#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (১১৩-১২৩)
দশম অধ্যায়--পঞ্চম অভিযান
"ঝুলন্ত উদ্যান"[১১-২১]
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০০
দশম অধ্যায়--পঞ্চম অভিযান
"ঝুলন্ত উদ্যান"[১১-২১]
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০০
ওর সামনে অবস্থান করছে নিজের সমস্ত অবিশ্বাস্য মহিমা নিয়ে ... ব্যাবিলনের
ঝুলন্ত উদ্যান ।
অতিকায় মহাকায় বিরাট জায়গাটাকে ভালো করে আলোকিত অবস্থায় দেখার জন্য ওয়েস্টকে আটটা আলোক দন্ড জ্বালাতে হলো ।
এটাকে বলা যেতে পারে এক অতি গুহা । কুড়িটা ফুটবল মাঠ অনায়াসে একসারিতে ঢুকে
যাবে এখানে । পুরোটা বর্গাকার এবং ... এর মেঝেও ঢাকা আছে চোরাবালিতে । হঠাৎ করে
দেখলে মনে হচ্ছে যেন একটা হলদে রঙের বিশাল হ্রদ ।
আর সেই বালির হ্রদের একেবারে মাঝখানে অবস্থান করছে এক পনেরো ফুট উঁচু
জিগুরাত – প্রাচীন মেসোপটেমিয়াতে এধরনের ধাপ ওয়ালা পিরামিড ভালো পরিমাণে দেখতে
পাওয়া যেতো ।
তবে আসল আকর্ষণ ছিল কিন্তু ওই জিগুরাতের ওপরে , যা নিশ্চিতভাবেই বিষ্ময় জাগানো
এক ব্যাপার।
এক মহাকায় চুনাপাথর স্ট্যালাক্টাইট ঝুলে আছে গুহার ছাদ থেকে জিগুরাতটার ওপরে ।
বিশাল বলে এর বর্ণনা দেওয়া কঠিন। এর আকৃতির বিশালতার যথার্থ বিশেষণ পাওয়া কঠিন ।
ওটার মাপের কাছে জিগুরাতটাকে একটা বামন বলে মনে হচ্ছে । অন্তত পঁচিশ তলা উঁচু ।
দেখে মনে হচ্ছে একটা উলটানো পাহাড় অতিকায় গুহাটার ছাদ থেকে ঝুলে আছে । ওটার উলটো
শীর্ষ বিন্দু ছুঁড়ে আছে মাটিতে স্থিত
জিগুরাতের শীর্ষ বিন্দুকে ।
যদিও এই প্রাকৃতিক জিনিষ্টাকে এই রুপ প্রদান করেছে মানুষের হাতের দক্ষতা – যে
কারনেই নির্মিত হয়েছে এই “অবিশ্বাস্য” বস্তুটি এবং স্থান পেয়েছে “আশ্চর্য” এর
তালিকায়।
একটা পায়ে চলা পথ ওটার বাইরের দিককে আবেষ্টন করে আছে - যার কিছু অংশ সমতল আবার কিছু অংশ উঁচুনিচু ।
আবার কোথাও কোথাও দেখে মনে হচ্ছে যেন সিঁড়ির ধাপ । পথটা চক্রাকারে বেষ্টনী পাকিয়ে
অতিকায় স্ট্যালাক্টাইটটার গা বেয়ে উঠে গেছে ক্রমশঃ উঁচুতে । পৌঁছেছে গুহার ছাদে।
এই পথ জুড়ে আছে প্রায় শ খানেক সেমি-সারকুলার আর্চ ওয়ে । প্রত্যেকটা আর্চওয়েতে
আছে নানা ধরনের গাছ পাতা শাখা লতা ফুল ইত্যাদি । দীর্ঘ দিনের অযত্ন সত্বেও ওরা
বেড়েছে প্রভুত পরিমাণে। সব গাছের ডালপালাই স্ট্যালাক্টাইটের আকৃতিটার গা থেকে ঝুলে
আছে । ঝুলে আছে পৃথিবীর জমি থেকে ৩০০ ফুট ওপরে ।
এ সব রকম বিশ্বাসযোগ্যতার বাইরের দৃশ্য ।
এ চরমতম এক বিষ্ময় ।
এ সত্যিই এক ঝুলন্ত উদ্যান।
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান ।
দলের বাকি সদস্যরা এসে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই ওয়েস্ট বুঝতে পারলো ওদের সামনে
এবং পেছনে দুটো দেওয়াল উঠে আছে অতিকায় গুহার ছাদ অবধি।
দেওয়ালটা বানানো হয়েছে ঘনভাবে সাজানো ইট দিয়ে । এর ধারের নির্মাণ বিন্যাস লক্ষ্য
করে ওয়েস্ট মিল খুঁজে পেলো আর এক প্রাচীন স্থাপত্যের । এক বিশেষ স্থাপত্য যা বিশাল
আকৃতির এবং আকার ট্র্যাপিজোডিয়াল – ৩০০ ফুট উঁচু – ঠিক যেন এক দৈত্যাকার দরজা যাকে
ভরাট করা হয়েছে এই ইঁট দিয়ে ।
ওয়েস্ট পকেট থেকে জাঈদের দেওয়া কাপড়ে করা স্কেচটা বার করলো – আঁকাটায় দেখা যাচ্ছে
মহাকায় মাপের স্ট্যালাক্টাইটটাকে [ঘেরা
আছে ভারার কাঠামোতে] পাহাড়ের বাইরে থেকে একটা ট্র্যাপজোডিয়াল আর্চওয়ের মধ্যে ।
আর ঠিক সঙ্গে সঙ্গেই ওর মনে পড়লো নাজি নেতা হেসলারের ডায়েরীতে লেখা সুত্রের
কথা । ডায়েরীটা জ্যাকেটের পকেট থেকে বার করে অভীষ্ট পাতাটা খুঁজে বার করলো –
তৃতীয়
ইমহোটেপের সমাধি থেকে পাওয়া প্রথম লেখনী
“কি
অবিশ্বাস্য কাঠামো অবয়ব ছিল এটা,
একেবারে আয়নার
প্রতিবিম্ব যেন,
প্রবেশ এবং
প্রস্থান একেবারে এক রকম।
আমার কাজটা
আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে – এটাই আমার জীবনের সব সেরা কাজ – যাকে লুকিয়ে রেখে দিতে
হচ্ছে ।
কিন্তু আমি
আমার দায়িত্ব পালন করেছি।
আমরা বিরাট
সেই আর্চ ওয়েকে বন্ধ করে দিয়েছি ভুমিধ্বস ঘটিয়ে।
তবে
আদেশানুসারে পুরোহিতের ঢোকার পথ খোলাই থাকলো যাতে তারা
ভেতরের জিনিষ
পত্রের দেখভাল করতে পারে – পুরোহিতদের বলে দেওয়া হয়েছে
কিভাবে ফাঁদ
গুলো সেট করা আছে ।”
‘ “আমরা বিরাট
সেই আর্চওয়েকে বন্ধ করে দিয়েছি ভুমিধ্বস ঘটিয়ে”,’ ওয়েস্ট জোরে জোরে পড়লো ।
‘ইমহোটেপ ইট দিয়ে এই আর্চওয়ে বানানোর পর
একটা ভুমিধ্বসের সৃষ্টি করে একে ঢেকে দেন । সেখানেই থেমে যাননি । নদীর পথকে ঘুরিয়ে
দিয়েছিলেন এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটাকে লোক চক্ষুর আড়ালে নিয়ে যাওয়ার জন্য । মাই গড,
লোকটা সত্যিই ...’
‘তৃতীয় মহান
স্থপতি সত্যিই একজন বুদ্ধিমান এবং দক্ষ মানুষ ছিলেন,’ জাঈদ বললো , ওয়েস্টের পাশে
এসে।
ওদের পাশে এক
এক করে বাকিরা এসে দাঁড়ালো এবং অবাক হয়ে দেখতে থাকলো অসাধারন দৃশ্যটাকে।
লিলির মুখ হাঁ
হয়ে গিয়েছিল।
এমন কি স্বয়ং
অ্যাভেঞ্জারের কথাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই বিশালত্ব দেখে ।
এদের সবার ঘোর
কাটালো পুহ বিয়ার , বললো, ‘এই জন্যই মানুষেরা একে বলতো আশ্চর্য।’
কিন্তু এখনো
ওরা আসল জায়গায় পৌছাতে পারেনি ।
চোরাবালির
বিস্তৃত হ্রদ ওদের আর জিগুরাতের মধ্যে অবস্থান করছে – যাকে পার না হলে ঝুলন্ত
উদ্যানের কাছে পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই।
জিগুরাত আর
ওদের ঠিক মাঝে বালির হ্রদের মাঝখানে একটা
ছাউনি দেওয়া বেদী দেখা যাচ্ছে । পাথরের তৈরী । ছয়কোনা আকৃতি । আকারে
একটামাত্র গাড়ী রাখার গ্যারেজের মতো । দেওয়াল বলে কিছু নেই । ছটা থামের অপর স্থাপন
করা আছে ভারী পাথরের ছাদটাকে ।
একটা টানা
সোজা সরু রাস্তা দেখা যাচ্ছে চোরাবালির হ্রদের এক ইঞ্চি ওপর দিয়ে চলে গেছে ওদের
সামনে থেকে ছয়কোনা পাথরের ছাউনি অবধি । তবে তিরিশ মিটার পর্যন্ত গিয়ে রাস্তাটা হঠাৎ
যেন হারিয়ে গেছে ।
তারপর আবার
দেখা যাচ্ছে ছাঊনিটার কাছে । মনে হচ্ছে মধ্যের অংশটা অতীতে কোন কারনে চোরাবালির
ভেতরে ডুবে গিয়েছে ।
ভালো করে
তাকাতেই ওয়েস্ট আরো অনেকগুলো পথ দেখতে
পেলো ।
ছয় কোন বিশিষ্ট
ছাউনীর প্রতি দুই থামের মাঝখান থেকেই একটা করে পথ তারার মতো ঘিরে আছে । সব কটাই ওই
সামান্য উঁচু বালির পথ থেকে ।
সব কটা পথই
ছাউনী থেকে মিটার পনেরো দূরে গিয়ে ডুবে গেছে বালির ভেতরে।
‘আমরা কি ভাবে
যাবো?’’ পুহ বিয়ার জানতে চাইলো । ‘পথের অনেকটা করে অংশ তো বালির হ্রদ গিলে খেয়ে
নিয়েছে ।’
অ্যাভেঞ্জার
বললো, ‘ আমার সোজা হেঁটে গেলে কেমন হয়? আমি নিশ্চিত বালির তলায় রাস্তাটা আছে।’
জাঈদ বললো,
‘হ্যাঁ সেটা করলেই হয় । তা তুমিই আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলো দেখি বোকার হদ্দ
ইজ্রায়েলী।’
আ্যভেঞ্জার
ভ্রু কুঁচকে তাকালো ।
‘ও যা বললো,
তার একটাই অর্থ ওই পথ ধরে এগিয়ে গেলে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু জুটবে না,’ ওয়েস্ট
জানালো । ‘ওটা আসলে একটা ফাঁদ বোকা আর এসব বিষয়ে অজ্ঞদের জন্য । আমার যা মনে হচ্ছে
এটা হলো একটা নকল-মেঝের ফাঁদ – এতো বড় নকল-মেঝের ফাঁদ আমি জীবনে প্রথম দেখলাম । এই
বালির হ্রদের নিচে নিশ্চিত কোথাও লুকিয়ে আছে নিরাপদ রাস্তা । কিন্তু আমরা জানিনা
সেই রাস্তাটা কোনটা ।’
‘আমার মনে হয়
আমরা জানি,’ পেছন থেকে একটা শান্তস্বর বলে উঠলো ।
লিলি ।
সবাই লিলির
দিকে ঘুরে তাকালো ।
‘আমরা জানি?’
