Search This Blog

Thursday, April 27, 2017

বিদেশী উপকথা ও কাহিনীর ৫টা গল্প

ফ্রম দ্য পারশিয়ান টেলস “দ্য উলফ অ্যান্ড দ্য গোট”
ডি এল আর লরিমার এবং এ ও লরিমার এর ইংরেজী অনুবাদ থেকে আমার করা বঙ্গানুবাদ।
খুব চেনা গল্প। অনেকেই হয়তো এর ভারতীয় রুপ পড়েছেন ছোটবেলায়।

নেকড়ে ও ছাগল মা
----------------------------------------------------------------
এক ছাগল মায়ের ছিল চার ছেলেমেয়ে ।   নাম আলিল, বালিল, আদার কাঠি আর কালোচোখো।
একদিন সেই ছাগল মা বললো, “বাছারা আমার শান্তশিষ্ট হয়ে থেকো আমি তোমাদের জন্য ঘাস আনতে যাচ্ছিআর এটা মনে রেখো, কেউ যদি   আসে, দরজায় দেয় টোকা খুলোনা দরজা হোয়োনা বোকা। জানতে চাইবে কে এসেছে । যদি উত্তর পাও , ‘আমি তোদের মা এসেছিরে।’ তাহলে বলবে, দরজার ওই ফাটলে রাখো দেখি তোমার থাবাটা। যদি দ্যাখো সে থাবা কালো । দরজা মোটেও খুলবে না। আর যদি দ্যাখো লাল তাহলে বুঝে নেবে আমি এসেছি। বুঝতে পেরেছো।’
এই   কথাগুলো কিন্তু সব শুনে নিলো এক দুষ্ট নেকড়েমা ছাগল চলে যেতেই প্রথমে সে নিজের থাবায় মাখিয়ে নিলো লাল রঙ। তারপর দরজায় এসে দিলো টোকা। ছাগলছানারা জানতে চাইলো , ‘কে এসেছো?’
‘দরজা খোলো বাছারা আমার। আমি তোদের মা। তাজা ঘাস নিয়ে এলাম তোদের জন্য।’
ছাগল ছানারা বললো, ‘তোমার থাবা দেখাও।’
নেকড়ে নিজের লাল রঙ করা থাবা দেখাতেই ওরা দরজা খুলে দিলো । সুযোগ পেয়েই আলিল, বালিল আর আদার কাঠিকে ধরে ফেললো দুষ্ট নেকড়ে। তবে কালোচোখো পালালো নাগাল এড়িয়ে। লুকিয়ে পড়লো এক জায়গায়।
ছাগল মা ফিরে এসে দেখলো দরজা হাত করে খোলা, ঘরে কেউ নেই। এদিকে ওদিকে গিয়ে ডাকতে থাকলো প্রানের বাছাদের নাম ধরে। মায়ের গলা পেয়ে লুকানো জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে কালোচোখো সব কিছু খুলে বললো। সব শুনে ওকে নিয়ে ছাগল মা গেল নেকড়ের বাড়ির দিকে। উঠলো বাড়িটার ছাদে। দেখতে পেলো নেকড়েটা কিছু একটা রান্না করছে। এটা দেখে ওরা কিছুটা ধুলো মাটি তুলে ছুঁড়ে দিল সেই রান্নার ওপর।
নেকড়ে চিৎকার করে বললো
‘কেরে উঠেছে আমার ছাদের ওপরে?
কত না জানি সাহস ছুড়ছে ধুলো আমার খাবারে?
রসালো করে রাঁধলাম আমি তাকে করে দিলি নষ্ট
ছিটকে এলো গরম খাবার, পড়লো চোখে, উফ কি কষ্ট!’
ছাগল মা উত্তরে বললো
‘আমি হলাম এক ছাগল অতি দ্রুতগামী
  পায়ে বাঁধা ঘণ্টা নিয়ে নাচতে পারি আমি
দুপায়ে হাঁটতে পারি এমন আমি ছাগল
আমার আলিল, বালিল আর আদার কাঠিকে করলি চুরি ? হয়েছিস কি পাগল?’
