#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৯৬-৯৭-৯৮-৯৯-১০০-১০১-১০২ )
নবম অধ্যায় - চতুর্থ অভিযান
জিউসের স্ট্যাচু এবং আরটেমিসের মন্দির [২য় ভাগ]
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০
নবম অধ্যায় - চতুর্থ অভিযান
জিউসের স্ট্যাচু এবং আরটেমিসের মন্দির [২য় ভাগ]
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০
সেন্ট পিটারস
ব্যাসিলিকা
ভ্যাটিক্যান
সিটি, রোম
১৮ই মার্চ,
২০০৬, দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট
টারটারাসের
আগমনের দু দিন আগে
০০০
একই সময়ে ,
২০০০ কিলোমিটার দূরে রোমে, একজন লম্বা দাড়িওয়ালা মানুষ ক্যাথলিক যাজকের সম্পূর্ণ
কালো পোশাক পরিহিত অবস্থায় সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকার সামনের চওড়া চত্বরটা দিয়ে
হেঁটে যাচ্ছিলো। সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকা যার ক্যাথিড্রালের গম্বুজের নকসা
করেছিলেন মাইকেল অ্যাঞ্জেলো। রোমান ক্যাথলিক চার্চের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পবিত্রতম
স্থান।
লম্বা ধূসর
দাড়ি আর থপ থপ করে হেঁতে যাওয়ার ভঙ্গীতে, ম্যাক্স এপ্পারকে ভালোই মানিয়েছে একজন
বয়স্ক প্রাজ্ঞ যাজকের ভুমিকায় । পূর্বদিকের এক প্রাচীনপন্থী যাজক হিসাবে যে
ভ্যাটিক্যান দর্শনে এসেছে।
ওর সাথে সাথেই
হাঁটছিল জো আর ফাজি । চত্বরটায় এখন শত শত পর্যটকের ভিড় । জো তাকালো চত্বরের
একেবারে মাঝখানে গৌরবের সাথে দন্ডায়মান পাথরের ওবেলিস্কটার দিকে ।
‘আমুন-রা এর
ধর্ম বিশ্বাস,’ উইজার্ড বললেন , ওবেলিস্ক টার পাশ দিয়ে যেতে যেতে।
জো ঘুরে
তাকিয়ে আর একবার দেখলো ইজিপশিয়ান শিল্পকর্মটাকে, যে দাঁড়িয়ে আছে গর্বের সাথে
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাথলিক চার্চের সামনে।
দুকাঁধ উঁচিয়ে
বললো ‘আমুন-রা এর ধর্ম...’
ওরা
ব্যাসিলিকার ভেতরে ঢুকলো।
এর বিশালত্বের
সাথে খুব কমই মানব নির্মিত স্থাপত্য পাল্লা দিতে পারে। আকারে একটা বিরাট ক্রুশের
মতো – একেবারে প্যারিসের মধ্যাঞ্চলের মতো – এর বিখ্যাত গম্বুজ অবস্থান করছে এক
শ্বেতপাথর নির্মিত মেঝের ৩০০ ফুট ওপরে । দারুনভাবে সূর্যের আলো নেমে আসছে
অস্বাভাবিক উচ্চতায় থাকা জানলা গুলো দিয়ে । যেন স্বয়ং ঈশ্বর তার জ্যোতি পাঠাচ্ছেন।
মাইকেল
অ্যাঞ্জোলোর “পিয়েতা” প্রধান প্রবেশ পথের একপাশে রাখা আছে । অতিকায় সব সেইন্টদের
মূর্তি পর পর সাজানো আছে - সেন্ট
ইগ্নেসিয়াস। সেন্ট ফ্রান্সিস অফ আসসিসি – ওরা তাকিয়ে আছেন বিশ্বাসীদের দিকে।
এর নকশাই করা
হয়েছিল সম্ভ্রম উদ্রেক করার জন্য।
তবে এই অতিকায়
ক্যাথিড্রালের সবচেয়ে চমকপ্রদ স্থান হলো এর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান, ক্রূশের দুই
বাহু যেখানে মিলিত হয়েছে বা সংযোগ স্থল।
এখানেই আছে
সেন্ট পিটারের বেদী বা অল্টার । রাখা আছে লোহা ও সোনার নির্মিত চাঁদোয়ার তলায় ।
যাকে ধারন করে আছে চারটে বিশাল মাপের স্তম্ভ
। প্রতিটা স্তম্ভের গায়ে দেবদূতেরা বাইরের দিকে মুখ করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রনতি
জানিয়ে ট্রাম্পেট বাজাচ্ছে।
আর তার তলাতেই
শোয়ানো আছে বেদিটা ।
ওটার দিকে
তাকিয়ে ফাজি বললো, ‘দেখতে তো একেবারেই সাধারন একটা জিনিষ।’
একদম ঠিক
বলেছে ফাজি। সেন্ট পিটারের বেদী সত্যিই আশ্চর্যজনক ভাবে অতি সাধারন একটা শ্বেত পাথরের
আয়তাক্ষেত্রাকার টুকরো যা রাখা আছে একটা
প্ল্যাটফর্মের ওপর । এই মুহূর্তে, যেহেতু ওটা ব্যবহার করা হয় না, ওটাকে ঢেকে রাখা আছে
সাধারন লাল-সাদা এবং সোনালী রঙের একটা
কাপড় দিয়ে । চারপাশে জ্বলছে কিছু মোমবাতি । মোটা একটা দড়ি পেতলের বেশ কিছু থামে
বেঁধে ওটার কাছে যাওয়া থেকে দর্শনার্থীদের বিরত রাখা হয়েছে।
‘হ্যাঁ,’
উইজার্ড বললেন । ‘ গুরুত্বের দিক থেকে না ভাবলে , ওটা সত্যিই খুব সাধারন ।’
‘ জাঈদ যদি
আমাদের সত্যি কথাটা বলে থাকে তবেই ওটা গুরুত্বপূরন ,’ জো বললো।
দুটো দল আলাদা
আলাদা মিশনে যাওয়ার আগে , জাঈদ বলেছিল গোল্ডেন ক্যাপস্টোন আরটেমিসের টুকরোটা সেন্ট
পিটারস ব্যাসিলিকায় বেদির ভেতর রাখা আছে। ট্রাপেজয়েড টুকরোটা, ওর মতানুসারে উল্টো
করে ওই শ্বেত পাথরের বেদীর সাথে রাখা আছে – এর ফলে ওটার ভিত্তিটা সামনের দিক থেকে
বেদীর সাথে সমানভাবে মিলে আছে । ভালো করে না দেখলে ওটাকে একটা সোনার চওড়া টুকরো
বলেই শুধু মনে হবে। একটা চারকোনা সোনার পাত যার মাঝখানে একটা ক্রিস্টালের টুকরো
লাগানো আছে।
ভালো করে
দেখলে অবশ্য ওটার মানেটাই বদলে যাবে।
উইজার্ড বেদিটার
দিকে তাকালেন। ‘মনে হয় খুব কম কার্ডিনালই সুযোগ পেয়েছেন ঢাকনাবিহীন অবস্থায় এই
বেদীকে দেখার । খুব কম মানুষই জানে সোনার ট্রাপেজয়েড এখানে লুকানো আছে। আর যারা
জানে তারা অত্যন্ত বয়স্ক এবং এই চার্চের প্রকৃত ইতিহাস বিষয়ে ওয়াকিবহাল ।’
‘বুঝলাম,
কিন্তু এখন আমরা কি করবো ?’ জো জানতে চাইলো। ‘একটা শাবল বার করে উপস্থিত
দর্শনার্থীদের সামনে থেকে ওটাকে খুলে বার করে নিতে তো পারবো না।’
‘আমি শুধু
মাত্র ওটা দেখতে চাই ,’ উইজার্ড জানালেন। ‘সুযোগ পেলে আমি ওটার মন্ত্র মুখস্ত করে
নিতে চাই ।’
ওদের চারদিকে পর্যটকদের
ভিড় । সাথেই আছে উর্দিধারী সুইস প্রহরী – এছাড়াও উইজার্ডের ধারনা মতো অনেক সাধারন
পোশাকের প্রহরী । যারা অপেক্ষাতেই আছে কেউ বেদীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেই তাকে
ধরে ফেলার জন্য।
যে কোন কাউকে
... হয়তো ... অতি বয়স্ক প্রাচীনপন্থী যাজককে বাদ দেবে ।
‘অযাচিত হস্তক্ষেপ
হতেই পারে ,’ কথাটা বলেই উইজার্ড বললো, ‘আমি চললাম ওটা দেখতে।’
দ্রুত গতিতে
একে ওকে ঠেলে উইজার্ড এগিয়ে গেলেন বেদীর দিকে। পৌঁছে গেলেন দড়িটার কাছে । সবাইকে
অবাক করে দিয়ে ।
তারপর
হতভম্বিত কেঊ ওকে থামানোর আগেই উইজার্ড দড়ি টপকে শুরু করে দিলেন ধাপ বেয়ে উঠতে ...
