[২০১৮ সালে কলকাতার একটা ভয় বিষয়ক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।]
ড্রাকুলা বা ভ্যাম্পায়ার এর ইতিহাস সন্ধান
করতে গেলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের হাজার হাজার বছর পিছিয়ে যেতে হবে । প্রাচীন
কুসংস্কারের সুত্র ধরে গবেষনা শুরু করলে সম্ভাব্য ড্রাকুলার উৎস হয়তো আমরা খুঁজে পাবো। যে ড্রাকুলাকে আমরা চিনি
তিনি আসলে কেমন? এই প্রশ্ন সামনে রেখে এগোলে যে সহজ সরল উত্তর মেলে তা থেকে
বলতেই পারি, মানুষ বিশ্বাস করে ড্রাকুলা কাহিনীর মূল সুত্র ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার । যদিও ব্রাম
স্টোকার নানান ভ্যাম্পায়ার কাহিনী এবং আইরিশ কিংবদন্তী এই কাহিনী রচনার সুত্র
রুপে ব্যবহার করেছিলেন।
দুচার কথা জেনে নেওয়া যাক সেই কিংবদন্তীর মানুষটার বিষয়ে।
শুধু সাধারন মানুষই নয়, বেশিরভাগ গবেষকও এটাই বিশ্বাস করেন
যে, ব্রাম স্টোকার রোমানিয়ায় ওয়ালাচিয়া নাম স্থানের ১৫ তম
শতাব্দীর রাজকুমার ‘ইভিল কাউন্ট ড্রাকুলা’র আসল
জীবনের উপর ভিত্তি করেই তার কাহিনী লিখেছিলেন। ভ্লাদ ড্রাকুলা বা
ভ্লাদ টেপেস বা ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার , ইতিহাসের অন্যতম একজন ভয়ানক মানুষ এবং বর্বর
শাসক বলেই পরিচিত।
শত্রুপক্ষের সৈন্যদের ওপর
তার করা নৃশংস অত্যাচারের কারণেই
তাকে ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার নামে ডাকা হতো । তীক্ষ্ণ
বিন্দুর লৌহ শলাকার ওপর এমন ভাবে ধৃত বন্দীদের বসিয়ে দেওয়া হতো যাতে শলাকা গুলি
একটু একটু করে শরীর ভেদ করে । ইংরেজিতে একে বলে ইম্পেল। যন্ত্রনাকাতর মানুষদের রক্তপাত ও চিৎকার শুনে
এক পৈশাচিক আনন্দ পেতেন ভ্লাদ।
এই ‘ইম্পেল’ পদ্ধতি
নির্যাতন ও হত্যার একমাত্র উপায় ছিল না
ড্রাকুলার। নানা পৈশাচিক সৃজনশীল উপায় উদ্ভাবন করেছিলেন কাউন্ট ড্রাকুলা । বন্দীদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়া তো
ছিল সাধারন ব্যাপার। জীবন্ত মানুষক কে ফুটন্ত জলে সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে ডুবিয়ে দিয়ে
বিকৃত আনন্দ উপভোগ করতেন মানুষটি । জ্যান্ত অবস্থায় চামড়া ছাড়িয়ে নিতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধ বোধ
করতেন না। হিংস্র জন্তুর সামনে নিরস্ত্র ম্নূশকে ছেরে দিয়ে তাদের মৃত্যু দৃশ্য দেখা ছিল কাউন্টের প্রাত্যহিক বিনোদন । স্যাক্সন রেকর্ড অনুসারে ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার ৪০
জাহার থেকে ১ লক্ষাধিক মানুষকে এভাবে হত্যা করেছিলেন। তবে তিনি সত্যিই তার বন্দীদের রক্ত পান করতেন কিনা তার শক্তপোক্ত প্রমান মেলে না । সম্ভবত ওটা
ছিল কল্পনাপ্রবন মানুষের সৃষ্ট কাহিনী।
ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার
তার ড্রাকুলা উপাধি পেয়েছিলেন তার পিতা দ্বিতীয় ভ্লাদ ড্রাকুল এর সুত্রে। যাকে
হাঙ্গেরীর রাজা সিগিস্মুন্ড নিজের সমাজভুক্ত নাইট রুপে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সেই
সমাজের পরিচিতি ছিল ‘দ্য অর্ডার অফ দ্য ড্রাগন’ নামে । এই সমাজ ভুক্ত দের মূল ল
ক্ষ্য হতো ক্রশেডের যুদ্ধে অংশ নেওয়া। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ড্রাকুল শব্দের অর্থ
ড্রাগন । তার ছেলেকে ড্রাকুলা বলা হয় ।
পিতার মৃত্যুর কিছুদিন পরে, ভ্লাদ তার ডাকনাম ‘দ্য ইম্পালার’ গ্রহণ করেন বা মানুষ তাকে ওই
নামে ডাকতে শুরু করে বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারন আগেই বলা
হয়েছে।
ভ্লাদ ড্রাকুলা দেখতে কেমন ছিলেন? সারা জীবন বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছিল তাকে । বার কয়েক
শত্রুদের হাতে ধরাও পড়েন তিনি । সেই সময়ের
একজন বিশপের লিখিত বর্ণনা থেকে জানা যায়
:
"খুব একটা লম্বা ছিলেন না। খুব ঠাণ্ডা এবং দৃঢ় মানসিকতার মানুষ। , আচরণে ভয়ানক রকমের এক তাচ্ছিল্যযুক্ত শীতলতার
আভাস পাওয়া যেত। লম্বা উচুঁ সরু নাক । নাকের ফুটো গুলো
বড় বড়। মুখের
চামড়া লালছে । বড় বড় রোম যুক্ত চোখের
পাতা। মনি সবুজ । কালো মোটা ঝুলো ভুরু । গোঁফ ছাড়া বাকি অংশ মসৃণ
ভাবে কামানো। সব মিলিয়ে যথেষ্টই আতঙ্কজনক। "
নিশ্চিতভাবেই আমরা যে
ড্র্যাকুলা চরিত্রকে চিনি তার সাথে
এর কোনোই মিল নেই।
সমস্ত গবেষকেরাই যে ভ্লাদকে ড্রাকুলার একমাত্র ভিত্তি হিসাবে
নির্দেশ করেন তা কিন্তু নয় । কেউ কেউ বিশ্বাস
করেন যে, আইরিশজাত ব্রাম স্টোকার নানান আইরিশ
লোককথাকে ব্যবহার করেছিলেন তার কাহিনীর ভিত্তি রুপে। আইরিশ
পৌরাণিক কাহিনি এবং ইতিহাস থেকে এক রহস্যময় চরিত্রর সন্ধান মেলে । যার নাম আভারতাক
। ৫ম শতাব্দীর এই রাজা আকৃতিতে বামন ছিলেন। ১৮৭৫ সালের একটি কাহিনী সুত্রে জানা যাচ্ছে -
"... ওই বামন ছিল এক ভয়ঙ্কর
অত্যাচারী জাদুকর শাসক । মানুষের উপর অকথ্য অত্যাচার করতো সে। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হয় ... দন্ডায়মান অবস্থায় তাকে
কবর দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু পরের দিনই তাকে দেখা
গিয়েছিল মানুষের ওপর অত্যাচার চালাতে! যে গোষ্ঠী প্রধান তাকে হত্যা করেছিলেন তিনিই তাকে
দ্বিতীয়বার হত্যা করেন এবং পুনরায় তাকে কবরস্থ
করা হয় । আবার সেই শয়তান কবর থেকে পালিয়ে যায় এবং সারা দেশে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে। এবার গোষ্ঠীপ্রধান
এক জাদু বিদ্যায় দক্ষ মানুষের পরামর্শ
এবং নির্দেশ অনুসারে তৃতীয়বার বামনটিকে হত্যা করেন । একই