উল্লসিত গলায় উত্তর দিলো নেকড়ে
‘হ্যাঁ করেছি ওদের আমি চুরি ।’
সহসাই বললো ছাগল মা
 ‘ তবে দিলাম তোকে লড়াই এর আহ্বান।
এখন যাচ্ছি ফিরে।
অপেক্ষা করবো জলার ধারে।’
ছাগল মা ফিরে গিয়ে একটা ভালো চামড়া বার করে তার ভেতরে ভালো দই ও মাখন ভরে নিয়ে গেল এক চাকু ধারালো করে এমন মানুষের কাছে। দই আর মাখন উপহার দিয়ে বললো, ‘ভালো করে ধার দিয়ে দাও দেখি ভালো মানুষের পো আমার শিং দুখানাকে।’
ওদিকে নেকড়েও বার করলো একটা চামড়া । কিন্তু বদমাইশতো তাই ভেতরে কিচ্ছুটি না ঢুকিয়ে স্রেফ হাওয়া দিয়ে ফুলালো। নিয়ে গেল এক দাঁত তোলে এমন মানুষের কাছে। কর্কশ স্বরে বললো, ‘এটা নাও, আর আমার দাঁতগুলোকে ঘষে মেজে ধারালো করে দাও দেখি ।’
দাঁত তোলার চিকিৎসক অবাক হলেন নেকড়ের উপঢৌকন দেখে। ভেতরে কি আছে দেখার জন্য ওপর দিকের বাঁধনটা খুলতেই ফুস ফুস ফুস করে সব হাওয়া বেরিয়ে গেল।
ঠকে যাচ্ছেন  দেখেও চিকিৎসক কিছুই বললেন না ।  শুধু দাঁত ধারালো করার বদলে একটা একটা করে সব কটা দাঁত উপড়ে দিলেন মাড়ি থেকে। তারপর তুলোর সাথে বিশেষ মিশ্রন এর মন্ড বানিয়ে একটা একটা করে দাঁত বানিয়ে সেগুলো লাগিয়ে দিলেন মাড়িতে। একটু ঘষা মাজা করতেই সব চকচকে হয়ে গেল।
 এবার লড়াই এর জন্য মুখোমুখি হলো নেকড়ে আর ছাগল মা। জলাশয়ের ধারে। ছাগল মা বললো, ‘অনেকক্ষন লড়তে হবে তাই এসো আগে আমরা একটু করে জল খেয়ে নিই।’ একথা  নেকড়ে মেনে নিলো । ছাগল মা কিন্তু এক  ফোঁটা জল খেলোনা। শুধু জল খাওয়ার ভান করে মুখটা ডুবিয়ে রাখলো জলের ভেতর। আর অতি চালাক নেকড়ে জল খেয়ে গেল তত ক্ষন যত ক্ষন না আর পেটে জায়গা রইলো।
এটা বুঝে নিয়ে এবার ছাগল মা ডাক দিলো , ‘চলো এই জলাশয় লাফিয়ে পার হয়ে  লড়াই শুরু করি।’ বলেই এক লাফে চলে গেল অপর দিকে । নেকড়েও লাফালো, কোনও মতে জল পেরিয়ে ধপাস করে পড়লো জমির ওপর। আর তৎক্ষণাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে ধারালো শিং দিয়ে দুষ্ট নেকড়ের পেট ফু্টো করে দিলো ছাগল মা। মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা অবশ্য করলো নেকড়ে। কিন্তু লাভ কিছু হলোনাজল খেতে খেতে তুলো দিয়ে বানানো সব দাঁত কখন গলে খসে পড়ে গেছে নেকড়ে বুঝতেই পারেনি।
ছাগল মায়ের আরো কয়েক আঘাতে ভবলীলা সাঙ্গ হলো নেকড়ের।
কালো চোখোকে সাথে নিয়ে ছাগল মা নেকড়ের বাড়ি থেকে ঊদ্ধার করলো আলিল, বালিল আর আদার কাঠিকে। 
আমার গল্প ফুরালো, নটে গাছটি মুড়ালো।

