#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৭৪-৭৫-৭৬-৭৭)
“তৃতীয় অভিযান -গুয়ান্তানামো বে এর যুদ্ধ”
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০
ষষ্ঠ অধ্যায়
“তৃতীয় অভিযান -গুয়ান্তানামো বে এর যুদ্ধ”
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০
ষষ্ঠ অধ্যায়
তৃতীয় অভিযান
গুয়ান্তানামো
বে এর যুদ্ধ
০০০০০
গুয়ান্তানামো
বে, কিউবা
১৭ই মার্চ, ২০০৬
টারটারাসের
আগমনের তিনদিন আগে
নৌবহর স্টেশন
গুয়ান্তানামো বে
দক্ষিণপূর্ব
কিউবা
১৭ই মার্চ, ২০০৬, ভোর ৩টে ৩৫ মিনিট
টারটারাসের
আগমনের তিনদিন আগে
গুয়ান্তানামো বে এর এই নৌ-স্টেশন সত্যি
করেই ইতিহাসের এক অদ্ভুত স্থান।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে ইউনাইটেড
স্টেটস আর কিউবার ভেতর দুটো চুক্তি থেকে এর জন্ম হয় – ইউ এস প্রায় বাগে পেয়ে
গিয়েছিল কিউবাকে – সে সময়েই তড়িঘড়ি করে
কিউবা দক্ষিন পূর্ব সামুদ্রিক এলাকার একটি ছোট্ট
অংশ আমেরিকাকে দৃষ্টিকটু রকমের কম অর্থে লিজ দিয়ে দেয় । মাত্র ৪,৮০৫ ডলার বছর পিছু
[যদিও চুক্তিতে উল্লেখ ছিল বছর পিছু মাত্র ২০০০ ডলারের সোনা ]।
চুক্তি এমন করে করা হয়েছিল যে দু
পক্ষকেই এটা বাতিল করার ক্ষেত্রে সম্মত হতে হবে – আমেরিকার কোনো ইচ্ছেই ছিল না এ
চুক্তি বাতিল হোক ।– ফলে কিউবার জমিতে এটা হয়ে যায় আমেরিকার স্থায়ী একটা মিলিটারী আউটপোস্ট ।
জায়গাটা কিঊবার একেবারে দক্ষিন
প্রান্তে অবস্থিত, একটা দিক ক্যারিবিয়ান সাগরের দিকে খোলা। আমেরিকার উলটো মুখে।
সমুদ্রের দিকে বেরিয়ে থাকা অংশটায় তৈরী হয়েছে আমেরিকার ঘাঁটি । জায়গাটা খুবই ছোটো ।
ছয় কিমি চওড়া দশ কিমি লম্বা । অ্যাঁকা ব্যাঁকা সমুদ্র তটরেখা খুব বেশি হলে ২৫ কিমি ।
এসবের বাইরে, এর সব চেয়ে বেশী
পরিচিত বিষয়টা হ লো [ টম ক্রুজের সিনেমা
‘অ্যা ফিউ গুড ম্যান’ এ দেখানো তথ্যাদির কথা বাদ দিয়ে ] আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে এর স্ট্যাটাস । আন্তর্জাতিক
আইনের দিক থেকে গুয়ান্তানামো বে এর বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই । অদ্ভুত এক আইনী
জটিলতার ভেতরে অবস্থান করেও জেনিভা কনভেনশন এবং অন্য নানান রকমের অসুবিধা জনক
চুক্তির আওতার বাইরে এর অবস্থান।
আর ঠিক এই কারনেই আফগানিস্থানে অপারেশন এন্ডিউরিং ফ্রিডম এর পর আমেরিকা
এটাকে বেছে নেয় ৭০০ ‘দেশবিহীন যুদ্ধাপরাধী’ কে রাখার কারাগার হিসাবে।
গুয়ান্তানামো বে উত্তর দিকে
বেঁকে গেছে কুণ্ডলী পাকানো সাপের মতো । আর সেটাকে ঘিরে আছে অনেক খাঁড়ি মুখ এবং
ঘাসে ঢাকা জলাভুমি । এর পশ্চিম দিক পরিচিত লিওয়ার্ড নামে । এটার দিকে তেমন
কোনো নজর থাকে না, ব্যবহার হয় ঘাঁটির এয়ারস্ট্রিপ রুপে। লিওয়ার্ড পয়েন্ট
ফিল্ড ।
পূর্ব দিকের নাম –উইন্ড ওয়ার্ড
