----------------------
সেই বছরের প্রত্যেক মাসে, তার সপ্তাহ গুলোতে এবং তাদের প্রতি ঘন্টায় আমার আনন্দ প্রাপ্তির মাত্রা তিনগুন বেড়ে গিয়েছিল ।
বন্ধুত্বের শ্রদ্ধায়,
কোমলতায় এবং সম্মানের সাথে হাতে
হাতে
রেখে , আমেরিকার না ছোঁয়া বন্য প্রকৃতির মতো রুক্ষ, পথভোলা বাতাস
বা শৈবাল হীন সমুদ্রের মতো আমার হৃদয়ে গড়ে উঠেছিল একটি লতাবিতান । যা ছিল জ্ঞানের জন্য তৃষ্ণার্ত ।
আদ্রিয়ানের জন্য অসীম স্নেহ আমার হৃদয়কে আমার বোঝাপড়াকে
করে তুলেছিল উদ্বেলিত। আমি অনুভব করছিলাম
এক অদ্ভুত সুখ। জানতাম না কোনো আনন্দ এতো পরিষ্কার ও মেঘ মুক্ত আকাশের মতো হতে
পারে , যা দু কূল ছাপিয়ে বয়ে যায় তরুণ বন্ধুদের কথাবার্তা হয়ে। , এখানকার স্থানীয় হ্রদে নৌকা চালনার সময় , জলপ্রবাহ এবং ঝাপসা হয়ে থাকা পপলার গাছের সীমানার ধারে - উপত্যকায় এবং পাহাড়ের
উপরে, আমার সব কুটিলতা কোথায় যেন বিলীন হলো। নিজে নিজে পড়ার সময় অথবা আদ্রিয়ানের পাঠ শুনতে শুনতে
এক নৃশংস মেষপালক থেকে
আমি পরিণত হলাম নতুন ভাবনাদের চারক
রুপে। ওর ভাবনা চিন্তা, সেটা
ভালবাসা বিষয়ে হোক বা মানুষের উন্নতির জন্য সব কিছুই একইভাবে
আমাকে আবিলতায় ডুবিয়ে
রেখে দিতো।
কখনও কখনও আমার সেই পুরোনো অনাচারী মেজাজ ফিরে আসতো, বিপদকে আমার ভালবাসার সেই উদগ্র
ইচ্ছাগুলো, যা সব কিছুর বিরোধীতা করার আহ্বান জানাতো। অবশ্য এসব চিন্তা আসতো তার
অনুপস্থিতিতে ; তার প্রিয়
চোখ
দুটো নজরে আসলেই আমি পরিণত হতাম পাঁচ
বছর বয়সের একটি আজ্ঞাবহ ছেলেতে যে সব সময় তার
মায়ের কথা মেনে চলতে পছন্দ করে।
আলসোয়াটারে প্রায় এক বছর বসবাসের
পরে, অ্যাড্রিয়ান লন্ডনে গিয়েছিল, এবং ফিরে আসে আমাদের সুবিধার জন্য অনেক গুলো পরিকল্পনা নিয়ে। বলে : তোমাকে নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে । বয়স তো সতেরো পার হয়ে গেছে। না,আর দেরি করা
যাবে না প্রয়োজনীয়
শিক্ষার
জন্য ।
সাথেই একথাও বলে, আগামি দিনে তার
নিজের জীবনের যে সংগ্রাম তাতে আমি
তার সাথী হয়েছি এটা তিনি অনুভব করতে পারছেন। আর সেই কাজের উপযুক্ত
হওয়ার জন্য আপাতত আমাদের আলাদা হয়ে যেতে হবে । আমার জন্য সে একটা বিশেষ কাজের
ব্যবস্থা করেছে। যার সাহায্যে আমি ভিয়েনার রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত সচিবেরকর্মজীবন
লাভ করবো ।
আপাতত দুবছর এই কাজ মন
দিয়ে করার পর আমাকে আবার এ দেশে ফিরে আসতে
হবে। আর সে ফেরা হবে একজন প্রতিষ্ঠিতসুপরিচিত এবং খ্যাতিমান মানুষের ফিরে আসা।
পারডিটার কি হলো? - সে এখন পরিণত হয়েছে ইভাদনের ছাত্রী, বান্ধবী এবং ছোট
বোনে। এক্ষত্রেও আমার নতুন বন্ধু তার ভাবনাকে কাজে
লাগিয়ে এক স্বাধীন জীবনের উপায় খুঁজে দিয়েছেন। কিভাবে এই উদার মনোভাবের বন্ধুত্ব সুলভ
উপহার আমি কি করে প্রত্যাখ্যান করবো?
– আমি একবারের জন্যও এসব প্রত্যাখ্যান
করার
কথা ভাবলাম না; কিন্তু আমার অন্তরে অন্তরে, আমি এক প্রতিজ্ঞা করলাম। নিজেকে উৎসর্গ করার তার দানের
প্রতিদানে । সমস্ত জীবন,
জ্ঞান এবং ক্ষমতা ব্যবহার করে, যদি
এসবের কোন মূল্য থাকে তবে আমি একা তার জন্য প্রান পাত করবো।
অতএব আমি নিজেই নিজেকে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ করলাম। আর শুরু করলাম যাত্রা, উদ্দীষ্ট
লক্ষ্যে পৌছাোনোর জন্য যাতে বালক অবস্থায় করা সব প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারি জীবনে পরিপক্কতা
লাভ করার সাথে সাথে। আমার মনে হয়েছিল সময় এসে গেছে, বাল্যকালের পেশাগুলো পাশে সরিয়ে রেখে, এবার আমাকে
জীবন সংগ্রামে নামতে হবে। ইলীয়ান চারন ভুমিতে , ভার্জিলের কথানুসারে
আনন্দের জোয়ারে বহমান আত্মারা নশ্বর জীবনের তরঙ্গেই ভাসতে ভালবাসে। ইলিসিয়ামের তরুণরা কদাচিৎ নিজেদের
ইচ্ছার কথা মাথায় রেখে সম্ভাব্যতা নিয়ে ভাবে । আর সেই কারনেই তারা হয়ে যায় অর্থহীন ঋণী, দরিদ্র। বলা হয়ে থাকে আমরা বুদ্ধিমান সেরা দার্শনিক বিপজ্জনক ক্ষেত্রগুলির
জন্য এবং আমরাই আমাদের নিজের
হৃদয়ের অভিশাপ স্বরুপ। কিন্তু তা সত্বেও আমরা
জীবন সমুদ্রের বিভিন্ন রকম ঢেউ এর মোকাবিলায় জীবনতরী ভাসিয়ে দিতে পিছপা হই না।
"সোনালি বালি" র তটভূমির
কাহিনী শুনে তরুণ নাবিক ছাড়া আর কেই বা
যায় চিত্র বিচিত্র শঙ্খ সংগ্রহ করতে । কিন্তু দিনের শেষে,তীরে যখন পৌছায় তখন ভগ্নমন আর
শ্রান্ত দেহবহন করে । তারা খুঁজে পায় ঢেঊ বিধস্ত তটভুমি আর কিছু কচ্ছপের পরিত্যক্ত
