Search This Blog

Sunday, July 9, 2017

প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের খোঁজ- ১ম অধ্যায়-প্রথম অভিযান [সম্পূর্ণ] প্রতিম দাস





#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ - ১ম অধ্যায়
 প্রথম অভিযান
 প্রতিম দাস

০০০০০০০০০০০০০০০০০
শোনা যায় গিজার গ্রেট পিরামিডের একেবারে ওপরে নাকি ছিল আরেকটা ছোট্ট সোনার পিরামিড...
কে জানে কোন জায়গায় আজ সেটা পড়ে আছে !
০০০০০
  পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা বিষ্ময়কর সব জিনিষের এক সংগ্রহশালা ছিল সেটা...

আলেকজান্দ্রিয়ার সঙ্গীত মন্দিরের   গ্রন্থাগার পরিচালক ছিলেন সিরেনের ক্যালিম্যাচুস ।  তার লেখা এক পান্ডুলিপি, ৪৮ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ওই গ্রন্থাগারটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর   থেকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি   ...

ওহে  মানবের দল, তোমরা যারা ভয়ের চাপে অতীষ্ঠ, হতাশা গ্রস্থ... ভুলে যেও না যিনি ক্ষমতা দেন তিনি সে ক্ষমতা কেড়েও নিতে পারেন...

সেই আশঙ্কা থেকেই বেনবেনকে রাখা হয়েছে এক অতি পবিত্র স্থানে, এক অতি পবিত্র ভুমি্তে,  এক অতি পবিত্র উচ্চতায় ... যখন সাত সূর্যাস্ত শেষে মহান রা’য়ের বানী প্রচারক এর আবির্ভাব হবে... সপ্তম দিনের চরম মুহূর্তে মহান রা’য়ের ক্ষমাহীন বিধ্বংসী অগ্নিশিখা সব কিছু পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে আমাদের সবাইকে গ্রাস করবে...

গিজার গ্রেট পিরামিডের যেস্থানে সেই ক্ষুদ্র স্বর্ণ নির্মিত পিরামিডটি ছিল সেখানে এক ৪৫০০ বছরের পুরনো হিয়েরো গ্লিফিক লিপিমালা খুঁজে পাওয়া গেছে...

আমি একই সাথে অসীম ক্ষমতার ধারক এবং বাহক ...আমি সব কিছু জানি শুধু একটা বিষয় বাদে। আর সেটাই মানুষকে উন্মাদ করে দেয়। আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
*প্রথম অভিযান*
**কলোসাস**
সুদান, ১৪ই মার্চ ২০০৬
টারটারাসের ঠিক ছয় দিন আগে
*বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু*
নিউ ইয়র্কে যেমন আজ দাঁড়িয়ে আছে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। এক সময়  রোডস দ্বীপপুঞ্জর   প্রধান বন্দর মান্দ্রাকির    সামনে দেবতার মতো মহিমায় ছিল তার অবস্থান ছিল   ।
বারো বছর ধরে কাজ করার পর ২৮২ খ্রিষ্ট পূর্বে সে মূর্তির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়। সময়ের প্রেক্ষিতে সেই ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি ছিল সবচেয়ে বড়। ১১০ ফুট উঁচু। সবচেয়ে বড় জাহাজের উচ্চতাও তাকে পেরিয়ে যেতে পারতো না।
ওটাকে বানান হয়েছিল গ্রীক সূর্যদেবতা হেলিয়সের আদলে। পেশীবহুল, শক্তিশালী। মাথায় অলিভ পাতার মুকুট। গলায় ঝুলছে এক বিশাল সোনালী লকেট সহ নেকলেস। ডান হাতে উঁচু করে ধরা জ্বলন্ত মশাল।
তৎকালীন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছিল  ওই বিশাল মূর্তি কোথায় বসানো হবে সে বিষয়ে। বন্দরের সামনে নাকি পেছনে দূরে সমুদ্র তটরেখায় জলের ধারে। তবে যেখানেই রাখা হতো এই কলোসাস এক দেখার মতো জিনিষই ছিল।
কৌতূহলজনক বিষয় এই যে একবছর ধরে রোডস দ্বীপকে অবরোধ করে রাখা অ্যান্টিগনিডদের পরাজিত করার স্মৃতি চিরস্থায়ী করে রাখতে ওই দ্বীপবাসীরা এটা বানানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু এর সব খরচ বহন করে ইজিপ্ট। আর বিস্তারিত ভাবে বললে বলতে হয় দু’জন ইজিপশিয়ান ফ্যারাও। প্রথম টলেমী আর তার ছেলে দ্বিতীয় টলেমী ।  
মানুষের বারো বছর সময় লেগেছিল এই মূর্তি নির্মাণ করতে । ছাপান্ন বছরের মাথায় প্রকৃতি একে নষ্ট করে দেয়।
২২৬ খ্রিষ্ট পূর্বে হওয়া এক ভূমিকম্পে মূর্তিটা বিশ্রী ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আবার সেই  মিশর থেকেই সাহায্যের হাত এগিয়ে আসে ওটাকে মেরামত করার জন্য। তখন মিশরের মসনদে আসীন হয়েছেন তৃতীয় টলেমী। এসব জেনে মনে হয় রোডস অধিবাসিদের থেকে মিশরীয়দের যেন একটু বেশি আগ্রহ ছিল এটার ব্যাপারে।
যদিও ধর্মভীরু রোডসের মানুষ আর সে মূর্তি সারানোর ব্যাপারে ইচ্ছে প্রকাশ করেনি। ভগবান যে মূর্তিকে ভুপাতিত করেছেন তাকে পুনরায় খাড়া করে অভিশাপগ্রস্থ হওয়ার ইচ্ছে তাদের ছিল না। ওরা তৃতীয় টলেমীর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। কলোসাসের সেই ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকে ৯০০ বছর ধরে। ৬৫৪ খ্রীষ্টাব্দে আরবরা রোডস আক্রমণ করে সেই মূর্তি ভেঙে টুকরো টুকরো করে সাথে  নিয়ে চলে যায়।
এক রহস্যময় পাদটীকা এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য।
কলোসাসকে নতুন করে নির্মাণ করার টলেমীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার এক সপ্তাহ বাদে দৈত্যাকার মূর্তিটির বিশালাকায়, ১৬ ফুট, মাপের মস্তকটি হারিয়ে যায়।
রোডসের অধিবাসীরা চিরকাল সন্দেহ  করে এসেছে ওই সপ্তাহের শেষে ওখানকার বন্দর থেকে একটি ইজিপশিয়ান মালবাহী জাহাজে করে ওটাকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। 
এরপর আর   কলোসাস অফ রোডস এর সেই মাথার কোন খোঁজ কোনো দিন পাওয়া যায় নি।
00000000000000000000000000000000000000000
অ্যাঞ্জেরেব এর জলাভুমি অঞ্চল
ইথিওপিয়ান হাইল্যান্ডের ভিত্তিভুমি
কাসসালা প্রভিন্স, পূর্ব সুদান
১৪ই মার্চ ২০০৬ ... বিকেল ৪টে বেজে ৫৫ মিনিট
টারটারাসের আগমনের ছয় দিন আগে
কুমীর ভরতি জলাভুমির ওপর দিয়ে মাথা নিচু করে খালি পায়ে এগিয়ে চলেছে ন’টি অবয়ব।
ওদের সামনে যে সমস্যা তা আকারে অনেক বড় এবং বিপজ্জনক ।
বিপক্ষের জনসংখ্যা ২০০’র বেশী।
ওরা মাত্র নয় জন।
বিপক্ষের কাছে আছে নানান রকমের কারিগরি সুযোগ সুবিধা। চপার হেলিকপ্টার, ফ্লাডলাইট- রাতে কাজ করার জন্য, বিভিন্ন রকমের নৌকা – গান বোট, হাউস বোট, কম্যুনিকেশন  বোট, তিনটে বারজ যার সাথে সংযুক্ত আছে উন্নতমানের খোঁড়াখুঁড়ি করার যন্ত্র। এছাড়া কাজের  সুবিধার্থে অস্থায়ী একটা বাঁধ পর্যন্ত বানিয়ে নিয়েছে ওরা
আর এই নয়জনের কাছে আছে সেই সব জিনিষ যা খনির ভেতর কাজ করার সময় কাজে  লাগে।
এই মুহূর্তে, এই ছোট্ট দলটার   কাছে এসে পৌছেছে আরো একটা খবর। তৃতীয় আরো একটা দল পাহাড় লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছে। ওদের পেছনেই আসছে  সেই দল। সামনে যে শত্রু তাদের চেয়েও এরা অনেক বেশী খতরনাক, দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং দলেও ভারী ।
সামনে এবং পেছনের শত্রুর সামগ্রিক ক্ষমতার ওজন থেকে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না এই অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতার অর্থ পরাজয় । তবুও নয় জন থামলো না , এগিয়ে চললো।
কারন এটাই তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য।
একটা মরণ কামড় দেওয়া যদি সম্ভব হয়।
একটা অন্তিম চাল জীবনের বাজি খেলায়।
ওরাই শেষ ভরসা কয়েকটা ছোটো ছোটো দেশের সম্মিলিত সংগঠনের।
০০০০০
ওদের সামনের প্রতিদ্বন্দ্বী - ইউরোপীয়ান কিছু রাষ্ট্রের একটা দল – দু দিন আগে ,খনিতে ঢোকার উত্তর দিকের পথটা খুঁজে পেয়েছে । ঢুকেও পড়েছে অনেকটাই সুড়ঙ্গের ভেতরে।
ঘন্টাখানেক আগে পাওয়া এক গোপন রেডিও খবর থেকে ওরা জানতে পেরেছে --- প্যান ইউরোপীয়ান ফোরস নামে পরিচিত ওই শক্তি – যা গঠিত হয়েছে ফরাসী সেনা ও জার্মান ইঞ্জিনীয়ারদের নিয়ে । নেতৃত্বে আছে এক ইতালিয়ান   খনির অন্তিম প্রবেশপথের মুখে পৌঁছে গেছে । সেটা অতিক্রম করতে পারলেই ওরা ঢুকে পড়বে আসল এবং প্রধান  গুহায়।
প্যান ইউরোপীয়ান ফোরস  খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে চলেছে সেই পথে।
এর একটাই অর্থ ওরা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরে গেছে  খনির ভেতরের বিভিন্ন রকম জটিল গোলক ধাঁধাগুলোকে।  
 সামনে থাকা বাধাগুলোর দিকে এগোনোর একটাই অর্থ মৃত্যুর সাথে হাত মেলানোর সামিল।
চারিদিকে অসংখ্য ফাঁদ পেতে রাখা আছে
প্যান ইউরোপীয়ান ফোরসের এগিয়ে চলাটাও একেবারে নির্বিঘ্নে হচ্ছে না। ক্ষতি  ওদেরও হয়েছে। প্রথম দিনেই তিনজন সদস্য সেইসব ফাঁদের কবলে পড়ে প্রান হারিয়েছে। অভিযাত্রী দলটির যিনি নেতা তিনি একজন ভ্যাটিক্যান স্থিত জেসুইট পাদ্রী । নাম ফ্রান্সিসকো ডেল পিয়েরো। ওই তিনজনের মৃত্যুতে দমে যাননি মোটেই।
একরোখা মনোভাব, কোন ভাবেই পিছিয়ে না যাওয়ার  আর বিন্দু মাত্র  সহানুভুতির না দেখানোর মানসিকতা নিয়ে ডেল পিয়েরো নিজের বাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। যে প্রাপ্তির সম্ভাবনা সামনে হাতছানি দিচ্ছে তাতে ওসব মৃত্যুর তেমন কোন দাম নেই। মেনে নিতেই হবে।
০০০০০
অঝোর বৃষ্টির ভেতর দিয়ে মাথা নিচু করে এগিয়ে চলেছে নয়জন। পা ডুবে যাচ্ছে জলা ভুমির কাদায়।
 নিচু হয়ে কিন্তু দ্রুত গতিতে ওরা ছুটছে সৈন্যদের মতো । এক লাইনে চারদিকে নজর রেখে । কখনো পাশ কাটাচ্ছে ঝুলে থাকা গাছের ডালপালাকে আবার কখনো লাফিয়ে পার হচ্ছে মাটিতে পড়ে থাকা ভাঙা গাছের গুঁড়ি।
ওদের সাথে আছে তিন রকমের বন্দুক- এম পি-৭, এম ১৬এস এবং স্টেয়ার-আগস । সাথেই থাইয়ে বাঁধা নানান হোলস্টারে বেশ কয়েক ধরনের পিস্তল।
পিঠে ঝুলছে  নানান মাপের থলে। সেসবের সাথে বাঁধা আছে বিভিন্ন মাপের দড়ি। আছে পাহাড়ে চড়ার সরঞ্জাম এবং অদ্ভুত আকৃতির সব ষ্টীলের বড় বড় গজাল।
আর ওদের মাথার ওপরে গাছের সীমানা ছাড়িয়ে ভেসে চলেছে একটা ছোট্ট পাখির মতো কিছু একটা।
 ন’জনের সাতজন সেনাবাহিনীর লোক।
ক্র্যাক ট্রুপ। অতি প্রশিক্ষিত বাহিনীর সদস্য। এসেছে নানান দেশ থেকে।
বাকি দুজন সাধারন মানুষ। ওদের মধ্যে একজনের বয়স ৬৫ বছর। লম্বা দাড়ি মুখে। নাম ম্যাক্সিমিলিয়ান টি এপ্পার। সংকেত নাম উইজারড। 
সেনা দলের সাত সদস্যের সংকেত নাম গুলো অদ্ভুত রকমের   – হান্টস ম্যান, উইচ ডক্টর, আরচার, ব্লাডি মেরি, সালাদিন, মাতাডোর এবং গান ম্যান।
যদিও এই মিশনে ওদের সাংকেতিক নাম আলাদা । উডস ম্যান, ফাজি, স্ট্রেচ, প্রিন্সেস জো, পুহ বিয়ার, নডি এবং বিগ ইয়ারস ।
আর এই নতুন সব নামকরণের পেছনে আছে এই দলের নবম সদস্য।
একটি ছোট্ট দশ বছরের মেয়ে।
০০০০০
যে পাহাড়টা লক্ষ্য করে ওরা এগিয়ে চলেছে সেটা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য চুড়ার একেবারে শেষ শিখর। যার সাথে যুক্ত পাহাড় এর অন্তিম সীমানা  সুদান-ইথিওপিয়ান সীমান্ত
পাহাড়ের ওই শৃঙ্খলার নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে আঞ্জেরেব নদী, ইথিওপিয়া থেকে বের হয়ে গিয়ে পড়েছে সুদানে। সেই নদীর জল চলার পথে জন্ম দিয়েছে   এই সব জলাভুমির। তারপর গিয়ে মিশেছে নীল নদে।
এইসব জলাভুমির প্রধান বাসিন্দা এক বিশেষ কুমীরের প্রজাতি, ক্রকোডাইলাস নাইলোটিকাস বা কুখ্যাত নীলনদের কুমীর। লম্বায় কমপক্ষে ছয় মিটার। গোটা পৃথিবীতে এরা পরিচিত এদের বিশাল আকার, নৃশংস হিংস্রতা আর ভয়ানক রকমের আক্রমনাত্বক প্রবৃত্তির জন্য। প্রতিবছর প্রায় ৩০০০ মানুষ এদের হাতে মারা যায়।

ন’জনের ক্ষুদ্র দলটা পাহাড়ের দিকে এগিয়ে চলেছে দক্ষিন দিক থেকে। ওদিকে ওদের প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপিয়ান দলটি উত্তর দিকে তাদের অভিযান চালানোর জন্য যে ঘাঁটিটা তৈরী করেছে সেটাকে দেখতে একটা ভাসমান শহরের মতো।
ভাসমান এক সেতুর সাথে সংযুক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কম্যান্ড বোট, মেস বোট, ব্যারাক্স-বোট এবং গান বোটের এক ছোটখাটো বাহিনী। সবার মুখ সেই কফার ড্যামটার দিকে যা তারা বানিয়েছে উত্তর প্রান্তে পাহাড়ের গা ঘেঁষে।
স্বীকার করতেই হবে কফার ড্যামটা এক মাস্টারপিস। ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার  দিক থেকে । ১০০ মিটার লম্বা ৪০ ফুট উঁচু ।   জলাভুমির জলকে ঠেলে সরিয়ে রেখে পাহাড়ের পাদদেশে ৪০ ফুট জলের নিচে থাকা এক ঘনক আকৃতির পাথরের দরজাকে উন্মোচন করেছে ।
দরজাটার গায়ের নক্সা অদ্ভুত রকমের আশ্চর্যজনক।

 চারদিকের ফ্রেমের প্রতিটা অংশ ভর্তি হয়ে আছে  মিশরীয় হিয়েরোগ্লিফিক লিপিতে । সেই সব লিপির   একেবারে মাঝখানে দরজাটির মাথার ওপর   খোদাই করা আছে এক বিশেষ ছবি। যা দেখা প্রায়ই দেখা যায় ইজিপ্টে ফ্যারাওদের সমাধিতে ।

 দুজন মানুষের মতো অবয়বকে বেঁধে রাখা আছে আনুবিসের মস্তক শোভিত এক দন্ডের সাথে । আনুবিস যিনি ইজিপশিয়ানদের পাতালের দেবতা নামেই খ্যাত।
এর অর্থ যে বা যারা সমাধি লুণ্ঠন করার চেষ্টা করবে তাদের ভাগ্যে এই রকম শাস্তি জুটবে মৃত্যুর পর। আনুবিসের সাথে  যুক্ত হয়ে যাবে চিরন্তন বন্ধনে। অনন্তকাল এভাবে আটকে থাকা যে মোটেই সুবিধার হবে না তা বলাই বাহুল্য।
এর মুল কথা একটাই...এর ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টাও কোরো না ।
ওই দরজার অন্য প্রান্তে যে স্থান বা খনি এলাকা তা খনন করা হয়েছিল প্রথম টলেমীর আমলে। আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্ট পূর্ব কালীন সময়ে।
সেই সময়ের ইজিপ্টে সুদানের পরিচিতি ছিল নুবিয়া নামে। এই নুবিয়া কথা এসেছে ইজিপশিয়ান শব্দ নাব থেকে। যার অর্থ সোনা।
নুবিয়া – সোনার রাজ্য ।
আর সত্যিই তাই ছিল। এই সেই নুবিয়া যেখান থেকে সোনা সংগ্রহ করে ইজিপ্টের প্রাচীন অধিবাসীরা বানিয়েছিলেন অনেক মন্দির। জন্মিয়ে ছিলেন প্রচুর সম্পদ।
আলেকজান্দ্রিয়া থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে  এই স্বর্ণ খনি খুঁজে পাওয়ার ৭০ বছরের ভেতরেই সব সোনা নিষ্কাশন করে নেওয়া হয়। তার পরে এটা আবার গুরুত্ব পূর্ণ হয়ে ওঠে যখন এখানে সন্ধান মেলে  এক দুস্প্রাপ্য পাথর ডিওরাইটের। ২২৬ খ্রিস্ট পূর্ব সময়ে সব ডিওরাইট ও খুঁড়ে তুলে নেওয়া হয়। অতঃপর ফ্যারাও তৃতীয় টলেমী এই খনি গুহাকে এক বিশেষ  কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন।
এই কাজে তিনি নিয়োগ করেন তার সেরা স্থাপত্যবিদ পঞ্চম ইমহোটেপকে। সাথে দেন ২০০০ শ্রমিক।
অভাবনীয় গোপনতায় তিন বছর ধরে সেই মানুষগুলো ওখানে কাজ করে সম্পন্ন করে অতি বিশেষ সেই নির্মাণ।
00000
উত্তরের দরজাই খনিতে ঢোকার প্রধান প্রবেশপথ।
বাস্তবিক পক্ষে এটা জলাভুমির জলস্তরে সাথে সমান ছিল। এর দরজার  ভেতর দিয়ে ছিল এক চওড়া ক্যানাল । যা খনন করা হয়েছিল পাহাড়ের সমান্তরালে আনুভুমিক ভাবে। সোনা এবং ডিওরাইট নৌকা বোঝাই করে ঐ ক্যানেলের পথে নিয়ে যাওয়া হতো।
পঞ্চম ইমহোটেপ পরে একে নতুন ভাবে তৈরি করেন।
বানান এক সাময়িক বাঁধ, না বর্তমানের ইউরোপিয়ানদের মতো নয় অবশ্য। ইমহোটেপের ইঞ্জিনিয়াররা জলাভুমির জলকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। আর উনি প্রবেশপথটাকে নামিয়ে নিয়ে যান চল্লিশ ফুট নিচে। আসল দরজার মুখ পাথর গেঁথে বন্ধ করে দেওয়া হয়।  ঢেকে যায় কাদায়।
এরপরে বাঁধটাকে ভেঙে দেন ইমহোটেপ। যার ফলে জলাভুমির  জলের নিচে চলে যায় নতুন প্রবেশপথ। ২০০০ বছর ধরে থেকে যায় আলো বাতাসের স্পর্শ ছাড়াই।
আজ অবধি । 