জায়গায় তাকে কবর দেওয়া হয় । তবে এবার মাথা নিচের দিকে করে দেওয়া হয় । এর ফলে ওই শয়তানের
কালো জাদুকরী শক্তি বিনষ্ট হয় । সে আর পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারেনা। "
এই চরিত্রটির প্রভাব যে ব্রাম স্টোকারের লেখা পড়েছিল তা
অনুমান করে নেওয়া যেতেই পারে।
উপন্যাসের ড্রাকুলার ইতিহাস অনুধাবন করতে হলে ১৭০০ সালের
যুগটায় যে সমস্ত কাল্পনিক কাহিনী এ বিষয়ে
রচিত হয়েছিল তাদের দু একটিকে একটু যাচিয়ে
দেখতে হবে । ১৮৯৭ সালে ড্রাকুলা প্রকাশিত হওয়ার আগে ইউরোপের
সমাজ ছিল ভ্যাম্পায়ার ভাবনায় আচ্ছন্ন । অনেক দেশেই এই বিষয়ে দীর্ঘদিনের কুসংস্কার গেঁথে বসেছিল মানুষের
মনে। এই সময়ের লিখিত নানান ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কিত কাল্পনিক সাহিত্যিক কাজগুলি এটাই নির্দেশ করে যে,
ড্রাকুলার ধারণাটি ব্রাম স্টোকারের নিজস্ব মৌলিক ভাবনা ছিলনা মোটেই।
১৭৪৮ সালে হাইন রিখ
আগস্ট ওসেনফেল্ডার দ্য
ভ্যাম্পায়ার নামে একটি রোমান্টিক কবিতা লিখেছিলেন। যেখানে একটি ভ্যাম্পায়ার এক যুবতীর প্রতি আকৃষ্ট হয়
। কিন্তু যুবতীটি তার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীনী
মায়ের কথা শুনে চলেছিল বলে সে মেয়েটিকে কব্জা করতে পারছিলনা । মেয়েটিকে তার মা সতর্ক
করে দেন, জানিয়ে দেন ওই পুরুষ সাধারন মানুষের মতো জীবন্ত নয় । ভ্যাম্পায়ারটি বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে শপথ করে, সুযোগ পেলেই "চুম্বন" করার অছিলায় সে মেয়েটির রক্ত
পান করবে এবং কেড়ে নেবে তার জীবন ।
সবচেয়ে বেশী যে কাহিনীটি ড্রাকুলার ভিত্তি বলে মনে করা হয়
সেটির নাম কারমিল্লা। রচয়িতা জোসেফ
শেরিডান লে ফানু । ১৮৭১ সালে
প্রকাশিত হয়েছিল - ড্রাকুলার ২৬ বছর আগে। এই গল্পেও ভ্যাম্পায়ারের প্রেমানুরাগ
জনিত আকাঙ্ক্ষার রোমান্টিক থিম রয়েছে। যা অবশ্যই সেই সময়ের
প্রেক্ষিতে এক অনন্য বিষয় । কারন এই গল্পের মূল
চরিত্র একটি মহিলা
ভ্যাম্পায়ার, কারমিল্লা ।
এই সময়ের বেশ
কয়েকটি কাল্পনিক লেখা তৈরি হয়েছিল, যেগুলোকে
নিশ্চিতভাবেই স্টোকারের লেখাকে
প্রভাবিত করেছিল বলেই আমরা ধরে নিতে পারি । ১৭৭৩
সালে গটফ্রিড আগস্ট বারগার ‘লেনোরে’ নামে
একটি ব্যাল্যাড রচনা করেছিলেন। যেখানে for the dead
ride first শব্দ বন্ধ টি
ব্যবহার হয়েছিল । যা সরাসরি স্টোকার তার
উপন্যাসে ব্যবহার করেছিলেন।
লেখকের পুত্রের কথানুসারে, সিনিয়র স্টোকার নাকি বলতেন তার লেখার অনুপ্রেরণা ছিল একটি দুঃস্বপ্ন ।
ড্রাকুলার সৃষ্টি কাহিনী রুপে যে সমস্ত গল্প
চালু আছে তাদের বিশ্বাস করতে মানুষ দ্বিধা করেনি কারণ, সে
সমস্ত গল্পের সাথে জড়িয়ে আছে আংশিক কিছু সত্য ঘটনা। তবে একটি অবিসংবাদিত সত্য এই যে স্টোকার এই কাহিনী