খোলা। যখন তারা মৃত্যুবরন করে কেউ দুঁফোঁটা চোখের জলও ফেলেনা ওদের জন্য।
দর্শনের চোখ দিয়ে দেখে
বলছি! – জীবনসব
সময় আমার আগে আগে দৌড়াচ্ছে আর আমি ছুটছি তাকে দখল করার আশায় । আশা, গৌরব,
ভালবাসা, এবং উচ্চ আকাঙ্খা আমার পথপ্রদর্শক । আমার আত্মা জানেনা ভয় কাকে বলে। যা কিছু সুখকর ছিল সব চলে গেছে; বর্তমানটাই শুধুমাত্র
ভালো কারণ এটির পরিবর্তন হবে এবং যা আসবে তার সবটাই আমার নিজস্ব। আমি কি ভয় পাচ্ছি, তা না হলে আমার
বুকের ভেতর ধড়ফড় করছে কেন? উচ্চ আকাঙ্ক্ষা
আমার রক্তের ভেতর জাগাচ্ছে উন্মাদনা; আমার চোখ মেঘাচ্ছন্ন মধ্যরাত্রি ভেদ করে দেখতে
চাইছে সময়টাকে এবং পার হয়ে মর্মগ্রহণ করতে চাইছে অন্ধকারের গভীরতার। যেখানে আছে আমার আত্মার কামনা বাসনার সমস্তরকম সার্থকতা।
আপাতত বিরতি আমার ভাবনার! - আমার যাত্রা পথের সময়ে আমি
হয়তো স্বপ্ন দেখলাম।
অতি উত্সাহী পাখনার সহায়তায় জীবনের উচ্চ স্তম্ভের শীর্ষ সম্মেলনে পৌঁছানোর
স্বপ্ন।
এখন আমি উপস্থিত হয়েছি তার পাদদেশে। আমার ডানার পালক এখন গুটিয়ে
গেছে।
বিশাল বিশাল সিঁড়ির ধাপ এখন আমার আগে এবং
ধাপে ধাপে সেগুলো অতিক্রম করে আমায় উপস্থিত হতে হবে দেব দেউলে --
কেউ
অন্তত বলো - কোন দরজাটা খুলেছে আমার জন্য?
এক নতুন ক্ষমতার জগতে আমাকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো। একজন কূটনীতিবিদ রুপে : প্রাণোচ্ছল
শহরের মাঝে, সব সময় আনন্দ পেতে চাওয়া এক সমাজের একজন রুপে।
প্রতিশ্রুতিবান একটি যুবক; পরিণত হলো রাষ্ট্রদূতের প্রিয় মানুষে । কাম্বারল্যান্ডের
এক মেষপালকের কাছে যা অদ্ভুত এবং অনন্যসাধারন ব্যাপার । দমবন্ধ করা এক বিস্ময়ের সাথে আমি সেই উচ্ছ্বাসময় দৃশ্যের নাটকে প্রবেশ করলাম । যার অভিনেতারা হলেন সেই সব ভীরু
মানুষ যারা সলোমনের মতো মহিমান্বিত,অথচ এরা পরিশ্রমের ঘামে
নিজেদের সিক্ত করেন না । আবার তারা উদবেগ প্রকাশও করেন না।
খুব তাড়াতাড়ি একদম সময় নষ্ট না করে , আমি
এই অদ্ভুত জীবন ঘূর্ণিতে প্রবেশ করলাম;
ভুলে গেলাম আমার অধ্যয়নে এবং অ্যাড্রিয়ানের সাহচর্য মাখা সময়
গুলোকে। সহানুভূতিলাভের প্রগাঢ় বাসনা, এবং ব্যাকুল ভাবে উদ্দিষ্ট
লাভের সাধনা আমার ভেতরে থেকেই গেল।
যে কোন রকম সৌন্দর্যআমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। পুরুষ বা মহিলার আকর্ষণীয়
আচরণ আমার আস্থা লাভ করেছে।
আমি উচ্ছ্বসিত হয়েছি যখন কোনো হাসি আমার হৃদয়কে কম্পিত
করেছে। আমার শরীরে রক্তকনিকায় শিহরনের উচ্ছাস বয়ে যাচ্ছিলো যখনই
কিছু সময়ের জন্য কোন ভালো লাগা সুন্দরীর
দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। আমার ভেতরের পাশবিক প্রফুল্লতার নিছক প্রবাহ রাতের বেলায় নেশাগ্রস্থ
ভ্রান্তির সাথে আমাকে আচ্ছন্ন করছিল। চাইছিলাম
চমকপ্রদ আলোয় ভেসে থাকা অলঙ্কৃত আমার কক্ষে নানান সুদৃশ্য পোশাক পরিহিত অবয়বের আগমন হোক নাচের ভঙ্গিমায়। সাথে
থাকুক আদিম মাদকতাময় সঙ্গীত।
আমার ইন্দ্রিয়দের মাতিয়ে দিক এক আনন্দদায়ক স্বপ্নের
দুনিয়া।
এটা কি এক ধরনের সুখ নয়? আমি নৈতিকতাবাদী এবং ঋষিদের
কাছে আবেদন জানাচ্ছি। দয়া করে আমাকে বলুন,
পরমকে পাওয়ার আকাঙ্খায় শান্ত মুহূর্তে,
ঘণ্টার পর ঘণ্টা গভীর ধ্যানের সময় এরকম আপনাদের কি মনে হয় না যে এক যৌবনোচিত নতুন
রকমের উচ্চমার্গের আনন্দ স্তরে বিচরন করছেন ? স্বর্গের প্রতি আকৃষ্ট চোখের ওপর শান্তভাবের ঝলক কি আপনাদের একই রকম ভাবে অন্ধ করে না যেমন করে প্রবল
আবেগের অনুভূতি? অথবা শীতল দর্শন তত্ত্ব কি আপনাদের আত্মাকে সেই একই
অনুভুতি দেয় না যা একজন তরুণ তার স্বপ্ন লোকে বিচরণের আনন্দ থেকে লাভ করে ।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটাই সত্য যে , একজন সাধুর
একাকী ধ্যান অথবা কল্পলোকে কারো এলোমেলো বিচরন কোনটাই মানুষের হৃদয়কে পরিতৃপ্তি দিতে সক্ষম হয় না। আসলে এগুলোর
দ্বারা আমরা এক অপ্রত্যাশিত
ফাটকা খেলায় অংশ নিয়ে নিতান্তই অনুমানের পথে
হেঁটে চলি ।
চিন্তাভাবনার ওজনের নীচে আসল মন চাপা পড়ে যায় এবং এক হৃদয়হীন জগতে আমরা
তলিয়ে যাই যার একমাত্র লক্ষ্য যেন তেন প্রকারে
বিনোদন । কোন ফলপ্রসূ ব্যাপার থাকে না সেই মেকি উদারতাতে । ধারালো পাথরের টুকরো
দিয়ে সাজানো এক বিরাট হাঁ আসলে লুকিয়ে
অপেক্ষা করতে থাকে উচ্ছল হাসির অগভীর জলতরঙ্গের আড়ালে ।
এভাবেই আমি অনুভব করতে শিখলাম , যখন হতাশা, ক্লান্তি,