এছাড়াও কিন্তু খনিতে প্রবেশ করার দ্বিতীয় আরেকটা পথ আছে। খুব কম মানুষই জানে সেটার কথা।   খনির দক্ষিন প্রান্তে আছে সেই পথ
    পেছনের দরজা বলা যেতে পারে ওটাকে।   যা আসল খনিতে কাজ চলার সময়   বজ্য পদার্থ বাইরে ফেলার কাজে ব্যবহার হতো । সেটাকেও নতুন করে বানানো হয়েছিল।
ন’জনের দলটা সেই দরজাটার খোঁজেই চলেছে।
সাদা দাড়িওয়ালা উইজার্ডের দেখানো পথে এগিয়ে চলেছে ওরা। মানুষটি একহাতে ধরে আছেন একটা গোটানো প্রাচীন প্যাপিরাসের টুকরো আর অন্য হাতে অতি আধুনিক সোনিক-রিজনেন্স ইমেজার । ওরা থামলো একটা মাটির ঢিপির ওপর পৌছানোর পর। পাহাড়ের ভিত্তি থেকে যেটি ৮০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। চারটে পদ্মফুলের ও তাদের পাতার  ছায়ায় ঢেকে আছে ঢিপিটা ।
‘এখানেই!’ বৃদ্ধ মানুষটি বললেন। ঢিপিটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা লক্ষ্য করে,   ‘ ওহ হো ! স্থানীয় ছেলেরা মনে হচ্ছে এটার খোঁজ আগেই পেয়ে গেছে।’
মাটির ঢিপিটার ঠিক মাঝখানে, ভেতরে ঢুকে আছে একটা ছোট্ট চারকোনা গর্ত, মোটামুটি ভাবে একজন মানুষ ওটার ভেতর ঢুকে যেতে পারবে। দুর্গন্ধযুক্ত বাদামী কাদা লেগে আছে ওটার চারপাশে।
  খোঁজার চেষ্টা না করলে ফোকরটা চোখেই পড়বে না। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে  এটাই সেই জিনিষ যা প্রফেসর ম্যাক্স টি এপ্পার খুঁজছিলেন।
দ্রূত গুটানো প্যাপিরাস খুলে উনি পড়লেন –
“নুবিয়ার জলাভুমিতে সোতেরের খনির দক্ষিনে ,
সোবেকের সেনাদের মাঝখানে
খুঁজে নাও চার সংকেত নিম্নভুমির রাজত্বের
সেখানেই লুকিয়ে আছে দরজা, দুর্গম যাত্রা পথের।”
এপ্পার তার সাথীদের দিকে মুখ তুলে তাকালেন, ‘চারটে পদ্মের গাছ । পদ্ম নিম্ন ভুমির রাজত্বের প্রতীক। সোবেকের সেনা হল কুমীর। যেহেতু সোবেক ইজিপশিয়ানদের কুমীর দেবতা। জলাভুমি থেকে সোতেরের খনির দক্ষিনে – প্রথম টলেমীর আরেক নাম ছিল সোতের। অতএব এটাই সেই স্থান।’
কাদার গর্তটার কাছেই পড়ে ছিল একটা ছোট বেতের ঝুড়ি – এরকম ঝুড়ি  সুদানের গ্রামবাসীরা ব্যবহার করে থাকে।
‘যতসব দুর্ভাগার দল  !’ উইজার্ড এক লাথি মেরে বাক্সটাকে দূরে সরিয়ে দিলেন।
এখানে আসার পথে এই ন’জন একটা ছোট গ্রামের ভেতর দিয়ে এসেছিল। গ্রামবাসীরা বলেছিল কিছুদিন আগে ওই ইউরোপীয়ানদের দেখানো লোভে পড়ে এই গ্রামের চারটে অল্পবয়সী ছেলে ওই জলাভুমিতে গিয়েছিল। একজন মাত্র   ফিরে আসে এবং জানায় বাকি তিনজন একটা গর্তে পড়ে যায় এবং তাদের আর কোন হদিশ মেলেনি।
এবার দলটার আসল নেতা এগিয়ে গিয়ে গর্তটাকে ভালো করে দেখে ।  
বাকিরা অপেক্ষা করে থাকে সে কি বলে শোনার জন্য।
দলের এই নেতার সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু কেউ জানে না। সত্যি করেই মানুষটার অতীত রহস্যে ঢাকা। শুধু এটুকুই জানা আছে –
মানুষ টার নাম ওয়েস্ট ...জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র।
সংকেত নাম – হান্টস ম্যান।
৩৭ বছর বয়েস। একই সাথে মিলিটারী এবং ইউনিভার্সিটির বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী। একসময় এই বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চমানের স্পেশ্যাল ফোরসের সদস্য ছিল। ডাব লিনে ট্রিনিটি কলেজে ম্যাক্স এপ্পার এর অধীনে প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনাও করেছে
১৯৯০ সালে যখন বিশ্বের সেরা দশ সেনার নাম ঘোষনা করে তার মধ্যে একজন কেবল মাত্র আমেরিকান ছিল না। জ্যাক ওয়েস্ট ছিল সেই সেনার নাম। স্থান ছিল চতুর্থ।
১৯৯৫ সালে আন্তর্জাতিক  আঙ্গিনা থেকে হারিয়ে যায় ওয়েস্ট। এটাই খবর। কোন রকম আন্তর্জাতিক অভিযান বা কাজকর্মের ভেতর তাকে আর দেখাই যায়নি । এমন কি ২০০৩ সালে  যৌথ বাহিনীর ইরাক অভিযানের সময়েও তার দেখা পাওয়া যায়নি । অথচ ’৯১ সালের ডেজারট স্ট্ররম অভিযানের অভিজ্ঞতা তার ছিল।  ধরেই নেওয়া হয় ওয়েস্ট মিলিটারী ত্যাগ করেছে। নিজের পাওনা গন্ডা বুঝে নিয়ে অবসর নিয়েছে। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তার আর কোন খবর মেলেনি...
...   এই অভিযানের আগে অবধি।
আবার নতুন করে তার আবির্ভাব হয়েছে।
মানসিক ও শারীরিক ভাবে দারুন ভাবে চনমনে । কালো চুল। প্রায় সব সময় কুঁচকে থাকা ঝকঝকে উজ্জ্বল চোখের রঙ নীল ।  হাসিতে একটা বিজয়ীর ভাব বর্তমান, তবে সে হাসি ওই মুখে দেখা যায় খুব কম।
আজ, দলের অন্য সদস্যদের মতোই  ওর পরনেও অসামরিক পোশাক। দোমড়ানো মোচড়ানো ক্যারামেল রঙের ক্যানভাসের জ্যাকেট, জীর্ণ কার্গো প্যান্ট এবং পায়ে বহু অভিযানের সঙ্গী স্টীলের সোল লাগান সলোমন হাইকিং বুট ।
হাতে গ্লাভস। ভালো করে তাকালে জ্যাকেটের বাম হাতের কব্জির কাছে রুপালি স্টিলের একটা ঝলক দেখা যাবে। জ্যাকেতের হাতার তলায় কনুইয়ের পর থেকে বাকি অংশটা নকল, মেকানিক্যাল । ওটা কিভাবে হলো খুব বেশি মানুষ জানে না।  নিশ্চিত ভাবে জানে একজনই, তার নামক ম্যাক্স এপ্পার।
যুদ্ধবিদ্যায় নিপুণ, একইসাথে ইতিহাসের জ্ঞানে সমৃদ্ধ । তার দায়িত্বে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে রক্ষা করার  জন্য যে কোন পদক্ষেপ নিতে রাজি ।
একটা ব্যাপার জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র সম্বন্ধে বলাই যেতে পারে যে – কেউ যদি এই নিশ্চিত রকমের অসম্ভব অভিযানটাকে সফল করতে পারে তাহলে সে মানুষ হলো জ্যাক।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
  একটা ছোটো বাদামী পেরিগ্রিন ফ্যাল্কন তীক্ষ্ণ এক চিৎকার ছেড়ে গাছেদের মাথার ওপর থেকে উড়ে এসে বসলো ওয়েস্টের কাঁধের ওপর – এরা অতি উচ্চ আকাশে উড়তে সক্ষম পাখি। বসার পরেই ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে নিলো চারপাশটা । সে তাকানোর মধ্যে একই সাথে সতর্কতা এবং নিরাপত্তার ছায়া । পাখিটার নাম হোরাস।
ওয়েস্ট পাখিটার উড়ে এসে বসাটাকে অনুভব করতেই পারলো না।  ওর সমস্ত মনোযোগ এখন ওই কালো চৌকো গর্তটার ওপর ন্যস্ত। হারিয়ে গেছে ভাবনার জগতে।
লেগে থাকা কাদা কিছুটা পরিষ্কার করতেই দেখা গেল একটা হিয়েরোগ্লিফ অঙ্কন চিহ্ন ফ্রেমের এক পাশে –

 ফিসফিস করে বললো, ‘আমাদের আবার দেখা হয়ে গেল!’
ঘুরে তাকিয়ে বললো, ‘গ্লোস্টিক।’
একটা গ্লোস্টিক ওর দিকে বাড়িয়ে দিতেই সেটাকে ভাঁজ করে আলো জ্বালিয়ে ফেলে দিলো গর্তটার ভেতর।
২০ ফুট নিচে গিয়ে পড়লো ওটা । যার আলোয় আলোকিত হল একটা পাথরের তৈরী সুড়ঙ্গ পথ, নেমে গেছে নিচের দিকে । জলে গিয়ে – টপাং – করে পড়ার আগে দেখিয়ে দিলো...
একদল কুমীর...কুখ্যাত নাইল ক্রোকোডাইল।
মারামারি করছে, লেজ ঝাপ্টাছে, একে অপরের গায়ে গা ঘষছে ... সাথেই মাঝে মাঝে করছে ভয়ানক ঘোঁত ঘোঁতে গর্জন।
‘সোবেকের সেনাদল,’ ওয়েস্ট বললো, ‘বাহ বাহ, দারুন।’
দলের রেডিওম্যান, এক গাছের গুড়ির মতো লম্বা জামাইকান। মাথায় ব্লিচ করা জিরিজিরি চুল, মুখে একটা গভীর কাটা দাগ। পেশীবহুল দুই হাত। সতর্কতার ভঙ্গি করে কানের ইয়ার পিসে হাত দিলো। মানুষ টার আসল নাম ভি জে উইদারলি। আসল সংকেত নাম উইচ ডক্টর । কিন্তু এখানে ওকে সবাই ডাকে ফাজি নামে।
‘হান্টস ম্যান,’ ফাজি বললো, ‘ইওরোপিয়ানরা এই মাত্র তৃতীয় গেটটাও পার হলো। ওরা এখন প্রধান গুহার ভেতর ঢুকে পড়েছে। নিয়ে যাচ্ছে বিশেষ ধরনের একটা ক্রেন। লোয়ার লেভেলের ঝামেলা এড়ানোর জন্য।’
‘ধ্যাঅ্যাত তেরে ...’
‘অবস্থা বেশ খারাপ । আমেরিকানরাও ওদিকে সীমান্ত পা হয়েছে একটু আগে। অত্যন্ত দ্রুততিতে  ওরা আমাদের পিছনে ধেয়ে আসছে। ৪০০ জনের বিশাল বাহিনী । সাথে আছে চপার, গোলাবারুদ।   সাহায্য করার জন্য আকাশ পথেও আসছে  অনেক কিছু। স্থলবাহিনীর নেতৃত্বে আছে সি আই ই এফ।’
এই কথাটা ওয়েস্ট এর মনে আলোড়ন তুললো।
সি আই ই এফ – কমান্ডার ইন চীফ ইন এক্সট্রিমিস ফোরস, ছোট্ট করে বলা হয় “সিফ” – আমেরিকার সবচেয়ে সেরা সেপশ্যাল অপারেশন ইউনিট। যারা একমাত্র জবাবদিহি করে প্রেসিডেন্টের কাছে । তার চেয়েও বড় কথা ওদের দেওয়া আছে বিশেষ ক্ষমতা, লাইসেন্স টু কিল। ওয়েস্ট নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই জানে যেখানে সি আই ই এফ থাকে তার ধারে কাছে না থাকাই মঙ্গলজনক।
উঠে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলো, ‘নেতৃত্বে কে আছে?’
ফাজি ঝট করে উত্তর দিলো, ‘জুডা।’
‘আমার মনে হয় না সে নিজে এতে অংশ নেবে। না এটা মোটেই ভালো খবর নয়। আমাদের এবার   সবকিছু যত দ্রুত করা যায় সেই দিকে নজর দিতে   হবে।’
ওয়েস্ট দলীয় সাথীদের দিকে ঘুরলো।
‘শুরু করা যাক তাহলে। নডি – তোমার ওপর থাকছে পাহারার দায়িত্ব। বাকিরা সকলে...’
একটা অদ্ভুত দর্শন হেলমেট খুলে নিলো নিজের বেল্ট থেকে,পড়ল ওটাকে ।
‘...চলো ঝাঁপিয়ে পড়ো, কাঁপিয়ে দাও সবকিছু।’

ওরা তৈরী হলো পড়লো সেই ভূগর্ভস্থ অন্ধকার সুড়ঙ্গটায় নামার জন্য।
অতি দ্রুত।
 একটা স্টীলের ট্রাইপড খাড়া করলো ওই পাইপের মতো সুড়ঙ্গটার ওপরে , তারপর ওয়েস্ট সবার আগে ... আর ওর পেছনে পেছনে বাকি সাত জন ... শুরু করলো ট্রাই পডের মধ্যে থেকে বাঁধা ঝোলানো দড়িটা ধরে নিচে না্মা।
 কালো চুলের এক স্প্যানিশ কমান্ডো – যাকে একদা সবাই মাতাদোর বলে ডাকতো, এখন নডি -  একা থেকে গেল ওপরে প্রবেশপথটা পাহারা দেওয়ার জন্য।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
*প্রবেশ পথের সুড়ঙ্গ*
ঝুলতে থাকা দড়ি দিয়ে ঝুলে নামতে নামতে তিনটে সংকীর্ণ কৌনিক   পাথর স্পর্শ না করে সাবধানে পার হয়ে এলো ওয়েস্ট। ওগুলো এই প্রধান সুড়ঙ্গের পথের মাঝে অবস্থান করছে বিশেষ বাধা হয়ে 
ছোট্ট ফ্যাল্কনটা ওর বুকের কাছে একটা থলের মধ্যে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। ওয়েস্ট মাথায় যে রংচটা দমকল কর্মী  হেমেটটা পড়ে আছে ওটার গায়ে লাগান আছে একটা ব্যাজ । যাতে লেখা আছে “এফ ডি এন ওয়াই প্রিসিঙ্কট ১৭” । হেলমেটটার সাথে লাগানো আছে  চোখকে আঘাতের হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম একটা ভাইজার।   ডান দিকে সেট করা আছে অতি জোরালো আলো দিতে পারে এমন ফ্ল্যাশ লাইট। দলের বাকি সদস্যরাও ওই একই ধরনের হেলমেট পড়ে নিয়েছে। তবে প্রয়োজন অনুসারে ভাইজার, ফ্ল্যাশ লাইট এমন কি ক্যামেরাও লাগানোআছে কা্রো কারোটায়।
ওয়েস্ট সতর্কভাবে কৌনিক পাথরগুলোর দিকে নজর রাখছিল। ও ভালো করেই জানে কি ধরনের বিপদের সম্ভাবনা আছে ওগুলোর থেকে।  ‘সবাই ভালো করে শুনে রাখো। সতর্ক থাকতে হবে । কোনো ভাবেই যেন ছোঁয়া না লাগে, আমি আরো একবার বলছি , দেওয়ালের ওই বেরিয়ে থাকা পাথরগুলোর সাথে যেন ছোঁয়া না লাগে বা কেউ ছুঁয়ে দেখার চেষ্টাও করবে না কোনো ভাবে ।’
সে নিজে তো দূরে দূরে থাকছিলই , বাকি সদস্যরাও সেটাই করছিল।
এক সময় দড়ির একেবারে শেষ প্রান্তে পৌছে গেল ওয়েস্ট।

*মধ্য চত্বর*
লম্বা পাথরের দেওয়ালওয়ালা ঘরটার ছাদের ওপর থেকে ঝুলে থাকা দড়িটায় ঝুলছিল ওয়েস্ট।
নিজেকে একেবারে মেঝের কাছে নিয়ে যায় নি। ফুট আষ্টেক ওপরে ঝুলেছিল।
সেই গ্লোস্টিকটার ভুতুড়ে আলোয়, চারদিক দেখে ওয়েষ্ট বুঝতে পারলো এটা একটা আয়তক্ষেত্র আকারের ঘর যা লম্বায় ৩০ মিটারতো হবেই। ঘরের মেঝেতে জমে আছে অগভীর জলাভুমির জল। সে জল নড়ছে নাইল কুমীদের নড়াচড়ার সাথে সাথে – এমন একটা জায়গা নেই যেখানে কুমীর নেই ।
ওয়েস্টের ঠিক নিচে, জলের ভেতর থেকে অর্ধেক উঁচু হয়ে আছে , দুটো আধখাওয়া বছর কুড়ির সুদান নিবাসীর দেহ । এই মুহূর্তে তিনটে বড় বড় কুমীর মাঝে মাঝেই ওই দেহে কামড় বসাচ্ছে।
গলার কাছে লাগানো মাইক্রোফোনে ওয়েস্ট বললো , ‘বিগ ইয়ার্স, একটা এমন দৃশ্য নিচে দেখা যাচ্ছে যা মোটেইবাচ্চাদের দেখার মতো   নয়। লিলিকে জানিয়ে দাও , যখন তুমি আর ওকে নিয়ে  নিচে নেমে আসবে তখন যেন ও নিচের দিকে না তাকায়, ।
ইয়ারপিসে ভেসে এলো আইরিস উচ্চারনে, ‘ঠিক আছে বস, বলে দিচ্ছি
ওয়েস্ট একটা ঝকমকে বাদামী আলোর রোশনাই ছুঁড়ে দিলো নিচে চত্বরে।
 সাথে সাথেই গোটা ঘরটা যেন জীবন্ত হয়ে উঠলো।
গভীরভাবে খোদাই করা হিয়েরোগ্লিফিক লিপিতে ঢাকা দেওয়াল। হাজার হাজার লিপি।
ঘরের একেবারে শেষপ্রান্তে, ওয়েস্ট তার অভীষ্ট দেখতে পেলো – একটা পাথরের অসমান্তরাল বাহু বিশিষ্ট দরজা। নিচের জলময় মেঝে থেকে বেশ কয়েক ফিট উঁচুতে তার অবস্থান।
সেই ভুতুড়ে হলুদ রঙা গ্লোস্টিকের আলোতে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে এলো – মধ্য চত্বরের সিলিং।
সেই সিলিং এ লাগানো আছে এক সারি হাতল , যা চলে গেছে ওই মেঝে থেকে উঁচুতে অবস্থিত দরজাটার কাছে। প্রত্যেকটা হাতল বেরিয়ে আছে সিলিং এ খোদাই করা কালো চৌকো গর্তের ভেতর থেকে।
‘উইজার্ড,’ ওয়েস্ট বললো, ‘আমি হাতলগুলো দেখতে পাচ্ছি 
‘ইমহোটেপের সমাধিতে পাওয়া লেখনী অনুসারে, আমাদের তৃতীয় এবং অষ্টম হাতলকে এড়িয়ে যেতে হবে,’ শোনা গেল উইজার্ডের কণ্ঠস্বর। ‘ওই দুটোর পেছনে লুকানো আছে ঝুলন্ত খাঁচা। বাকিগুলো নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।’
‘বুঝতে পেরেছি।’
আটজন দ্রুত ঝুলে নেমে এলো চত্বরের ওপরে, তারপর ওই দুই হাতল বাদ দিয়ে বাকিগুলো ধরে ঝুলতে ঝুলতে এগিয়ে চললো। ঝুলে থাকা পায়ের সামান্য নিচেই নড়ে চড়ে বেড়াচ্ছে ক্ষুধার্ত কুমীরের দল।
লিলি – এই দলের সর্ব কনিষ্ঠা সদস্যা । এগিয়ে যাচ্ছিলো দলের মাঝখানে অবস্থান করে। দেখে মনে হচ্ছিল ওই সবচেয়ে দক্ষ এই এক হাতল থেকে অন্য হাতল ধরে ঝুলতে ঝুলতে এগিয়ে যাওয়ার কাজে।

*নিচু সুড়ঙ্গ*
একটা লম্বা নিচু সুড়ঙ্গ পথ চলে গেছে ওই মধ্য চত্বর থেকে। সোজা পাহাড়ের দিকে।
ওয়েস্ট আর ওর সঙ্গীরা ছুটে চললো ওই পথ ধরে। নিচু হয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে । হোরাসকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে থলির ভেতর থেকে। ও উড়ে চলেছে ওয়েস্টের আগে আগে, গলিপথের মধ্যে দিয়ে। লিলির অবশ্য সোজা হয়ে দৌড়াতে অসুবিধা হচ্ছে না।
টপ টপ করে জল পড়ছে নিচু পাথরের ছাদ থেকে, যা ওদের হেলমেটের ওপর পড়ে গড়িয়ে চলে যাছে পেছনের দিকে। চোখে পড়তে দিচ্ছে না।
  সুড়ঙ্গ পথটা একেবারে নিখুঁত চারকোনা বর্গাকার। ১.৩ মিটার চওড়া, ১.৩ মিটার উঁচু। কৌতুহলজনক ব্যাপারটা হলো ঠিক এই মাপেরই প্যাসেজ য়ে আছে গিজার পিরামিডের ভেতরেও।
ঝুলে নামার সুড়ঙ্গ পথের মতোই এ পথের ভেতরেও কৌনিক তিনটে ছোট পাথর দেখতে পাওয়া গেল ।  পার্থক্য শুধু এগুলো উলম্ব অবস্থানে অপেক্ষারত এবং চওড়ায় সুড়ঙ্গের চওড়ার সমান। ওর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিলিং এবং মেঝেতে বেশ কিছু গর্ত কাটা আছে ।
একটা জায়গায় লিলির দায়িত্ব যার ওপর দেওয়া আছে সেই বিগ ইয়ার্সের পা ভুল করে একটা ট্রিগার পাথরের ওপর পড়ে গিয়েছিল লাফিয়ে কৌণিক পাথর পার হওয়ার পথে। সাথেই সাথেই বিগ ইয়ার্স নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে থমকে দাঁড়িয়ে যায় সুড়ঙ্গের কানায় –
-      সেকেন্ডের মধ্যে বন্যার মতো জলাভুমির জলস্রোত প্রবাহ এসে পড়ে সিলিং এর  ওপরের গর্তটা দিয়ে। ওদের সামনে একটা জলের দেওয়াল খাড়া হয়ে যায় । আস্তে আস্তে সব জল বয়ে চলেও যায় একসময়, ঠিক ওর নিচে থাকা গর্তটা দিয়ে।
বিগ ইয়ার্স যদি লাফ দিতো ওই মুহূর্তে তাহলেই জলের ধারা ওকে আর লিলিকে নিয়ে কোন অতল তলে তলিয়ে যেত কে জানে।
‘সাবধানে, ডিয়ার ব্রাদার,’ সামনে থেকে দলের আর এক সদস্য বলে উঠলো জলধারা প্রপাত অদৃশ্য হওয়ার পর। এই দলের একমাত্র মহিলা সদস্যা । সায়াথান ফায়ানোগ্ল্যাচ আন আইয়ারম , আইরিশ ক্র্যাক ইউনিটের কম্যান্ডো। পুরনো সংকেত নাম ব্লাডি মেরী। নতুন নাম প্রিন্সেস জো। ওর ভাই বিগ ইয়ার্স ওই একই এস এফ এ’র সদস্য।
পিছিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে সাহায্য করলো ভাইকে লাফিয়ে  গর্তটা পার হতে । তারপর লিলিকে মাঝখানে রেখে পুনরায় শুরু করলো পথ চলা।
*জলমগ্ন কক্ষ [প্রথম দরজা]*