... গিয়ে
দাঁড়ালেন সেন্ট পিটারের বেদীর একেবারে সামনে । শুরু করে দিলেন হাতড়ানো সেই বিরাট
আয়তাক্ষেত্রাকার পাথরটার গায়ে ।যেন ওটা বিশেষ কোনও পবিত্র কিছু দিয়ে বানানো।
সাধারন
পোশাকের সুইস প্রহরীর দল জনগনের ভেতর থেকে আবির্ভূত হলো সঙ্গে সঙ্গেই । ঘিরে
দাঁড়ালো বেদীর চারপাশে ।
ব্যাসিলিকার
একেবারে মধ্যস্থলে স্থিত বিরাট পাথরটার সামনে দাঁড়িয়ে, উইজার্ড ওপরে ঢাকা দেওয়া
কাপড়টা তুলে ধরে তাকালেন।
যা দেখলেন তা
চমকে দেওয়ার মতোই।
বেদীটা দামী
শ্বেতপাথরে বানানো, শুধু মাত্র মাঝ খানটা ... উইজার্ড দেখতে পেলেন, সমতল
শ্বেতপাথরের মাঝে একটা চারকোণা অংশ সোনার
।
আকারে মাঝারি
মাপের । এক একটা দিক তিন ফুট করে হবে । আগে থেকে জানা না থাকলে কারো পক্ষে বলা
সম্ভবই না যে এটা গোল্ডেন ট্রাপেজয়েডের অংশ। কারন
কেবলমাত্র ভিত্তির দিকটাই দেখা যাচ্ছে।
আর ওর মাঝখানে বসানো আছে একটা হীরের মতো ছোট্ট ক্রীস্টাল ।
আরটেমিসের
টুকরো ।
উইজার্ড দেখতে
পেলেন ট্রাপেজয়েডের গায়ে লেখা আছে মন্ত্র –
[ছবি]
ওনার বড় বড়
চোখ দুটো ক্যামেরার লেন্সের মতো বার কয়েক বড় হয়ে উঠলো । চেষ্টা করছিলেন এই অতি
অল্প সময়ের ভেতরে ওটাকে মুখস্ত করে নেওয়ার –
‘মাফ করবেন
ফাদার, আপনি এখানে উঠে আসতে পারেন না।’ উইজার্ডকে টেনে নামিয়ে নিয়ে এলো দুজন সুইস
প্রহরী বেদীর সামনে থেকে।
টেনে আনছিল
সম্মানের সাথেই কিন্তু তার সাথে মিশে ছিল কাঠিন্য ।
একই সময়ে আর
একজন প্রহরী সরে যাওয়া কাপড়টাকে টেনে ঠিক করে দিলো বেদীর ওপর । আবার ঢাকা পড়ে গেল
গোল্ডেন ট্রাপেজয়েড । না বুঝেই অবশ্য কাজটা
করলো প্রহরীটা । কোনও ধারনাই নেই যে একটা বিরাট মাপের রহস্য উন্মোচিত হয়ে গিয়েছিল
কিছু সময়ের জন্য ।
‘আ-আ-আমি
খু-খুব দুঃখিত ,’ উইজার্ড তোতলাতে থাকলেন, কোন রকম প্রতিরোধ দেখানোর চেষ্টা না করে
ওদের তালে তাল মিলিয়ে । ‘ আমি শুধু আমার ঈশ্বরের ক্ষমতা... তার উদ্ভাস ...’
প্রহরীদের
যিনি নেতা তিনি ভালো করে তাকালেন উইজারডের দিকে।
এপ্পারের ক্ষমাতুর চোখের দৃষ্টি, দীর্ঘদিনের দাড়ি, জীর্ণ পোশাক দেখে অনেকটাই
শান্ত হলেন । ‘ঠিক আছে , ওল্ডম্যান। যত তাড়াতাড়ি পারেন এখান থেকে চলে যান । এরপর কোনোদিন এলে দয়া করে দড়ি টপকানোর দ্বিতীয়বার চেষ্টা
করবেন না ।’
‘অ-অনেক
ধন্যবাদ, মাই সন।’
প্রহরীদ্বয়
উইজার্ডকে নিয়ে চললো প্রধান দরজার দিকে ।
হাঁটতে
হাঁটতেই, উইজার্ড বিরাট কিছু পাওয়ার
মানসিক আনন্দে রোমাঞ্চিত হচ্ছিলেন। আরটেমিসের টুকরোটার মন্ত্র তার মাথায়
গেঁথে বসে নিয়েছেন – ওই টুকরোটা না পেলেও এর মূল্য মোটেও কম নয়। আর
কিছু সময় বাদেই উনি, জো আর ফাজি রমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ইন্টার ন্যাশন্যাল এয়ার
পোর্ট থেকে বিমানে চেপে ফিরে যাবেন বাড়ীর পথে ।
প্রহরীদের
বন্ধনের মধ্যে থেকেও ওনার ঠোঁটে জন্ম নিলো এক হাসি যা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে গেলো গোটা
মুখে ।
০০০০০
ঠিক একই সময়ে
, ভ্যাটিকানের কোনো এক অন্ধকার ঘরে একজন মানুষ ছোট্ট সিকিউরিটি মনিটর স্ক্রিনে
দেখছে উইজার্ডের গতিবিধি।
ফ্রান্সিস কো
ডেল পিয়েরো ।
‘আমি জানতাম
তুমি আসবেই, ম্যাক্স,’ ডেল পিয়েরো বিড়বিড় করে বল লো । ‘আর সেজন্যই আমি বেদি থেকে
টুকরোটাকে সরিয়ে নিই নি । আমি জানতাম এটাই একমাত্র পারবে তোমাকে খুঁজে বার করতে।’
ডেল পিয়েরো
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যাটিক্যান সিকিউরিটি চীফের দিকে ঘুরলো । ‘ওরা এয়ারপোর্টের
দিকে যাবে। অনুসরণ করো ওদের , তবে ধরার দরকার নেই। ওদের রেডিও ট্রান্সমিশন সংকেত
এর দিকে নজর রাখো । ওই বুড়ো সেন্ট পিটারস থেকে বের হয়েই দলীয় সদস্যদের উদ্দেশ্যে
কিছু একটা সংকেত দেবেই এটা জানানোর জন্য যে মিশন সাকসেসফুল। খবরটা পাঠানো হয়ে
গেলেই ওকে এবং ওর সাথে যারা আছে তাদেরকে ধরবে এয়ারপোর্টে এবং সোজা আমার কাছ নিয়ে
আসবে।’
কয়েক মিনিট
বাদে , রোমের রাস্তায় একটা ভাড়া গাড়ীতে চেপে এয়ারপোর্টের দিকে যেতে যেতে উইজার্ড
কেনিয়ায় ডরিসকে একটা সাংকেতিক মেসেজ পাঠালো।
যাতে লেখা ছিল
–
মিশন অ্যাকমপ্লিজড।
আমরা ফিরছি।
উইজার্ড
এয়ার পোর্টে
পৌছালো গাড়িটা এগিয়ে গেল পারকিং লট এর দিকে – সাথে সাথেই বেজে উঠলো সাইরেন এবং
অনেকগুলো পুলিসের গাড়ী চারদিক থেকে এগিয়ে এলো , ঘিরে ধরলো উইজার্ড এর গাড়িটাকে।
উইজার্ড, জো
আর ফাজির কিচ্ছু করার নেই।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
ভিক্টোরিয়া
ষ্টেশন
১৮ই মার্চ
২০০৬, রাত ৯টা বেজে ৪৫ মিনিট
টারটারাসের
আগমনের ২ দিন আগে
০০০