এবং একাকীত্ব আমার হৃদয়কে ঘিরে ধরে, তখন সব আনন্দই
মনে হয় ফাঁকা জনহীন প্রান্তরের মতো। আমার উচ্ছল প্রফুল্ল আত্মা যখন ভালবাসার
কথা বলতে চায়; এবং কোন পথ খুঁজে পায় না তাকে
ব্যক্ত করার, তখন সে তলিয়ে যেতে থাকে । এইভাবেই ধীরে ধীরে ভাবনার গভীরতাহীন আনন্দের সাথে দিন কাটাতে
কাটাতে ভিয়েনায় আমার জীবনটা হয়ে পড়ছিল উদাসীন মনমরা। গ্যেটে বলেছেন, যৌবনে আমরা কখনোই সুখী হতে পারব
না যদি না আমরা ভালবাসা খুঁজে পাই। আমি কাউকে ভালবাসি না; কিন্তু
আমার ভেতরেও একটি অস্থির ইচ্ছা দাপাদাপি করে অন্যের সামনে নিজেকে পেশ
করার।
চিরটাকাল আমি অকৃতজ্ঞতা এবং শীতল তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছি- যা আমাকে হতাশায় ভরিয়ে
দিয়েছে। এই অসন্তোষের প্রেক্ষিতে আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমার অধিকার আছে সমগ্র দুনিয়াকে ঘৃণা করার। এসব
ভুলতে আবার নিজেকে একান্তের আশ্রয়ে নিয়ে গেলাম; ডুবে গেলাম বইপত্রের জগতে
। আবার আমার মনে
আদ্রিয়ানের সমাজের অংশ হয়ে জ্ঞান তৃষ্ণার আনন্দ উপভোগ
ইচ্ছা জাগ্রত হল।
সমকক্ষ হতে চাওয়ার মধ্যে ঈর্ষার একটা বিরাট স্থান আছে। যা এক বিশেষ ধরনের খোঁচা দিতে থাকে
অনুভুতির জগতে । ওই সময়ে আমার
দেশের একজন মানুষ পুরো বিশ্বকে
মাতিয়ে দিয়েছিলেন তার নাম ও ব্যবহারিক
ক্ষমতায়। পাচ্ছিলেন প্রশংসা।
তিনি কি করছেন, তার ভবিষ্যত কর্ম সম্পর্কে অনুমান এই নিয়েই সবাই
মেতে থাকতো আলোচনায়। আমার নিজের জন্য এই ঈর্ষা
বা রাগ জন্মায়নি । কিন্তু মনে হচ্ছিল ওই বিশেষ
মানুষটা যে প্রশংসা পাচ্ছে তা আসলে আদ্রিয়ানের জন্য নির্দিষ্ট ছিল । আমাকেও ওই রকম প্রশংসার বৃত্তে প্রবেশ করতে
হবে- আশ্চর্যের চরম হয়ে- জগতের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য।
লর্ড রেমন্ড ছিলেন দরিদ্র পরিবারের এক অসামান্য পুরুষ। যৌবনের শুরু থেকেই তিনি তার আত্মগৌরব বিষয়ে
অতি মাত্রায় সচেতন ও স্পর্শকাতর
ছিলেন এবং সাথে সাথেই সম্পদের বিষয়ে তাঁর কামনা
নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করতেন। প্রাথমিক ভাবে
তার চাহিদা ছিল নিজের গৌরব বাড়ানোর দিকে; আর তার জন্য
তিনি সব কিছু বিবেচনা করে দেখতে রাজি থাকতেন। অহংকারী, তবু সম্মান প্রদর্শন
করার জন্য সব সময় তৈরী থাকতেন। উচ্চাভিলাষী, সাথে সাথেই খুব গর্বিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রদর্শনের বিষয়ে। সম্মান অর্জন
করতে ইচ্ছুক, কিন্তু পরিতৃপ্তি প্রদান করতেও ইচ্ছুক,
তা সে যেভাবেই তার জীবনে আসুক না কেন।
জীবনে বাস্তব বা কাল্পনিক অনেক রকম অপমানের
দ্বারপ্রান্তে তিনি গিয়েছেন । যার কিছু কিছু এতটাই হতাশাজনক যা তা্র
আত্মগৌরবের পক্ষে সহ্য করা বেশ কঠিন ছিল । তবু তিনি এরকম সব আঘাত সয়েছেন নীরবে
কারন প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা তার ছিল না।
এরই ফলশ্রুতিতে তিনি একটি শপথ নিয়ে
ইংল্যান্ড ত্যাগ করেন । যতদিন না ভালো সময় ফিরে আসবে; যতদিন না এ দেশ
তার ক্ষমতাকে অনুভব করতে পারবে তিনি প্রত্যাবর্তন করবেন না।
গ্রীক যুদ্ধগুলিতে অংশ নিয়ে
তিনি অভিযাত্রীর জীবন শুরু
করেন। বেপরোয়া সাহস এবং ব্যাপক প্রতিভা
তাকে অচিরেই নজর কাড়তে সাহায্য করে। তিনি হয়ে ওঠেন প্রিয়তম
নায়ক এই দেশের । জন্মসুত্রে বিদেশী মানুষটি তার
জন্মভুমির সাথে সম্পর্ক ত্যাগে রাজি না হওয়াটা বাধা হয়ে দাঁড়ায় এ দেশের উচ্চস্তরের
পদ লাভ করার ক্ষেত্রে। অবশ্য অন্যদের পদের শিরোনাম আনুষ্ঠানিক
ভাবে উচ্চতর হলেও লর্ড রেমন্ড এর অবস্থান ছিল সবার উপরে । তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গ্রীক সেনাবাহিনীকে বিজয়ী করেন ; তাদের
জয়লাভ ছিল আসলে তার নিজের জয়লাভ। জয়ী হয়ে তিনি যখন ফিরে এলেন , সমগ্র
শহর তাকে দেখার জন্য ছুটে এসেছিল । নতুন গানের
সুরে মথিত হলো তাদের জাতির আকাশ বাতাস। আর সেই গানে ঘোষিত হলো তাঁর গৌরব, বীরত্ব
এবং উদারতা । গ্রীক এবং
তুর্কিদের মধ্যে একটি সন্ধি হয়ে যুদ্ধবিরতি সুচিত হলো।
এই সময়ে, লর্ড রেমন্ড কিছু অপ্রচলিত নিয়মের সহায়তায়
সুযোগ পেয়ে ইংল্যান্ডে এক বিশাল
সম্পত্তির অধিকারী হয়ে যান । ফিরে আসার পর
তার ভাগ্যে জোটে এমন গরিমা ও সম্মান যা তাকে আগে দেওয়া হয়নি
। কিন্তু তার গর্বিত হৃদয় এই পরিবর্তন নিতে প্রাথমিক