পুহ বিয়ার বললো ।
‘হ্যাঁ,’ লিলি
বললো । ‘ এটা সেই দ্বিতীয় “নিরাপদ রাস্তা” যার কথা জার্মান মানুষটা তার ডায়েরীতে
লিখে রেখেছিলেন । প্রথমটা আমরা ব্যবহার করেছি জলপ্রপাতের ভেতর দিয়ে আসার সময়। এটা
দ্বিতীয় । আর এজন্যই উনি এদুটোকে একসাথে রেখেছিলেন।’
ওয়েস্টের কাছ
থেকে ডায়েরীটা নিয়ে পাতা উলটে বার করলো ছবি আঁকা পাতাটা । আধঘণ্টা আগেই ওরা এই
পাতাটাকে দেখেছিল । পাতার ওপরে লেখা ‘নিরাপদ রাস্তাগুলো’ –
কিছুক্ষণ আগে
ওদের কাছে ডানদিকের ছবিটার গুরুত্ব ছিল। এখন বামদিকের ছবিটাই সবচেয়ে দরকারি ।
ওদের সামনে যে
দৃশ্য তার সাথে এছবির অনেক মিল ।
শুধু আঁকা
ছবিতে বালি হ্রদের নিচে লুকিয়ে থাকা পথটাকে দেখা যাচ্ছে – একটা যান্ত্রিক সার্কিটের
ধরনের পথ যা প্রথমে গিয়ে উঠেছে পাথরের ছাঊনিতে । তারপর ওখান থেকে নেমে গিয়ে মিশেছে
জিগুরাতের এলাকায় ।
ওয়েস্ট লিলির
দিকে সামান্য ঝুঁকে বললো, ‘ খুব ভালোরে , কিড্ডো! খুবই ভালো । আমাদের ভাগ্যটাও মনে
হচ্ছে সত্যি ভালো । কারন আমাদের ভেতর এমন কেউ আছে যে এই পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা
রাখতে পারছে।’
লিলির মুখে
ফুটে উঠলো স্বর্গীয় হাসি ।
সহসাই অ্যাভঞ্জারের
ইয়ারপিসে ভেসে এলো শব্দরাশি । সুড়ঙ্গের মুখে পাহারারত দুই সেনার একজনের কণ্ঠস্বর ।
ওরা উঠে আসার জন্য অপেক্ষা করছে দৈত্যাকার
সিঁড়ির নিচে ।
ওদের মধ্যে
একজন জানালো, ‘স্যার! আমেরিকানরা প্রথম গুহা পার করছে! ওরা সংখ্যায় এতো বেশি যে কি
বলবো! ওরা এক্সটেন্ডেব ল্যাডার নিয়ে এসেছে
। ওদের দলের স্নাইপাররাও গুলি চালাচ্ছে ! ওদের আটকানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব ! আমরা
চলে আসতে বাধ্য হলাম! ওরা এগিয়ে আসছে !’
অ্যাভেঞ্জার
বললো, ‘ ওকে, আমি উইতজকে পাঠাচ্ছি তোমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসার জন্য । এখানে উঠে এসেই
আবার দায়িত্ব নেবে ওদের এগিয়ে আসা আটকানোর । এভাবে যতটা সময় আটকে রাখা যাবে ততটাই
আমাদের পক্ষে দরকারি । ’
অ্যাভেঞ্জার
ওয়েস্টের দিকে ঘুরে বললো, ‘ ক্যাপ্টেন এবার সময় হয়েছে তোমার এই ক্ষুদে সহকারিনীর
থিয়োরীকে সত্যি প্রমান করার । আশা করছি তোমার নিজের স্বার্থেই সেটা সঠিক হওয়া দরকার । চলো এগোও !’
ছবিটাকে
অনুসরণ করে ওয়েস্ট দ্বিধাগ্রস্থ চিত্তে প্রথম পদক্ষেপ ফেললো মূলপথের ওপর , এক পা
এগিয়েই ঘুরলো বাঁদিকে । ওর সামনে এখন চোরা বালির স্তর এবং ...
... আর এক পা
ফেলতেই সেটা গিয়ে ঠেকলো শক্ত জমিতে । অর্থাৎ ছবি অনুসারে বালির নিচে আছে অদৃশ্য রাস্তা
। চোরা বালির উপরিস্তরের কয়েক ইঞ্চি নিচে ।
লিলি উৎকণ্ঠায়
ধরে রাখা নিঃশ্বাসটা ছাড়লো ।
ওয়েস্ট পথটার
দুপাশে পা চুবিয়ে পরীক্ষা করলো – প্রমান পেলো দুদিকেই আছে অজ্ঞাত গভীরতার আসল কালো
রঙা চোরাবালির ফাঁদ ।
‘মনে হচ্ছে আমরা
পথটা খুঁজে পেয়েছি ।’
দ্রুত একটা কপি
আঁকা হলো যে দুজন আমেরিকান সেনাদের আটকাবে তাদের জন্য । তারপর দলটা ওয়েস্টকে
অনুসরণ করে এগিয়ে চললো বালি ঢাকা পথের ওপর দিয়ে ।
ম্যাপটা
অনুসরণ করে ওরা এগিয়ে যাচ্ছিলো । দূর থেকে কেউ দেখলে বলতো ওরা যেন জলের ওপর দিয়ে
হেঁটে যাচ্ছে । ওদের পায়ের তলায় দলিত হচ্ছিলো শতাব্দী প্রাচীন বালি। বাঁদিকে হেঁটে
ওরা পৌছায় বাম প্রান্তের দেওয়ালের কাছে । সেটা ধরে কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে ম্যাপ নির্দেশিত পথ ধরে ওরা
পৌছায় ওদের রাস্তাটার বাম দিকে অবস্থানকারী এবং ছাঊনীর সাথে সংযুক্ত শেষ পনের গজের
রাস্তাটার ওপর এবং উঠে পড়ে ছাউনীর এলাকায় ।
পাথরের ছাউনী
পাথরের ছাউনীর
নির্মাণ শৈলী দেখে সবাই চমকে গেল।
লুকিয়ে থাকা
পথটা আর বালি হ্রদের স্তর প্রায় এক লেভেলে ছিল । কিন্তু এখানে ছাঊনীর মেঝে অন্তত বারো ফুট
নিচে ভেতরে একটা পাথরের গোল খাঁজ যার চারপাশে জমে আছে চোরাবালির অগাধ রাশি ।
ভেতরের দেওয়াল
মোটা এবং শক্তপোক্ত ।
এই গর্তের
ভেতর নেমে গেছে একটা সরু পাথরের সিঁড়ি । ছাউনীর মতোই এর ভেতরটাও ছয়কোনা । এক এক
দিকে একটা করে দরজার মতো পথ দেখা যাচ্ছে । এদের ওপরেই ছটা থামের ওপর রয়েছে পাথরের ছাদ । ঠিক যেন একটা কালো মেঘ অপেক্ষা করছে ঝড়ের ।
আরো
আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো ছয় কোনা খাদ বা গর্তটার ভেতরে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে একটা
ব্রোঞ্জের সিলিন্ডার আকৃতির খাঁচা । গর্তের সমান উঁচু । অর্থাৎ বারো ফুট । চারদিকে
ওপর নিচ এবং পাশাপাশি দন্ড দিয়ে ঘেরা।
ভেতরের পাথরের
দেওয়ালে ছটা দরজা দেখতে পাওয়া গেলেও ব্রোঞ্জের খাঁচার গায়ে কেবল মাত্র একটাই দরজা
। আর সেটা আপাতত ওয়েস্টদের দিকে মুখ করে খোলা । সিঁড়ি দিয়ে নামলেই ভেতরে খাঁচার
ভেতরে ঢোকার পথ ।
‘বোঝাই যাচ্ছে
এটা একটা রোটেটিং কেজ ...’ জাঈদ বললো । ‘খাদে নেমে একবার খাঁচার ভেতর ঢুকলেই খাঁচাটা ঘুরতে শুরু
করবে । সেই সময়ে বেছে নিতে হবে সঠিক দরজাটা । তবে এটাও নিশ্চিত যে খাদে নামলেই
চালু হয়ে যাবে ফাঁদ। আর সেই ফাঁদের হাত থেকে বাঁচতে হবে একে পার হতে হলে।’
‘টিউনিসিয়ার
ডুবন্ত খাঁচার মতোই ব্যাপার,’ পুহ বিয়ার বললো ।
আর একটা
ব্যাপার। খাদের ঠিক মাঝখানে একটা কারুকাজ করা বেদী । যার ওপরে অবস্থান করছে একটা
অসাধারন কালো বালিপাথরের খোদাই করা মূর্তি ।
একটা
ডানাওয়ালা সিংহের মূর্তি , যার দুটো পা ডুবে আছে ঝরনার জলে আর সমানের দুপা উঠে আছে
শূন্যে । ডানা ছড়িয়ে আছে পেছনে । পাঁচ ফুট উঁচু । রোষ কষায়িত চোখ দুটো বানানো
হয়েছে লাল রুবি পাথর দিয়ে।
‘ডানাওয়ালা
সিংহের কূপ ...’ জাঈদ বললো ওয়েস্টকে । ‘নাজিরা এটার ব্যাপারেও জানতো।’
হেসলারের
ডায়েরীর পাতায় লেখা ছিল এর বিষয়ে –
“তৃতীয়
ইমহোটেপের সমাধি থেকে পাওয়া দ্বিতীয় লেখনী
“ কেবল মাত্র
সাহসী আত্মা যাদের আছে
তারাই পার হতে
পারবে ডানাওয়ালা সিংহের কুয়ো ।
কিন্তু নিনগিজিডার
খনি থেকে সাবধান থেকো
যারা প্রবেশ
করবে সর্প -প্রভুর গর্তে
আমি এটা ছাড়া
আর কোন রকম উপদেশ দিচ্ছি না
সমস্ত আশা
পরিত্যাগ করো
ওখান থেকে
পালানোর যে কোনোই পথ নেই ।
ডানা ওয়ালা
সিংহ – পারসিয়া/মেশোপটেমিয়াতে এধরনের আসিরিয়ান মূর্তি দেখা যায় ।
নিনগিজিডা –
আসিরিয়ানদের সরীসৃপ এবং সাপের দেবতা।
সম্ভাব্য
রেফারেন্স ব্যাবিলনের এইচ জি এর ???”
জাঈদ বললো, ‘
ওই ব্যাটা নাজি ঠিকই ভেবেছিল । এটা এইচ জি বা হ্যাঙ্গিং গারডেনের সম্ভাব্য
রেফারেন্স–’
ঠিক তখনই ,
বন্দুকের শব্দ শোনা গেল । পেছনে,
দৈত্যাকার সিঁড়ির গুহা থেকে ।
‘স্যার! আমেরিকানদের
প্রথম স্কোয়াড সিঁড়ির কাছে পৌছে গেছে!’
খবে এলো পাহারারত সেনাদের কাছ থেকে। ‘চেষ্টা করছি ওদের আটকে রাখার কিন্তু ওরা
সংখ্যায় প্রচুর – ওদের কে বেশিক্ষন আটকে রাখতে পারবো বলে মনে হয় না ।’
‘শ্যাম্বারগ
যতক্ষন পার আটকে রাখো , ‘অ্যাভঞ্জার জানালো । ‘আমাদের আর কিছুটা সময় দরকার।‘
ওয়েস্টের দিকে
ঘুরে জানতে চাইলো, ‘এই ফাঁদের ব্যাপারটা কি?’