– আর ওখানেই যত কিছু কাজ কর্ম হয় । এখানেই নানান মেরিন ব্যারাক এবং কারাগার
কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থান। পূর্ব দিকের
বন্দরের প্রবেশ পথে আছে একটা অব্যবহৃত এয়ারফিল্ড, ম্যাক্কালা ফিল্ড । আর ভেতরের দিকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং, একটা স্কুল ,
কিছু দোকানপাট এবং মেরিন সেনাদের জন্য
একটা হাউজিং এস্টেট, যারা এই ঘাঁটিতেই বসবাস করে।
আর ভেতরে ঢুকলে , নৌ-স্টেশন
গুয়ান্তানামো বে এর একেবারে মধ্য স্থল , রেডিও রেঞ্জের ভেতরে দেখতে পাওয়া যাবে
ক্যাম্প ডেল্টা । [ আগে ছিল ক্যাম্প এক্স-রে , যেখানে ছিল খোলা আকাশের নিচে শৃঙ্খলা বদ্ধ সব খাঁচা । ব্যবহার হতো সাময়িক
কাজের জন্য। ২০০২ এর এপ্রিলে এসব স্থানে থাকা কয়েদিদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় নতুন বানানো
ক্যাম্প ডেল্টাতে। অনেক বেশী স্থায়ী স্থান আগেরটার তুলনায়।]
ক্যাম্প ডেল্টাতে আছে ছ’টা
ডিটেনশন ক্যাম্প – ১,২,৩,৪, ইকো এবং ইগুয়ানা । ক্যাম্প ৩ এ ‘সুপার ম্যাক্স’
ব্যবস্থা । অতিমাত্রায় খতরনাক কয়েদিদের রাখা হয় ক্যাম্প ৩ এ ।
সেরকম এক কয়েদী মুল্লাহ
মুস্তাফা জাঈদ ।
স্বল্প কথায় , ক্যাম্প ডেল্টার
অবস্থান এ বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ঘাঁটিতে । এ এক গোলক ধাঁধা সিন্ডার-ব্লক বিল্ডিং আর চেইন-লিঙ্ক ফেন্স
এর। সব কিছু ঘেরা আছে কাঁটা-তার আর এসব কিছু কে পাহারা দিচ্ছে পাথরের মতো
ভাবলেশহীন মুখাবয়বের ইউএস আর্মি মিলিটারী পুলিস বাহিনী ।
এ এক নিষিদ্ধ স্থান । এই
বিশ্বের সবচেয়ে দুরুহতম জায়গা ।
এসবের সাথেই আছে ক্যাম্পের
কাঁটাতারের বেড়া থেকে মাত্র ৫০০ মিটার
দূরে – একটা গলফ কোর্স । যা একমাত্র কোনও ইউ এস মিলিটারী ঘাঁটিতেই দেখতে পাওয়া
সম্ভব ।
০০০০০
দুটো দারুন ভাবে সুরক্ষিত এয়ার
ফিল্ড বেছে নেওয়ার তুলনায় ওয়েস্ট স্বাভাবিক ভাবেই বেছে নিলো গলফ কোর্সটাকে ।
‘আমি গিটমোকে জানি ...’ ওয়েস্ট
বললো, হ্যালিকারনাসসাসের ককপিটে দাঁড়িয়ে । বিশাল বিমানটা রাতের আকাশে উড়ে এগিয়ে
চলছে গুয়ানতানামো বে এর উদ্দেশ্যে ।
মিত্রদেশ স্পেন থেকে একবার
রিফুয়েলিং করে নেওয়া হয়েছে । এখন উড়ে চলেছে আটলান্টিকের ওপর দিয়ে । আপাতত পাঁচ ঘণ্টার সফর কিঊবার পথে ।
‘... আমি একবার ওখানে
গিয়েছিলাম। আমার দেশ একবার সিয়েফ এর সাথে ওয়ার গেমসে অংশ নিয়েছিল । বিশ্বাস করো বা
না করো, আমি ওই গলফ কোর্সটায় খেলেছি – মিলিটারি ঘাঁটিতে গলফ কোর্স, ভাবতেই কেমন
লাগে। ওখানে অবশ্য খুব বেশী গাছ নেই আর লাস্ট হোলগুলো – ১৬, ১৭ এবং ১৭ – সাজানো
আছে পর পর । ওদের মাঝে মাঝে কেবল মাত্র নিচু ঝোপের ব্যবধান। ঝোপগুলো চওড়া এবং সোজা
এবং বেশ লম্বা । একেকটা ৪৫০ মিটার করে তো হবেই। একটা বিমানের রান ওয়ের সমান । কি
স্কাই মনস্টার , কি মনে হচ্ছে? পারবে কাজটা করতে?’