ভাবে অস্বীকার করে। কি হবে যদি এই ক্ষমতা পেয়ে আগের রেমন্ড বদলে যায়? আকস্মিক সম্পদের ফলে প্রাপ্ত ক্ষমতা যদি একটি লোহার জোয়ালের মতো কাঁধে
চেপে বসে । যদিও ক্ষমতা অর্জন করাই তার সব সময়ের প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল। সমৃদ্ধি সাধনই
ছিল তার কাছে একমাত্র অগ্রগতির চিহ্ন ।
খোলামেলা ভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রকাশ বা ঘনিষ্ঠভাবে তার আলোচনা
সব ক্ষেত্রেই উদ্দিষ্ট বিন্দু ছিল একটাই - তার নিজের দেশে, ইংল্যান্ডে, বিরাট মাপের সম্মান
প্রাপ্তি।
কৌতূহলের সাথে আমি এই বিষয়টার
দিকে নজর রাখছিলাম। উত্তরাধিকারের সুত্রে তার ইংল্যান্ডে
ফিরে আসার ঘটনাগুলি আমাকে দিয়েছিল তীব্র আকাঙ্খার এক অনন্য অনুভূতি । লর্ড রেমন্ড দারুন সুদর্শন ছিলেন; সকলেই তাকে
পছন্দ করতো। মেয়েদের কাছে তিনি ছিলেন নায়ক সম। ছিলেন বিনয়ী। কথা মধু মাখানো
। সংস্কৃতির একটি নিখুঁত নমুনা । এই মানুষ ব্যস্ত ইংরেজ সমাজে যদি কিছু অর্জন করতে না পারেন তাহলে আর কে
পারবে? একটি পরিবর্তন নিয়ে আসে নতুন পরিবর্তনকে; পুরো
ঘটনা আমার ঠিকঠাক জানা
হয়নি ;
কারন
আদ্রিয়ান লেখা থামিয়ে দিয়েছিল এবং পারডিটার ক্ষমতা ছিল না
সঠিক ভাবে সব কিছু জানানোর।
গুজব রটে গিয়েছিল যে আদ্রিয়ান - কি
মারাত্মক কথাগুলো - পাগল হয়ে গেছে।
লর্ড রেমন্ড পরিণত হয়েছেন ছিলেন প্রাক্তন রাণীর প্রিয় পাত্রে । হতে
চলেছেন তার কন্যার ভাগ্যবান স্বামী। আসলে তা নয় , ওই উচ্চাকাঙ্ক্ষী
আসলে উইন্ডসর থেকে রাজ মুকুটে পৌছানোর পথটা
পরিষ্কার করছিলেন। আর তার জন্যই আদ্রিয়ান এর বিষয়ে ওই অসম্ভব কাহিনী ফাঁদা
শুরু হয়ে গিয়েছিল। সাথেই ওর বোনকে বিয়ে
করে রাজপদ লাভের উচ্চাভিলাষে নিশ্চিত ভাবে রেমন্ড স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছিল।
এই ধরনের কাহিনীতে অনেকটাই নানা
মানুষের উচ্চকিত ভাবনায় ভরাট হয়ে থাকে ; তবুও, এমন একটি কাহিনী আমার দীর্ঘস্থায়ী ভিয়েনায় অবস্থানকে
নাড়িয়ে দিচ্ছিলো। প্রিয় যুবক বন্ধুর থেকে এমতাবস্থায় দূরে থাকাটা অসহনীয় মনে হচ্ছিলো আমার। এবার আমাকে আমার প্রতিজ্ঞা পূরণ করতেই হবে। এই সময়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে নিজেকে । আমৃত্যু তার প্রকৃত সহযোগীর দায়িত্ব পালন
করতে হবে। বিদায় জানানোর সময় এসেছে সামাজিক আনন্দ ভোগকে । রাজনৈতিক চক্রান্তের মধ্যে ঢুকতে
হবে। যেতে হবে আবেগ এবং কিছু পরিমাণ
বোকামির গোলক ধাঁধাতে! জয় হোক, ইংল্যান্ডের! হে ইংল্যান্ড জন্মভুমি আমার , গ্রহণ
করো তোমার সন্তানকে! তোমার উন্নয়নের
স্বার্থে এবার আমার আশা ভরসা নিয়ে দৃশ্যমান হবো এক শক্তিশালী
থিয়েটারের রঙ্গমঞ্চে। সেখানে এমন এক নাটকে অভিনয় করতে হবে
যেখানে হৃদয় ও আত্মাই আমার একমাত্র
সম্বল।
কোন এক অপ্রতিরোধ্য কণ্ঠস্বর যেন আমায় ডাক
দিচ্ছে,
এক সর্বশক্তিমান আকর্ষণ করছে আমায় । দুই বছর দূরে থাকার পর আমি ফিরে এলাম
। বেশী সাহস দেখিয়ে
কাউকে কোনও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা থেকে বিরত রাখলাম
নিজেকে। কোনো রকম মন্তব্য করাই উচিত না এসময়ে এটা ধরে নিয়ে আপাতত চুপ থাকলাম। আগে দেখা করতে হবে আমার বোনের সাথে যে উইন্ডসর অরন্যের সীমানায় আদ্রিয়ানের
উপহার দেওয়া একটা ছোট্ট কুটিরে বাস করে । তার কাছ থেকেই আমি বর্তমান
সমস্যার বিষয়ে সত্য জানতে পারবো ।
জানতে পারবো কেন সে রাজকুমারী ইভাদনের দেওয়া সুরক্ষা ছেড়ে ওখানে চলে গেছে। সাথেই সাথেই রেমন্ড আমার তরুণ বন্ধুর ভাগ্য নিয়ে কে কি ধরনের ছিনি মিনি খেলার ছক কষছে।
আমি কখনোই উইন্ডসরের আশেপাশে থাকার সুযোগ পাইনি। উর্বরতা সমৃদ্ধজমিএবং চারপাশের সৌন্দর্য আমার মন ভরিয়ে দিচ্ছিল। আর সেটা আরো বেড়ে গেল
যখন সমৃদ্ধ অরন্যের নিকট পৌছালাম। বড় বড় ওক গাছ যারা শতাব্দীর সাথে সাথে বেড়ে
উঠেছে,ভেঙে পড়েছে বা কাটা হয়েছে , তারা জানান দিচ্ছে এক সময় কত দূর পর্যন্ত
বিস্তৃত ছিল এই অরন্য। আবার এমন জায়গাও দেখতে পেলাম যেখানে গাছ কেটে চাষাবাদের
জন্য বা নতুন গাছেদের বেড়ে ওঠার স্থান
নির্ধারণ করা হয়েছে । আর এটাই বহন করছে
উনবিংশ শতকের জন্মলগ্নের চিহ্ন। এখন সেই সব তরুণ গাছেরা উন্নত শিরে দাঁড়িয়ে আছে
প্রান্তর জুড়ে। আর এসবের মাঝেই এক প্রাচীনতম
স্থানে পারডিটার কুটিরের অবস্থান। আগে ওদিকটা ছিল বিশপগেট এর প্রসারিত পোড়ো জমি। যার পূর্ব দিক অন্তহীন ভাবে দৃশ্যমান এবং
