Search This Blog

Sunday, July 2, 2017

রহস্যময় সেই বইটা [The History of the Necronomicon - H. P. Lovecraft ]

রহস্যময় সেই বইটা
প্রতিম দাস
আসল শিরোনাম ছিল ‘আল আজিফ’ । আজিফ শব্দটা আরবরা ব্যবহার করে নিশি রাতের শব্দ [পোকামাকরের ডাক] বোঝাতে, সম্ভবত সেই জান্তব চিৎকার যা আধা মানব-আধা দেবতাদের কন্ঠ থেকে নির্গত হয় ।
ঈয়েমেনের সানা প্রদেশ নিবাসী এক উন্মাদ কবি আব্দুল আলহাজ্রেদ এর রচয়িতা। বলা হয়ে থাকে ৭০০ খ্রিস্টাব্দে যখন ওমিয়াদে খলিফার রাজত্ব কালে উনি খুব জনপ্রিয় ছিলেন ।
একাই নাকি ঘুরে দেখেছিলেন ব্যাবিলনের ধ্বংসাবশেষ এবং মেফিসের ভূগর্ভস্থ গোপন এলাকাগুলো । দশ বছর একাকী ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন আরবের বিশাল দক্ষিণাঞ্চলীয় মরুভূমিতে । ‘রোবা এল খলিয়াহ’ বা আদিম অধিবাসীদের "শূন্য স্থান" - এবং "দহনা" বা আধুনিক আরবদের দ্বারা কথিত "রক্তলাল" মরুভূমির নাম এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। মনে করা হয়ে থাকে এই সব স্থান পাহারা দেয় শয়তানী আত্মা আর মৃত্যুরুপী দানবেরা । এই মরুভূমিদের বিষয়ে অনেক অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য রকমের বিস্ময়কর কাহিনী সেই সব মানুষেরাই বলে থাকেন যারা ভান করেন এই মরুভূমির ভেতরে তারা গিয়েছিলেন।
জীবনের শেষ কয়েকটা বছর আলহাজ্রেদ দামাস্কাসে বসবাস করেছিলেন। সেখানেই নেক্রোনোমিকন (আল আজিফ) লেখা হয়েছিল। তার চূড়ান্ত মৃত্যু বা অন্তর্ধান (৭৩৮ খ্রিস্টাব্দ) বিষয়ে অনেক ভয়ানক এবং দ্বন্দ্বপূর্ণ কথাবার্তা প্রচলিত আছে। ইবনে খল্লিকান (১২তম শতাব্দীর একজন জীবনী লেখক) তার বিবরনীতে লিখে গেছেন – আলহাজ্রেদকে ঝকঝকে দিনের আলোতে এক অদৃশ্য দানব আক্রমণ করে গিলে খেয়েছিল । আর সেই হাড়হিম করা দৃশ্য নাকি সেসময়ের প্রচুর মানুষ দেখেছিলো পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
তার পাগলামোরও অনেক কিস্যা প্রচলিত আছে। তিনি দাবি করতেন তিনি নাকি ‘ইরাম’ বা সিটি অফ পিলারস নিজের চোখে দেখেছেন। এছাড়াও বিশেষ এক স্থানে নামহীন মরুভূমি নগরের ধ্বংসাবশেষের খোঁজও নাকি তিনি পেয়েছিলেন । যার নীচে পাওয়া গেছে এমন এক জাতির নানান চমকপ্রদ বৃত্তান্ত এবং গোপন তথ্য যাদের বয়স মানবজাতির বয়সের চেয়ে অনেক অনেক বেশী।
আলহাজ্রেদ এক ভিন্ন পথে হাঁটা উদাসীন মোসলেম ছিলেন, যিনি অজানা অজ্ঞাত সব অস্তিত্ববান সত্তাদের উপাসনা করতেন। পাগল কবির বক্তব্য অনুসারে যাদের নাম ইয়োগ-সোথোথ এবং সিথুলু।
৯৫০ সাল নাগাদ - আজিফ, সেই যুগের দার্শনিকদের মধ্যে যথেষ্ট উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল । গোপনভাবে এর গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করেন কনস্ট্যান্টিনোপলের থিওডোরাস ফিলেটাস । নাম দেন নেক্রোনোমিকন । এক শতাব্দী ধরে এটি অনেক মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সাঙ্ঘাতিক সব পাশব জান্তব পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রচেষ্টার জন্য । সেই সময়েই বিশপ মাইকেল ওটা বাজেয়াপ্ত করেন এবং পুড়িয়ে ফেলেন। এর পরে এটি শুধুমাত্র গুজবের মতো শোনা গিয়েছিল যে (১২২৮) মধ্যযুগে ওলায়াস ঊরমিয়াস ওটার একটা ল্যাটিন অনুবাদ করেছিলেন। আর সেই ল্যাটিন পাঠটি দুবার মুদ্রিত হয়েছিল - একবার পনেরো