‘আমি পারবো কিনা জানতে চাইছো?
স্কাই মনস্টার কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথে বললো । ‘মাই ফ্রেন্ড, এর পরের বার আমাকে
কিছু কঠিন কাজ দিলে ভালো হয় !’
‘বেশ তাই হবে।’ বলে ওয়েস্ট এলো
ককপিট থেকে বেরিয়ে আসা্র দিকে পা বাড়ালো । ‘ তাহলে একেবারে নিচেই দেখা হবে।’
দশ মিনিট বাদে । ওয়েস্ট হ্যালিকারনাসসাসের
নিচের দিকে যেতে শুরু করলো। পরনে একেবারে
পুরো কালো পোশাক । সাথেই পিঠে লাগানো আছে সেই কালো কার্বন-ফাইবারের ডানা দুটো ।
জো অপেক্ষা করছিল ওর জন্যে ।
একই রকম কালো পোশাক পরনে এবং ওর পিঠেও লাগানো কারবন-ফাইবারের ডানা । টান টান কালো
পোশাকের কারনে বোঝা যাচ্ছে জো এর মেদহীন পেটানো শরীরটা কি পরিমাণ ফিট । জো কিসানে
দেখতেও যেমন সুন্দর তেমনি আকর্ষণীয় দেহের গঠন ।
‘ আসা করছি ব্যাপারটা নিয়ে
তোমার কোনও সংশয় নেই,’ জো বললো।
‘চমকে দেওয়াটাই আসল ব্যাপার
এক্ষেত্রে। ওদের বন্দুকগুলো সেট করা আছে কিউবার দিকে এবং ৭০০ কয়েদিদের দিকে মুখ করে ।
আমেরিকানদের ভাবনাতেও এটা নেই যে কোনও বোকা হাঁদা গুয়ানতানামো বে আক্রমণ করবে ওপর
থেকে ।’
‘একদমই না, তবে আমরা কি ভাবছি
সেটা ওরা আর কি বুঝবে,’ জো বললো।
‘স্ট্রেচের ক্যাম্প ডেল্টার
স্যাটেলাইট ইমেজটা ভালো করে দেখে নিয়েছো তো?’
‘তিনবার ,’ জো জানালো । ‘ মোসাদের সংবাদ দাতার
খবর অনুসারে জাঈদ আছে ক্যাম্প ৩ এর সি-১২
হাটে । সলিটারী
কনফাইন মেন্ট । আশা করছি আমরা অন্ধকারে ওটাকে খুঁজে বার করতে পারবো । আচ্ছা মোসাদ
জানে না এমন কিছু কি আছে এই জগতে?’