লেখার জন্য কারে কমপক্ষে সাত বছর ধরে ভাবনাচিন্তা করেছিলেন। নিশ্চিত ভাবেই অনেক
গবেষনা যে লেখক করেছিলেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই ।
পঞ্চদশ শতাব্দীর ওয়ালাচিয়ার ওয়ারলর্ড, ভ্লাদ " দ্য ইমপেলার" বা
কাউন্ট ড্র্যাকুলা নামটি রোমানিয়া বাইরে সেই অর্থে কেউ জানতোইনা। স্টোকারের সুত্রে ঐতিহাসিক এই চরিত্র ভ্যাম্পায়ার কল্পকাহিনীর মূল সুত্র রুপে বিশ্বে
বিখ্যাত হয়ে যায়। ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা নির্মিত ১৯৯২ সালের চলচ্চিত্র
“ব্রাম স্টোকা্র’স ড্রাকুলা” মানুষের মনে
এই বিশ্বাস আরো গভীর ভাবে গেঁথে দেয় যে ভ্লাদের
কাহিনীই ছিল ড্রাকুলা উপন্যাসের মূল ভিত্তি।
অথচ সিনেমায় যে বিষয় দেখানো হয়েছে - কয়েক শতাব্দী আগে হারিয়ে যাওয়া প্রেমের পুনরুত্থানের জন্য ড্র্যাকুলার অনুসন্ধান - তা না মূল উপন্যাস বা তার সংগৃহীত নোটসগুলিতে কোথাও দেখা যায় ।
নাটকীয়তা বিনির্মাণের স্বার্থে চলচ্চিত্র নির্মাতারা যে কোনো গল্প উপন্যাস কে
নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করেন । সম্ভবত, একইভাবে প্রাপ্ত সুত্র ও তথ্যাদিকে নিজের কাহিনীতে
কতটা বদলাবেন এই ভাবনাই স্টোকারকে সাতবছর ধরে ভাবতে বাধ্য করেছিল। প্রায় সব লেখকই
লেখক কোনো বড় কাহিনী সৃষ্টি করার সময় নিজের
কল্পনাপ্রসূত একাধিক চিন্তা ভাবনার কতটা ব্যবহার করবেন তা নিয়ে সমস্যায় ভোগেন ।
সেই চিন্তার চাপ একজন লেখককা নানা প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় । স্টোকার ও তার
থেকে বাদ পড়েন নি এটা সহজেই অনুমেয় । হয়তো এই ভাবনাটাও তার মাথায় এসেছিল, আদপেই কি
এই লেখা মানুষ মনে রাখবে?
ব্রাম স্টোকার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার ভ্যাম্পায়ার বিষয়ক কিংবদন্তী
তার ভালো লাগে কারন একই সাথে ওর ভেতর মিলে মিশে থাকে সত্য এবং রহস্য ।
৯০ শতাংশ মানুষ গুজব ছড়াতে ভালোবাসে
এটা একটা অমোঘ সত্য। তৎকালীন সময়ের গ্রাম জীবনে অশিক্ষিত, বোকা, মাতাল বা বেশ্যা বৃত্তির সাথে যুক্ত মানুষেরা ছিল গুজব
সৃষ্টির আঁতুড় ঘর । সাধারন প্রাকৃতিক ঘটনা
তাদের বর্ণনা তে পরিণত হয়েছে অ প্রাকৃতিক রহস্যে । কোন
একজন মানুষ প্রায় মরার মতো হয়ে গেছে । আবার বেশ কয়েক ঘণ্টা
বাদে বেঁচে উঠেছে এরকম ঘটনার কথা আজ আমারা জানি। বিজ্ঞান এর ব্যাখ্যাও দিয়েছে । কিন্তু
সেই সময়ে এরকম ঘটনার পেছনে সত্য খোঁজা সম্ভব হয়নি সাধারন মানুষের পক্ষে। ফলে জন্ম
নিয়েছে রহস্য । জন্ম দিয়েছে ভয়ঙ্কর গুজবের
। সিনেমা নির্মাতাদের মতোই গুজব নির্মাতা তাতে চাপিয়েছে আতঙ্কের রঙ । জন্ম
হয়েছে ভ্যাম্পায়ার সুলভ কিংবদন্তীর।