 

ফ্রম দ্য পারশিয়ান টেলস “দ্য সিটি অফ নাথিং ইন দ্য ওয়ার্ল্ড”
ডি এল আর লরিমার এবং এ ও লরিমার এর ইংরেজী অনুবাদ থেকে আমার করা বঙ্গানুবাদ।
খুব চেনা গল্প। এই গোত্রের লেখা অনেকেই হয়তো   পড়েছেন উপেন্দ্র কিশোর রায় মহাশয়ের একটি রচনায়   । 
সেএক আজগুবী গপ্পো
-------------------------------
নেই জগতের হিচ আ হিচ শহরের একটি মেয়ে পা পিছলে পড়ে গেল ধপাস করে। কেটে  গেল এখানে ওখানে। কয়েকদিন পরে যখন ক্ষত শুকিয়ে টান ধরলো চামড়ায় মেয়েটি গেল তার পিসির বাড়ী একটা মলম নেওয়ার জন্য যা ওকে ওই টান ধরার কষ্ট থেকে   বাঁচাবে।
বয়স্কা পিসি জানালেন, ‘আমার কাছে তো আর ওই মলম নেই বাছা। তুই বরং এদুটো নিয়ে যা।’ দুটো ডিম দিলেন বাজারে নিয়ে গিয়ে  ঔষধ বিক্রেতাকে দেওয়ার জন্য।  এর বদলে সে ওই মলম দিলেও দিতে পারে।
বেশ খানিকটা সময় বাদে বাজার থেকে ফিরে এসে মেয়েটি এক গপ্পো শোনালো তার পিসিকে।
‘পিসিগো বাজারে যেতে যেতে আমার ডিম দুটো কোথায় যেন পড়ে গেল। কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে পেলাম একটা মুদ্রা। ওটা দিয়ে একটা লোকের কাছ থেকে  পেলাম একটা ছুঁচ  দিয়ে বানানো মিনার।
‘শুরু করলাম সেই মিনারে ওঠা। উঠতে  উঠতে একসময় পৌছে গেলাম মিনারের একেবারে ওপরে। ওখান থেকে পুরো হিচ আ হিচ শহরটাকে দেখতে পাচ্ছিলাম । ওখান থেকেই দেখতে পেলাম য়ামার ডিম দুটো থেকে একটা মুরগী আর একটা মোরগ জন্মেছে। মুরগীটাকে দেখতে পেলাম এক বুড়িমার বাড়ীতে । আর মোরগটা পাশের গ্রামে ডানা খুঁটে খাচ্ছে।
‘এসব দেখে ঠিক করলাম আগে মোরগটাকে নিতে যাবো। গেলাম সেই গ্রামে। ওখানকার কৃষকদের  ডেকে বললাম, “এই যে আমার মোরগ ফেরত দাও আর সাথে দাও মজুরী। কারন ওটা তোমাদের পড়ে থাকা শষ্য খুঁটে খেয়ে গ্রাম পরিষ্কার রেখেছে।” অনেক দরদাম কষাকষির পর ওরা রাজি হল আমাকে আধ গরুর গাড়ি ভর্তি চাল দেবে। ওজন করে দেখা গেল সে চালের পরিমাণ   ২৫ মন। কিন্তু আমার  কাছে তো ঝোলা ছিল না নেবো কিসে? তাই একটা ভেড়া মেরে তার চামড়া দিয়ে বানিয়ে নিলাম আমার ঝোলা। ওরা চাল ঢেলে দিলো ওই ঝোলায়। সেই ঝোলা আমি ঝুলিয়ে দিলাম আমার মোরগের গলায় । তারপর ওকে নিয়ে চললাম বাজারের উদ্দেশ্যে।
‘শহর থেকে তখন অনেকটাই দূরে আমি। দুদিন ধরে হাঁটতে হাঁটতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। মোরগটার অবস্থাও দেখলাম বেশ কাহিল। ঝোলার ভারে বেচারার গলা একেবারে ঝুলে পড়েছে । এক সরাই খানায় উপস্থিত হয়ে ওখানকার লোকদের কাছে জানতে চাইলাম, ‘কি করা যায় বলো দেখি ভালো মানুষের পোয়েরা ?” ওরা বললো, “আধখানা কাঠবাদাম পুড়িয়ে তার ছাই লাগিয়ে দাও ওর গলায়।” আমি সেটাই করলাম।
‘সকালে যখন ঘুম ভাঙলো দেখলাম মোরগটার পিঠ থেকে একটা বড় কাঠ বাদামের গাছ জন্মে নিয়েছে। সরাইখানার কাছের গ্রামের যত ছেলে মেয়ে জমা হয়েছে ওর চারপাশে। বাদাম পাড়ার জন্য   মাটির ঢেলা ছুঁড়ছে। আমি ঝটপট একটা ডালে চেপে দেখলাম প্রায় ১০০ ফুটের মতো উঁচু মাটির ঢেলা জমে গেছে চারপাশে। সময় নষ্ট না করে আমি ওইসব মাটির ঢেলাগুলো ভেঙে সমান করে দিলাম। দেখলাম মাটিটা খুব ভালো জাতের। তরমুজ খরমুজ ভালো চাষ হবে এই মাটিতে। যেমন ভাবা তেমন কাজ । ছড়িয়ে দিলাম দিলাম তরমুজ খরমুজের বীজ।
‘পরের দিন সকাল ঘুম ভেঙে জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পেলাম বড় বড় তরমুজ জন্ম নিয়েছে। সাথে থাকা ছুড়ি দিয়ে একটা তরমুজ কাটতে যেতেই ছুড়িটা পড়ে গেল তরমুজটার  ভেতরে। কি আর করি স্নানের পোশাক পড়ে ওই যেটুকু কেটেছিলাম তার মধ্যে দিয়ে ঢুকে পড়লাম তরমুজটার ভেতরে। ছুরিটা খুঁজে পেতে তো হবে, তাইনা   বলো, পিসি?
‘ভেতরে কি দেখলাম জানো একটা বিরাট  শহর ওখানে। কত লোকজন, চিৎকার চ্যাঁচামেচি বাপ্ রে বাপ। কাছেই একটা খাবারে দোকান দেখে এগিয়ে গেলাম। একটা মুদ্রা দিলাম দোকানদারকে। বিনিময়ে পেলাম এক প্লেট হালিম। কি স্বাদ গো পিসি হালিমটার আমি তো খাওয়ার শেষে প্লেটটা চেটেই যাচ্ছিলাম।
‘চাটছি চাটছি হঠাৎ ওপর থেকে কি একটা এসে পড়লো   চুলের মতো  । টেনে তুলতেই বুঝলাম আসলে ওটা একটা মোটা দড়ি। যেটার সাথে আবার সাতটা দড়ি বাঁধা আছে। প্রত্যেকটা দড়ির মাথায় বাঁধা আছে একটা করে উট। তার পরেই খুঁজে পেলাম আমার ছুড়ি টাকে। একেবারে শেষের উটটার লেজে আটকে ছিলো ।’
পিসি জানতে চাইলেন আর কিছু বলার আছে তোর?
না, আমার গল্প ফুরালো নটে গাছটি মুড়ালো।