‘মোসাদের কাছে এই খবরটাও আছে যে
আজ সকালে আমার আন্টি কি দিয়ে ব্রেকফাস্ট করেছে।’ ওয়েস্ট নিজের ঘড়ি দেখলো । ‘ আট মিনিট হয়ে গেছে ।
এবার ওড়ার জন্য রেডি হও।’
কয়েক সেকেন্ড বাদে, ৭৪৭ জাম্বোর
পেছনের র্যাম্পটা আবার খুলে গেল । ওয়েস্ট আর জো লাফ দিয়ে মিলিয়ে গেল অন্ধকার
রাতের আকাশে।
হ্যালিকারনাসসাসের ভেতরে,
প্রত্যেকটা সেট করা অস্ত্রের কাছে রেডি দলীয় সদস্যরা ।
বিগ ইয়ার্স, ফাজি, পুহ বিয়ার আর
স্ট্রেচ চারটে গান টারেটের দায়িত্বে – বিগ ইয়ার্স আর পুহ বিয়ার নিয়েছে পাখনার গায়ে
লাগানো আগ্নেয়াস্ত্রর ভার। ফাজির দায়িত্বে পেটের তলারটার । আর স্ট্রেচ একেবারে
ওপরের গম্বুজটার নিয়ন্ত্রনে ।
সিক্স ব্যারেল মিনিগানগুলোতে এই মুহূর্তে ভরা হয়েছে সুপার-লেথাল ৭.৬২ এম
এম বর্ম ভেদী বুলেট – অবশ্য ওয়েস্ট বিশেষ
নির্দেশ দিয়ে গেছে পরের দিকে কি ব্যবহার করতে হবে ... যখন যুদ্ধ চরম মাত্রায়
পৌছাবে।
উইজার্ড, লিলি আর হোরাসকে
নামিয়ে দেওয়া হয়েছে কাছের এক দ্বীপের বিশেষ সুরক্ষিত ঠিকানায় – এই মিশনে লিলিকে
নিয়ে যাওয়াটা খুবই বিপদ জনক ।
হ্যালিকারনাসসাস রাতের আকাশ
চিরে এগিয়ে চলেছে ।
এ বিমান আলো না জ্বালিয়েই অড়ে।
যাতে একে মেঘের গায়ে একটা অন্ধকার ছায়ার বেশি আর কিছু বলে মনেই হয় না । আর অনেক
দিন আগেই এটার ট্রান্সপন্ডারটা খুলে গেলা হয়েছিল, ফলে এটা থেকে কোনো ইলেক্ট্রনিক
সংকেত ও নির্গত হয় না।
এর গায়ে যে কালো বিশেষ রংটা করা
আছে ওটা র্যাডার নিরোধক। যা ব্যবহার করা হয় বি-২ স্টিলথ বোম্বার বিমানে। এর ফলে
গিটমো থেকে ধেয়ে আসা র্যাডারের তরঙ্গ একে ট্রেস করতেই পারবে না।
এ যেন এক অশরীরী ।
একটা অশরীরী যার অস্তিত্ব গুয়ান
তানামো বে এর আমেরিকান সেনারা ধরতেই পারবে না যতক্ষন না এটা গিয়ে ওদের মাথার ওপর
ভেসে দাঁড়াবে ।
আর সেটাও সবার আগে দেখতে পাবে
বা বলা যেতে পারে শুনতে পাবে - রাতের এক জোড়া পাহারাদার । যাদের অবস্থান মূল ঘাঁটি থেকে অনেক দূরের সেন্ট্রি টাওয়ারে । একেবারে মাথার দিকে , যেখান থেকে সমুদ্রকে নজরেই আনা যায় না। উইন্ড
ওয়ার্ড পয়েন্টের থেকে অনেক দূরে কুজকো পাহাড়ের কাছে ।
ওরা দেখতে পেলো এক বিরাট কালো
ছায়া নেমে আসছে ওদের মাথার ওপর দিয়ে । দক্ষিন দিকে ক্যারিবিয়ান সাগরের দিক থেকে।
ওরা সঙ্গে সঙ্গে জানালো ব্যাপারটা
।
নিমেষের মধ্যে সতর্কতার খবর ছড়িয়ে গেল ঘাঁটিতে । গুয়ান্তানামো বে’র ৩০০০
আমেরিকান সেনা ঘোষণা করলো যুদ্ধ ... জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়ে আর তার দলের বিরুদ্ধে ।
হ্যালিকারনাসসাস কুজকো পাহাড়ের
ওপর দিয়ে নেমে এলো নিচে । গুয়ান্তানামো বে তখন ভেসে যাচ্ছে চাঁদের আলোয় । সময় ভোর
পৌনে চারটে ।
বিরাট ৭৪৭ বিমানটা এরপরেই সরে
গেল বাঁদিকে এবং অদৃশ্য হলো গাছের আড়ালে ...
