হাসি মুখে। ‘এখন, আমি বলতে পারবো না আমি কোথায় যাচ্ছি । তবে তোকে আমি সুত্র দিয়ে যাবো সেখানে পৌছানোর। যদি তুই এই ধাঁধাটার উত্তর বার করতে পারিস তবেই আমাকে খুঁজে পাবি।’
ওয়েস্ট লিলিকে একটা কাগজ দিলো, যেটার ওপর লেখা ছিল-
যেথায় আমার নতুন নিবাস সেথায় একসাথে থাকে বাঘ আর কুমীর
খুঁজে পেতে সেই স্থান মাঝিকে দাও অর্থ, এবার চলো সফরে, নাও সুযোগ
মৃত্যুর হাঁয়ের ভেতর,
নরকের মুখ গহ্বরে ।
সেখানেই মিলবে আমার দেখা, এক বিরাট মাপের খলনায়কের ছত্রছায়ায় ।

‘সব কিছুই ওতে বলা আছে কিড্ডো । চলো মাথা খাটানো শুরু হয়ে যাক ।’
লিলি এক ছুটে বেরিয়ে গেল ওয়েস্টের স্টাডি থেকে, হাতে কাগজের টুকরোটা ।
ওয়েস্টের ধাঁধা নিয়ে কয়েক মাস ধরে মাথা ঘামিয়ে চললো – এমন কি একটা একটা করে অক্ষর সার্চ করলো গুগলে – যদি কিছু বার করা যায়।

ওর মনে আরো অনেক প্রশ্ন ছিল, যদিও, সে সবের উত্তরও পেয়েও গেল।
যেমন ওয়েস্ট কোথা থেকে হোরাসকে পেয়েছিল ।
‘হোরাসের আগের মালিক ছিল হান্টসম্যানের শিক্ষক,’ আফ্রিকার সূর্যের আলো উপভোগ করতে করতে উইজার্ডের কাছ থেকে এটা জানতে পারলো লিলি
‘ সেই জঘন্য লোকটার নাম ছিল মার্শাল জুডা । জুডা একজন আমেরিকান কর্নেল । ওয়েস্টকে করোনাডো নামের এক স্থানে শিক্ষা দিচ্ছিলো কি করে আর ভালো সেনা হওয়া যায় ।
‘কাঁধে হোরাসকে বসিয়ে নিয়ে   করোনাডোর ঘাঁটিতে ঘুরে বেড়াতো জুডা । মাঝে মাঝেই বাজখাঁই চিৎকার করে সেনাদলকে সতর্ক করে দিতো । সাথে সাথেই নির্দেশ মতো কাজ না করলে হোরাসকে কষ্টদায়ক শাস্তি দিতো সেনাদের দেখিয়ে দেখিয়ে। বলতো, ‘আনুগত্য পাওয়ার একমাত্র উপায় নিয়মানুবর্তিতা আর জান্তব শক্তি প্রদর্শন।!’
‘ হান্টসম্যান এসব পছন্দ করতো না। ফ্যাল্কন টার ওপর জুডার নিষ্ঠুরতাও ওর ভালো লাগত না। যে কারনে করোনাডো থেকে চলে আসার সময় , জুডার অফিসে রাখা খাঁচা থেকে পাখিটাকে চুরি করে নিয়ে আসে হান্টসম্যান। তারপর থেকে জ্যাক হোরাসকে ভালোবাসা আর আদর দিয়ে ট্রেনিং দেয় । আর তার প্রতিদানে হোরাস ফিরিয়ে দেয় নিজের আনুগত্য যতটা ওই ছোট্ট প্রানের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ।
‘লিলি তুমি যখন বড় হয়ে যাবে, তখন বুঝতে পারবে এই পৃথিবীর সব মানুষ মোটেই ভালো নয় । তারা ভালোবাসার চেয়ে নিষ্ঠুরতা বেশী পছন্দ করে। ভাগ করে নেওয়ার বদলে শাসরাতেই তাদের বেশি অভিরুচি । বোঝে কম রাগ করতে জানে বেশী ।
‘এই সব মানুষেরা নিজেদের কথাই বেশি ভাবে সব সময়। ওরা সব সময় চায় অন্যদের ওপর শাসন চালাতে । আর সেটা মতেই বাকিদের ভালোর জন্য নয় , কেবলমাত্র নিজেদের ক্ষমতার চাহিদা চরিতার্থ করার জন্য । লিলি একদিন তুমি খুবই  বড় ক্ষমতার অধিকারী হবে – বিরাট ক্ষমতার – আমি আশা করি তুমি আমাদের এখান থেকে আর কিছু শিখতে পারো বা না পারো , এটা মনে রাখতে পারবে যে সত্যিকারের ভালো মানুষেরা অন্যের কথা ভাবে আগে তারপর ভাবে নিজের কথা ।
‘আর তার উদাহরণ হিসাবে বলতে পারি বেশী দূর যেতে হবে না হান্টসম্যান আর হোরাসকেই দ্যাখো। একটা নির্যাতিত পাখি তার নিষ্ঠুর মালিককে মেনে চলত শুধু মাত্র ভয়ে । কিন্তু একজন সত্যিকারের প্রভুর জন্য ওই পাখি প্রান দিতেও দ্বিধা করবে না।’

একদিন, লিলি উইজার্ডকে সাহায্য করছিল প্রাচীন কিছু পুঁথি গুছিয়ে রাখার কাজে।
পাথর বা মাটির ট্যাবলেট , ভূর্জ পত্রের পুঁথি ইত্যাদি   পুরনো জিনিষপত্র ওর খুব পছন্দের বিষয়। ওর কাছে এ সবের অর্থ প্রাচীন জগতের নানান রহস্যের চাবিকাঠি।
ওই বিশেষ দিনে উইজার্ড সেই সমস্ত পুঁথিগুলো একত্র করছিল যাদের সাথে প্রাচীন স্থপতি ইমহোটেপের নাম জড়িয়ে আছে।
লিলি দেখতে পেলো কিছু নকসা নুবিয়া নামে এক স্থানের একটি খনি এলাকার । যার ভেতরে চারটে স্তর আছে এবং অনেক রকম বুবি ট্র্যাপের উল্লেখ করা আছে। সব ট্র্যাপ বা ফাঁদগুলো বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ  লেখা আছে ওখানে। আবার লুকানো স্টেপিং স্টোন থাকলে তাকে মোকাবিলা করার সুত্রও। যেমন একটায় লিলি দেখতে পাচ্ছে ইজিপশিয়ান হিয়েরগ্লিফিক্সে লেখা আছে পাঁচটা নম্বর – ১-৩-৪-১-৪ । উইজার্ড সেটাকে রাখল একটা বিশেষ ফাইলে যার নাম “ইমহোটেপ পঞ্চম”।