ওয়েস্ট একটু
দ্বিধাগ্রস্থ ভাবে বললো, ‘আমার মনে হচ্ছে জাঈদ ঠিক কথাই বলছে। এই খাঁচা ঘুরবে ।
আমাদের সামনে আসবে একের পর এক দরজা। ওই খাদে নেমে বেছে নিতে হবে সঠিক দরজাটাকে । আর
সেই দরজার অবস্থান আমাদের কাছে থাকা ম্যাপ অনুসারে ঠিক উলটো দিকে ।’
‘সেটা তাহলে
খুঁজে বার করো,’ ওয়েস্ট কে সামনের দিকে ঠেলা মেরে অ্যাভঞ্জার বললো । ‘ শেফার ওর
সাথে যাও, নজর রাখার জন্য।’
ইজ্রায়েলি
সেনার উদ্যত বন্দুকের সামনে দিয়ে ওয়েস্ট ঢুকে পড়লো সাবধানে খাঁচার ভেতরে । পা দিলো
ছাঊনীর মেঝের চোরাবালিতে ।
ইমহোটপের লেখা এই
কূপ বিষয়ে প্রাচীন সতর্কবানী ওর মাথার ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছিলো - কেবলমাত্র সাহসী
আত্মা যাদের আছে তারাই পার হতে পারবে।
চারপা এগিয়ে
ওয়েস্ট আর ওর বন্দুকধারী সাথী ডানাওয়ালা সিংহটার কাছে পৌছাতেই কূপের ভয়ঙ্কর
প্রযুক্তি বিদ্যা তার কাজ শুরু করে দিলো ।
যেটা ঘটলো এর
পরে... সেটা খুব দ্রুত ঘটলো ।
কিঁইইইইইইইইচ!
কর্ণভেদী একটা শব্দ হল ধাতুর সাথে ধতুর ঘষা লাগার। গোলাকার খাঁচাটা শুরু করে দিলো
ঘুরতে । বিশাল ছয়কোণা খাদের ভেতরে জমির সাথে সমান্তরাল ভাবে ঘুরছিলো – উন্মুক্ত
দরজাটা । দেওয়ালের গায়ে খোদিত সব কটা দরজার সামনে দিয়ে ঘুরে গেল একপাক ।
এর পর শুরু হলো সবচেয়ে বাজে
ব্যাপারটা ।
সরসরে শব্দ
তুলে খাদের ভেতর চারদিক থেকে শুরু হল বালিপ্রপাত । ওপরে যে পাথুর গোল খাঁজ চোরাবালিদের
আটকে রেখেছিল সেটা অদৃশ্য হয়েছে ! ওপরে মেঝেতে জমে থাকা চোরাবালি পড়তে শুরু করেছে
নিচে। এত দ্রুত যে খুব তাড়াতাড়ি সেটা পৌঁছে গেল ওয়েস্টের হাঁটুর কাছে ... এবং
বাড়তেই থাকলো উচ্চতা!
চারদিক থেকে
চোরাবালি ঝরে পড়ছে ... তার সাথে ঘুরছে খাঁচা , ওয়েস্টের মাথা ঝিম ঝিম করে উঠলো।
ও নিজেও বুঝতে
পারলো এর অর্থ। এটাই এই ফাঁদের চাতুরী ।
তোমার ভেতরে
যত প্যানিক বাড়বে , উৎকণ্ঠা বাড়বে তুমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভাবনা থেকে সরে যাবে ...
ফলে বেছে নেবে ভুল দরজা ...যেখানে অপেক্ষা করে আছে ভয়াল বিপদ ...
যেটা হলো ওর
সঙ্গী ইজ্রায়েলী বন্দুকধারীর।
যেই খাঁচার
দরজা একটা দেওয়ালের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো , ভীত সন্ত্রস্থ করপোর্যাল ছুটে গেলো
বাঁচার আশায় –
-দেখা
যাচ্ছিলো এক সংকীর্ণ সিঁড়ি ঠিক যেমন সিঁড়ি দিয়ে ওরা নেমে এসেছে এই খাদের ভেতরে।
কিন্তু ওই
সঙ্কীর্ণ সিঁড়ি কোথাও নিয়ে যায় না । আসলে ওটা কোনো পথই নয় ।
খুব ছোট্ট
একটা স্থান ওটা । খাড়া করে একটা কফিনকে কোনও মতে ওখানে রাখা যেতে পারে।
শেফার ওখানে
যেতেই একটা আট ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের পাত নেমে এলো ওর পেছনে। যার ওপরের দিকে একই
ধাতুর একটা ছোট্ট গ্রিল লাগানো । শেফার আটকে গেলো ভেতরে ... আর সাথে সাথেই ওখানে
জমা হতে শুরু করলো চোরাবালির ধারা স্রোত ।
হুড়হুড় করে
বালি পড়ছিল শেফারের মাথার ওপরে । শোনা যাচ্ছিলো শেফারের আর্ত চিৎকার । কয়েক সেকেন্ড লাগলো ভেতরটা
বালিতে ভর্তি হতে । হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওয়েস্ট দেখলো চোরাবালি গ্রাস
করে নিলো শেফারকে । চিৎকার করতে থাকা মুখের ভেতরে ঢুকে গেল বালির স্রোত ।
থেমে গেল
চিৎকার ।
এবার একেবারে
একা ওয়েস্ট খাদের ভেতরে। একটা বড় করে শ্বাস নিয়ে , ‘শালা! এবার আমাকে ...’
বুঝতে পারছিল
শেফারের মৃত্যু ওকে একেবারেই বিভ্রান্ত করে দিয়েছে । মনের নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছে
ওয়েস্ট । ওর জানা নেই কোনটা দিয়ে গেলে এই খাদ থেকে মুক্তি মিলবে । এবার প্যানিকের
কালো হাত ওকে জাপ্টে ধরছে ।
কেবলমাত্র
সাহসী আত্মা যাদের আছে...
কেবলমাত্র
সাহসী ...
প্যানিক করার
কিছু নেই জ্যাক ...ঈশ্বরের দোহাই , বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ো না...
আর ঠিক তখনই
ওর কানে ভেসে এলো লিলির চিৎকার ।
ঘুরে তাকালো
ঘূর্ণায়মান খাঁচার ছাদের ভেতর দিয়ে – অ্যাভেঞ্জার এবং বাকিরা ফিরে যাছে সিঁড়ি দিয়ে
। লিলি দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়ির ধাপে । দেখার চেষ্টা করছে ওয়েস্ট কে ।
‘ড্যাডি ... এ
হতে পারে না! লিলি চিৎকার করে উঠলো ।
সাথে সাথেই
যেন সময় থমকে দাঁড়ালো ওয়েস্টের জন্য । চারদিক যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে । থেমে গেছে
বালি প্রপাতের শব্দ । থেমে গেছে খাঁচার ঘূর্ণন ।
ড্যাডি?
কি বললো লিলি... “ড্যাডি”?
এর সাথেই
সাথেই এক ঝটকায় অ্যাড্রিনালিনের এক ঢেউ এসে ধাক্কা মারলো ওয়েস্টকে – এরকম অনুভুতি
এর আগে একবারই হয়েছিল ওর । জায়গাটা ছিল উগান্ডার একটা আগ্নেওগিরির ভেতরের গুহা ... ঠিক দশ
বছর আগে ... সেই সময়ে যখন ওয়েস্ট হাতে তুলে নিয়েছিল সদ্যোজাত চিৎকার করে কাঁদতে
থাকা লিলিকে ...
আমি ... মোটেই
...হেরে...যাবো ...না ... মরে ...যাবো ...না ...
আমি আর যাই
করি ওকে হারাতে পারবো না ।
স্নায়ু আবার
ফিরে পেলো নিজের চলন ।
একমাত্র সাহসী
মানসিকতা যাদের আছে ...
ওর মাথায় আছড়ে
পড়লো একটাই বাক্য – সাহসীরা কখনো প্যানিক করে না । তারা সব সময়েই শান্ত ধীর স্থির থাকে , তা সে যতই বিপদ সামনে আসুক না
কেন।
এটাই সত্যি ।
ঘুরে দাঁড়ালো
ওয়েস্ট... মন এখন আবার ইস্পাত কঠিন, অযথা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও দরকার নেই ...ভয়
পাওয়ার ও কিছু নেই এই মৃত্যু ফাঁদের ভেতরে
দাঁড়িয়ে।
মনকে স্থিরতা
দিতে না দিতেই এর থেকে বাঁচার উত্তরটাও এসে গেল সামনে।
লিলির ওই চিৎকারই
ওয়েস্টকে উত্তরটা খুঁজে দিলো ।
ম্যাপ অনুসারে
এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সঠিক দরজার অবস্থান লিলি যে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তার উলটো
দিকে ।
লিলি যে তার
কতো বড় সহায়কের কাজ করছে সেটা ওয়েস্ট ভালো মতোই বুঝতে পারলো । বেশীর ভাগ সময়েই
প্রত্নচোরের দল প্রবেশপথের অন্যদিকে কাউকে ছেড়ে আসে না – সব সময়েই সবার লক্ষ্য
থাকে একসাথে ভেতরে ঢোকার । সবার নজর থাকে ডানাওয়ালা সিংহের চোখের রুবিটা হাতানোর ।
আর এটা করতে গিয়েই চালু করে ফেলে ফাঁদ ...তারপর অবস্থার প্রেক্ষিতে হারিয়ে ফেলে
বোধ বুদ্ধি এবং পরিণতি হয় একটাই- মৃত্যু ।
ওয়েস্ট চিৎকার
বললো, ‘একদম চিন্তা করিস না কিড্ডো ! আমি হাল ছাড়িনি মোটেই!’