২য় গল্পে আপনাদের জন্য ছিল একটি আজগুবি গপ্পো পারশিয়ান টেলস থেকে। এসপ্তাহেও পেশ করছি আরো একটি আজগুবি গপ্পো। তবে এটির দেশ আলাদা। কিরঘিজ উপকথা । মিলটা  কোথায় সেটা বুঝতে পারবেন তারাই যারা আগের দিনের গল্পটা পড়েছেন।
“হুইচ ওয়াজ দ্য বিগেস্ট?”
ইরিনা ঝেলেজনোভার ইংরেজী অনুবাদ থেকে আমার করা বঙ্গানুবাদ

কে বড়ো বলতে পারো?

অনেক অনেক কাল আগে কোনো এক গ্রামে তিনভাই ছিল। যাদের একমাত্র সম্পত্তি ছিল একটা সাদা রঙের ছিটে ছিটে দাগওয়ালা ষাঁড়।
একদিন তিনভাই সিদ্ধান্ত নিলো আলাদা আলাদা সংসার পাতার। এখন প্রশ্ন হলো ষাঁড়টা কি করে ভাগ করা হবে তিনজনের ভেতর? প্রথমে ওরা ওটাকে বিক্রি করার কথা চিন্তা করলো । কিন্তু ওদের গ্রামে এমন কেউ এতোটা ধনী নয় যে ওই ষাঁড়টা কিনতে পারে। ফলে ওরা ভাবলো ওটাকে মেরে খেয়ে নেবে। কিন্তু সেটাও পারলো না কারন ছোটো থেকে ওরা ওটার সাথেই বড় হয়েছে ফলে একটা মায়া জন্মে গেছে ওটার ওপর।
অনেক আলাপ আলোচনা করে ওরা ঠিক করলো ওরা যাবে জ্ঞানী মানুষের কাছে । তিনি যা সমাধান করে দেবেন এই সমস্যার সেটাই ওরা মেনে নেবে।
পরের দিন সকালবেলায় ওরা ষাঁড়টাকে নিয়ে চললো জ্ঞানী মানুষটার উদ্দেশ্যে। বড়ভাই থাকলো ষাঁড়টার মাথার কাছে। মেজভাই মাঝখানে । আর ছোটভাই লাঠি নিয়ে পেছেন গিয়ে দাঁড়ালো তাড়া দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
কিছুটা হাঁটার পর ওদের পেছন দিক থেকে এক ঘোড়সওয়ার এসে ছোটভাই এর কাছে জানতে চাইলো কোথায় চলেছে ওরা । ছোটভাই সব কথা খুলে বললো মানুষটাকে।
‘আমরা ষাঁড়টাকে জ্ঞানী মানুষের কাছে নিয়ে চলেছি। যাতে আমাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’
সাথেই ঘোড়সওয়ারকে বললো, ‘একটু এগিয়ে গেলেই আপনি আমার মেজোভাইকে দেখতে পাবেন। ও এই ষাঁড়ের ঠিক পাশে পাশে হাঁটছে । ওকে একটু বলবেন যেন মাঝে মাঝে একটু এটার পেটে খোঁচা মারে । তা নাহলে সন্ধের আগে জ্ঞানী মানুষের গ্রামে পৌছানো যাবে না।’
‘ঠিক আছে বলে দেবো,’ বলে ঘোড়সওয়ার ঘোড়া দাবড়িয়ে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।
সূর্য যখন একেবারে মাথার ওপর তখন দেখা পাওয়া গেলো মেজ ভাইয়ের।
‘ওহে কত্তা, তোমার ছোট ভাই বলতে বলেছে তুমি যেন মাঝে মাঝে ষাড়টার পেটে একটু গুঁতো মেরো। তবেই সন্ধে হওয়ার আগে জ্ঞানী মানুষের গ্রামে পৌছাতে পারবে।’
মেজভাই ধন্যবাদ জানিয়ে বললো, ‘ঠিক আছে তাই করবো। আর বলছিলাম কি আপনি যখন সামনে এগিয়ে গিয়ে আমার বড় ভাইয়ের দেখা পাবেন, ও আছে এর মাথার কাছে , ওকে বলবেন মাঝে মাঝে যেন একটু কাঁধে চাপড় মেরে ষাঁড়টাকে হাঁটার জন্য উৎসাহিত করে।’
ঘোড়সওয়ার  যখন ষাঁড়টার মাথার কাছে পৌঁছালো এবং  বড় ভাইয়ের দেখা পেলো তখন সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে।  জানালো মেজভাই কি বলেছে।
বড় ভাই বললো, ‘আর কিছু করার নেই। সন্ধেতো হয়েই গেলো। এখানেই আমাদের থামতে হবে। রাতটা এখানেই কাটাতে হবে।’
সাথে সাথেই ষাঁড়টার গলায় হাত বুলিয়ে ইশারা করলো থামার।
ঘোড়সওয়ার অবশ্য থামলো না, এগিয়ে গেল নিজের পথে।
রাতটা ওই খোলা মাঠে কাটিয়ে আবার পরদিন তিনভাই শুরু করলো পথ চলা। কিছু দূর যেতে না যেতেই এক ভয়ানক কান্ড ঘটলো। আকাশ থেকে নেমে এলো এক ঈগল পাখি। চকিতে ছোঁ মেরে উঠিয়ে নিলো ষাঁড়টাকে । আর তারপর মিলিয়ে গেল মেঘের আড়ালে ।
তিন ভাই কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো আকাশ পানে। তারপর শুরু করলো নিজেদের গ্রামে ফেরার জন্য হাঁটা।
ওদিকে ঈগলটা থাবায় ষাঁড়টাকে ঝুলিয়ে নিয়ে ঊড়ে চললো। সে সময় নিচে এক পাল ছাগল চড়ছিল । ওদের মধ্যে যেটা সবচেয়ে বড় শিংওয়ালা সেটার শিং এর ওপর এসে বসলো ঈগলটা। ষাঁড়টাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে শুরু করলো খাওয়া । হাড়গুলোকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো এদিকে ওদিকে।
কিছুক্ষণ বাদে শুরু হলো দারুন বৃষ্টি । ছাগলগুলোর মালিক বাকি ছাগলগুলোকে নিয়ে ওই বড় ছাগলটার দাড়ির তলায় আশ্রয় নিলো বৃষ্টি ঠেকে বাঁচার জন্য।
সহসাই ছাগল মালিকের বাম চোখটা কড় কড় করে উঠলো।
চোখে মনে হয় ধুলো পড়লো, ভাবলো ছাগলওয়ালা।
সন্ধে হওয়ার একটু আগে বৃষ্টি থামতেই ছাগলের পাল নিয়ে ও ফিরে এলো নিজের গ্রামে। চোখের  ব্যাথা ইতিমধ্যে দারুন বেড়ে গেছে বেচারীর।
‘ওহে কে আছো, আমার জন্য চল্লিশ জন চিকিৎসককে ডেকে আনো।হ্যাঁ আর একটা কথা, সাথে  করে যেন চল্লিশটা নৌকাও নিয়ে আসে জানিয়ে দিও। আমার চোখে নামতে হবে । কিছু একটা পড়ে আমার চোখে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।’