শতকে কালো- বর্ণের অক্ষরে ( সম্ভবত জার্মান ভাষায়) এবং আর একবার সপ্তদশ শতকে (স্প্যানিশ ভাষাতে)। । উভয় সংস্করণেই সনাক্তকরনের কোনো আলাদা চিহ্ন পাওয়া যায় নি। কেবলমাত্র আভ্যন্তরীণ মুদ্রন ও অক্ষরের ভিত্তিতে বই দুটির মুদ্রন কাল এবং স্থানের ধারনা করা হয়েছিল। ল্যাটিন অনুবাদ হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই, ১২৩২ সালে ল্যাটিন ও গ্রিক উভয় অনুবাদকেই পোপ নবম গ্রেগরি নিষিদ্ধ করেন। আর এই ঘটনা বইটার প্রতি আরো মনোযোগ বা আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। আরবীতে লেখা মূল বইটি ঊরমিয়াসের সময়েই হারিয়ে যায় । এ কথার উল্লেখ আছে তাঁর প্রাথমিক স্তরের খসড়া নোটসে। ১৫০০-১৫৫০ সালে ইতালিতে মুদ্রিত গ্রীক কপিটির ও কোনও খোঁজ পাওয়া যায় নি । ১৬৯২ সালে সালেম নিবাসী এক মানুষের গ্রন্থাগারে আগুন লাগার পর এর পুনরায় খোঁজ পাওয়া যায়। ডাঃ ডী ওটার একটি ইংরেজী অনুবাদ করেন যদিও সেটি ছাপান হয়নি। মূল পাণ্ডুলিপির কিছু কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে সেই ল্যাটীন পান্ডুলিপির পাঠগুলির মধ্যে একটি (১৫ শতক) ব্রিটিশ মিউজিয়ামে তালা বন্ধ করে রাখা আছে বলে মনে করা হয় । অন্যটি (১৭ শতক) প্যারিসের বিবলিওথেক ন্যাশানালে আছে বলে জনশ্রুতি। সপ্তদশ শতকের একটি সংস্করণ হার্ভার্ডের ওয়াইডেনার লাইব্রেরিতে এবং আরকহামের এ মিস্কাটোনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে আছে বলেও শোনা যায়। এছাড়াও বুয়েনোস আইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতেও নাকি একটি কপি আছে। অনেকগুলি অনুলিপিও সম্ভবত গোপনে বিদ্যমান । এছাড়াও পঞ্চদশ শতাব্দীর একটি সংস্করণ এক আমেরিকান মিলিওনেয়ারের সংগ্রহের অংশ হিসাবে আছে বলে অনেকের ধারনা। একটি অসমর্থিত গুজব এই যে পিকম্যানের সালেম পরিবারে একটি ষোল শতকের গ্রীক পাঠও নাকি বহাল তবিয়তেই আছে । সাথে সাথে এও শোনা যায় বিশেষ রুপে সংরক্ষিত সেই বইটি নাকি ১৯২৬ সালে শিল্পী আর.ইউ. পিকম্যান এর সাথেই অদৃশ্য হয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শাসক গোষ্ঠী এবং গির্জা সাংগঠনিক কাঠামোর সকল শাখার কর্তৃপক্ষ দ্বারা বইটি কঠোরভাবে বাজেয়াপ্তর তালিকা ভুক্ত।
বইটি পাঠ করলেই নাকি ভয়ঙ্কর রকমের কিছু পরিণতি ঘটে।
এই বই বিষয়ক আর একটি গুজব এই যে ( যেটা অবশ্য সাধারণ মানুষ খুব কমই জানেন) আর ডবলু চেম্বারস তার প্রথম দিকের উপন্যাস "দি কিং ইন ইয়েলো" এর ভাবনাটা নাকি এই বই থেকেই পেয়েছিলেন।
----------------------------
**কালপঞ্জি**
আল আজিফ - আবদুল আলহাজ্রেদ দ্বারা দামাস্কাসে ৭৩০ খ্রিস্টাব্দে লিখিত
থিওডোরাস ফিলেটাস অনুবাদ করেন গ্রীক ভাষায় নেক্রোনোমিকন নামে ৯৫০ খ্রিস্টাব্দে। বিশপ মাইকেল ১০৫০ খ্রিস্টাব্দে সেটীকে পুড়িয়ে দেন। মূল আরবি পাণ্ডুলিপিটি হারিয়ে গেছে
ওলায়াস ঊরমিয়াস গ্রীক থেকে ল্যাটিন ভাষায়অনুবাদ করেন ১২২৮ সালে।
১২৩২ সালে ল্যাটিন সংস্করণ এবং গ্রীক উভয় সংস্করণ বাজেয়াপ্ত করেন পোপ নবম গ্রেগরি ।
14 ... কালো-বর্ণের অক্ষরে মুদ্রিত সংস্করণ (জার্মানি)
15 … গ্রীক ভাষায় ইতালিতে মুদ্রিত
16 ... ল্যাটিন ভাষায় স্প্যানিশ পুনঃ মুদ্রন
The History of the Necronomicon
H. P. Lovecraft (1927)
***Photo Courtesy : Internet

1 comment: