Search This Blog

Thursday, January 11, 2018

দরজার ওপাশে... - প্রতিম দাস

দরজার ওপাশে ...
প্রতিম দাস
[ বছরের শুরুতেই স্বয়ং Robert Burton Robinson এর কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছি তার লেখা অনুবাদ করা ও আপনাদের পড়ানোর । আজ “ Screen 13” গল্পের ভাবানুবাদ “দরজার ওপাশে ...” ]
00000
জেসিকা লোকটার টিকিটটা ভালো করে দেখলো । তারপর একটা কোনা ছিঁড়ে নিয়ে বাকিটা ফেরত দেওয়ার সময় বললো, ’১৩ নম্বরে । ডানদিকে চলে যান । ওই কোনার দিকে। একেবারে শেষে ।’
আরে! ডেবি অবাক হয়ে গেল। জেসিকা লোকটাকে ১৩ নম্বরে যেতে বললো কেন? সবে মাত্র এই সপ্তাহেই জেফারসন সিনেমা হলে কাজটা পেয়েছে। তাসত্বেও ও ভালো করেই জানে নামে সিনেমা হল হলেও এই মাল্টিপ্লেক্সে কোনও ১৩ নম্বর হল নেই ।
কৌতূহল দমাতে না পেরে লোকটার পিছু নিলো ডেবি ।
ততক্ষনে লোকটা কোনার দিকের ঘরটার কাছে প্রায় পৌঁছে গেছে। ডেবির ইচ্ছে টিকিটটা দেখে সঠিক হলের পথ বলে দেওয়ার। 
কোনার দিকে একেবারে শেষের ঘরটার দরজা খুলে লোকটা ভেতরে ঢুকে গেলো ।
আরে, কি মুস্কিল । লোকটা কি চোখে দেখতেও পায়না নাকি । ওটাতো স্টোর রুম ।
ডেবি দ্রূত এগিয়ে গেল। দরজাটা ধরে টেনে খোলার চেষ্টা করলো । লাভ হলো না । লকড!!! মুখ তুলে অপরের ইলেক্ট্রিক লেখাটা দেখতে গিয়ে আরও একবার অবাক হলো । কিছুই লেখা নেই ওখানে। অদ্ভুত ব্যাপার!!!
লেখা ছিলও না কোনোদিন । ডেবি জানে ওটা স্টোর রুম।
বার কয়েক হাতের চাপড় মারল দরজায় । 
কোনও সাড়া এলোনা ভেতর থেকে ।
পাশের ১২ নম্বর হল থেকে বেরিয়ে এল জ্যাক । ‘হ্যালো ডেবি । শো শেষ হলে বার্গার খেতে যাবে নাকি আমার সাথে?’
‘জ্যাক এই হলটার কি ব্যাপার বলোতো?’
‘আরে ওটাতো হল নয় । ট্রেনিং এর সময় তোমাকে কেউ বলেনি?’
‘বলেছিল বলেইতো-
‘-হুম, আসলে হলের মালিক খুবই কুসংস্কারচ্ছন্ন মানুষ। যে কারনে ১৩ নম্বর হলটাই রাখেননি ।’
‘সেটাও জানি। কিন্তু একটু আগে একটা লোক ওটার ভেতরে ঢুকে গেল ।’
‘একটা লোক? ধুসসস... হতেই পারেনা ।’
‘জেসিকা লোকটার টিকিট দেখে ওকে এই ঘরেই যেতে বললো । আমি স্পষ্ট শুনেছি ওকে বলতে ।’ 
‘ তা কি করে হয়। দ্যাখো বোধ হয় ভুল করেছে। গতকাল লেট নাইট পার্টিটারটি করে হ্যাঙ্গওভার কাটেনি মনে হয় ।’
‘হতে পারে । কিন্তু লোকটা ভেতরে ঢুকেছে এটাতো আমি দেখেছি !’
জ্যাক দরজা ধরে বার দুয়েক টানলো । ‘দূর, এটাতেতো তালা মারা আছে। ’