শরীরের সব
শক্তি দিয়ে ঘুরতে থাকা খাঁচার ভেতরে বালির রাশি ঠেলে হাঁটতে শুরু করলো ওয়েস্ট...পার হলো সিংহর
মূর্তিটাকে ...এগিয়ে গেল লিলির দরজার উলটো দিকের দরজার উদ্দেশ্যে । দরজাটার কাছে
পৌছাতে পৌছাতে বালি উঠে গেল ওর প্রায় বুকের কাছে ।
খাঁচার
দেওয়ালের দরজা ঘুরে এসে পৌছালো পাথরের দেওয়ালের অভীষ্ট দরজার সামনে ।
এখন দুটো দরজা
মুখোমুখী এক সাথে অবস্থান করছে ।
ওয়েস্ট বালির
চাপ ঠেলে ফেলে লাফ দিলো ভেতরে । সেই একই রকম কফিন সদৃশ একটা স্থান যেখানে ঢুকেছিল
শেফার – আর প্রায় সাথে সাথেই ওয়েস্টের মনে হ লো যাঃ সব শেষ ...মনে হচ্ছে একটা সাঙ্ঘাতিক... সাঙ্ঘাতিক রকমের ভুল বোধহয় করেই ফেললো ও ।
না, মোটেই তা
নয় ।
মোটেই এটা চারদিক
বন্ধ একটা জায়গা নয় – ওই তো দেখা যাচ্ছে একটা বাঁক । ওখান দিয়ে উঁকি মারতেই দেখা
গেল ছোট্ট সিঁড়ির ধাপ ... যা উঠে গেছে ওপরের দিকে।
ওয়েস্ট সটান
উঠে গেল ধাপগুলো বেয়ে ...মারাত্বক বালির প্রপাতের হাত থেকে রেহাই মিললো... ওর
সামনে এখন খোলা একটা স্থান । একটা ছোট্ট রাস্তা ওর সামনে। যা ধরে হেঁটে গেলেই এই
অন্ধকূপের উল্টোদিক ।
ওই পথ দিয়ে
হেঁটে যাওয়ার সময় নিশ্চিত ভাবেই ওর পা পড়ে এমন কোন ট্রিগার স্টোনে যা ফাঁদটাকে
ফিরিয়ে নিয়ে যায় আগের অবস্থায় । খাঁচার দরজা ফিরে যায় ওদিকের প্রবেশপথের মুখে এবং
বালির রাশি এক লহমায় নিচে বিশেষ কোনও পথ
দিয়ে বেরিয়ে ফাঁকা করে দেয় কূপের ভেতরটাকে।
ওপরে পৌঁছে
ওয়েস্ট দেখতে পায় অ্যাভঞ্জারকে ।
‘তোমাদের
সবাইকে এটা পার করে আসতে হবে! চেঁচিয়ে জানায় । ‘ ব্যাপারটা একটু ভজকট ধরনের । তবে
চিন্তা নেই আমি সঠিক দরজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকছি । সোজা আমাকে লক্ষ্য করে বেরিয়ে এসো
।’
এভাবেই দলের
বাকি সদস্যরা নিরাপদে নিনগিজিডার কূপ পার
হয়ে পৌছে গেল অন্য দিকে।
দুটো দলে
ভাগ হয়ে
ওরা অন্যদিকে গেলো। দুবারই খাদ
ভর্তি হতে শুরু করে বালিপ্রপাতে। সাথেই
মাথা ঘুরিয়ে দিতে শুরু হয় খাঁচার ঘূর্ণন । কিন্তু সঠিক দরজার হদিশ জানা থাকায় বালি
হাঁটুর উচ্চতায় ওঠার আগেই ওরা খুব একটা সমস্যায় পড়ে না খাদ পার হওয়ার ক্ষেত্রে।
অপর প্রান্তে
পৌঁছেই লিলি ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ওয়েস্টকে।
ফিস ফিস করে
বলে , ‘আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ।’
ওয়েস্ট ও
আঁকড়ে ধরে লিলিকে। ‘ একদম চিন্তা করবি না কিড্ডো,
অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন , আমি সব সময় তোর পাশে থাকবো । ’
০০০০০
সবাই এক
জায়গায় এসে যাওয়ার পর ওরা পাথরের ছাঊনীর উল্টোদিকের চোরাবালির হ্রদের ভেতরের আধা
ডুবন্ত পথ দিয়ে হেঁটে গিয়ে পৌছালো
জিগুরাতের এলাকায় । গুহার একেবারে মাঝখানে যার অবস্থান।
জিগুরাতের
ওপরে গুহার ছাদ থেকে অন্য জগতের মহাকাশযানের মতো ঝুলে ছিল অবিশ্বাস্য অতিকায়
স্ট্যালাক্টাইট নির্মিত ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান ।
ওরা দ্রুত উঠে
গেল জিগুরাতের ওপরে ।
অতি দ্রুত
কারন এই স্থানে একটাও ফাঁদ বানানো হয়নি ।
প্রথমে ব্যাপারটা অনুধাবন করে ওয়েস্ট অবাক হয়ে
গিয়েছিল । তারপর বুঝতে পেরেছিল এটাই হলো তাদের মিশনের প্রথম এবং প্রকৃত আশ্চর্য যার ভেতরে ওরা
প্রবেশ করতে চলেছে ।
আগের যতগুলো
জায়গায় ওরা গিয়েছে টুকরোর সন্ধানে – কলোসাস, বাতিঘর , সমাধি মন্দির, জিউসের
স্ট্যাচু এবং আরটেমিসের মন্দির – সবগুলোই আসল
আশ্চর্যগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে অন্য কোনো স্থানে রাখা হয়েছিল । যে কারনে
ওগুলোর সুরক্ষার জন্য ফাঁদের দরকার পড়েছিল।
এই উদ্যানের
সেটা দরকার নেই।
এটাই একমাত্র
তার নিজের স্থানে পড়ে আছে । অবস্থান করছে একেবারে সেইভাবে যেভাবে সেই সময়ে ওটাকে
রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
জিগুরাত বেয়ে
উঠতে উঠতে ওয়েস্ট এটাও বুঝতে পারলো তৃতীয় ইমহোটেপ নিশ্চিত ভাবেই এই আশ্চর্যকে
নিজের সম্পূর্ণ সম্মান দেখিয়েছেন । একে সুরক্ষিত করার জন্য ঘিরে দিয়েছেন নানান
ফাঁদ দিয়ে কিন্তু আসল ব্যাপারটার গায়ে এক বিন্দু পরিমাণ স্পর্শ করেন নি । সেট করেননি
একটাও ফাঁদ।
দূর থেকে
ইজ্রায়েলী দুই রক্ষীর বন্দুকের নির্ঘোষ ভেসে আসছিল ক্রমান্বয়ে । ওরা তাদের কাজ করে
চলেছে। আটকে রাখছে ধেয়ে আসা আমেরিকান সেনাদের।
০০০০০
ওয়েস্ট আর দলবল
পৌছালো জিগুরাতের শীর্ষ বিন্দুতে । ওর থেকে সাত ফুট ওপরে স্ট্যালাক্টাইট অতিকায় এর
শেষ অংশ দেখা যাচ্ছে।
এরকম একটা
প্রাকৃতিক বিশালত্বের নিচে দাঁড়ানোর অনুভুতিটা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব । এ যে কত বড় তা ধারনার ভেতর আনতে
পারাটাই কঠিন । যেন একটা জাহাজ ঝুলে আছে
আকাশ থেকে নাকের ডগায় ।
ওদের ঠিক ওপরে
ওই অতিকায়ের মাঝখান দিয়ে সরু একটা নলের মতো গর্ত উঠে গেছে ওপরের দিকে ।
আবার নিচে
ওদের পায়ের কাছেও একটা ব্যাপার দেখা যাচ্ছে ।
জিগুরাতের ওপরটা
সমতল এবং বর্গাক্ষেত্রাকার – পাঁচ গুনিত পাঁচ মিটারের হবে – যার প্রায় পুরোটা
জুড়েই অবস্থান করছে এক চারকোনা গর্ত । নেমে গেছে নিচে কুচকুচে কালো অন্ধকারে ।
মই এর মতো
হাতলশ্রেনী নেমে গেছে নিচে । এর সাথে
ওপরের স্ট্যালাক্টাইটের গায়ের গোল নলাকৃতি গর্তের অবস্থান মুখোমুখি ভাবে ।
জাঈদ ঝুঁকে
জিগুরাতের চারকোনা গর্তের কানাতের গায়ের লেখা পড়তে শুরু করলো ।
‘এটা
পুরোহিতদের প্রবেশপথ,’ ওয়েস্টের উদ্দেশ্যে বললো । দুজনেই তাকালো অ্যাভেঞ্জারের
দিকে।
ইজ্রায়েলী
কম্যান্ডার যদিও ওদের কথার অর্থ ধরতে পারলেন না – বা তার গুরুত্ব – আর এক অব্যক্ত
সমঝোতায় না জাঈদ না ওয়েস্ট কেউ এব্যাপারে অ্যাভেঞ্জারকে কিছু বোঝানো উচিত বলে মনে
করলো ।
ওয়েস্ট, পুহ
বিয়ার আর স্ট্রেচ নিজেদের ব্যাগ থেকে গুহায় কাজ করার নানা সরঞ্জাম বার করলো ।
সেগুলো জুড়ে বানালো একটা বড় মাপের “ট্রাইপড ল্যাডার” ওই চারকোণা গর্তের ওপরে ।
কয়েক মিনিটের
ভেতর ওটার ওপরে একটা ইংরেজি এ আকৃতি মই খাড়া হয়ে গেল । যেটা গিয়ে ছুঁলো
স্ট্যালাক্টাইটের উলম্ব নলের মুখটাকে ।
অ্যাভেঞ্জার
ওয়েস্টকে এক ঠেলে মেরে বললো, ‘যাও কাজ শুরু করে দাও!’
ওয়েস্ট উঠে
গেল মই বেয়ে ...কিছুক্ষনের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গেল অতিকায় স্ট্যালাক্টাইটের গোল
গর্ত পথে ।
সংকীর্ণ গোল
গর্তের ভেতরেও মই এর মতো পর পর হাতল সাজানো ...উঠে গেছে ওপরের দিকে। ফলে ওয়েস্টের
অসুবিধা হচ্ছিল না মোটেই ।
ক্লস্ট্রোফোবিয়া
যাদের আছে তাদের পক্ষে স্থানটা মোটেই ভালো নয় । চারদিকের দেওয়াল ভিজে স্যাঁতসেতে ।
জলের ফোঁটাও দেখা যাচ্ছে স্থানে স্থানে।
ফায়ারম্যান
হেলমেটের আলোয় চারপাশ দেখতে দেখতে সাবধানে ওয়েস্ট
উঠে পৌঁছে গেল একটা প্রমান আকারের মানুষের আকৃতির
সুড়ঙ্গে । যেটা দিয়ে এগিয়ে ও উপস্থিত হল স্ট্যালাক্টাইটের বাইরের দিকে।
ওখান থেকে বের হতেই দেখা গেল সেই পথ যা ঘুরপাক খেয়ে
জড়িয়ে আছে উদ্যানটাকে ।
আগে থেকেই
জ্বালানো আলোক দন্ডের আলোয় ওপর থেকে মহাকায় গুহাটাকে দেখতে পেলো ওয়েস্ট । শ্বাস
রুদ্ধকারী সে দৃশ্য । অনেক নিচে দেখা যাচ্ছে জিগুরাতটাকে, ধাপগুলো ছড়িয়ে আছে
বাইরের দিকে। চারদিকে অবস্থান করছে চোরাবালির হলুদ হ্রদ এবং – এই হ্রদের মাঝখানে
অবস্থান করছে ডানাওয়ালা সিংহের কূপ । যার ছাউনীর চারদিকে ছটা রাস্তাকে দেখা যাচ্ছে
তারার মতো ।
অবাক হয়ে
দেখলো জিগুরাতের উল্টোদিকেও একই রকম ছাউনী সহ আর একটা কূপের অস্তিত্ব আছে – একইরকম
ভাবে তার থেকে বেরিয়ে এসেছে আধা ডুবন্ত ছয়টি রাস্তা ।
ওর মনে পড়লো
তৃতীয় ইমহোটেপের কথাগুলো – “একেবারে আয়নার প্রতিবিম্ব যেন,
প্রবেশ এবং
প্রস্থান একেবারে এক রকম।”
তারমানে ওই
দিক দিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার একটা পথ আছে , ওয়েস্ট ভাবলো । আর এটা ভাবতে
ভাবতেই বুঝতে পারলো অ্যাভেঞ্জার এবং ইজ্রায়েলীরাও এই পথটার খবর জানে । সে কারনেই
ওরা ধরেই রেখেছে ওই পথ দিয়ে ওরা পালাবে ...আমেরিকানদের হাত এড়িয়ে।
এর অর্থ
অ্যাভেঞ্জার এই স্থানের বিষয়েও ভালো মতোই জানে ।
‘কাম অন,
ক্যাপ্টেন,’ অ্যাভেঞ্জার ওয়েস্টের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো । ছিঁড়ে গেল ওয়েস্টের
চিন্তার জাল । দলের বাকিরাও এক এক করে এসে গেল ওর পেছন পেছন । লিলি আর পুহ বিয়ারকে
সাথে নিয়ে । ‘তোমার কাজ এখনো শেষ হয়নি ।’
০০০০০
স্ট্যালাক্টাইটকে
ঘিরে থাকা পথে ওরা এগিয়ে চললো, সামনে ওয়েস্ট ।
পুরো জায়গাটা
ভিজে স্যাঁতসেঁতে । বড় বড় পাতা ওয়ালা গাছ গাছড়ায় ভর্তি, যেমন দেখা যায় বৃষ্টিবনের