একইসাথে ও দেখতে পেলো একটা খুবই পুরোনো  আঁকা । যেটাকে দেখে প্রাচীন দিনের কোন সাপ লুডো খেলার ছক মনে হচ্ছিল। ওটার গায়ে লেখা ছিল  “ জলপ্রপাতের প্রবেশ পথ – টলেমী সোতেরের সময় ইমহোটেপ তৃতীয় দ্বারা এর নবনির্মাণ হয়েছে ”।

ওটা দেখতে এরকম
উইজার্ড লিলির এসব বিষয়ে আগ্রহ দেখে ওকে বিভিন্ন ইমহোটেপদের বিষয়ে অনেক কিছু জানালেন।
তৃতীয় ইমহোটেপ ছিলেন আলেকজান্ডার দ্যা গ্রে এবং তার বন্ধু প্রথম টলেমির সময়ের মানুষ। ওনাকে বলা হতো “দ্য মাস্টার মোট বিল্ডার” বা  সবসেরা পরিখা নির্মাণকারী– উনি নিজের দরকারে নদীদের পথ বদলে দিতে সক্ষম ছিলেন পরিখা বা বাঁধ বানিয়ে ।
‘এটা জলপ্রপাতের প্রবেশ পথ,’ উইজার্ড বললেন, ‘প্রাচীন ব্যাবিলনে নিশ্চিত ভাবেই এটা ছিল অলংকৃত এক জলপ্রপাত। যার অবস্থান ছিল আজকের আধুনিক বাগদাদের কাছে। ওই দাগগুলো জলের ধারার গতিপথ নির্দেশ করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ব্যাবিলন এলাকায় অনেক খোঁড়াখুঁড়ি করেও এর কোন হদিশ মেলে নি
লিলি দিনের বাকি অংশটা উইজার্ডের স্টাডিরুমের এক কোনে রাখা বাক্স গুলো নাড়াচারা করে কাটালো । অনেক পান্ডুলিপি পড়ে ফেললো , আবিষ্ট হয়ে থাকলো ওগুলো নিয়েই।
কানেই ঢুকলো না জো এসে উইজার্ডের সাথে কথা বলা শুরু করেছে। কিন্তু ওয়েস্টের নাম যেই উচ্চারিত হলো সঙ্গে সঙ্গে কান চলে গেল ওদের আলোচনায়।
জো বললো, ‘অনেকদিন পর আবার ওয়েস্টের দেখা পেয়ে ভালো লাগছে। অনেক বদলে গেছে যদিও সেই দিনগুলোর তুলনায় যখন আমারা একসাথে ডাবলিনে পড়া শোনা করতাম। আগে তো কম কথা বলতোই , ইদানীং আরো চুপচাপ হয়ে গেছে। আমি শুনেছি ও নাকি আর্মি থেকে অবসর নিয়েছে।’
লিলি সব শুনছিল, যদিও ভান করছিল ও যেন পুঁথিগুলো পড়া আর দেখায় মেতে আছে।
উইজার্ড হেলান দিয়ে বসলেন। ‘বাপরে, কবে কার কথা, ডাবলিন। কোন বছর যেন ছিল – ১৯৮৯? তোমরা দুজনেই তখন কত অল্প বয়েসী । তার পর থেকে জ্যাক কত কত পথ পার করলো জীবনের ।’
‘বলুন না আমাকে ওর কথা ।’
‘ ডেজারট স্টরম এর অভিযানের কিছু দিন পরেই ও আর্মি থেকে সরে আসে । ওয়েস্ট কেন এই সিদ্ধান্ত নিলো এটা বুঝতে হলে তোমাকে আগে জানতে হবে কেন ও আর্মিতে যোগ দিয়েছিল । এর একমাত্র কারন ছিল  বাবাকে খুশি করা এবং সাথে সাথেই আক্রোশ
‘জ্যাকের বাবা ছিলেন তাঁর সময়ের একজন সেরা সৈনিক । কিন্তু ওর থেকেও জ্যাক অনেক বেশি দক্ষ। ওর বাবা চেয়েছিলেন হাই স্কুলের পাঠ শেষ করেই যেন জ্যাক সোজা মিলিটারিতে যোগ দেয় । কিন্তু জ্যাকের ইচ্ছে ছিল আরো পড়াশোনা করার, ইউনিভারসিটিতে যাওয়ার । কিন্তু ও বাবার ইচ্ছেকেই মর্যাদা দেয় ... এবং খুব দ্রুতই বাবার থেকেও একজন দক্ষ সেনায় পরিনত হয় ।
‘এস এ এস রেজিমেন্টে  জ্যাকের র‍্যাঙ্ক ক্রমশঃ ওপরের দিকে উঠতে থাকে  । মরুভূমি এলাকার অভিযানে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিতে থাকে জ্যাক । ডেজারট সারভাইভ্যাল কোর্স করার সময় নতুন রেকর্ড স্থাপন করে – ৪৪দিন ও সবার নাগাল এড়িয়ে থাকতে সমক্ষ হয় ।
‘কিন্তু ওর বাবার মতো জ্যাকের মোটেই ভালো লাগে এই জীবনটা। এই জীবনযাত্রা ওকে যে ধরনের মানুষে - একটা মারন যন্ত্র- পরিনত করতে থাকে তা ওর পছন্দ হয় না । যদিও ওর দক্ষতা ওকে বানিয়ে দিয়েছিল অতিরিক্ত মাত্রার সফল মারন যন্ত্রে । ওর ওপরওয়ালারা এই ব্যাপারটা ভালো ভাবেই জানতো, ফলে ওরা চিন্তাতেই ছিল যে ওয়েস্ট হয়তো আর্মি ত্যাগ করবে – আর এই সময়েই ওরা ওকে পাঠায় আমার কাছে পড়াশোনা করার জন্য, ডাবলিনে। ওরা আশা করেছিল এর ফলে ওয়েস্টের বুদ্ধিবৃত্তিগত চাহিদা মিটবে । মন শান্ত হবে এবং ও আবার আর্মিতে ফিরে যাবে আর আমি মনে করি কিছু সময়ের জন্য সত্যিই ওর চাহিদা মিটেছিল ।’
‘দাঁড়ান দাঁড়ান,’ জো বলে ওঠে । ‘জ্যাকের বিষয়ে কিছু পুরনো কথা আমার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে । ও একবার বলেছিল ওর বাবা আমেরিকান । কিন্তু   তাহলে অস্ট্রেলিয়ান আর্মিতে যোগ দিলো কেন?’