নিচু সুড়ঙ্গ পথটা গিয়ে শেষ হল একটা চেম্বারে যার আকৃতি একটা ছোট্ট উপাসনা কক্ষের মতো। কক্ষটির মেঝেটা দেখে মনে হচ্ছিল  বেমানান রকমের সবুজ ঘাসের কার্পেটের মতো কিছু দিয়ে  ঢাকা ।
আসলে ওগুলো ঘাস নয়।
ওগুলো অ্যালগি বা জলজ শ্যাওলা। আর ওর তলায় আছে , জল – একটা আয়তক্ষেত্রের  আকারের নিখুঁত মাপের নিথর জলের ভান্ডার।
না ওখানে কোন কুমীর নেই। একটাও না।
কক্ষটির শেষপ্রান্তে – লম্বা জলাধারের  উলটোদিকে। জলস্তরের ঠিক ওপরে – তিনটে ছোট্ট আয়তাক্ষেত্রাকার গর্ত, প্রায় লুকিয়ে আছে দেওয়ালের গায়ে, মাপে মোটামুটি শবাধারের মতো।
প্রবেশপথের কাছেই জলে ভাসছে একটা কিছু। ওয়েস্ট এক দেখাতেই বুঝে গেলেন ওটা কি।
একটা মানুষের দেহ। মৃত ।
শেষ সুদানীয় যুবক।
প্রায় দমবন্ধ অবস্থায় ওয়েস্টের পাশে এসে দাঁড়ালেন উইজার্ড। ‘আহ হা! প্রথম প্রবেশপথ। বাপরে! কি বুদ্ধিমান!এটা একটা নকল মেঝের কক্ষ। ঠিক যেমনটা আমরা দেখেছিলাম উগান্ডাতে আগ্নেওগিরির পাশে। দারুন ব্যাপার ।  পঞ্চম ইমহোটেপ সব সময় ক্ল্যাসিক্যাল ট্র্যাপ ব্যবহার...’
‘ম্যাক্স...’ ওয়েস্ট ডাকলো।
‘ এটার সাথে যুক্ত হয়ে আছে সলোমনের কাঁটা ভর্তি গর্তের ধাঁধা । তিনটে গর্ত কিন্তু একটাই শুধু নিরাপদ। এ এক দেখার মতো দরজা। আমি বাজি ধরতে পারি ওপরের সিলিং রোলারের ওপর সেট করা –’
‘ম্যাক্স! এ নিয়ে গবেষনা করে পরে বই লিখো। আপাতত জলের বিষয়ে বলো?’
‘ও হ্যাঁ হ্যাঁ, সরি বয়েস হয়েছে তো ...’ উইজার্ড বেল্টের সাথে আকানো ওয়াটার টেস্টিং কিট থেকে একটা ডিপস্টিক বার করলেন । ডুবালেন সেটাকে শ্যাওলা ঢাকা জলের ভেতরে। সঙ্গে সঙ্গে ওটার মাথাটা লাল হয়ে গেল।
উইজার্ড কপাল কুঁচকে বড় বড় চোখে তাকালেন। ‘অতি বেশি মাত্রায় ব্লাড উয়রম সিস্টোসমা মান্সনি আছে বোঝাই যাচ্ছে। খুব সাবধান বন্ধু। এটা জীবাণুর থেকেও খতরনাক। এর নাম এস মান্সনি।’
বিগ ইয়ার্স পেছন থেকে জানতে চাইলো, ‘সেটা আবার কি?’
ওয়েস্ট উত্তর দিলো, ‘এ হল এক ধরনের মাওক্রোস্কোপিক ব্লাড ঊয়রম যারা চামড়া বা শরীরের যে কোন উন্মুক্ত স্থা দিয়ে শরীরের ভেতর ঢুকে যেতে পারে। তার পর শিরায় প্রবেশ করে ডিম পাড়ে। ’
উইজার্ড সাথেই বললেন ‘এর ফলে যে ইনফেকশন হয় তার জ্বলুনী শিরদাঁড়ায় অনুভুত হয়। দেহের নিম্নাঙ্গ অবশ হয়ে যায় , সারা শরীরে খিঁচুনি শুরু হয় এবং অন্তিম পরিণতি মৃত্যু। প্রাচীনকালের সমাধি চোরেরা এরকম স্থান পার হতে গেলেই এর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে  পাগল হয়ে যেত। আর তার জন্য দোষ দিতো ক্রুদ্ধ দেবতা আর রহস্যময় অভিশাপকে। আসলে এ সবের একটাই কারন যার নাম এস মান্সনি। এটার এখন যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারছি তাতে যে কোন মানুষের এক মিনিটও লাগবে না মারা যেতে এর ছোঁয়া লাগলে। আর যাই করোতাই করো জ্যাক, ওটার মধ্যে পড়ে যেও না।’
‘ বুঝলাম!’ ওয়েস্ট বললো, ‘এবার জাম্প-স্টোন কন ফিগারেশনটা ব লো?
হ্যাঁ, হ্যাঁ ... বলছি’ বয়স্ক মানুষটি দ্রুত একটা নোট বুক বার করলেন জ্যাকেটের পকেট থেকে, উল্টাতে থাকলেন পাতা।
প্রাচীন ইজিপশিয়ান দুনিয়ায় একটা নকল মেঝেওয়ালা কক্ষ - এর অর্থই ছিল খুব সাধারন একটা বুবি ট্র্যাপ – তার কারন ছিল একে বানানো খুব সোজা এবং অতি মাত্রায় কার্যকরী।   এর সাথেই থাকে একটা গোপন নিরাপদ রাস্তা যা কোন রকমের তরল বা অন্য কোন কিছু দিয়ে ঢাকা থাকে। সেটা চোরাবালি হতে পারে, ফুটন্ত কাদা হতে পারে বা এইরকম কোন ব্যাক্টেরিয়া মেশানো জল।
এ ধরনের নকল মেঝেকে হারানোর একটাই উপায় আর সেটা হলো কোথায় বা কিভাবে নিরাপদ রাস্তাটা ওর তলায় সেট করা হয়েছে   সেটা জানা বা বুঝে নেওয়া।
উইজার্ড নোট বইয়ের সেই পাতাটা পেলেন যা খুঁজছিলেন । ‘এই যে পেয়েছি। সোতার খনি । নুবিয়া। প্রথম দরজা। জলমগ্ন কক্ষ। আহ-হা এই তো! পাঁচ গুন  পাঁচের গ্রিড – লাফিয়ে লাফিয়ে যাওয়ার সুত্র হলো ১-৩-৪-১-৩।’
‘১-৩-৪-১-৩,’ ওয়েস্ট একবার আউড়ে নিলো । ‘আর কোন গর্তটা নিরাপদ? আমাদের হাতে সময় খুব কম, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
নোট বই দেখতে দেখতে উইজার্ড শুধু বললেন, ‘জীবনের  চাবিকাঠি।’
‘ধন্যবাদ। হোরাস, থলি ।’ কথাটা বলা মাত্র ফ্যাল্কনটা ওয়েস্টের বুকে ঝোলানো থলেটার মধ্যে ঢুকে গেল।
ওয়েস্ট এবার তাকাল তার দলের বাকি সঙ্গী দের দিকে। ‘ভালো করে শুনে নাও সবাই । প্রত্যেকে আমার দিকে লক্ষ্য রাখবে। যদি  বন্ধু পঞ্চম ইমহোটেপ তার নিজের সাধারন ভাবনা প্রনালী অনুসরণ করে থাকেন তাহলে, আমি যেই প্রথম ধাপে পা দেবো দারুন কিছু একটা ঘটবে। সবাই কাছে কাছে থাকবে কারন সময় খুব বেশি নেই আর।’
ওয়েস্ট ঘুরে দাঁড়িয়ে ভালো করে দেখে নিলো নিথর শ্যাওলা ঢাকা জলের ভান্ডারটাকে। ঠোঁট কামড়ে ধরলো।  নিলো একটা গভীর শ্বাস।
তারপর লাফ মারলো জলাধারের দিকে, জলের ওপর পার হয়ে বামদিকে তেরছা ভাবে।
বিরাট একটা লাফ – শুধু শুধুই ও এরকম একটা লাফ মারেনি নিশ্চিত।
উইজার্ড একটা ঢোঁক গিলতে গিয়ে থেমে  গেলেন ।
কিন্তু দেখা গেল ওয়েস্ট জলের ভেতর তলিয়ে গেল না মোটেই । দাঁড়িয়ে গেলো সেই সবুজে ঢাকা আপাত কারপেট সদৃশ জলের ওপর – মনে হচ্ছিল ও যেন জলের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
উইজারড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঢোঁকটা গিললেন।
বাকি পথটাও, ওয়েস্টের একইভাবে পেরিয়ে যেতে সমস্যা হবে না
কিন্তু ওদের স্বস্তি বেশিক্ষন স্থায়ী হলোনা মোটেই, জলমগ্ন কক্ষের ফাঁদের কারিগরি সহসাই বিশাল শব্দ সহযোগে যেন জীবন্ত হয়ে গেল।
ওপর থেকে নিচে নেমে আস্তে শুরু করলো ছাদটা
পুরো ঘরের ছাদটা – একটা গোটা পাথর দিয়ে বানানো – নেমে আসছে নিচের দিকে, সবুজ সমতল শ্যাওলার মেঝেকে স্পর্শ করার জন্য।
বোঝাই যাচ্ছে খুব বেশি হলে কুড়ি সেকেন্ডের ভেতরে ওই পাথর নিচে নেমে এসে ঘরের শেষ প্রান্তের  ওই তিনটে পাথরের গর্তের মুখ ঢেকে দেবে ।
সামনে এখন একটাই পথ – ওপরের ছাদ নিচের নকল মেঝেতে এসে ঠেকার আগে লাফিয়ে লাফিয়ে সঠিক জল মধ্যস্থ গ্রিডের পাথরে পা দিয়ে  ওই তিন গর্তের মধ্যে নিরাপদ গর্তটা বেছে নিতে হবে।
ওয়েস্ট চেঁচিয়ে বললো, ‘জলদি জলদি! আমাকে  লক্ষ্য করো। কোথায় কোথায় পা দিচ্ছি!’
ভীষণ শব্দ করে ওপর থেকে নেমে আসছে ছাদ ... ওয়েট লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে লাগে তাক না লাগে তুক এর ভঙ্গিতে , প্রতি বার পায়ের চাপে ছিটকে যাচ্ছে জল। যদি জলে পড়ে খেলা শেষ।
উইজার্ডের বলে দেওয়া সংখ্যা মেনে ওয়েস্ট লাফ দিচ্ছে। ১-৩-৪-১-৩। শ্যাওলার নিচে ঢেকে আছে পাঁচ গুন পাঁচের সারিতে পঁচিশটা ব্লক। যা দেখতে এরকম 

ওয়েস্ট পৌছে গেল কক্ষের একেবারে শেষ প্রান্তের দেওয়ালের কাছে। ওর দলের সাথীরা এগিয়ে আসছে ওর দেখানো পথ ধরে। নেমে আসছে বিশাল পাথরের ছাদ একটু একটু করে ...
তাকালো সামনের দেওয়ালের গায়ে খোদাই করে রাখা তিনটে আয়তাক্ষেত্রাকার গর্তের দিকে। এই ধরনের জিনিষ ওয়েস্ট আগেও দেখেছে। এদের বলা হয় স্পাইক্স হোল।
এদের মধ্যে একটা গর্ত নিরাপদ, যা যেতে সাহায্য করবে পরের ধাপে বা কক্ষে। বাকি দু্টোর ভেতর লুকানো আছে ধারালো বড় বড় ধাতব কাঁটার সারি। ভেতরে কারোর প্রবেশ ঘটলেই ওপর থেকে নেমে এসে গেঁথে ফেলার জন্য সদা প্রস্তুত।
তিনটে দরজার সামনে তিনটে প্রতীক চিহ্ন খোদাই করা আছে – 


সঠিক গর্ত বেছে নিতে হবে । পেছন দিকে ছাদের নেমে আসা অব্যাহত রয়েছে , দলীয় সদস্যদের আর কিছুক্ষনের ভেতরেই ঠেঁসে ধরবে জলের ভেতর।
‘একদম চিন্তার কিছু নেই জ্যাক,’ নিজে নিজেকে বললো। ‘ জীবনের চাবিকাঠি, জীবনের চাবি...কাঠি ...’


কাছাকাছি, তবে সঠিক না । হিয়েরোগ্লিফ অনুসারে এর অর্থ ম্যাজিক বা জাদু । পঞ্চম ইমহোটেপ বিভ্রান্ত করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অনুপ্রবেশকারীদের। উদ্ভ্রান্ত চিন্তাগ্রস্থ অভিযাত্রীরা সেই ভাবে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টাই করবে না উনি বুঝেছিলেন।
‘জ্যাক, কি মনে হচ্ছে?’ বিগ ইয়ার্স আর বাচ্চা মেয়েটা এসে গেছে ওর পেছনে, দাঁড়িয়ে আছে শেষ পাথরের ধাপ্টার ওপর।
 ছাদ এখন অনেক টাই নিচে নেমে এসেছে, অর্ধেক পেরিয়ে গেছে ...নেমেই আসছে ধীরে ধীরে। আর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। ওয়েস্ট কে সঠিক পথ খুঁজে নিতে হবে।
কেউ একজন ওর পেছন থেকে কাতর ভাবে ডেকে উঠলো, ‘ওয়েস্ট...’
মাথা ঠান্ডা রেখে ওয়েস্ট মধ্যের গর্তের নিচের চিহ্ন তার দিকে তাকালো ... 


চিনতে পারলো হিয়েরোগ্লিফ ছবি লিপিমালায় একে বলে আঙ্খ বা লম্বা জীবন । প্রাচীন ইজিপশিয়ান ভাষায় একে “জীবনের চাবিকাঠি” ও বলা হয়ে থাকে।
চিৎকার করে ব ললো, ‘পেয়েছি। এটাই পথ । ’
কিন্তু সেটা প্রমান করার একটাই রাস্তা।
থলের ভেতর থেকে ফ্যাল্কন টাকে বার করে লিলির হাতে দিয়ে বললো, ‘  কিড্ডো, হোরাসের খেয়াল রেখো। বলা যায় না আমার বোঝায় ভুল থাকতেও পারে।’
ঘুরে, নিচু হয়ে লাফ দিয়ে ঢুকে গেল গর্তটার । গড়িয়ে চলে গেল মাঝখানের গর্তটার অভ্যন্তরে। কিছুক্ষনের জন্য চোখটা বন্ধ করে দিয়েছিল। অপেক্ষা করছিল ডজন খানেক তীক্ষ্ণ ধাতব জং ধরা  শলাকা ওপর থেকে  নেমে এসে ঢুকে যাবে ওর শরীরে –
-     কিছুই হলো না।
এর অর্থ ও সঠিক গর্ত বেছে নিতে পেরেছে। একদমই তাই, ওর সামনে এক সংকীর্ণ গোলাকার পথ উন্মুক্ত হয়েছে । অন্ধকার, বেঁকে উঁচু হয়ে উঠে গেছে ওপরের দিকে ।
‘এটাই সঠিক পথ!’ বলেই দ্রুত বেরিয়ে এসে এক এক করে দলের সদস্যদের পথটার মধ্যে ঢুকতে সাহায্যরলো।  
 বিগ ইয়ারস আর লিলি ঢুকল সবার আগে। তার পর উইজার্ড –
জল থেকে আর মাত্র চার ফুট ওপরে পাথরের ছাদটা।
ফাজি আর জো ঢুকে পড়লো।
ওয়েস্টের দলের বাকি দুই সদস্য ঝাঁপ মেরে  ভেতরে চলে যেতেই ওয়েস্ট লাফ দিলো। প্রায় সাথে সাথেই সিলিং এর ছাদ এসে বন্ধ করে দিলো গর্তের মুখ। বুউউউম!! করে একটা শব্দ হল হলের ওপর পাথরের ছাদটা ঠেকতেই।

*ঢালু পথ এবং দ্বিতীয় দরজা*
স্পাইক হোলের ভেতর দিয়ে এসে যে সংকীর্ণ উলম্ব পথটা সেটা ধরে ৫০ ফুট চলার পর পাওয়া গেল একটা লম্বা সুড়ঙ্গ পথ । যা ঢালু হয়ে উঠে গেছে একটা খাড়া কৌনিক স্থানে।  এই পাহাড়ের একেবারে মধ্যস্থল ওটা।
ওয়েস্ট আবার একটা নতুন বাদামী আলো জ্বালালো।
এ এক প্রাচীন ঢালু পথ।
চওড়া মোটামুটি একটা গাড়ী যাওয়ার মতো। ঢালু পথটা অনেকটা একটা সিঁড়ির মতো। যার ভেতর দুদিকের দেওয়ালের থেকে  একটু জায়গা ছেড়ে দুটো পাথরের টানা লাইন চলে গিয়েছে। এই লাইন দুটো একদা প্রাচীন যুগে ব্যবহার হতো রেল লাইনের মতো। এর ওপর দিয়ে তৎকালীন যুগের খনি মজুরেরা বড় বড় কন্টেনারকে গড়িয়ে দিতেন এর ওপর দিয়ে। যাতে ভর্তি থাক তো নানান রকম বজ্য পদার্থ। এদের মাঝখানেই আছে প্রায় শতাধিক পাথরের ধাপ।   
‘ফাজি,’ ওয়েস্ট সুড়ঙ্গটার দিকে তাকিয়ে বললো , ‘ দুরত্ব কেমন?’
ফাজি পি এ কিউ-৪০ লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার তাক করলো অন্ধকারের দিকে।
সাথে সাথেই ওয়েষ্ট নিজের রেডিও চালু করলো, ‘নডি, রিপোর্ট।‘
‘আমেরিকানরা এখনো এখানে এসে পৌছায়নি, হান্টস ম্যান।’ নডির গলা ভেসে এলো। ‘ যদিও ওরা জলদিই আসছে। স্যাটেলাইটের ইমেজ জানান দিচ্ছে ওদের চপারগুলো আর পঞ্চাশ ক্লিক দূরে আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগিয়ে যাও। ’
‘আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব করছি,’ ওয়েস্ট জানালো।
উইজার্ড বললেন, ‘নডিকে জানিয়ে দিতে ভুলো না আমরা রেডিও সংকেত বিচ্ছিন্ন করে দেবো ওয়ারবলারগুলো সেট করার সময়।’
‘শুনতে পেলে?’
‘আমি শুনেছি। নডি আউট।’
ফাজির রেঞ্জ ফাইন্ডার থেকে বিপ শব্দ শোনা গেল। ‘সামনে অন্তত ...১৫০ মিটার ফাঁকা পথ।‘
ওয়েস্ট মুখ বিকৃত করে বললো, ‘বুঝতে পারছি না আমার  কেন জানিনা মনে হচ্ছে সামনের পথ মোটেই ফাঁকা নয়।’
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
ওর ভাবনা একদম সঠিক ছিল।
ঢালু পথটায় সাজানো ছিল একের পর এক ফাঁদ। জলপ্রপাতের ধারা সমৃদ্ধ কৌণিক পাথর  এবং রো অনেক অনেক গোপন গর্ত যাতে পা পড়লেই  গোড়ালি চেপ্টে ভেঙে যাবে। 
কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে আটজনের দল এগিয়ে চললো ফাঁদগুলোর দিকে সতর্ক নজর রেখে। সুড়ঙ্গের অর্ধেক পথ পার হয়ে এসে ওরা পৌছালো দ্বিতীয় দরজার কাছে।
দ্বিতীয় দরজাটা  একেবারে সাধারন । একটা দশ ফুট গভীর ডিওরাইট খনির গর্ত। তার পরে আবার সেই ঢালু সুড়ঙ্গ পথ দেখা যাচ্ছে  । অন্তত আরো পাঁচ গজ ।
খনির গর্তটার নিচের দিকের অংশে চারপাশে কোন দেওয়াল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। দুটো আট ফুট উঁচু প্যাসেজওয়ে দেখা যাচ্ছে মুখ তুলে আছে। সুড়ঙ্গ পথের ডানদিকের কোনা ঘেঁষে নেমে গেছে। কে জানে ওখান দিয়ে আবার কি বেরিয়ে আসবে...
‘ডিওরাইট খনি,’ ওয়েস্ট বললো । ‘ডিওরাইটকে অন্য কিছু দিয়ে কাটা যায় না। কেবলমাত্র ডিওলাইট নামের এক পাথর দিয়ে একে খনন বা খোদাই সম্ভব। এমন কি খনিতে কাজ করার পিট অ্যাক্সও কোনও কাজে লাগে না ।’
‘খুব সাবধানে কাজ করবে,’ উইজার্ড বললেন। ‘ক্যালিম্যাচুসের লেখা অনুসারে এই দরজার সাথেই যোগাযোগ আছে পরবর্তী দরজার। এই দরজাটা পার হলেই আমরা তৃতীয় দরজার ট্র্যাপের কারিগরিকে চালু করে ফেলবো। আর সেজন্যই যতটা সম্ভব  আমাদের কাজটা শেষ করতে হবে। ’
‘সেটা নিয়ে চিন্তা নেই,’ ওয়েস্ট বললো, ‘ আমরা তাড়াতাড়ি কাজের ক্ষেত্রে ভালোই ফল দেখাচ্ছি।’
খনির গর্তটা ওরা পা হলো ঝুলে ঝুলে। ওপরে পাথরের দেওয়ালে নিউম্যাটিক প্রেসার গান দিয়ে ষ্টীলের বিশেষ রক স্ক্রূ লাগিয়ে নেওয়ার পর। প্রত্যেকটা রক স্ক্রূয়ের সাথে লাগানো ছিলো   ধরে থাকার মতো হ্যান্ড গ্রিপ।
গর্তটা পর হয়ে ওয়েস্ট প্রথম নামলো ওদিকের পাথরে। আর সাথে সাথেই বুঝতে পারলো এটাই এক বিরাট মাপের ট্রিগার স্টোন । পা পড়া মাত্র ওটা ঢুকে গেল কয়েক ইঞ্চি জমির ভেতরে –
-     এবং বুউউম! পুরো এলাকাটা কেঁপে উঠলো সকলেই অনুভব করলো দুলুনি। বিরাট মাপের কিছু একটা ওই অন্ধকার সুড়ঙ্গের ওপরে এবং ওদের আগে পড়লো। সাথে সাথেই শোনা গেল ওপর থেকে জোরালো খর খর ঘর ঘর শব্দ ।

