Search This Blog

Friday, September 8, 2017

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৬১-৭৩) ৫ম অধ্যায় - “দ্বিতীয় অভিযান - লাইট হাউস” [দ্বিতীয় ভাগ] প্রতিম দাস

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৬১)
“দ্বিতীয় অভিযান - লাইট হাউস”
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০০০০.


ওরা ছুটে চললো বিরাট হলটার ভেতর দিয়ে । স্তম্ভ গুলোর আকৃতির কাছে বামনের সমান ওরা । একসময় প্রবেশ করলো একটা পিছলে নেমে যাওয়া সুড়ঙ্গের ভেতর যার অবস্থান এক্কেবারে ভেতরের দেওয়ালে ।
ওদিকে বাইরে গিরিখাতে বিগ ইয়ার্স, স্ট্রেচ, উইজার্ড এবং পুহ বিয়ার চালিয়ে যাচ্ছে বন্দুকের লড়াই পর পাড়ের টাওয়ারের সিয়েফ সেনাদের সাথে ।
‘ গুলি চালাতেই থাকো!’ উইজার্ড চিৎকার করে বললো । ‘ যতটা সময় আমরা জুডাকে ওখানে আটকে রাখতে পারবো ঠিক ততটা সময় হান্টস ম্যান পাবে ভুলে যাওয়া বাসস্থানের ভেতরে কাজ করার –’
ওনার কথা থেমে গেল , কারন সহসাই পুরো গিরিখাতটা বেশ জোরে নড়ে উঠলো ... কেঁপে উঠলো।
ক্ষনিকের জন্য ওরা গুলি করা থামালো ।
ওদিকে জুডার দল ও  - ঠিকঠাক বললে বলতে হয় সহসাই ওরা সেন্ট্রি টাওয়ার থেকে চলে যেতে শুরু করলো ।
‘কি হলো এটা ...?’ বিগ ইয়ার্স চারদিকে তাকিয়ে বললো।
‘আমার তো মনে হচ্ছে ভূমিকম্প হলো...’ পুহ বিয়ার বললো ।
‘ওটা ভূমিকম্প ছিল না,’ উইজার্ড জানালো ।
পরবর্তী মুহূর্তে , জুডাদের সেন্ট্রি টাওয়ারের তলার দেওয়ালে একটা বিরাট বিস্ফোরণ হলো । গিরিখাতের জলস্তরের সামান্য ওপরে ।
যা দৃশ্যমান হলো এর পরে তার নাম এম-১১৩ টিবিভি-এমভি [সুড়ঙ্গ খনন করার গাড়ী, মাঝারী মাপের] । বাণিজ্যিক স্তরে ব্যবহৃত এই ধরনের গাড়ির মিলিটারি সংস্করণ । আর আসল সত্যিটা হলো । এম ১১৩ ২ ব্রিজ-লেইং গাড়িকে টানেল মেকিং করার জন্য অদলবদল করে নেওয়া হয়েছে।
মাপে ট্যাঙ্কের মতো, সামনের দিকে বিরাট স্ক্রুয়ের মতো একটা অংশ   বেরিয়ে আছে আছে যা ঘুরেই চলেছে । ওর পথের সামনে যা কিছু আসবে তাকে একেবারে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার জন্য তৈরী ।
পাথর ধুলো বালি যা পাচ্ছে সব ঢুকিয়ে নিচ্ছে ভেতরে তারপর তাকে বাইরে ফেলে দিচ্ছে পেছনদিক দিয়ে। মেশিনটার ওপরে ছাদের গায়ে লাগানো আছে একটা ভাঁজ করা মেক্যানিক্যাল ব্রিজ।
টানেল-বোরিং গাড়িটা দেওয়ালের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে এসে থেমে গেল । বিরাট স্ক্রুয়ের মতো ড্রিল-বিট ঘোরা অবশ্য থামেনি । সোজাসুজি মাত্র কুড়ি মিটার দূরে সেই জেটি যেখান দিয়ে ওয়েস্টরা কিছুক্ষন আগেই ভেতরে প্রবেশ করেছে।
‘ওরা ফিল্ড ইন এক্সক্যাভেশন সুড়ঙ্গটা ফুঁড়ে এগিয়ে যাবে ...’ উইজার্ড একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন। ‘ কি বুদ্ধিমান । আধুনিক সুড়ঙ্গ খননকারী যন্ত্র দিয়ে এ কাজ করা যেত না ।’
‘কাজ সব কিছু দিয়েই করানো যায় যদি আপনার কাছে সঠিক জ্ঞানটা থাকে ,’ স্ট্রেচ বললো।
‘ওরা সেটাই করছে,’ পুহ বিয়ার বললো ।
ওই সময়ে টানেল –বোরিং গাড়িটা ভেতরের ইঞ্জিনের সহায়তায় ছাদের ওপরে ভাঁজ করে রাখা ব্রিজটা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে । ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে ব্রিজটা । এগিয়ে যাচ্ছে গাড়িটার সামনের দিকে থামলো স্বয়ংক্রিয় নড়াচড়া পুরোপুরি খুলে যাওয়ার পর । ওটার মাথাটা গিয়ে স্পর্শ করলো কুড়ি মিটার দূরের ছোট্ট জেটিটাকে ।
আমেরিকান সুড়ঙ্গ আর জেটি আপাতত সংযুক্ত ।
‘সত্যিই ওদের ভাবনা অন্যরকম ...’ বিগ ইয়ার বললো ।
এক সেকেন্ড বাদেই, সেন্ট্রি টাওয়ারের ভেতরের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে জুডার সিয়েফ বাহিনী বন্দুক হাতে ব্রিজের ওপর দিয়ে এগিয়ে চললো ।
যেতে যেতেই উইজার্ডদের টাওয়ারের দিকে চালিয়ে গেল বুলেটের বন্যা ।
বিগ ইয়ার্সরাও   ওদের থামানোর জন্য পালটা জবাব দিলো কিন্তু তাতে কাজ কিছুই হলো না ।
জলের ওপরের পথ পার হয়ে দ্রুত এগিয়ে গেল ঢালু পথের দিকে যা চলে গেছে হ্যামিলকারের ভুলে যাওয়া বাসস্থানের দিকে ।
ওরা ঢুকে পড়লো ভেতরে, মাত্র এক মিনিটের দুরত্ব এখন ওদের আর ওয়েস্ট , জো আর লিলির  মাঝে।
ওয়েস্ট , জো আর লিলি ছুটে চলেছে দুর্গের পেছনের ওপর দিকে উঠতে থাকা সুড়ঙ্গ পথে, গ্লোস্টিকের আলোয় পথ দেখে।
দৌড়াতে দৌড়াতেই ওয়েস্টের নজরে এলো বেশ বড় বড় শুকনো জমাট বাঁধা মাটির টুকরো লেগে আছে ঢালু পথের কানায় । ভুরু কুঁচকে গেল ওয়েস্টের । শুকনো কাদা ? এখানে এগুলো এলো কিভাবে।
‘জ্যাক! জো !’ উইজার্ড এর গলা ভেসে এলো ওদের ইয়ার পিসে। ‘জুডা জলের পথ পার হয়ে গেছে ! আবার বলছি জুডা জলের পথ পার হয়ে গেছে ! ওর দল তোমার পেছনেই ধাওয়া করছে !’
একটানা একশো মিটার ওপরের দিকে সুড়ঙ্গ পথে চলার পর, ওরা প্রবেশ করলো একটা এমন ঘরে যার ছাদটা গম্বুজ আকৃতির এবং অনেক উঁচু –
- এবং বিষ্ময়ে থমকে গেল
‘আরে একি –’ জো শ্বাস নিলো । ‘ ওখানে তো দুটো দেখা যাচ্ছে...’
পুরো ঘরটা নিখুঁত বৃত্তাকার এবং সালফার জাতীয় গ্যাসের দুর্গন্ধে ভরা । যার উৎস আগ্নেওগিরি । এটাও একটা পবিত্র মন্দিরের উপাসনা গৃহ ।
বেঁকানো দেওয়ালের গায়ে সারি সারি ছোট ছোট ঘর – ভেঙে চুরে গেছে , সাথেই ক্ষয়ে ক্ষয়ে  গেছে কারথেজিয়াদের স্ট্যাচু গুলোও – ঘরের অন্য এক দিকে গ্র্যানাইট পাথরের একটা বাঁধের মতো দেখা যাচ্ছে । যার পেছনে গবগব করে ফুটছে আগ্নেওগিরির কাদা । ওখান থেকেই ভেসে আসছে সালফারের দুর্গন্ধ।
মেঝেতে ওয়েস্ট, লিলি আর জোয়ের সামনে পড়ে আছে ছ’টা কঙ্কাল । নাজি সেনার। সবকটা শরীর অদ্ভুত ভাবে বিকৃত । কোনো কঙ্কালেরই কোমরের পরের অংশ নেই । পা যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে । সত্যি বলতে দেখে মনে হচ্ছে শিরদাঁড়ার শেষ অংশটা যেন গলে গেছে।
এই অদ্ভুত কঙ্কালগুলোর পেছনে, এই পবিত্র কক্ষের প্রধান বিষয়টি অবস্থান করছে।

গোলাকৃতি কক্ষের ঠিক মাঝখানে , মেঝে থেকে ১০ ফুট ওপরে একটা প্ল্যাটফর্ম । ওঠার জন্য চওড়া ধাপের সিঁড়ি আছে ওটার সাথে । আর ওর ঠিক ওপরে – ওয়েস্ট অবাক হয়ে দেখছে – রাখা আছে একটা নয় ... দু দুটো প্রাচীন আশ্চর্য ।
প্ল্যাটফর্মটা যেন একটা দ্বীপ । ওপরে  স্যাটেলাইট ডিস্কের মতো অবস্থান করছে সেই বিখ্যাত কল্পকথার আয়নাটা । যা ছিল আলেকজান্দ্রিয়ার লাইটহাউসে।
পুরোটাই ঢেকে আছে আগ্নেওগিরির ছাইয়েতে। কিন্তু ওর প্রান্তসীমা চিনতে না পারা কোন কারণই নেই। ১৫ ফুটের একটা ডিস , নিশ্চিতভাবেই ছিল সেই সময়ের বিষ্ময় সৃষ্টিকারী এক সৌন্দর্য ।
ওয়েস্টের চোখ গেল ওটার ভিত্তির দিকে ।
সলিড ট্র্যাপিজোডিয়াল ভিত্তি । ঢেকে আছে ধুসর ছাই এর আস্তরণে।
আরে তাইতো এবার একটা মানে বোঝা যাচ্ছে – ক্যালিম্যাচুসের লেখনীতে বার বার “ভিত্তি” কথার ব্যবহারের এটাই তাহলে অর্থ । মনে মনে আউড়ে নিলো আসল সুত্রটা যাতে বলা আছে বাতিঘরের টুকরোর হদিশ –
ভিত্তির দিকে তাকাও যেটা এক সময়ে ছিল গ্রেট টাওয়ারের চুড়া
আর ইউক্লিডের নির্দেশনামা –
ভিত্তিটাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল রোমানদের আক্রমণের আগেই,
নিয়ে যাওয়া হয় হ্যামিলকারের ভুলে যাওয়া বাসস্থানে ।
লাইট হাউসের আয়নাটা নিজেই এক আশ্চর্য, কিন্তু এটার ভিত্তিটার – একেবারে সাধারন ট্রাপেজোডিয়াল আকারের ভিত্তি – ছিল বিরাট দাম ।
ভিত্তিটা আসলে গোল্ডেন ক্যাপস্টোনের সপ্তম অংশ ।
কিন্তু ওদিকে প্ল্যাটফর্মটার ওপরে আর একটা মনুমেন্ট গর্বিত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে – আয়নাটার পাশেই, ডান দিকে।
আকৃতি অক্টাগনাল । বিরাট শ্বেতপাথরের স্তম্ভ, খাড়া দাঁড়িয়ে আছে । আট ফুট হবে উচ্চতায় । সাতফুট বেষ্টনী । ওপরের অংশটা কবেই হাওয়া হয়ে গেছে, কিন্তু নিচের অংশটা একেবারে ঠিকঠাক রয়ে গেছে ।
আর আয়নাটার মতোই এটার ভিত্তিটাও ট্রাপেজোডিয়াল ।
অর্থাৎ ক্যাপস্টোনের আরো একটা অংশ ।
‘অতিরিক্ত বড় মাত্রার অক্টাগোনাল স্তম্ভ ...’ জো বললো, ওর মনে ভেতরে ভাবনার ঝড়। ‘একটাই প্রাচীন স্থাপত্যর কথা জানা যায় যেখানে ছিল অতিরিক্ত বড় মাপের অক্টাগোনাল স্তম্ভ –’
‘হালিকারনাসসাস এর সমাধি মন্দির,’ ওয়েস্ট বললো । ‘ লিলিতো এটার ব্যাপারে লেখা ক্যালিম্যাচুসের লেখা এখনো পড়েইনি । তবে আমি নিশ্চিত যখন পড়ার সুযোগ পাবে জানতে পারবে বাতিঘরের টুকরোটার সাথেই যে এটা রাখা আছে । যখন তুমি একটা খুঁজে পাবে, সাথে সাথেই পেয়ে যাবে দ্বিতীয়টা । জো, আমরা জ্যাকপট পেয়ে গেছি বলতে পারো। একসাথে ক্যাপস্টোনের দুটো টুকরো খুঁজে পেয়েছি।
০০০