... নামলো গিয়ে গুয়ান্তানামো
বে’র গলফ কোর্সের ১৬ তম হোলের এলাকায় । জ্বলে উঠলো ডানার আলোর
বিমানের বিরাট টায়ারের চাপে
দেবে বসে গেল গলফ মাঠের জমি, উঠে আসতে থাকলো ঘাসের দলা । ডানার আলোয় পথ দেখে ওটা
এগিয়ে চললো । ১৬তম হোলের এলাকা পেরিয়ে ঢুকে পড়লো ১৭ তমর এলাকায়।
সামনেই দেখা যাচ্ছিলো ১৭ এবং ১৮
এর মাঝের ঝোপটাকে । স্কাই মনস্টার সোজা এগিয়ে গেল সামনের দিকে এবং হ্যালিকারনাসসাসকে
নিয়ে ঢুকে পড়লো ১৮ এর ঘাসে ঢাকা এলাকায়।
গুয়ান্তানামো বে’র পুরো এলাকায়
তখন বাজছে বিপদ সংকেতের ঘণ্টা আর ঝলক মারছে বিপদ সংকেত নির্দেশক আলো । জ্বলে উঠেছে
চারদিকে ফ্ল্যাশলাইট।
মেরিনাররা উঠে পড়েছে বিছানা
থেকে ।
গার্ড টাওয়ারের সেন্ট্রিরা
এম-১৬ তাক করে চারদিকে দেখছে ।
স্পট লাইট জ্বালিয়ে আকাশে
সন্ধান করা হচ্ছে আরো বিমানের।
কথাটা ছড়িয়ে গেছে... আক্রমণ
হয়েছে ঘাঁটিতে ... গলফ কোর্সের দিক থেকে!
রেকন মেরিনের দুটো ক্র্যাক টিম
রওনা দিয়েছে গলফ কোর্সের দিকে। ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারগুলো সাহায্য করার জন্য যাচ্ছে ওদের পেছনে। সাথেই রেডি হচ্ছে আর বড় এক
বাহিনী ।
ঘাঁটির প্রত্যেকটা কয়েদখানা
আলাদা আলাদা ভাবে ডাবল লক-ডাউন হয়ে গেছে
কম্পিউটার সিস্টেমের স হায়তায়। বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রহরীর সংখ্যাও।
চারদিকে এখন চলছে এক হইচই ।
গণ্ডগোল ... বিশৃঙ্খলা।
হ্যালিকারনাসসাসের অসাধারন ল্যান্ডিং
এর দিকেই চলে গেছে সকলের নজর । কেউ লক্ষ্যই করেনি দুটো কালো পোশাক পড়া
ডানা লাগানো অবয়ব এর মাঝেই নেমে পড়েছে গিটমো ঘাঁটির ভেতরে... নিঃশব্দে । ক্যাম্প
ডেল্টার ক্যাম্প ৩ এর সি-১২ হাট এর কংক্রিট দিয়ে
বানানো ছাদের ওপর ল্যান্ড করেছে ওরা ।
ছাদের ওপর একটা সেমটেক্স চার্জ
এর বিস্ফোরণ ঘটালো ওয়েস্ট । যে গর্তটা তার ফলে সৃষ্টি হলো সেটার ভেতর দিয়ে অনায়াসে
ঢুকে যেতে পারবে ও ।
লাফ দিলো গর্তটার ভেতরে –
- অন্ধকারে বিশেষ ভাবে
তারজাল দিয়ে বানানো কয়েদখানার ছাদের মেঝেতে গিয়ে ঠেকলো ওয়েস্টের পা । একটা ব্লো টর্চ দিয়ে
মেঝেতে যা প্রয়োজন সেটা করে নিয়েই ঝুঁকে ভেতরে তাকালো ওয়েস্ট –
- দেখতে পেলো একটা ভুতুড়ে
কঙ্কালের মতো চেহারা অন্ধকারে দুটো হাত ওপরের দিকে উঠিয়ে দাঁড়িয়ে আছে !
ওয়েস্ট দ্রুত ভেতরে নেমে জাঈদকে
এক ধাক্কা মেরে চেপে ধরলো দেওয়ালের গায়ে । তারপর হাতের ফ্ল্যাশ লাইটটা জ্বেলে তুলে
ধরলো আতঙ্কবাদীটার চোখ দুটোর সামনে।
ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে দেখা গেল
জাঈদের ভয় পাওয়া মুখটা ।
চুল দাড়ি সব কামানো । আপাতত
মাথা এবং কোণাকৃতি মুখে খোঁচা খোঁচা চুল দাড়ি গজিয়েছে। বেশ রোগা, অপুষ্টির শিকার । আর ওর
চোখ দুটো – দুটো চোখ – করোটিরগর্তের ভেতর
ঢুকে গেছে । সব
মিলিয়ে একটা জ্যান্ত কঙ্কাল ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না । চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে
উন্মাদনার রঙ মেখে।
‘মুস্তাফা জাঈদ?’
‘হ্যাঁ আ ...’
‘আমার নাম ওয়েস্ট । জ্যাক
ওয়েস্ট জুনিয়র । আমি এখানে এসেছি তোমাকে একটা
সুযোগ দিতে । চুক্তিও বলতে পারো । আমরা
তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছি । বদলে আমাদেরকে সাহায্য করতে হবে প্রাচীন সাতটি
আশ্চর্য খুঁজে বার করার ক্ষেত্রে । ওগুলো
থেকে গ্রেট পিরামিডের গোল্ডেন ক্যাপস্টোন সংগ্রহ করার জন্য । বলো কি বলতে চাও?’
এতক্ষন যে সামান্য প্রতিরোধ
করার চেষ্টা জাঈদ করছিল সেটা থেমে গেল সাত আশ্চর্যের কথা শুনেই। পাগল চাহনির ভেতরে
ওয়েস্ট একই সাথে দেখতে পেলো – স্বীকৃতি, আশঙ্কা এবং এক প্রবল উচ্চাশার নগ্ন
উল্লাস।
‘আমি তোমাদের সাথে যাবো,’ জাঈদ
জানালো ।
‘চলো তাহলে –’
‘দাঁড়াও!’ জাঈদ বলে উঠলো । ‘ওরা
আমার ঘাড়ে একটা মাইক্রোচিপ ইমপ্ল্যান্ট করে দিয়েছে! লোকেটর চিপ! ওটাকে আগে বার
করতে হবে । তা না হলে এরা জেনে যাবে তোমার আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো বা গিয়েছ !’
‘ওটা আমরা বিমানে ওটার পর করবো!
এখন চলো... আমাদের হাতে সময় খুব কম!’ ওয়েস্ট ওপর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘জো, দড়ি ফেলো
!’