এলাকায় । এমন সব লতানো গাছ ও মস জাতীয় উদ্ভিদ যাদের সূর্যালোকের বদলে আদ্রতা বেশি
দরকার ।
এগিয়ে যাওয়া
যথেষ্টই কষ্টকর এখন । লতা পাতার ঝোপ বেড়ে
রাস্তা জুড়ে পড়ে আছে । ঝুলছে এদিক ওদিক থেকে ।
ইচ্ছে না
থাকলেও এক অব্যক্ত কষ্ট বুকের ভেতর জমিয়ে রেখে পথ ফাঁকা করার জন্য সেই সব অজানা
অচেনা দুর্লভ উদ্ভিদের ডালপালাদের ম্যাসেট[বড় মাপের চাকু] দিয়ে কাটছিল
ওয়েস্ট ।
একটু একটু করে
ওরা উঠে যাচ্ছিলো মহাকায় গুহার একেবারে ছাদের দিকে।
একটু একটু করে
দূরে সরে যাচ্ছিলো চোরাবালির হ্রদ আর জিগুরাত । এখান থেকে হ্রদের দুরত্ব এখন
৪০০ফুট । প্রায় ঝাপসা দেখাচ্ছে সব এতোটাই উঁচু ।
পথের মাঝে এক
জায়গায় ওরা রঙের ছোঁয়া দেখতে পেলো । এক
ঝাঁক গোলাপ ফুটে আছে । সাদা গোলাপ ।
‘সূর্যের আলো
ছাড়াই এগুলো বেঁচে আছে কিভাবে?’ পুহ বিয়ার বলে উঠলো ।
ওয়েস্টও সেটাই
ভাবছিল । উত্তর অবশ্য পেয়েও গেলো একটু তাকাতেই । গুহার ছাদে অনেকগুলো ছোটো ছোটো
গর্ত করা আছে। খুব বেশি হলে এক ইঞ্চি করে চওড়া , কিন্তু সেখান দিয়েই আসছে আলো –
প্রকৃতির আলো । নিশ্চিত ভাবেই ওই ফুটোগুলো একেবারে পাহাড় ভেদ করে ওপরের জমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
ওয়েস্ট ভালো
করে দেখে বুঝতে পারলো ওই ফুটোগুলো দিয়ে যে সামান্য আলো এসে পড়ে এই সব গাছের গায়ে
তাতেই ওদের কাজ চলে যায় । নিজেদের খাদ্য তৈরী করা ও বেঁচে থাকার জন্য ।
‘পারশিয়ান
হোয়াইট ডেজারট রোজ,’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘উফফস! বর্তমান কালে যার নামে
বিলুপ্তির তালিকায় উঠে গেছে।’
‘অনেক হয়েছে,
এবার এগোও । চিন্তা নেই তোমার কব্রে আমি আমি এই
ফুলের একটা গোছা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো!’ অ্যাভেঞ্জার বললো এই অসাধান ফুলের
খোঁজ পাওয়াকে পাত্তা না দিয়ে।
ওরা এগিয়ে চললো
।
বেশ কয়েকবার
রাস্তাটা ঢুকে গেছে স্ট্যালাক্টাইটের ভেতরে – চলে গেছে মধ্যশিরা ভেদ করে । যখনই
এমন হয়েছে ওয়েস্ট যে প্রায় দম বন্ধ করা
গোল পথ ধরে নিচে থেকে উঠে এসেছিল সেটার দেখা মিলেছে। যা বোঝা যাচ্ছে এই গোল পথ
একেবারে ওপর পর্যন্ত চলে গিয়েছে স্ট্যালাক্টাইট ভেদ করে । দলের সকলেই ওই সংকীর্ণ
পথটাকে লাফ দিয়ে পার হয়েছে প্রতিবারেই।
০০০০০
*সরু পায়ে হাঁটার পথ এবং অতি পবিত্র তীর্থ*
আরো কিছুটা
হাঁটার পর ওরা সেই জায়গায় পৌছাল যেখানে মহাকায় গুহার ছাদের সাথে অতিকায়
স্ট্যালাক্টাইটটা ঠেকে আছে।
একটা পচন ধরে
যাওয়া কাঠের সরু প্ল্যাটফর্ম
স্ট্যালাক্টাইটের গা থেকে বেরিয়ে গেছে
সামনের দিকে । ছাদ লক্ষ্য করে ।
প্রাচীনকালের
ওই কাঠের সরু প্ল্যাটফর্ম ঝুলে আছে ছাদের
সাথে লাগানো ইউ আকৃতির দন্ডের ওপর। অন্তত পঞ্চাশ মিটার পথটা । সমাপ্ত হয়েছে ছাদের
গায়ে খোদাই করা একটা গর্তের থেকে একটু দূরে।
সেখান থেকে
আবার কিছু হাতল ঝুলছে ছাদ থেকে। যা ধরে ঝুলে পৌছাতে হবে অন্ধকার গর্তটার কাছে। ওতে
ঝুলে যাওয়ার অর্থ নিচের বালির হ্রদ থকে ৫০০ ফুট ওপরে নিজেকে ঝুলিয়ে রাখা ।
‘এই তাহলে সেই
স্থান,’ ওয়েস্ট বললো। ‘এই সেই স্থান যেখানে গিয়ে সব রাস্তা শেষ হয়েছে ।’
‘তাহলে আর
দেরি কেন। এগিয়ে যাও, ‘ অ্যাভেঞ্জার বললো । ‘চাইলে তোমার আরব বন্ধুকে সাথে নিয়ে
যেতে পারো – আমার কাছে এই মেয়ে থাকবে । ওই যাকে বলে ইন্স্যূরেন্স ।’
মহাকায় গুহার
ছাদের প্রায় গায়ের কাছে ওয়েস্ট আর পুহ এগিয়ে চললো প্রাচীন কাঠের সরু প্ল্যাটফর্ম ধরে ।
ওদের পায়ের
চাপে মড় মড় করে শব্দ হচ্ছিল । ধুলো আর ভাঙা কাঠের টুকরো ভেঙে পড়ছিল নিচে । পড়ছিল
গিয়ে সোজা বালির হ্রদে । দু দুবার এমন অবস্থা হল যেন মনে হলো আর রক্ষা নেই
প্ল্যাটফর্মটা ভেঙ্গেই গেল ।
কিছুই হলো না যদিও...ওরা পৌছে
গেল শেষ প্রান্তে ।
হাতলগুলোর দিকে
তাকিয়ে ওয়েস্ট বললো, ‘আমি প্রথমে যাচ্ছি । একটা দড়ির প্রান্ত এখানে বেঁধে রেখে
দিয়ে যেতে হবে । যদি টুকরোটা ওই ওপরে
গর্তের ভেতরে থাকে তাহলে আমাদের একটা দড়ি দরকার হবে ওটাকে নিয়ে আসার জন্য ।’
পুহ বিয়ার
সামান্য মাথা ঝুঁকিয়ে বললো, ‘হতচ্ছাড়াগুলোকে আমি হত্যা করতে চাই । হান্টসম্যান ,
লিলির মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে কাজ করানোর শাস্তি ওদের দিতেই হবে ।’
‘আমিও সেটাই
চাই পুহ । কিন্তু সেটা করতে হলে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে । যতক্ষন শ্বাস ততক্ষণ আশ
... তবেই যা করতে চাইছো সেটা করতে পারবো,’ ওয়েস্ট বললো, ‘আর সে জন্যই যেভাবেই হোক
আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।’
‘সাবধানে যেও
।’
‘সবচেয়ে সেরা
চেষ্টাটাই করবো বন্ধু ।’
কথাটা শেষ
করেই ওয়েস্ট ধরলো প্রথম হাতলটাকে ...ঝুলিয়ে দিলো শরীর ... জমি বা চোরাবালি
হ্রদের ৫০০ ফুট ওপরে ।
পেছন দিকে
অত্যাশ্চর্য অতিকায় ঝুলন্ত উদ্যান , তার সামনে ঝুলছে একটি ক্ষুদ্র অবয়ব...জ্যাক
ওয়েস্ট জুনিয়র । নিচে গুহার দৃশ্য খেলনার মতো দেখাচ্ছে ... ওপরে একটার পর একটা
হাতল ধরে এগিয়ে চলেছে ওয়েস্ট ।
আর ওর পাশেই
উড়ে চলেছে ওর প্রিয় হোরাস । দুচোখে তার কৌতূহলী চাহনি ।
কোমরের সাথে
বাঁধা দড়ি আস্তে আস্তে খুলে যাচ্ছে – দড়িটার অন্যপ্রান্ত পুহ বিয়ারের কাছে – ওয়েসস্ট পৌছে গেল বিরাট গর্তটার কাছে ।
এর আকৃতিও
ট্রাপেজয়েডের মতো । এখান থেকে ভেতর দিকে কাত হয়ে থাকা দেওয়াল গিয়ে মিশেছে একটা
বিন্দুতে । সেই দেওয়ালের গা বেয়েও লাগানো আছে এক সারি হাতল – সেই হাতল ধরে ওঠার
অর্থ আর দুরুহ ভাবে ঝুলে ঝুলে ঝুলে এগিয়ে যাওয়া।
এসব কথা আপাতত
ওয়েস্ট ভাবছে না – ওর সব মনোযোগ এখন একেবারে ওপরের বিন্দুতে গিয়ে আটকেছে ।
একটা
বর্গাক্ষেত্রাকার আনুভূমিক কার্নিশ দেখা যাচ্ছে পাথরের গা কেটে বানানো হয়েছে । বড়
সড় রেফ্রিজারেটরের মতো আকার।
এই স্থানের
চারপাশের রুক্ষ পাথুরে দেওয়াল থেকে ওটা একেবারেই আলাদা । দারুনভাবে অলংকৃত, কারু
কাজের সমাহার ওটার গায়ে - সোনা এবং নানান
রত্ন সহযোগে দেখে মনে হচ্ছে যেন এক পবিত্র মন্দির।
ওয়েস্ট এখন
যেখানে আছে সেখান থেকে ওটার ভেতর দেখা যাচ্ছে না । ওটার কাছাকাছি থাকা হাতল ধরে
নিজের শরীরকে পুরো পুরি হাতের জোরে ঝুলিয়ে রেখে এগিয়ে গেলো আর কিছুটা ।
পৌছালো
কার্নিশে । সেখান থেকে সর্বশক্তি দিয়ে চাপ দিলো হাতে ...যতটা পারলো মাথা উঁচু করে
কি আছে ভেতরেদেখার চেষ্টা করলো ।
যা দেখল তাতে
ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
ওখানে রাখা
আছে বা বলা যেতেই পারে নিজস্ব মহিমা নিয়ে অবস্থান করছে ...যার কাছে পৌঁছানো অতীব কষ্টকর
... মাঝারী আকারের সোনালী ট্রাপেজয়েড ।
ঝুলন্ত
উদ্যানে লুকিয়ে রাখা ক্যাপস্টোনের টুকরো ।
০০০০০
মূল ক্যাপস্টোনের
মধ্যের অংশ । আকারে ওয়াশিং বাস্কেটের মতো
। একজন মানুষের পক্ষে ওটাকে বয়ে নিয়ে
যাওয়া সম্ভব নয় । ওয়েস্ট বার করে আনল প্রেসার গানটাকে । পাথরের গায়ে একটা পিটন সেট
করলো ওটার সাহায্যে । দড়িটাকে বাঁধলো ওটার সাথে ।
‘পুহ বিয়ার,’
মাইকের সাহায্যে ডাক পাঠালো । ‘ তুমি এখানে আসতে পারবে? তোমার সাহায্য চাই। অ্যাভেঞ্জার, তোমার
দিকের লোক পাঠাও দড়িটার ওই দিকে। আমরা যখন এটাকে পাঠাবো ওরা যেন ধরে নেয় ।’
পুহ বিয়ার গেল
ওয়েস্টের কাছে – তার পর এক দুরুহ দেওয়াল চড়াই করে দুজন মিলে টুকরোটাকে বার করে
নিয়ে এলো তার পবিত্র স্থান থেকে এবং সাবধানে ওটাকে ঝুলিয়ে দিলো পুলি-হারনেসে । যা
লাগানো ছিল দড়িটায় । ওরা ওটাকে ঝুলিয়ে
পাঠিয়ে দিলো সরু কাঠের প্ল্যাটফর্মের কাছে ।
হারনেস থেকে
ঝুলতে থাকা টুকরোটা দড়ির ওপর দিয়ে মসৃণ ভাবে ঝুলে পৌছে গেল সরু প্ল্যাটফর্মের ওপর
। অ্যাভেঞ্জার কুতকুতে লোভে ভরা চোখে ওটাকে হাতে নিলো ।
‘ঠিক ঠিক
পৌঁছেছে ওটা?’ ওয়েস্টের গলা ভেসে এলো অ্যাভেঞ্জারের ইয়ারপিসে ।
অ্যাভেঞ্জার
উত্তর দিলো , ‘হ্যাঁ পেয়েছি । ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন ওয়েস্ট । যা পাওয়ার পেয়ে গেছি।
খেল খতম । গুড বাই ।’
কথাটা বলেই
অ্যাভঞ্জার দড়িটা কেটে দিলো ... ওটা ঝুলতে থাকলো শূন্যে ।
ওয়েস্ট হতবাক
হয়ে দেখলো দড়িটা ঢিল হয়ে গেলো ...নেতিয়ে
পড়লো দেওয়ালের গায়ে ... পিটনের সাথে আটকে থাকলো
শুধু ।
‘ওহ হো! এটা
ঠিক না ...চরম শয়তানি!’ দ্রুত পুহ বিয়ারের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল দেওয়ালের হাতলগুলো
ধরে । নামলো নিচে মহাকায় গুহার ছাদের মেঝেতে । দেখতে পেলো অ্যাভেঞ্জার আর ওর দলের
লোকেরা ছুটে পালাচ্ছে... তার আগে সরু কাঠের প্ল্যাটফর্মটার ওপর ছুঁড়ে দিলো ...