‘আমাদের কিছু একটা করতে হবে!’ পুহ বিয়ার জোর দিয়ে বললো।
স্ট্রেচ হতাশ ভাবে বললো, ‘কি বা করতে পারি আমরা? ওরা চেষ্টা করেছে । এই মিশনের এখানেই সমাপ্তি । আমার মতে এখন আমাদের নিজেদের প্রান বাঁচানোর কথা ভাবা উচিত।’
ওরা এখনো নিজেদের সেন্ট্রি টাওয়ারে । দেখছে জুডার বাহিনী এক এক করে ঢুকছে ভুলে যাওয়া বাসস্থানে ।
‘স্বভাবটা তোমার পাল্টালো না ইজ্রায়েলী,’ পুহ বললো। ‘ তোমার প্রাথমিক চাহিদা সব সময়ে নিজেকে বাঁচানো । আমি কিন্তু অত সহজে হাল ছেড়ে দেবো না । আমার বন্ধুদের বিপদের মুখে ছেড়ে এতো সহজে –’
‘তাহলে কি করতে চাও সেটা বলো দেখি বোকা হাঁদা একগুঁয়ে আরব?’
পুহ বিয়ার কোন উত্তর দিলো না ।
দুর্গের বামদিকে তাকালো, ওখানে  ওয়াই এর মতো ভাগ হয়ে যাওয়া জলের ওপর দিয়ে একটা সেতুর মতো আছে উঁচু ধনুকাকৃতি অনেকগুলো খিলানের ওপর অবস্থিত।
দৃঢ়তার সাথে বললো , ‘আমরা ওটা পার হয়ে যাবো।’

ওদিকে পবিত্র কক্ষে, ওয়েস্ট এগোচ্ছে মধ্যের ওই প্ল্যাটফর্ম স্বরুপ দ্বীপটার দিকে ।
 দুটো অমূল্য গুপ্তধন ছাড়াও আর একটা জিনিষ দেখা যাচ্ছে ওটার ওপরে – সাত নম্বর নাজি সেনার কঙ্কাল । কুঁকড়ে পড়ে আছে একেবারে সিঁড়ির ওপরের ধাপে ।
বাকি কঙ্কাল গুলোর মতো এটার অবশ্য শরীরে কোন বিকৃতি নেই । পরনে কালো এস এস ইউনিফর্ম । হাড়ের ওপর এখনো শুকনো মাংস চামড়া লেগে আছে ।
ওয়েস্ট এগিয়ে গেল প্ল্যাটফর্মের দিকে এবং ওটার সিঁড়িটাকে দেখলো ভালো ভাবে – সমস্ত সিঁড়িটাই মনে একসাথে একটা বিরাট মাপের ট্রিগার স্টোন ।
ভালো করে কঙ্কালটাকে দেখলো ।
দেখতে পেলো তার দিয়ে মোড়ানো চশমাটা এখনো নাকের ওপরে অবস্থান করছে । লাল স্বস্তিকা চিহ্ন আঁকা ফিতেটা হাতে বাঁধা । ডানহাতের আঙ্গুলে পার্পল অ্যামিথিয়েস্ট আংটি । এ আংটি পড়ত শুধু নাজি পার্টির ফাউন্ডার মেম্বাররা।
‘হেসলার ...’ চিনতে পেরে ঢোঁক গিললো ওয়েস্ট । এটা হারম্যান হেসলারের কঙ্কাল । নাজি প্রত্নতত্ত্ববিদ । বিখ্যাত হেসলার-কোয়েনিগদের একজন।
বিসদৃশভাবে, কঙ্কালটার ডানহাতটা বাইরের দিকে বেরিয়ে আছে , সম্ভবত ধাপের নিচের দিকে যাওয়ার ইছে প্রকাশ । সম্ভবত হেসলারের ইহজগতের শেষ নড়াচড়া, কিছু একটা ধরার ...
...একটা ব্যবহার বিক্ষত চামড়ায় মোড়ানো নোট বুক পড়ে আছে একেবারে নিচের ধাপে।
ওয়েস্ট নোট বুকটা তুলে নিলো । খুললো ওটাকে ।
একাধিক ডায়াগ্রাম , তালিকা এবং আঁকিবুকি প্রত্যেকটা প্রাচীন আশ্চর্যের , যেন তাকিয়ে আছে ওয়েস্টের দিকে । সাথে সাথেই অজস্র নোটস লেখা জার্মান ভাষায় । পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হাতের লেখাটি ছিল হারমান হেসলারের ।
সহসাই ইয়ারপিসে ভেসে এলো শব্দ –
‘জ্যাক! জো!’ উইজার্ডের গলা । তোমাদেরকে লুকিয়ে পড়তে হবে! জুডা যেকোনো মুহূর্তে ওখানে পৌঁছে যেতে পারে –’
ওয়েস্ট নিচু হলো কারন ওর পেছনের এন্ট্রি টানেলটা থেকে একটা বুলেট ওর মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল । খুলির কয়েক সেন্টিমিটার দূর দিয়ে।
‘তোমরা দুজন ওদিকে যাও!’ জো আর লিলিকে বললো দরজাটার বামদিকে ইশারা করে দেখালো । নিজে পাথরের দরজার ফ্রেমটার ডানদিকে ছুটে গেল । পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখলো কালো কালো সব ছায়া মূর্তি সুড়ঙ্গ পথে এগিয়ে আসছে, অতি দ্রুত গতিতে।
এখন সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ।

কোন পথই নেই ওই লাইট হাউসের আয়না আর সমাধি মন্দিরের স্তম্ভ রাখা প্ল্যাটফর্মের ওপর উঠতে পারার জুডার বাহিনী আসার আগে । সুযোগও নেই লিলিকে ক্যাস্টোনের টুকরোর গায়ে খোদাই করা লেখাগুলো দেখানোর।
গোটা কক্ষর চারদিকে ওর চোখ ঘুরছিল যদি একটা পালানোর পথ মেলে । প্ল্যাটফর্মটার কিছুটা দূরে  বে খানিকটা ফাঁকা জায়গা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু ওখান দিয়ে পালানোর কোন পথ নেই । কারন ওর পরেই সেই গ্র্যানাইট পাথরের বাঁধটা যার পেছনে ফুটছে কাদা । নিশ্চিত ভাবেই অপেক্ষা করছে ট্রিগার স্টোনে চাপ পড়ার ।
এসব দেখতে দেখতেই পুরো ছকটা বুঝতে পারলো ওয়েস্ট । ওপর দিকে উঠতে থাকা সুড়ঙ্গ পথের ধারে শুকনো কাদামাটির কারনটাও ধরতে পারলো । নিচের হল ঘরের ড্রেনওয়ালা পথ এবং একইরকম ভাবে অতিকায় আর্চওয়ের সিঁড়ি পথের ড্রেন – সব জায়গাতেই এই ফুটন্ত কাদা । যখনই বাঁধ থেকে মুক্তি পায় , ওই দশ ফুট উঁচু প্ল্যাটফর্মের পাশ দিয়ে গড়িয়ে আসে এবং ধেয়ে যায় ভুলে যাওয়া বাসস্থানের আনাচে কানাচে । তারপর গিয়ে পড়ে গিরিখাতের জলে । আর তার পথের সামনে যে সমস্ত গুপ্তধন চোরেরা পড়ে যায় তাদের একটাই পরিণতি হয় মৃত্যু । এভাবেই সুরক্ষিত থাকে  দুটি ক্যাপস্টোনের টুকরো ।
ওই আধখানা করে শরীরওয়ালা নাজি কঙ্কালগুলোর , যাদের কোমর পর্যন্ত গলে গিয়েছে কিভাবে তারও একটা উত্তর মিললো । ওরা কাদার হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে জীবন হারিয়েছে । হেসলার নিজে   আটকে গিয়েছিলেন প্ল্যাটফর্মের ওপরে । চারদিকে তো শুধু কাদার স্রোত । সম্ভবত উনি মারা গিয়েছিলেন সবচেয়ে বিচ্ছিরী রকম ভাবে – অনাহারে, অন্ধকারে, একা। ওর সঙ্গী কোয়েনিগ যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং মরুভূমি পার করে টোব্রুকে পৌঁছান।
বৃত্তাকার দেওয়ালের গায়ে বানানো ছোট ছোট ঘর আর স্ট্যাচুগুলো দেখতে দেখতে ওয়েস্টের চোখে পড়লো প্রধান দরজাটার দুপাশে দুটো ছোট ফাঁকা জায়গা ।
নিচু ধনুকাকৃতি সুড়ঙ্গ ওগুলো , উচ্চতা এক মিটার – কক্ষের মেঝের থেকে ফুট দুয়েক উঁচুতে অবস্থিত । 
ওয়েস্ট জানে না গুলো কি, আর এই মুহূর্তে সে সব ভেবে কোন লাভও নেই ।
‘জো! ওই ছোটো সুড়ঙ্গটা দেখো! লিলিকে নিয়ে ওটার ভেতর দিয়ে চলে যাও !’
জো সঙ্গে সঙ্গে লিলিকে নিয়ে ওদের দিকের সুড়ঙ্গটার দিকে এগিয়ে গেল । ওয়েস্ট নিজের দিকেরটার কাছে গিয়ে উঁকি মেরে দেখল ভেতরে ।
নিচু সুড়ঙ্গটা মিলিয়ে গেছে নিচের দিকে একটা লম্বা সোজা লাইনের মতো ।
‘কিচ্ছু করার নেই,’ জোরে বললো ।
নিজেকে ঢুকালো ছোট সুড়ঙ্গ টার ভেতরে – অন্যদিকেরটায় ঢুকে পড়লো জো আর লিলি – কয়েকটা সেকেন্ড যেতে না যেতেই পবিত্র কক্ষে প্রবেশ করলো জুডার বাহিনী ।
আর ঠিক সেই মুহূর্তে চারটে ক্ষুদ্র অবয়ব দারুন উঁচু সেই সেতুটার ওপর দিয়ে এগিয়ে চলেছে ওয়াই ভাগে বিভক্ত জলময় গিরিখাতের বামদিকের বাহুর ওপর দিয়ে।
সবার আগে পুহ বিয়ার । ওদেরকে দেখে মনে ওরা যেন একদল টাইট রোপ ওয়াকার । ওরা ওটাকে পার করতে সক্ষম হলো এবং বেশ খানিকটা দূরের একটা  ছোট্ট এক মিটার উঁচু ধনুকাকৃতি ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেল।
মার্শাল জুডা প্রবেশ করলো গম্বুজাকৃতি কক্ষে । চোখ গেল আয়না আর স্তম্ভটার দিকে।
সন্তুষ্টির হাসি ফুটে উঠলো মুখে ।
চারদিকের সব কিছু খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন ওয়েস্টের খোঁজে –
এখনো অবধি ওর কোন চিহ্ন নেই দেখছি।
চেঁচিয়ে বললেন, ‘ জ্যাক! আমি জানি তুমি এখানেই আছো। কি ভাগ্য আমাদের... একদিনে দুবার মুখোমুখী হবো আমরা  কেন জানিনা মনে হচ্ছে এবারেও তোমার ভাগ্যে লবডঙ্কা …’
ওর দলের লোকেরা তন্নতন্ন করে ঘরের প্রতিটা স্থান খুঁজে দেখলো ।
ওয়েস্ট যতটা পারলো নিজেকে পেছন দিকে ঠেলে দিলো সুড়ঙ্গটার ভেতরে। মনে মনে চাইছিল অন্ধকারে ওকে যেন দেখা না যায় ।
পিছিয়ে যাওয়ার সময় থাই হোলস্টার থেকে এইচ অ্যান্ড কে পিস্তলটা বার করে ওপরের দিকে তাক করলো– কয়েক মুহূর্ত যেতেই গর্তটার কাছে হাজির হল একটা সিয়েফ সেনা, হাতে বন্ধুক রেডি ।
ওয়েস্ট ট্রিগারে হাত রাখলো – গুলি চালালে সাময়িক সময়ের জন্য ও হয়তো বাঁচবে, কিন্তু সাথে সাথেই সবাই জেনে যাবে ওর অবস্থান।
ভাগ্য ভালো সিয়েফ সেনা গুলি চালানোর চেষ্টা করলো না ।
বেশ খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো অন্ধকারের ভেতরে যদি ওয়েস্টকে দেখা যায় ।
দেখতে পেলোনা ...
কিন্তু সিয়েফ সেনা এবার হাত বাড়ালো গলায় ঝোলানো নাইট ভিশন দুরবীনের দিকে।