গ্রামবাসীরা খুঁজে নিয়ে এলো চল্লিশজন চিকিৎসককে।
গ্রামের মাতব্বর বললেন, ‘ওহে চিকিৎসকগন, আমাদের ছাগল মালিকের চোখে নেমে পড়ো দেখি তাড়াতাড়ি । ধুলো না কি পড়েছে খুঁজে দেখে ওর ব্যাথার উপশম করে দাও দেখি ঝট পট।দেখো চোখের যেন কোন ক্ষতি না হয়।’
চল্লিশ চিকিৎসক নৌকা ভাসালো ছাগল মালিকের চোখে। যেটা খুঁজে পেলো ওরা সেটা ধূলিকণা নয় মোটেই। ওই ষাঁড়টার একটা হাড়। বোধহয় আটকে ছিল ছাগলটার দাড়িতে । বৃষ্টি থেকে বাঁচতে যখন ঢুকেছিল ওর তলায় তখন ছাগলটা মাথা ঝেড়েছিল আর  এসে পড়েছিল মালিকের চোখে।
ছাগল মালিকের চোখের ব্যাথা কমতেই চিকিৎসকরা ফিরে গেল নিজের নিজের গ্রামে। আর ষাঁড়ের হাড়টা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হলো গ্রামের বাইরের দিকে।
এই ঘটনার কিছু সময় বাদে গুটিকয় যাযাবর মানুষ এলো সেই স্থানে যেখানে হাড়টাকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। রাত ঘনিয়ে এসেছিল, তাই ওরা ওখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলো এবং আগুন জ্বালালো ।
‘এই নুন জমা সাদা জায়গাটা মনে হচ্ছে আজকের রাত কাটানোর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।’
সব রেখে টেখে রাতের খাবার খেয়ে ওরা যখন শোয়ার উদ্যোগ করছে ঠিক তখনই ওদের পায়ের তলার মাটিটা কেঁপে উঠলো । যাযাবররা ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে পালালো সব গুছিয়ে নিয়ে । একসাথে সবাই চেপে বসলো নিজেদের গরুর গাড়িটার ভেতরে ।
একসময় সকাল হলো। ওরা তাঁবু খাটালো আর চল্লিশজন  ঘোড়সওয়ারকে পাঠালো  গত রাতের সেই জায়গাটা দেখার জন্য যেখানে ভূমিকম্প হয়েছিল। ব্যাপারটা কি জানা তো দরকার নাকি?
চল্লিশ ঘোড়সওয়ার দ্রুত সেখানে গেল দেখলো রাতে যেটাকে ওরা নুন জমা জমি বলে মনে করেছিল সেটা আসলে একটা বিরাট মাপের হাড়। ষাঁড়ের হাড় বলেই মনে হচ্ছে। আর এখন হাড়টাকে আয়েশ করে চিবাচ্ছে একটা শেয়াল। তার মানে এটা কালরাতে হাড়টা ধরে টানাটানি করছিল আর আমরা ভেবেছিলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। ঘোড়সওয়াররা লক্ষ্য স্থির করে তীর ধনুকের সাহায্যে মারল শেয়ালটাকে ।
এবার শুরু করলো চামড়াটা ছাড়িয়ে নেওয়া। একপাশের চামড়া ছাড়ানোর পর অন্য পাশটার চামড়া ছাড়ানোর জন্য শেয়ালটাকে উলাটানো দরকার । কিন্তু চল্লিশ ঘোড়সওয়ারের শক্তিতে কুলালো না সেটা   ।
অগত্যা ওরা আধখানা চামড়া নিয়েই ফিরে এলো তাঁবুর কাছে। দলের বয়স্কদের জানালো কথাটা। বয়স্করা ভাবতে থাকলো কি করা যায় । এমন সময় সেখানে এলো এক তরুণী । বললো, ‘ওই ঘোড়সওয়াররা যে চামড়াটা এনেছে আমাকে দিলে ভালো হয় । আমি আমার সদ্যোজাত সন্তানের মাথার টুপি বানাবো ওটা দিয়ে।’
বয়স্করা বেশী না ভেবে দিয়ে দিলেন ।
চামড়াটা দিয়ে তরুণীটি বানাতে শুরু করলো সন্তানের জন্য টুপি । কিন্তু দেখা গেলো ওতে তার সন্তানের মাথার আধখানাই ঢাকছে মাত্র। তরুণীটি আবার গেল বয়স্কদের কাছে । বললো , ‘ বাকি আধখানা চামড়া না পেলে  টুপিটা পুরো বানানো হবে না ।’
বয়স্করা জানালো, চল্লিশ ঘোড়সওয়ার পারেনি শেয়ালটাকে উলটে বাকি চামড়া ছাড়াতে । ‘তুমিই কিছু উপায় করো বেটী । তুমি বরং নিজেই চলে যাও ওটাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ।’
এসব শুনে তরুণীটি কি আর করে নিজেই গেল সেই জায়গায় যেখানে শেয়ালটা মরে পড়ে ছিল। অতি সহজেই ওটাকে উলটে বাকি চামড়াটা ছাড়িয়ে নিলো । তারপর বানিয়ে ফেললো নিজের সন্তানের জন্য টুপিটা।
এবার সুধী পাঠক পাঠিকাবৃন্দ আপনাদের জন্য একটা প্রশ্ন। কাকে সবচেয়ে বড় মাপের বলে আপনাদের মনে হয় বলুন দেখি –
ষাঁড়টাকে?
মনে আছে নিশ্চয় ঘোড়া দাবড়িয়ে ষাঁড়টার লেজ থেকে মাথার কাছে পৌছাতে ঘোড়সওয়ারের লেগেছিল পুরো একটা দিন!
ঈগলটাকে?
ভুলে গেলে চলবে না অতবড় ষাঁড়টাকে থাবায় ধরে উড়ে গিয়েছিল।
তাহলে কি সেই ছাগলটা?
ওর শিঙে বসেই ষাঁড়টাকে খেয়েছিলো ঈগলটা।
আচ্ছা ছাগল মালিকই কি সবচেয়ে বড়?
মনে আছে বোধ হয় ওর চোখে চল্লিশ জন চিকিৎসক চল্লিশটা নৌকা নিয়ে নেমে পড়েছিল।
শেয়ালটা ও ছোটো নয় মোটেই ।
কেবলমাত্র হাড়টা টানাটানি করতেই মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে।
সদ্যোজাত শিশুটাই বা কম কিসে!
ভাবুন একবার ওই শেয়ালটার গোটা চামড়াটা লেগে গেল ওর মাথার টুপিটা বানাতে।
নাকি ওর মা, সেই তরুণীটি ? যার পেট থেকে জন্মেছে ওরকম একটা দৈত্যাকার বাচ্চা ।