পশ্চিমে চ্যাপেল অরন্য এবং ভার্জিনিয়া জলধারা সংলগ্ন বুনো ঝোপের প্রান্তর দিয়ে
ঘেরা। কুটিরের পিছনে দূরে ঘন বনের ছায়া ।
ওখানে হরিণ চরে বেড়ায়। যে কারনে
অনেকটা জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে । আর সেটাই এক সুন্দর বৈষম্যদায়ক সৌন্দর্যের জন্ম দিয়েছে নতুন জন্ম
নেওয়া ছোটো ছোটো গাছগুলোকে নিয়ে একটা সমন্বয় সাধন করে। এরা সব পরবর্তী সময়ের
প্রতিনিধি। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্ভয় চিত্তে আগত সময়ের প্রতীক্ষায়। এটাই ওদের
সংগ্রাম। লড়ছে, ভেঙে যাচ্ছে, আবার খাড়া হয়ে দাঁড়াচ্ছে নতুন প্রানে। একে অপরকে ছুঁচ্ছে।
তাদের দুর্বল শাখাপ্রশাখা হাওয়ার তাড়নায় আলোড়িত হচ্ছে। আর ওরা আবহাওয়ার সাথে লড়ে
যাচ্ছে নাবিকের মতো ।
একটি হালকা বেড়া দিয়ে ছোট্ট কুটিরের চারপাশের বাগানটা ঘেরা । মনে হচ্ছে প্রকৃতির মহিমার মাঝে এক টুকরো ভুলে যাওয়া
সময় থমকে দাঁড়িয়ে আছে। বসন্তের প্রকৃত সন্তান
ফুলেরা বাগানটাকে সুশোভিত করে রেখেছে। এক মৃদু সুগন্ধমাখা বাতাস বয়ে চলেছে । কম্পিত হৃদয় নিয়ে আমি চত্বরে
প্রবেশ করলাম। প্রবেশদ্বারের কাছে
দাঁড়িয়ে আমি শুনতে পেলাম তার কণ্ঠস্বর । সুমধুর ঠিক যেমন আগে ছিল । আমি আশ্বস্ত
হলাম সে ভালোই আছে।
এক মুহূর্ত বাদেই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো পারডিটা; তাজা
ফুলের মতন এক যুবতী যে এগিয়ে
যাচ্ছে নারীত্বের পথে। পার্বত্য
অঞ্চলের একেবারেসেই মেয়েটি যাকে আমি রেখে
গিয়েছিলাম, তবুও যেন একটু আলাদা রকম। চোখে এখনো সেই এক
ই রকম শৈশবকালের গভীরতা। স্পষ্টভাষী
মুখমন্ডলেও ঘটেনি কোন পরিবর্তন। কিন্তু অভিব্যক্তিগত ক্ষেত্রে
এসেছে বদল, হয়েছে উন্নতি । দেখে মনে হচ্ছে
বুদ্ধি যেন তার কপালে স্থান গ্রহণ করেছে।
হাসলেই মুখে ছড়িয়ে পড়ছে এক নরম সংবেদনশীলতা । সাথেই তার নিচু কন্ঠস্বর আর সুললিত হয়েছে প্রেমময় ভাবে।
ওর ব্যক্তিত্ব এখন সঠিক মেয়েলি অনুপাত খুঁজে পেয়েছে। ও কখনোই লম্বা
ছিল না,
কিন্তু পাহাড়ীজীবন যাত্রার স্বাধীনতা থেকে সে পেয়েছিল
চলাফেরায় এক অন্য রকমের গতিময়তা। আর তার জন্যই আমার দিকে ওর ছুটে আসার হালকা পদক্ষেপেও ধ্বনিত
হচ্ছিল উচ্ছাসের শব্দ। যেদিন আমরা বিচ্ছিন্ন
হয়েছিলাম সেদিন ওকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরে সব রকম
উষ্ণতার ছোঁয়াচ দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করেছিলাম । এতদিন বাদে দেখা পেয়ে নতুন নতুন অনুভূতি
জাগ্রত হচ্ছিল । সময়ের সাথে সাথে এই
রঙ্গমঞ্চে কখন যেন দুটি
চরিত্র শৈশব পার হয়ে নতুন অভিনেতা হিসাবে পরিবর্তনশীল দৃশ্যপটে উপস্থিত
হয়েছে। ক্ষনিকের বিরতি এসেছিল । আর এখন
দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা আবেগের জোয়ার
বন্যার জলের মতো ধেয়ে এলো বুকের মাঝে হৃদয় জুড়ে। আমরা একে অপরকে আলিঙ্গন করলাম।
অনুভুতির উত্তেজিত এই বিস্ফোরণ এক সময় স্তিমিত হলো, আমরা শান্ত মনে বসলাম একসঙ্গে, শুরু হলো অতীত ও বর্তমানের বিষয়ে কথা বলা। আমি পরোক্ষভাবে ওর
তথাকথিত উত্তেজনাহীন সাদামাটা চিঠিগুলোর কথা উল্লেখ করলাম । অবশ্য কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে
সাথেই সে বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যাখ্যাও পেয়ে গেলাম। শৈশব থেকে যাকে
একমাত্র আপন বলে জেনে এসেছে তাকে সেই সব অনুভূতিগুলো
লিখে বোঝানো ওর পক্ষে সম্ভব ছিল না।
আমি বুঝতে পারলাম আমাদের যে অন্তরঙ্গতা সেই আগের মতই আছে, এ
নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। আমি ওকে বিদেশে আমার ভ্রমণের দিন গুলির ঘটনা বিস্তারিত
ভাবে
বললাম। তারপর জানতে চাইলাম
এখানকার বিষয়ে । আদ্রিয়ানের অনুপস্থিতিতে কি কি ঘটেছে
এবং পারডিটা কি ভাবে কাটিয়েছে তার নির্জন একাকী জীবন ।
আমি যখন আমার তরুণ বন্ধুর কথা জানতে চাইলাম তখন আমার বোনের দু চোখ বেয়ে নেমে এলো অশ্রুধারা। আর এতেই
আমি বুঝে গেলাম যে সমস্ত খবর আমার কাছে পৌছেছে সেগুলো কতটা সত্যি। যদিও সেই সময়
আমি সেগুলোকে ত তটা গুরুত্ব দিতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল আদ্রিয়ান কি সত্যি
সত্যিই পাগল হয়ে যেতে পারেন? নিজের ওপর তার নিয়ন্ত্রন নেই? আদ্রিয়ানের ভাবনা
চিন্তার জগতটা কি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে
মহাবিশ্বের অরাজকতার রাজ্যে ছিটিয়ে যেতে পারে কখনো ?