‘ধ্যাত্তেরে কি! পরের দরজা !’ ওয়েস্ট চেঁচিয়ে বললো।
‘সেইটা ব্যবহার ক...’ লিলি বললো।
‘ওসব পরে হবে,’ ওয়েস্ট জানালো, ‘এবার আমাদের দৌড়াতে হবে! বিগ ইয়ার্স ওকে তুলে নাও আর আমাকে ফলো করো ।’
*তৃতীয় দরজা*           
ঢালু উঁচু পথটা দিয়ে ওরা ছুটতে শুরু করলো, দুই প্রাচীন  রেলের লাইনের দিকে নজর রেখে।
অতি কষ্টে ওরা   উঠতে থাকলো ওপরের দিকে। একবারই থেমে ছিল যখন দেখতে পায় সামনে একটা পাঁচ ফুট চওড়া খনির গর্ত। অবশ্য অদ্ভুত ভাবে তার ওপর দিয়ে ওই পাথরের রেল লাইন পাতাই ছিল। ওদের অসুবিধা হয়নি, কিছুটা নাচের ভঙ্গীতে দুপাশে পা ছড়িয়ে সাবধানে গর্তটা পার হতে। 
ছুটতে ছুটতেই ওয়েস্ট আর একটা আলো্কদন্ড জ্বালিয়ে ছুঁড়ে দিলো সামনের অন্ধকারে –আর ঠি তখনই ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো এক দুর্বিপাক।
উইজার্ড জানান দিলেন ‘ওটা একটা স্লাইডিং স্টোন! তৃতীয় দরজার রক্ষক!’
একটা বিশাল গ্র্যানাই্ট পাথরের চারকোনা চাঙড় – পুরো রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং সামনেটা পুরোটা তীক্ষ্ণ ধারালো শলাকায় সাজানো – গড়িয়ে এগিয়ে আসছে ঢাল বেয়ে ওদের দিকে!
এটার মানুষ মারার পদ্ধতি ভালোই বোঝা যাচ্ছে। যদি ওটা তোমাকে আগের ছোট গর্তটায় নাও ফেলতে পারে নিশ্চিত ভাবেই ডিওরাইটের গর্তে ফেলে দেবেই ...তারপর ওটাও এসে পড়বে তোমার ওপর। থেঁতলে দেবে তোমাকে  । তার আগে ওখাকার সাইড প্যাসেজওয়ে দিয়েও কিছু বার হয়ে আসতে পারে।
সর্বনাশ! হে ভগবান।
আগত স্লাইডিং স্টোন আর এই আটজনের ঠিক মাঝখানে কোনাকুনি ভাবে ঢালু পথের ওপর একটা দরজা দেখা যাচ্ছে যেটা খুলে দেবে একটা আনুভূমিক গলি পথের মুখ।
তৃতীয় এবং শেষ গেট।
আটজনাই পাথরের মতো থমকে দাঁড়িয়ে আছে।
ওদিকে বাড়ছে ধেয়ে আসা পাথরের গতি- মাধ্যাকর্ষণের নিয়ম মেনে আর দারুন ওজনের চাপে নেমে আসছে ঢাল বেয়ে।
এবার প্রতিযোগিতা কে আগে পৌছাবে দরজার কাছে।
ওয়েস্ট আর বিগ ইয়ার্স লিলিকে নিয়ে পৌঁছে গেল মেঝেতে কাটা দরজাটার কাছে, ঢুকে গেল ভেতরে।
উইজার্ড ঢুকল তারপর, পেছন পেছন ফাজি আর প্রিন্সেস জো।
গ্র্যানাইট পাথরের বিশাল দেহ এসে পৌছালো দরজার গায়ে, একই সাথে দলের বাকি দুই সদস্যও ।
‘স্ট্রেচ! পুহ ! জলদি!’ চেঁচিয়ে উঠলো ওয়েস্ট।
প্রথম জন –এক লম্বা রোগা মানুষ, পরিচিতি স্ট্রেচ নামে – মারলো ঝাঁপ। ন্যানো সেকেন্ড বাকি আছে এই রকম মুহূর্তে ঢুকে গেল ভেতরে। সাথে সাথেই দরজা ঢেকে গেল  দানবাকৃতি পাথরে।
শেষের জন পারলো না।
দলের মধ্যে সবচেয়ে ধীর গতির এবং বিরাট চেহারার অধিকারী। গায়ের রঙ তামাটে বাদামী। আরব শেখদের মতো লম্বা দাড়ি মুখে। নিজের দেশে ওর সংকেত নাম হোঁতকা সালাদিন, কিন্তু এখানে ওর নতুন নাম ছিল –
‘পুহ বিয়ার! না আ আ আ!!!’ ছোট্ট মেয়েটা চিৎকার করে উঠলো।
পাথরটা পার হয়ে গেল দরজাটা, শেষ মুহূর্তের একটা প্রানপণ চেষ্টা করে ছিল পুহ। সেটা সফল হলো না । ওথেকেই গেল ঢালু পথে, ওই শয়তানী পাথরের আড়ালে।
‘নাহ!!’ বলে একটা আওয়াজ করে গড়িয়ে যাওয়া পাথরটার তলায় সজোরে এক ঘুষি মারলো ওয়েস্ট। যেটা ঠেলে নিয়ে চলে গেল অসহায় পুহকে।
উইজার্ড বিড়বিড় করে বললেন, ‘ওহ।। বেচারী জাহির ...’
কিছুটা সময় কারো মুখ দিয়ে কোনও কথা বার হল না।
এক হতভম্বিত স্তব্ধতা ঘিরে ধরলো বাকি সাত সদস্যকে। লিলি কাঁদছিল ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে।
তারপরেই ওয়েস্টের চোখ চকচক করে উঠলো – কিছু একটা ওর মনের ভেতর জেগে উঠেছে।
‘ কাম অন, এভরি ওয়ান। আমাদের একটা কাজ আছে হাতে করার জন্য। আর তার জন্য আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমারা সবাই জানি এই কাজ মোটেই সহজ কিছু নয় । নরকে যাত্রার এই তো সবে শুরু –’
ঘুরে দাঁড়িয়ে তাকালো সামনে আনুভূমিক বারান্দাটার দিকে। দূরে শেষপ্রান্তে একটা মই রাখা ছে দেওয়ালের গায়ে। সেটার মাথা ওপরে ছাদে একটা গোল ম্যান হোলের মত  গর্তের সাথে ঠেকানো।
সাদা আলো এসে পড়ছে ওপর থেকে ওই গোল কাটা অংশ দিয়ে।
ইলেকট্রিক লাইট ।
মানুষের বানানো আলো জ্বলছে।
‘ – এবার মনে হচ্ছে সামনে পরিস্থিতি আরো খারাপ । কারন এবার আমরা ইউরোপিয়ানদের মুখোমুখী হতে চলেছি ।’
* প্রধান  গুহা*
ওয়েস্ট ম্যানহোলের কাটা অংশটা দিয়ে নিজের মাথাটা সামান্য তুলে তাকালো। নজরে এলো এক অবিশ্বাস্য অসাধারন দৃশ্য।
মাটি থেকে ৪০০ ফুট উচ্চতায়  এই গুহার  অবস্থান। একেবারে পাহাড়ের পেটের মাঝখানে । এক অতিকায় গুহা ।
প্রাচীন পদ্ধতিতে খনন করা একটি গুহা। প্রায় তিন কোনা আকৃতি। ভুমিগত দিক চওড়া। ওপরে উঁচুতে ফিয়ে একটা বিন্দুতে বিলীন হয়েছে ছাদ।
ওয়েস্ট যেখানটায় আছে সেটা এই গুহার একেবারে অন্তিম দক্ষিন প্রান্ত। বিপরীত দিকে একশো গজ দূরে  উত্তর প্রান্তে ইউরোপীয়ানরা দাঁড়িয়ে আছে। সাথে ফ্লাড লাইট আর দলবল... এবং একটা অর্ধ নিমিত ক্রেন।
সন্দেহর কোন অবকাশই নেই , এই গুহার সবচেয়ে বিস্ময় জনক ব্যাপার হলো এর সামনের দেওয়ালের মতো এক অতিকায় স্থাপত্য । কালছে কাঠকয়লার মতো রঙের। ডিওরাইট ।
দেওয়ালটার উচ্চতা গুহার ছাদের সমান ।  মিশে গেছে গিয়ে অন্ধকারে । যেখানে ইউরোপীয়ানদের ফ্লাড লাইটের আলোও পৌছাচ্ছে না। একটা মহাকায় কালো দেওয়াল।
বিশেষ গুরুত্ব  দিয়ে পদ্ধতিগতভাবে  প্রাচীন ইজিপশিয়ানরা এই ডিওরাইটের চাঙড়টাকে কেটে বার করেছিল – দেওয়ালের গা থেকে বেরিয়ে আছে চারটে সংকীর্ণ কার্নিশ । যার ফলে ওটাকে দেখে মনে হচ্ছে চার ভাগে বিভক্ত করা একটা তিরিশ তলা ভবন । পুরো দেওয়ালের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত কার্নিশগুলোর বিস্তার। কোনো ক্রমে দুটো মানুষ পাশাপাশি দাঁড়াতে পারে এমন চওড়া।
যদি এই ব্যাপারটাকে তেমন বিপদজনক কিছু না মনে হয়, তাহলে বলা যায় পঞ্চম ইমহোটেপ এই অভূতপূর্ব জিনিষটাতে তার সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং মাস্টারপিস ভাবনার প্রতিরক্ষা প্রনালী প্রনয়ন করে ছিলেন।
সোজা কথায় উনি এটার চারদিকে নানান রকম ট্র্যাপ বা ফাঁদ সেট করে দেন।
সঙ্কীর্ণ কার্নিশগুলো ক্রমাগত আগু পিছু হয়ে চলেছে । আর সেই নড়তে থাকা অংশ পৌছাচ্ছে পরের ধাপে যাওয়ার জন্য বানানো মই এর কাছে।
প্রথম এবং দ্বিতীয় স্তরের দেওয়াল-মইগুলোর ভেতর একটাই পার্থক্য – সেটা হলো, দ্বিতীয় স্তরের মইগুলোর অবস্থান একেবারে গুহার মাঝখানে। উত্তর এবং দক্ষিন প্রান্তের প্রবেশপথের একবারে মাঝখানে। মনে হচ্ছে পঞ্চম ইমহোটেপ উৎসাহ দিয়েছেন একই সময়ে এই গুহায়  প্রবেশকারী দুই প্রতিদ্বন্দী দল দুই প্রান্ত থেকে ওটায় আহরন করার জন্য প্রতিযোগিতা করুক।
যেহেতু ওই সঙ্কীর্ণ কার্নিশগুলো ডিওরাইট দিয়ে বানানো , ফলে ওতে কোন গ্র্যাপ্লিং হুক লাগান যাবে না – কোন ভাবেই ওরা ওই পাথরকে ভেদ করতে পারবে না। একবারে ওপরের স্তরে পৌছানোর জন্য  , একটা একটা করে স্তর বেয়ে  উঠতে হবে এবং সব স্তরের ফাঁদও পার হতে হবে।
না জানে কত শত ফাঁদ বানানো আছে ওখানে।
ছোট ছোট ধনুকাকৃতি দুর্গের মতো জিনিষ এখানে ওখানে লেগে আছে বিশাল দেওয়ালটার গায়ে। ছুয়ে আছে কার্নিশকে, ঢেকে রেখেছে ফাঁদ গুলোকে।
শতাধিক বাস্কেট বলের মাপের গর্ত করা আছে গোটা দেওয়ালে , ভগবানই জানেন কি ধরনের মারন তরল রাখা আছে ওগুলোর ভেতরে। যেখানে গর্ত করা সম্ভব হয়নি সেখানে লম্বা পাথরের নল সাপের মতো এঁকে বেঁকে নেমে এসেছে নিচের দিকে । দেখতে অনেকটা উল্টানো চিমনীর মতো। তৈরী হয়েই আছে অযাচিত আগন্তুকের ওপরে বিষাক্ত তরল উদ্গার করার জন্য।
গর্তগুলোকে দেখতে দেখতে বাতাসে এক ধরনের তেলের গন্ধ পেলো ওয়েস্ট – যা ওকে একটা ধারনা দিলো কি বেরিয়ে আসতে পারে ওই সব গর্তগুলো থেকে।
অবশেষে  ছিল আসল ঝামেলাটা।
পাথরের গায়ের ক্ষত চিহ্ন বা খাঁজ বা ফাটল
একটা অসমতল এবড়ো খেবড়ো ফাটলের মতো। যা নেমে এসেছে একেবারে ওপর থেকে নিচে।   দ্বিখন্ডিত করেছে পুরো দেওয়ালটাকে । ভেদ করে এসেছে কার্নিশগুলোকে। ফালটাকে দেখতে লাগছে একটা শুষ্ক নদীখাতের মতো। শুধু এটার অবস্থান উলম্ব, আনুভূমিক নয়।
গুহার একেবারে ওপরে, গভীরতা খুব সামান্য, যা নিচে ভিত্তির কাছে এসে হয়ে গেছে যথেষ্ট চওড়া। নিচে এসে ওটা দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে।
একটা জলপ্রপাত ওই এক উচ্চতা থেকে নেমে আসছে। পাহড়ের কোন অজানা উঁচু স্থান থেকে এর উৎপত্তি ।
চারটের ভেতরে যে কোন একটা কার্নিশ দিয়ে ওই ফাটল পার হতে হলে ফুটখানেক চওড়া একটা ছোট্ট কারনিসে সাবধানে পা দিয়ে যেতে হবে অথবা পার হতে হবে লাফিয়ে – উভয়ক্ষেত্রেই মুখোমুখী হতে হবে  কোনো এক দেওয়ালের গর্তের অথবা ওই সাপের মতো নলের।
ফাটলের ভেতর দিয়ে আসা জলপ্রপাত দেওয়ালটার ভিত্তিতে জন্ম দিয়েছে একটা চওড়া জলাশয়ের – যে জলাশয় আপাতত ওয়েস্ট ও তার দলকে আলাদা করে রেখেছে   ইউরোপীয়ানদের  থেকে। জলাশয়টা হলো আবাসস্থল অনন্ত ষাটটা নীলনদের কুমীরের । যেগুলো এখন নানান ভঙ্গীমায় ঘুমাচ্ছে, বা হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে।
আর ওই বিশাল স্থাপত্যটার ওপর ... একটা ছোট্ট পাথরের দরজা আছে। যে দরজা দিয়ে যাওয়া যায় এই খনির সাথে যুক্ত গল্পগাথার গুপ্তধনের কাছে –
সেটা একটা মস্তক...এক প্রাচীন আশ্চর্য মস্তক ।

ম্যান হোলের ওপর দিয়ে উঁকি মেরে ওয়েস্ট দেখেই চলেছিলো ইউরোপীয়ান আর তাদের অর্ধ নির্মিত ক্রেন টাকে।
দেখতে পাচ্ছিলো ওই কানে ডজন খানেক মানুষ দৈত্যাকার ক্রেন টার আরো অনেক টুকরো টাকরার এনে রাখলো ভার প্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারের সামনে। যিনি সামনে দাঁড়িয়ে ওগুলোকে  জোড়া দেওয়ার কাজ পরিচালনা করছেন।
এই সব কাজের ফাঁকেই ওয়েস্ট দেখতে পেলো ইউরোপীয়ান অভিযাত্রী দলটির নেতাকে । পাদ্রী , ডেল পিয়েরো। দাঁড়িয়ে আছেন একেবারে সোজা হয়ে , হাত দুটো শরীরের পেছনে মুষ্ঠি বদ্ধ। ৬৮ বছর বয়সেও ডেল পিয়েরোর মাথায় পাতলা কালো চুল, ফ্যাকশে ভুতুড়ে চোখ, মুখে বলিরেখার গভীর দাগ। আর তার সাথে বছরের পর বছর ধরে মানুষের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকার সুবিশেষ ভঙ্গীমা।
ডেল পিয়েরোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছোট্ট অবয়ব ওয়েস্ট কে বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করলো।
একটা ছোট্ট ছেলে।
কালো চুল আরতার থেকেও কালো চোখ দুটো।
ওয়েস্টের চোখ বিস্ফারিত হ লো। এই ছেলে টাকে ও আগেও দেখেছে। দশ বছর আগে ...
ছেলেটা  দাঁড়িয়ে আছে ডেল পিয়েরোর পাশে একই ভাবে হাত দুটো কে পেছনের দিকে মুষ্ঠি বদ্ধ করে। যেন বৃদ্ধ পাদ্রীকে নকল করছে।
বয়স লিলির মতোই হওয়া উচিত।
না, ওয়েস্ট মনে মনে নিজেকে বল লো, ছেলেটা আর লিলি সমান বয়সের।
ওয়েস্টের চোখ  আবার গেল ক্রেনের দিকে।
দারুন বুদ্ধিমানের মতো পরিকল্পনা।
একবার পুরোটা বানানো হয়ে গেলেই, ক্রেন টা ইউরোপিয়ানদের উঠিয়ে দেবে প্রথম ধাপের কার্নিশে। তারপর দ্বিতীয় ধাপে
এর ফলে ওদের কে ফাঁদ গুলোর সম্মুখীন হতে হবে না । সাথে সাথেই এই গুহার সবচেয়ে খতরনাক ফাঁদ থেকেও ওদের বাঁচিয়ে দেবে।
দ্যা মাস্টার স্নেয়ার বা চরম ফাঁদ।
ওয়েস্ট এটার কথা জেনেছে ক্যালিম্যাচুসের পাণ্ডুলিপি পড়ে – ওর মনে হয় যে  ডেল পিয়েরো এবং ইউরোপিয়ানদের কাছে ওই পান্ডুলিপির একটা কপি আছে। যেটা আসলে ভ্যাটিক্যানের সম্পত্তি। সেটাতেই বলা আছে , ওদের কে ওই টার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে । জানতে হবে ওটার বিষয়ে অন্যান্য পাণ্ডুলিপি থেকে যেখানে পঞ্চম ইম হোটেপের কথা লা হয়েছে।
অন্যান্য ইম হোটেপ দের নিজস্ব বিশেষ ফাঁদ ছিল পরিচিতি স্বরুপ। পঞ্চম ইম হোটেপ বানিয়েছিলেন এই মাস্টার স্নেয়ার বা চরম ফাঁদ। এমন ফাঁদ যা আগে থেকেই এই সম্পূর্ণ কারিগরির অন্তঃস্থিত ভল্টের ফাঁদকে চালু করে দেয়। যার ফলে একে বারে শেষ ধাপে পৌছানোর পর শুরু হয় একই সাথেফাঁদেদের গোলকধাঁধা ও সময়ের সাথে লড়াই। বা উইজার্ড যেমন বলেন – “বুবি ট্র্যাপের মোকাবিলা করা এক জিনিষ , কিন্তু তার সাথে যদি সময়ের খেলা শুরু হয়ে যায় তাহলে তার বিপদের মাত্রা কয়েকশো গুন বেড়ে যায়।”
ওখানে একথাও বলা ছিল যে , মাস্টার স্নেয়ার মোটেই সে ভাবে বানানো নয় যে সমস্ত ট্র্যাপ সিস্টেম টাকে খারাপ করে দেবে । যেমনটা ইমহোটেপ দের অন্য  অন্যান্য ফাঁদ গুলোতে হয় । ওটা নিজেই নিজেকে পুনরায় রিসেট করে নিতে সক্ষম।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাস্টার স্নেয়ার এর মোকাবিলা করার অর্থ ডু-অর-ডাই । যদি পার করতে পারো তবে তোমার  ভাগ্যে জুটবে গুপ্তধন । না পারলে মৃত্যু।
ক্যালিম্যাচুসের পাণ্ডুলিপি জানিয়ে রেখেছে মাস্টার স্নেয়ার চালু হওয়ার ট্রিগার স্টোন এর অবস্থান প্রথম স্তরের এক বারে মধ্যে, ভিত্তিতে যেখানে ম ই এর গোঁড়ায়।
উইজার্ড মাথা তুল লো, ম্যানহোলের গর্তে,  ওয়েস্টের পাশ দিয়ে । ‘হুম ম, ক্রেন। ওটার সাহায্যে ডেল পিয়েরো আর ওর দল বল মাস্টার স্নেয়ার চালু হয়ে যাওয়াটা আঁটকে দেবে। তার ফলে ওরা অনেকটা বেশী সময় পেয়ে যাবে কাজটা করার জন্য । ভালো বুদ্ধি।’
‘না এটা মোটেই ভালো বুদ্ধি নয়,’ ওয়েস্ট বল লো ভাবলেশ হীন ভাবে, ‘এটা নিয়মের বিরোধিতা করা।’
‘নিয়ম?’
‘হ্যাঁ, নিয়ম। এটা একটা প্রতিযোগিতা। যা বিগত ৪০০০ বছর ধরে চলে আসছে। ইজিপশিয়ান স্থাপত্য আর সমাধি চোরদের ভেতর। আর এই প্রতি যোগিতার একটা সাম্মানিক নীতি আছে –আমরা আক্রমণ করবো, পঞ্চম ইমহোটেপ তার প্রতিরোধ করবেন। কিন্তু এখানে প্রথম ধাপ এবং ট্রিগার স্টোন স্পর্শ না করে ডেল পিয়েরো চিটিং করছে। ও আসলে ওর দুর্বলতাই প্রকাশ করছে এর মাধ্যমে।’
‘আর সেটা কি শুনি?’
‘ওর মনে বিশ্বাস নেই যে ও মাস্টার স্নেয়ারকে হারাতে পারবে।’ ওয়েস্ট হাস লো। ‘কিন্তু আমরা পারবো।’
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
ওয়েস্ট নেমে এলো ম ই টা থেকে, দলের বাকি ছয় সদস্যের কাছে।
‘চলো তাহলে কাজ শুরু করে দেওয়া যাক। এর জন্যেই আমরা ট্রেনিং নিয়েছি। লিপফ্রগ ফর্মে শন, নিজের নিজের জায়গা মনে করে নাও। লিলি তুমি থাকবে মধ্যে আমার সাথে। ফাজি তুমি থাকবে সামনে প্রথম বাধা সামলানোর জন্য। তার পর বিগ ইয়ার্স, জো আর স্ট্রেচ। উইজার্ড তোমাকে নিতে হবে পুহ বিয়ারের জায়গাটা। ওর দায়িত্ব ছিল পঞ্চম বাধা কভার করার। আমি মাস্টার স্নেয়ার চালু করবো ।’
সবাই মাথা নাড়লো ইতিবাচক ভাবে। শুরু হল খেলা।
ওয়েস্ট ঘুরলো উইজারডের দিকে। ‘ প্রফেসর , ওয়ার বলার গুলো রেডি আছে তো? কারন আমরা কাজ শুরু করলেই ইউরোপিয়ানদের তরফ থেকে গুলি বর্ষণ শুরু হয়ে যাবে।’
‘একদম তৈরী হান্টস ম্যান,’ উইজার্ড উত্তর দিলেন, উঁচু করে দেখালেন একটা বড় বন্দুকের মতো জিনিষ। যেটা দেখতে এম-২০৩ গ্রেনেড লঞ্চারের মতো। ‘আমার চার সেকেন্ড মতো সময় দরকার এটাকে কাজ করছে দেখানর জন্য।’
‘আমি তিনের বেশী দিতে পারবো না।’
সকলে সামনের দিকে হাত বাড়ালো, ছুঁলো একে ওপরের হাত এক সাথে। দলীয় ঐক্যের প্রতীক। একসাথে বল লো, ‘কামাতে!’ এবং এগিয়ে চললো আসল কাজে। সবার আগে উইজার্ড উঠে গেল ম ই বেয়ে, অভিযানের মূল পর্বের সুচনা করতে...

ম্যানহোলের গর্তটা দিয়ে মাথা উঁচিয়ে উইজার্ড বাগিয়ে ধর লো গ্রেনেড লঞ্চার । তিনবার ফায়ার করলো, তিনবারই তিনটে টায়ার ফাটার মতো জোরালো আওয়াজ হ লো।
ফ্যাটাম! ফ্যাটাম!! ফ্যাটাম!!!
গ্রেনেড লঞ্চার টার ভেতর থেকে গোল   গ্রেনেডের মতো দেখতে যেগুলো বেরিয়ে গেল  ওগুলো আদপেই গ্রেনেড নয় –মোটা এবং গোল এবং রুপো, ওগুলো উড়ে গেল বিশাল গুহাটার তিনটে কোনায়। ছোট্ট লাল আলোর সংকেত দেখাতে দেখাতে।
ইউরোপিয়ান রা প্রথম আওয়াজ শোনার পর দ্বিতীয় আওয়াজ পার হয়ে তৃতীয় আওয়াজ ব হওয়ার সময় দেখতে পেলো উইজার্ডকে।
এক ফ্রেঞ্চ স্নাইপার ক্রেনের কেবিনের ভেতর থেকে রাইফেল তাক করলো উইজার্ডের কপাল ল ক্ষ্য করে। একটা টিপের মতো আলো ফুটে উঠলো উইজার্ডের কপালে। চাপ দিলো ট্রিগারে।
ফ্রেঞ্চ ম্যানের রাওফেল থেকে নির্গত বুলেট টা ত তক্ষনা ৎ নেমে গেল নিচের দিকে – গিয়ে লাগলো এক দুর্ভাগা কুমীরের মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে মরে গেল ওটা।
এটাই ওয়ার বলার এর কামাল।
ওই যে তিনটে গোল রুপোর বল তিনদিকে ছুঁড়ে দিয়েছে উইজার্ড ওগুলোর পরিচিতি ক্লোজড অ্যাট মোস্ফ রিক ফিল্ড ডিস্টেবিলাইজারস[ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক] । যদিও ওটার চলতি নাম ওয়ার বলার।
এটা উইজার্ডের তৈরি করা এক দুর্লভ সম রাস্ত্র। ওয়ার বলার গুলো একটা এমন মাত্রার চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরী করে যা যেকোনো অতি দ্রুত গতির ধাতব বস্তুর আকাশ পথে ধেয়ে চলার পথে বাধার সৃষ্টি করে – বিশেষ করে বুলেটের ক্ষেত্রে – এর ফলে এক গান ফায়ার ফ্রি জোন এর সৃষ্টি হয়।
উইজার্ড ইলেক্ট্রো ম্যাগ নেটিক অ্যাপ্লিকেশনের জগতে একজন খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ। এই বৈপ্লবিক অস্ত্র টির প্রযুক্তি উনি ১৯৮৮ সালে রেথিয়ন কে ২৫মিলিয়ন পাউন্ডে বেচে দেন । যার সিংহভাগ অবশ্য দিয়ে দিতে হয় নিউ ঈয়্রকের এক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিকে। ওরা ওর গবেষনার খরচ জুগিয়েছিল । নিজের জন্য থাকে মাত্র ২ মিলিয়ন ডলার। এর পর থেকে উইজার্ড প্রতিজ্ঞা করেন ভবিষ্যতে আর কোন দিন কোনও ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট দের সাথে কাজ করবেন না।
মজার ব্যাপার হ লো, ইউ এস আর্মি – সব সময়েই যারা এটার বিষয়ে ভালো ভাবে জানতো – রেথিয়ন কে অর্ডার দেয় ওয়ার বলার সিস্টেম নিয়ে নতুন করে কাজ করতে । ১৫ বছর ধরে সেটা নিয়ে কাজ ক্রেও নানান সমস্যা থেকেই যায়।। আজ অবধি এই ব্যবস্থাকে ওরা চলু করতেই পারেনি।
স্বাভাবিক ভাবেই, উইজার্ড – যে একজন কানাডিয়ান, মোটেই আমেরিকান নন – কিছু প্রোটো টাইপ নিজের জন্য বানিয়ে রেখে দেন, তার মধ্যে তিনটে এখন ব্যবহার করলেন।
এবারে সাত জনেই দ্রুত উঠে এলো ম্যানহোল টার মুখ দিয়ে। একের প র এক। এগিয়ে চলতে শুরু করলো । ল ক্ষ্য একেবারে কাছের ম ই যেটা প্রথম ধাপের পথে নিয়ে যাবে।  
যেহেতু লাইনের মাঝখানে দৌড়াচ্ছে ওয়েস্ট সেহেতু হোরাস কে ছেড়ে দিলো। আর সাথে সাথেই ছোট্ট পেরিগ্রীন ফ্যাল্কন টা উড়ে উঠে গেল দলটার মাথার ওপরে।
একেবারে সামনে জামাইকান ফাজি – নাচের ভঙ্গীতে এগিয়ে গেল একটা সরু পাথরের হাঁটা পথের দিকে, যেটার অবস্থান গুহার ডান দিকের দেওয়ালের সামনে গায়ে, বেরিয়ে আছে সামনের দিকে। রাস্তাটার নিচের কানার কাছেই একদল কুমীর বসে আছে।
ফাজির হাতে একটা এক্স আকৃতির হাল্কা টাইটেনিয়ামের   দন্ড ।
রাস্তাটা  অর্ধেক যাওয়ার পর হঠাত শেষ হয়েছে একটা শূন্য স্থানে। আর সেই শুন্যের মাঝে একটা পাথরের চার কোনা ধাপ যা বেরিয়ে আছে দেওয়ালের গা থেকে, ইঞ্চি খানেক এগিয়ে কুমীরে ভরা জায়গাটার দিকে।
পাথরের দেওয়ালের গায়ে ঠিক পাথরটার ওপরেই একটা অন্ধকার গর্ত । ফাঁকটা এক মিটার মতো চওড়া। ।
ফাজি একটুও সময় নষ্ট করলো না।
এক লাফে চলে গেল পাথরের ধাপটার ওপর –
-সঙ্গেই সঙ্গেই ওর কানে এলো  গর্ত টার ভেতর থেকে জলোচ্ছ্বাসের আওয়াজ। সাথেই মৃদু মন্দ্র কুমীরের গর্জন –
- হাতে ধরা টাইটেনিয়াম এক্স দন্ড টাকে বসিয়ে দিলো গর্তের মুখটায় এবং ওর গায়ে লাগানো একটা বাটন টিপে দিলো।
ঠোয়াআআক!
এক্স আকৃতির দন্ড টা র মাথা গুলো থেকে এক ঝটকায় বেরিয়ে এলো ধাতব অংশ। আঁটকে বসে গেল গর্তটার গোলাকার মুখে ।
এক সেকেন্ড যেতে না যেতেই ...
উদ্দাম জলের ধারা বেরিয়ে এলো ওই গর্তের মুখ দিয়ে। সাথেই ভেসে এলো বিশাল আকৃতি র কুমীর হাঁ করে। ধাক্কা খেলো এক্স আকৃতির দন্ডটার সাথে। 
কুমীরটা বিকট গর্জন করে উঠলো। কিন্তু এই মুহূর্তে ওর চোয়াল আটকে গেছে ওই বিশেষ দন্ডটার ফাঁকে। ওটা পেরিয়ে আসার উপায় নেই ওর।  জলের স্রোত বয়ে আসছে দ্রুত বেগে। অবশ্য তার ধাক্কা ফাজিকে টলাতে পারছে না ।
‘ট্র্যাপ ওয়ান! ক্লিয়ার!’ জানিয়ে দিলো ।
বাকিরা ইতি মধ্যে ওর কাছে এসে গেছে। ফাজি ন জর রাখলো গর্তে আটকে থাকা কুমীরটার দিকে বাকিরা ওকে পার হয়ে এগিয়ে গেল নাচের ভঙ্গীতে।
এবার বিগ ইয়ার্স এগিয়ে গেল সামনে। পরের ফাঁদ টা অকেজো করার দায়িত্ব ওর। ফাজিকে পেরিয়ে বাকিরা এগিয়ে চলেছে ওর পিছু পিছু। ল ক্ষ্য ম ই... ভিত্তিভুমিতে যেটা সেট করা আছে বিরাট পাথরের স্থাপত্য টার গায়ে । 

ইউরোপিয়ান রা অসহায়ের মতো অবাক হয়ে  দেখে যাচ্ছিলো বিপরীত দিকে সাতজন এগিয়ে যাচ্ছে অতিকায় দেওয়ালের ভিত্তির দিকে।
ওদের ভেতর থেকে একা ফ্রান্সিস ক ডেল পিয়েরো দেখছিল ওয়েস্ট কে -  সেই দেখায় বরফ শীতলতা – দেখছিল লিলিকে একহাতে ধরে ওয়েস্ট ছুটে আসছে।
‘ বাঃ বাঃ বাঃ , দারুন,’ দেল পিয়েরো বল লো। ‘ক্যাপ্টেন ওয়েস্ট , কাকে নিয়ে এসেছো তুমি...?’