ওদিকে পবিত্র কক্ষে মার্শাল জুডা পোর্টেবল এক্সরে স্ক্যানার দিয়ে প্ল্যাটফর্মটাকে পরীক্ষা করে দেখছে। যা বানানো হয়েছে ডিওরাইট দিয়ে । ফলে অন্যদিক থেকে ড্রিল করে হাতল সেট করা যাবে না ।
পরিস্থিতি একেবারে জলের মতো সোজা । ভাবনাটা যে ষষ্ঠ ইমহোটেপের । ওই ওপরে উঠতে হলে তোমাকে  ফাঁদ চালু করতেই হবে।
আর তার অর্থ এখানে জুডা আর তার দলের লোককে অতি দ্রুত কাজ করতে হবে।
‘জেন্টলমেন,’ জুডা বললো এটা ষষ্ঠ ইমহোটেপের টাইপ ফোর ট্র্যাপ । সময় পাওয়া যাবে খুবই কম । রোলারগুলো রেডি করো । আমি আটজনের দল চাই আয়নাটা আনার জন্য এবং চারজনের দল স্তম্ভটার জন্য।’
একজন লেফটেন্যান্ট জানতে চাইলো, ‘আপনি চাইছেন আমারা আয়না এবং পিলার দুটোকেই নিয়ে যাই ?’
‘আয়না আর স্তম্ভ দিয়ে কি ঘোড়ার ডিম করবো আমি? আমার শুধু টুকরো দুটো দরকার ,’ ঝাঁঝিয়ে জবাব দিলো জুডা।
সিয়েফ সেনারা কাজ শুরু করে দিলো ।
ওরা দুটো ছয় চাকা লাগানো রোলার নিয়ে এলো – ভারী জিনিষ দুটোকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
‘ওকে, রেডি ... চলো,’ জুডা বললো ।
কথাটা বলেই প্রথম ধাপে পা দিলো জুডা । শুরু হয়ে গেল ফাঁদের চলন।
একই সময়ে অনেক কিছু ঘটে গেল।
নাইট ভিসন দুরবীনটা দিয়ে সেনাটা দেখতে পেলো ওয়েস্টকে । গর্তে আবদ্ধ জন্তুর মতো বসে আছে।
সেনা তার কোল্ট রিভলবার বার করলো ।
ব্যাম! গুলি ছুটলো ।
ওয়েস্টের দিক থেকে।
সেনাটা ধপ করে পড়ে গেল মেঝেতে, একেবারে দু চোখের মাঝে নিশানা সেধেছিল ওয়েস্ট।
আরো তি সেনা দেখলো তাদের সহকর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ওরা ছুটে এলো ওয়েস্টের গর্তটার দিকে । বন্দুক তাক করে।
যে মুহূর্তে এদিকে সেনাটা লুটিয়ে পড়ে জুডা চাপ দিয়েছিল ট্রিগার স্টোনে, চালু করেছিল ফাঁদের কারিগরি ।
আর বিশাল ফাঁদ চালু হওয়ার নানান শব্দের ফলে সে লক্ষ্য করেনি ব্যাপারটা ।
সিঁড়ির ধাপে পা দেওয়া মাত্র গ্র্যানাইট পাথরের যে দেওয়াল ফুটন্ত কাদাকে আটকে রেখেছিল সেটা নিচের দিকে নেমে যেতে শুরু করে । সাথেই নদীর স্রোতের মতো গরম কাদা কক্ষের পেছন দিক থেকে শুরু করে তার যাত্রা !
সজোরে কানে ধাক্কা মারা হুউউউউউস শব্দ করে বিশ্রী গন্ধযুক্ত নোংরা কাদা  উপচে নামতে থাকে পাঁচিলের ওপর দিয়ে  নামে এগোতে থাকে ধীরে ধীরে।
জুডার বাহিনী দ্রুত উঠে যায় ওপরে , ঘর মধ্যস্থ দ্বীপটায় । শুরু করে  আয়না আর স্তম্ভটাকে ভিত্তি সহ ঠেলতে ।
দুটো বড় আঙ্গুলের আকৃতি নিয়ে প্ল্যাটফরমের দুপাশ দিয়ে বয়ে আসে কাদা ...
নড়াচড়া হতেই ছাই ঝরে গিয়ে ভিত্তিতে দেখতে পাওয়া যায় দুটো গোল্ডেন ক্যাপস্টোনের টুকরোকেই।
এবার সিয়েফ সেনারা ভিত্তিদুটোকে চেপে ধরে ।
কাদার আঙুল দুটো এখন দুই তৃতীয়াংশ পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে দ্বীপটাকে ঘিরে । অপেক্ষায় আছে রাস্তার মাঝে যা যা পাবে সব কিছু ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য।
বাতিঘরের আয়না আর সমাধি মন্দিরের স্তম্ভটাকে এক পাশে ফেলে দিলো জুডার দল তারপর রোলার প্ল্যাটফর্মের ওপর নেমে ঘরটির প্রধান দরজার দিকে এগোতে শুরু করলো। আর ঠিক তখনই কাদার আঙুল জুড়ে গিয়ে গোটা ঘর থেকে প্ল্যাট ফর্মটাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলো ।
কাদার গতি কিন্তু থামলো না, এগিয়ে চললো বাইরের দিকে ...
জুডার আটজনের জনের দলটা নিয়েছে আয়নার ভিত্তিটাকে ছয় চাকার রোলারের ওপর – দুটোকে পাশাপাশি দেখে বোঝা যাচ্ছে কোন পার্থক্য নেই দুটোতে আকার ছাড়া । বাতি ঘরের টুকরোটার ভেতরে একটা মানবাকৃতি ছবি খোদাই করা আছে । খুব ইচ্ছে হচ্ছে ওদের সেটা দেখার কিন্তু হাতে একদমই সময় নেই ।
অন্য দলটা সাথে নিয়েছে স্তম্ভের টুকরোটাকে ।
জুডার নেতৃত্বে ওরা বেরিয়ে গিয়ে এগিয়ে চললো প্রবেশপথের সুড়ঙ্গের দিকে ।
ওদের কাছে এখন দুটো বড় বড় গোল্ডেন ট্র্যাপেজয়েড ।
০০০০০০০০০০০০০

ওদিকে বাকি তিন সিয়েফ ওয়েস্টের হাতে মারা যাওয়া সেনা দেখে এগিয়ে আসার সাথে সাথেই দূরে দেখতে পেয়েছিল বাঁধ সরে গিয়ে কাদাও গড়িয়ে আসছে ওদের দিকেই । বন্দুক ওপর দিকে তুলে ওরা শুরু করে ছুটতে প্রবেশ পথের সুড়ঙ্গের দিকে । ধরেই নে আটকে থাকা ওয়েস্টের একটাই পরিণতি মৃত্যু ...
... কিছুক্ষনের ভেতরেই ওদের পেছনের কোনো এক স্থান থেকে ছুটে যায় গুলি তিনজনেই লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে ।
তিন সিয়েফ সেনা শরীরে অনুভব করে এক বীভৎস খিঁচুনি । মনে হচ্ছিল সারা শরীরে যেন অগণিত বুদবুদ জন্ম নিচ্ছে আর গুলি খাওয়ার মতো যন্ত্রনায় ফেটে যাচ্ছে।
এই গুলি চালনাটা হয়েছে প্রধান দরজার বামদিকের সুড়ঙ্গটার কাছ  থেকে ।  ওখানে এসে গেছে পুহ বিয়ার আর বিগ ইয়ার্স । হাতে স্টিয়ার-এইউজি এবং এমপি -৭ সাব মেশিনগান। যা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে ।
উইজার্ডের মোটামুটি বুঝিয়ে দেওয়া ছক ধরে ওরা পৌঁছে গেছে ভুলে যাওয়া বাসস্থানের ভেতরে  - একটুও ভুল হয়নি – ওদের সেই ব্রিজের থেকে নেমে পাওয়া সুড়ঙ্গ একেবারে সঠিকস্থানে পৌছে দিয়েছে ওদের ।
ওয়েস্ট মাথা বার করলো খোঁদলটার ভেতর থেকে । দেখতে পেলো ওর বন্ধুরা এসে গেছে দাঁড়িয়ে আছে গরম লাভা কাদা ভর্তি কক্ষটার ওপর প্রান্তে । সাথেই দেখতে পেলো জো আর লিলিও আছে ওদের মাঝে নিরাপদে।
ও ওদেরকে চিৎকার করে ধন্যবাদ জানাতে পারতো , কিন্তু একেবারে সঠিক সময়ে হাজির হয়ে  যদি দেখতে হয় ছড়িয়ে যাচ্ছে মরণ কাদা, তাহলে... পৌছে গেছে সুড়ঙ্গের উঠতে থাকা প্রবেশ পথের মুখে । গলিয়ে নিজের স্রোতে মিশিয়ে নিলো মরে যাওয়া চার সিয়েফ সেনার দেহকে ওই নারকীয় কাদা ।
ফুটন্ত কাদা বয়ে গেল চারটে শরীরের ওপর দিয়ে , পরিনত করলো তরলে সেকেন্ডের মধ্যে তারপর আর কিছুই দেখা গেলনা।
কক্ষের অন্য দিকেও একই ছবি – বুক হাতড়ে এগিয়ে যাওয়া কাদা পুহ বিয়ারদের দিকের ছোট্ট টানেলটাকে পার করে এগিয়ে চলেছে কক্ষের প্রধান দরজার দিকে।
অবস্থা পরিষ্কার ...

দলীয় সদস্য এবং প্রধান দরজার কাছে পৌছানোর ওয়েস্টের কোন উপায় নেই।
কাদার উচ্চতা সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে ।
যে কোন সময়ের মধ্যে পুহ বিয়াররা যে সুড়ঙ্গ পথে এসেছে তার ভেতরে ঢুকে যাবে কাদার স্রোত ... আর ওদেরকে শেষ করে দেবে।
ওয়েস্টের মুখের দিকে তাকিয়ে , পুহ বিয়ার ভাবনাটা বুঝতে পারলো ।
ওয়েস্ট চিৎকার করে বললো, ‘ পুহ বিয়ার ! এখান থেকে চলে যাও!’
‘তোমার কি হবে!’ পালটা প্রশ্ন ছুঁড়লো পুহ।
ওয়েস্ট ফিরে তাকালো নিজের দিকের  সেতু পথের সাথে যুক্ত সুড়ঙ্গটার দিকে । ‘আর কোনও পথ নেই! আমাকে যে ভাবেই হোক ওই পথে যেতে হবে!’
‘জ্যাক!’ উইজার্ড ডাকলেন।
‘কি?’ 
‘জুডা একটা টানেল বোরিং যান ব্যবহার করছে পুরোনো দিনের খনির বন্ধ করে দেওয়া সুড়ঙ্গ ভেদ করে যাওয়ার জন্য! আমার যা মনে হয় ওরা টুকরোগুলো ওই পথ দিয়েই নিয়ে যাবে। তোমার কাছে যে স্কেচটা আছে ওটা একবার সুযোগ করে দেখো! চেষ্টা করলে হয়তো তুমি ওগুলোকে একবার নিজের চোখে দেখতে পেতেও পারো ! যেটা করতে পারলে এতো সব প্রচেষ্টা বিফল হবে না!’
‘আমি আমার সেরা চেষ্টাটাই করবো উইজার্ড!’ ওয়েস্ট ক্রমবর্ধমান কাদা দিকে তাকিয়ে বললো । ‘এবার এখান থেকে তোমরা যাও! স্কাই মনস্টারকে ডাকো!  হ্যালিকারনাসসাসে উঠে যাবে সুযোগ পেলেই! আমি যেভাবেই হোক তোমাদের সাথে দেখা করবোই !’
এই কথার সাথে সাথেই ওয়েস্টের টিম ওদের নির্দিষ্ট পথে গম্বুজা ছাদওয়ালা কক্ষের দুপাশে থাকা ধনুকাকৃতি সুড়ঙ্গের বাম দিকেরটার ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল। এই মুহূর্তে নিখুঁত গোল মেজেটা ভর্তি হয়ে গেছে দুর্গন্ধযুক্ত কাদায় । দেখে একটা কাদার লেক মনে হচ্ছে । মধ্যেখানে প্রকৃতই দ্বীপের মতো অবস্থান করছে প্ল্যাটফর্মটা যার ওপর পড়ে আছে দুটি প্রাচীন আশ্চর্যের ধ্বংসাবশেষ ।
ওয়েস্ট তার দিকের সুড়ঙ্গ পথটার  ভেতর দিয়ে নিজের পায়ে যতটা জোর অবশিষ্ট আছে সব কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো । সুড়ঙ্গটা লম্বা এবং সংকীর্ণ আর একেবারে সোজা ।
ওদিকে দুর্গের প্রধান সুড়ঙ্গ পথের ভেতরে মার্শাল জুডা আর তার দুই টিম গায়ের সব শক্তি কাজে লাগিয়ে ঠেলে এগিয়ে নিয়ে চলেছে রোলিং প্ল্যাটফরগুলোকে – যার ওপর রাখা আছে ক্যাপ স্টোনের দুটো টুকরো – ঢালু পথে নিচের দিকে।
ওরা দ্রুত পার হয় অগণিত স্তম্ভ যুক্ত হল ঘরটা, পৌছায় গিরিখাতের সামনে এবং ছুটে চলে ড্রেন খোদাই করা ঢালু পথটার  ওপর দিয়ে যা একেবারে ভুলে যাওয়া বাসস্থানের একেবারে সামনে গিয়ে শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে বামদিকের সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে পুহ বিয়ার, বিগ ইয়ার্স, স্ত্রেচ, জো এবং লিলি এগিয়ে চলেছে । অন্ধকার , সংকীর্ণ, টানা লম্বা পথ ধরে ।
ওয়েস্ট এবং দুটো দলই ছুটছে নিজের নিজের ভালো   জন্য – আর ওদিকে গম্বুজাকৃতি কক্ষের ভেতরের কাদা উচ্চতায় বাড়তে বাড়তে তিনটে সুড়ঙ্গ মুখেরই কানাতের কাছে পৌছে গিয়েছে...
... একসময় সেটা উপচে ঢুকেও পড়লো একসাথে তিনটে সুড়ঙ্গের ভেতরে।