‘সঠিক প্রশ্ন,’ উইজার্ড বল লো, ‘ঘটনা হল এই যে জ্যাকের মা কিন্তু আমেরিকান নন। বাবাকে খুশি করতে মিলিটারীতে যোগ দিলেও , সেই পিতার ভাবনার ওপর আক্রোশ থেকেই ও সিদ্ধান্ত নেয় মায়ের দেশ অস্ট্রেলিয়ার আর্মিতে যোগ দেবে।‘
‘আচ্ছা ... বুঝলাম,’ জো বললো ।
উইজার্ড বললেন, ‘ যাই হোক, তুমি তো জানোই জ্যাকের মনের স্তরটা অতি উচ্চমাত্রার। ভাবনার তীক্ষ্ণতাও অনেক বেশী। আর সেটা থেকেই ও আর্মির জীবনটাকেমালোচনার চোখে দেখতে শুরু করে। ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হয় এর থেকেই ও ঝুঁকে পড়ে  প্রাচীন ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ব নিয়ে পড়াশোনার দিকে।
‘এর পর স্বাভাবিক ভাবেই এ বিষয়ে জ্যাকের মানসিকতা আরো কঠোর হয়ে যায় যখন ওর ওপরওয়ালারা ওকে পর পর কয়েকটা মাল্টি ন্যাশন্যাল স্পেশ্যাল ফোরসের এক্সারসাইজ এর জন্য করোনাডোতে পাঠায় ১৯৯০ সালে – এগুলোর পরিচালনার দায়িত্বে থাকে আমেরিকানরা তাদের “সিল” ঘাঁটিতে । যেখানে ওরা ওদের সমস্ত মিত্র দেশগুলোকে ডেকে পাঠায় এক অতি উচ্চ মানের ওয়ার-গেমসে অংশ নেওয়ার জন্য। ছোট দেশগুলোর কাছে এগুলো ছিল দারুন রকমের সু্যোগ । অস্ট্রেলিয়া পাঠায় ওয়েস্টকে । ১৯৯০ সালে এসব এক্সারসাইজগুলো নিয়ন্ত্রন করার দায়িত্ব ছিল মার্শাল জুডার ওপর । যার চোখে খুব সহজেই জ্যাকের দক্ষতা ধরা পড়ে।
‘ কিন্তু এও করোনাডোতেই কিছু একটা ঘটেছিল যার খবর আমিও ঠিক মতো জানিনা। জ্যাক আহত হয় একটা হেলিকপ্টার আযক্সিডেন্টে । অজ্ঞান অবস্থান ওকে নিয়ে আসা হয় বেস হাসপাতালে । চারদিন ওখানে অজ্ঞান অবস্থাতেই পড়ে থাকে জ্যাক।  জ্যাকের জীবনের চারটে হারিয়ে যাওয়া দিন। ওর জ্ঞান ফিরলে ওকে দেশে ফেরত পাথান হয়। তেমন কোনো বড় আঘাত ছিল না শরীরে । কয়েক মাস পরেই ও আবার কাজে যোগ দেয় । আর সেই সময়টা ছিল ১৯৯১ সালের ডেজারট স্টরম অভিযানের সময় ।
‘ জ্যাক ওয়েস্ট ছিল ১৯৯১ সালে ইরাকের মাটিতে সেইসব প্রথম মানুষদের একজন , যারা কমিউনিকেশন টাওয়ারগুলো ধ্বংস করেছিল। দু সপ্তাহ বাদে ও দেখতে পায় ওকে কাজ করতে হচ্ছে জুডার অধীনে। যতটা জানি জুডা নিজেই নাকি পেন্টাগনের কাছে আবেদন করেছিল জ্যাককে ওর অধীনে পাঠানোর জন্য । অস্ট্রেলিয়া – চিরদিনই আমেরিকার অনুগত ছিল – চাহিদা মেনে নেয়।
‘ডেজারট স্টরম অভিযানে জ্যাক নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে নাম কামায় । শত্রু ব্যুহের ভেতর ঢুকে কিছু অবিশ্বাস্য কাজ করে । যার ভেতর ছিল বাসরর স্কাড বেশ থেকে ধারণাতীত উপায়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হওয়া। জুডা আর তার আমেরিকান বাহিনী ওকে একা ফেলে চলে আসে ও মারা গেছে ধরে নিয়ে ।
‘কিন্তু সব কিছু সমাপ্ত হলে দেখা যায় জ্যাক নিজের দেশে ফিরে এসেছে। সোজা যায় নিজের কম্যান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনেরাল পিটার কসগ্রোভের কাছে  । জানায় সে আর রেজিমেন্টের সাথে নিজের কন্ট্র্যাক্ট রিনিঊ করতে রাজি নয় ।
‘কসগ্রোভ আর আমার মধ্যে চেনা শোনা ছিল অনেক দিন থাকেই। খুব বুদ্ধিমান মানুষ । আমার কাছ থেকেই জানতে পারে  আমাদের এই আগত মিশনের ব্যাপারে । প্রায় সাথে সাথেই সগ্রোভ ওয়েস্টকে স্বস্তিতে রাখার নিরাপদে রাখার প্ল্যান করে ফলে এবং ওয়েস্টকে আমার দলে অন্তর্ভুক্ত করে দেয় । এক দীর্ঘকালীন গুরুত্বপূর্ণ মিশনে । যে মিশনের সুত্রে জ্যাক আমার সাথে শুরু করে প্রত্নতাত্বিক গবেষনা ক্যাপস্টোন খুঁজে বার করার।
‘আর এভাবেই ওয়েস্ট আর আমি আবার একসাথে কাজ করার সুযোগ পাই । এভাবেই আমরা খুঁজে বার করি আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারের দুষ্প্রাপ্য পুঁথি গুলো এবং খুঁজে পাই লিলিকে আর ওর দুর্ভাগ্যের শিকার হওয়া মাকে । আর এই জন্যেই ওয়েস্ট আজ এই মিশনে আমার সাথে কাজ করছে।’
এরপর আর অনেক এটা সেটা কথা বলে জো চলে যায়।
উইজার্ড তার কাজে মন দেন ... এই সময়েই তার মনে পড়ে লিলি এখনো ওই কোনাতেই বাক্সগুলোর কাছে বসে আছে। তাকান ওর দিকে।
‘আরে , লিলি , আমি তো একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি ওখানে আছো । একেবারে ইঁদুরের মতো লুকিয়ে চুপচাপ বসেছিলে । আমি জানি না আমাদের কথা তোমার কানে গেছে কিনা, যদি গিয়ে থাকে তাহলে ভালোই হয়েছে।   হান্টসম্যান বিষয়ে এসব কথা তোমার জানা দরকার। কারন ও অত্যন্ত ভালোমানুষখুবই ভালো মানুষ ।     কোনও সময় নিজে মুখে হয়তো বলে না কিন্তু জেনে রাখো লিলি জ্যাক কিন্তু তোমাকে অবিশ্বাস্য রকমের ভালবাসে – সেই দিন থেকে যেদিন ও প্রথম তোমাকে হাতে তুলে নিয়েছিল  আগ্নেওগিরির ভেতরে । জ্যাক তোমার কথা যতটা ভাবে ততটা এ বিশ্বের আর কিছুর কথা ভাবে না।’
০০০০০
ওটা ছিল লিলির কাছে অনেক কিছু জানার ও বোঝার দিন।
তবে সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল সেটা যেদিন ও ওয়েস্টের প্লেনটার  বিষয়ে নানান তথ্য জানতে পারে ।
হ্যালিকারনাসসাস অনেক দিন ধরেই একটা বিষ্ময়ের ব্যাপার লিলির কাছে। যেদিন থেকে ও জাম্বো জেট ব্যাপারটা কি বুঝতে পেরেছে সেদিন থেকে – আর এর দাম কিরকম হতে পারে সেটা জানার পর থেকে – আর সেটাই ওকে অবাক করে দিয়েছে একটা মানুষ কি করে একটা ৭৪৭ বিমানের মালিক হতে পারে।
একদিন ব্রেকফাস্টের সময় লিলি জানতে চেয়েছিল, ‘ওই প্লেনটা আপনি কোথা থেকে পেলেন?’
টেবিলে বসে থাকা জো, স্ট্রেচ আর উইজার্ড প্রশ্ন টা শুনে হাসি চাপার চেষ্টা করছিল ।
ওয়েস্টের মুখটায় ছিল দুষ্টুমির ছাপ । ‘কাউকে বলে দিও না কিন্তু, আমি ওটা চুরি করেছি।’
‘আপনি ওটা চুরি করেছেন? একটা গোটা এরোপ্লেন আপনি চুরি করেছেন! চুরি করাটা কি ভালো কাজ?’
‘না মোটেই ভালো কাজ নয়,’ জো বললো ‘তবে হান্টসম্যান হ্যালিকারনাসসাসকে চুরি করেছিল খুব খারাপ একজন মানুষের কাছ থেকে ।’
‘কে সে?’