সাত জন পৌঁছে গেল দেও য়াল টার একেবারে নিচে।
কালো রাতের মতো অন্ধকার এক বিশাল ভবন সদৃশ দেওয়াল টা এখন ওদের সামনে ।
বিগ ইয়ার্স ইতিমধ্যে তার দায়িত্বে থাকা কাজ  করে ফেলেছে।  হাত ঠেকলেই  কেটে যাবে  এমন দুটো ফাঁদ    অকেজো করে দিয়েছে পাথরে বানানো ম ই টায়  অর্ধেক পথে  ওঠার সময় ।
এবার প্রিন্সেস জো এগিয়ে গেল তার ভাগের কাজটা করার জন্য। দলের পুরুষদের সাথে পাল্লা দেওয়ার মতোই ওর অ্যাথলেটিক দক্ষতা। বয়স ৩০ , কাঁধ পর্যন্ত ঝুলছে ব্লন্ড চুল, মুখে ছোপ ছোপ দাগ। সাথে ঝক ঝকে নীল চোখ যা কেবল মাত্র আইরিশ মেয়েদেরই থাকে।
প্রথম স্তরে উঠে লাফিয়ে উঠে দুটো এরোস লের ক্যান  এর তরল ঢেলে দিলো দেওয়ালের দুটো গর্তের ভেতরে। সঙ্গে সঙ্গে ঘন ফোমের মতো ফেনায় ভর্তি হয়ে গেল গর্ত দুটো । ভেতরে যে শয়তান ই থাক না কেন আপাতত সে বন্দী ফোমের জালে।
কাজটা করতে না করতেই ওকে পেরিয়ে এগিয়ে গেল দলের সপ্তম সদস্য। লম্বা, রোগা স্ট্রেচ । এক সময় এর পরিচিতি ছিল  আরচার নামে। লম্বাটে হাড় বার করা মুখাবয়ব। এসেছে ইজ্রায়েলের স্নাইপার ইউনিট,  সায়ারেত মাতকাল থেকে।
স্ট্রেচ গিয়ে দাঁড়ালো পাথরের মাঝখানের নদীখাতের মতো ফাটলটার ডান দিকে। ওই দুরত্ব থেকে দাঁড়িয়ে ও একটা বড় মাপের ফাঁদ কে চালু করে দিলো – একটা ব্রোঞ্জের খাঁচা নেমে এলো ওই ফাটল টার ভেতর দিয়ে। আছড়ে পড়লো নিচের জলাশয়ে।
ওই সময়ে কেউ যদি ওইসামনের ফাটলের ফাঁক আর কার্নিশের শূন্যতার ফাঁকে অবস্থিত ফুট খানেক চওড়া কার্নিশ টার ওপর দিয়ে হেঁটে যেতো তাহলেই হয়েছিল।  ওই খাঁচা হয় তাকে নিয়ে নামিয়ে দিতো কুমীরের মুখে অথবা ওই খাঁচার ওজনের চাপে সে ডুবে মর তো।

এবার ওয়েস্ট আর লিলি এগিয়ে গেল সামনে। পার হ লো ফাটলের সংলগ্ন ছোট্ট কার্নিশ টা ।পার হয়ে গেল প্রথম স্তরের মধ্যের অংশ।
ওখানেই ওরা দেখতে পেল মাস্টার স্নেয়ার চালু করার ট্রিগার স্টোন টা। দ্বিতীয় স্তরে ওঠার দেওয়াল ম ই এর গোঁড়ায়। পা ওঠালো ওয়েস্ট –
‘ক্যাপ্টেন ওয়েস্ট!’
ওয়েস্ট পা তোলা অবস্থাতেই থমকে দাঁড়ালো । ঘুরে তাকালো।
অর্ধ নির্মিত ক্রেন টার নিচে বোকার মতো   হাতে বন্দুক নিয়ে   দাঁড়িয়ে ডেল পিয়েরো আর তার দল বল ।তাকিয়ে আছে  ওয়েস্টের দিকে। 
‘ক্যাপ্টেন ওয়েস্ট, প্লিজ, ওই কাজটা করার আগে আর একবার ভেবে দেখার অনুরোধ করছি!’ ডেল পিয়েরো বল লো। ‘ওটা করা খুব দরকার? ওই ট্রিগার টা চাপ দিয়ে তুমি কিছু সময়ের জন্য যা ঘটতে চলেছে সেটা কে আটকে রাখতে পারবে কেবল।  যদি আসল জিনিষটা পেয়েও যাও , আমরা তোমাকে খুন করবো যখন তুমি এই পাহাড় ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবে। আর যদি নাও পাও । মাস্টার স্নেয়ার তার কাজ শেষ করার পর আমার দলের লোকেরা ওখানে পৌঁছে যাবে এবং কলোসাসের মস্তক আর ওটার ভেতরে থাকা ক্যাপ স্টোন টা নেওয়ার জন্য। অর্থাৎ যেভাবেই হোক আসল জিনিষ আমরাই পাবো।’
ওয়েস্ট চোখ কুঁচকে তাকা লো।
কো নো কথা বল লো না।
ডেল পিয়েরো এবার উইজার্ড কে উদ্দেশ্য করে বল লো, ‘ম্যাক্স, ম্যাক্স... আমার বন্ধু, আমার স হকর্মী। প্লিজ, তোমার তরুণ বন্ধুদের বোঝাও।’
উইজার্ড মাথা নেড়ে বল লেন, ‘ অনেক দিন আগেই তোমার আর চলার পথ আলাদা হয়ে গেছে, ফ্রান্সিস কো। তুমি যা ভালো বোঝো করো। আমাদের কাজ আমরা করি। জ্যাক ট্রিগার টেপো।’
ওয়েস্ট দেল পিয়েরোর দিকে থেকে ন জর সরিয়ে নিচে তাকালো।
‘উইথ প্লেজার !’
পায়ের নিচে থাকা ট্রিগার স্টোনে চাও দিলো। চালু হয়ে গেল মাস্টার স্নেয়ার।
ইমহোটেপ এর মাস্টার স্নেয়ারের চমক শুরু হয়ে গেল সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়ে।
গুহার চারদিকের শতাধিক গর্ত, অতিকায় দেওয়াল ও তার আশে পাশা থাকা
  নানান ফুটো দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসতে শুরু করলো কালো কাঁচা খনিজ তেল ।
অতিকায় দেওয়ালের অনেক গুলো গর্ত থেকে শুরু হল তেলের ধারা প্রপাত, চাটে স্তরেই । পাশের দেওয়াল থেকে কালো তরল গিয়ে পড়তে শুরু করলো ২০০ ফুট নিচে কুমীর ভর্তি জলাশয়ে।
কুমীরগুলো পাগলের মতো এদিকে সেদিকে পালাতে থাকলো, ওই তরলের হাত থেকে বাঁচার জন্য। ঢুকে গেল আসে পাশের গর্তে বা গিয়ে জমা হল দূরে জলাশয়ের পাড়ে।
অতিকায় দেওয়াল তার গায়ের নানান স্থান ছোট খাটো ফাটল দিয়েও ছিটকে বেরিয়ে আসছিলো তেলের ফোয়ারা।
সব চেয়ে খারাপ টা এবার শুরু হ লো। অতিকায় দেওয়ালের মধ্যের যে বিশাল ফাটল সেটা দিয়ে বয়ে এলো সেই কালো তেলের নদী। সজোরে আছড়ে পড়লো নিচের জলাশয়ে।
সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেল টিক টিক শব্দ।
অসংখ্য পাথুরে যন্ত্রাংশ যাদের অবস্থান ওই সব গর্ত গুলোর ভেতরে তারা চলতে শুরু করলো।
অভূতপূর্ব যন্ত্রাদি যাদের বানানো হয়েছিল চকমকি পাথর দিয়ে।
অত্যাশ্চর্য যন্ত্রাংশ যাদের বানানোই হয়েছিল আগুনের ফুলকি সৃষ্টি করার জন্য ...
ঠিক তক্ষুনি, একটা ফুলকি বাঁদিকের দেওয়ালের ওপর থেকে উড়ে এসে তার এক ইঞ্চি নিচ থেকে প্রবাহিত হওয়া খনিজ তেলে পড়লো।
ফলাফল হ লো পিলে চমকানো।
তেলের যে ধারা প্রপাত বয়ে আসছিল সেটা ততক্ষনাৎ পরিণত হ লো আগুনের ধারা প্রপাতে...
... সেটা গিয়ে পড়লো নিচের তেলে ঢাকা জলাশয়ে। দাঊ দাউ করে জ্বলে উঠলো লেলিহান অগ্নি শিখা।
পুরো জলাশয়ে শুরু হল আগুনের নাচ।
হলুদ আলোয় আলোকিত হল গোটা গুহার ভেতরটা ।
কুমীর গুলো নিজেদের বাঁচার জন্য শুরু করে দিলো ঝটাপটি ।
এক করে আরো অনেক তেল প্রপাতে লেগে গেল আগুন – তার কোনোটা পাশের দেওয়ালে, কোনও অতিকায় দেওয়ালে । একসময় আগুন ছুঁলো ফাটলের নদীটাকেও – এই মুহূর্তে বিশাল গুহার ভেতরটা প্রায় নরক । চারিদিকে শুধু আগুন আর আগুন।
কালো ধোঁয়া উঠছে চারদিক থেকে । যে ধোঁয়া বাইরে যাওয়ার কোন পথ নেই।
এটাই ইমহোটেপের চুড়ান্ত মাস্টার স্ট্রোক।
যদি আগুন বা ফাঁদে তুমি না মরো তবে নোংরা ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস নিতে না পেরে মারা যাবে ই। বিশেষ করে একে বারে উপরে যেখানে আছে গুপ্ত ধন। 

 “বোকার হদ্দ সব!’ ডেল পিয়েরো রাগে চেঁচিয়ে উঠলেন। তারপর দলের লোকদের বল লেন , ‘আরে তোমরা সব দাঁড়িয়ে আছো কেন! ক্রেনটা তাড়াতাড়ি বানিয়ে ফেলো! ওরা দ্বিতীয় স্তরে ওঠার আগে আমি ওটা কমপ্লিট চাই!’

ওয়েস্টের দলের গতি এখন বেড়ে গেছে আগের থেকে। একে ওপরের ওপর দিয়ে হাতের চাপ দিয়ে ব্যাঙের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ নরকের ভেতরে নির্দিষ্ট পথে।
দেওয়ালের ওপরের দিকে উঠে চলেছে ওরা। প্রথম স্তর থেকে দ্বিতীয় স্তরের পথে। এক এক করে সবাই পার হ লো ফাটল টাকে স্রোতের তারতম্য ল ক্ষ্য করে। পাশ কাটিয়ে গেল দেওয়ালের গর্ত গুলোকে... লাফিয়ে পার হ লো কার্নিশের মাঝে থাকা শূন্যস্থান ... সঙ্কীর্ণ চলার পথের মাঝে থাকা  ধনু কাকৃতির ছোট্ট দুর্গের ভেতরের ফাঁদ গুলোকে এড়িয়ে গেল সন্তর্পণে ।
দেওয়ালের গা দিয়ে ছিটকে ছিটকে আসছে আগুনের ফোঁটা – ফোয়ারার মতো তেলের স্রোতের সাথে – কিন্তু সেই আগুন থেক ওদের কে বাঁচিয়ে দিচ্ছে ওদের মাথার ফায়ারম্যান হেলমেট । তেল পড়ে গড়িয়ে চলে যাচ্ছে পেছনে।
ইতি মধ্যে ওয়েস্টের দল  পার হ লো ইউরোপিয়ানদের অর্ধ নির্মিত ক্রেনের উচ্চতা। আপাতত ওরা আজ এই প্রতিযোগিতায় প্রথম বারের জন্য এগিয়ে গেল ।
প্রতিযোগিতায় ওরা এখন সবার সামনে।
তৃতীয় স্তরে পৌঁছানোর দেওয়াল ম ই দ্বিতীয় স্তরের ভিত্তিতে লাগানো আছে । ওরা একটু ডান দিক ঘেঁসে এগিয়ে চল লো ওটার দিকে । কয়েকটা নলা কৃতি ফাঁদকে কাঁচ কলা দেখিয়ে । এসে পৌছালো ভয়ানক মধ্য ফাটক লের কাছে। ওয়েস্ট একটা প্রেসার গান দিয়ে আগুন জ্বলতে থাকা তৈলপ্রবাহেরকাছে নিচে, কার্নিশ টায়    ছুঁড়ে মারলো অ্যালুমিনিয়ামের  প্রসারিত হতে পারে এমন একটা পাত।
পাতটা থেকে আরো কিছু পাত খুলে গেল পর পর  গুটানো হাতপাখার মতো। আড়াল করলো বয়ে আসা তেলের প্রবাহ কে। এক এক করে অতি সরু কার্নিশ এ পা দিয়ে ওরা পার হয়ে গেল এলাকা টা।
এবার আরো একটা দেওয়াল ম ই। যা নিয়ে যাবে চতুর্থ স্তরে – গুপ্তধনের আগের স্তর – স হসাই ওপর থেকে ছটা ১০ টনের পাথরের চারকোণা খন্ড অতিকায় দেওয়ালের ওপরের অন্ধকার থেকে নিচের দিকে নেমে আসতে শুরু করলো ।
চতুর্থ স্তরের  ডিওরাইটের কার্নিশে পৌছাতেই সেই  বিশাল চারকোনা পাথর এসে ধাক্কা মারলো দেওয়ালে। কাঁপিয়ে দিলো দেওয়াল টাকে।
‘ম ই থেকে নেমে যাও! ওয়েস্ট চেঁচিয়ে বল লো। ‘ওটার ওপরে থাকলে তোমরা পাথরের হাত থেকে –’
অনেক দেরী হয়ে গেছে ত ত ক্ষনে।
ওয়েস্টের সতর্ক বানি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে একটা পাথর এসে ভয়ঙ্কর শব্দ করে আছড়ে পড়লো ম ই এর শেষ প্রান্তে থাকা  সদস্যর ওপর । ফাজি । পেশী ব হুল জামাইকান ছিটকে গেল অতিকায় দেওয়াল থেকে । নিচে ।
পড়লো গিয়ে তৃতীয় স্তরে – কোনক্রমে গড়িয়ে গিয়ে   বাঁচ লো তেল ছেটানো ফাঁদের মুখ [ দেখে মনে হচ্ছিল ওটা যেন ফ্লেমথ্রোয়ার] থেকে । একই ভাবে গড়িয়ে গিয়ে ইঞ্চি খানেক দূরে এসে ধাক্কা মারা আর একটা পাথরের ঘা খাওয়া থেকেও বাঁচাতে পারলো নিজেকে ।
আর এভাবে গড়াতে গিয়ে ফাজি পিছলে গেল কার্নিশ থেকে। শেষ মুহূর্তে হাত বাড়িয়ে ধরে ফেললো আঙুল দিয়ে কার্নিশের কোনাটা । এখান থেকে দ্বিতীয় স্তরের কার্নিশের দুরত্ব ৩০ ফুট।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
শেষ দেওয়াল ম ই টা সেট করা আছে একেবারে ফাটলের মধ্যে । দুপাশ দিয়ে ঝরে পড়ছে বীভৎস কালো তেলের ধারাপ্রপাত।
এবার উইজার্ড আবার একটা অ্যালুমিনিয়াম হাত পাখা সদৃশ পাত সেট করলেন সরু কার্নিশ টার ওপর। তারপর যেটা ওয়েস্ট আর লিলি কে সুযগ দিলেন ওকে পার হয়ে যাওয়ার
‘মনে রেখো,’ উইজার্ড বল লেন, ‘যদি কোন কারনে ভেতরের জিনিষটা না নিতে পারো, তাহলে অন্তত ওর গায়ে যা লেখা আছে সেটা নোট করে নিও। ঠিক আছে?’
‘হ্যাঁ, বুঝলাম, ‘ ওয়েস্ট লিলির দিকে তাকালো। ‘এখান থেকে কেবল মাত্র তোমার আর আমার যাত্রা শুরু ।’
ওরা সরু কার্নিশ পার হয়ে রুক্ষ পাথরে খোদাই করা দেওয়াল ম ই টার কাছে এসে দাঁড়ালো ।
ওটার ওপর দিয়েও আগুনের কনা ছিটকে এসে ওদের হেলমেটে পড়ছে।
প্রতি এক থেকে তিন সেকেন্ডের মাথায় ম ই টার ভেতরে আবির্ভাব হচ্ছে একটা গর্তের। ওয়েস্ট ওটার ভেতরে দ্রুত ছড়িয়ে  যাওয়া ফোম ঢেলে দিলো ক্যান থেকে। আপাতত ওটা নির্বিষ।
উইজার্ড চেঁচিয়ে বল লো, ‘জ্যাক! ওদিকে তাকাও! আরো পাথরের চাঙড় নেমে আসছে!’
ওয়েস্ট ওপরের দিকে তাকালো, ‘নিকুচি করে...!’
ওপর থেকে এক দৈত্যাকার বোল্ডার তেল আর আগুন গায়ে মেখে সোজা ম ই টার ওপর ওর আর লিলির মাথা ল ক্ষ্য করে নেমে আসছে।
‘এবার অন্তত ওইটা...’ লিলি বল লো।
‘ধন্যবাদ লিলি। ধ ন্যবাদ পাওনা রইলো।’
ওয়েস্ট দ্রুত একটা অদ্ভুত দর্শন পিস্তল বার করে আনলো বেল্ট থেকে – দেখতে ফ্লেয়ার গানের মতো, একটা অতিরিক্ত বড় মাপের ব্যারেল লাগানো । এম -২২৫ হ্যান্ড হেল্ড গ্রেনেড লঞ্চার।
বিন্দু মাত্র চিন্তা না করে ওপর থেকে ধেয়ে আসা পাথরটার দিকে তাক করে টিপে দিলো ট্রিগার।
গ্রেনেড ছুটে গেল ওপরের দিকে ।
বোল্ডার নেমে আসছে নিচে।
মুখোমুখী ধাক্কা এবং – বুউউউউউম! –পাথরটা আতশবাজির তারার মতো ফেটে গিয়ে চারদিকে ছিটকে গেল পাথরের কুচি আর ধুলো । চলে গেল লিলি আর ওয়েস্টের আশেপাশে।
দুপাশের আগুন ঝরা তেলের হাত থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে ম ই এর বাকি অংশটা সহজেই উঠে গেল লিলি আর ওয়েস্ট। উঠে দাঁড়ালো সেই ফাটলের ওপরে । অতিকায় দেওয়ালের মাথায়। সব ফাঁদ পার হয়ে এসে।
এবার সামনে সেই অস ম বাহুর দরজা । অবস্থান একেবারে আগুন জ্বলতে থাকা গুহার শীর্ষে ।
‘ওকে , এবার কিড্ডো,’ ওয়েস্ট বল লো। ‘মনে আছে তো আমরা যা যা অভ্যাস করেছি সেগুলো?’
লিলির খুব পছন্দের এই কিড্ডো ডাকটা ।
‘আমার সব মনে আছে স্যার।’
একে ওপরের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝুঁকালো এবং প্রবেশ করলো পবিত্র উপাসনা কক্ষে যা আসলে পঞ্চম ইমহোটেপের নির্মিত পদে পদে মৃত্যু ছড়ানো গোলক ধাঁধা।
০০০০০০০০