কেনিয়ার
ফার্মে বেস মেনট রেডিওরুম থেকে ডরিস এপ্পার মাইকে বললেন– ‘ হান্টসম্যান, ভালো খবর
আছে। উইজার্ড ফিরে আসছে । একটু আগে আমাকে টেক্সট মেসেজ করেছিলো । রোমের মিশন
সাকসেসফুল হয়েছে । কাল সকালের ভেতরেই চলে আসবে । ঘণ্টা দুয়েকের ভেতরেই তোমার সাথে
দেখা হচ্ছে ।’
মানসিক উচ্ছাসের
তরঙ্গে
ভাসতে ভাসতে ডরিস চললেন কিচেনের দিকে। দারুন একটা স্বস্তি পাওয়া গেল । যাক সবাই
ঠিকঠাক আছে । দুটো মিশনই সফল হয়েছে । এখন ভালো কিছু রান্না করতে হবে যাতে ওরা ফিরে
এসে খেতে পায়।
ঢুকলেন কিচেনে
... এবং দেখতে পেলেন আগে থেকেই কেউ একজন ওখানে ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
‘দারুন খবর পেলেন তাহলে মিসেস এপ্পার!’
ডরিস থমকে
গেলেন।
ওর সামনে, কিচেনের
টেবিলে বসে আছে মার্শাল জুডা । পেছনে দাঁড়িয়ে বারোজন ক্যামুফ্ল্যাজড সশস্ত্র ইউ এস
স্পেশাল ফোরস এর সেনা।
জুডার মাথা
বেঁকে আছে, চোখ নিচের দিকে, কণ্ঠস্বর হিমশীতল আবেগবিহীন। ‘আসুন বসুন ডরিস। আমরা একসাথে ওদের আসার প্রতীক্ষা করি ।’
০০০০০০
ভিক্টোরিয়া
ষ্টেশন
১৮ই মার্চ
২০০৬, রাত ১১টা বেজে ৪৫ মিনিট
টারটারাসের
আগমনের ২ দিন আগে
০০০
ওয়েস্ট আর তার
সাথীরা ফিরে এলো কেনিয়াতে।
মধ্যে একবার
স্পেনে থেমেছিল তেল নেওয়ার জন্য। আর সে সময়েই লিলি ক্যালিম্যাচুসের পান্ডুলিপির
পরের লেখাটা পড়তে পারলো। হঠা ৎ করেই ওটা ওর বোধ গম্য হয়েছে ।
ওয়েস্ট জানতে
চাইলো, ‘কি লেখা আছে ওটায়?’
লিলি বল লো,
‘হ্যাঙ্গিং গারডেন বা ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান বিষয়ে। এটা বলছে –
“ প্রাচীন
ব্যাবিলোনিয়ার ঝুলন্ত স্বর্গ ।
এগিয়ে গেছে
উদিত সূর্যের দিকে।
সেই স্থানের
দিকে যেখানে দুই জীবন দাতা এক হয়ে গেছে।
জাগ্রোসের
পাহাড়ের ছায়ায়,
দেখো তৃতীয়
মহান স্থপতি কারের সাজানো অতিকায় জল প্রপাত
লুকিয়ে রেখেছে
পথটাকে যা সে বানিয়েছে
একটা পথ যা
নিয়ে যাবে স্বর্গের প্রবেশ দ্বারে
যা বানিয়েছিল
শক্তিশালী নেবুচাডনাজার তার স্ত্রী য়ের জন্য ।”
লিলির চুল টা
একটু নেড়ে দিয়ে ওয়েস্ট বল লো, ‘ দারুন, কিড্ডো । দারুন। উইজার্ড জানতে পারলে
একেবারে চমকে যাবেন।’
হ্যালিকারনাসসাস
মাঝরাতের একটু আগে ভিক্টোরিয়া স্টেশনের এয়ারস্ট্রিপে নামলো। চমৎকার একটা
আফ্রিকান রাত – চারদিকের ঘাস জমি পূর্ণ চাঁদের সাদা আলোয় ঝলমল করছে । দূরের
নিচু পাহাড়গুলোকে দেখে মনে হচ্ছে কালো দাঁত বার করে অপেক্ষা করছে কিছুকে গিলে
খাওয়ার জন্য ।
রানওয়ে থেকে
মোটামুটি এক কিলোমিটার দূরে ফার্ম হাউসটাকে দেখা যাচ্ছে, জানলা দিয়ে কমলা আলো
বিচ্ছুরিত হচ্ছে। সামনের বাগানে জুনিপার ঝোপের ভেতরের এমারজেন্সী সিগন্যাল জ্বলছে
না।
স্কাই মনস্টার
প্লেনটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে চললো পাহাড়ের দিকে হ্যাঙ্গারের পথে। আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে
থাকার সময়ে ভেতরের যাত্রীরা যে যার নিজের জিনিষ পত্র হাতে নিয়ে তৈরি হলো নামার
জন্য।
ওরা কেঊ জানে
না , দুশো চোখ ওদের দিকে নজর রেখে অপেক্ষা করছে।
উজ্জ্বল আলোয়
ভরা হ্যাঙ্গারের দরজার কাছে এসে হ্যালিকারনাসসাস থামলো।
প্লেন থেকে
নামার একটা সিঁড়ি ওখানে রাখা আছে খোলা দরজার কাছে । আর সেই সিঁড়ির পেছনে
চল্লিশ গজ দূরে দাঁড়িয়ে আছে ডরিস ।
প্লেনের ভেতর
থেকে বুঝতে পারা অসম্ভব যে ডরিস আসলে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
প্লেনটা তার
সামনের অংশ টার কিছুটা হ্যাঙ্গারের ভেতর ঢুকিয়ে একেবারে থেমে গেল। [আপাতত কয়েক
ঘণ্টা ওটা এভাবেই থাকবে শরীর ঠান্ডা করার জন্য। তারপর ঢোকান হবে ভেতরে।]
প্লেন থামা
মাত্রই সামনের দিকের দরজাটা খুলে গেল । বিগ ইয়ার্স আর লিলি – ডরিসের কাছে যাওয়া
এবং ওনাকে জিঊস ক্যাপস্টোনের টুকরোটা দেখানোর জন্য – দ্রুত ছুটে গেল সিঁড়িটা দিয়ে
নামার জন্য। ব্যাক প্যাকটা পিঠে ঝুলিয়ে নিলো বিগ ইয়ার্স।
ওদের একটু
পেছনেই জাইদকে সাথে নিয়ে পুহ বিয়ার আর স্ট্রেচ – আবার ফ্লেক্স কাফের বাঁধনে আবদ্ধ
। প্লেন থেকে বেরিয়ে এসে তাজা বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়ে শুরু করলো সিঁড়ি দিয়ে নামতে ।
স্কাই মনস্টার
আর ওয়েস্ট থাকলো প্লেনের ভেতরে – স্কাই
মনস্টার উড়ান পরবর্তী চেকিং সেরে নিচ্ছিলো ; ওয়েস্ট গুছিয়ে নিচ্ছিল নিজের
জিনিষপত্র, নোটস, পারচমেন্ট, হেসলারের ডায়েরী।
হ্যালিকারনাসসাসের
চারটে অতিকায় উইং ইঞ্জিন তখনো ঘুরছিল এবং তার শব্দে মুখরিত ছিল বাইরেটা ।
বিগ ইয়ার্স আর
লিলি এবং ডরিসের মধ্যে দুরত্ব এখন কুড়ি গজ।
‘হেই ডরিস!