তিনটে সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে তিনটে গরম কাদার আঙুল এগিয়ে চললো ।
প্রধান সুড়ঙ্গের তুলনায় যেহেতু দুপাশের সুড়ঙ্গ দুটো আকারে অনেক ছোটো তাই ওর ভেতরে দিয়ে কাদার গড়িয়ে যাওয়ার গতি অনেক বেশী ।
দৌড়াতে দৌড়াতেই ওয়েস্ট ঘুরে দেখতে পেলো ওর পেছনে ধেয়ে আসছে সালফারের কটু গন্ধ যুক্ত ফুটন্ত কাদা। উদ্দাম গতিতে এমন ভাবে এগিয়ে আসছে যেন ওটার নিজের একটা ইচ্ছে শক্তি আছে । পথের মাঝে জ্যান্ত কিছু পেলেই তাকে খতম করে দেবে
তবে  একসময় শেষ হলো দৌড়, সুড়ঙ্গের পথ শেষে ওয়েস্ট বেরিয়ে এলো বাইরে খোলা স্থানে। দেখতে পেলো ও দাঁড়িয়ে আছে ওয়াই আকৃতির জলমগ্ন গিরিখাতের ডানদিকের বিরাট উঁচু সেতুটার ওপর।
সেতুটা বিশাল উঁচু – অন্তত ২০০ ফুট তো বটেই – লম্বা এবং খুব সরু। কষ্টে সৃষ্টে একজন মানুষ ওটার ওপর দাঁড়াতে পারে। বোঝাই যাচ্ছে এটা মোটেই মানুষের যাতায়াতের জন্য বানানো হয়নি। এমন কি পা রাখার জায়গাটাও সমতল নয় । বরং ওর ভেতরে দু ফুট চওড়া ড্রেনের মতো বানানো আছে গরম কাদা বয়ে যাওয়ার জন্য।
একটা শ্বাস নিয়ে ওয়েস্ট বললো, ‘বাপরে! কি সব জিনিষ বানিয়েছে ...’
সেতুটার ওপর উঠে আসার পর দেখতে পেলো অনেক অনেক নিচে জুডার দল জেটির কাছে বেরিয়ে এলো। রোলার প্ল্যাটফর্ম দুটোকে ঠেলে নিয়ে যাছে সেই মেটাল ব্রিজটার দিকে । ওদের সেতুর অন্যদিকে আগের বানানো সুড়ঙ্গটাকে দেখা যাচ্ছে । টানেল বোরিং গাড়ীটার সামনের বিশাল স্ক্রুটা অনেকটাই এগিয়ে  আছে সামনের দিকে। অপেক্ষায় আছে কাজ ফিরে যাওয়ার। জুডা ওই টানেল বোরিং গাড়ীটাকেই ব্যবহার করবে এখান থেকে টুকরো দুটোকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
ওয়েস্টের মনে পড়লো উইজার্ডের বলা কথা ... ‘তোমার কাছে যে স্কেচটা আছে ওটা একবার সুযোগ করে দেখো...’


পেছন দিকে কাদার ধেয়ে আসার গতি একবার দেখে নিয়ে পকেট থেকে সেই প্রাচীন স্কেচের প্রিন্ট আউটটা বার করলো –

ওকে, আমি এখন এখানে, দেখতে পেলো ডান দিকের সেতুটাকে জলস্থিত সেতু ২ বলে চিহ্নিত করা আছে।
ম্যাক্সের ভাবনা একেবারে সঠিক । এই জলস্থিত সেতুর সাথে খনিপথের সুড়ঙ্গের যোগাযোগ আছে – সেই সুড়ঙ্গ যা জুডা পুনরায় খুলেছে তার টানেল-বোরার দিয়ে টুকরো দুটোকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ।
ওয়েস্ট একবার ওপরের দিকে তাকালো ।
যদি অতি দ্রুত কাজ করতে পারে , তাহলে হয়তো ও সফল...
শুরু করলো দৌড়াতে ওই উঁচু সেতুর ওপর দিয়েই – নিচে জুডার সিয়েফ বাহিনী টানেল বোরিং গাড়িটায় উঠাচ্ছে গোল্ডেন ট্রাপেজয়েড দুটোকে।

ওয়াই আকৃতির গিরিখাতের অন্যদিকে পুহ বিয়ার বেরিয়ে এলো সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে – আর বেরিয়ে আসার সাথে সাথেই ওর সামনে কিছুটা দূরে , সবাইকে চমকে দিয়ে একটা  ... রকেট প্রপেল্ড গ্রেনেড আছড়ে পড়লো সেতুর ঠিক মাঝখানে ।
জুডার দলের একজন সেনা অপেক্ষাতেই ছিল আর পি জি লঞ্চারটা নিয়ে।
গ্রেনেডটা একেবারে  ধনুকাকৃতি পিলার ওয়ালা জলস্থিত সেতুটার   ঠিক মধ্যেই আঘাত হেনেছে । বিশাল একটা বিস্ফোরণ হলো । কেঁপে উঠলো সব কিছু, ইট পাথর ছিটকে গেল এদিকে ওদিকে । ধু্লোর মেঘ যখন কাটলো দেখা গেল সেতুটা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে । মধ্যেখানে একটা বসড় ফাঁক ।
পুহ বিয়ার ঘুরে দেখলো – কালো কাদার লম্বা আঙুল ওদের পেছনে ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে , খুব কাছে এসে গেছে।
ওদের যাওয়ারও  আর কোনো জায়গা নেই । কোনো সেতু নেই সামনে পার হয়ে যাওয়ার জন্য।
প্রায় দম বন্ধ করে বললো, ‘অবস্থা খুবই শোচনীয়।’

ওয়েস্ট কারোর নজরে না পড়েই এগিয়ে যাচ্ছিলো সামনের দিকে , ওর পেছনেও ধেয়ে আসছিল নারকীয় কাদার আঙুল।
তবে ওর গতিই জিতলো ...গিরিখাতের অপর পাড়ের ছোট্ট সুড়ঙ্গটার ভেতর ঢুকে পড়লো ওয়েস্ট। ওদিকে নিচে জুডার লোকেরা ওদের এম – ১১৩ টানেল বোরারের সামনের বিশাল স্ক্রু এর অংশটা গুটিয়ে নিলো। একই সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাঁজ হয়ে গুটিয়ে গেল ওপরের টেম্পোরারি মেটাল ব্রিজটাও ।
জুডা চিৎকার করে বললো, ‘সিয়েফ ইউনিটস, ফল ইন! আমরা এখান থেকে বিদায় নিচ্ছি!’
টানেল বোরিং গাড়িটা প্রায় ট্যাঙ্কের মতো । বিশাল টানা চওড়া শেকল বাঁধা চাকা দুপাশে । আর শরীরটা একটা বাক্সের মতো । ওই বাক্সের মতন অংশটা ফাঁকা । ওর ভেতরে সেনা নিয়ে যাওয়া হয় । যখন টানেল বোরার রুপে ব্যবহার হয় তখন সমানের অংশ দিয়ে পাথর কেটে এগোতে থাকে । কাটা পাথরের টুকরো নিজের শরীরের ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে পেছনের নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে বার করে দেয় দেওয়ালের গা ঘেষে । যা বের হয় তা জমাট বদ্ধ ধুলোর চাঁই ।
এখন তো সুড়ঙ্গ খোঁড়াও হয়ে গেছে, এম-১১৩ এর অভ্যন্তর ব্যবহার হচ্ছে ক্যাপস্টোনের দুটো টুকরো নিয়ে যাওয়ার জন্য।
চারজন সশস্ত্র সিয়েফ সেনা বসে আছে ওখানে পাহারা দিয়ে।
জুডার দলের বাকি সেনারা চেপে বসলো চারটে খাঁচার মতো আবরণ দেওয়া লাইট স্ট্রাইক গাড়ীতে – মুলতঃ এগুলো মরুভূমিতে চালানোর গাড়ী – অতিরিক্ত পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে গুপ্তধনটাকে পরিত্যক্ত খনি সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে।
এই সময়ের ভেতরে, ক্যাল কালিস  আর তার দলের বাকি সদস্যরা - যারা ওয়েস্টদের একসময় পিছু নিয়েছিল – মূল গিরিখাতের ওপরের ভাঙা সেতু পার হয়ে জুডার দলে যোগ দিয়েছে।
‘ মিঃ কালিস ,’ জুডা বললো, পুহ বিয়ারদের দিকে ইশারা করে , যারা আটকে গেছে ভাঙা সেতুর সমস্যায় । ‘ওয়েস্টের দলবল এখান থেকে বেঁচে ফিরুক আমি চাই না। ফেরার চান্সও কম।   আমি চাই স্নাইপারেরা এক এক করে ওদের শেষ করে দিক যদি দরকার পড়ে । কাজ শেষ হলে আমার সাথে দেখা করবে।’
জুডা ঘুরে এক লাফে একটা লাইট কারে চেপে বসলো ।
সিয়েফ সেনারা তাদের নিজ নিজ গাড়ীর ইঞ্জিন চালু করলো এবং এক এক করে ঢুকে পড়লো সুড়ঙ্গের ভেতরে – দুটো ছোট এল এস ভি সামনে, মধ্যে এম-১১৩ এবং পরে আর দুটো এল এস ভি।
  কালিস আর ওর সঙ্গীদের রেখে গেল সুড়ঙ্গের মুখে, একেবারে জলের কাছে – ওরা দেখতে থাকলো আটকে থাকা পুহ বিয়াররা কি করছে ।
পুহ বিয়ার মাথা ঘিরিয়ে দেখে নিলো কাদা যথেষ্টই কাছে এসে গেছে – আর মিটার দশেকের ফারাক ... গতি একই রকম।
সামনের সেতু ওদের   কোনো কাজে লাগবে না এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ।
তবে ওদের ওখান থেকে কোনাকুনি কুড়ি মিটার দূরে দেখা যাচ্ছে  ভুলে যাওয়া বাসস্থানের একটা উঁচু প্যাচাঁনো টাওয়ার – যেটা জুড়ে আছে পুহ বিয়ারদের সেতুটার সাথে একটা ইঞ্চি দুয়েকের কার্নিশ দ্বারা ।
চোখে পড়তেই পুহ নির্দেশ দিলো, ‘ওই পথে !’
অতএব কেবল মাত্র পায়ের দুই দুই চার  আঙ্গুলের অপর ভর দিয়ে ব্যালেন্স উইজার্ড, জো আর লিলি এগিয়ে গেল সবার আগে। তারপর গেল স্ট্রেচ আর বিগ ইয়ার্স । সবার শেষে পুহ বিয়ার । একটু এগিয়ে যেতেই গরম কাদা এসে গেল ঠিক সেই খানে যেখানে একটু আগে পুহ বিয়ার দাঁড়িয়ে ছিল । হড়হড়িয়ে গড়িয়ে গেল জলস্থিত ব্রিজের ওপর দিয়ে এবং পড়ে গেল নিচে – জলপ্রপাতের মতো পড়তে থাকলো ঘন কালো কাদা  - নতুন জন্ম নেওয়া ফাঁকা স্থান দিয়ে । পড়তে থাকলো ২০০ মিটার নিচে।
একটু বাদেই ওর থেকেও মাপে অনেক বড় একটা কাদার স্রোত ছিটকে বেরিয়ে এলো হ্যামিলকারের ভুলে যাওয়া বাসস্থানের প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে। দ্রুত ঢালু পথ আর জেটি পার হয়ে গিয়ে পড়লো জলে সশব্দে । ঝপাস করে পড়ার সাথে সাথেই একটা বিশাল মাত্রার হিসসসস করে শব্দ হলো । বাষ্প সৃষ্টির ।
একটা বাষ্পের অতিকায় বল উঠে গেল আকাশে। চারদিকে একটা কুয়াশার মতো জমে গেল কালিসদের দল আর পুহ বিয়াদের মাঝে । আর এর ফলে বেশ খানিকটা সময় পেয়ে গেল পুহ’রা।
কুয়াশা মিলিয়ে যেতেই কালিসের স্নাইপাররা শুরু করলো এলোপাথাড়ি গুলি বৃষ্টি ।