প্রিয় বন্ধু আমার , এই
অসুস্থ বিশ্ব আসলে তোমার নম্র ভব্য আত্মার জন্য সঠিক নয়। তুমি এর শাসকদের
মিথ্যাই মানবতার পাঠ দিতে চেষ্টা করছো;
ওরা হল সেই গাছের মতো যারা শীতকালে সব পাতাদের দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আর
নিজেদেরকে উলঙ্গ করে দেয় শয়তানী বাতাসের মন্দ
পরিচর্যায় । আচ্ছা তোমার সেই আত্মার সাথে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন চোখ দুটো কি নষ্ট
হয়ে গিয়েছিল, নাকি নৈতিক অবনতির ভয়ানক কাহিনী প্রকাশ হতে দেখে চোখ বুঁজে
ফেলেছিল? তোমার সেই কন্ঠস্বর কি হারিয়ে
ফেলেছিল জাদু মাখানো বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষমতা ? তাহলে তো ভয়ানক ব্যাপার, খুবই ভয়ানক! চোখ বন্ধ করে ফেললাম এই অভাবনীয় পরিবর্তনের কথা
অনুধাবন করে । আমার সহানুভূতি চোখের জলের রুপ নিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকলো
অকল্পনীয় এক ভগ্নস্তুপের কথা ভেবে।
আমার অনুরোধে বাধ্য হয়ে পারডিটা বিস্তারিতভাবে ঘটনাটা শোনা্লো
আমাকে ।
আদ্রিয়ানের মানসিকতাটাই ছিল সবার সাথে মেশার এবং কাউকে সন্দেহ না করার । সব রকমের করুণা, প্রতিভা এবং বিচ্যুতিহীন হবে তার মন এই উপহার তিনি পেয়েছিলেন প্রকৃতি থেকে। যদিও একটা
বিচ্যুতি তার ছিলই। আর সেটা হলো, অন্যের ভাবনার
প্রেক্ষিতে নিজের অত্যধিক স্বাধীনতার ভাবনা সম্পন্ন মনটা বিশ্লেষণ করতে না পারা
। আর এই কারনেই তিনি ইভাদনের ভালোবাসায় নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়ে আ্সলে
নিজেই নিজেকে বলি দিয়ে দিয়েছেন ।
ভালবাসার পথ চলায় তিনি তাঁর আত্মা স্বরুপ ধন-সম্পদ
সংরক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন ইভাদনের ওপর।
যার সহায়তায় তিনি মানবজাতির
উন্নতির আশায় তার পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। দিন বদলের
সাথে সাথেই তিনি অনুভব করছিলেন নিজের
ভেতরের আন্তরিক শক্তিটাকে। সেটার ফলে
তার পরিকল্পনা ও তত্ত্বগুলি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছিলো ব্যক্তিগত এবং বিচক্ষণ
উদ্দেশ্যর প্রেক্ষিতে। ওদিকে ইভাদনের জন্য তার প্রেম হয়ে উঠছিল গভীর । প্রতিদিন তিনি
অনুভব করছিলেন আগামি দিনের পথ ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে তার জন্য। এই সময়ে তার হৃদয়
চাইছিল এক বিশেষ প্রশংসা। না , তার আশেপাশের জগতে ঘোরা ফেরা করতে থাকা মানুষজনের
প্রশংসা নয় , কারন তার পরিকল্পনাগুলো সফল হওয়া বেশ কঠিন। বরং এ প্রশংসা তার নিজের হৃদয়ের অনুমোদন, তার ভালবাসার
জনের সহানুভূতি । কারন সেটাই
একমাত্র পারে যে কোন রকম শ্রম এবং ত্যাগের ক্লান্তি ও কষ্টকে অপনোদন করতে।
একান্তে এবং ক্রমাগত মানুষের জিজ্ঞাসাবাদ
থেকে দূরে সরে গিয়ে ইংরেজ সরকারের সার্বিক সংস্কার এবং মানুষের উন্নতির জন্য নিজের সুচিন্তিত মতামত শানিত করতে থাকেন
তিনি । তবে আদ্রিয়ান যদি নিজের আবেগকে গোপন রাখতে পারতেন অন্তত ততদিন পর্যন্ত
যত দিন না তিনি ক্ষমতার সিংহাসনে আরোহণ করেন তাহলে ভালো হতো । কারন তার ফলে তিনি যে ভাবনা ভেবেছিলেন তার বাস্তবায়ন সুরক্ষিত হতে পারতো। কিন্তু আদ্রিয়ান কাজ
করতেন হৃদয়ের কথা মেনে নির্ভীকতার সাথে ,
ফলে অপেক্ষা করা তার ধাতে ছিল না। কেবলমাত্র তার মায়ের পরিকল্পনার বিরোধিতা করাতেই নিজেকে
স্তিমিত রাখেননি সাথে সাথেই নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে আভিজাত্য শক্তি হ্রাস করার যে ইচ্ছে, সেটাও প্রকাশ
করে ফেলে্ন। জানিয়ে দেন এর ফলে ইংল্যান্ডে রিপাবলিকান সরকারের এক নিখুঁত পরিচালন
ব্যবস্থা চালু হবে যেখানে আর্থিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আসবে এক সাম্য।
প্রথমে তার মা তার ভাবনাকে অশিক্ষিত মানুষের অনভিজ্ঞতার সাথে তুলনা
করেন। কিন্তু আদ্রিয়ানের
ভাবনা তত্ত্ব পদ্ধতিগতভাবে এতটাই সাজানো গোছানো ছিলো যে , আপাত
দৃষ্টিতে সবটাই অলীক ভাবনা বলে মনে হলেও রানীমার মনে একটা ভয় ঢুকে পড়ে। অনেক যুক্তিজাল বিস্তার করে
তিনি ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা
করেন এবং বুঝতে পারেন একে নড়ানো যাবে না। আর এখান থেকেই তখনই মায়ের মনে
ছেলের প্রতি ঘৃণার সুত্রপাত হয়।
অদ্ভুত মনে হলেও, এই অনুভূতিটা সংক্রামক ছিল। ভালোর জন্য আদ্রিয়ানের উদ্দীপনা ক্রমশঃ অস্তিত্ত্বহীন হতে শুরু করে
সবার কাছে;
পবিত্র
কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তার অবমাননা; তার আবেগ এবং অস্পষ্ট জীবনযাত্রা স্বাভাবিকতার উলটো পথে হাঁটা বলে