একটা দড়ি নেমে এলো গর্তের ভেতর
দিয়ে । দ্রুত ওয়েস্ট আর জাঈদ ওটা ধরে কয়েদখানার ভেতর থেকে ওপরে উঠতে শুরু করলো ।
ওদিকে গলফ কোর্সে , রেকন মেরিনদের
টিম দুটো পৌছালো সেই জায়গায় যেখানে হ্যালকারনাসসাস ক্লাব হাউসটাকে ভেঙে চুরে দিয়ে
অনেকগুলো ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
চোখ ধাঁধানো আলোতে প্রায় অন্ধের
মতো মেরিনরা কালো ৭৪৭ বিমানের তিনদিকে ঘিরে এগোতে শুরু করলো, আগ্নেয়াস্ত্র বাগিয়ে
–
- আর সাথে সাথেই
হ্যালিকারনাসসাসের চারটে ঘূর্ণায়মান গান টারেটস থেকে শুরু হল বুলেট বৃষ্টি ।
আর সেই বুলেট বৃষ্টির ধাক্কায়
মেরিন সদস্যরা ছিটকে পড়তে শুরু করলো এদিকে ওদিকে ।
যদিও কেউ মারা গেল না।
সব ছিল
রাবার বুলেট, ঠিক যেমনটা এর আগে ব্যবহার করেছিল ওয়েস্টরা সুদানের অভিযানে।
ওয়েস্টের কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে
দলের প্রতি – শুধু তাকেই হত্যা করবে যে তোমাকে হত্যা করতে চাইবে। যে বা যারা তাদের
দায়িত্বের কাজ করছে তাদের মারবে না।
ওয়েস্টের ভাবনা অনুসারে , গুয়ান্তানামো
বে এর মেরিনসেনাদের সাথে কোনও শত্রুতা ওদের নেই – ওদের শত্রু কেবলমাত্র ওই ঘাঁটি
চালক সরকার এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকের দল ।
রাবার বুলেটের আঘাত খেয়ে
মেরিন সেনাদের ধারনা হলো এটা নিশ্চিত ভাবে কোনো বিশেষ “এক্সারসাইজ” চলছে ।
ওপরওয়ালাদের একটা অতি বিশেষ পরীক্ষা এই রাতে যে সেনারা ঠিকঠাক কাজ করছে , নাকি করছে না ।
এর ফলে ওরা মানসিক ভাবে অনেকটাই
মারন মখী ভাবটা কমালো । ওরা কেবলমাত্র বিমানটাকে ঘিরে ধরার দিকে নজর দিলো। ওটাকে ধ্বংস করার
বদলে।
আর তারপরেই ওরা অবাক হয়ে দেখলো
বিশাল কালো ৭৪৭ বিমানটা আবার নড়তে শুরু করেছে। আস্তে আস্তে ঘুরে ওটা সোজা হয়ে দাঁড়ালো ১৮ তম গলফ হোলের মাঠের সোজা
লাইনে।
বুলেট বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। বিরাট বিমানটার ইঞ্জিন চালু হলো সশব্দে।
নিঝুম রাতে সে আওয়াজে মেরিনসেনাদের কানে তালা ধরে গেল।
এগিয়ে যেতে থাকলো বিমানটা ঘাসে ঢাকা জমি ধরে
... মেরিনাররা অবাক হয়ে দেখলো একটাও সেনা
নামলো না ওটা থেকে... কিছুই করলো না ওটা সেই অর্থে ... কিছুই না ।
আরো বিস্ময়কর দৃশ্য ওরা দেখলো এরপরেই ।
দুটো ডানাওয়ালা অবয়ব মেরিন
সেনাদের পেছনের গাছের মাথার ওপর থেকে উড়ে গেলো – পড়নে কালো পোশাক , পিঠে লাগানো
কালো কার্বন ফাইবারের ডানা – ধেয়ে চললো ৭৪৭ বিমানটার দিকে , সাথে থাকা কমপ্রেসড
এয়ার থ্রাস্টার এর সাহায্যে । দুটো অবয়বই উড়ে গেল হ্যাং গ্লাইডারদের মতো একটানা সোজা ।
উড়ন্ত অবয়বদের ভালো করে দেখতেই
মেরিন সেনাদের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো । ওরা এখন বুঝতে পারছে এটা মোটেই কোনও এক্সারসাইজ ছিল না।
কারন একজন উড়ন্ত অবয়বের বুকের
কাছে বেল্ট দিয়ে আটকানো ছিল একটি মানুষ।
মাথা কামানো এবং পরনে উজ্জ্বল কমলা রঙের পোশাক। যার একটাই অর্থ ওটা ক্যাম্প
৩ এর কোনো এক কয়েদী ।
এতো জেল ভাঙার ঘটনা ঘটে গেল... !!!