ওয়েস্ট অন্ধকারের ভেতরে দিয়ে ছুটে চলেছে, একা ।
অবশিষ্ট একটি মাত্র গ্লোস্টিক র আলোয় পথ দেখে
সুড়ঙ্গটা মোটেই বড় নয়। ওয়েস্টকে  অনেকটাই ঝুঁকে দৌড়াতে হচ্ছে ।
একশো মিটার মতো যাওয়ার পর ওয়েস্ট শুনতে পেলো সামনের দিক থেকে গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ । সহসাই –
- পৌঁছে গেল একটা বড় সুড়ঙ্গের ভেতর । যার দেওয়াল জমাট বাঁধা ধুলো পাথরের । যথেষ্টই চওড়া একটা ট্যাঙ্ক যাওয়ার পক্ষে। নিয়মিত দূরত্বে ধুলোর স্তুপ জমে আছে সুড়ঙ্গ পথটার মাঝে মাঝে – এগুলো টানেল বোরার এর চিহ্ন । পুরো পথটাতে প্রায় নিভে আসতে থাকা আমেরিকান গ্লোস্টিকের আলো ছড়িয়ে আছে ।
এটাই সেই খনি গুহা পথ।
ইঞ্জিনের শব্দ ভেসে আসছে ওর ডান দিক থেকে, ঢালু পথটা কাঁপছে থির থির করে - চারটে লাইট কার ইঞ্জিন আর টানেল বোরিং গাড়ীর ডীপ থ্রোটেড ডিজেল ইঞ্জিনের সমবেত ঝাঁকুনিতে ।
জুডা আর ওর সিয়েফ বাহিনী।
এগিয়ে আসছে দ্রুত।
ওয়েস্ট গ্লোস্টিকটা নিভিয়ে দিলো । একটু ভাবলো , তারপর গড়িয়ে চলে গেল রাস্তার ওপর ।
গড়িয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লো একেবারে রাস্তার মাঝামাঝি যেখানটা বেশ ভালোই অন্ধকার । যে মাটির স্তুপ জমে ছিল মাঝে মাঝে তার একটার ভেতর ঠেলে ঢুকিয়ে দিলো শরীরের অর্ধেক  অংশ ।
জুডার বাহিনী এগিয়ে আসছে , অতি জোরদার হেডলাইট জ্বালিয়ে ।
জমে থাকা মাটির স্তুপকে পাশ কাটিয়ে লাইট কার দুটো ওয়েস্টের দুপাশ দিয়ে হুসস করে বেরিয়ে গেল, এবং ...
... অতিকায় এম-১১৩ টানেল বোরিং গাড়িটা মাটি কাঁপিয়ে এসে গেল ওয়েস্টের ওপর। ওর শরীরের দুপাশে শেকল লাগানো চাকার সারি।
আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ওটা ওকে পার হয়ে চলে যাবে ... তার আগেই ওয়েস্ট বার করলো নিজের এম পি-৭ সাব মেশিন গানটা । ওটার হাতলটাকে একটা হুকের মতো আটকে দিলো টিবিভি টার তলার একটা পাইপে – সাথে সাথেই ওয়েস্টের শরীরটা বেশ খানিকটা ভেসে উঠলো গাড়ীটার পেটের তলায় এক ঝটকায় এবং এগিয়ে যেতে থাকলো গাড়িটার সাথে সাথে !
যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে ।
অনুমান করলো সে খুব বেশী হলে তিরিশ সেকেন্ড মতো পাবে  গিরিসংকটের কাছে পৌছাতে – সঙ্কীর্ণ গিরিসংকটে যা এই খনি গুহাপথকে ভেদ করে গেছে... ওর পালানোর রাস্তা।
সঙ্গে কোন সাথী নেই এবং সে পরিমাণে অস্ত্র শস্ত্রও নেই যে জুডার সিয়েফ বাহিনিকে একা হারিয়ে দেবে এবং টুকরো দুটো দখল করবে । একা কাজ করে ওই বিশাল টুকরো দুটো নিয়ে যাওয়াও ওর পক্ষে সম্ভব নয় ।
আসল কথা হল, ও মোটেই চাইছে না ও দুটোকে হাসিল করতে । ওয়েস্ট শুধু চায় ওগুলোকে দেখতে এবং কয়েকটা ছবি তুলতে বিশেষ ভাবে খোদাই করা লেখাগুলোর।
ওয়েস্ট ঝুলে ঝুলেই চলন্ত টানেল-বোরার গাড়ীর তলায় সামনের দিকে এগোতে থাকলো । ঠিক কি কি ধরলে ওর ক্ষতি হবে না ও ভালোই জানে । এভাবেই এগোতে এগোতে পৌঁছে গেল গাড়ীটার সামনে – উঠে বসলো ওটার ওপরে এবং তৈরী হ লো সিয়েফ বাহিনীর বিরুদ্ধে একক লড়াই করার জন্য।
মার্শাল জুডা পেছনের এল এস ভি তে বসে নজর রেখেছিল সামনে টানেল-বোরারটার ওপর।

কিন্তু দেখতেই পায়নি খন ওয়েস্ট গাড়ীর তলায় ঢোকে – দেখতে পায়নি ওটার পেটের তলা দিয়ে বাদুড় ঝোলা হয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে ওটার ফ্রন্ট বাম্পারের ওপরে – এটাও দেখতে পায়নি ওয়েস্ট ওটার ড্রাইভারের একেবারে দুচোখের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছে একটা গুলি আর তারপর উঠে বসেছে ড্রাইভারের স্থানে।
এরপর গাড়িটা যেন ধাতস্থ হলো । ফিরে এলো নিজের অবস্থানে , সরে গেল দেওয়ালের পাশ থেকে । এগোতে থাকলো একটা লজ ঝড়ে প্রাচীন পাথরের সেতুর দিকে। যার বিস্তৃতি তিরিশ ফুট গিরি সংকটের ওপর দিয়ে । ওখান থেকে নিচে পড়লে অন্তত আশি ফুটের ধাক্কা জল ছুঁতে ।
জুডা মেনে নিতে না পারলেও বা নিশ্চিত হতে না পারলেও দেখতে বাধ্য হচ্ছিলো ... টানেল বোরারটা ওই প্রাচীন পাথরের সেতুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে । সাথে সাথেই ও দিব্যি খেয়ে বলতে পারে গাড়ীটার ছাদ ফুঁড়ে একটা অবয়ব বেরিয়ে এসে কালো সংকীর্ণ গিরি সংকটের ভেতরে লাফ দিলো । শোনা গেল নিচের জলে পড়ার ঝপাং শব্দ ।
এদিকে প্রাচীন সেতুটা পার হলো গাড়িটা , তারপরেই আবার যেতে শুরু করলো বাম দিক ঘেঁষে, দেওয়ালের গায়ে ঘষা খেতে খেতে আশি মিটার মতো এগিয়ে গিয়ে একসময় থেমে গেল ।
লাইট কারগুলো থেকে দ্রুত নেমে গেল সিয়েফ সেনার দল , বন্দুক হাতে সতর্কভাবে এগিয়ে গেল গাড়িটার দিকে –
- দেখতে পেলো দুটো টুকরোই যেমনকার তেমন আছে ।
গাড়ীর ড্রাইভার আর ভেতরের চার প্রহরী আর বেঁচে নেই।  গাড়ীর ভেতরের চারদিকের দেওয়ালে লেগে আছে ওদের রক্ত । সকলেই বন্দুক নিয়ে তৈরি ছিল কিন্তু একটাও বুলেট খরচা করতে  হলো না।
জুডা তির্যক দৃষ্টিতে দেখলো মৃতদেহগুলোকে ... জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়রের শিল্প কর্ম ।
‘ওয়েস্ট, ওয়েস্ট, ওয়েস্ট...’ নিজের মনেই বলে উঠলো জুডা । ‘তুমি সত্যিই সেরা একজন সৈনিক । সম্ভবত আমার জীবনে পাওয়া সেরা ছাত্র ।’
আবার দলকে নতুন করে সাজিয়ে নিয়ে জুডা শুরু করলো পুনরায় যাত্রা সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে , নিশ্চিন্তে নিরাপদে

ওদিকে দুর্গের বাম হাতের টাওয়ারের সাথে যুক্ত কার্নিশের ওপর  আঙ্গুলের ভর দিয়ে এগিয়ে যাওয়া পুহ বিয়ারদের লক্ষ্য করে স্নাইপারের দল গুলি চালিয়েই যাচ্ছিলো ।
বিগ ইয়ার্সের ব্যাক প্যাকে থাকা ওয়ারবলারও তার কাজ করে যাচ্ছিলো বিশ্বস্ততার সাথে – সব বুলেটের পথই বাঁকিয়ে দিচ্ছিল অন্য দিকে ... আর এভাবেই এক এক করে পুহ বিয়ারের দলের সবাই পৌছে গেল অভীষ্ট টাওয়ারটিতে ।
অনেক নিচে কাদার ধারাপ্রপাত বয়েই চলেছে প্রধান প্রবেশ পথের মুখ দিয়ে। ওদের ওপরে গিরিখাতের অন্ধকার ছাদ টাওয়ারের অনেক কাছে নেমে চলে এসেছে । টাওয়ারের শীর্ষ বিন্দু থেকে ফুট কুড়ি দূরে অবস্থান করছে ।
সহসাই কালিসের দল গুলি চালানো বন্ধ করে দিলো ।
পুহ বিয়ার উদ্বিগ্নতার চোখে তাকালো উইজার্ডের দিকে ।
অন্য কোনও কৌশল খাটাচ্ছে ।
আর সেটা এক ভয়ঙ্কর কৌশল 
ওয়ারবলারের কারনে জন্ম নেওয়া ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ক্ষেত্র কালিস আর তার দলের লোকেদের  বিভ্রান্ত করে দিয়েছে  কিছু একটাতো করতেই হবে । আর তারই ফল স্বরুপ এবার ওরা হাতে তুলে নিয়েছে আর পি জি। তাক করেছে টাওয়ারের দিকে ।
দেখে মনে হচ্ছিলো আতশবাজির খেলা শুরু হয়েছে ... লম্বা ধোঁয়ার রেশ পেছনে ফেলে নিচ থেকে প্রাচীন টাওয়ারের দিকে ধেয়ে আসছে ...
‘ হে ভগবান এবার কি হবে,’ উইজার্ড দম বন্ধ স্বরে বললেন। ‘ওয়ারবলার আর পি জি কে আটকাতে পারে না। চুম্বকত্বের শক্তির বিচারে ওর ক্ষমতা অনেক বেশী ! কেউ কিছু একটা করো –’
আর সেটা করার জন্য সামনে এগিয়ে এলো স্ট্রেচ।
বিদ্যুতের গতিতে নিজের স্নাইপারটা হাতে নিলো, তাক করলো এবং ট্রিগার টিপলো এগিয়ে আসতে থাকা প্রথম আর পি জি টাকে লক্ষ্য করে !
বুলেটটা গিয়ে লাগলো ওটার গায়ে টাওয়ার থেকে তিরিশ ফুট দূরে । মাঝ রাস্তাতেই ওটা ফেটে গেল। টাওয়ারের ক্ষতি হলোনা ।
পুহ বিয়ার ব্যাপারটা দেখে একেবারে আশ্চর্য চকিত হয়ে গেল । ‘নাইস শট ইজ্রায়েলী। কত বার তুমি এরকম করতে পারবে?’
‘ যতবার তুমি বলবে করে দেখাবো । শুধু এখান থেকে পালানোর একটা পথ বার করো আরব,’ স্ট্রেচ বললো দ্বিতীয় ধেয়ে আসা আর পি জি টাকে দেখতে দেখতে।
পুহ বিয়ার নিজেদের অবস্থানটাকে একবার ভালো করে খতিয়ে দেখলো। জলস্থিত সেতু ভেঙে গেছে, পার হওয়া যাবে না।  দুর্গের প্রধান প্রবেশপথের মুখ দিয়ে ঝড়ছে কাদার প্রবাহ । ওখানেও রাস্তা বন্ধ। আর গিরিখাতের জলপথ , সেতো ফাঁদ আর ঘূর্ণিতে ভরা । তা পর আবার আছে কালিসের সিয়েফ দল বল।
বিকৃত মুখ করে পুহ বিয়ার  বললো, ‘আটকে গেছি ফাঁদে!’
বিগ ইয়ার্স জানতে চাইলো , ‘ কোনো পথই কি নেই এখান থেকে বার হওয়ার?’
উইজার্ড বললেন, ‘ অনেক অনেক দিন আগেই এই টাওয়ারটাকে সিল করে দেওয়া হয়েছিল ।’
কথা যেন হারিয়ে গিয়েছিল সবার মুখ থেকে।
পর দিকে উঠলে কেমন হয় ?’ একটা মৃদু কন্ঠস্বর শোনা গেল।
সবাই ঘুরে তাকালো।
কথাটা বলেছে লিলি ।
কাঁধ দুটোকে একবার উঁচু করে হাত তুলে  টাওয়ারের চুড়ার ওপর নেমে আসতে থাকা গ্র্যানাইট পাথরের ছাদটাকে দেখালো । ‘আমরা ওই জায়গাটা দিয়ে বের হতে পারবো না? যদি পুহ বিয়ার ছাদটাকে ভেঙে দিতে পারে ?’
পুহ বিয়ারের মুখের কোঁচকানো ভাব হাসিতে পরিনত হলো । ‘ ডিয়ার  ইয়ং লেডী, অসাধারন এবং ধন্যবাদ।’
০০০০০০