তিনটে গ্রেনেড ।
প্ল্যাটফর্মের
ওপর পড়ে গ্রেনেডগুলো বাউন্স খেলো এবং ...
বিস্ফোরণ
ঘটালো ...
প্রাচীন সরু কাঠের প্ল্যাটফর্মটার টিকে থাকার আর কোনো সম্ভাবনাই রইলো না ।
বিস্ফোরণের
সাথে সাথেই – একটা বিশ্রী রকমের ক্যাঁচকেচে শব্দ করে প্ল্যাটফর্মটা ছাদের গা থেকে
খুলে পড়ে গেল...
... প্রায়
স্লো মোশনের মতো দেখা গেল ওটার পতন ... ৫০০ ফুট নিচে চোরা বালির হ্রদে ।
ওয়েস্ট তাকিয়ে
তাকিয়ে দেখল পুরো ব্যাপারটা। ভালোই বুঝতে পারছে এর কি অর্থ ।
প্ল্যাট
ফর্মটা না থাকার একটাই পরিণতি ও আর পুহ বিয়ারের অতিকায় স্ট্যালাক্টাইটে ফিরে
যাওয়ার কোনো উপায় নেই ।
ভবিষ্যৎ
পরিণতি ভেবে দুজনেই ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠলো ।
লিলি আর ক্যাপস্টোনের
টুকরো ইজ্রায়েলীদের কাছে । আমেরিকানরা এসে গেছে দরজার কাছে ... ও আর পুহ আটকে গেছে জীবনে
প্রথমবার দেখা এতো বড় মাপের কোনও গুহার ছাদের তলায় ... কোনো পথই দেখা যাচ্ছে না এখান থেকে উদ্ধারের ।
প্ল্যাটফর্মটাকে ধ্বসে যেতে দেখে অ্যাভেঞ্জারের
মুখে ফুটে উঠলো সন্তুষ্টির হাসি । লিলিকে খামচে ধরে তুলে নিলো এক হাতে । ঘুরলো
স্ট্যালাক্টাইটের গায়ে পাকে পাকে জড়ানো পথের দিকে ।
‘ক্যাপ্টেন
ওয়েস্ট বা ওই হতচ্ছাড়া আরব কাওকেই আর আমাদের দরকার নেই । দরকার নেই –’ পিস্তল
উঁচিয়ে ধরলো – ‘তোমাকেও , মিঃ জাঈ –’
কিন্তু
মুস্তাফা জাঈদের ভেতরের এক জান্তব অনুভুতি যা সব সময়েই সজাগ থাকে , সেটা ওকে
বুঝিয়ে দিয়েছিল কি ঘটতে চলেছে।
অ্যাভেঞ্জার
পিস্তল বার করতে না করতেই জাইদ শুরু করে দিয়েছিল দৌড়াতে – রাস্তা পার হয়ে নেমে গেল
একটা আড়াআড়ি সুড়ঙ্গের ভেতরে ।
‘খুব বেশি দূর
ও যেতে পারবে না । চলো এখান থেকে পালানো যাক ।’ লিলিকে জাপটে ধরে রেখে দলের
লোকদের নিয়ে অ্যাভেঞ্জার শুরু করলো সরু পথটা দিয়ে নামতে।
‘হান্টসম্যান,’
পুহ বিয়ার ঢোঁক গিলে বললো, ‘ইয়ে...আ আমি ...একটু ঝামেলায় পড়ে ...’
ওয়েস্ট ছাদের
হাতল ধরে ঝুলতে ঝুলতেই ফিরে তাকালো পুহ বিয়ারের দিকে ।
পুহের শরীরের
ওজন অনেক অনেক বেশি ওয়েস্টের থেকে...সে তুলনায় হাতের জোর কম । খুব বেশী সময় যে ও
ঝুলে থাকতে পারবে না সেটা বোঝা যাচ্ছে।
ওয়েস্ট ফিরে
গেল ওর কাছে, ‘একটু কষ্ট করে ঝুলে থাক বন্ধু । চিন্তার কোনো কারন নেই ।’ যে দড়িটা
কেটে ঝুলছিল সেটা পুহ ‘র হাতের তলা আর বগলের ভেতর দিয়ে ভালো করে জড়িয়ে দিলো । এবার
আর অসুবিধা নেই ঝুলে থাকতে ।
নিজে
যান্ত্রিক হাতের কারনে বেশী সময় ঝুলে থাকতে সক্ষম – তারমানে এই নয় যে যতক্ষন খুশী
।
‘ইজ্রায়েলীরা?’
পুহ জানতে চাইলো ।
‘ওরা লিলি আর
ক্যাপস্টোনের টুকরো নিয়ে পালিয়েছে । যাওয়ার আগে প্ল্যাটফর্মটা ভেঙে দিয়েছে গ্রেনেড মেরে ।
আমরা আটকে গেছি এখানে ।’
‘যদি কোনোভাবে
ওদের মুখোমুখী হতে পারি সবার আগে স্ট্রেচকে খতম করবো আমি । জানো হান্টসম্যান
কিছু দিন ধরে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম ও আমাদেরই একজন হয়ে গেছে । কিন্তু না
আমার ভাবনাতেই ভুল ছিল । নোংরা বিস্বাসঘাতক একটা ।’
‘পুহ ওসব কথা
থাক, আপাতত এখান থেকে কিভাবে উদ্ধার পাওয়া যাবে সেটা ভাবতে হবে।’
০০০
ইজ্রায়েলী
দলটা লিলি আর টুকরোটাকে নিয়ে নেমে চলেছে স্ট্যালাক্টাইটের রাস্তা ধরে ।
অতিকায়
স্ট্যালাক্টাইটের নিম্ন বিন্দুর কাছে পৌছাতেই দেখতে পেলো দায়িত্বে থাকা রক্ষীরা
মহাকায় গুহার ভেতর দিয়ে ছুটে আসছে ।
‘স্যার!
আমেরিকানরা দৈত্যাকার সিঁড়ি অতিক্রম করে ফেলেছে! আবার বলছি - আমেরিকানরা দৈত্যাকার
সিঁড়ি অতিক্রম করে ফেলেছে! আমাদের পক্ষে আর ওদের আটকে রাখা সম্ভব নয় !’
‘তোমারা
যথেষ্ট সময় আটকে রেখেছো ওদের ! আমরা মেয়েটাকে আর ক্যাপস্টোনের টুকরো দুটোই পেয়ে
গিয়েছি,’ অ্যাভেঞ্জার হেসে উত্তর দিলেন। ‘চলে এসো জিগুরাতের উল্টোদিকে । আমরা ওইদিক দিয়েই পালাবো !’
স্ট্রেচ
ছুটছিল অ্যাভেঞ্জারের পিছু পিছু , কিছু না বলেই । দাঁতে দাঁত চিপে, শূন্য দৃষ্টিতে
, কিছু একটা ভাবতে ভাবতে।
ইজ্রায়েলীরা
নেমে এলো স্ট্যালাক্টাইটের একেবারে নিচে । দেখতে পেলো ঠিক তক্ষুনি জাঈদ অদৃশ্য হল
জিগুরাতের ছাদের চৌকো উলম্ব গর্তের ভেতরে – পুরোহিতদের প্রবেশ পথ ।
অ্যাভেঞ্জার
বিশেষ পাত্তা দিলো না ।
যদিও ওই ধরনের
সন্ত্রাসবাদীদের মারতে ওর ভালোই লাগে তবু এই মুহূর্তে জাঈদকে নিয়ে ওর মাথাব্যাথা নেই ।
এখানে থেকে
আপাতত পালাতে হবে।
এ আকৃতির মই
ধরে জিগুরাতের ছাদে নেমে দেখতে পেলো আমেরিকানরা
ঢুকে পড়েছে মহাকায় গুহায়।
আরে বিশাল
বাহিনী তো আসেনি । যা অ্যাভেঞ্জার আশা করেছিল। কেবলমাত্র দশ জন ।
এবং অদ্ভুত
ভাবে ওরা চোরাবালির হ্রদের পথ ধরে আসছে না মোটেই !
না সত্যিই
আসছে না।
বদলে ওরা খাড়া
দেওয়ালের গা বেয়ে উঠছে যা ওই প্রবেশপথের ওপরে অবস্থিত। যার গায়ে পুরোনো বিরাট মাপের আর্চওয়ের অবস্থান।
আর তারপরেই
ওরা –
‘আরে, কি করছে
না ...না ...’ অ্যাভেঞ্জারের দম আটকে এলো ।
-ওরা বিস্ফোরক
সেট করছে। হেভি ডিউটি ট্রাইটোনাল ৮০/২০ ডেমোলিশন চারজার ।
দ্রুত কাজ শেষ
করলো আমেরিকানরা তারপর বেরিয়ে গেল দরজাটা দিয়ে ।
ধ্বংসের এক
অভূতপূর্ব ফলাফল এবার দেখা গেল।
বিশাল বিশাল
মাপের কিছু বুম শব্দ ধ্বনিত হলো গুহা কাঁপিয়ে ।
পাথরের যে
দেওয়াল ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের বিশাল আর্চওয়েটাকে ধারন করে ছিল, সেটায়
ফেটে ফুটে গেল কুড়িটা পর পর বিস্ফোরণে । চারদিকে একের পর এক বড় বড় মাপের তারার মতো
আকারের ধুলো আর পাথরের রাশি ছিটকে গেল।
এমন ভাবে
বিস্ফোরণ ঘটানো হলো যাতে সেসব ভাঙা টুকরোর ৯০ ভাগ বাইরের দিকে বেরিয়ে যায়। খুব অল্প অংশ এসে
পড়লো চোরাবালির হ্রদে ।
দেওয়ালের গায়ে
অনেকগুলো অতি বিরাট মাপের গর্ত দেখা গেল।
সূর্যের আলো
এসে ঢুকল সেই পথে ।
২০০০ বছরে এই
প্রথম বার সূর্যের আলোয় ঝলমলিয়ে উঠলো মহাকায় গুহার অভ্যন্তর । দিনের আলোর ঔজ্জ্বল্যে উদ্যানের সৌন্দর্য পৌঁছে গেল এক নতুন
মাত্রায়।
কিছুক্ষনের
ভেতরে একধিক গর্ত সম্বলিত দেওয়ালের অংশটা ধ্বসে পড়ে গেল । জন্ম নিলো অন্তত ৫০
মিটার চওড়া এক আর বিশাল ফাঁক । সেখান দিয়ে যে সূর্যালোক আসছিল সেটাকে ভেদ করে
মহাকায় গুহার পরিবেশ কাঁপিয়ে ঢুকে পড়লো আমেরিকান হেলিকপ্টারগুলো ।
ওয়েস্ট ঠিকঠাক বিশ্বাস করতে পারছিলোনা কি হচ্ছে ।
প্রথমে
অ্যাভঞ্জারের দৌলতে ওরা আটকে যেতে বাধ্য হয় গুহার ছাদের গর্তে ।
আর এখন, হঠাৎই কিছু বিশাল শব্দের সাথে সাথে গোটা গুহাটা
ভরে গেলো আলোতে ।
ছটা...তারপ র
সাতটা ...আর একটা মোট আটটা আমেরিকান চপার – ব্ল্যাক হক এবং অ্যাপাচে – ঢুকে পড়লো ,
পাক মারতে থাকলো মহাকায় গুহার ভেতরে । পাক মেরে গেল জিগুরাতটাকে । উড়ে গেল
স্ট্যালাক্টাইটটার গা ঘেঁষে । শত্রুদের খোঁজ চালাচ্ছিল ওরা । সাথেই খুঁজছিল টুকরোটাকেও
।
হেলিকপ্টারগুলোর
পাখার ঘূর্ণনের শব্দে মথিত হচ্ছিল গুহার ভেতরটা। সাথেই বইছিল হাওয়ার ঝড়।
ওয়েস্ট দেখতে
পেলো একটা ব্ল্যাক হক সোজা নিচ থেকে ওর দিকে উঠে আসছে । দেখা যাচ্ছে ওর ঘুরতে থাকা
পাখাগুলো । ওর মনে হলো যদি এখন আমি পড়ে যাই আর কিছু না হোক মৃত্যু ত্বরান্বিত হবে
সহজেই ।
ব্ল্যাকহকের
আরোহীরা অবশ্য ওয়েস্ট বা পুহকে দেখতে পায়নি – ওরা স্ট্যালাক্টাইটটাকে পাক মেরে
খুঁজছে ।
ওটা এগিয়ে গেল
স্ট্যালাকটাইটের দিকে আর ভালো করে খোঁজার জন্য। এই মুহূর্তে ওটা আর ওয়েস্টের নিচে
নেই।
এর সাথে সাথেই
ওয়েস্ট দেখতে পেলো বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তির একটা উপায় । যদিও পুরোটাই পাগলামির
নামান্তর । কিংবা হয়তো কাজ হবে ...