আমার কাজটা করে ফেলেছি!’ লিলি উল্লাসের ভঙ্গীতে চিৎকার করে উঠলো । কিন্তু ডরিসের
মুখে কোনও উচ্ছ্বাস দেখা গেল না। সে মুখ শীতল, পাথরের মতো – মনে হচ্ছিল কিছু একটা
বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না।
তারপর যেন
নিজেকে একটু সামলে নিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো, ‘বাহ খুব ভালো, আমার ছোট্ট ইয়ন!
একেবারে বিজয়ীর মতো প্রত্যাবর্তন । ঠিক যেন গিমলির মোরিয়াতে ফিরে আসার মতো, তাই না!’
ডরিসের কথা শুনেই , লিলি হাঁটার গতি কমিয়ে দিলো ।
তারপর থমকে
দাঁড়ালো।
বিগ
ইয়ার্স থেমে গিয়ে লিলির দিকে তাকিয়ে
জিজ্ঞেস করলো, ‘কি ব্যাপার?’
চিন্তাগ্রস্থ
ভাবে লিলি আতঙ্ক ভরা চোখে হ্যাঙ্গারের আশে পাশের অন্ধকার ঘাসে ভরা মাঠের দিকে
তাকালো । ডরিস ছাড়া অবশ্য আশপাশের সব
জায়গা ফাঁকা ।
‘বিগ ইয়ার্স ,
বিপদ আমাদের চারদিকে,’ লিলি বললো আস্তে করে । ‘আমাদের প্লেনে ফিরে যেতে হবে । এটা
একটা ফাঁদ।’
‘ তুই কি করে
বুঝলি -?’
‘চলো! পালাই,
এখনই!’ আদেশের স্বরে বললো তার থেকে বয়সে বড় একজন মানুষকে।
কথা শেষ করেই
লিলি ঘুরলো, ধরলো বিগ ইয়ার্সের হাত, তার পর দুজনে মারলো ছুট – প্লেন থেকে ওদের দুরত্ব
কুড়ি গজ – যত জোরে সম্ভব ওরা ছুটতে শুরু করলো হ্যালিকারনাসসাসের উদ্দেশ্যে।
আর ওদের ফিরে যাওয়া দেখেই হ্যাঙ্গারের এলাকায়
শুরু হয়ে গেল নরক গুলজার।
হ্যাঙ্গারের সব কটা দরজা খুলে ছিটকে বেরিয়ে এলো কালো
পোশাক পড়া এক ঝাঁক আমেরিকান সেনা ।
ডরিসের পেছন
দিকের একটা দরজা খুলে গেল ওখান থেকে বেরিয়ে এলো মার্শাল জুডা । সাথে ক্যাল কালিস
আর তার দলবল।
ডরিসকে ধাক্কা
মেরে সামনের দিকে এগিয়ে গেল কালিস এবং শুরু করলো গুলি চালাতে লিলি আর বিগ ইয়ার্সকে
লক্ষ্য করে।
গুলি চালনা
শুরু হতেই এক এক জন এক এক রকম কাজ করলো –
ওয়েস্ট।
ছুটে গেল প্লেনের সামনের দরজার দিকে কি ঘটছে দেখার জন্য।
স্কাই
মনস্টার।
ককপিটের জানলা
দিয়ে তাকালো – দেখতে পেলো লিলি আর বিগ ইয়ার্স ছুটে আসছে সিঁড়ির দিকে । ওদের তাড়া
করেছে শত্রু পক্ষের সেনা।
জাঈদ।
যখন গুলি
চালানো শুরু হয় ও সিঁড়ির একেবারে শেষ ধাপে ছিল। স্ট্রেচ আর পুহ বিয়ারের হেফাজতে।
হাতে ফ্লেক্স কাফ আটকানো। কিন্তু এই মুহূর্তে ওর চোখে
আগের মতো উন্মাদগ্রস্থতার ছাপ নেই বরং অনেক বেশি সন্ধানী এবং ধীর স্থির ।
ইতিমধ্যে সে হাতে নিয়ে এসেছে প্যান্টের ভেতর
লুকিয়ে রাখা ব্লেডের টুকরোটাকে। ফ্লেক্সকাফের আধখানা কেটেও ফেলেছে । আর তিন সেকেন্ড
সময় পেলেই স্ট্রেচের পাঁজরে একটা ঘুষি মেরে ও পালাবে। এমন সময়ে শুরু হয়ে গেল গুলিবর্ষণ।
আপাতত ব্লেড তাকে পকেটে ঢুকিয়ে পুনরায়
ওপরে উঠতে শুরু করলো ওরা । বাঁচতে তো হবে বুলেটের বৃষ্টি থেকে।
আর জুডা।
ডরিসের আশপাস
দিয়ে দলের লোকেরা যখন সামনের দিকে এগিয়ে গেল , জুডা ঘুরে দাঁড়ালো ডরিসের দিকে... বললো, ‘আমি বারন করেছিলাম কোনও
রকম সংকেত যেন না দেওয়া হয় ।’
আর তারপরেই
দ্বিধাহীন ভাবে একটা গ্লক পিস্তল বার করে এনে ডরিসের কপালে ছুঁইয়ে টিপে দিলো
ট্রিগার ।
ওয়েস্ট
প্লেনের সামনের দরজায় বেরিয়ে এলো আর ওদিকে লুটিয়ে পড়লো ডরিস ।
‘হে ভগবান, না
আআআআ ...’ দম বন্ধ স্বরে বলে উঠলো ওয়েস্ট , ‘না...’