বিবেচিত হচ্ছিল।
সবাই তাকে মনে মনে ভয় পেতে শুরু করলো; তার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলির উজ্জ্বল তীব্রতা বোঝার ক্ষমতা
তার সময়ের তরুণ এবং অনভিজ্ঞদের ছিল না। তারা ওকে মনে
করলো নিজেদের চেয়ে আলাদা গোত্রের, ব্যাস এর থেকেই তাকে অপছন্দ করাও শুরু হয়ে গেল।
ইভাদনে আদ্রিয়ানের ভাবনার জগতটায় ঢুকতে পারলেও তাতে উচ্ছ্বাস ছিল না। আদ্রিয়ানের চিন্তার জগত নিয়ে কোনো
প্রশ্ন না করলেও মনে মনে তিনিও কিন্তু চাইছিলেন ভাবনাগুলো জনতার কাছে
বোধগম্য হোক। কোনো এক নীতির জন্য শহীদ হওয়ার মানসিকতা তার ছিল
না। সাথে সাথেই একজন অসুরক্ষিত দেশপ্রেমিকের পরাজয়ের লজ্জা ভাগাভাগি করার ইচ্ছেও তার
ভেতর ছিল না। তিনি ভালো ভাবেই সচেতন ছিলেন তার উদ্দেশ্য বিষয়ে। যদিও
ইভাদনে ভালো করেই জানতেন আদ্রিয়ানের তার প্রতি উদারতা, খাদহীন ভালবাসার মাত্রাটা কি প্রকারের। তার বিনিময়ে
স্নেহের অভিনয় করাটা তিনি বন্ধ করেনি। উলটো দিকে আদ্রিয়ান প্রতিদানে অসাধারণ কৃতজ্ঞতার উদাহরন পেশ করে
ইভাদনেকে বসিয়ে দিয়েছেন নিজের হৃদয়ের সিংহাসনে
তার সব আশা ভরসার মালকিন ভেবে নিয়ে।
ঠিক এই সময়েই লর্ড রেমন্ড গ্রিস থেকে ইংল্যান্ড ফিরে এলেন ।
আদ্রিয়ানের তুলনায় একেবারে বিপরীতমুখী একটি চরিত্র। তার সবরকম অসঙ্গতি সাথে নিয়েও রেমন্ড ছিলেন এক
জনপ্রিয় মানুষ । তার আবেগের মাত্রা ছিল সহিংস; যেহেতু
এই গুন বা দোষ প্রায়ই তার উপর প্রভুত্ব
করতো
সেই কারনে তিনি কখনোই নিজের প্রয়োজন বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট পথে তার আচরণকে ধরে রাখতে
পারতেন না। কিন্তু আত্মতুষ্টির দিকটা তার কাছে
সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্ব পেতো । তিনি সমাজের কাঠামোকে একটা যন্ত্রের মতো করে বিচার
করতেন আর সেখানেই খুঁজে নিতেন নিজের চলার পথগুলোকে। পৃথিবী তার মানসপটে কাছে
এক বিরাট রাজপথের মতো ছড়িয়ে ছিল। আকাশকে তার মনে হতো একটি ছাদ যার নির্মাণ কেবলমাত্র
তার জন্যই হয়েছে।
অন্যদিকে আদ্রিয়ান মনে করতেন তার জন্ম হয়েছে এক মহান সম্পূর্ণতার অংশ রুপে। তার অনুরাগ শুধুমাত্র
মানবজাতির সঙ্গেই নয় বরং সমগ্র প্রকৃতি তার
সঙ্গে
সম্পৃক্ত;
পাহাড় এবং আকাশ তার বন্ধু ; ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস
এবং এ পৃথিবীর সব কিছু তার খেলার সাথী; এই ভাবনার প্রেক্ষিতে যখন সেই পরাক্রমশালী
জীবনের
আয়নার নিজেকে দেখেন তখন অনুভব করেন, তার
জীবন আসলে জড়িয়ে পেঁচিয়ে আছে এই মহাবিশ্বের অস্তিত্বে সাথে। তার আত্মা
সহানুভূতির রুপমাত্র আর সেটা উৎসর্গীকৃত হয়ে আছে মহান উদ্দেশ্যে, সৌন্দর্য এবং
শ্রেষ্ঠত্বের উপাসনায়। আদ্রিয়ান এবং রেমন্ড এখন এসে পড়েছেন পরস্পরের চলার
পথের বাঁকে । আর সাথে সাথেই এক সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট জন্ম নিয়েছে । আদ্রিয়ানের মতে রাজনীতিবিদদের ভাবনা সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির। ওদিকে রেমন্ড তখন মানবহিতকারী ভাবনার এক প্রতীক রুপে শীর্ষস্থানে অবস্থান
করছিলেন
রেমন্ডের আগমন হলো এক বিধ্বংসী ঝড়ের মতো যার ফলে আদ্রিয়ানের আনন্দ
কল্পনার জগতটা তছনছ হয়ে গেল । সেই পথটা হারিয়ে গেল যেটা আদ্রিয়ান নিজের জন্য সুরক্ষিত ভেবেছিলেন। এ পরাজয় অবমাননাকর। রেমন্ড গ্রীসের উদ্ধারকর্তা, বীর সৈনিক যার নামে অনেক
গল্প জন্মেছে , যা তার জন্মস্থানের ভিত্তিতে অদ্ভুত রকমের , তার দিকেই এবার নজর পড়লো ইভাদনের ।
রেমন্ডও ইভাদনেকে পছন্দ করেছিলেন। নতুন চমক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইভাদনে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে বা আর কেউ
এই আচরণে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কিনা সেটা না ভেবে নিজের হৃদয়ের সাম্রাজ্যকে
অর্পণ
করে দিলেন এক উদ্ধত মানুষের কাছে। রেমন্ডের আচরণ এতটাই প্রভাব বিস্তার করলো যে, যে মনটি একদিন খুব নরম আবেগ অনুভূতি পছন্দ করতো তার
কাছে এখন আদ্রিয়ান এর আচরণ অযৌক্তিক বোধ হতে থাকলো । ইভাদনের আচরণ
হয়ে গেল খামখেয়ালী । মৃদু নম্র আচরণ বদলে গেল অদ্ভুত
রকমের শীতলতায়। কখনো কখনো সে আচরণে বন্যতার প্রকাশ পেলো
আবার কখনো আগের মতোই শান্ত ভাব । কিন্তু এই
অস্থিরতার যে ঝাঁকুনি তা আদ্রিয়ানের
মতো সংবেদনশীল যুবকের আত্মাকে গভীর ভাবে আঘাত করলো ।