‘উইজার্ড উত্তর দিলো, ‘সাদ্দাম হুসেন নামের একজন মানুষ । ইরাকের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, সাঙ্ঘাতিক ধরনের একজন মানুষ । ১৯৯১ সালে হান্টসম্যান ওটা চুরি করে ।’
লিলি জানতে চাইলো, ‘আপনি মিঃ হুসেনের প্লেন চুরি করেছিলেন কেন?’
ওয়েস্ট একটু সময় নিলো উত্তর দেওয়ার জন্য। আসলে লিলিকে বলার জন্য কথা গুলো সাজিয়ে নিলো সাবধান ভাবে।
‘সেই সময়ে আমি ছিলাম এমন একস্থানে যার নাম বাসরা । ভালোই ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম। আর সেই ঝামেলা থেকে বেঁচে  বেরিয়ে আসার একমাত্র রাস্তা ছিল মিঃ হুসেনের ওই প্লেন। ওই প্লেনটা ওখানে রাখা ছিল যদি দেশ ছেড়ে মিঃ হুসেনের পালানোর দরকার পড়ে সেজন্য।’ ওয়েস্ট চোখ টিপলো । ‘ আমি এটাও জানতাম ইরাকের বিভিন্ন স্থানে এরকম প্লেন বেশ কিছু রাখা ছিল ওই একই কারনে ব্যবহার করার জন্য । ফলে এই একটা বিমান ওর কাছ থেকে নিয়ে নিলে ওনার তেমন কোন সমস্যা হবে না বলেই আমার মনে হয়েছিল।’
‘প্লেন টার নাম হ্যালিকারনাসসাস দিয়েছেন কেন? ওই নামের জায়গাতেই তো একটা সমাধি মন্দির আছে , তাই না?’
ওয়েস্ট হাসলো লিলির অতি সহজে ইতিহাসের সুত্র টেনে আনা দেখে। ‘আমি ঠিক জানি না , থাকলেও থাকতে পারে। মিঃ হুসেন ওটাকে ওই নামেই ডাকতেন । আমিও ওই নামটাই রেখে দিয়েছি। আমি জানিনা কেন উনি এই নামটা রেখেছিলেন। তবে মিঃ হুসেন নিজেকে মনে করতেন পারস্যের একজন সেরা শাসক । ওই মৌসোলাস বা নেবুচ্যাডনেজারের মতো । যদিও উনি মোটেই ওদের মতো ছিলেন না। একজন বড়সড় গুন্ডা বলা যেতে পারে ওনাকে ।’
ওয়েস্ট উইজার্ডের দিকে ঘুরে তাকালো । ‘হ্যালিকারনাসসাসের কথায় মনে পড়লো , নতুন করে সাজানোর কাজ কতো দূর? মার্ক ৩ রেট্রোগ্রেডগুলো লাগানোর ব্যবস্থা করেছেন?’
‘প্রায় হয়ে এসেছে,’ উইজার্ড বলেন। আমরা ওটার ওজন তিনভাগের একভাগ কমাতে পেরেছি। আটটা এক্সটারনাল রেট্রোগ্রেড থ্রাস্টার লাগানো হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখাও হয়েছে । আর মার্ক ৩ গুলো ৭৪৭ এর পুরোনো ইঞ্জিনের সাথে ভালোই কাজ করছে –ওটার ভারসাম্য সত্যিই অসাধারন । ভি টি ও এল এর জন্য দারুন, যদি তোমার কাছে পর্যাপ্ত ফুয়েল থাকে। এই শনিবার আমি আর স্কাই মনস্টার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করবো। ওই দিন ইয়ার প্লাগ পড়ে থেকো সবাই।’
‘অবশ্যই। আমাকে জানিয়ে দিও আগেভাগে।’
লিলি বুঝতে পারলো না ওরা কি নিয়ে কথা বলছেন।

ও, আর একটা কথা... ব্যালের প্রতি লিলির উৎসাহ একই রকম বজায় আছে।
ও অনেকগুলো শো করেছে – এমন শো যেখানে ওর জন্য বানানো হয়েছিল ছোট্ট স্টেজ । ব্যবস্থা ছিল কারটেন খোলা বন্ধর। সবকটা শো দেখেই দলের সদস্যরা দারুন ভাবে হাততালি দিয়ে ওকে উৎসাহিত করেছেন।
এরকম এক শোয়ে , লিলি বড়মুখ করে ঘোষণা করে ও ব্যালে নাচের এক কঠিন মুদ্রা বুড়ো আঙ্গুলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা টানা এক মিনিট ধরে করে দেখাবে। যদিও ৪৫ সেকেন্ডের বেশী পারেনি, আর তার ফলে বেচারি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিল।
সকলেই অবশ্য অনেক অনেক প্রশংশা করেছিল।
যেমন একটি পরিবারের সদস্যরা করে থাকে অন্যদের জন্য।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
[সপ্তম অধ্যায় শেষ ।   অষ্টম অধ্যায় কাবুলের কৃষ্ণাঙ্গ পুরোহিত https://amarkolponarjogot.blogspot.com/2017/10/blog-post.html

Sunday, September 24, 2017

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৭৪-৭৫-৭৬-৭৭) ষষ্ঠ অধ্যায়- “তৃতীয় অভিযান -গুয়ান্তানামো বে এর যুদ্ধ” - প্রতিম দাস

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৭৪-৭৫-৭৬-৭৭)
“তৃতীয় অভিযান -গুয়ান্তানামো বে এর যুদ্ধ”
 প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০
 ষষ্ঠ অধ্যায়
তৃতীয় অভিযান
গুয়ান্তানামো বে এর যুদ্ধ
০০০০০
গুয়ান্তানামো বে, কিউবা
১৭ই মার্চ, ২০০৬
টারটারাসের আগমনের তিনদিন আগে

নৌবহর স্টেশন গুয়ান্তানামো বে
দক্ষিণপূর্ব কিউবা
১৭ই মার্চ, ২০০৬, ভোর ৩টে ৩৫ মিনিট
টারটারাসের আগমনের তিনদিন আগে
গুয়ান্তানামো বে এর এই নৌ-স্টেশন সত্যি করেই ইতিহাসের এক অদ্ভুত স্থান।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে ইউনাইটেড স্টেটস আর কিউবার ভেতর দুটো চুক্তি থেকে এর জন্ম হয় – ইউ এস প্রায় বাগে পেয়ে গিয়েছিল কিউবাকে – সে সময়েই তড়িঘড়ি করে কিউবা দক্ষিন পূর্ব সামুদ্রিক এলাকার একটি ছোট্ট অংশ আমেরিকাকে দৃষ্টিকটু রকমের কম অর্থে লিজ দিয়ে দেয় । মাত্র ৪,৮০৫ ডলার বছর পিছু [যদিও চুক্তিতে উল্লেখ ছিল বছর পিছু মাত্র ২০০০ ডলারের সোনা ]।