পরের ঘটনগুলো
ওখান থেকেই দেখতে পেলো ওয়েস্ট।
চারদিকে
বিশৃঙ্খলা।
এক বিশাল
আমেরিকান বাহিনী হ্যাঙ্গারটার চারদিক থেকে বেরিয়ে এলো।
বেশীর ভাগই
পদাতিক সেনা। তারপরেই ওয়েস্ট দেখতে
পেলো তিনটে হামভি বেরিয়ে এলো দূরের ঘাস জমির ভেতর থেকে।
আমেরিকান
সেনারা অতিকায় কালো ৭৪৭ কে ঘিরে ধরছে এক দল পিঁপড়ের মতো । আপাতত ওদের সবার নজর
দুটো ছুটন্ত অবয়বের দিকে , লিলি আর বিগ ইয়ার্স ।
ওয়েস্ট এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো ওদের দিকে।
একটা ব্যাপার
পরিষ্কার – লিলিদের কোনও আশাই নেই সিঁড়ির কাছে পৌঁছানোর।
আমেরিকানদের
গুলি তার আগেই ওদের শেষ করে দেবে। যদিও ওয়েস্ট লক্ষ্য করলো ইয়াঙ্কিরা ওদের মেরে
ফেলার ইচ্ছে নিয়ে গুলি চালাচ্ছে না – চাইছে ওরা ছোটা থামাক। লিলির কোন ক্ষতি করা
যাবে না ওদের কাছে নির্দেশ আছে নিশ্চিত।
বিগ ইয়ার্স আর
লিলি সিঁড়ির কিছুটা আগে থাকা পোর্টেবল ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেটর টার কাছে পৌছালো ।
জেনারেটর ওয়াগনটা মাপে একটা ছোটো ট্রাকের মতো । সাধারণত হ্যালিকারনাসসাস সম্পূর্ণ
থেমে গেলে স্কাই মনস্টার প্লেন থেকে নেমে এসে
ওই জেনারেটরটা ব্যবহার করে, দরকার মতো ছোটো খাটো কাজ করার জন্য। কিন্তু আজ
আর সেটা করার সুযোগ মেলেনি।
লিলি আর বিগ
ইয়ার্স জেনারেটর ওয়াগনের পেছনে ঝাঁপ মারলো । আড়ালে যেতে পেরেই বিগ ইয়ার্স শুরু করলো
গুলি চালাতে। যার ফলে ধেয়ে আসা সেনারা বাধ্য হল থামতে এবং নিজেদের বাঁচানোর পথ খুঁজতে ।
এই মুহূর্তে
ওয়েস্ট সিঁড়ির একেবারে ওপরে ... স্ট্রেচ আর পুহ নিচে সিঁড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে গুলি
থেকে নিজেদের বাঁচাচ্ছে ... আর জাঈদ সিঁড়ির মাঝখানে ।
লিলি আর বিগ
ইয়ার্স মাটিতে শুয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে – শত্রু পক্ষের গুলিবর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য –সিঁড়ি
থেকে মাত্র পাঁচ গজ দূরে ।
ওয়েস্ট রেডিও
মাইক চালু করে বললো, ‘স্কাই মনস্টার! প্লেন চালু করো ! আমাদের এখান থেকে পালাতে
হবে!
‘ রজার
দ্যাট!’ এক সেকেন্ড বাদেই বিশাল ৭৪৭ এর যেত টারবাইন পুনরায় চালু হয়ে গেল, যার
শব্দে ঢেকে গেল গুলি বৃষ্টির শব্দ।
‘বিগ ইয়ার্স!’
ওয়েস্ট ডাকলো মাইকে । ‘আমার বলতে খুব খারাপ লাগছে কিন্তু এই মুহূর্তে কিচ্ছু করার
নেই । তুমি যেভাবেই হোক একটা পথ বার করে
লিলিকে নিয়ে প্লেনে ফিরে এসো! এক্ষুনি!’
জেনারেটর ওয়াগনের পেছনে হামাগুড়ি দিতে দিতে বিগ ইয়ার্স ভাবছিল কি
করা যায়।
পাঁচ গজ । আর
ওইটুকুই বাকি আছে । মাত্র পাঁচ গজ।
সেই পাঁচ গজ এখন মনে
হচ্ছে এক মাইলের সমান।
আর ঠিক তক্ষণই
– একটা নতুন ধারনা ওর মাথায় এসে গেল – অবস্থাটা পরিষ্কার বুঝতে পারলো বিগ ইয়ার্স ।
যা পরিস্থিতি
তাতে ওকে মরতে হবেই ।
ও যদি সিঁড়ির
দিকে ছোটে , ওকে গুলি খেতে হবেই – ওরা লিলিকে গুলি না করলেও ওকে গুলি করবেই ।
আবার যদি ওরা
আমেরিকানদের হাতে ধরা পড়ে তাহলেও ওর মৃত্যু নিশ্চিত।
ভাবনাটা
পরিষ্কার হয়ে যেতেই ও মন স্থির করে নিলো ।
আশে পাশের
গুলি চালনার শব্দ ছাপিয়ে চিৎকার করে বললো, ‘লিলি! তুমি ভালো করেই জানো আমার জীবনে
যেকটা বন্ধু পেয়েছি তাদের মধ্যে তুমি সেরা। আমার থেকে তোমার বুদ্ধি অনেক বেশি তবু
আমাকে সব সময় সম্মান দিয়েছো। সব সময় ধৈর্য ধরে আমার কথা শুনেছো, আমার জন্য অপেক্ষা
করেছো। এবার আমি তোমার জন্য কিছু একটা করবো – আর সেটা করার জন্য তুমি আমাকে বাধা
দিতে পারবে না। আমায় কথা দাও । সময় এলে তুমি এই জগতে যে কাজটা করার জন্য এসেছো সেটা কোরো ।
আর মনে রেখো , এই বোকা হাঁদাটা তোমার বন্ধু ছিল । আমি তোমায় খুব ভালোবাসি লিলি ...আমার
পুঁচকে বন্ধু ।’
লিলিকে কাছে
টেনে ওর কপালে একটা চুমু খেলো বিগ ইয়ার্স । এম পি-৫ টা নিলো একহাতে, লিলিকে ধরলো
আরেক হাতে ... নিজের বিরাট শরীর দিয়ে আড়াল করে...
... বেরিয়ে
এলো আড়াল থেকে ...
... ছুটতে
শুরু করলো সিঁড়ির দিকে ।
আমেরিকানদের
দিক থেকে এর জবাব এলো অতি দ্রুত ...
ওরা গুলি
চালালো ।
বিগ ইয়ার্সের
দরকার ছিল ছটা পদক্ষেপ সিঁড়ির কাছে পৌছানোর জন্য।
চারটে ফেলার
সু্যোগ পেলো ।
কোনও এক
আমেরিকান সেনার গুলি এসে লাগলো ওর মাথায় ।
সোজা বিগ
ইয়ার্সের খুলি ফাটিয়ে অন্য দিকের হাড় গুঁড়ো গুঁড়ো করে বেরিয়ে গেল বুলেটটা... বিগ
ইয়ার্স এক তাল কাদার মতো পড়ে গেল মাটিতে – যেন একটা পুতুল বাজিকরের হাতের সুতো ছিঁড়ে পড়ে
গেল – দুটো হাঁটু গেড়ে বসার মতো করে জেনারেটর ওয়াগন আর সিঁড়ির মাঝ পথে ... প্রানহীন
হাতটা শেষ মুহূর্তে ঠেলে দিলো লিলিকে সামনের দিকে।
‘নাআআআআ!’
লিলি আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো । ‘বিগ ইয়াররররররর......স!’