প্রায় প্রতিটি দেশের আঞ্চলিক সংস্কৃতিতে ক্ষুধার্ত মৃতদের
কাহিনী পাওয়া যায় । সেসবের বৈচিত্র্যময়তা
প্রভাব ফেলেছে কথাসাহিত্যতে। ব্রাম
স্টোকারও হেঁটেছেন সেই পথে । বিশ্বাসযোগ্যতার
একটি মাপকাঠি বজায় রাখার জন্য তিনি ফরাসি বাইবেল বিষয়ক পণ্ডিত ডম অগাস্টিন
ক্যালমেট লিখিত Dissertations sur les apparitions des esprits et sur
les vampires এর তথ্য তার
কাহিনীতে অভিযোজিত করেছেন। ভ্যাম্পায়ার ধ্বংসের পদ্ধতি তিনি খুঁজে
পেয়েছেন এখানেই ।
সুচালো কাঠের টুকরো হৃদপিন্ডে গেঁথে বসিয়ে দেওয়ার চিরন্তন পদ্ধতি ।
বেশিরভাগ ভ্যাম্পায়ার কিংবদন্তীতে কবর থেকে মৃত শরীরের আত্মা বেড়িয়ে এসে
রক্তপান করে মৃত শরীরে ফিরে যায় এরকমটাই পাওয়া যায় । ১৮৮৮ সালের এনসাইক্লোপিডিয়া
ব্রিটানিকা সংস্করণটিতেও এই সুত্র উল্লেখ আছে । সেখানে ব্রাম
স্টোকার সরাসরি ড্রাকুলাকেই শারীরিকভাবে ব্যবহার করেছেন তার কাহিনীতে রক্তচোষা
দানব রুপে । সম্পূর্ণ নতুন এই ভাবনা মানুষ কতটা গ্রহন করবে এটা হয়তো তার মনে
সংশয়ের জন্ম দিয়েছিল।
তিনি ড্রাকুলাকে একটি বাদুড় জাতীয় প্রানীর আকারে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা দিয়েছেন।
এটাও সেই সময়ের প্রচলিত কোনো লোক কথায় পাওয়া যায়না। নেকড়ে রূপ ধারণ করার অতিরিক্ত ক্ষমতাও তিনি দিয়েছেন ছিল
ড্রাকুলার। সাবিন বারিং-গোল্ডের বই ‘দ্যা বুক অফ ওয়ার
উল্ভস’ এ একটি তথ্য পেয়েছিলেন স্টোকার। যেখানে বলা হয়েছে, গ্রীক বিশ্বাস অনুসারে,
ওয়ার উলফ রা মরে গেলে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যায়। গোল্ডের লেখাতেই পাওয়া যায়, ওয়ার উলফের হাতের
তালুতে লোম থাকে । সেটাই ব্যবহার করেছেন স্টোকার ড্রাকুলার রুপ বর্ণনার সময়ে।
এছাড়াও গোল্ড বর্ণিত অনেক কিছুর সাথেই স্টোকারের বর্ণনার মিল পাওয়া যায় । উৎসাহী
পাঠক মূল পুস্তক পাঠ করলেই বুঝতে পারবেন।
প্রচলিত লোক কথার নানান সূত্রই যে স্টোকার কে তার লেখায়
অনুপ্রানিত করেছিল তার আর একটি উদাহরণ দিয়ে এই নিবন্ধের ইতি টানছি । সিনেমায় আমরা
দেখি সূর্যের আলো সহ্য করতে পারেনা ভ্যাম্পায়ারেরা । কিন্তু কাউন্ট ড্রাকুলা দিনের
বেলাতে লন্ডনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন । এই সূত্রও স্টোকার পেয়েছিলেন লোক গল্প
থেকেই । সেখানে বলাই হয়, অন্যান্য শয়তানী সত্তার মতোই ভ্যাম্পায়ারেরা দিনের বেলায়
বের হতে চায় না । কিন্তু তারমানে এই নয় যে সূর্যের আলো তাদের ধ্বংস করতে সক্ষম ।
তথ্যসুত্র – ইন্টার
নেটের বিভিন্ন সাইট এবং ডেভিড জে স্কাল লিখিত Something in
the Blood: The Untold Story of Bram Stoker, the Man Who Wrote ‘Dracula’
[আরও কিছু তথ্য পেয়েছি সময় মত জুড়ে দেব।]