* অন্তঃস্থিত গুহা*
ফাঁদ এখনো আছে ।
একটা চওড়া নিচু ছাদের   কক্ষে ওরা ঢুকেছে । মেঝে থেকে খুব বেশি হলে দু মিটার উঁচুতে ছাদটা  ...আর সেটা নেমে আসছে নিচে।
পুরো ঘর টা ৩০ মিটার চওড়া... গোটা ছাদটাই নেমে আসছে! আবার একটা গোটা পাথর দিয়ে বানানো ছাদ । নেমে আসছে বিরাট হাইড্রলিকের মতো অন্ধকার ঘরটায়।
তাকানোর সুযোগ পেলে লিলিরা  দেখতে পেতো ক ক্ষটির দেওয়াল জুড়ে অনেক গ্রেট পিরামিডের ছবি আঁকা –প্রায় সব গুলোতেই সূর্যের একটি আলোক রশ্মির পিরামিডকে ভেদ করে চলে যাচ্ছে তার ছবি তুলে ধরেছে ।
কিন্তু লিলি আর ওয়েস্টের চোখ আকর্ষিত হল দূরে যেটা রাখা আছে এই প্রবেশ ক ক্ষে সেই জিনিষটা।
চওড়া ক ক্ষটায় দূরে উঁ চু ছাদের তলায় রাখা আছে একটা বিশাল কায় কাদা মাখা মস্তক।
মস্তক টা দৈত্যাকার, অন্তত ১৬ ফুট উঁচু। ওয়েস্টের চেয়ে তিন গুন বেশী উচ্চতায়।
এই সেই অতিকায় ব্রোঞ্জ মূর্তির মাথা ।
ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্রোঞ্জের স্ট্যাচু।
এটাই ক লোসাস অফ রোডসের মস্তক ।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
এই ক্রমশ নেমে আসা নিচু ছাদের ক ক্ষ থেকে ওই ব্রোঞ্জের মস্তক কে আলাদা করে রেখেছে নিথর খনিজ  তেল জমা  একটা  স্থান। বলা যেতে পারে ঘিরে রেখেছে ক লোসাসের মাথা টাকে ।
তেলের ভেতর থেকে বিশাল দেবতার মতো মাথাটা উঁচু হয়ে ঠিক যেন আদিম কাদার ভেতর থেকে কোন জন্তুর মতো । কোনো পবিত্র বেদী, কোনও আনুষ্ঠানিক স্থান বা সেরকম কোনও কিছুর ওপরেই রাখা হয়নি ওটাকে।
তেলের পুকুরের ওপর ঝুলছে আর এক সমস্যা। অনেক গুলো জ্বলন্ত মশাল । সেই একই চকমকি পাথর কারিগরির সহায়তায় ওগুলো জ্বলে উঠেছে। এই প্রবেশ ক ক্ষটির নিচু ছাদ যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে আটকানো আছে ব্র্যাকেট দিয়ে – অর্থাৎ খুব শীঘ্র ওগুলো তেলের পুকুরে ঠেকবে ... ব্যাস লেগে যাবে আগুন ...ক লোসাসের মাথার কাছে পৌছানর আর কোন উপায়ই থাকবে না।
‘সময় হয়ে গেছে দৌড়ানোর,’ ওয়েস্ট বল লো।
‘দেখা যাক কে জিততে পারে স্যার,’ লিলি উত্তর দিলো।
শুরু হল দৌড়।
সোজা সামনের দিকে , নেমে আস্তে থাকা ছাদের নিচ দিয়ে।
‘ক্যালিম্যাচুসের কথা যদি ভুল না হয় ওখান কার গভীরতা খুব একটা বেশি না,’ ওয়েস্ট জানালো।
লাফ দিলো তেলের পুকুরে – সাথে সাথেই ডুবে গেল কোমর পর্যন্ত ঘন চটচটে তেলের ভেতর।
‘লাফ দাও,’ লিলিকে বললো। লাফ দিতেই ওকে ধরে নিলো ওয়েস্ট ।
লিলিকে কাঁধে চাপিয়ে ওয়েস্ট এগিয়ে চল লো তেল ঠেলে – ওদিকে ঝুলে থাকা মশাল গুলো এসে নেমে আসছে তেলের কাছে , প্রবেশ ক ক্ষের ছাদের নেমে আসার সাথে সাথে।
দ্রুত কমে আসতে থাকা সময়ের মাঝেই জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র  ক লোসাস অফ রোডসের মস্তকের কয়েক গজ আগে থমকে দাঁড়ালো ।
ওর সামনে খাড়া হয়ে আছে মাথাটা, কয়েক শতকের কাদা গায়ে মেখে।
একেক টা চোখ লিলির মতো বড়।
নাকটা মাপে ওয়েস্টের সমান।
সোনালী মুকুট কাদার প্রলেপ থাকা সত্বেও ঝিক মিক করছে। তিনটে সোনালী লকেট চেন বদ্ধ হয়ে ঝুলছে  ঘাড়ে থেকে।
তিনটে লকেট ।
একেকটা মাপে মোটা এন্সাইক্লোপিডিয়ার মতো । আকৃতিতে ট্রাপেজোডিয়াল । প্রত্যেক টা লকেটের একেবারে ঠিক মাথায় মধ্যে খানে লাগান আছে একটা করে গোল হীরের মতো স্ফটিক।
প্রত্যেক লকেটের সামনের ঢালু পাশ টায় খুব সুক্ষ ভাবে খোদাই করা আছে কিছু চিহ্ন : দেখতে কিউনি ফরমের মতো কিন্তু অজানা ভাষা।
ওটা ছিল একটা অজানা প্রাচীন ভাষা – এক বিপদ জনক  ভাষা – এমন এক ভাষা যা কেবল মাত্র কয়েকজন বিশেষ ভাবে বাছাই করা মানুষ জানতো।
ওয়েস্ট সোনালী ল কেট গুলোর দিকে তাকালো।
ওর মধ্যে একটা সোনার ক্যাপস্টোনের দ্বিতীয় টুকরো। সেই ছোট্ট পিরামিড যা এক সময় গিজার গ্রেট পিরামিডের মাথার ওপর বসানো ছিল।
সাতটি আনুভূমিক টু করো দিয়ে বানানো, সেই গোল্ডেন ক্যাপ স্টোন বা ক্ষুদ্র পিরামিড স ম্ভবত সবচেয়ে দামি জিনিষ প্রত্ন ত ত্বের ইতিহাসে। আর গত মাস থেকে সেটা পরিণত হয়েছে সর্ব সময়ের সবচেয়ে বড় পৃথিবী ব্যাপী ট্রেজার হান্টে । শুরু হয়েছে সবচেয়ে বড় গুপ্তধন দখলের লড়াই । এখানে যে টু ক রোটা আছে সেটা থাকে একেবারে ওপরের হাল্কা প্রথম টুকরোর ঠিক নিচে। আর এভাবেই এক এক করে সেট হয়ে তৈরী হয় পিরামিড আকৃতির সেই ক্যাপস্টোন ।
তিনটে ল কেট।
ওর মধ্যে একটা আসল।
সঠিকটা বেছে নিতে হবে । ওয়েস্ট জানে এটা একটা ডু-অর-ডাই পরিস্থিতি। যার সবতাই নির্ভর করছে লিলির ওপর।
আর এক পা এগিয়ে যাওয়ার অর্থ একেবারে অন্তিম ফাঁদের ট্রিগার টীপে দেওয়া।
‘ওকে, কিড্ডো। তৈরী তো , নিজের কাজটা করার জন্য? আমি অবশ্য মনে করি তুমি একেবারে রেডি।’
‘আমি প্রস্তুত ,’ লিলি গম্ভীর ভাবে বল লো।
বলা মাত্র , ওয়েস্ট এগিয়ে গেল সামনের দিকে এবং –
-     ঝখাং ! –
-     এক অজানা প্রযুক্তির যন্ত্র কারিগরি তেলের পুকুরের তলায় ওয়েস্টের পা দুটোকে চেপে ধর লো। আটকে দিলো কোন আদিম যুগের পাথরের খাঁজে।
‘লিলি, এবার,’ ওয়েস্ট বল লো। ‘যাও । বেছে নাও । আমার থেকে দূরে থাকো , বলা যায় না, যদি তোমার ভুল হয় ।’
ওয়েস্টের কাঁধের ওপর থেকে লাফ দিয়ে লিলি চলে গেল আধখানা ডুবে থাকা মূর্তিটার গলার কাছে। আর সাথে সাথেই –
ঝুহু উ উস!
একটা ১০ টনের আগুন জ্বলতে থাকা পাথর  নেমে এলো ওয়েস্টের মাথার ওপর ...ঝুলতে থাকলো চেন বাঁধা অবস্থায় !
পঞ্চম ইমহোটেপের চুড়ান্ত ফাঁদ এই পাথরের খনিতে, যা পরিচিত ‘রিওয়ার্ড ট্র্যাপ’ নামে । এটা সুযোগ দেয় দ্বিতীয় টুক রো টাকে পাওয়ার ক্ষেত্রে, অবশ্য যদি সঠিক টাকে চিনতে পারে তবেই।
সঠিক ল কেট বেছে নাও, তাহলে আগুন জ্বলতে থাকা পাথর যেখানে ঝুলছে সেখানেই থেকে যাবে এবং তেলের ভেতর ধরে রাখা পাথরের হাত ছেড়ে দেবে  পা । আর ভুল বাছলেই পাথর এসে পড়বে মাথার ওপর , তেলে লেগে যাবে আগুন।
লিলি অদ্ভুত লেখা গুলোর দিকে তাকালো এক এক করে । একে বারে অদ্ভুত কিম্ভুত দেখতে ওগুলো। ছোট্ট মেয়েটা তুলনা করে দেখছিল প্রাচীন দুর্বোধ্য সংকেত গুলোকে।
ওয়েস্ট তাকিয়ে ছিল লিলির দিকে , উৎকণ্ঠিত, উদ্বিগ্ন ... এবং চিন্তিত।
‘তুমি পড়তে পারছো ও গুলো?’
‘আমি যেধ রনের লিপি পাঠ করেছি তার তুলনায় এগুলো একেবারেই আলাদা ...’ হতাশা ব্যঞ্জক উত্তর এলো।
‘কি বল ছো তুমি -?’ ওয়েস্ট স্তম্ভিত ।
স হসাই লিলির চোখ চক চক করে উঠলো। বুঝতে পারার আনন্দে। ‘আহ হা! বুঝতে পেরেছি । কিছু কিছু অক্ষর উ ল ম্ব করে লেখা আছে...’
চোখ কুঁচকে তাকালো ... মন দিয়ে। আগুনের আলোয় চক চক করছে ল কেট গুলো। ভালো করে প্রাচীন সংকেত গুলো দেখতে থাকলো লিলি ।
ওয়েস্টের মনে হচ্ছিল লিলি যেন ধ্যান মগ্ন হয়ে গেছে।
আগুন জ্বলা পাথর নেমে এলো একটু । ওয়েস্ট চমকে তাকালো ওপরের দিকে।
 সেই মশাল লাগানো ছাদ ও নেমে আসছে আস্তে আস্তে করে।
ওদিক থেকে মূল গুহার ধোঁয়া আস্তে আস্তে এসে ঢুকছে এই ক ক্ষে।
ওয়েস্ট একটা কাঁপুনি অনুভব করছিল প্রবেশ কক্ষটির ফাঁক ছোট হয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে। ছোট হয়ে যাচ্ছে আরো ছোট ...
লিলি এখনো ধ্যানস্থ, প্রাচীন লিপি পড়ে চলেছে মন দিয়ে।
‘লিলি ...’
‘আর একটু ...’
‘আমাদের হাতে আর একটুও সময় নেই সোনা ।’ তাকালো পেছনের দিকে ধোঁয়া ভর্তি বন্ধ হয়ে যেতে থাকা ক ক্ষটার দিকে। ধোঁয়া এখন অনেক বেড়ে গেছে।
হ ঠা ৎ ই একটা মশাল যা আঁতকে ছিল নেমে আসতে  থাকা ছাদের কোনায় খসে গেল ...
... পড়ছে ।
যেখানে অসহায় ওয়েস্ট দাঁড়িয়ে আছে তেলের মধ্যে !
‘হে ভগবান , না –’ শেষ শ্বাস টা নিলো ওয়েস্ট।
মশাল টা পড়ছে , নিচে তেলের মধ্যে –
-     ইঞ্চি ছয়েক দূর তেল থেকে, একটা কিছু ধেয়ে এলো শূন্যে , ধর লো মশাল টাকে নিচে পড়ার আগেই, ছোঁ মেরে । অবয়ব টা হোরাসের, ওয়েস্টের ছোট্ট ফ্যাল্কন।
ছোট্ট পাখিটা দুই থাবায় মশাল  টাকে ধরে ফেলে দিলো নেমে আস্তে থাকা ছাদের ক ক্ষের মেঝেতে।
ওয়েস্ট বল লো, ‘এর পরের বার এরকম শেষ মুহূর্তে ওটাকে ধরার চেষ্টা করি স না বাপু, বুঝলি!’
পাখিটা এসে বসলো ওয়েস্টের কাঁধে। ওর দিকে এমন ভাবে তাকালো মনে হল বল ছে -- তোমারই বা কি দরকার বাপু এই সব অদ্ভুতুড়ে বোকা বোকা কাজ কর্ম করার ।
ইতিমধ্যে লিলির চোখ আবার চিক মিক করে উঠেছে, তাকিয়ে দেখছে তিনটে লকেটের মধ্যে একেবারে ডান দিকেরটাকে -
নিচু স্বরে পড়লো –
‘ সাবধান। প্রায়শ্চিত্ত ।
রা’য়ের নির্মম ধ্বংসকারী আসছে ,
এবার সবাই কে কাঁদতে হবে হতাশার সাথে,
যদিনা পবিত্র শব্দ গুলো উচ্চারন করা যায়।’
পাশে উল ম্ব করে লেখা “রামা রথ।”
লিলি চোখ কয়েকবার চোখ পিট পিট করে ধাতস্থ হ লো।
‘এটাই সেটা !’ ও বল লো, এগিয়ে গেল ল কেট টার দিকে যেটা র লেখা  ও পড়লো।
ওয়েস্ট বল লো, ‘সিওর তো ...’
সে কথা শোনার আগেই দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ক লসাসের গলা থেকে লকেট টাকে হাতে তুলে নিলো লিলি ।
ঝুলতে থাকা পাথরটা নড়ে উঠলো।
ওয়েস্ট ঝট করে ওপর দিকে তাকালো, অপেক্ষা শেষ মুহূর্তের।
কিন্তু, না ঝুলন্ত পাথর ওখানেই ঝুলে থেকে গেল, পড়লো না এবং – ঝকাং! – তেলে ডুবে পাথরের খাঁজে আটকে থাকা পা টাও মুক্ত হয়ে গেল ।
লিলি সঠিক ল কেট টাই বেছে নিয়েছে।
এক লাফে ফিরে এলো ওয়েস্টের দুহাতের মধ্যে। নিজে বুকের কাছে দুহাতে ধরে আছে সোনার ভারী ট্রাপেজয়েড ল কেট টাকে, সদ্যোজাত বাচ্চার মতো করে। এক গাল মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে দিলো ওয়েস্টের দিকে, বিজয়ীর হাসি –
‘উফ কি অদ্ভুত অনুভুতি।’
‘পুরো ব্যাপারটাও অদ্ভুত,’ ওয়েস্ত বল লো। ‘দা্রুন কাজ করেছিস কিড্ডো। চল, এবার এই ঝামেলাটা শেষ করি ।’
*বাইরের পথে যাত্রা*
এবার ফেরার পালা।
কোমর পর্যন্ত ঘন তেল ঠেলে গায়ের সব শক্তি দিয়ে এগিয়ে চল লো ওয়েস্ট। ওদিকে মশাল ঝোলানো ছাদ ধীরে ধীরে নেমেই চলেছে।
৭০ সেন্টিমিটার মত বাকি আছে আর ছাদটার নেমে আসা,  ওরা যখন   প্রবেশ কক্ষের মেঝে টায় আবার পৌছালো।
সামনে ঘন শ্বাসরুদ্ধ কারী ধোঁয়া ।
লিলি বুকে হেঁটে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। হোরাস বেরিয়ে গেল পাশ দিয়ে।
গোটা গায়ে তেল মাখা অবস্থায় ওয়েস্টের গতি সবচেয়ে কম। জোরে চাপ দিতে গেলেও পিছলে যাচ্ছে তেলে ভেজা বুটজোড়া। প্রায় শেষপ্রান্তে পৌছে গেছে... সিলিং আর মেঝের ফাঁক এখন খুবই কম। শরীরের শেষ শক্তিটা দিয়ে পেটের এক ধাক্কায় নিজেকে ঠেলে দিলো সামনের দিকে। হাঁচড় পাচ্য করে শেষ চার মিটার এগিয়ে গেল। বেরিয়ে এলো বাইরে আর সাথে সাথেই বিশাল এক ধ মাআআস করে শব্দ করে মেঝেটায় এসে ঠেক লো ছাদটা। বন্ধ হয়ে গেল ক লোসাসের কক্ষে ঢোকার দরজা।
চতুর্থ স্তরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন উইজার্ড।
‘জলদি! জলদি! ডেল পিয়েরোর লোকেরা ক্রেনটা প্রায় বানিয়ে ফেলেছে – শীঘ্রই ওরা দ্বিতীয় স্তরে এসে যাবে।’
*চতুর্থ স্তর*
চতুর্থ স্তরেই অপেক্ষা করছিল দলের বাকি সদস্যরা – বিগ ইয়ার্স, স্ট্রেচ এবং প্রিন্সেস জো । নিচে নামার পথে তিনটে ফাঁদের দিকে ন জ র রেখে।
ওদের কাছে পৌছে  ওয়েস্ট বিগ ইয়ার্সের হাতে দিলো সোনালী ট্র্যাপিজয়েডটা। সাথে সাথেই ওটাকে নিজের ব্যাকপ্যাকে সুরক্ষিত জায়গায় রেখে দিলো পেশি বহুল মানুষটা।
আবার সেই ব্যাঙ লাফান বা লিপ ফ্রগ পদ্ধতিতে ওরা নামতে শুরু করলো নিচের দিকে। ম ই দিয়ে নামলো পিছলে, নেচে পাশ কাটালো বুবি ট্র্যাপে ভরা কার্নিশ। এড়িয়ে গেল অগ্নি স্রোত বইতে থাকা ফাটল এবং আগুনের ফোয়ারা গুলোকে । ধোঁয়ায় ভরা গুহার ওপর থেকে একের পর এক ক্রমাগত পরেই চলেছে বড় বড় পাথরের টুকরো। কেঁপে কেঁপে উঠছে অতিকায় দেওয়াল টা তার আঘাতে।
*তৃতীয় স্তর*
এই স্তরটায় নেমে এসে ওয়েস্ট ফাজিকে উঠিয়ে নিয়ে  বল লো, ‘কাম অন, ওল্ড ফ্রেন্ড। এবার ফেরার পালা।’
নাক মুখ চেপে ধরে ধোঁয়া থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে ঢালু কার্নিশের পথ ধরে ওরা ছুটে চল লো ।
ওদিকে ইউরোপিয়ান দের ক্রেন বানানো প্রায় কমপ্লিট। সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে অস্ত্র ধারী সেনার দল। শেষ টুকরোটা লাগানো হলেই ওরা উঠতে শুরু করবে। সোজা সুজি উঠে যাবে দ্বিতীয় স্তরি- ওয়েস্ট আর তার দলের মোকাবিলা করার জন্য।
শেষ টুকরো টা সেট করা হয়ে গেল।
শুরু হল ইউরোপিয়ান দের এগোনো।
*দ্বিতীয় স্তর*
এখন দলের সামনে ওয়েস্ট। বিড়ালের মতো লাফিয়ে নামলো দ্বিতীয় স্তরে, ফাজির আগে –
-     প্রথমেই মুখোমুখী হল এক ক্রসবো ধারী ফ রাসী প্যারা ট্রুপারের। প্রথম জন যে বেরুয়ে এলো ক্রেন থেকে।
দক্ষ বন্দুক ধারীর মতো একটা গ্লক পিস্তল দ্রুত নিজের থাই হোল স্টার থেকে বার করে পয়েন্ত ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে চালিয়ে দিলো ফরাসী ট্রুপার টার দিকে।
কোনো এক বিশেষ কারনে পিস্তলের বুলেট উইজার্ডের ওয়ার বলার কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সোজা গিয়ে ধাক্কা মারলো ফরাসী টার বুকে। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিক সেখানেই পড়ে গেল কাতা কলাগাছের মতো।
একটুও রক্ত বের হ লো না।
মোদ্দা কথা  হ লো ফরাসী টা মরেই নি।
রাবার বুলেট ছিল ওটা।
ওয়েস্ট আর এক বার ফায়ার করলো – দাঙ্গা লাগলে পুলিস যে বুলেট ব্যব হার করে এগুলো সেরকম – ক্রেনের কাছে থাকা দ্বিতীয় ফরাসী প্যারা ট্রুপারটাকে ল ক্ষ্য করে। ঠিক যে মুহূর্তে ক্রস বোয়ের ট্রিগার টেপে ওই ট্রুপার।
 ওয়েস্ট নিচু হয়ে যেতেই মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল তীরটা। ওর বুলেট কিন্তু ল ক্ষ্যভেদ করলো আর একবার। যার ধাক্কায় ট্রুপারটা পড়ে গেল ক্রেন থেকে। সোজা কুমীরে ভরা জলে।
একটা আর্ত চিতকার...কিছু ঝটা প টি ... রক্তের লাল রঙ মিশে গেল জলে।
‘মুভ!’ ওয়েস্ট দলের উদ্দেশ্যে হাঁক দিলো। ‘ওরা রাবারের গুলি ব্যবহার করে তার আগেই আমাদের কেটে পড়তে হবে। ’
ওয়েস্টের টিমের সকলেই ক্রেন টার পাশ দিয়ে যাওয়ার স ময় ফায়ার করলো রাবার বুলেট।  আরো ডজন দুয়েক ট্রুপার ছিটকে গেল এদিকে ওদিকে।
  ইতিমধ্যে ক্রেনে উঠে আস তে শুরু করে ছে আরো জনা পনেরো ফ্রেঞ্চ প্যারাট্রুপার... তার আগেই ওয়েস্টরা নামতে শুরু করলো  প্রথম স্তরে –
*প্রথম স্তর*
- ওয়েস্ট রা দেখতে পেলো নিচেও ইউরোপিয়ান রা প্রস্তুতি নিচ্ছে ওদের আটকানোর।
একে বারে নিচে মেঝেতে, জার্মান আর্মি ইঞ্জিনিয়ার দের একটা দল টেম্পোরারী একটা ব্রিজ বানিয়ে ফেলেছে কুমীর ভর্তি লেকের ওপর দিয়ে – ওদের ল ক্ষ্য সেই ম্যানহোল টার কাছে যাওয়া যেটা দিয়ে ওয়েস্ট আর তার দল বল উঠে এসেছিল।
‘চলো! চলো! জলদি!’ ওয়েস্ট চিৎকার করলো।
আগুন জ্বলতে থাকা গুহাটার চেহারা এখন ভয়ানক – চারদিকে ধোঁয়া আগুন আর একের পর এক পড়ত থাকা বিশাল বিশাল বোল্ডারের নরক কুন্ড – সেখানে এখন শোনা যাচ্ছে ক্রশবো আর রাবার বুলেট ছোঁড়ার শব্দ।
অ্যালুমিনিয়াম ক্রস বোএর তীর গুলোর সামান্যই গতিপথ বদলাচ্ছে ওয়ার বলারের কারনে – উড়ে যাচ্ছে পাগলের মতো, কিন্তু প্রথম কয়েক মিটার একেবারে সোজা ধেয়ে যাচ্ছে।
প্রথম স্তর এর মাঝা মাঝি ধরে ছুটে চলেছে ওয়েস্টের দল। এখন ওদের প্রতিযোগিতা ব্রিজ বিল্ডার দের সাথে।
বিগ ইয়ার্স কোলে তুলে নিয়েছে লিলিকে। ওয়েস্ট সাহায্য করছে ফাজিকে। প্রিন্সেস জো আর স্ট্রেচ ওদের পেছনে ধেয়ে আসা প্যারা ট্রুপারদের সামলাচ্ছে। আর উইজার্ড – ধোঁয়া গিলে কাশছে – পথ দেখাচ্ছে ওদের কে। সতর্ক করে দিচ্ছে অকেজো করে দিচ্ছে সামনের ফাঁদ গুলোকে। আর ওদের ওপরে কালো ধোঁয়ার ভেতর পাক মারছে হোরাস।
প্রথম স্তরের একে বারে ডানদিকের দেওয়াল ম ই টার কাছে পৌছাল ওরা। স হসাই একটা ফরাসী ক্রস বো এর তীর এসে লাগলো বিগ ইয়ার্সের কাঁধের কাছে । ছিটকে পড়লো সাথে সাথেই মুখ থুবড়ে সামনের দিকে এবং ...
... নিজে পড়ে গেল কার্নিশের ধারে  , কোল থেকে বেরিয়ে গেল লিলি !
লিলি পড়ে গেল।
তিরিশ ফুট।
তেল মেশা জলের কাছে দেওয়াল ম ই এর গোঁড়ায় ।  ওর থেকে খুব একটা দূরে নয় সেই স রু দেওয়াল ঘেঁষে থাকা পায়ে চলার পথটা ।
ভাগ্য ভালো  ও গিয়ে পড়েছে এমন একটা জায়গায় যেখান টায় কুমীরও নেই আবার আগুন ও জ্বলছে না।
তবে মনে হচ্ছে না লিলি খুব একটা নিরাপদ। কুমীর গুলো খুব একটা দূরে নেই। ওর আছড়ে পড়াটা একটা বড় কুমীরের চোখেও পড়েছে ।  সেটা এগিয়ে যাচ্ছে ওর দিকে।
বিগ ইয়ার্স ঝুলছে একেবারে লিলির ওপর প্রথম স্তরের কার্নিশ থেকে। অসহায় । ‘আমার হাত পৌছাবে না অত দূর!’
‘আমি পারবো! অন্য একটা কণ্ঠস্বর বল লো।
ওয়েস্ট।
একটাও পদক্ষেপ ভুল পড়েনা ওর।
একটু কাত হয়ে দৌড়ে লাফিয়ে পার হয়ে গেল প্রথম স্তরের কানাত । ঝুলে চলে গেল হাওয়ায় ভেসে একটা খোদাই করা ধ নুকা কৃতি পাথরের ওপর। যার ঠিক নিচেই কুমীর গুলো নড়া চড়া করছে।
লিলির দিকে এগিয়ে যেতে থাকা বড় কুমীরটা ল ক্ষ্য করেনি ওয়েস্ট এর আগমন। এক লাফে ওটার পিঠের ওপর গিয়ে পড়লো ওয়েস্ট। লিলির সাথে দুরত্ব তখন মাত্রই এক ফুট। একটা জোরালো ঝপাস করে শব্দ হলো – ছতকে গেল জল চারদিকে - এক সাথে কালো জলের ভেতরে ডুবে গেল কুমীরটা আর ওয়েস্ট।
একটু বাদেই ভেসে উঠলো জলের ওপরে। বিশাল কুমীরটার পিঠে পুরো শরীর ফেলে দিয়ে দু হাতের বজ্র আঁটুনিতে চেপে ধরেছে চোয়াল দুটোকে একসাথে।
শোনা যাছে কুমীরটার ক্রুদ্ধ গোঙ্গানী... তার মাঝেই একটা – ক্র্যাআআআআক – অ মানুষিক শক্তির প্রদর্শন করে ওয়েস্ট এক মোচর দিলো চোয়াল দুটোকে ধরে। যে আওয়াজটা শয়ান গেল ওটা ঘাড় ভাঙার। কুমীরটা ছট ফট করে উঠলো মরণ যন্ত্রনায়। ওয়েস্ট লাফিয়ে চলে গেল লিলির কাছে। জলের পাশ থেকে তুলে নিয়ে উঠে পড়লো পায়ে চলা রাস্তাটায় । ওদিকে একসাথে ছটা কুমীর ঝাঁপিয়ে পড়লো মরা কুমীর টার ওপর।
লিলি হাঁফাতে হাঁফাতে বল লো, ‘ থ্যা......থ্যাঙ্কস,’ তেল গ্রীয়ে পরছিল ওপর মুখের চারপাশ দিয়ে। কাঁপছিল থর থর করে।
‘সব সময় তোর পাশে আছিরে কিড্ডো, সব সময়।’
*মেঝেতে*
বাকিরাও এসে গেছে সেই পায়ে চলার পথের ওপর ।
ফাজি আর বিগ ইয়ার্স এখন আহত। যদিও নড়া চড়া করতে পারছে। ওদের সাহায্য করছে জো আর উইজার্ড । ওয়েস্ট আর লিলিকে কভার করার দায়িত্ব নিয়েছে স্ট্রেচ।
লাফিয়ে ঝাপিয়ে কোন রকমে ওরা পার হয়ে গেল স্টেপিং স্টোন আর দেওয়ালের গর্তটাকে – ফাজির লাগানো এক্স আকৃতির দন্ড তার পেছনে এখনো সেই কুমীরটা বসে আছে – এগিয়ে গেল ম্যানহোলের দিকে। ওদিকে শেষ টুকরোটা জুড়ে দিয়ে ব্রিজ টা বানানো কমপ্লিট করার শেষ ধাপে জার্মান ইঞ্জিনিয়ার রা।
চল্লিশজন সশস্ত্র জার্মান সেনা অপেক্ষা করছিল ব্রিজটা সম্পূর্ণ হওয়ার। কিছু তাদের ক্রশ বো থেকে তীর ছুড়লো সাত জন কে ল ক্ষ্য করে। বাকিরা এম পি-৭ সাব মেশিনগানে রাবার বুলেট ভরে নিয়ে শুরু করলো ফায়ারিং।
ওয়েস্ত আর লিলি পৌছে গেল ম্যান হোলের কাছে। নেমে গেল ভেতরে। বাকিরা ওদের অনুসরণ করলো। স্ট্রেচ ওদের নেমে যাওয়ার পথ টা আড়াল করে আটকাচ্ছিলো বিপক্ষের আক্রমণ। বিগ ইয়ার্স নেমে গেল...... তার পর ফাজি ... উইজার্ড ...জো ...এবং ...
... ওদিকে ব্রিজের বাকি অংশটা জোড়া লাগান হয়ে গেল ...
... স্ট্রেচ লফিয়ে নেমে গেল ম্যান হোলের ভেতরে। জার্মান সেনারা ছুটে এলো ব্রিজের ওপর দিয়ে ... এবার শুরু হল ঢালু পথে ছুটে চলা।