আমেরিকানরা
ছুটে এলো লিলির দিকে –
-থেমেও গেলো
এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে ।
একই সময়ে একই
সাথে দুটো অবয়ব সিঁড়িটার ওপর থেকে লাফিয়ে নামলো । দুজনের হাতেই এম পি-৫ সাব
মেশিনগান । যা থেকে অঝোরে বুলেট ধেয়ে যাচ্ছে সামনের বাতাস চিরে লিলির ওপর দিয়ে ।
পুহ বিয়ার আর
স্ট্রেচ।
ওরা এটা করার ভেবে চিন্তে করেনি মোটেই।
এসব ভাবার সময়ই ছিল না ওদের কাছে।
কাকতালীয় ভাবেই ওরা একই সাথে সিদ্ধান্ত নেয় স্বাধীনভাবে কাজটা করার ।
যদিও ওদের একই
মুহূর্তের লাফ দিয়ে নেমে আসাটার উদ্দেশ্য একই ছিল –
লিলিকে
বাঁচানো ।
আরব এবং
ইজ্রায়েলী দুটো মানুষ লিলির দুপাশে গিয়ে দাঁড়ালো ... দুজনের গুলিতেই চারজন করে
আমেরিকান সেনা ধরাশায়ী হয়েছে ।
লিলি হাঁটু
গেরে বসে আছে বিগ ইয়ার্সের পাশে, দু’গাল দিয়ে গড়াচ্ছে জল ।
গুলি চালনা না
থামিয়েই , পুহ বিয়ার আর স্ট্রেচ লিলির একটা করে হাত ধরে ঝুলিয়ে নিয়ে দ্রুত পিছু
হেঁটে ফিরে এলো সিঁড়ির আড়ালে ।
গোটা সিঁড়িটা
থর থর করে কাঁপছিল, কারন এখন ওটার ওপরেই চলেছে আমেরিকানদের বুলেট বৃষ্টি ।
টলোমলো পায়ে
প্রায় অন্ধের মতো গুলি চালিয়ে গেল এরা দুজনেও । প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে উঠে গেল ওপরে
। আগে লিলিকে ভেতরে ঠেলে দিয়ে দুজনে গড়িয়ে ঢুকে পড়লো ভেতরে । সাথে সাথেই তৈরী থাকা
ওয়েস্ট দরজা লাগিয়ে চিৎকার করে উঠলো , ‘স্কাই মনস্টার! চলো...চলো ...জলদি!’
০০০০০
দৈত্যাকার ৭৪৭
নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে এক পাক মেরে রানওয়ের সোজাসুজি দাঁড়ালো – একের পর এক বুলেট
এসে আঘাত করছে ওটাকে ঘিরে থাকা বর্মের
গায়ে।
এই এক পাক
ঘোরার পথে একটা ইউ এস হাম ভিকে একেবারে চিঁড়ে চ্যাপ্টা করে দিলো বিশাল প্লেনটা ।
পুহ বিয়ার আর
স্ট্রেচ বসলো গিয়ে হ্যালিকারনাসসাসের ডানায় লাগানো গান ট্যারেটগুলোতে। শুরু হল জবাবী গুলি
বৃষ্টি। ধ্বংস করে দেওয়া হল বাকি দুটো হামভিকে ।
স্কাই মনস্টার
চাপ দিলো থ্রাস্টারে... কালো ৭৪৭ ছুটতে শুরু করলো গতি বাড়িয়ে – রানওয়ের পথে ঝড়
তুলে। ঝলসে উঠলো ওটার ডানার আলো ...পেছনে ধেয়ে এলো জিপ এবং বুলেটের ঝাঁক ... এদিক
থেকেও ফিরতি বুলেট ছুটে যাচ্ছিলো শত্রুপক্ষের দিকে ট্যারেট দুটো থেকে – ততক্ষণ
অবধি যতক্ষন না গতির ধাক্কায় ওটা মাটি ছেড়ে উঠে গেল রাতের আকাশে। পালাতে হলো নিজেদের
এতদিনের তথাকথিত গোপন আস্তানা ছেড়ে ।
হ্যালিকারনাসাসের
মেইন কেবিনে থমথমে গম্ভীর নীরবতা ।
ওয়েস্ট লিলিকে
নিজের কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে । লিলি কেঁদেই চলেছে। বিগ ইয়ার্স আর ডরিসের
মৃত্যুর কষ্ট ওর চোখের জল হয়ে ঝরে পড়ছে।
বিমানটা রাতের
আকাশে ভেসে চলেছে, দিশাহীন ভাবে । কিছু আগের নরক থেকে বাকি যারা বেঁচে ফিরে আসতে
পেরেছে তারা এখন সবাই – পুহ বিয়ার, স্ট্রেচ এবং জাঈদ – এখানে উপস্থিত। শুধু স্কাই
মনস্টার আছে ককপিটে ।
লিলিকে ধরে
বসে থাকলেও ওয়েস্টের মনে ভাবনার ঝড়।
বিগ ইয়ার্স আর
নেই। ডরিস মারা গেছেন । ওদের গোপন আস্তানার খবর ফাঁস হয়ে গেছে। আর এর মধ্যে আর
একটা হতাশার খবর – যখন বিগ ইয়ার্স মারা গেল ওর সাথে ওর ব্যাকপ্যাকেই ওখানে থেকে
গেল জিউসের ক্যাপস্টোন টুকরোটা ।
ধ্যাত তেরে
কি!!
কয়েক মিনিট
আগেও ওরা আনন্দে ছিল একটা অসম্ভব মিশনকে সম্ভব করার খুশীতে। সবরকম বাধা টপকে ওরা
একটা ক্যাপস্টোনের টুকরো হাসিল করতে সক্ষম হয়েছিল।
আর এখন...
আর এখন ওদের
কাছে কিছুই নেই । দলের সেরা দুজন সদস্যকে হারালো ওরা , সাথেই হারাল নিজেদের
আস্তানাটাকেও ... আর সাথে সাথেই খোয়ালো হাসিল করে আনা ক্যাপস্টোনের টুকরোটাকেও
।
কেন, ওয়েস্ট ভাবলো, লিলি আর বিগ ইয়ার্স কি কারনে ডরিসের সামনে থেকে
হঠাৎ ছুটে প্লেনের দিকে আসার সিদ্ধান্ত নিলো । নরম গলায়
লিলিকে প্রশ্নটা করলো ।
কান্নার দমককে
আটকে রেখে চোখের জল মুছে নিলো লিলি ।
‘ডরিস আমাকে
সতর্ক করে দিয়েছিলেন। উনি বলেছিলেন আমাদের ফিরে আসাটা মোরিয়াতে গিমলির ফিরে আসার মতো। লর্ড অফ দ্য রিংস বইয়েতে
বামন গিমলি মোরিয়ার খনিতে ফিরে এসে দেখতে পেয়েছিল পুরো খনিটা চলে গেছে অরকদের দখলে
। ডরিস এভাবেই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বিপদটা। সরাসরি বলার সুযোগ ওনার ছিল না
নিশ্চিতভাবেই । যে কারনে উনি সংকেতে কথাটা বুঝিয়ে দেন আমাকে। আর ওই কথার অর্থ ছিল এই ফার্ম
শত্রুদের দখলে চলে গেছে । যেভাবে সম্ভব পালাও ।’
ওয়েস্ট হতবাক
হয়ে গেল লিলির দ্রুত বিষয়টা বুঝতে পারার দক্ষতার কথা ভেবে – সাথে সাথেই ডরিসের
স্বার্থহীন আত্মত্যাগের কথা ভেবেও ।
‘খুব ভালো কাজ
করেছিসরে কিড্ডো।’ লিলির চুলটা নেড়ে দিয়ে । ‘দারুন কাজ।’
পুহ বিয়ারের
দিক থেকে প্রশ্ন ভেসে এলো, ‘হান্টসম্যান। এবার আমরা কি করবো?’