চুক্তি এমন করে করা হয়েছিল যে দু পক্ষকেই এটা বাতিল করার ক্ষেত্রে সম্মত হতে হবে – আমেরিকার কোনো ইচ্ছেই ছিল না এ চুক্তি বাতিল হোক   ফলে কিউবার জমিতে এটা হয়ে যায় আমেরিকার স্থায়ী একটা মিলিটারী আউটপোস্ট ।
জায়গাটা কিঊবার একেবারে দক্ষিন প্রান্তে অবস্থিত, একটা দিক ক্যারিবিয়ান সাগরের দিকে খোলা। আমেরিকার উলটো মুখে। সমুদ্রের দিকে বেরিয়ে থাকা অংশটায় তৈরী হয়েছে আমেরিকার ঘাঁটি । জায়গাটা খুবই ছোটো । ছয় কিমি চওড়া দশ কিমি লম্বাঅ্যাঁকা ব্যাঁকা সমুদ্র তটরেখা খুব বেশি হলে ২৫ কিমি ।
এসবের বাইরে, এর সব চেয়ে বেশী পরিচিত বিষয়টা  হ লো [ টম ক্রুজের সিনেমা ‘অ্যা ফিউ গুড ম্যান’ এ দেখানো তথ্যাদির কথা বাদ দিয়ে ]  আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে এর স্ট্যাটাস । আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকে গুয়ান্তানামো বে এর বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই । অদ্ভুত এক আইনী জটিলতার ভেতরে অবস্থান করেও জেনিভা কনভেনশন এবং অন্য নানান রকমের অসুবিধা জনক চুক্তির আওতার বাইরে এর অবস্থান।
আর ঠিক এই কারনেই  আফগানিস্থানে অপারেশন এন্ডিউরিং ফ্রিডম এর পর আমেরিকা এটাকে বেছে নেয় ৭০০ ‘দেশবিহীন যুদ্ধাপরাধী’ কে রাখার কারাগার হিসাবে।
গুয়ান্তানামো বে উত্তর দিকে বেঁকে গেছে কুণ্ডলী পাকানো সাপের মতো । আর সেটাকে ঘিরে আছে অনেক খাঁড়ি মুখ এবং ঘাসে ঢাকা জলাভুমি । এর পশ্চিম দিক পরিচিত লিওয়ার্ড নামেএটার দিকে তেমন  কোনো নজর থাকে না, ব্যবহার হয় ঘাঁটির এয়ারস্ট্রিপ রুপে। লিওয়ার্ড পয়েন্ট ফিল্ড ।
পূর্ব দিকের নাম –উইন্ড ওয়ার্ড – আর ওখানেই যত কিছু কাজ কর্ম হয় । এখানেই নানান মেরিন ব্যারাক এবং কারাগার কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থান।  পূর্ব দিকের বন্দরের প্রবেশ পথে আছে একটা অব্যবহৃত এয়ারফিল্ড, ম্যাক্কালা ফিল্ডআর ভেতরের দিকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং, একটা স্কুল , কিছু দোকানপাট এবং  মেরিন সেনাদের জন্য একটা হাউজিং এস্টেট, যারা এই ঘাঁটিতেই বসবাস করে।
আর ভেতরে ঢুকলে , নৌ-স্টেশন গুয়ান্তানামো বে এর একেবারে মধ্য স্থল , রেডিও রেঞ্জের ভেতরে দেখতে পাওয়া যাবে ক্যাম্প ডেল্টা । [ আগে ছিল ক্যাম্প এক্স-রে , যেখানে ছিল খোলা আকাশের নিচে  শৃঙ্খলা বদ্ধ সব খাঁচা । ব্যবহার হতো সাময়িক কাজের জন্য। ২০০২ এর এপ্রিলে এসব স্থানে থাকা কয়েদিদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় তুন বানানো ক্যাম্প ডেল্টাতে। অনেক বেশী স্থায়ী স্থান আগেরটার তুলনায়।]
ক্যাম্প ডেল্টাতে আছে ছ’টা ডিটেনশন ক্যাম্প – ১,২,৩,৪, ইকো এবং ইগুয়ানা । ক্যাম্প ৩ এ ‘সুপার ম্যাক্স’ ব্যবস্থা । অতিমাত্রায় খতরনাক কয়েদিদের রাখা হয় ক্যাম্প ৩ এ ।
সেরকম এক কয়েদী মুল্লাহ মুস্তাফা জাঈদ ।
স্বল্প কথায় , ক্যাম্প ডেল্টার অবস্থান এ বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ঘাঁটিতেএ এক গোলক ধাঁধা সিন্ডার-ব্লক বিল্ডিং আর চেইন-লিঙ্ক ফেন্স এর। সব কিছু ঘেরা আছে কাঁটা-তার আর এসব কিছু কে পাহারা দিচ্ছে পাথরের মতো ভাবলেশহীন মুখাবয়বের ইউএস আর্মি মিলিটারী পুলিস বাহিনী ।
এ এক নিষিদ্ধ স্থান । এই বিশ্বের সবচেয়ে দুরুহতম জায়গা ।
এসবের সাথেই আছে ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেড়া থেকে  মাত্র ৫০০ মিটার দূরে – একটা গলফ কোর্স । যা একমাত্র কোনও ইউ এস মিলিটারী ঘাঁটিতেই দেখতে পাওয়া সম্ভব ।
০০০০০
দুটো দারুন ভাবে সুরক্ষিত এয়ার ফিল্ড বেছে নেওয়ার তুলনায় ওয়েস্ট স্বাভাবিক ভাবেই বেছে নিলো গলফ কোর্সটাকে ।
‘আমি গিটমোকে জানি ...’ ওয়েস্ট বললো, হ্যালিকারনাসসাসের ককপিটে দাঁড়িয়ে । বিশাল বিমানটা রাতের আকাশে উড়ে এগিয়ে চলছে গুয়ানতানামো বে এর উদ্দেশ্যে ।
মিত্রদেশ স্পেন থেকে একবার রিফুয়েলিং করে নেওয়া হয়েছে । এখন উড়ে চলেছে আটলান্টিকের ওপর দিয়ে আপাতত পাঁচ ঘণ্টার সফর কিঊবার পথে ।
‘... আমি একবার ওখানে গিয়েছিলাম। আমার দেশ একবার সিয়েফ এর সাথে ওয়ার গেমসে অংশ নিয়েছিল । বিশ্বাস করো বা না করো, আমি ওই গলফ কোর্সটায় খেলেছি – মিলিটারি ঘাঁটিতে গলফ কোর্স, ভাবতেই কেমন লাগে। ওখানে অবশ্য খুব বেশী গাছ নেই আর লাস্ট হোলগুলো – ১৬, ১৭ এবং ১৭ – সাজানো আছে পর পর । ওদের মাঝে মাঝে কেবল মাত্র নিচু ঝোপের ব্যবধান। ঝোপগুলো চওড়া এবং সোজা এবং বেশ লম্বা । একেকটা ৪৫০ মিটার করে তো হবেই। একটা বিমানের রান ওয়ের সমান । কি স্কাই মনস্টার , কি মনে হচ্ছে? পারবে কাজটা করতে?’
‘আমি পারবো কিনা জানতে চাইছো? স্কাই মনস্টার কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথে বললো । ‘মাই ফ্রেন্ড, এর পরের বার আমাকে কিছু কঠিন কাজ দিলে ভালো হয় !’