ভালো করে ভাবুন তাহলেই উত্তর পেয়ে যাবেন।

আজ কঙ্গোর একটি উপকথা
হাও দ্য ওয়াইভস রিস্টোরড দেয়ার হাসব্যান্ড টু লাইফ
গল্প সূত্র রিচারড এডওয়ার্ড ডেন্নেট এর “নোটস অন দ্য ফোকলোর অফ দ্য ফোরট”

আমার বঙ্গানুবাদ “নেনপেট্রোর তিন বউ”

একদা একজন মানুষ ছিল যার নাম নেনপেট্রো। তিনটে বউ ছিল তার । নোজান্তু[স্বপ্নদরশী], সং গান জিলা[পথপ্রদর্শক] এবং ফুল্লা ফুল্লা [মৃতদেহে প্রানদানকারিনী]।
নেনপেট্রো ছিল ভালো শিকারী। একদিন একটা আণ্টিলোপ হরিন মেরে এনে তিন বউকে দিলো। ওরা ওটা খেয়ে দেয়ে জানালো ক্ষিধে মিটলো না । নেনপেট্রো আবার শিকারে গেল এবং একটা বাঁদর মেরে নিয়ে এলো। তিন বউ খেয়ে ফেললো ওটাকেও। কিন্তু ক্ষিধে তাতেও নাকি মিটলো না ওদের । সেটা শুনে নেনপেট্রো বললো, ‘বুঝতেই পারছি একটা ষাঁড় না মারতে পারলে তোমাদের পেট ভরবে না । চলে গেল একটা ষাঁড় শিকার করার জন্য। এদিক ওদিক অনেক খুঁজে দেখতে পেল এক জায়গায় গোটা কয়েক ষাঁড় ঘাস খাচ্ছে দেখতে পেলো। লক্ষ্য স্থির করে একটা ষাঁড়কে নেনপেট্রো তীর মারলো । কিন্তু দ্বিতীয় তীরটা ছোঁড়ার আগেই আর একটা ষাঁড় ধেয়ে এসে এমন এক গুঁতো মারল যে নেনপেট্রো মারা গেল।
ওদিকে ওর তিন বউ কিছুই জানতে পারল না। ওদের ক্ষিধে বেড়েই চলেছে। ওরা এদিক ওদিকে চিৎকার করে ডেকে ডেকে নেনপেট্রোকে খুঁজে বেড়ালো । কিন্তু কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।
নোজান্তু স্বপ্ন দেখে জানতে পারলো ষাঁড় শিকার করতে গিয়ে নেনপেট্রো মারা গেছে। সাথে সাথে এটাও জানতে পারল তার আগে একটা ষাঁড়কে মারতেও পেরেছিলো তার স্বামী।
সং গান জিলা বললো, ‘চলো তাহলে, আমি তোমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবো।’
ওরা হাঁটতে হাঁটতে পাহাড় উপত্যকা পেরিয়ে অনেক জঙ্গল আর নদী পার হয়ে যখন স্বামীর মৃত দেহের কাছে পৌছালো তখন রাত ঘনিয়ে এসেছে। এবার ফুল্লা ফুল্লা গেল জঙ্গলে। খুঁজে বার করলো সেই সমস্ত জড়ি বুটি লতা পাতা যা মৃতদেহে প্রান ফিরিয়ে দিতে পারে। ফিরে এসে সেগুলো প্রয়োগ করে ও ফিরিয়েও আনলো নেনপেট্রোর প্রান।
এর পরেই লেগে গেল ঝগড়া স্বামীর ওপর কার অধিকার স্থাপন হবে এই প্রশ্নে।
নোজান্তু বললো, ‘আমার অধিকার বেশী কারন আমি ওকে স্বপ্নে দেখেছি ও জানতে পেয়েছি ও মারা গেছে।’
‘কিন্তু আমি তো পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছি । না হলে ওকে কি করে খুঁজে পেতিস তোরা?’ বললো সং গান জিলা।
‘ভুলে যেওনা আমিই ওকে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি,’ বললো ফুল্লা ফুল্লা।
অবশেষে ওরা ঠিক করলো ওরা তিনজন খাবার প্রস্তুত করবে। যার খাবার নেনপেট্রো খাবে আজ থেকে তার অধিকার বেশি হবে।
প্রথম দুই বউ দুটো পাখি শিকার করে রান্না করে আগে নিজেরা খেলো তারপর বাকিটা সাজিয়ে দিলো নেনপেট্রোর সামনে। তৃতীয় বউ একটা শুকর মেরে রান্না করে নিজে না খেয়ে এগিয়ে ধরলো স্বামীর দিকে।
নেনপেট্রো শুকরের মাংসটাই তুলে নিলো খাবার জন্য বল লো , ‘নোজান্তু তুমি স্বপ্ন দেখে আমার কথা জানতে পেরেছো । কেন খুঁজলে আমায়? কারন আমি না হলে তোমার খাবার জুটবে না। এখন  আমাকে খেতে দেওয়ার আগে নিজের ক্ষিধে সম্বরণ করতেও পারলে না।
‘সং গান জিলা তুমিও আমাকে খূঁজে বার করতে সাহায্য করলে কারন তোমারও খাবার দরকার। আর সেটা পেলে আগে যে তুমিই খাবে তার প্রমানও দিলে।
‘ফুল্লা ফুল্লাও আমাকে বাঁচিয়েছে  সেই খাবারের জন্যই। কিন্তু নিজে খাওয়ার আগে আমাকে খাইয়েছে । তাই ওর খাবার আমি নিলাম। আর আজ থেকে ওর অধিকারই সব্বার আগে।’
আমার গল্প ফুরালো , নটে গাছটি মুড়ালো।

বিদেশী উপকথা ও কাহিনীর পঞ্চম গল্প জার্মানির। 
লেখক বিখ্যাত গ্রিম ব্রাদার্স।

“দ্য ব্রেমেন টাউন-মিঊজিশিয়ান”