কমিউনিকেশন
যন্ত্রাদির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ওয়েস্ট বললো, ‘আমাকে উইজার্ডের সাথে কথা বলতে
হবে।’
যন্ত্রটার
কাছে যেতেই – যেন ম্যাজিক হলো – ওটায় আলো জ্বলে উঠলো সাথেই বিপ বিপ শব্দ ।
‘ওটা তো ভিডিও
ফোন ...’ স্ট্রেচ বললো । ‘ইনকামিং কল।’
‘উইজার্ডের
ফোন নিশ্চিত,’ পুহ বিয়ার বললো ।
‘না,’ ওয়েস্ট
বললো , যন্ত্রটার গায়ে ফুটে ওঠা লেখার দিকে তাকিয়ে বললো । ‘ এটা ভিক্টোরিয়া স্টেশন
থেকে আসছে।’
ওয়েস্ট
“আনসার” বোতামটায় চাপ দিলো । স্ক্রীনে ফুটে উঠলো ছবি। একজন মানুষের ...
মার্শাল জুডা
।
হ্যাঙ্গার
এলাকার ফোনের কাছে বসে আছে । পাশেই দাঁড়িয়ে আছে কালিস এবং তার দলের লোকেরা।
‘ শুভেচ্ছা
জ্যাক ... বাহবা দিতেই হবে... একটুর জন্যে পালাতে পেরেছো তোমরা সবাই । সরি –’ নিজের ভুল শুধরে নিলো জুডা – ‘ একটু ভুল বললাম, সবাই অবশ্য পারোনি ।’
ওয়েস্ট রাগ
চেপে বললো, ‘ কি চাই সেটা বললে
খুশী হবো?’
‘আরে! আমি
আবার তোমার কাছে কিছু চাইতে যাবো কেন বলোতো ? আমিতো পেয়েই গেছি যেটা তুমি নিয়ে
এসেছিলে- জিউসের টুকরোটা । আগের তিনটে টুকরোর সাথে এটাও যুক্ত হলো । ওহো বলতেই
ভুলে যাচ্ছিলাম । জানিনা রোমে তোমার বন্ধু এপ্পারের খবরটা পেয়েছো কিনা । যত দূর
জানি সে এখন আমাদের ইউরোপিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বীদের খপ্পরে । আশা করি মানুষটা এখনো ভালোই
আছে ।’
ওয়েস্ট নিজের
বিষ্ময়টাকে চেপে রাখার চেষ্টা করছিল । জানতোই না ইউরোপিয়ানরা উইজার্ডদের ধরে ফেলেছে ।
‘এপ্পার ধরা
পড়েছে,’ জুডা ব্যঙ্গের হাসি ফুটিয়ে বললো,
‘তুমি জানতেই না।’
নিকুচি করেছে
।
‘ফোন করার
কারণটা কি শুনি ?’ ওয়েস্ট জানতে চাইলো । ‘ মজা দেখার জন্য?’
‘তোমার
অবস্থানটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য জ্যাক । নিজের দিকে তাকিয়ে দ্যাখো জ্যাক। ভেবে
দ্যাখো কি পেলে । তোমার দলের নানান দেশের ওঁছা
সদস্যরাতো এখনো বড়দের সাথে খেলার যোগ্যই হয়ে অঠেনি। প্রথম থেকে এই মিশনের
সবক্ষেত্রে আমি তোমাকে হারিয়ে দিচ্ছি । সুদান, টিউনিসিয়া ...আর এখন কেনিয়াতে।
বোঝার মতো বুদ্ধি তোমার হয়েছে কি? এমন কোনো
জায়গা নেই যেখানে তোমাকে আমি অনুসরণ করে যেতে পারবো না। জ্যাক, এ পৃথিবীতে এমন কোন
জায়গা নেই যেখানে তুমি লুকিয়ে থাকতে পারো । জলদিই আমাদের বিজ্ঞানীরা ঝুলন্ত
উদ্যানের টুকরোটার খোঁজ বার করে ফেলবে । আর তোমার মতোই আমরাও জানি প্যারিসের
ওবেলিস্কটার গুরুত্ব । দু দিনের ভেতরেই আমরা লাক্সারে আলেকজান্ডারের সমাধির খোঁজ
বার করে ফেলবো ... যেখানে আছে শেষ টুকরোটা ।’
‘ কথা বলা শেষ
হয়েছে?’
‘ এভাবে শেষ
করলে কেমন হয় । জ্যাক এই মিশনে তো তুমি কিছুই হাসিল করতে পারছো না। যাকগে ছোট্ট করে একটা
জিনিষ শিখিয়ে দিই তোমাকে দেশ সংক্রান্ত বিষয়ে । দুরকমের মাছ হয় ... বড় মাছ আর ছোটো মাছ । বড় মাছেরা ছোটো মাছেদের খায় ।
তুমি বোকার মতো একটা বড় মাছের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এসেছো । আর তার ফল একটাই এই বড়
মাছ তোমাকে খেয়ে ফেলছে । তোমার মিশন শেষ ।’
‘জুডা আমি
তোকে খুন করবো,’ ওয়েস্ট কেটে কেটে বললো । ‘ ডরিসের ঘটনাটার জন্য ।’
‘ পারলে কোরো
জ্যাক, যদি পারো অবশ্যই কোরো ।’
বলেই লাইন
কেটে দিলো জুডা ... ওয়েস্ট তাকিয়েই থাকলো অন্ধকার ধূসর স্ক্রিনটার দিকে ।
বেশ খানিকটা
সময় কেউ কোনো কথা বললো না।
ওয়েস্ট
স্ক্রীনের দিকেই তাকিয়েছিলো। দাঁতের চাপে চোয়াল ফুলে ফুলে উঠছিল।
‘স্ট্রেচ,
উইজার্ড এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করো । দ্যাখোতো জুডা সত্যি বলছে না মিথ্যা।’
স্ট্রেচ
স্যাটেলাইট রেডিওর সবকটা সম্ভাব্য লাইন এর সাহায্যে উইজার্ড , জো আর ফাজির সাথে
যোগাযোগের চেষ্টা করলো। এমনকি সেলফোনেও
ফোন করলো ।
কোনো উত্তর
পাওয়া গেল না ।
‘নাহ, কোনও
সাড়া নেই,’ ফিরে এসে বললো । ‘তিনজনের একজনের কাছ থেকেও উত্তর পাওয়া যাচ্ছে
না। লাইনেই নেই কেউ ।’
ভিক্টোরিয়া
স্টেশনের সাংঘাতিক ঘটনার পর আপাতত আবার ওদের দলের আরো তিন জনের কোনও হদিশ মিলছে
না। তার মধ্যে একজন এমন মানুষ যে ওদের এই মিশনে সবচেয়ে জরুরী মানুষ, তথ্য যোগানোর
ক্ষেত্রে।
স্ট্রেচ বললো,
‘যা কিছুই আমরা করিনা কেন জুডা সেটা জেনে যাচ্ছে আর ঠিক আমাদের পেছন পেছন গিয়ে
হাজির হচ্ছে । সুদান, তিউনিশিয়ার পর কেনিয়াতেও ।’
‘ঠিক তা নয়,’ পুহ
বিয়ার বললো । ‘কেনিয়ার ব্যাপারটা আলাদা । আমারা এখানে আসার আগেই জুডা কেনিয়াতে
পৌছে গিয়েছিল । অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য।’ পুহ স্ট্রেচের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে
তাকালো । ‘ যে ভাবেই হোক জুডা আমাদের গোপন আস্তানার কথাও জেনে গেছে ।’
স্ট্রেচ মুখ
বেঁকিয়ে উত্তর দিলো , ‘ কি বলতে চাইছো তুমি? তোমার কি মনে হয়, আমি আমেরিকানদের সব খবর পাঠাচ্ছি?’