ভাবনাকে
বাস্তব করার উদযোগ শুরু হয়ে গেল।
‘পুহ বিয়ার
আমার ওই দড়ি আর পিটন দরকার । ভালো করে হাতল ধরে নাও ।’
পুহ বিয়ার
মেনে নিলো দলনেতার আদেশ । চেপে ধরলো একটা হাতল – ওদিকে ওয়েস্ট – এক হাতে ঝুলে-
খুলে নিলো পিটনটাকে এবং সাথে আটকানো দড়িটাকে । লম্বায় ওটা ৫০ ফুট হবে।
এরপর বললো,
‘পুহ, হাতল ছেড়ে দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরো ভালো করে ।’
‘মানে?!’
‘যা বলছি সেটা
করো।‘
পুহ বিয়ার
সেটাই করলো । ঝুলতে থাকলো ওয়েস্টের কোমর ধরে ...ওয়েস্ট ঝুলছে অতি শক্তিশালী যান্ত্রিক
হাতের সহায়তায় ওপরের একটা হাতল ধরে ।
হাতল ছেড়ে
দিলো ওয়েস্ট ।
ছাদের গা থেকে
পড়ছে ওরা ।
সোজা নিচে ।
ব্ল্যাক হকের
পাশ দিয়ে ওরা বেরিয়ে গেল বুলেটের গতিতে ...
... পড়ার
সময়েই, ওয়েস্ট পিটনটাকে ছুঁড়ে দিলো – সাথে দড়িটা বাঁধাই আছে – ব্ল্যাক হকের
অবতরণের চাকা লক্ষ্য করে !
গ্র্যাপ্লিং
হুকের মতো স্টিলের পিটনটা এক পাক খেয়ে আটকে গেল হেলিকপ্টারের পেছনের ল্যান্ডিং
হুইলে ... শক্ত ভাবে ।
দড়িটা সপাং
করে একটা শব্দ করে টান টান হয়ে গেল – ওয়েস্ট আর পুহ বিয়ার এবার ঝুলছে ... দুলছে
...হেলিকপ্টারের সাথে আটকে। অতিকায় স্ট্যালাক্টাইটের দিক করে ।
অতিরিক্ত
ওজনের চাপে হেলিকপ্টারটা একটু দুলে উঠলো , যদিও ভেসে থাকার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা
হলো না । একই সাথে এগিয়ে গেল স্ট্যালাক্টাইটের দিকে ।
ওদিকে ঝুলতে থাকা পুহ বিয়ারদের দড়িটাও
দোলানির সাথে পাক খেয়ে স্ট্যালাক্টাইটের ওপর নির্মিত পথের ওপর পৌছে গেল । ওয়েস্ট ,
পুহকে জানালো কোমর ছেড়ে লাফ দেওয়ার জন্য। পুহ কোমর ছেড়ে শূন্যে ভাসিয়ে দিলো নিজেকে
। মিলিটারী প্র্যাকটিসের কেরামতি দেখিয়ে
গিয়ে পড়লো প্রাচীন গাছগাছালীর ঝোপে। ওয়েস্ট নিজেও সেটাই করলো অত্যন্ত দক্ষতার সাথে
।
সব শেষ নয়
মোটেই ... খেলা আবার শুরু হলো ।
‘জীবনে কোনো
দিন ভাবিনি কোথাও জুডার আগমন এতোটা লাভজনক হবে,’ ওয়েস্ট বললো । ‘যাকগে । চলো
লিলিকে উদ্ধারের চেষ্টা করি ।’
এবার ওরা
এগোতে থাকলো ঝড়ের গতিতে ।
০০০
হইচই...হট্টগোল
।
ঝকমকে সূর্যের
আলোর বন্যা ।
হেলিকপ্টারের
গর্জন, আর এবার ...
... শয়ে শয়ে
আমেরিকান সেনা দেওয়ালের ফাটল দিয়ে ঢুকতে শুরু করলো ।
০০০
অ্যাভেঞ্জার
এর ইজ্রায়েলী দল জিগুরাতের অন্য দিকে চোরাবালির হ্রদ লক্ষ্য করে নামছে নিচের দিকে । ওয়েস্ট ওপরে থাকার সময়
দেখেই নিয়েছিল উলটো দিকটাও একেবারে এদিকের মতো করেই বানানো । আধা ডুবন্ত পথ এবং ছয়
কোণা কূপও আছে ।
অ্যাভঞ্জারের
দল পৌছে গেছে কূপের কাছে । দু দলে ভাগ হয়ে নেমে যাচ্ছে নিচে । দেখা যাচ্ছে আরো
একটা নিনিগিজিডা –ডানাওয়ালা সিংহর গর্বিত মূর্তি ।
অ্যাভেঞ্জার
আর টুকরোটা ধরে থাকা দুই ইজ্রায়েলী গেল আগে। ফাঁদ চালু হলো পুনরায় । ধেয়ে এলো
চোরাবালির প্রবাহ । ঘুরতে থাকলো এক দরজাযুক্ত খাঁচা । কালছে বালি পার হয়ে সামান্য
বাধা পার হয়ে ওরা পৌঁছে গেল অপরদিকে ।
এবার স্ট্রেচ,
বাকি দুই ইজ্রায়েলী আর লিলির পালা ।
আবার ফাঁদ
চালু হলো । চোরাবালিতে ভরে গেল ছ’কোনা খাদের ভেতরটা । খাঁচা ঘুরতে শুরু করলো । হাঁটু
অবধি বালি ঠেলে ওরা এগিয়ে চললো।
ঠিক তখনি লিলি
পড়ে গেল টাল সামলাতে না পেরে ।
ক্রমশ বাড়তে
থাকা চোরাবালি ওকে ঘিরে ধরলো চারদিক থেকে ।
চ্যাটচেটে
দুর্গন্ধ ভরা বালি চেপে ধরছিল লিলিকে ।
আতঙ্কে ত্রাসে
চিৎকার করে উঠলো ও ।
স্ট্রেচ আর
বাকি দুই ইজ্রায়েলি ঘুরে তাকালো । দেখতে পেলো লিলির অসহায়তা । ওদের প্রায় সামনেই
এসে গেছে বাইরে যাওয়ার দরজা ।
অ্যাভেঞ্জার
চেঁচিয়ে উঠলেন দরজার ওপাস থেকে, ‘ওকে বাঁচানোর দরকার নেই! আমরা টুকরো পেয়ে গেছি!
কাজ শেষ । ওই মেয়েটা অতিরিক্ত প্রাপ্তি ছিল। আসল জিনিষতো টুকরোটা । ওই মেয়েটাকে
বাঁচাতে না পারলেও কোন ক্ষতি নেই ! চলে এসো!’
স্ট্রেচ সহ
বাকি দুই কম্যান্ডোকে আর বেশি বলার দরকার নেই । ওরা এগিয়ে গেল দরজার দিকে । সঙ্গী
দুই সেনা বেরিয়েও গেল ।
কিন্তু
দাঁড়িয়ে গেল স্ট্রেচ ।
চারদিক থেকে
ধেয়ে আসছে বালির প্রবাহ...খাঁচার ঘূর্ণিপাকে মাথা ঝিম ঝিম করছে ... তাকালো লিলির
দিকে।
ছোট্ট মেয়েটা ক্রমাগত
বাড়তে থাকা চোরাবালির থেকে বাঁচার জন্য ছটফট করছে... কাঁদছে উঠে দাঁড়াতে না পেরে ।
সাপের মতো আস্তে আস্তে বালি জড়িয়ে ধরছে লিলিকে। ঘাড়ের কাছে পৌঁছে গেছে প্রায়, গিলে
নিচ্ছে ওকে একটু একটু করে, টেনে নিচ্ছে কোন অতলে ।
‘কোহেন!’
অ্যাভেঞ্জার হাঁক দিলেন । ‘ছেড়ে দাও ওকে! দ্যাটস অ্যান অর্ডার!’
লিলির দিকে
তাকিয়ে , স্ট্রেচ নিজের ভাগ্যের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো ।
০০০
পাশে উড়ছে
হোরাস । ওয়েস্ট আর পুহ বিয়ার স্ট্যালাক্টাইটের গায়ে পাকে পাকে জড়িয়ে থাকা প্তহ ধরে
নামছে যত দ্রুত নামা সম্ভব ... এমন সময় ওদের পাশের একটা ঝোপ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে
গেল হেলিকপ্টার থেকে ধেয়ে আশা গুলি বর্ষণে।
একটা আমেরিকান
অ্যাপাচে ... ভেসে আছে ওদের পাশে , দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ওটার মিনিগানটাকে।
ওদের পাশেই
ছিল সেই মাঝখানের গোল গর্তের ফাঁক । অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে লাফ দিলো দুজনেই এক এক করে ওর
ভেতরে । অ্যাপাচের সিক্স ব্যারেল মিনি গান থেকে সেকেন্ডের ভেতর ধেয়ে এলো এক ঝাঁক
গুলি – ছিটকে গেলো পাথরের গায়ে লেগে।
‘ওরা ব্যাবিলনের
ঝুলন্ত উদ্যানের গায়ে গুলি চালাচ্ছে!!’ পুহ বিয়ার অবাক হয়ে গেল ‘আমেরিকানরা
ইতিহাসকে সম্মান দিতেও কি জানে না ?’
একটু বাদেই
দুজনকেই বেরিয়ে আসতে দেখা গেল স্ট্যালাক্টাইটের মধবর্তী গর্তের ভেতর থেকে । দেওয়ালের
গা বেয়ে প্রায় পিছলে নেমে এসেছে ওরা পা আর হাতের সাপোর্ট নিয়ে।
ওয়েস্ট লাফিয়ে
নামলো জিগুরাতের ওপরে । তাকাতে থাকলো এদিকে ওদিকে যদি অ্যাভেঞ্জারসহ পালাতে থাকা
দলটাকে দেখা যায় ।
‘হে ভগবান ,
না ...’ দম আটকানো স্বরে বললো ।
দেখতে পেলো
অ্যাভঞ্জার আর ওর চার সাথী দূরে মহাকায় গুহা্র সুড়ঙ্গের ভেতর ঢুকে গেল । পেরিয়ে
গেছে ছাউনী ওয়ালা কূপ আর বালিহ্রদের এলাকা ।
স্ট্রেচ নেই
ওদের সাথে ।
নেই লিলিও ।
ওয়েস্ট তাকালো
পাথরের ছাউনীর দিকে ।
ভালো করে
তাকালেই দেখা যাচ্ছে ছাউনীর তলায় ছ’কোনা খাদ চাপিয়ে উঠে গেছে চোরাবালি – সম্পূর্ণ
ভর্তি ।
‘হে ঈশ্বর ,
না! এ হতে পারে না ...’ ওয়েস্টের শরীর আতঙ্কে ঠাণ্ডা হয়ে গেল।
এর সাথে আরো
বিপদ বাড়লো ... দুটো আমেরিকান ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার কুয়োটার কাছেই এসে নামলো ।
সেনারা নেমে
এলো ওগুলোর ভেতর থেকে , ঘিরলো ছাঊনীটাকে উলটোদিক থেকে ।
একটা চপার
থেকে নেমে এলো অপারেশনের অধিনায়ক, মার্শাল
জুডা ।
‘ওহ, লিলি
...’ ওয়েস্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাথরের মূর্তির মতো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকলো ।
ছ’ কোনা খাদের
কাছ থেকে সিয়েফ এর এক সদস্য জুডাকে ডেকে বললো, ‘স্যার আমার মনে হয় এখানে এসে আপনার
ব্যাপারটা দেখা দরকার ।’
জুডা এগিয়ে
গেল নিনিগিজিডার কূপের কাছে ।
যা দেখলো তাতে
অবাক হয়ে গেলো ।
খাঁচার ওপরের
ধাতব বারের ছাদের ফাঁক দিয়ে ওপরের দিকে চেপে আছে – নিজের মুখটাকে । বালি ভর্তি
খাঁচায় শুধু চোখ, নাক আর মুখটাই জেগে আছে । খুব ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ...