আমার বঙ্গানুবাদ
ওরা চারজন

একদা একজন মানুষের একটি গাধা ছিল। যেটাকে তার মালিক ব্যবহার করতো ভুট্টার ডানা কারখানায় বয়ে  নিয়ে যাওয়ার জন্য। অনেক অনেক বছর কাজ করতে করতে গাধাটার দেহের শক্তি যাচ্ছিল কমে। আর আগের মতো ভার ব হনের ক্ষমতা তার আর ছিল না। এমতাবস্থায় গাধার মালিক ভাবছিল গাধাটাকে কসাই খানায় বেচে দিয়ে কিছু মুনাফা কামিয়ে নেবে। হাওয়া মটেই সুবিধের নয় এটা বুঝতে পেরে গাধা টা পালালো একদিন। সোজা পাড়ি দিলো ব্রেমেন শ হ রের উদ্দেশ্যে। গাধাটা ভাব লো , ‘ওখানে গেলে আমি নিশ্চিত ভাবে ওই শ হর টার প্রধান গায়কের চাকরীটা পেয়ে যাবো।’
কিছুটা পথ যাওয়ার পর অ দেখতে পেলো একটা হাউন্ড কুকুর রাস্তার ধারে শুয়ে আছে এবং খুবই হাঁফাচ্ছে। ‘আরে বড় ভাই তোমার কি হয়েছে? এতো হাঁফাচ্ছো কেন?’ জানতে চাইলো গাধাটা।
হাউন্ড উত্তর দিলো, ‘আর কি বলি ভাই। বয়স হয়েছে। দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছি। শিকারে সাহায্য করতেও পারিনা। আমার মালিক আমায় মেরে ফেলবে বলে ঠিক করেছে। তাই ঘর ছেড়ে পালিয়েছি। তারপ র থেকে পেটে দানা পানি কিছু পড়েনি। বুঝতেই পারছো।’
গাধাটা ব ল লো, ‘বেশ তাহলে আমি যা বলি মন দিয়ে শোনো। আমি যাচ্ছি ব্রেমেন শহরে । প্রধান গায়ক হওয়ার জন্য । তুমিও আমার সাথে চলো। আমি তোমাকে আমার দলের ড্রাম বাদক করে নেবো।’
হাউন্ড রাজি হয়ে গেল। চল ল দুজনে ব্রেমেন শহরের উদ্দেশ্যে।
কিছুদূর যেতে না যেতেই রাস্তার ধারে বসে থাকা গোমড়া মুখে  একটা বিড়াল কে দেখতে পেলো ওরা । গাধাটা জানতে চাইলো, ‘আরে মাসি তোমার আবার কি  হ লো?’
‘আরে বোনপো কি আর বলি ব লো। ঘাড়ের ওপর মাথাটা থাকবে কিনা এই চিন্তা আসলে কি আর কেঊ হাসি মুখে থাকে পারে?’ উত্তর দিল বিড়ালটা। ‘বয়স ত কম হ ল না। দাঁত আর ঙ্খের জোর সেরকম নেই। আমি কি আর আগের মতো লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে ইঁদুর ধরতে পারি ব লো? আমার মালকিন সেটা বুঝছেন না। আমায় বস্তায় ঢুকিয়ে জলে ফেলে দেবার আলোচনা হচ্ছিল কাল রাতে। সেটা শুনেই ভেগেছি ঘর থেকে। কিন্তু এখন কটাহয় যে যাই?’
‘আমাদের সাথে ব্রেমেন শহরে চলো। যত দূর জানি তুমি গান বাজনা ভালই বোঝো। আমাদের দলে তোমার একটা জায়গা পাকা। ও হ্যাঁ বলাই অ হয়নি আমরা যাচ্ছি ওখান কার প্রধান গায়কের পদটা নেওয়ার জন্য।’
বিড়ালটা একটু ভাব ল তারপর ভিড়ে গেল ওদের সাথে। তিন ঘর ছাড়া প্রান এবার এসে পৌছালো একটা খামার বাড়ীর কাছে। বাড়ীটার গেটের ওপর বসে ছিল একটা মোরগ। আর মাঝে মাঝেই খানিক টা গোঙানির মতো সুরে কোঁকর কো করে ডাক পাড়ছিল।
গাধাটা জানতে চাইলো, ‘আরে এখন ত অনেক টা সকাল হয়ে গেছে তাহলে শুধু মুধু চিৎকার করে চলেছ কেন হে?’
অতি ভার ভার গলায় মোরগটা জানালো, ‘আজ কত বছর ধরে আমি এই বাড়ীর সাথে আছি। প্রতিটা সূর্যোদয়ের খবর য়ামি  এদের কে জানিয়েছি সবার আগে। অথচ আজ কিনা তারাই  আমাকে কেটে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারন ওদের কোন এক আত্মীয় এই প্রথম ওদের বাড়ীতে আসছে। সেই দুখের কথাই আমি বলার চেষ্টা করে চলেছি গো।’
‘এ বাবা! সে কি গো? এরা ত ভালো মানুষ নয় মোটেই। শোনো তুমি এক কাজ করো। তুমি আমাদের দলে চলে এসো। আমার ব্রেমেন শহরে যাচ্ছি গায়কের চাকরী করার জন্য। তোমার গলা বেশ ভালো ই। আমরা সবাই মিলে যেটা করবো সেটা শ হ র বাসীদের ভালো লাগবেই। শুধু শুধু মরে যাওয়ার চেয়ে পালানো অনেক ভালো।’
অতএব মোরগটা ও জুটে গেল ওদের দলে। ওরা চারজন চল লো এগিয়ে। একদিনেই অবশ্য ওরা ব্রেমেন শ হরে পৌছাতে পার লো না। রাত ঘ নানোর একটু আগে ওরা এসে পৌছালো একটা জঙ্গলের সীমানায়। রাতটা জঙ্গলেই কাটাতে হবে। অতএব ওরা একটা বড় গাছ বেছে নিলো। যার তলায় শুয়ে পড়লো হাউন্ড আর গাধাটা। বিড়ালটা উঠে গেল ওপরের একটা ডালে। আর মোরগটা চড়ে বসলো মগডালে। রাত আর খানিকটা বাড়তেই মোরগটার চোখে পড়লো কিছূটা দূরে একটা আলোর মতো কিছু জ্বলছে । এটা ও জানাল বাকি তিন জন কে। সাথে এটাও বল লো, ‘যে আমার মনে হচ্ছে ওখানে একটা বাড়ি আছে।’