এক মিনিট বাদে... স্ট্রেচ একের পর আর পি জি কে ধ্বংসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে... পুহ বিয়ার একটা গ্র্যাপ্লিং হুক গিরিখাতের ওপরের ছাদের দিকে ছঁড়ে দিয়েছে প্রেসার গান দিয়ে , প্রায় উলম্বভাবে টাওয়ার অনুসারে।
যে হুকটা ছুঁড়েছে সেটা পাথরভেদী পাহাড়ে ওঠার সময় ব্যবহার হয় – কিন্তু ওর পেছনে দড়ি লাগানো নেই ... যা লাগানো আছে তার নাম সেমটেক্স-ফোর ডেমলেশন চার্জ।
হুকটা গিয়ে আটকে গেল গ্র্যানাইট পাথরের গায়ে, চেপে ধরলো পাথরটাকে ।
ওয়ান, ওয়ান থাউজেন্ড ।
টু, ওয়ান থাউজেন্ড ।
থ্রি –
সেমটেক্স চারজার তার কাজ শুরু করে দিলো ।
আগুনের একটা গোলক। একটা বিষ্ফোরন । ধুলোর মেঘ ।
আর তারপরই, একটা বিশাল মাপের চিড় ধরার মতো শব্দ হলো... ক্র্যাআআআআআআআক ! যে সমস্ত টানা গ্র্যানাইটের টুকরো দিয়ে ছাদটা তৈরী তার একটা দু টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ে গেল। ক্যালিফোরনিয়ার রেডউড গাছের গুঁড়ির মতো মোটা ও বিরাট টুকরোটা। নিচে জলে গিয়ে পড়ামাত্র ঝপাস করে যেমন একটা উচ্চকিত শব্দ হলো সাথেই জল ছিটকে ছিটিয়েও গেল চারিপাশে অনেক দূর অবধি।
হুড়হুড় করে অনেকটা বালি পড়লো নতুন সৃষ্টি হওয়া আয়তাক্ষেত্রাকার ফাঁকটা দিয়ে । আর তারপরেই ধুলো উজ্জ্বল সূর্যের আলো । যে আলোয় এক নতুন রুপে উদ্ভাসিত হলো গিরিখাত অঞ্চল এবং অতিকায় দুর্গটা ।
পুহ বিয়ার এবং বাকিদের সময়ের কোন হিসাবই ছিল না , কতক্ষণ তারা এই অভিযান চালাচ্ছে তার এই অতিকায় গোপন গিরিখাতের ভেতরে । এখন আপাতত দুপুর শুরু হয়েছে।
কালিসের দল আর পি জি চালিয়েই যাচ্ছে, আর স্ট্রেচও সেগুলোকে একের পর নিখুঁত লক্ষ্যে উড়িয়ে দিচ্ছে কিছু করার আগেই । আঘাতের প্রত্যাঘাত ।
সেমটেক্স এর আঘাতে ছাদের গায়ে প্রয়োজনীয় ফাঁক তৈরি হতেই বিগ ইয়ার্স আর একটা গ্র্যাপ্লিং হুক ছোঁড়ে – এটার সাথে অবশ্য দড়ি বাঁধা ছিল।
হুকটা সোজা উঠে গিয়ে আয়তাক্ষেত্রাকার ফাঁকটা পার হয়ে বাইরের দিবালোকে মিলিয়ে গেলো... তারপর পড়লো এবং নিজের ক্ষমতা অনুসারে চেপে ধরলো কিছু একটাকে।
‘ এবার আমরা ওপরে যাবো!’ পুহ বিয়ার জানান দিলো। ‘বিগ ইয়ার্স তুমি সবার আগে। স্ট্রেচ তুমি সবার শেষে ।’
‘ওটা তো আমার কপালে দাগানোই আছে ...’ স্ট্রেচ বিড় বিড় করলো ।
‘উইজার্ড, আপনি হ্যালিকারনাসসাসকে সিগন্যাল পাঠান আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
লিলি জানতে চাইলো, ‘হান্টসম্যানের কি হবে?’
‘আমি তোমাদের কাছে ঠিক পৌছে যাবো ,’ একটা কণ্ঠস্বর সবার ইয়ারপিসে ধ্বনিত হলো।
ওয়েস্টের কণ্ঠ ।
‘আমি টুকরোগুলোর ছবি তুলে নিয়েছি,’ বললো ওয়েস্ট । ‘ তবে আপাতত যা পরিস্থিতি তাতে তোমাদের সাথে  দুর্গের ভেতর দিয়ে গিয়ে একত্রিত হওয়ার উপায় আমার নেই । আমাকে অন্য পথ দিয়ে বার হতে হবে। আমি পরে কথা বলছি।’
এক এক করে ওরা উঠে যেতে থাকলো দড়ি ধরে চোখ ধাঁধানো সূর্যের আলোর দিকে । আর ওদেরকে সমানে বাঁচিয়ে গেল স্ট্রেচ তার অসাধারন লক্ষ্যভেদের কৌশল দিয়ে।
যখন স্ট্রেচের সময় এলো, ও একলাফে উঠে গেল দড়িটায়, অদ্ভুত ক্ষিপ্রতার সাথে শুরু করলো  ওপর দিকে উঠতে ।
আর সেকেন্ডের ভেতর একটা আর পি জি এসে আঘাত হানলো টাওয়ারে । কান ফাটানো একটা বুউউউউউউউম শব্দ হলো । হ্যামিলকারের ভুলে যাওয়া বাসস্থনের বামদিকের টাওয়ারটা বিষ্ফোরিত হল তারার আকৃতিতে । চার দিকে ছিটকে গেল বিরাট বিরাট পাথরের টুকরো , তারপর হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল গিরিখাতের জলে ।
ধোঁয়া আর ধুলোর মেঘ পরিষ্কার হলে দেখা গেল , টাওয়ারের চুড়াটা আর নেই।  ওপরের অংশের অনেকটা জায়গার আর কোন অস্তিত্বই নেই । যে ব্যালকনিটা দেখা যাচ্ছিলো কিছুক্ষন আগেও সেখানে একটা বিরাট শূন্যতা। অতিকায় টাওয়ারটা এখন বিধ্বস্ত।
শুধু সেখানে দেখা যাচ্ছে ওপরে ছাদের গায়ে একটা আয়তাক্ষেত্রাকার ফাঁক, যেখান দিয়ে এখন ঝকঝকে সূর্যালোক ঢুকছে ।
পুহ বিয়ার আর তার দল পালিয়ে গেছে ওখান থেকে। উঠে গেছে ওপরে ।

হ্যালিকারনাসসাস আর  দশ মিনিটের ভেতর ওদেরকে উঠিয়ে নেবে ওখান থেকে ।
ওয়েস্টের দিক থেকে আর কোন সংবাদ আসেনি ।
আমেরিকান বাহিনী জমায়েত হয়েছে ভূগর্ভস্থ ভুলে যাওয়া বাসস্থান থেকে দু মাইল পশ্চিমে । হ্যালিকারনাসসাসকে সরে আসতে হয়েছে ওদেরকে এড়িয়ে । যে কারনে ওয়েস্টের সাথে আর কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
দিনের বাকি সময়টায় আর কোন খবরই পাওয়া গেলোনা জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়রের ।
০০০০০
রাত তখন দুটো পঞ্চান্ন , অবশেষে ওয়েস্ট ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংকেত পাঠালো –এমন এক স্থান থেকে যেটা হ্যামিলকারের ভুলে যাওয়া বাসস্থানে ঢোকার সেই জলের তলার পথ থেকে একশো কিমি উত্তরে । ভুমধ্য সাগরের মাঝমাঝি একটা জায়গা!
একটা ছোট্ট ইতালিয়ান রিসোর্ট আইল্যান্ড, যেখানে নিজস্ব এয়ারস্ট্রিপ আছে ।
রিসোর্ট এর কর্মচারীরা অনেক দিন মনে রাখবে  যে একটা কালো রঙের ৭৪৭ জাম্বো জেট   কোনো রকম সংকেত না দিয়েই নেমে এসেছিল রানওয়েতে। অবিশ্বাস্য রকমের ছোট একটা দৌড় দিয়েই আবার উঠে গিয়েছিল আকাশে ।
ওরা জানেও না কেন বিমানটা স্বল্প সময়ের জন্য ওদের ওখানে নেমেছিল বা কোথা থেকে ওটা এসেছিল।
দুদিন বাদে , ওই রিসোর্টের দক্ষিন দিকের সমুদ্রে  একটি ডাইভিং এক্সপিডিশনের সময় দেখতে পাওয়া যায় একটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের নাজি ইউ বোট আটকে আছে পাথুড়ে খাঁড়িতে । সাবমেরিনটা দুদিন আগেও ওখানে ছিল না।
ওটার উঁচু হয়ে থাকে কোণাকৃতি মধ্য টাওয়ারে লেখা আছে “ইউ-৩৪২” ।
এরপর থেকেই ওই জায়গাটা রিসোর্টের জনপ্রিয় ডাইভের স্থান হয়ে গেছে।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

ওয়েস্টের মুখ গম্ভীর এবং চিন্তার ছায়াগ্রস্থ । হ্যালিকারনাসসাসের প্রধান কেবিনে ঢুকে কারোর সাথে কোনো কথা না বলে বা কারো কাছে না দাঁড়িয়ে –এমন কি লিলির সাথেও  কোনো কথা বলেনি – সোজা এগিয়ে যায় উইজার্ডের দিকে । হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে বিমানের পেছনদিকে স্থিত অফিসের দিকে। উচ্চারন করে চারটে শব্দ, ‘আপনি। আমি । অফিস । এক্ষুনি ।’
ওয়েস্ট সজোরে দরজা বন্ধ করে এবং ঘুরে তাকায় ।
 ‘উইজার্ড । আমাদের দলে একজন বিশ্বাস ঘাতক আছে ।’
‘কি?’
 ওরা একবার বোকা বানিয়েছে, তার লজ্জা আপনার । দ্বিতীয়বার বোকা বনলাম, এ লজ্জা আমার,’ ওয়েস্ট বললো । ‘পর পর দুবার জুডা আর তার বাহিনী একেবারে সেই জায়গায় পৌছে গেল এক ঘণ্টার ভেতরে যেখানে  আমরা গিয়েছি । সুদানের ব্যাপারটা পরিষ্কার নয়, কারন ওরা ইউরোপিয়ানদের ট্র্যাক করে ওখানে যেতেও পারে । কিন্তু তিউনিশিয়ার ব্যাপারটা একেবারে আলাদা । প্রথম কথা এখানে ইউরোপিয়ানরা ছিল না । দ্বিতীয়, যদি ধরেও নিই জুডার কাছে ক্যালিম্যাচুসের পান্ডুলিপির কপি আছে, তবুও ওর পক্ষে হ্যামিলকারের বাসস্থানের হদিশ বার করা সম্ভব নয়। এর জন্য ওর দরকার পড়তো ইউক্লিডের নির্দেশনামা । আর আমারা জানি ওটার একটাই মাত্র কপি আছে । ওরা এখানে আমাদের অনুসরন করে এসে গিয়েছিল। এর একটাই অর্থ আমাদের দলের কেউ ওদের এখানে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছে। কোনো এক ট্রেসিং সিগন্যাল বা যে কোন ভাবে মেসেজ গেছে জুডার কাছে ।’
উইজার্ডের মাথা ঝুঁকে গিয়েছিল । তাদের মিশনের মতো দলে একটা খারাপ সদস্য থাকার ভাবনাটা ওকে খুব কষ্ট দিচ্ছিলো – এই দলের সবাইকে উনি নিজের পরিবারের সদস্য বলেই মনে করেন। ‘জ্যাক আমরা এই মানুষগুলোর সাথে দশ বছর ধরে কাজ করছি । এদের মধ্যে কেউ এখন  আমাদের ডোবানোর চেষ্টা করতে পারে এটা কি করে ভাবি বলোতো?’
‘স্ট্রেচ মোটেই আমাদের সাথে দশ বছর নেই । সাত বছর বাদে আমাদের সাথে যোগ দেয় । তাছাড়া  আমাদের আসল দলের সদস্যও নয় । মনে করে দেখুন ওর উপস্থিতিতে দলে একটা বিক্ষিপ্ততার সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়াও ও ইজ্রায়েলের সদস্য । আমাদের আটদেশের জোটের সাথে যাদের কোন সম্পর্ক নেই ।
উইজার্ড বললেন, ‘কিন্তু ও দারুন ভাবে আমাদের দলের সাথে মিশে গিয়েছে । আমি জানি ওর আর পুহ বিয়ারের মধ্যে একটা খটাখটি আছে । সেই আরব-ইজ্রায়েল সমস্যা । কিন্তু ওটা বাদ দিলে ও কিন্তু যথেষ্টই অনুগত এই মিশনের প্রতি।’
‘যাই বলুন আমি নিশ্চিত ও মোসাদকে কোনো না কোনো ভাবে সব কিছু রিপোর্ট করছে । আর সেটা যদি না হয় তাহলে আমি আমার এই হেলমেটটা ছাড়াই বিপদের মুখে নেমে যেতে রাজি আছি।’
‘হুমম ... খারাপ বলোনি কথাটা।’
ওয়েস্ট এবার আর একটা নাম করলো – ‘পুহ বিয়ার? আরব দুনিয়ে পশ্চিমী দুনিয়ার চেয়ে পাঁচশো বছর পিছিয়ে আছে। ওরাও চাইবে ক্যাপস্টোনটা দখল করতে। পুহের বাবা , শেখ, একটু যেন বেশী মাত্রায় উৎসাহী এই মিশনে সংযুক্ত আরব আমীর শাহীকে যুক্ত করার জন্য।’
‘কাম অন জ্যাক , পুহ বিয়ার এমন মানুষ যে দরকার পড়লে লিলিকে বাঁচানোর জন্য চলন্ত বাসের সামনে লাফ দিয়ে দেবে। অন্য কিছু বলো ।’
‘বিগ ইয়ার্স জুডার সাথে ট্রেনিং নিয়েছিল স্টেটসে, করোনাডোতে । আমাদের এই মিশন শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে-’
‘মালবাহী ট্রেন,’ উইজার্ড বলে উঠলেন ।
‘এর আবার কি অর্থ?’
‘না মানে বলতে চাইছি যে যদি পুহ বিয়ার লিলিকে বাঁচাতে বাসের সামনে লাফ দেয় , তাহলে বিগ ইয়ার্স মালবাহী ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পয়বে দরকার পড়লে । আর আমি যত দূর জানি, তুমি কিন্তু নিজেও একবার ইউ এস স্পন্সরড একটা ট্রেনিং এ গিয়েছিলে করোনাডো নাভাল বেসে আমেরিকাতে । আর সেটার পরিচালনার দায়িত্বে ছিল মার্শাল জুডা আর সিয়েফ । আর সেখানে ডেজারট স্ট্ররমের সময়ে জুডার সাথে তোমার রহস্যময় কাজকর্মের কোন উল্লেখ করাই হয়নি ।’