মাঝে মাঝে আপ্রান চেষ্টা করছে ঠোঁট ফাঁক করার । লিলি ।
জুডা ভাবছিল
এটা কি করে সম্ভব...এভাবে বেঁচে যাওয়া ।
খাঁচা – এবং
দেওয়াল – অন্তত পক্ষে বারো ফুট উঁচু। নিচে বালির ভেতর সুরুর মুহূর্তে আটকে গেলে
এভাবে কোনো মতেই সম্ভব নয় ওপরে উঠে এসে খাঁচার ছাদ আঁকড়ে ধরা এবং নাক মুখ এভাবে বার
করে রাখা –
কেউ বা কিছু
নিশ্চয় আছে ওর নিচে, ওর মনে হল। যে ওকে এভাবে তুলে রেখেছে।
জুডা দেখতেও
পেলো।
খুব সামান্য
একটা অংশ ।
চোরাবালির যে
স্তর উঠে আছে খাদের কানায় সেটা ভেদ করে উঠে আছে একটা বন্দুকের নলের মাথার সামান্য অংশ।
লিলির মাথা থেকে একটু দূরে । স্নাইপার দের রাইফেলের অংশ ওটা – আল্ট্রা লং ব্যারেট
এম৮২এ১এ স্নাইপার রাইফেল।
তবে এখানে
বন্দুকটাকে বন্দুকের কাজে লাগানো হয়নি মোটেই ।
ওটাকে ব্যবহার
করা হয়েছে একটা শ্বাস নেওয়ার নল হিসাবে । সেই মানুষ ব্যবহার করছে ওটা যে লিলিকে
উঁচু করে ধরে আছে !
খাদের বালি
পুনরায় নেমে যাওয়া এবং ফাঁদ পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পর জুডা দেখতে পেলো পুরো
ছবিটা ।
বালি নামার
সাথে সাথেই দেখা গেল স্ট্রেচকে , দাঁড়িয়ে আছে খাদের মাঝখানে অবস্থিত ডানাওয়ালা
সিংহের ওপরে । মুখ ওপর দিকে ওঠানো । সেখানে ধরে আছে ব্যারেট স্নাইপার বন্দুকের
খুলে নেওয়া ব্যারেলটা । লিলি ওর কাঁধে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পারফেক্ট ব্যালে
টো-পোজ[এক আঙ্গুলে দাঁড়ানো] এ !
স্ট্রেচ
সত্যিই তুলনাহীন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
এর ফলাফলটা ভালোই হলো একদিক থেকে, অবশ্য পুরো
অন্য একটা কারনে – জুডা, স্ট্রেচ আর লিলিকে জ্যান্ত উদ্ধার করলো ওখান থেকে।
অ্যাভেঞ্জার
আর ওর দলের লোকেদের ভাগ্য এতোটা ভালো নয়।
ঝুলন্ত
উদ্যানের গোপন পশ্চাৎ দরজা দিয়ে বের হওয়ার মুখে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল ক্যাল
কালিসের নেতৃত্বে সিয়েফের আর একটা দল।
কালিসকে আদেশ
দেওয়াই ছিল কোনোরকম দয়া যেন না দেখানো হয় কাউকে ।
অ্যাভেঞ্জার
আর ওর কম্যান্ডোরা ভেবেছিল টুকরোটা নিয়ে সহজেই পালাবে – মাটির তলার সুড়ঙ্গ থেকে
বের হয়েই দেখতে পায় ওদের রেখে যাওয়া হেলিকপ্টারটার আগুনে পুড়তে থাকা ধ্বংসাবশেষ ।
পাইলট মরে পরে আছে।
একই সাথে ওরা
দেখে ওদের ঘিরে ধরেছে কালিসের বাহিনী ।
দ্রুত ওদের
কাছ থেকে অস্ত্রতশস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়। তারপর এক এক
করে ঠান্ডা মাথায় ওদের মাথায় গুলি করে
ক্যাল কালিস । মুখে লেগে থাকে একটা হাসি । এধরনের কাজ করতে কালিসের খুব
ভালো লাগে।
টুকরোটা নিয়ে
নেয় ওদের কাছ থেকে এবং চলে যায় ওখান থেকে । শরীরগুলো পড়ে থাকে শেয়াল শকুনের খাদ্য
রুপে।
০০০
ওদিকে ওয়েস্ট
দেখে লিলি আর স্ট্রেচকে তোলা হলো জুডার হেলিকপ্টারে -
-আবার শুরু হয়
গুলি র্ষণ ওদের লক্ষ্য করে ...আবার স্ট্যালাক্টাইটের ওপার থেকে এসে হাজির হয়েছে দুটো অ্যাপাচে চপার ।
হোরাস চেঁচিয়ে ওঠে।
ওয়েস্ট সময়
মতো নড়তে পারে না।
পুহ বিয়ার
অবশ্য ভুল করেনি ...
বাঁচিয়ে দেয়
ওয়েস্টকে – ধেয়ে আসা গুলির সারি থেকে সরিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় জিগুরাতের সাথে সংযুক্ত সেই চারকোণা গর্তের ভেতরে ।
মহাকায় গুহার
মেঝেতে দাঁড়িয়ে থাকা জুডার দৃষ্টি পড়ে অ্যাপাচে দুটোর দিকে । দেখতে পায় জিগুরাতের
ওপর পুহ বিয়ার আর ওয়েস্টকে – দেখে পুহ ওয়েস্টকে টেনে নিয়ে লাফ মারছে জিগুরাতের উলম্ব
সুড়ঙ্গে, যার নাম পুরোহিতের প্রবেশ পথ ।
‘জ্যাক...’
জুডা ফিসফিসিয়ে বলে , ‘ আর কিছু করার
নেই । খেলা যা করার ছিল সব খতম । আর তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার দরকার নেই । সময় হয়েছে এ
ধরাধাম থেকে বিদায় নেওয়ার।’
জুডা উঠে পড়লো
অস্ত্রশস্ত্রে সাজানো ব্ল্যাকহকে । লিলি আর স্ট্রেচ এখন তার বন্দী । চপার উঠে পড়লো
শূন্যে এবং বেরিয়ে গেল গুহার ভেতর থেকে।
সাথে সাথেই
বেরিয়ে গেল বাকি চপারগুলোও । যে সেনারা ভেতরে ঢুকেছিল বেরিয়ে গেল তারাও বিষ্ফোরনে
সৃষ্ট বিশাল আর্চটার দেওয়ালের গর্ত দিয়ে ।
সবাই বেরিয়ে
আসতেই, জুডা – তাকিয়ে ছিল জিগুরাতের ওপরের
দিকে , যেখানে শেষবারের মতো ওয়েস্টকে দেখেছিল –
ফাইনাল অর্ডারটা দিলো ।
স্ট্যালাক্টাইটাকে
ধ্বসিয়ে দাও । ওটা ভেঙে পড়ুক জিগুরাতটার ওপর।’
ব্ল্যাকহকের
পাইলট ইতস্তত করে বললো , ‘ কিন্তু স্যার ...এই জায়গাটা ঐতিহা –’
‘বেশি কথা না
বাড়িয়ে ফায়ার করো, না হলে আমি তোমাকে এই হেলিকপ্টার থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবো । ’
পাইলট আর কথা বাড়ালো না।
একটু বাদেই
তিনটে হেলফায়ার মিসাইল ব্ল্যাক হকের মিসাইল পড থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেল ... পেছন
দিকে তিনটে ধোঁয়ার রেখার রেশ ছেড়ে ওরা ছুটে চললো শূন্য পথে অতিকায় প্রাচীন পাথরের আশ্চর্যটার
দিকে ...
... গিয়ে
ধাক্কা মারলো ।
মারাত্বক
তিনটে হৃদয় কাঁপানো বিস্ফোরণ প্রায় একই সাথে ঘটলো । চার দিকে ছিটকে গেলো পাথর কুচি, ধুলো আর নানান দুষ্প্রাপ্য
লতাপাতার টুকরো ।
আর তারপরেই
মেঘ ডাকার মতো নানান কর্ণভেদী হড় হর ঘর ঘর হুড় মুড় শব্দ শুরু হলো –
-অতিকায়
স্ত্যালাক্টাইটের অবয়বটা মহাকায় গুহার ছাদ থেকে শুরু করলো খুলে পড়তে ...ঝুলে থাকলো
বেশ খানিক ক্ষণ ... তারপর খসে গেল ছাদের গা থেকে ।
এ যেন
মানবাত্মার আর্তনাদ । বড়ই হৃদয় বিদারক এ শব্দ ...
বিশাল বিশাল
পাথরের টুকরোর সাথে সাথেই উলটো হয়ে খুলে থাকা
আশ্চর্য পাহাড়টা এসে পড়লো
জিগুরাতটার ওপর।
স্ট্যালাক্টাইটের
নিম্ন বিন্দু জিগুরাতের শীর্ষ বিন্দুতে এসে মারল ধাক্কা – জিগুরাতটা, যা পনেরো তলা
বাড়ীর সমান উঁচু – এমন ভাবে ভেঙে তুবড়ে গেল যেন মনে হলো আ্যলুমিনিয়ামের একটা লম্বা
কৌটোকে কেউ ভারি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলো ।
সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেলো আরো একটা প্রাচীন আশ্চর্য ।
এরপর আস্তে
আস্তে কাত হয়ে সেই অতিকায় পাথরের টুকরো কাটা গাছের গুঁড়ির মতো পড়ে গেল চোরাবালির হ্রদের
ভেতরে ।
একটা বড় মাপের
বিমান যদি সমুদ্রের জলে হঠাৎ পড়ে যায় তাহলে যেরকম ব্যাপার ঘটবে ঠিক তেমনই যেন ঘটলো
এখানে । বিশাল বিশাল অনেক গুলো চোরাবালির ঢেউ চারদিকে ছড়িয়ে গেল । আছড়ে পড়লো গিয়ে
মহাকায় গুহার দেওয়ালে ।
তারপর আস্তে
আস্তে অতি ধীরে ধীরে , স্ট্যালাক্টাইটের অদ্ভুত পাহাড়টা – গল্প কথার
ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান – চোরাবালির
হ্রদের ভেতরে আধা ডুবন্ত অবস্থায় স্থির হয়ে থেকে গেল। পৃথিবীর নানান স্থানের আর
পাঁচটা ভাঙ্গাচোরা পাথুরে জিনিষের রুপ
নিলো এটাও ।
০০০
আমেরিকান সেনা
দল জাগ্রোস পাহাড়ের পাদ দেশ থেকে বিদায় নিলো । সাথে নিয়ে গেল লিলি আর ক্যাপ
স্টোনের আর একটা টুকরো ।
আর ঝুলন্ত
উদ্যানের ধ্বংসাবশেষের ভেতরে থেকে গেল – বাঁচার কোনও সম্ভাব্য সুযোগ আছে বলে তো
মনে হয় না – জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র আর পুহ বিয়ার ।
সমাপ্ত দশম অধ্যায় ... একাদশ অধ্যায় -
ষষ্ঠ অভিযান-“ইস্কেন্দারের
সমাধি”
No comments:
Post a Comment