গাধাটা সেটা শুনে বল ল, ‘তাই যদি হয় তাহলে আমাদের ওখানেই যাওয়া ভালো। রাতে থাক্র পক্ষে এ জায়গাটা মোটেই সুরক্ষিত নয়।’ হাউন্ডটা মনে মনে ভেবে নিলো আহা ওখানে গেলে দুএক টুকরো মাংসের হাড় ঠিক জূটে যাবে।
অতএব ওরা এগিয়ে গেলো আলো ল ক্ষ্য করে। এগনাওর সাথে সাথেই আলোটা বড় হতে থাকলো, বাড় লো উজ্জ্বলতা। চুপি চুপি বলে রাখি ওটা আসলে একটা ডাকাতদের আস্তানা। গাধা টা লম্বায় সবচেয়ে বড় তাই ওই এগিয়ে গিয়ে জানলা দিয়ে উঁকি মারলো ঘরের ভেতরে।
মোরগ জানতে চাইলো, ‘কি গো কি দেখতে পাচ্ছো?’ গাধা উত্তর দিলো, ‘কি দেখতে পাছি শোনো তাহলে। একটা টেবিলে থরে থরে সাজানো নানা রকাম খাবার দাবার। আর যারা খাচ্ছে তাদের দেখে মোটেই ভালো মানুষ বলে মনে হচ্ছে না।’ মোরগটা ব ল লো, ‘আহা আহা দেখে কি আর মানুষ বোঝা যায়। ওই সব খাবেরে কিছু টাও যদি আমরা পেতাম। বা ধ রো আমরা যদি ওই ঘরে ঢু কতে পেতাম।’
চার জন মিলে এবার আলোচনা শুরু করলো কি করে ওদের ঘর থেকে ভাগানো যায়। অবশেষে একটা বুদ্ধি এল ওদের মাথায়। গাধাটা সামনের দুপা জানলায় তুলে দিয়ে দাঁড়ালো। ওর পিঠে চেপে বসলো হাউন্ড। হাউন্ডের কাঁধে চাপলো বিড়াল টা। আর বিড়ালের মাথায় উঠে বসলো মোরগ।
এবার একসাথে ওরা চারজনে শুরু করলো গান গাওয়া। গাধা চ্যাঁচালো হেঁড়ে গলায়। কুকুর দাক্ল ঘেউ ঘেউ। বিড়াল ধর লো কান্নার তান আর মোরগ চিরন্তন কোঁকর কোঁ। সাথে সাথে ওদের চাপে ভেঙে গেল জানলাটা। ওরা হুড় মুড় করে ঢুকে গেল ঘরটার ভেতর । কাঁচ ভেঙ্গে ছড়িয়ে গেলো গোটা ঘরে। আর এই অকস্মাৎ হুটো পাটী ও বিকট শব্দ তানে চমকে গেল ডাকাতেরা । ভুত পেত্নীরা আক্রমণ করেছে ভেবে ওরা দরজা খুলে বাবারে মারে বলে সব পালালো জঙ্গলে। চারজন এবার গব গবিয়ে খেলো টেবিলের ওপরে থাকা খাবার দাবার। কি করবে বলো। কত দিন ওদের মালিকরা ওদের ঠিক ঠাক খেতেই দেয়নি।
খাওয়া দাওয়া শেষে আলো নিভিয়ে চারজন বেছে নিলো নিজের নিজের প্রকৃতি অনুসারে শোয়ার জায়গা। গাধা বাইরে খারের গাদায়। হাউন্ড শুলো দরজার পেছনে। বিড়াল গেল ছাইগাদায় আর মোরগ উঠে পড়ল বারান্দার কড়িকাঠে। সারা দিনের হাঁটার ক্লান্তিতে ওরা ঘুমিয়ে পড়লো খুব তাড়াতাড়ি।
মাঝ রাত হওয়ার পর ফিরে এসে ডাকাতেরা দেখলো ওদের বাড়ীতে আলো আর জ্বলছে না। সব শান্ত । সর্দার বল লো, ‘শোনো, আমাদের কিন্তু একদম ভয় পাওয়া উচিত না। আমরা কিসের ডাকাত তাহলে।’  এক সঙ্গীকে ইশারা করলো, ‘এই যে তুমি যাও ওখানে,   দেখে এসো   হাল হকিকত।’
সঙ্গীটা আসতে আসতে বাড়িতে ঢুকে আগে গেল রান্নাঘরে। মোমবাতি খুঁজে নিয়ে জ্বালানোর জন্য। দেখতে পেল ছাইগাদায় তখনো আগুন চিক চিক করছে। আসলে ওটা ছিল বিড়ালটার চোখ। শব্দ পেয়েই তাকিয়ে দেখছিলো কি হচ্ছে। হাত বাড়িয়ে ডাকাতটা যেই আগুন নিতে গেছে আর বিড়ালটা দিলো ফ্যাঁসস শব্দ করে এক আঁচড়। ভয়ের চোটে ডাকাত বাবাজী মারল ছুট। ওদিকে দরজার কাছেই ছিল হাউন্ডটা। সুযোগ বুঝে ঘ্যাঁক করে দিল কামড়ে। ভয়ের ঠেলায় পালাতে গিয়ে লোকটা পড়লো গিয়ে খড়ের গাদায়। গাধাটাই বা ছাড়ে কেন, মারলো সজোরে এক লাথি। ওদিকে এই সব হট্টগোলের শব্দে ঘুম ভেঙে মোরগটা নেমে এসে মোক্ষম এক ঠোকর মারলো ডাকাত টার কপালে।
পড়িমড়ি করে পালিয়ে আহত ক্ষতবিক্ষত ডাকাত সঙ্গী পৌছালো দলের কাছে। বল ল, ‘অরে বাবারে! আমার কি দশা ক রলো রে!!’ সর্দার জানতে চাইলো,  ‘কি হ লো?’ ‘ওর বাবা গো, ওখানে  অনেক কটা বিকট ডাইনী রাক্ষসী জটাবুড়ি ঢুকে বসে আছে। কি অবস্থা করেছে দ্যাখো দিকি একবার। একজন লম্বা লম্বা নখে আমায় আঁচড়েছে, আর একজন বড় চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছে আমার পায়ে , আর একজন উড়তে উড়তে শিকের খোঁচা মেরে  কপাল ফুটো করে দিয়েছে। আর সব শেষে বাইরে পাহারায় থাকা রাক্ষসটা  তার   মুগুরের ঘা মেরেছে আমার পিঠে। ওখানে আমি আর যাবো না! ’
এই সব শুনে ডাকাতের দল পালালো এলাকা ছেড়ে। কে বাবা নিজের প্রান দেবে খামোখাই।

ব্রেমেন শহরে চার বন্ধু এর পর কবে গেল সে আরেক গল্প। আপাতত এ গল্পের নটে গাছটি এখানেই মুড়ালো।