‘বেশ তাই হবে।’ বলে ওয়েস্ট এলো ককপিট থেকে বেরিয়ে আসা্র দিকে পা বাড়ালো । ‘ তাহলে একেবারে নিচেই দেখা হবে।’
দশ মিনিট বাদে । ওয়েস্ট হ্যালিকারনাসসাসের নিচের দিকে যেতে শুরু করলো।  পরনে একেবারে পুরো কালো পোশাক । সাথেই পিঠে লাগানো আছে সেই কালো কার্বন-ফাইবারের ডানা দুটো ।
জো অপেক্ষা করছিল ওর জন্যে । একই রকম কালো পোশাক পরনে এবং ওর পিঠেও লাগানো কারবন-ফাইবারের ডানা । টান টান কালো পোশাকের কারনে বোঝা যাচ্ছে জো এর মেদহীন পেটানো শরীরটা কি পরিমাণ ফিট । জো কিসানে দেখতেও যেমন সুন্দর তেমনি আকর্ষণীয় দেহের গঠন ।
‘ আসা করছি ব্যাপারটা নিয়ে তোমার কোনও সংশয় নেই,’ জো বললো।
‘চমকে দেওয়াটাই আসল ব্যাপার এক্ষেত্রে। ওদের বন্দুকগুলো সেট করা আছে কিউবার দিকে এবং ৭০০ কয়েদিদের দিকে মুখ করে । আমেরিকানদের ভাবনাতেও এটা নেই যে কোনও বোকা হাঁদা গুয়ানতানামো বে আক্রমণ করবে ওপর থেকে ।’
‘একদমই না, তবে আমরা কি ভাবছি সেটা ওরা আর কি বুঝবে,’ জো বললো।
‘স্ট্রেচের ক্যাম্প ডেল্টার স্যাটেলাইট ইমেজটা ভালো করে দেখে নিয়েছো তো?’
‘তিনবার ,’ জো জানালোমোসাদের সংবাদ দাতার খবর অনুসারে জাঈদ আছে ক্যাম্প ৩ এর সি-১২ হাটে সলিটারী কনফাইন মেন্ট । আশা করছি আমরা অন্ধকারে ওটাকে খুঁজে বার করতে পারবো । আচ্ছা মোসাদ জানে না এমন কিছু কি আছে এই জগতে?’
‘মোসাদের কাছে এই খবরটাও আছে যে আজ সকালে আমার আন্টি কি দিয়ে ব্রেকফাস্ট করেছে।’ ওয়েস্ট নিজের ঘড়ি দেখলো । ‘ আট মিনিট হয়ে গেছে । এবার ওড়ার জন্য রেডি হ
কয়েক সেকেন্ড বাদে, ৭৪৭ জাম্বোর পেছনের র‍্যাম্পটা আবার খুলে গেল । ওয়েস্ট আর জো লাফ দিয়ে মিলিয়ে গেল অন্ধকার রাতের আকাশে।

হ্যালিকারনাসসাসের ভেতরে, প্রত্যেকটা সেট করা অস্ত্রের কাছে রেডি দলীয় সদস্যরা ।
বিগ ইয়ার্স, ফাজি, পুহ বিয়ার আর স্ট্রেচ চারটে গান টারেটের দায়িত্বে – বিগ ইয়ার্স আর পুহ বিয়ার নিয়েছে পাখনার গায়ে লাগানো আগ্নেয়াস্ত্রর ভার। ফাজির দায়িত্বে পেটের তলারটার । আর স্ট্রেচ একেবারে ওপরের গম্বুজটার নিয়ন্ত্রনে ।
সিক্স ব্যারেল মিনিগানগুলোতে  এই মুহূর্তে ভরা হয়েছে সুপার-লেথাল ৭.৬২ এম এম  বর্ম ভেদী বুলেট – অবশ্য ওয়েস্ট বিশেষ নির্দেশ দিয়ে গেছে পরের দিকে কি ব্যবহার করতে হবে ... যখন যুদ্ধ চরম মাত্রায় পৌছাবে।
উইজার্ড, লিলি আর হোরাসকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে কাছের এক দ্বীপের বিশেষ সুরক্ষিত ঠিকানায় – এই মিশনে লিলিকে নিয়ে যাওয়াটা খুবই বিপদ জনক ।
হ্যালিকারনাসসাস রাতের আকাশ চিরে এগিয়ে চলেছে ।
এ বিমান আলো না জ্বালিয়েই অড়ে। যাতে একে মেঘের গায়ে একটা অন্ধকার ছায়ার বেশি আর কিছু বলে মনেই হয় না । আর অনেক দিন আগেই এটার ট্রান্সপন্ডারটা খুলে গেলা হয়েছিল, ফলে এটা থেকে কোনো ইলেক্ট্রনিক সংকেত ও নির্গত হয় না।
এর গায়ে যে কালো বিশেষ রংটা করা আছে ওটা র‍্যাডার নিরোধক। যা ব্যবহার করা হয় বি-২ স্টিলথ বোম্বার বিমানে। এর ফলে গিটমো থেকে ধেয়ে আসা র‍্যাডারের তরঙ্গ একে ট্রেস করতেই পারবে না।
এ যেন এক অশরীরী ।
একটা অশরীরী যার অস্তিত্ব গুয়ান তানামো বে এর আমেরিকান সেনারা ধরতেই পারবে না যতক্ষন না এটা গিয়ে ওদের মাথার ওপর ভেসে দাঁড়াবে ।
আর সেটাও সবার আগে দেখতে পাবে বা বলা যেতে পারে শুনতে পাবে - রাতের এক জোড়া পাহারাদারযাদের অবস্থান মূল ঘাঁটি থেকে অনেক দূরের সেন্ট্রি টাওয়ারে একেবারে মাথার দিকে , যেখান থেকে সমুদ্রকে নজরেই আনা যায় না। উইন্ড ওয়ার্ড পয়েন্টের থেকে অনেক দূরে কুজকো পাহাড়ের কাছে ।
ওরা দেখতে পেলো এক বিরাট কালো ছায়া নেমে আসছে ওদের মাথার ওপর দিয়ে । দক্ষিন দিকে ক্যারিবিয়ান সাগরের দিক থেকে।
ওরা সঙ্গে সঙ্গে জানালো ব্যাপারটা ।
নিমেষের মধ্যে সতর্কতার খবর ছড়িয়ে গেল ঘাঁটিতে । গুয়ান্তানামো বে’র ৩০০০ আমেরিকান সেনা ঘোষণা করলো যুদ্ধ ... জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়ে আর তার দলের বিরুদ্ধে ।
হ্যালিকারনাসসাস কুজকো পাহাড়ের ওপর দিয়ে নেমে এলো নিচে । গুয়ান্তানামো বে তখন ভেসে যাচ্ছে চাঁদের আলোয় । সময় ভোর পৌনে চারটে ।
বিরাট ৭৪৭ বিমানটা এরপরেই সরে গেল বাদিকে এবং অদৃশ্য লো গাছের আড়ালে ...