পুহ বিয়ারের
তাকানো দেখে মনে হচলো তার মনের ভাবনাটা কিছুটা সেরকমই ।
জাঈদ কথা বলে
উঠলো ওদের মাঝে । ‘যদি আমি ভুল না করি , ওহে ইজ্রায়েলী তোমাকে এই মিশনে যোগ দেওয়া
জন্য ডাকা হয়নি ? আমি অবশ্যই বলবো সালাদিনের অধিকার আছে তোমার আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন
তোলার।’
‘এ নিয়ে কথা
বলার তোমার কোনও অধিকার নেই , নিজের মুখে লাগাম টান হতচ্ছাড়া খুনী !’
‘একজন
ইজ্রায়েলী আমাকে খুনী বলছে !’ জাঈদ উঠে দাঁড়ালো । ‘আরে হিসাব করে দ্যাখ কত
নিরপরাধ মানুষকে তোর দেশ খুন করেছে । তুই –’
ওয়েস্ট
চেঁচিয়ে উঠলো , ‘চুপ! একদম চুপ!’
সবাই যে যার
জায়গায় বসে গেল চুপ করে।
ওয়েস্ট বললো,
‘ক্যাপ স্টোনের সাতটা টুকরোর ভেতর চারটে এখন আমেরিকানদের দখলে। ইউরোপিয়ানদের কাছ
থেকে আরটেমিসের টুকরোটা ছিনিয়ে যদি নিতে পারে – আমার মনে হয় সে পরিকল্পনা ওরা করেও ফেলেছে
– তাহলে ওদের হাতে এসে যাবে পাঁচটা টুকরো।
‘আর
সেক্ষেত্রে ওদের আর দুটো টুকরো দরকার
গ্রেট পিরামিডে টারটারাসের প্রথা উদযাপন করে এই জগতের শাসক হওয়ার জন্য । আর সেই দুটো
টুকরো মানে ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান এবং গ্রেট পিরামিড –’
জাঈদ বললো, ‘
গ্রেট পিরামিডের টুকরোর ব্যাপারটা বোধ হয় ভুলে যাওয়াই ভালো। ওটাই প্রথম টুকরো । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
টুকরো । ক্যাপস্টোনের মাথার ছোট্ট পিরামিড । ওটা আছে আলেকজান্ডারের সমাধি স্থলে ।
আর সেটা ঠিক কোথায় তা জানা যাবে টারটারাসের আগমনের দিন ভোরবেলায় ।’
‘ঠিক যখন
লাক্সারে সূর্যের আলো ওবেলিস্কের ভেতর দিয়ে যাবে তাই তো?’ পুহ বিয়ার বললো ।
‘হ্যাঁ ।’
‘তার মানে
আপাতত আমাদের হাতে থাকছে ঝুলন্ত উদ্যানের টুকরোটা,’ ওয়েস্ট বললো ।
জাঈদ বললো,
‘সব কটা আশ্চর্যের ভেতরে , ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান সবচেয়ে রহস্যময় । বাকি সবকটা আশ্চর্য
কোনো না কোনো ভাবে আধুনিক যুগ অবধি টিঁকে ছিল । কিন্তু ওই বাগান থাকেনি । খ্রিষ্ট পূর্ব পাঁচ
শতকের পর ওর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি । সত্যি বলতে প্রাচীন যুগের গবেষকরাই প্রশ্ন
তুলেছিলেন আদপেই কি এর অস্তিত্ব ছিল । ওটাকে খুঁজে বের করা সবিশেষ কঠিন কাজ ।’
ওয়েস্ট ভ্রু
কুঁচকালো ।
হয়তো জুডাই
ঠিক কথা বলেছে।
ওয়েস্ট বাস্তবিক পক্ষেই জানেনা সে এই কাজ করতে পারবে কিনা।
উইজারডকে বাদ দিয়ে তো কখনোই নয় । তথ্যগত ভাবে সাহায্য করার মানুষটা কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী হলে কি করে
কাজটা করা সম্ভব । সাথেই আছে সব সময় একে অপরের প্রতি মারমুখী দুটো মানুষ, পুহ
বিয়ার আর স্ট্রেচ, আরব আর ইজ্রায়েল। একটা একটু পাগলাটে নিউজীল্যান্ডার পাইলট আর
একটা বাচ্চা মেয়ে।
লিলির কথাটা মনে আসতেই ওর দিকে মুখ ঘোরালো ওয়েস্ট।
অতিরিক্ত কান্নার ফলে এখনো মুখটা লালছে হয়ে আছে। গালে শুকনো চোখের জলের দাগ।
‘তুমি কি ভাবছো কিড্ডো?’
লাল লাল দুটো চোখে ওয়েস্টের দিকে তাকালো লিলি । তার পর বলতে শুরু করলো, সে বলা
একটা বাচ্চার বলা কথা নয়, যেন কোন প্রাজ্ঞ মানুষ কথা বলছে ।
‘মারা যাওয়ার আগে , বিগ ইয়ার আমাকে দিয়ে একটা প্রতিশ্রুতি করিয়ে নিয়েছিল।
বলেছিল যখন সময় আসবে আমি যেন এ পৃথিবীতে যে কারনে এসেছি সেই কাজটা করি । আমি জানি না সেটা ঠিক কি ধরনের কাজ । কিন্তু
আমি তার ভাবনাটা নষ্ট হতে দিতে পারি না । আমি চাই একটা সুযোগ নিতে সেই কাজটা করার
যেটা করার জন্য আমি এই পৃথিবীতে এসেছি । আমাকে সেটা করার সুযোগ দিন । প্লিজ,
স্যার। ’
ওয়েস্ট ধীরে ধীরে মাথা নামালো ইতিবাচক সম্মতির ভঙ্গীতে।
তারপর উঠে দাঁড়ালো ।
‘কথাটা বলা বা না বলা একই ব্যাপার। আমি বুঝতেই পারছি আমাদের পিঠ এখন দেওয়ালে
ঠেকে গেছে। আমাদের দলের লোকবল কমে গেছে ... কমে গেছে সুযোগ ... কমে এছে ভাগ্যের
সহায়তা ... কিন্তু আমার এখনো এ ই মারন খেলার মধ্যেই আছি । এখনো আমাদের সামনে একটা
সুযোগ আছে । আমরা চাইলে এখনো সেই ক্যাপস্টোনের টুকরোটাকে খুঁজে বার করতে পারবো ।
এমন এক টুকরো যা লুকানো ছিল এমন এক প্রাচীন আশ্চর্যের ভেতর যা খুঁজেই পাওয়া যায়নি
। আমরাই খুঁজে বার করবো কোথায় ছিল
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান ।’
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
নবম অধ্যায় সমাপ্ত... ১০ম অধ্যায় পঞ্চম অভিযান ঝুলন্ত উদ্যান