*অ্যান্টি চেম্বার [ বাইরের দিকে ]*
পালাতে থাকা দলের একেবারে শেষ সদস্য হওয়া খুব বিচ্ছিরী ব্যাপার। শেষ্প্রান্ত সামলানোর দায়িত্ব তোমার ওপর। ওদিকে একেবারে কাছে এসে গেছে শত্রু পক্ষ । দলের বাকি সদস্যরা কতটা ভালো সেটার এখানে কোন গুরুত্বই থাকে না। সম্ভাবনা অনেক গুনে বেড়ে যায় পেছনেই থেকে যাওয়ার।
যখন লম্বা রোগা স্ট্রেচ লাফ দিয়ে লম্বা অ্যান্টি চেম্বার টায় নেমে এলো ম্যান হোলের গর্ত টা দিয়ে তখন দলের বাকি সদস্যরা ক ক্ষের শেষ প্রান্তে অবস্থিত সেই ঢালু পথটায় পৌছে গেছে ।
‘স্ট্রেচ ! জলদি এসো!’ ওয়েস্ট চিৎকার করে বল লো দরজার কাছ থেকে। ‘জো এগিয়ে গেছে আর একটা স্লাইডিং স্টোন এর ট্রিগার টেপার জন্য। যাতে আমাদের মাঝে একটা বাধা তৈরি হয়!’
কথাটা কে সমর্থন করেই যেন ঢালু পথটার ওপরে একটা চেনা ধমাস করে শব্দের প্রতিধ্বনি শোনা গেল । সাথেই গড় গড় করে নতুন স্লাইডিং স্টোন ধেয়ে আসার শব্দও শুরু হ লো।
স্ট্রেচ পড় মড়ি করে ছুটলো দরজাটার দিকে – একই সাথে ডজন খানেক অবয়ব ম্যান হোলের গর্ত টা দিয়ে নেমে চলে এলো নিচে অ্যান্টি চেম্বারে।
আগ্নেয়াস্ত্র গর্জন কর উঠলো।
দ্রুত এদিকে ওদিকে ছিটকে গেল বুলেট।
এখানে ওয়ার বলার এর কোন এফেক্ট নেই ফলে ইউরোপিয়ান রা মনের সুখে গুলি বর্ষণ করছিল।
স্ট্রেচের আশা খুব কম।
এখনো পাঁচ পদক্ষেপ দূরে ঢালুপ্তহে নেমে যাওয়ার দরজা। পেছনে অবিরাম গুক লি চালাতে চালাতে ধেয়ে আসছে জার্মান বাহিনী।
ওরা যেমন গুলি চালাচ্ছিল, এদিক থেকেও কেউ চালালো গুলি। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ।
পুহ বিয়ার।
বাগিয়ে ধরে আছে একটা স্টীয়ার-আগ অ্যাস ল্ট রাইফেল।
সেই দাড়ি ওয়ালা আরব – যাকে শেষ দেখা গিয়েছিল এই পথে আসার সময় স্লাইডিং পাথরের মুখে – স্ট্রেচের দিকে হাত নাড় লো।  
‘কাম অন, ইজ্রায়েলী!’ পুহ বিয়ার গম গমে কণ্ঠে বল লো। ‘ তোমাকে এখানে ছেড়ে যেতে আমি একটুও কষ্ট পাবো না!’
স্ট্রেচ প্রায় একটা লাফ দিয়ে পুহ বিয়ারের পাশ দিয়ে ঢুকে গেল দরজার ভেতরে। অন্তত বারো চোদ্দটা বুলেট এসে লাগলো দরজাটার এদিকে সেদিকে।
স্ট্রেচ হাঁফাতে হাঁফাতে বল লো, ‘আমি তো ভেবে ছিলাম তুমি ম রেই গেছো!’
‘অ তো সোজা না! জাহির আল আঞ্জার আল আব্বাস কে মারতে হলে ওই পাথরের চেয়ে আরো বেশি কিছুর দরকার।’ পুহ বিয়ার গম গমে স্বরে বল লো। ‘আমার পা হয়তো একটু ধীরে চলে, থু খুব একটা আস্তেও দৌড়াই না। আমি উলতো দিকে দৌড়ে হারিয়ে দিয়েছিলাম পাথরটাকে। ঢুকে পড়েছিলাম কাঁটা ওয়ালা খনির গর্তে। ওটা আমার পাশ দিয়েই গড়িয়ে পড়ে যায়। বক বক অনেক হ লো। এবার চলো!’
*আবার ঢালু পথ*
এবার ঢাল বয়ে নিচের দিকে ছুটে চল লো আটজনা। পার হয়ে গেল ছোট্ট সেই খনির গর্তটা আগের মতোই নাচের ভঙ্গীতে- হাওয়াড় ভেসে আসছে নতুন স্লাইডিং স্টোনের শব্দ – তারপরেই আছে সেই ডিওরাইট খনির গর্তটাও, দ্বিতীয় দরজা  । প্রথম স্লাইডিং স্টোনটার ভাঙা চোরা অবশেষ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে পড়ে আছে ভেতরে।
যাওয়ার পথে গর্তটার ওপরে পাথরের ছাদে  লাগানো হাতল ওয়ালা গজাল গুলো ধরে ঝুলে ঝুলে পুনরায় ওরা আটজন পার হল জায়গাটা।
‘ন ডি !’ ওয়েস্ট রেডিও মাইক্রফোনে ডাক দিলো ওপাড়ে নেমেই । ‘শুনতে পাচ্ছো? ডু ইউ কপি?’
কোন সাড়া নেই ন ডির দিক থেকে। যে পাহারা দিচ্ছিলো জলাভুমির গর্তের মুখটাকে।
‘এটা ওয়ার বলার এর ব্যাপার নয়! উইজার্ড জানালেন। ‘নিশ্চিত কেউ ওখানে আমাদের জ্যামিং-’
কথা থেমে গেল ধেয়ে আসা ছয় জার্মান সেনার গুলি বর্ষণের কারনে। ওরা ঢুকে পড়েছে –
-     আর প্রায় সাথে সাথেই ওদের পেছনে নেমে এলো সেই স্লাইডিং স্টোন। অ্যান্টি চেম্বারের দরজা ওপর দিয়ে গড়িয়ে এলো !
ছয় জার্মান এবার শুরু করলো দৌড়াতে , ওদের পেছনে এখন এগিয়ে আসছে ভীমকায় কাঁটা লাগানো স্লাইডিং স্টোন।
কাঁটায় ভরা গর্তটার কাছে একজন টাল সামলাতে না পরে পড়ে গেল ভেতরে – বুক ভেদ করে পিঠের ওপর দিয়ে বেড়িয়ে এলো কিছু তীক্ষ্ণ শলাকা। 
বাকিরা দ্বিতীয় দরজা বা  বড় ডিওরাইট খনির গর্ত টার কাছে আসতে অনেকটাই দেরি করে ফেল লো ।
দুজন নাগাল পেয়ে গিয়েছিল ওয়েস্টের লাগানো হাতল ওয়ালা গজালের। যদিও লাভ কিছু হলো না । সামান্য ঝুলে থাকার পর পেছন থেকে ধেয়ে আসা পাথরটার গায়ে লাগানো কাঁটা থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়লো খনির ভেতরেই । আর – হুউউউস! – তীব্র জলের ধারা এসে ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেলো ওদের। শোনা গেল কিছু আর্ত চিৎকার ।
ওয়েস্ট আর তার দল এগিয়ে গেল সামনের দিকে। ওই স্লাইডিং স্টোন ওদের অনেকটাই সাহায্য করলো এগিয়ে যাওয়ার পথে।
ওটার পেছনে আটকে থাকা বাকি জার্মান সেনার দল বিভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছিল। এই রকম ঢালু সুড়ঙ্গ পথের বিষয়ে ওদের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। অনেক বেশী সতর্ক হয়ে সময় নিয়ে ওরা এগোচ্ছিল।
আর এটাই সহায়তা করলো ওয়েস্টদের দুরত্ব টা বাড়িয়ে নিতে।
পিছলে নেমে এলো সেই সংকীর্ণ চারকোনা পথটা বেয়ে জীবনের চাবি কাঠির চিহ্ন ওয়ালা গর্তটার মুখ দিয়ে জল মগ্ন ক ক্ষের ভেতর। ছাদটা আবার ফিরে গিয়েছে তার নিজের জায়গায় ...
ন ডির দিক থেকে   এখনো রেডিওতে কোন সাড়া মেলেনি।   
জল মগ্ন ক ক্ষের শ্যাওলা ঢাকা জলের তলায় দুবে আছে সেই পাঁচ গুনিত পাঁচের স্টেপিং স্টোন ...
এখনো কোন সাড়া নেই রেডিও তে।
গুঁড়ি মেরে   পার হয়ে যায় নিচু সুড়ঙ্গ। এড়িয়ে যায় কৌনিক পাথর গুলোকে...
পৌছায় কুমীর ভর্তি জলাশয় টার কাছে। ছাদে ঝুলছে হাতল ছোট ছোট গর্তের ভেতর থেকে। কিছুটা দূরেই সেই উ ল ম্ব সুড়ঙ্গ। যেটা দিয়ে নেমে এসেছিল ওরা।
‘ন ডি! তুমি কি ওখানে আছো?’ ওয়েস্ট জানতে চাইলো রেডিও মাইক্রোফোনে । ‘ আবার বল ছি , ন ডি তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো –’
অব শেষে একটা শব্দ ভেসে এলো।
‘হান্টস ম্যান! জলদি!’ ন ডির স্প্যানিশ ঘেঁষা উচ্চারনে উত্তর এলো, জোরের সাথে। ‘বেরিয়ে এসো জলদি! যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব! আমেরিকান রা এসে গেছে!’
দু মিনিট পর , সেই গর্তটার ভেতর থেকেজলাভুমির কাদা ময় মাটি ঢিপির ওপর বেরিয়ে এলো ওয়েস্ট।
ন ডি অপেক্ষা করছিল ওখানেই। দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো খুব উৎকণ্ঠিত। বার বার তাকাচ্ছিল পশ্চিম দিকে।‘জলদি! জলদি! ওরা আসছে –’
স ক্ল্যাটাস!
ন ডির মাথাটা ফেটে গেল, ঠিক যেমন ভাবে একটা ত রমুজ ফেটে যায় জোরালো আঘাত পেলে । ওর মাথায় এসে আগাত হেনেছে হাইস্পিড .৫০ ক্যালিবারের স্নাইপারের বুলেট । কয়েক সেকেন্ডের জন্য শরীরটা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে একটা কাটা গাছের গুঁড়ির মতো ধপ করে পড়ে গেল জমির ওপর।
ওয়েস্ট চকিতে তাকালো প শ্চিম দিকে।
দেখতে পেলো।
দু ডজন হাইস্পিড সোয়াম্প বোট তিনসো মিটার দূরে , জলাভুমির জলজ গাছপালার ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসছে । ওদের পাহাড়া দিচ্ছে দুটো অ্যাপাচে হেলিকপ্টার। প্রতিটা সোয়াম্প বটে জনা দশেক করে স্পেশ্যাল ফোরসের সদস্য, সি আই ই এফ ।
একটা ব্যারেট স্নাইপার রাইফেল নড়ে উঠলো –
-ওয়েস্ট মাথা নামালো –
-কানের পাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেলো বুলেট টা।
‘ স্ট্রেচ কে আগে উঠে আস তে দাও!’  উ ল ম্ব সুড়ঙ্গে অপেক্ষায় থাকা দলের উদ্দেশ্যে বল লো।
স্ট্রেচ উঠে এলো।
‘স্ট্রেচ একটা স্নাইপারকে উড়াতে হবে ,’ ওয়েস্ট বল লো, ‘সেটা করতে পারলেই  এখান থেকে পালানোর সময় পাওয়া যাবে।’
স্ট্রেচ টেনে বার করলো একটা সাঙ্ঘাতিক দর্শন ব্যারেট এম৮২এ১এ স্নাইপার রাইফেল পিঠের পেছন থেকে। ঝুঁকে টান টান হয়ে শুয়ে শুর করলো গুলি ছোঁড়া আমারিকান হোভারক্র্যাফট গুলোর দিকে।
খটাস। সাঁই  ।
আর দুশো মিটার দূরে, আমেরিকান স্নাইপার ছিটকে গেল সোয়াম্প বোট টা থেকে, মাথাটা হেলে পড়লো পেছনে এক ঝলক রক্ত ছিটকে গেল।
ইতিমধ্যে বাকি সবাই বেড়িয়ে এসেছে সুড়ঙ্গ টা থেকে।
‘ঠিক আছে,’ ওয়েস্ট বল লো। ‘এবার আমাদের তিন গুন জোরে দৌড়াতে হবে এই জলা ভুমি ঠেলে সোয়াম্প রানারদের কাছে যাওয়ার জন্য।’
 কাদা মাখা জমির ওপর দিয়ে আবার শুরু হল দৌড় । ওরা আটজন।
পৌছালো নিজেদের সোয়াম্প বোট গুলোর কাছে। লুকিয়ে রাখা ছিল, ছোট্ট একটা পাথর আর ঝোপের আড়ালে।
দুটো সোয়াম্প বোট। ওদেরি নাম “সোয়াম্প রানারস”। স্টীলের হাল লাগানো, চ্যাপ্টা তলদেশ, সাথেই বিশাল মাপের পাখার ব্লেড লাগানো পেছনে। যে কোনরকম মাপের জলের ওপর দিয়েই এটা ছুটে যেতে পারে অতি দ্রুত। বিশেষ করে জলাভুমির ওপর দিয়ে যেখানে জলের উচ্চতা বোঝা কঠিন।
পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে ওয়েস্ট।
লাফিয়ে উঠে পড়লো প্রথম সোয়াম্প রানারসটায় । হাত বাড়িয়ে উঠতে সাহায্য করলো অন্যদের।
দুটো নৌকায় সবাই উঠে পড়ার পর, ঘুরে এগিয়ে গেলো ইঞ্জিনের কর্ড টা –
‘ওই খানেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো পার্টনার,’ একটা বরফ শীতল কন্ঠ বলে উঠলো।
ওয়েস্ট একেবারে পাথরের মূর্তি।

নল খাগড়ার বনের ভেতর থেকে  ওরা আবির্ভূত হ লো নিঃশব্দ ছায়া মূর্তির মতো। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে।
আঠারো জন কাদা মাখা সি আই এ এফ স্পেশালিস্ট। সবার হাতে কোল্ট কম্যান্ডো অ্যা সল্ট রাইফেল – হাল্কা অনেক বেশী কমপ্যাক্ট , এম-১৬ ‘র নয়া রুপ – মুখে কালো রঙ করা।
ওয়েস্ট নিজেই নিজে গাল দিলো।
দক্ষিন প্রান্ত থেকে আর একটা দল পাথিয়েছে আমেরিকান রা। যদি কোন – ধ্যাত তেরি! ওরা নিশ্চয় স্যাটেলাইট স্ক্যান করে ওদের বোট গুলোর খোঁজ পেয়ে গিয়েছিল। তার পরেই এই টিম টাকে পাঠিয়ে দেয় অপেক্ষা করার জন্য।
‘নিকুচি করেছে ...’ শ্বাস নিলো ।
সি আই ই এফ দল টার নেতা সামনের দিকে এগিয়ে এলো।
‘ আরে , ভাল করে দেখতে হচ্ছে।   এতো মনে হচ্ছে জ্যাক ওয়েস্ট ...’ বল লো মানুষটা। ‘আমি তো তোমাকে সেই ’৯১ এ ইরাকের যুদ্ধের পর আর দেখতেই পাইনি । জানো ওয়েস্ট, আমার সুপিরিয়ররা আজ হদিশ করতে পারে নি তুমি কি করে  বাসরার বাইরের   স্কাড বেস থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছিলে। ওখানে অন্তত পক্ষে তিনশো রিপাব্লিকান গার্ড ছিল। সবরকমের অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে। তবুও তুমি ভেগে গেলে – আর নষ্ট করে দিলে সব মোবাইল লঞ্চার গুলোকে।’
‘আমার মনে হয় সেদিন আমার ভাগ্য আমার সাথে ছিল, ক্যাল,’ ওয়েস্ট জবাব দিলো।
সি আই এ এফের নেতার নাম সার্জেন্ট ক্যাল কালিস। কাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত নৃশংস বলে ক্যাতি আছে । এক জন ঘাতক, যে তার কাজটা করতে ভালবাসে। আগে ছিল ডেল্টাতে। একজন গ্রেড-এ সাইকো। তবে ও জুডা নয়। যার অর্থ ওয়েস্টের এখান থেকে বেঁচে পালানোর একটা সুযোগ এখনো আছে।
প্রথমে কালিস ওয়েস্টের মন্তব্য টাকে পাত্তাই দিলো না। গলার কাছে লাগানো মাইক্রোফোন টায় বল লো, ‘ সি আই এ এফ কম্যান্ড । সুইপার ২-৬ বলছি। আমরা পাহাড়ের দক্ষিনে অবস্থান করছি। পেয়ে গিয়েছি ওদের। আমাদের অবস্থান এক্ষুনি জানাচ্ছি। ’
ঘুরলো ওয়েস্টের দিকে , তারপর যেখানে ওদের কথা বলা থেমেছিল সেটার উত্তর দিলো ।
‘এবার আর ভাগ্য সাথ দেবে না,’ ধীরে ধীরে বল লো। কালিসের চোখের রঙ কালো – শীতল সে চোখ, ওখানে নেই কোন মায়া দয়া আবেগ । ‘আমার কাছে যে রকম আদেশ আছে তাতে যাকে তাকে মেরে ফেলতে পারি। বুঝলে ওয়েস্ট । শরীরের চিহ্ন থাকবে না । থাকবে না কোন সাক্ষী। এর কারন শুধু একটা সোনার টুকরো। অতি দামি এবং গুরুত্বপূর্ণ সে টুকরো। ওটা দাও।’
‘তুমি কি জানো ক্যাল যে সময়ে আমি তোমার সাথে কাজ করতাম আমি সব সময়ে মনে করতাম তুমি একজন ভরসা করার মতো মানুষ –‘
কালিস বন্দুকের নলটা প্রিন্সেস জো এর মাথায় ঠেকালো। ‘মোটেই তুমি সেটা ভাবতে না, আর আমি সেরকম কিছু ছিলাম ও না। তুমি মনে করতে আমি একজন “কোল্ড ব্লাডেড সাইকোপ্যাথ” – আমি দেখেছি তুমি আমার সম্বন্ধে কি রিপোর্ট লিখেছিলে। টুকরোটা দাও , ওয়েস্ট, না হলে এর ঘিলু ছিটকে বেড়িয়ে যাবে।’
‘বিগ ইয়ার্স,’ ওয়েস্ট বল লো, ‘ওটা দিয়ে দাও।’
বিগ ইয়ার্স ব্যাক প্যাকটা খুলে এনে ছুঁড়ে দিলো কালিসের পায়ের কাছে।
সি আই এ এফের ঘাতক পা দিয়ে ওটা খুলে, দেখল ভেতরের সোনালী ট্রাপেজয়েড টাকে।
মুখে ফুটে উঠলো হাসি।
আবার বল লো গলার কাছের মাইক্রোফোনে, ‘কম্যান্ড। সুইপার ২-৬ বলছি । আমারা প্রাইজ পেয়ে গিয়েছি । আবার জানাচ্ছি,  আমরা প্রাইজ পেয়ে গিয়েছি।’
মনে হ লো এটাই যেন সংকেত ছিলো। সাথে সাথেই দুটো ইউ এস অ্যাপাচে হেলিকপ্টার উপস্থিত হ লো ওয়েস্টদের দলের মাথার ওপরে।
প্রচন্ড হাওয়ার ধাক্কা য় আশেপাশের নল খাগড়ার বন নুয়ে গেল জলের ওপর।
একটা চপার থেকে নেমে এলো একটা আঁকশি , অন্যটা স্থির হয়ে ভেসে থাকলো আকাশে, বাইরের দিকে মুখ করে।
কালিস ব্যাক প্যাকটাকে আটকে  দিলো আঁকশিটায়। ওটা উঠে গেল ওপরের দিকে ।  সাথে সাথেই    হেলিকপ্টার টা উড়ে চলে গেল।
 চলে যেতেই , কালিস কানের ইয়ার পিসে হাত ঠেকালো । নতুন কোনও নির্দেশ এলো। ওয়েস্টের দিকে ঘুরলো ... মুখে শয়তানী হাসি।
‘কর্নেল জুডা ধন্যবাদ পাঠালেন , ওয়েস্ট। মনে হচ্ছে উনি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চান। অর্ডার দিলেন তোমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে। দুঃখের ব্যাপারটা হ লো বাকি সবাই কে মেরে ফেলার নির্দেশও দিলেন।’
দ্রুত র‍্যাটেল স্নেকের মতো আগ্নেয়াস্ত্র টা তুলে প্রিন্সেস জো এর মাথায় তাক করে ট্রিগারে –ওপরে ভেসে থাকা অ্যাপাচে টা সেই মুহূর্তে এক বিরাট আগুনের বলে পরিণত হ লো কান ফাটানো বিস্ফোরণের শব্দ করে। পড়তে থাকলো নিচের দিকে । ওটাকে এসে আঘাত করেছে একটা হেলফায়ার মিসাইল। ছুঁড়েছে ...
... ইউরোপিয়ানস টাইগার অ্যাটাক হেলিকপ্টার ।
অ্যাপাচেটার ভগ্নাবশেষ এসে পড়লো সি আই এ এফ এর ট্রূপ সদস্যদের ঠিক পেছনে – এক রাশ জলা ভুমির কাদা জল ছিটকে এলো ওদের দিকে – এর ফলে সিয়েফ এর সদস্যরাও ছ্রীয়ে ফেল এদিকে ওদিকে।
টাইগার হেলকপ্টার টা আর ওখানে থাকেনি  - সোজা পিছু নিয়েছে অন্য অ্যাপাচে টার, যেটাতে আছে সেই মহা মূল্যবান ক্যাপ স্টোনের টুকরো।
কিন্তু এদিকে ওই মিসাইল আক্রমণ ওয়েস্ট কে সুযোগ দিয়ে দিয়েছ কিছু করার।
সবার আগে অবশ্য, প্রিন্সেস জো সরে যেতে পেরেছে কালিসের বন্দুকের নাগাল থেকে। লাফ মেরেছে নিজেদের বোটের ভেতরে। সাথে সাথেই ওয়েস্ট চালু করেছে ইঞ্জিন এবং চেঁচিয়ে বলে উঠেছে, ‘সবাই নিজেদের সামলাও! জলদি!’
এই ছোট্ট দলটার কাউকেই কোন কথা দুবার বলার দরকার হয় না।
ডেল্টা টিম এর সদস্যরা নিজেদের পারে ঠিক ঠাক দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই ওয়েস্টদের দুটো নৌকাই বিদ্যুতের গতিতে বেড়িয়ে হারিয়ে গেল দূরে নল খাগড়ার জঙ্গলের আড়ালে। গুলি চালিয়েও কিছু পাত্তা করতে পারা গেল না ।
০০০০০০০০০০০০০০০০
ছোট্ট দলটার কাউকেই কোন কথা দুবার বলার দরকার হয় না।

ডেল্টা টিম এর সদস্যরা নিজেদের পারে ঠিক ঠাক দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই ওয়েস্টদের দুটো নৌকাই বিদ্যুতের গতিতে বেড়িয়ে হারিয়ে গেল দূরে নল খাগড়ার জঙ্গলের আড়ালে। গুলি চালিয়েও কিছু পাত্তা করতে পারা গেল না ।
০০০০০০০০০০০০০০০০
কালিস লাফিয়ে উঠলো ওদের একটা সোয়াম্প বোটে ... সাথেই বাকিরা গিয়ে উঠলো আরো তিনটেতে ... চালু করলো ইঞ্জিন। 
রেডিও অন করে বর্তমান পরিস্থিতি   জানিয়ে দিলো কালিস,  বসকে । সাথে সাথেই জানতে চাইলো, ‘ওয়েস্টকে পেলে কি করবো?’
অন্যপ্রান্ত থেকে এক কর্কশ হিম শীতল কণ্ঠ ভেসে এলো, যে আদেশ সে দিলো সেটা বে কৌতুহল জনক – ‘বাকিদের নিয়ে তুমি কি করবে সার্জেন্ট সে নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু ওয়েস্ট আর ওই ছোট্ট মেয়েটা যেন পালিয়ে যেতে পারে।’
‘পালিয়ে যেতে পারে মানে?’ কালিস ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো।
‘ইয়েস সার্জেন্ট। আমি চাই ওরা পালিয়ে যাক। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?’
‘একদম স্যার। আপনি যা চাইছেন সেটাই হবে,’ উত্তর দিলো কালিস।
ওদের বোটগুলো এগিয়ে চললো লক্ষ্যের দিকে।