... নামলো গিয়ে গুয়ান্তানামো বে’র গলফ কোর্সের ১৬ তম হোলের এলাকায় । জ্বলে উঠলো ডানার আলোর 
বিমানের বিরাট টায়ারের চাপে দেবে বসে গেল গলফ মাঠের জমি, উঠে আসতে থাকলো ঘাসের দলা । ডানার আলোয় পথ দেখে ওটা এগিয়ে চললো । ১৬তম হোলের এলাকা পেরিয়ে ঢুকে পড়লো ১৭ তমর এলাকায়।
সামনেই দেখা যাচ্ছিলো ১৭ এবং ১৮ এর মাঝের ঝোপটাকে । স্কাই মনস্টার সোজা এগিয়ে গেল সামনের দিকে এবং হ্যালিকারনাসসাসকে নিয়ে   ঢুকে পড়লো ১৮ এর ঘাসে ঢাকা এলাকায়।
গুয়ান্তানামো বে’র পুরো এলাকায় তখন বাজছে বিপদ সংকেতের ঘণ্টা আর ঝলক মারছে বিপদ সংকেত নির্দেশক আলো । জ্বলে উঠেছে চারদিকে ফ্ল্যাশলাইট।
মেরিনাররা উঠে পড়েছে বিছানা থেকে ।
গার্ড টাওয়ারের সেন্ট্রিরা এম-১৬ তাক করে চারদিকে দেখছে ।
স্পট লাইট জ্বালিয়ে আকাশে সন্ধান করা হচ্ছে আরো বিমানের।
কথাটা ছড়িয়ে গেছে... আক্রমণ হয়েছে ঘাঁটিতে ... গলফ কোর্সের দিক থেকে!
রেকন মেরিনের দুটো ক্র্যাক টিম রওনা দিয়েছে গলফ কোর্সের দিকে। ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারগুলো সাহায্য করার জন্য  যাচ্ছে ওদের পেছনে। সাথেই রেডি হচ্ছে আর বড় এক বাহিনী ।
ঘাঁটির প্রত্যেকটা কয়েদখানা আলাদা আলাদা ভাবে ডাবল লক-ডাউন  হয়ে গেছে কম্পিউটার সিস্টেমের স হায়তায়। বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রহরীর সংখ্যাও।
চারদিকে এখন চলছে এক হইচই ।
গণ্ডগোল ... বিশৃঙ্খলা।
হ্যালিকারনাসসাসের অসাধারন ল্যান্ডিং এর দিকেই চলে গেছে সকলের নজর । কেউ লক্ষ্য করেনি দুটো কালো পোশাক পড়া ডানা লাগানো অবয়ব এর মাঝেই নেমে পড়েছে গিটমো ঘাঁটির ভেতরে... নিঃশব্দে ক্যাম্প ডেল্টার ক্যাম্প ৩ এর সি-১২ হাট এর কংক্রিট দিয়ে বানানো ছাদের ওপর ল্যান্ড করেছে ওরা ।
ছাদের ওপর একটা সেমটেক্স চার্জ এর বিস্ফোরণ ঘটালো ওয়েস্ট । যে গর্তটা তার ফলে সৃষ্টি হলো সেটার ভেতর দিয়ে অনায়াসে ঢুকে যেতে পারবে ও ।
লাফ দিলো গর্তটার ভেতরে –
- অন্ধকারে বিশেষ ভাবে তারজাল দিয়ে বানানো কয়েদখানার ছাদের মেঝেতে গিয়ে ঠেকলো ওয়েস্টের পা । একটা ব্লো টর্চ দিয়ে মেঝেতে যা প্রয়োজন সেটা করে নিয়েই ঝুঁকে ভেতরে তাকালো ওয়েস্ট –
- দেখতে পেলো একটা ভুতুড়ে কঙ্কালের মতো চেহারা অন্ধকারে দুটো হাত ওপরের দিকে উঠিয়ে দাঁড়িয়ে আছে !
ওয়েস্ট দ্রুত ভেতরে নেমে জাঈদকে এক ধাক্কা মেরে চেপে ধরলো দেওয়ালের গায়ে । তারপর হাতের ফ্ল্যাশ লাইটটা জ্বেলে তুলে ধরলো আতঙ্কবাদীটার চোখ দুটোর সামনে।
ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে দেখা গেল জাঈদের ভয় পাওয়া মুখটা ।
চুল দাড়ি সব কামানো । আপাতত মাথা এবং কোণাকৃতি মুখে খোঁচা খোঁচা চুল দাড়ি গজিয়েছে। বেশ রোগা, অপুষ্টির শিকার আর ওর চোখ দুটো – দুটো চোখ – করোটিরগর্তের ভেতর ঢুকে গেছেসব মিলিয়ে একটা জ্যান্ত কঙ্কাল ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না । চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে উন্মাদনার রঙ মেখে।
‘মুস্তাফা জাঈদ?’
‘হ্যাঁ আ ...’
‘আমার নাম ওয়েস্ট । জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র । আমি এখানে এসেছি তোমাকে  একটা সুযোগ দিতে । চুক্তিও বলতে পারো ।  আমরা তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছি । বদলে আমাদেরকে সাহায্য করতে হবে প্রাচীন সাতটি আশ্চর্য খুঁজে বার করার ক্ষেত্রে  । ওগুলো থেকে গ্রেট পিরামিডের গোল্ডেন ক্যাপস্টোন সংগ্রহ করার জন্য । বলো কি বলতে চাও?’
এতক্ষন যে সামান্য প্রতিরোধ করার চেষ্টা জাঈদ করছিল সেটা থেমে গেল সাত আশ্চর্যের কথা শুনেই। পাগল চাহনির ভেতরে ওয়েস্ট একই সাথে দেখতে পেলো – স্বীকৃতি, আশঙ্কা এবং এক প্রবল উচ্চাশার নগ্ন উল্লাস।
‘আমি তোমাদের সাথে যাবো,’ জাঈদ জানালো ।
‘চলো তাহলে –’
‘দাঁড়াও!’ জাঈদ বলে উঠলো । ‘ওরা আমার ঘাড়ে একটা মাইক্রোচিপ ইমপ্ল্যান্ট করে দিয়েছে! লোকেটর চিপ! ওটাকে আগে বার করতে হবে । তা না হলে এরা জেনে যাবে তোমার আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো বা গিয়েছ !’
‘ওটা আমরা বিমানে ওটার পর করবো! এখন চলো... আমাদের হাতে সময় খুব কম!’ ওয়েস্ট ওপর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘জো, দড়ি ফেলো !’