ওয়েস্ট এসব শুনে নিজের চেয়ারের ভেতরে এলিয়ে দিলো শরীটাকে।
এই ধরনের মাল্টী ন্যাশনাল টিমের সাথে কাজ করার প্রধান সমস্যা হল এর সদস্যদের মোটিভেশন –কোনো ভাবেই জানা সম্ভব নয় তারা দলের জন্য কাজ করছে নাকি নিজ নিজ স্বার্থে।
‘ম্যাক্স। এরকমটা মোটেই আমরা চাইছি না। আমরা লড়াই করছি এ বিশ্বের দুই রাঘববোয়ালের বিরুদ্ধে । ম্যাক্স, একটা মাইক্রোওয়েভ কম্যুনিকেশন নেটওয়ার্ক লাগানোর ব্যবস্থা করুন এই বিমানের চারপাশে । এমন এক ব্যবস্থা যা সমস্ত ইকামিং এবং আউটগোয়িং কলের সিগন্যাল ট্রেস করতে পারে । কেউ যদি বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ করতে চায় তাহলে আমি জানতে চাই কখন সেটা ঘটছে। এটাকে ধরতেই হবে। আপনি কি এটা করতে পারবেন?’
‘অবশ্যই পারবো।’
‘এই বিষয়টা আমরা আপাতত আমাদের ভেতরেই গোপন রাখবো আর বাকি সকলের দিকে নজর রাখবো 
উইজার্ড সম্মতি বাচক মাথা ঝুঁকিয়ে বললো, ‘তোমার জন্য আর একটা ভাবনার বিষয় আছে আমার কাছে।’
ওয়েস্ট নিজের ভুরু চেপে ধরে বললো, ‘বলুন।’
‘তুমি যখন তিউনিশিয়া থেকে ইউ-বোটে চেপে পালাচ্ছিলে সেই সময়ে আমি লিলিকে ক্যালিম্যাচুসের পাণ্ডুলিপি পড়তে দিয়েছিলাম । অদ্ভুত ব্যাপার হলো , ও জানিয়েছে লিপির ভাষা দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে। সাথে সাথেই বাড়ছে লিলির ক্ষমতাও – যে অংশ  কাল পড়তে পারেনি , সহসাই ও আজ সব বুঝতে পারছে । যেন মনে হচ্ছে  ওই পাণ্ডুলিপি নিয়ন্ত্রন করছে কার পর কোন টুকরো খোঁজার দিকে আমরা পা বাড়াবো ।’
‘ আরে বাহ, তাই বুঝি । আর ...’
‘লিলি পর পর তিনটে অংশ পড়ে ফেলেছে – সমাধি মন্দিরে যে তৃতীয় অংশটা    ছিল সেটার ব্যাপারে    ওখানে বলা আছে , “ আমি আছি ফ্যারোজের সাথে ।” পরের দুটো লেখনী অনুসারে অলিম্পিয়ায় জিউসের স্ট্যাচু আর এফিসাসে আরটেমিসের মন্দিরের কথা বলা হয়েছে ।
‘ প্রথম দুটো লেখনী যা আমরা আগেই উদ্ধার করেছি তার সাথে নতুন লেখনীগুলোর থেকে পাওয়া সুত্র এক কৌতূহলজনক প্যাটার্নের ভাবনাকে মেনে নিতে বাধ্য করছে। আর সেটা হলো পাণ্ডুলিপি অনুসারে আমরা নবীন থেকে প্রবীন প্রাচীন আশ্চর্যদের দিকে এগিয়ে যাবো । কলোসাস সবচেয়ে শেষে বানানো হয়েছিল । তার আগে বাতিঘর। ওটার আগে বানানো হয় সমাধি মন্দির। এর পরের দুটো যার কথা একটু আগে বললাম তাদেরকে বানানো হয়েছিল এদেরও আগে ।’
‘মাঝখানের আশ্চর্যেরা,’ ওয়েস্ট মাথা নেড়ে বললো। ‘আপনি বলছেন যে লিলি এখন আর দুটোর কথাও পড়তে পেরে গেছে ?’
‘হ্যাঁ । আর সেটা করতে গিয়ে ও একটা চিন্তাজনক সমস্যার দিক ও উন্মোচন করেছে ।’
উইজার্ড ওয়েস্টকে সব কিছু খুলে বললো ।
সব কথা শুনে চেয়ারে হেলান দিয়ে কপাল কুঁচকে ওয়েস্ট ডুবে গেল চিন্তার জগতে ।
‘ধ্যাত তে...’ বলে উঠলো এবং তাকালো । ‘সবাইকে প্রধান কেবিনে আসতে বলুন । একটা দারুন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের ।’
০০০

পুরো টিম হাজির হল হ্যালিকারনাসসাসের প্রধান কেবিনে ।
এখানে ওখানে ছিটিয়ে থাকা চেয়ার বা দেওয়ালের গায়ের টেবিলের অপর বসলো এক এক করে।  এমন কি স্কাই মনস্টার ও হাজির হল ওখানে কিছু সময়ের জন্য বিমানটাকে অটো পাইলটের হাতে ছেড়ে দিয়ে।
ওয়েস্ট বলতে শুরু করলো।
‘যে খেলায় আমরা নেমেছি তার ফলাফল আপাতত ০-২ । দুবারেই আমাদের বিফল হতে হয়েছে। দুটো মিশনে তিনটে ক্যাস্টোনের খোঁজ মিলেছে কিন্তু আমরা একটাও হাসিল করতে পারিনি।
‘তারমানে এই নয় যে আমারা হেরেই গিয়েছি। হয়তো আমরা  কোনো টুকরো নিজেদের হেফাজতে আনতে পারিনি কিন্তু সবকটার ইতিবাচক মন্ত্রগুলো আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি । আমাদের হাতে এখনো সুযোগ আছে । যদিও সেটা খুব সামান্য মাত্রার ।‘
‘খুব, খুব সামান্য, ‘ স্ট্রেচ বললো।
আর সেটা শুনে ওয়েস্ট যে দৃষ্টিতে তাকালো  তাতে শরীরে শিহরনের ঠান্ডা জলের স্রোত বয়ে যেতে বাধ্য  । স্ট্রেচ খুব তাড়াতাড়ি ভুল স্বীকার করে নিলো । ‘সরি, বলতে থাকো ।’
ওয়েস্ট সেটাই করলো, ‘ক্যালিম্যাচুসের পাণ্ডুলিপি দারুন একটা গাইড আমাদের কাছে । একেবারে নিখুঁত ভাবে ওটা আমাদের নিয়ে গেছে কলোসাস, বাতিঘর আর সমাধিমন্দিরের টুকরোগুলোর কাছে ।
‘কিন্তু এখন,’ ওয়েস্ট গম্ভীর ভাবে বললো, ‘লিলি একসাথে দুটো অংশ পড়ে ফেলতে পেড়েছে । আর তার ফলেই জন্ম নিয়েছে এক সমস্যা।’
ওয়েস্ট একটা স্যুইচ টিপলো, একটা ঝুলানো পরদায় লিলির করা  দুটো অংশের অনুবাদ ওখানে ফুটে উঠলো । যার প্রথমটায় লেখা আছে –

“ অসতী স্ত্রীয়ের পতি জিউসের স্ট্যাচু,
ক্রোনোসের সন্তান, মেকি দেবতা।
যখন তার স্ট্যাচু ছিল বিরাট, ক্ষমতা ছিল মায়াময় ।
কোনো বজ্রই ছিলনা তার হাতে, ছিলনা কোনো অভিশাপের জোর ,
কোনো জয় করেনি সে অর্জন ।
অবশ্যই সেই একমাত্র বিজয় যা তার হাতে ছিল... যা তাকে বানিয়েছিল
মহান,
ওহে ডানাওয়ালা মানবী, কোথায় যাচ্ছ তুমি উড়ে? ”

দ্বিতীয় কবিতা
এক মন্দির শিকারি মহিলাদের,
স্বরগিয় এফেসাসে।
অ্যাপেলোর সে বোন, রায়ের রথচালিকা,
কখনোই নিজের শান্তি নষ্ট করেনি ,
ইস্কেন্দারের জন্মের রাতে যখন তার মন্দির পুড়ে যায় তখনো না ।
আমাদের সাহসী ভাইদের উদ্যমের ফলে ,
কখনোই আমাদের আদেশদানের অধিকার খর্ব হয়নি।
না, এখনো আমাদের উচ্চতর মন্দিরে এর প্রতিদিন উপাসনা হয় ।