বিশাল টার্বো ফ্যানের সহায়তায় এক অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলো ওয়েস্টদের বোট দুটো। কখনো সামনেটা উঠে যাচ্ছে শূন্যে কখনো ঝুঁকে যাচ্ছে সামনের দিকে ।
প্রথমটা চালাচ্ছে ওয়েস্ট নিজে। দ্বিতীয়টার দায়িত্বে আছে স্ট্রেচ।
ওদের পেছনে ধেয়ে আসছে কালিসদের চারটে সোয়াম্পবোট। মাপে বড়, ওজনেও বেশী এবং অনেক বেশী শক্ত পোক্ত। সাথে থাকা লোকেরা তৈরী ক্রশ বো নিয়ে।
ওয়েস্টের লক্ষ্য এই মুহূর্তে এই জলাভুমির দক্ষিন  সীমানা। এখনো ২০ কিমি দূর। যেখানে একটা ভাঙাচোরা পুরোনো রাস্তা আছে বিস্তৃত জলরাশির পাড় ঘেঁষে ।
খুব চওড়া নয় রাস্তাটা। পাশা পাশি দুটো গাড়ী যাওয়ার মতো । কিন্তু গুরুত্ব পূর্ণ ব্যাপার হলো রাস্তাটা অ্যাস্ফল্ট দিয়ে বানানো।
‘স্কাই মনস্টার!’ ওয়েস্ট চিৎকার করে মাইক্রোফোনে বললো, ‘এই মুহূর্তে তুমি কোথায় আছো?’
উত্তর এলো, ‘সেই একই জায়গায় হান্টস ম্যান , পাহাড়ের পেছনে ঠিক যেখানে ছিলাম। কিছু দরকার আছে?’
‘এক্ষুনি আমাদের এক্সফিল দরকার ?’
‘চালু অবস্থায়?’
একদম । তোমার সেই পায়ে চলা পথটাকে মনে আছে নিশ্চয়। যেটাকে আমরা একবার পালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করেছিলাম?’
‘আরে সেই ভাঙা চোরা গর্তে ভরা রাস্তাটা? পাশাপাশি দুটো কুপার ওটা দিয়ে চালানো যাবে?’
‘হ্যাঁ সেই রাস্তাটাই। আর হ্যাঁ আমাদের পিক-আপ হুক লাগবে । নিয়ে এসো গোটা কতক। এবার তোমার মতামত বলো ।’
‘ হান্টস ম্যান , পরেরবার আমাকে এর চেয়ে কঠিন কিছু কাজ দিলে খুশি হবো। যাকগে ওখানে কতক্ষনের ভেতরে পৌছাতে হবে?’
‘দশ মিনিটের ভেতর এলে সবচেয়ে ভালো।?
‘ডান। হ্যালিকারনাসসাস যাত্রা শুরু করছে  এক্ষুনি।’

জলের ওপর দিয়ে দুর্দম গতিতে এগিয়ে চল লো দুটো সোয়াম্প রানার। পেছন থেকে ভেসে আসা গুলি তীরকে পাশ কাটিয়ে।
কালিসের বাহিনী এবার মর্টার উঠিয়ে নিলো হাতে।
এঁকে বেঁকে ঝুঁকে সেই সব আক্রমণকে এড়াতে থাকলো – ভাগ্যটা ভালোই ওয়েস্টের, বেশির ভাগই এক চুলের জন্য এদিকে ওদিকে পড়ছে জলের ওপর – এবাদেই একসময় দেখা গেল উদ্দিষ্ট রাস্তাটাকে।
জলাভুমির ধার ঘেঁষে পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে গেছে। একটা পুরনো কালো রঙের রাস্তা যা ধরে পৌছানো যায় খারতুমের ভেতরে। পূর্ব সুদানের বেশীর ভাগ রাস্তার তুলনায় অবশ্য এ রাস্তায় তা অনেক ভালো । এটাকে বানিয়ে ছিল সৌদি আতঙ্কবাদীরা । একসময় এই সব পাহারী এলাকা ছিল ওদের ঘাঁটি। ওদের ভেতরেই ছিল এক  সিভিল ইঞ্জিনিয়ার,  নাম বিন লাদেন ।
রাস্তাটা দেখতে পেয়ে একটা হাসি ফুটে উঠলো ওয়েস্টের মুখে । আর চিন্তা নেই ...
ইত্যবসরে আকাশে হাজির হল তিনটে আমেরিকান অ্যাপাচে হেলিকপ্টার । একেবারে ওদের বোট দুটোর সামনে । মিনিগান থেকে গুলি চালিয়ে জল ছেটাচ্ছিল ওদের চারপাশে।

অবিরাম  গুলির  বৃষ্টি চলছিল বোট দুটোর দুপাশে ।
  জল ভেদ করে শত শত বুলেট ঢুকে যাচ্ছিল ক্রমাগত চ্যাত চ্যাত শব্দে।
‘চালিয়ে যাও! স্ট্রেচ থামবে না!’ ওয়েস্ট চিৎকার করে বললো। ‘স্কাই মনস্টার আসছে আমাদের নিতে!’
একটা বুলেট এসে লাগলো স্ট্রেচের বোটটার টার্বো ফ্যানের ব্লেডে। কিছুটা ধোঁয়া বের হয়ে খ্যাটাং খ্যাটাং শব্দ হতে  থাকলো ওটা থেকে। কমে গেল বোটটার গতি।
ওয়েস্ট দেখলো ঘটনাটা –  ও জানে এখন কি করতে হবে।
নিজের বোটটাকে নিয়ে এলো স্ট্রেচের বোটটার পাশে – ‘লাফিয়ে চলে এসো!’
অতি দ্রুত সেটাই করলো স্ট্রেচ, পুহ বিয়ার, ফাজি আর উইজার্ড । এক এক করে লাফিয়ে চলে এলো ওয়েস্টের সোয়াম্প রানারের ভেতর। উইজার্ড লাফটা মেরেছে সবে মাত্র, একটা অ্যাপাচে থেকে হেলফায়ার মিসাইল এসে আঘাত করলো ফাঁকা বোটটাকে। একইসাথে একটা আগুনের গোলা আর বিরাট মাপের জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলো জলাভুমির ওপর।
এসব গণ্ডগোল খিচিবিচির ভেতরেই ওয়েস্ট এর নজর ছিল পাহাড়ের ওপরের আকাশের দিকে – যা দেখতে চাইছিল সেটা নজরেও এসে গেল কিছুক্ষনের মধ্যেই।
একটা কালো বিন্দু বদলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে একটা পাখির আকৃতিতে। সেটা বদলে গেল প্লেনে। আরো একটু বাদে ওটাকে ভালো ভাবে দেখা গেল। একটা কালো রঙের বিরাট আকারের প্লেন ।
বোয়িং ৭৪৭, কিন্তু এরকম অদ্ভুত কিম্ভুত ৭৪৭ মোটেই দেখা যায় না।
একটা সময়ে এটা একটা কার্গো প্লেন ছিল। পেছন দিক দিয়ে ছিল মাল ওঠানোর ঢালু র‍্যাম্প । দুপাশে কোন জানলা ছিল না।
এখন ওটাকে পুরো কালো রঙ করা হয়েছে। খ্যাস্টা মার্কা কালো। সাথেই ওটার সাথে জোড়া হয়েছে নানান রকম জিনিস পত্র। র‍্যাডার ডোম, মিসাইল পড এবং কয়েকটা অদ্ভুত রকমের রিভলভিং গান টারেটস।
গান টারেটস  আছে মোট চারটে। একটা গম্বুজাকৃতি ছাদের উপর, একটা পেটের নিচে । আর দুটোকে লাগানো হয়েছে প্লেনের ডানা যেখানে শুরু হয়েছে ঠিক সেখানে। প্রত্যেকটাতে সেট করা আছে সাংঘাতিক  আগ্নেয়াস্ত্র, ছয় ব্যারেলের গ্যাটলিং মিনিগান।
এরই নাম হ্যালিকারনাসসাস । ওয়েস্টের একেবারে নিজের সম্পত্তি।
একটা দারুন রকমের শব্দ করে কালো জাম্বো জেট নেমে আস্তে শুরু করলো নিচের দিকে। লক্ষ্য জলাভুমির পাশের রাস্তা।
এই মুহূর্তে দলের আট সদস্যই একটা বোটে । ওয়েস্টের দরকার সাহায্য। আর সেটা দিতে পারে একমাত্র হ্যালিকারনাসসাস।
দুটো মিসাইল ধেয়ে এলো ওটার পেটের তলার পড থেকে। একটা আ্যপাচের এক ইঞ্চি পাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেল আর একটা গিয়ে আঘাত হানলো ওর পেছনেরটাকে ।
বুউউউউউম!! একটা আগুনের গোলক লাফিয়ে উঠলো উপরের দিকে।
এবার অতিকায় প্লেনটার নিচের মিনিগান থেকে চালু হলো গুলি বর্ষণ । সহস্র চকচকে টুকরো ছুটে গেল তৃতীয় অ্যাপাচেটার দিকে। ওটার সামনে দুটো পথ হয় পালানো অথবা মৃত্যু। ওটা পালিয়েই গেলো।
ওয়েস্টের সোয়াম্প রানার   জলের ধারে রাস্তার গা ঘেঁষে ছুটতে থাকলো। জল থেকে কয়েক ফুট ওপরে রাস্তাটা। সামনের দিকে উঠে গেছে উঁচুতে  ধীরে ধীরে ।
ইতিমধ্যে ওয়েস্টের বোট এর প্রায় ওপরে এসে গেছে বিশাল ৭৪৭। নেমে পড়েছে ছোট্ট  রাস্তাটার ওপর।
ওটার চাকা গিয়ে ঠেকেছে রাস্তায়, দুপাশে রাস্তা ছাড়িয়ে বেড়িয়ে গেছে ওটার টায়ারগুলো। হাল্কা ঝাঁকুনি আর ক্যাঁচকোচ শব্দ ও শোনা যাচ্ছে ওটার চলার সাথে সাথে – ওয়েস্টের বোটের সাথেই ওটা চলছে। লম্বা ডানাটা ছড়িয়ে আছে জলের ওপর।
হ্যালিকারনাসসাস  এগিয়ে যাচ্ছে । 
ওয়েস্টের বোট চেষ্টা করে যাচ্ছে ওটার গতির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে।
সহসাই এক বিকট ঘটাং শব্দ করে খুলে গেল ৭৪৭ প্লেনটার পেছন দিকের ঢালু র‍্যাম্পটা। গড়িয়ে যেতে থাকা প্লেনের গা থেকে নেমে ওটা ঠেকলো রাস্তায়।
এক সেকেন্ড বাদেই একটা বড় হুক লাগানো লম্বা কেবল বেড়িয়ে এলো পেছনের পথটা দিয়ে। এটা এক ধরনের রিট্রিভ্যাল কেবল। সাধারণত ব্যবহার হয় ওয়েদার বেলুনকে আটকে রাখার কাজে।
পুহ বিয়ার চিৎকার করে জানতে চাইলো, ‘ ওয়েস্ট তোমার প্ল্যানটা কি ঠিক করে বলো দেখি?’
‘এই যে!’
কথাটা বলেই ওয়েস্ট বোটের স্টিয়ারিং লিভারটাকে দ্রুত ঠেলে দিলো বাঁদিকে। সাথে সাথেই এক ঝটকায় জল ছেড়ে সোয়াম্প রানার উঠে গেল রাস্তায় । প্রায় একই স্পীডে স্টীলের হালের ধাক্কায় সমতল চ্যাপ্টা তলদেশ বিশিষ্ট বোটটা এগিয়ে গেল গড়িয়ে চলা ৭৪৭ এর দিকে।
এর চেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য আর কি হতে পারে! একটা অতিকায় কালো ৭৪৭ বিমান গড়িয়ে চলেছে শহরতলীর রাস্তায় ... আর একটা বোট স্কিড করে ঘষটে ধাওয়া করছে ওটাকে।
ওয়েস্ট দেখে নিলো খোলা র‍্যাম্পটাকে। বেশ কাছে এসে গেছে, কয়েক গজ দূরে আর নৌকা থেকে । সাথে সাথেই দেখতে পেয়েছে রিট্রিভ্যাল কেবলটাকেও ,হুক সমেত রাস্তার ওপর দিয়ে লাফাতে লাফাতে চলছে প্লেনটার সাথে।
‘স্ট্রেচ! কেবলটা দেখো! ওটাকে ধরতে হবে!’
নিচু হয়ে বোটের ভেতর থেকে একটা আঁকশি লাগানো দন্ড উঠিয়ে নিলো স্ট্রেচ। এক লাফে চলে গেল বোটের সামনের অংশে। নিজের ব্যালান্স ঠিক করে নিয়ে  বাড়িয়ে ধরলো ওটাকে সামনের দিকে। রিট্রিভ্যাল কেবলের হুকটার কাছে। আটকেও ফেললো আঁকশিতে । টেনে নিয়ে এলো।
ওয়েস্ট চিৎকার করে বললো, ‘আটকে দাও ওটাকে!’
স্ট্রেচ সেটাই করলো । বোটের সামনে থাকা অর্ধ গোলকটায় আটকে দিলো হুকটাকে।
প্রায় সাথে সাথেই – হোয়াআআপ! – সোয়াম্প রানারের স্পিড বেড়ে গেল। এগিয়ে চললো সামনের দিকে , এখন বোটটাকে টানছে ৭৪৭ !
হ্যালিকারনাসসাস নিজের দায়িত্বে নিয়ে নিয়েছে সোয়াম্প রানারকে... দেখে মনে হচ্ছে যেন একটা স্পিড বোটের টানে কেউ এক জন ওয়াটার স্কি করছে।
ওয়েস্ট এবার রেডিও মাইক্রোফোনে বললো, ‘স্কাই মনস্টার! এবার আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে নাও!’
স্কাই মনস্টার প্লেনের ভেতরের কেবল গুটানোর বোতামে চাপ দিলো। সোয়াম্প রানার একটু একটু করে এগিয়ে যেতে শুরু করলো র‍্যাম্পের পথে ।
অন্যদিকে এই সব কাজ চলার সময়ে ৭৪৭ এর গায়ে লাগানো আগ্নেয়াস্ত্রগুলো তাদের নিজেদের কাজ চালিয়ে গেছে নানান দিকে ঘুরে ঘুরে। ফলে কালিসের ধেয়ে আসা বোট বাহিনী এবং বাকি দুটো অ্যাপাচে দূরেই থেকে যেতে বাধ্য হয়েছে। ওরা থেকে গেছে জল সীমার ভেতরেই।
ওয়েস্টের বোট একসময় উঠে গেল র‍্যাম্পটায়। র‍্যাম্প সংলগ্ন হাতল ধরে বোটটাকে সোজা রাখল ওয়েস্ট আর পুহ বিয়ার।
‘চলো , এবার ভেতরে যাওয়া যাক! নেমে পড়ো সবাই!’ ওয়েস্ট হাঁক মারলো।
এক এক করে র‍্যাম্পটায় নেমে এলো সবাই – উইজার্ড এবং লিলি, জো সাহায্য করলো ফাজিকে নামতে। স্ট্রেচ হাত ধরে নামালো বিগ ইয়ার্সকে। আর তারপর  নেমে এলো পুহ বিয়ার আর ওয়েস্ট।
নিচে নেমেই ওয়েস্ট বোটটা থেকে হুকটা খুলে নিলো। গতি  বাড়াতে থাকা ৭৪৭ এর র‍্যাম্প থেকে গড়িয়ে চলে গেল সোয়াম্প রানারটা । উলটে গিয়ে পড়ে থাকলো ছোট্ট কালো রাস্তার ওপর।
ওরা ভেতর ঢুকে যেতেই র‍্যাম্পটা উঠে বন্ধ হয়ে গেল আগের মতো । ৭৪৭ আরো গতি বাড়ালো । আমেরিকান অ্যাপাচে আর  সোয়াম্প বোট দের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেল অনেক দূরে।  তারপর এক ঝটকায় ভেসে উঠে পড়লো আকাশে ।
নিরাপদে।
নিশ্চিন্তে।
দুরে...অনেক দূরে।
হ্যালিকারনাসসাস উড়ে চল লো দক্ষিন দিক দিয়ে বিস্তীর্ণ ইথিওপিয়ান হাইল্যান্ডের ওপর দিয়ে।
সবাই যখন গা এলিয়ে দিয়েছে প্লেনের ভেতরে, ওয়েস্ট সোজা গিয়ে ঢুক লো ককপিটে। পাইলট নিবিষ্ট মনে পালন করছে তার দায়িত্ব। বড় বড় চুল ওয়ালা এক নিউজীল্যান্ডার,  এয়ারফোরস পাইলট, যার পরিচিতি স্কাই মনস্টার নামে। দলের অন্যান্যদের লিলি নতুন সংকেতনাম  দিলেও এই মানুষটার সংকেত নামটা একই থাকে।
ওয়েস্ট,ওদের নিচে যে নিসর্গ দৃশ্য ক্রমশঃ পিছিয়ে যাচ্ছে সেটার দিকে তাকালো। জলাভুমি, পাহাড়, তার পেছনের টানা সমতল অঞ্চল – মনে ভেসে এলো ডেল পিয়েরোর দলের কথা। এই মুহূর্তে যারা শক্তিশালী আমেরিকানদের সাথে সংঘর্ষ করছে। ডেল পিয়েরোর ভাগ্য মোটেই ভালো নয় এ ব্যাপারে। 
আমেরিকানরা, সব সময়ে সবার শেষে আবির্ভূত হয়। মানতেই হবে ওদের বাহিনী খুব নৃশংস। সুযোগ দিয়েছিল ইউরোপিয়ান আর ওয়েস্ট এর দলকে কামড়া কামড়ি করার জন্য ওই সোনালী টুকরোটার জন্য। লোক জন যা মরবে ওদের মরুক এটাই চেয়েছিল আমেরিকানগুলো । কেড়ে নেওয়া যাবে তারপর। সেটাই করলো, সুযোগ সন্ধানী সিংহের মতো এক পাল হায়েনার ভেতর থেকে ওরা ছিনিয়ে চলে গেলো আসল জিনিষটাকে।
এখন হ্যালিকারনাসসাস উড়ে চলেছে আকাশে সব বিপদকে পেছনে ফেলে। ওয়েস্ট দেখতে পেলো আমেরিকানদের ফোরস জলাভুমির পশ্চিম প্রান্তের কোনায় জমা হয়েছে।
একটা সন্দেহ জনক চিন্তা ওর মাথায় উঁকি মারলো।
আমেরিকানরা এই জায়গাটার বিষয়ে জানলো কি করে?
ইউরোপিয়ানদের কাছে ক্যালিম্যাচুসের পান্দুলিপির একটা কপি থাকতেই পারে । তাছাড়াও ওদের কাছে ওই ছেলেটাও ছিল। কিন্তু আমেরিকানদের কাছে ওয়েস্ট যতদূর জানে এব্যাপারে কোন তথ্যই ছিল না।
আর যার অর্থ ওদের কোনো ভাবেই জানার সম্ভাবনা নেই যে কলোসাস অফ রোডসের মস্তক ঠিক কোথায় রাখা আছে।
ওয়েস্ট এর ভ্রু কুঁচকে গেল।
তবে কি তার দলের সব খবর ফাঁস হয়ে গেছে? আমেরিকানরা ওদের ঘাঁটির খবর পেয়ে ওদের অনুসরণ করে এসেছে? নাকি তার চেয়েও খারাপ ব্যাপার – ওর নিজের দলেই  কোনো এক বিশ্বাসঘাতক আছে? যে কোন না  কোনো ভাবে সব খবর পাচার করে দিচ্ছে ওদের অবস্থানের?
যাই হোক, জুডা এখন জেনে গেছে ওয়েস্ট এই ট্রেজার হান্টে নেমে পড়েছে। হয়তো সে এটা জানে না ওয়েস্ট আসলে কার হয়ে কাজ করছে। কিন্তু এটা জেনে গেল এ সবের সাথে এখন ওয়েস্ট জড়িয়ে আছে।
এর একটাই অর্থ পুরো ব্যাপারটা একটু বেশি মাত্রায় ঘেঁটে গেল।
আপাতত নিশ্চিন্ত এবং নিরাপদ। কিন্তু এতো খেটে সংগ্রহ করা জিনিষটাই নেই। ওয়েস্টদের প্লেন উড়ে চললো দক্ষিনের পথে। হারিয়ে গেল পাহাড়ের আড়ালে ।


ক্লান্ত এবং নোংরায় ভর্তি সারা গা, ওয়েস্ট ফিরে এলো প্লেনের ভেতরে।  চিন্তা মগ্ন ভাবে মাথা নিচু করে পেরিয়ে চলে আসছিল লিলিকে । যে সিঁড়ির নিচে অন্ধকারে বসে ঝুঁকে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছিল।
ওয়েস্ট গিয়ে বসলো ওর পাশে। নোংরা হাতটা ঝেড়ে নিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললো, ‘হেই কিড্ডো।’
‘ওরা ... ওরা ওকে মেরে ফেললো,’ একটা ঢোঁক গিলে বললো, ‘ওরা নডিকে মেরে ফেললো।’
‘হ্যাঁ ...’
‘কেন করলো ওরা ওটা? ও তো কোনদিন কাউকে কিছু করেনি।’
‘ঠিক , একদম ঠিক,’ ওয়েস্ট বললো । ‘ কিন্তু নডি যে কাজটার সাথে জড়িয়ে ছিল সেটা কিছু বড় বড় দেশের পছন্দ হয়নি – ওরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ক্ষমতা হারানোর ভয়। আর সে জন্যই ওরা ওকে ...’   লিলির মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো ওয়েস্ট, ‘আমিও ওকে খুব মিস করবোরে।’

শ্রান্ত, ক্লান্ত গায়ে হাত পায়ে ব্যাথা তার সাথেই নডিকে হারানোর দুঃখ নিয়ে ওয়েস্ট চলে গেল প্লেনের ভেতর নিজের জন্য বানানো ঘরটায়।
ঢুকেই নিজেকে ফেলে দিলো বিছানায়। মাথাটা বালিসে রাখার কিছুক্ষনের ভেতরেই ডুবে গেল গভীর ঘুমের জগতে।
ঘুমের মধ্যে টুকরো টুকরো হয়ে ভেসে এলো নানান স্বপ্নের দৃশ্য – বুবি ট্রাপে ভরা চেম্বার, নড়তে থাকা পাথর, মন্ত্র ঊচ্চারন এবং চিৎকার, আগ্নেওগিরির লাভা গড়িয়ে আসা । আর সেসবের ভেতর দিয়ে ও দৌড়াচ্ছে প্রাণপণে।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার এটাই যে , এই সব স্বপ্নের কো নো দৃশ্যই ওয়েস্টের কল্পনা নয়।
এগুলো সব ঘটেছিল ...
দশ বছর আগে ...
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

**  শেষ হল প্রথম অভিযান। এরপর তিনটি ছোট ছোট পর্বে এই ট্রেজার হান্টের ইতিহাস জানা যাবে। কেন হচ্ছে এই ত্রিমুখী প্রতিযোগিতা, এরকম বিপদজনক অভিযানের ভেতরে কেন একটি ১০ বছরের মেয়ে থাকছে? লিলি নামের মেয়েটির কি পরিচয়?**

3 comments:

  1. পরের গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম..

    ReplyDelete
  2. 16 ফুট লম্বা মাথা যদি ব্রোঞ্জের হয় মিনিমাম 50-80 টন ওজন হবে। এত ভারী মাথা নামাতে , ওঠাতে মিনিমাম 100 টন অবধি ভারবাহী ক্রেন বা কপিকল দরকার , জাহাজের প্লবতা হতে হবে কমসে কম 200 টন তার মানে জাহাজ 500 ফুট মিনিমাম দৈর্ঘ্য হবে। অবাক ব্যাপার। এখনকার ইঞ্জিনিয়ারিং এর হিসেবে ধরলে বিস্ময় ।

    ReplyDelete
  3. Dhnyobaad Manonio Alamin Islam ebong UNknown ...
    prachin kaler engineering to ek bishmoy ...

    ReplyDelete