হ্যালিকারনাসসাস ইতিমধ্যে তার
গতি বাড়িয়ে বাকি দুটো হোলের ঘাসে ঢাকা পথের ওপর দিয়ে ছুটে গিয়ে গাছের সারির একটু
আগেই উঠে গেল আকাশের পথে ।
তিনটে ব্ল্যাক হক চপার ওদের
খানিকক্ষণ তাড়া করে গেল, গুলিও চালালো,
কিন্তু ৭৪৭ এর গতির সাথে পাল্লা দেওয়া ওদের পক্ষে সম্ভব নয়।
একজোড়া এফ-১৫ ১০ মিনিটের ভেতর
এসে হাজির হল , কিন্তু তত ক্ষনে অশরীরী ৭৪৭
হারিয়ে গেছে আকাশের বুকে । কোন র্যাডার স্ক্যানেই হদিশ পাওয়া গেল না ওটার
– ওটা চলে গেছে তার নিজের পথে।
শেষ ওটাকে দেখা যায় দক্ষিনের দিকে যেতে,
তারপর মিলিয়ে যায় কিউবার কাছের এক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভিমুখে ।
জামাইকা ।
এক ঘণ্টা পর, পৃথিবীর আরেক
প্রান্তে , ডিজিট্যাল টেলিপ্রিন্টারে একটি রেডিও বার্তা প্রিন্ট হয়ে বেরিয়ে আসে –
TRANS INTERCEPT:
SAT BT-1009/03.17.06-1399
A40-TEXT TRANSMISSION
FROM: USAF SECURE FREQUENCY,
ASWAN MILITARY AIRFIELD
(EGYPT)
TO: UNSPECIFIED DESTINATION, MARYLAND
(USA)
VOICE 1 (USA):
কর্নেল , প্রেসিডেন্ট খুবই
উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। গিট মো থেকে আসা একটি রিপোর্ট তার মুড আরো খারাপ করে দিয়েছে
। ক্যাম্প ডেল্টা থেকে একজন সৌদি সন্ত্রাসবাদীকে কারা যেন উঠিয়ে নিয়ে চলে গেছে । নাম
জাঈদ । খবর অনুসারে ক্যাপস্টোনের প্রোজেক্টের সাথে এই মানুষটার যোগাযোগ আছে ।
VOICE 2 (EGYPT):
এটা ওয়েস্টের কাজ। এ একমাত্র ওর পক্ষেই সম্ভব । যে কোন কারনেই হোক ও বুঝেছে
জাঈদকে ওর দরকার।
VOICE 1 (USA):
সত্যি নাকি? ওয়েস্ট! আমাদের কি জাঈদকে দরকার আছে?
VOICE 2 (EGYPT):
না । আমাদের যা যা খবর দরকার ছিল সব পেয়ে গেছি ওর কাছে থেকে অনেক দিন আগেই।
[LONG PAUSE]
VOICE 1 (USA):
কর্নেল জুডা, আমাদের তরফে কোনো
রকম চিন্তার কারন আছে কি? রাষ্ট্রপতি একটা ড্রাফট বানানোর আদেশ দিচ্ছেন “সমগ্র
দেশের উদ্দেশ্যে” সমুদ্র তীরবর্তী মানুষদের দ্রুত অন্য কোথাও সরে যাওয়ার নির্দেশ
দিয়ে । যদি তুমি সফল হতে না পারো ।
VOICE 2 (EGYPT):
ওনাকে জানিয়ে দিন আমরা সফল হবোই। আজ অবধি সব কিছু আমাদের পরিকল্পনা অনুসারেই
চলছে। ওয়েস্ট কে যখন খুশি আমারা সেষ করে দিতে পারি । কিন্তু
ওর পিছু নিলে কাজ গুলো অনেক সুবিধা জনক হয়ে যাচ্ছে। আর ইউরোপিয়ানরা সেটাই করছে যা
আমরা আশা করেছিলাম । প্রেসিডেন্টকে বলুন তার কাজ করে যেতে এবং ভাষন লিখে রাখতে ।
যদিও ওটা ব্যবহারের দরকার হবে না । জুডা । আউট ।
0000000000000000000000000000000000000
[ষষ্ঠ অধ্যায় শেষ । সপ্তম অধ্যায় **লিলি – একটা মেয়ের নাম**দ্বিতীয় পর্ব । https://amarkolponarjogot.blogspot.com/2017/09/blog-post_28.html]
No comments:
Post a Comment