একটা দড়ি নেমে এলো গর্তের ভেতর দিয়ে । দ্রুত ওয়েস্ট আর জাঈদ ওটা ধরে কয়েদখানার ভেতর থেকে ওপরে উঠতে শুরু করলো ।

ওদিকে গলফ কোর্সে , রেকন মেরিনদের টিম দুটো পৌছালো সেই জায়গায় যেখানে হ্যালকারনাসসাস ক্লাব হাউসটাকে ভেঙে চুরে দিয়ে অনেকগুলো ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
চোখ ধাঁধানো আলোতে প্রায় অন্ধের মতো মেরিনরা কালো ৭৪৭ বিমানের তিনদিকে ঘিরে এগোতে শুরু করলো, আগ্নেয়াস্ত্র বাগিয়ে –
- আর সাথে সাথেই হ্যালিকারনাসসাসের চারটে ঘূর্ণায়মান গান টারেটস থেকে শুরু হল বুলেট বৃষ্টি ।
আর সেই বুলেট বৃষ্টির ধাক্কায় মেরিন সদস্যরা ছিটকে পড়তে শুরু করলো এদিকে ওদিকে ।
যদিও কেউ মারা গেল না।
  সব ছিল রাবার বুলেট, ঠিক যেমনটা এর আগে ব্যবহার করেছিল ওয়েস্টরা সুদানের অভিযানে।
ওয়েস্টের কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে দলের প্রতি – শুধু তাকেই হত্যা করবে যে তোমাকে হত্যা করতে চাইবে। যে বা যারা তাদের দায়িত্বের কাজ করছে তাদের মারবে না।
ওয়েস্টের ভাবনা অনুসারে , গুয়ান্তানামো বে এর মেরিনসেনাদের সাথে কোনও শত্রুতা ওদের নেই – ওদের শত্রু কেবলমাত্র ওই ঘাঁটি চালক সরকার এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকের দল ।
রাবার বুলেটের আঘাত খেয়ে মেরিন সেনাদের ধারনা হলো এটা নিশ্চিত ভাবে কোনো বিশেষ “এক্সারসাইজ” চলছে । ওপরওয়ালাদের একটা অতি বিশেষ পরীক্ষা এই রাতে যে সেনারা ঠিঠাক কাজ করছে , নাকি করছে না ।
এর ফলে ওরা মানসিক ভাবে অনেকটাই মারন মখী ভাবটা কমালো । ওরা কেবলমাত্র বিমানটাকে ঘিরে ধরার দিকে নজর দিলো। ওটাকে ধ্বংস করার বদলে।
আর তারপরেই ওরা অবাক হয়ে দেখলো বিশাল কালো ৭৪৭ বিমানটা আবার নড়তে শুরু করেছে। আস্তে আস্তে   ঘুরে ওটা সোজা হয়ে দাঁড়ালো ১৮ তম গলফ হোলের মাঠের সোজা লাইনে।
বুলেট বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।  বিরাট বিমানটার ইঞ্জিন চালু লো সশব্দে। নিঝুম রাতে সে আওয়াজে মেরিনসেনাদের কানে তালা ধরে গেল।
 এগিয়ে যেতে থাকলো বিমানটা ঘাসে ঢাকা জমি ধরে ...  মেরিনাররা অবাক হয়ে দেখলো একটাও সেনা নামলো না ওটা থেকে... কিছুই করলো না ওটা সেই অর্থে ... কিছুই না ।
রো বিস্ময়কর দৃশ্য ওরা দেখলো এরপরেই   
দুটো ডানাওয়ালা অবয়ব মেরিন সেনাদের পেছনের গাছের মাথার ওপর থেকে উড়ে গেলো – পড়নে কালো পোশাক , পিঠে লাগানো কালো কার্বন ফাইবারের ডানা – ধেয়ে চললো ৭৪৭ বিমানটার দিকে , সাথে থাকা কমপ্রেসড এয়ার থ্রাস্টার এর সাহায্যে । দুটো অবয়ই উড়ে গেল হ্যাং গ্লাইডারদের মতো একটানা সোজা ।
উড়ন্ত অবয়বদের ভালো করে দেখতেই মেরিন সেনাদের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো । ওরা এখন বুঝতে পারছে এটা  মোটেই কোনও এক্সারসাইজ ছিল না।
কারন একজন উড়ন্ত অবয়বের বুকের কাছে বেল্ট দিয়ে আটকানো ছিল একটি মানুষ।   মাথা কামানো এবং পরনে উজ্জ্বল কমলা রঙের পোশাক। যার একটাই অর্থ ওটা ক্যাম্প ৩ এর কোনো এক কয়েদী ।
এতো জেল ভাঙার ঘটনা ঘটে গেল... !!!
হ্যালিকারনাসসাস ইতিমধ্যে তার গতি বাড়িয়ে বাকি দুটো হোলের ঘাসে ঢাকা পথের ওপর দিয়ে ছুটে গিয়ে গাছের সারির একটু আগেই উঠে গেল আকাশের পথে ।
তিনটে ব্ল্যাক হক চপার ওদের খানিকক্ষণ তাড়া করে গেল, গুলিও চালালো,  কিন্তু ৭৪৭ এর গতির সাথে পাল্লা দেওয়া ওদের পক্ষে সম্ভব নয়।
একজোড়া এফ-১৫ ১০ মিনিটের ভেতর এসে হাজির হল , কিন্তু তত ক্ষনে অশরীরী ৭৪৭  হারিয়ে গেছে আকাশের বুকে । কোন র‍্যাডার স্ক্যানেই হদিশ পাওয়া গেল না ওটার – ওটা চলে গেছে তার নিজের পথে।
শেষ ওটাকে দেখা যায় দক্ষিনের দিকে যেতে, তারপর মিলিয়ে যায় কিউবার কাছের এক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভিমুখে ।
জামাইকা ।

এক ঘণ্টা পর, পৃথিবীর আরেক প্রান্তে , ডিজিট্যাল টেলিপ্রিন্টারে একটি রেডিও বার্তা প্রিন্ট হয়ে বেরিয়ে আসে –
TRANS INTERCEPT:
SAT BT-1009/03.17.06-1399
A40-TEXT TRANSMISSION
FROM: USAF SECURE FREQUENCY, ASWAN MILITARY AIRFIELD
(EGYPT)
TO: UNSPECIFIED DESTINATION, MARYLAND (USA)
VOICE 1 (USA):
কর্নেল , প্রেসিডেন্ট খুবই উদ্বিগ্ন বোধ করছেনগিট মো থেকে আসা একটি রিপোর্ট তার মুড আরো খারাপ করে দিয়েছে । ক্যাম্প ডেল্টা থেকে একজন সৌদি সন্ত্রাসবাদীকে কারা যেন উঠিয়ে নিয়ে চলে গেছে নাম জাঈদ ।  খবর অনুসারে ক্যাপস্টোনের প্রোজেক্টের সাথে এই মানুষটার যোগাযোগ আছে ।
VOICE 2 (EGYPT):
এটা ওয়েস্টের কাজ। এ একমাত্র ওর পক্ষেই সম্ভব । যে কোন কারনেই হোক ও বুঝেছে জাঈদকে ওর দরকার।
VOICE 1 (USA):
সত্যি নাকি? ওয়েস্ট! আমাদের কি জাঈদকে দরকার আছে?
VOICE 2 (EGYPT):
না । আমাদের যা যা খবর দরকার ছিল সব পেয়ে গেছি ওর কাছে থেকে অনেক দিন আগেই।
[LONG PAUSE]
VOICE 1 (USA):
কর্নেল জুডা, আমাদের তরফে কোনো রকম চিন্তার কারন আছে কি? রাষ্ট্রপতি একটা ড্রাফট বানানোর আদেশ দিচ্ছেন “সমগ্র দেশের উদ্দেশ্যে” সমুদ্র তীরবর্তী মানুষদের দ্রুত অন্য কোথাও সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে । যদি তুমি সফল হতে না পারো ।
VOICE 2 (EGYPT):
ওনাকে জানিয়ে দিন আমরা সফল হবোই। আজ অবধি সব কিছু আমাদের পরিকল্পনা অনুসারেই চলছে। ওয়েস্ট কে যখন খুশি আমারা সেষ করে দিতে পারিকিন্তু ওর পিছু নিলে কাজ গুলো অনেক সুবিধা জনক হয়ে যাচ্ছে। আর ইউরোপিয়ানরা সেটাই করছে যা আমরা আশা করেছিলাম । প্রেসিডেন্টকে বলুন তার কাজ করে যেতে এবং ভাষন লিখে রাখতে । যদিও ওটা ব্যবহারের দরকার হবে না । জুডা । আউট ।
0000000000000000000000000000000000000
[ষষ্ঠ অধ্যায় শেষ ।   সপ্তম অধ্যায় **লিলি একটা মেয়ের নাম**দ্বিতীয় পর্ব । https://amarkolponarjogot.blogspot.com/2017/09/blog-post_28.html]