এ জগতটাকে তার আর বিশ্বাস হচ্ছিল না, কারণ তিনিতো তখনো ইভাদনের
প্রেমে আবিষ্টই ছিলেন। স্নায়ুর উদ্দীপনায় অনুভব করতে পারছিলেন মানসিক মহাবিশ্বের ভয়ানক ঝড় তার ওপর প্রভাব বিস্তার
করছে। যা তাকে ভেতরে
ভেতরে কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
পারডিটা তখন ইভাদনের সাথেই থাকতো। দেখেছে যারা
আদ্রিয়ান কি পরিমাণ কষ্ট সহ্য সহ্য করছে। আদ্রিয়ানকে নিজের বড় দাদার মতোই ভালোবাসতো ও ।
যে সম্পর্কের ভেতর ছিল নতুন জীবনের চলার পথে সুরক্ষা এবং পথ নির্দেশ। কিন্তু ছিল
না অভিভাবক সুলভ স্বেচ্ছাচার। আদ্রিয়ানের গুণাবলী তাকে মুগ্ধ করতো। একই সাথে সে দেখে যেত ইভাদনে কি ভাবে
মানুষটাকে কষ্ট দিচ্ছে, কোন এক জনের কথা ভেবে যে তাকে সে ভাবে ফিরেও দেখে না। এই একচেটিয়া হতাশার দিনগুলোতে আদ্রিয়ান প্রায়ই আমার
বোনের খোঁজ করতো এবং মনের দুঃখ প্রকাশ করতো । বোঝাই
যেত একই সাথে ধৈর্য ধরার ইচ্ছে এবং কিছু না করতে
পারার তার মনকে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে ।
জলদিই তাকে এরমধ্যে যে কোন একটাকে বেছে
নিতে হবে। তার আবেগে ক্রোধের কোন অংশই ছিল না। কার ওপর তিনি রাগ করবেন? রেমন্ডের
ওপর করাই যায় না কারন সে জানেই না তার
কারনে কেউ দুঃখ পাচ্ছে । ইভাদনের ওপর কি
করে রাগ করবেন, ওর জন্য তো আদ্রিয়ানের আত্মা সব সময় রক্তাশ্রু ঝড়ায় – এক বোকা ,
ভুল পথ বেছে নেওয়া মেয়ে, স্বেচ্ছাচারের ক্রীতদাস বনে গেছে। নিজের দুঃখের মধ্যেই তিনি ইভাদনের ভবিষ্যত নিয়তির
জন্য দুঃখ করতেন। একবার আদ্রিয়ানের একটি লেখা পারডিটারর হাতে এসে গিয়েছিল; যেটায় চোখের জলের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো - আর কি দিয়েই বা সেটা চিহ্নিত হতে পারতো -
"জীবন"
-লেখাটি এইভাবে
শুরু হয়েছিল - "রোম্যান্সের লেখকেরা যে ভাবে এর বর্ণনা করেন
এটা মোটেই তা নয়; যাকে দেখা হয় নাচের মতো ছন্দ মেনে। বিভিন্ন ওঠা নামার শেষে একটি উপসংহার
আসে, যখন
যারা নাচ করছিল তারা বসতে পায় বিশ্রাম করার জন্য । আসলে জীবনের উপস্থিতিতে আছে নানা রকম কাজ এবং পরিবর্তন। তার দোলায় নেচে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি। আমাদের প্রতিটি ভাবনা চিন্তা আমাদের
অভিভাবকদের ভাবনার সাথে এক সুত্রে আটকে থাকে।
প্রতিটি কাজ তার আগের কাজের ভিত্তিতেই হতে থাকে। কোন আনন্দ বা দুঃখ এমনি এমনি ঘটে না কোন বংশধরের
ক্ষেত্রে। সেটা আসলে ক্রমাগত নির্মানের
এক চক্র , যা হয়ে এসেছে এবং হতেই থাকে। আর এর ফলে যে উত্থান পতন মন্থন সেটাই আমাদের
জীবনটাকে রুপদান করে।
“আন দিয়া লামা এ
অত্রো দিয়া
য় অ্যাস ই লামা, য় এন কাদেনা
ল্যান্তো আ ল্যান্তো, য় পেনা এ পেনা ।”
সত্যি করেই হতাশাই হল মানুষের জীবনের অভিভাবক
দেবতা স্বরুপ; যে বসে আছে অনাগত সময়ের দোরগোড়ায়, আর পরিচালকের মতো নিয়ন্ত্রন করছে
ঘটনাগুলোকে যা একে একে সামনে আসছে।
কখনো যদি একবার আমার হৃদয় আলতো করে আমার বুকে আশ্রয় নেয়, মেলে
ধরে নিজেকে; মনে হয় এ ধরার সব সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ সুন্দর, আমার আত্মার আলোয় আলোকিত হয়ে। জানিনা, কেন যে প্রেম এতে যোগদান
করে আমাদের নশ্বর জীবনের স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করার জন্য। অথচ আমরা যখন সেই সরলতায় ভরা পশুটার জন্যই একটা আলাদা
স্থান বানিয়ে দিই আমাদের হৃদয়ে , তার সহচরাও ওর সঙ্গে প্রবেশ
করে সেখানে এবং দয়ামায়াহীন ভাবে
নোংরায় ভরিয়ে দেয়, এটাই যে তাদের আশ্রয়স্থল... তাদের ঘর সেটা মনেও রাখে না। ”
এসব কারনেই তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়তে শুরু করলো । সাথে সাথেই তার বুদ্ধি নিষ্পেষিত হতে থাকলো এক
আতঙ্কের বাতাবরনে। তার আচরণ বদলে যেতে শুরু করলো। কখনো তা উত্তেজনার
উচ্ছাসে ভয়ানক রকমের বিরক্তিকর আবার কখনো
একেবারে চুপচাপ অকৃতকার্যতার বিষাদে শোষিত নিশ্চুপ। এর
মধ্যেই হঠাৎ ইভাদনে লন্ডন ছেড়ে প্যারিস যাওয়ার পথে রওনা
দিলেন; আদ্রিয়ান অনুসরণ করলেন ওনাকে এবং জাহাজ ছাড়ার আগে মুহূর্তে
ওদের সাক্ষাৎ হলো। কেউ জানে না তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল। এরপর পারডিটা আর আদ্রিয়ানের
দেখা পায় নি। কোন নির্জনে তিনি আশ্রয়
নিয়েছেন সেটাও কেউ জানে না। শুধু জানা যায় এর পেছনে তার মায়ের একটা ভুমিকা আছে।
সমাপ্ত
[শীঘ্র আসছে মূল পর্ব - ১ম অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ ]
No comments:
Post a Comment