জো খুব তাড়াতাড়িই প্রথম সমস্যাটা ধরতে পারলো । ‘এই কবিতাদুটোর  মধ্যে তো দেখছি কোন সূত্রই নেই...’ হতশার স্বরে বললো ।
‘ওগুলোতে এমন কিছুই নেই যার অপর ভিত্তি করে আমরা এগোতে পারি,’ ফাজি বললো
‘তার থেকেও বড় কথা,’ স্ট্রেচ বললো, ‘প্রথম কবিতার লেখক জানেনই না জিউসের স্ট্যাচু কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতো দেখছি একেবারে নিরেট পাথরের দেওয়াল আমাদের সামনে ।’
‘সব সময়ে সেই নেগেটিভ টাইপের কথা কেন বলো তুমি,   ইজ্রায়েলী ?’ পুহ বিয়ার ঝাঁঝিয়ে উঠলো। ‘আরে বাবা ওরা তো ভাবছেন নাকি ? উইজার্ড আর হান্টসম্যানের অপর তোমার ভরসা আছে না নেই?’
‘আমি সেটাতেই বিশ্বাস করি যা পাওয়া সম্ভব,’ স্ট্রেচ ঘুরিয়ে জবাব দিলো।
‘জেন্টলম্যান প্লিজ,’ উইজার্ড বললেন এবং ঘুরলেন স্ট্রেচের দিকে । ‘একেবারে নিরেট পাথরের দেওয়াল নয় মোটেই , বেঞ্জামিন। কাছাকাছি, তবে পুরোটা নয় । জিউসের কবিতাটা মানছি একেবারে নিরাশাব্যঞ্জক, কারন ওটা থেকে কোনো রকম সূত্র মিলছে না টুকরোটা ঠিক কোথায় রাখা আছে তার।
‘কিন্তু আরটেমিসের মন্দির বিষয়ক কবিতাটা – শিকারের দেবী এবং গ্রীক কাহিনি অনুসারে অ্যাপোলোর বোন – কিন্তু নির্দিষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছে ক্যাপস্টোনের টুকরোর অবস্থানকে।
‘ওটা জানাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে এর পুরোহিতদের উদ্যোগের কারনে আরটেমিসের টুকরোটা কখনোই তার অধিকার হারায়নি আমুন-রা এর প্রথার অধিকারের । এটা নির্দিষ্ট করে আমাদের জানিয়ে দিয়েছে একটা স্থানের কথা। আমুন-রা এর উপাসনার উচ্চস্থানের মন্দির। আর তার অর্থ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই যে ওই টুকরো ইতিমধ্যেই আমাদের ইউরোপিয়ান প্রতিযোগীদের হাতে চলে গেছে।’
‘আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন বলুন তো ?’ স্কাই মনস্টার জানতে চাইলো। ‘আমি তো ভাবতেই পারছি না যে আমুন-রা এর প্রাচীন প্রথা এখনো প্রচলিত আছে। আমি তো ভেবেছিলাম এসব কবেই শেষ হয়ে গেছে। এই ব্যাপারটা কি আর সেই উচ্চস্থানের মন্দিরটাই বা কোথায় ?’
‘এরকম ভাবাতো তোমার উচিত নয় স্কাই মনস্টার,’ উইজার্ড বললেন, ‘আমুন-রা এর প্রথা নিশ্চিতভাবেই জীবিত আছে এবং ভালোভাবেই পালিত হয় । মোদ্দা কথা কি জানো, এটাই এই মুহূর্তের সব চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে থাকা ধর্মাচরণ এ পৃথিবীতে ।’
  ধর্মাচরণ  ?’ বিগ ইয়ার্স জানতে চাইলো । ‘কোন ধর্ম?’
উইজার্ড অবলীলায় বললেন – ‘আমুন-রা এর প্রাচীন প্রথার নবতম রুপ হল রোমান ক্যাথলিক চার্চ ।’
‘আপনি বলতে চাইছেন ক্যাথলিক চার্চ – মানে আমার ক্যাথলিক চার্চ , সেই চার্চ যেখানে আমি সারা জীবন উপাসনা করে চলেছি – সেটা আসলে সূর্য উপাসকদের ঘাঁটি ?’ বিগ ইয়ার্স একরাশ অবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করলো ।
দারুন ভাবে আইরিশ এবং মনে প্রানে খাঁটি ক্যাথলিক মানুষটা ওয়েস্টের দিকে তাকালো – যে নিঃশব্দে সম্মতি সূচক মাথা নাড়লো । যার অর্থ এটাই বর্তমান বিশ্বে স্বাভাবিক ঘটনা।
‘কাম অন,’ বিগ ইয়ার্স বললো। ‘আমি দ্য ভিঞ্চি কোড পড়েছি । বেশ মজার বই এবং বে ভালো একটা কন্সপিরেসি থিওরীর কথা ওখানে বলা হয়েছে। কিন্তু ওটা একেবারে আলাদা ব্যাপার।’
উইজার্ড কাঁধ ঝাকালেন। ‘ প্রতিদিন যারা এই ধর্ম পালন করে চলেছে তাদের অনেকেই এই ব্যাপারটা জানেন না যে, ক্যাথলিক চার্চ সত্যিই অতি প্রাচীন সূর্য উপাসনার এক নবতম কিন্তু সুক্ষ পর্দার আড়ালে থাকা রুপ।’
উইজার্ড নিজের হাতের কড় গুনে গুনে বলতে থাকলেন –
‘কুমারী মাতার থেকে যীশুর জন্ম নেওয়াটা সরা সরি ইজিপশিয়ানদের হোরাসের কল্প কাহিনীর পুনঃকথন – কেবল মাত্র নামটাই বদলে গেছে। মনে করে দেখো ক্যাথলিক প্রিস্টদের   পোশাক –ওর ওপর চিহ্নিত করা থাকে কপ্টিক ক্রশ । কিন্তু ২০০০ বছর আগে ওই চিহ্ন কপ্টিক ক্রশ নামে পরিচিত ছিল না। ওটা ছিল  ইজিপশিয়ানদের একটি প্রতীক । “আঁখ”, যার অর্থ জীবন। যে কোন অল্টারে গিয়ে ইউক্যারেস্টিক কক্ষের আকৃতিটা একবার লক্ষ্য কোরো । যা একেবারে ঝকমকে সূর্যের মতো । আর হ্যালো বা জ্যোতিটা কি? একটা সূর্য ছাড়া আর কিছুতো নয় ।
‘রোমে যাও এবং চারদিক ভালো করে দ্যাখো । বেলিস্ক গুলোকে দ্যাখো  - চরমতম নিদর্শন সূর্য উপাসনার। সবগুলোর শীর্ষ বিন্দু উপাস্যের দিকে  সেট করা আছে। ওগুলো প্রত্যেকটা আসল ইজিপশিয়ান ওবেলিস্ক । ইজিপ্ট থেকে রোমে আনা হয়েছিল পোপ পঞ্চম সিক্সটাস দ্বারা এবং রাখা হয়েছিল শহরের প্র্ত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ চার্চের সামনে। এমন কি সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকাও বাদ যায়নি । পৃথিবীর সে কোন শহরের চেয়ে রোমে অনেক অনেক বেশী ওবেলিস্ক আছে, যে কোন ইজিপশিয়ান শহরের তুলনাতেও !   লিয়াম তুমি কি আমাকে বলতে পারবে ঠিক কি শব্দ তুমি উচ্চারন করো প্রত্যেকটি ক্যাথলিক প্রাথনার শেষে ?’
‘আমেন,’ বিগ ইয়ার্স বললো ।
‘প্রাচীন ইজিপশিয়ানদের লেখায় কোন ভাওয়েল ছিল না । আমেন শব্দ আসলে আমুন কথাটির অন্যভাবে লেখা রুপ । প্রতিটা সময় লিয়াম তুমি প্রার্থনা করো আসলে সেই দেবতার উদ্দেশ্যে যাকে প্রাচীন ইজিপ্টে সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা বলে ভাবা হতো – আমুন ।’
বিগ ইয়ার্সের চোখ বিস্ফারিত । ‘এ হতেই পারে না...’
জো আলোচনাটাকে আবার ফিরিয়ে আনলো আসল বিষয়ে – ‘ কিন্তু আরটেমিসের কবিতাটা জানাচ্ছে টুকরোটারউপাসনা প্রতিদিন করা হয় আমুন-রা এর প্রথার উচ্চস্থানের মন্দিরে । যদি আপনি যা বললেন তা সত্যি হয় , তাহলে রোমান ক্যাথলিকদের সবচেয়ে উচ্চস্তরের উপাসনা মন্দির হলো রোমের ভ্যাটিক্যানের সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকা ।’
‘হ্যাঁ ওটাই আমার আসল কথা,’ উইজার্ড বললেন।
‘সমস্যা নম্বর একে স্বাগত সবাইকে ,’ ওয়েস্ট বললো । ‘ যদি আরটিমিসের টুকরোটা যদি সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকাতে থাকে তাহলে ওটা ওখানে যে কোন জায়গায় থাকতে পারে। ক্যাথিড্রালটা এক অতিকায় স্থান । সাতটা ফুটবল মাঠের সমান। আর ওর নিচে আছে সমাধির সারি, অসংখ্য কক্ষ, ছোট ছোট চেম্বার এবং সুড়ঙ্গ । আমরা যেটা জানতে পারছি , এটা কোন একটা কক্ষে সাজিয়ে রাখা আছে । যার উপাসনা করেন কেবলমাত্র সবচেয়ে সিনিয়র কারডিনালেরা । অথবা প্রধান ক্যথিড্রালের মেঝেতে পুঁতে রাখা থাকতেও পারে , ফুট কুড়ি নিচে মাটির তলায়। ওখানে একটা গোল্ডেন ট্রাপিজয়েড খোঁজা আর খড়ের গাদায় ছূঁচ খোঁজা একই ব্যাপার । কয়েক বছর লেগে যাবে, আর আমাদের হাতে সে সময় নেই।’
‘সমস্যা নম্বর দুইটা কি?’ জো জানতে চাইলো ।
উইজার্ড বল লো, ‘জিউসের সাথে সম্পর্ক যুক্ত টুকরোটা। তুমি যেমনটা বললে একটু আগে, ওটা থেকে কোনো সূত্রই পাওয়া যাচ্ছে না ওটা খুঁজে বের করার। কিছু একটা গল্প কথার সূত্র না পাওয়া গেলে জানতে পারবো কি করে ওটা কোথায় আছে ।’
গোটা ঘরে নেমে এলো নীরবতার ছায়া । অবস্থাটা মোটেই আশাজনক নয় । ক্যালিম্যাচুসের পাণ্ডুলিপি আগের দুটো ক্ষেত্রে ভালোই সাহায্য করেছে । একবার কেউ ভাবেনি পরের টুকরোগুলো খোঁজার ক্ষেত্রে এরকম অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে।
‘তাহলে এখন কি করবো আমরা?’ জো জানতে চাইলো ।
ওয়েস্ট শান্তভাবে বললো, ‘একটা পথ আছে । কিন্তু এটা সে পথ নয় যেটাকে আমি হাল্কা ভাবে নিতে পারি ...’
‘আর সেটা হলো ...?’
‘আমাদের বাইরে থেকে সাহায্য নিতে হবে,’ ওয়েস্ট বললো । ‘একজন বিশেষজ্ঞর সাহায্য, ক্যাপস্টোন বিশেষজ্ঞ। সম্ভবত এবিষয়ে সব সেরা জীবিত মানুষ । এমন একজন মানুষ যিনি এটার জন্য তার জীবনটাকেই উৎসর্গ করে দিয়েছে । এ পৃথিবীতে সাত প্রাচীন আশ্চর্যের বিষয়ে ওর থেকে বেশী কেউ জানেনা ।’
ফাজি বললো, ‘শুনে তো মনে হচ্ছে এই মানুষটার সাথে আমাদের দশ বছর আগেই যোগাযোগ করা উচিত ছিল।’
‘আমরা অবশ্যই করতাম যদি আমরা সুযোগ পেতাম,’ উইজার্ড বললো , ‘কিন্তু এই মানুষটা ... এক রহস্যময় চরিত্র । সাইকো ধরনের, সোজা কথায় উন্মাদ বলা যেতেই পারে।’
‘কে সে?’ স্কাই মনস্টার জানতে চাইলো ।
‘ মানুষটার নাম মুল্লাহ মুস্তাফা জাঈদ ...’ ওয়েস্ট বললো ।
‘ধুসসসস এটা বাড়াবাড়ি হয়ে –’ স্ট্রেচ বলে উঠলো।
পুহ বিয়ার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ব্ল্যাক প্রিস্ট অফ কাবুল –’
ওয়েস্ট বাকিদের জন্য বিস্তারিত ভাবে বললো।
‘জাঈদ জন্মসূত্রে সৌদি । জড়িত প্রায়  ডজন খানেক কট্টর আতঙ্কবাদী সংস্থার সাথে। পাকিস্তান, সুদান,আফগানিস্থান সব জায়গায় ওর ঘোরাফেরা । ২০০১, ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তালিবানরা ওকে আফগানিস্থানে আশ্রয় দিয়ে রেখে দিয়েছিল । শিক্ষিত মুল্লাহ । কট্টরপন্থী ইসলামের একজন শিক্ষ –’
‘ একজন ভাড়াটে খুনী,’ স্ট্রেচ কথার মাঝখানে বলে উঠলো । ‘অন্তত বারো জন মোসাদ এজেন্টকে মারার জন্য ও দায়ী। পনেরো বছর ধরে রেডলিস্টে আছে জাঈদ ।’ মোসাদ রেডলিস্টের অর্থ ওতে যাদের নাম থাকবে তাদেরকে পৃথিবীর যেখানেই দেখা যাবে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে মারা হবে।’
‘মোসাদই যদি ওকে খুঁজেবার করতে না পারে তাহলে আমার এতো তাড়াতাড়ি ওই মানুষটাকে আমরা কি করে খুঁজে বার করবো?’ জো জানতে চাইলো ।
ওয়েস্ট স্ট্রেচের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘মোসাদ ভালো ভাবেই জানে জাঈদ কোথায় আছে । শুধু ওকে নিজেদের কব্জায় আনতে পারছে না।’
স্ট্রেচের মুখের ভাবই বলে দিলো ওয়েস্টের কথাটা কতটা সত্যি ।
‘ তা সে এখন কোথায় তাহলে?’ পুহ বিয়ার জানতে চাইলো ।
ওয়েস্ট এবার স্ট্রেচের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো ।
স্ট্রেচ বেস রাগের সাথেই উত্তরটা দিলো । ‘মুস্তাফা জাঈদকে ইউ এস বাহিনী তুলে নিয়ে যায় অপারেশন এন্ডিউরিং ফ্রিডমের সময়। ৯/১১ এর পর আফগানিস্থানে আক্রমণ চালিয়ে। আর এর ফলেই তালিবান শাসনের অবসান ঘটে। ২০০২ সালের প্রথম দিকে , মুস্তাফা জাঈদকে ক্যাম্প এক্স-রেতে নিয়ে যায়। কিউবার গুয়ান্তানামো বে এর সাময়িক ভাবে বানানো আতঙ্ক বাদীদের কারাগারে। তারপর থেকে আজ অবধি সে ওখানেই আছে ।’
‘গুয়ান্তানামো বে,’ জো বললো । ‘কিউবা। সবচেয়ে বেশী সুরক্ষিত কারাগার। এ বিশ্বের সবচেয়ে সিকিওর মিলিটারী কমপাউন্ড। আর আমাদের ভাবনাটা কি – আমরা ওখানে হানা দেবো এবং অন্যতম কুখ্যাত অতিচেনা এক  আতঙ্কবাদীকে নিয়ে বেরিয়ে আসবো ?’
ওয়েস্ট বললো, ‘গুয়ান্তানামো বে এর নৌবহর স্টেশনটা দুটো জিনিষের জন্য পরিকল্পনা করে করা হয়েছে – এক. কিউবানরা যেন এটাকে দখল করতে না পারে আর দুই. বন্দীদের এখানে রাখা যায়। এখানকার বন্দুকগুলো সব ভেতরের দিকে এবং কিউবার দিকে লক্ষ্য করে সাজানো । যার লে আমাদের সামনে একটা খোলা দিক থেকে যাচ্ছে ... আর সেটা সমুদ্রের দিকটা।’
জো বললো, ‘সরি কথার মাঝে কথা বলার জন্য। তুমি কি সত্যিই গুয়ান্তানামো বেতে ঢুকে ওখানকার এক কয়েদীকে বের করে আনার কথা ভাবছো?’
 সোজাসুজি ভাবে না,’ ওয়েস্ট বললো, উঠে দাঁড়িয়ে। ‘আমি ওটার ভেতরে ঢোকার পরিকল্পনা মোটেই করছি না ।  আমরা শুধু এন একটা কাজ করবো যা আমেরিকানরা ভাবনাতেও আনতে পারবে না । আমরা গুয়ান্তানামো বের ক্যাম্প এ একটা হইচই বাঁধিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো । এমন হইচই যা কেউ ভাবতেও পারবে না। 
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

[সমাপ্ত পঞ্চম অধ্যায় । খুব শীঘ্র ফিরে আসবো ষষ্ঠ অধ্যায় তৃতীয় অভিযান “গুয়ান্তানামো বে এর যুদ্ধ” নিয়ে । সকল সুধী পাঠক পাঠিকা বৃন্দকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই এই অভিযানে সাথে থাকার জন্য। ]


০০০০০


No comments:

Post a Comment