‘সেটাও দেখতে পাচ্ছি । বিশ্বাস করো আমি কিন্তু সত্যিই দেখেছি ।’
জ্যাক বার কয়েক টোকা মারলো । কেউ সাড়া দিল না।
জ্যাক কাঁধ নাচিয়ে বললো, ‘রাতে বার্গারের প্রোগ্রাম...’
‘আজকে হবে না।’
‘ওকে । নো প্রব্লেম। কাল যাবো । ঠিক আছে । বাই ।’
জ্যাক চলে গেল । ডেবি বাকি সময়টা কাজের ফাঁকে ফাঁকে দরজার দিকে নজর রাখলো । লোকটা কিন্তু বেরিয়ে এলো না । 
০০০০০
পরেরদিন ডেবি কান খাড়া করে রইলো জেসিকা কাকে কি বলছে সেটা শোনার জন্য। অবশেষে রাতের শোয়ে শুনতে পেলো জেসিকার একই নির্দেশ । এবার একজন মাঝবয়সী মহিলা। দ্রুত মহিলার পিছু নিলো ডেবি । কিন্তু পুরোটা যেতে পারলো না । তার আগেই পেছন থেকে একজন ডেকে উঠলো, ‘এক্সকিউজ মি!’
‘হ্যাঁ বলুন,’ ডেবি হেসে উত্তর দিলো । ওদিকে মহিলাটি অনেকটা এগিয়ে গেছেন।
‘না মানে আমি পপকর্ণ কিনতে গিয়েছিলাম । টিকিটটা আমার স্ত্রী কেটেছিল। কত নম্বর হল সেটা জানা নেই । এই যে টিকিটটা । একটু বলে দিন না প্লিজ ।’
‘ ২৪ নম্বর। ওই দিকে সোজা গিয়ে লাল ফুলের টবের পাশের দরজা ।’ বলেই টিকিট ফিরিয়ে দিয়ে ডেবি ১৩ নম্বরের দিকে তাকালো ।
মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন স্টোর রুমটার সামনে। দেখছেন ওপরের সাইন ।
ডেবি দূর থেকেই দেখতে পেলো সাইনটার আলো।
দরজা খুলে মহিলা ঢুকে গেলেন ভেতরে ।
ডেবি না ছুটে যতটা দ্রুত হাঁটা যায় সেভাবেই এগিয়ে গেলো ।
মহিলা ভেতরে ঢুকে যেতেই ডেবিকে অবাক করে সাইনটা নিভে গেল।
ডেবি এবার ছুটতে শুরু করলো । এসব হচ্ছেটা কি?
দরজার কাছে গিয়ে কিছু লাভ হলো না। ওটা আগের মতোই লকড !
‘হেই ডেবি ! হাতে কাজ না থাকলে। এদিকে আমদের একটু সাহায্য করোতো!’
ডেবি ঘুরে দেখলো, জ্যাক আর হেনরী । ট্রলিতে চাপিয়ে ঠেলে নিয়ে আসছে তিনটে বড় বড় নোংরা ফেলার জায়গা ।
‘যাচ্ছি।’ 
মাল্টিপ্লেক্সের বাইরে বেরিয়ে এসে বড় ডাস্টবিনের ভ্যাটের কাছে এসে হেনরী নোংরা ফেলার ড্রামগুলোর ঢাকনা খুলতেই ভক করে একটা দুর্গন্ধ এসে লাগলো ডেবির নাকে । ‘অ্যাহহহ! কি বিশ্রি গন্ধ!’
‘কি রকম গন্ধ পাবে বলে আশা করেছিলে সুইটি?’
‘তা বলতে পারবো না। তবে এরকম যে আশা করিনি তা বলতেই পারি । বাসি পপকর্ণ, আধ খাওয়া ক্যান্ডি, বার্গারের সস...এসব মিশে এরকম গন্ধ হয় জানতাম না। জ্যাক তোমার টর্চটা একবার দাওতো!’
‘এই নাও।’
জ্যাকের কাছ থেকে টর্চটা নিয়ে ডেবি একটা ড্রামের ভেতর আলো ফেললো ।একটু দেখে বললো, ‘ওটা কি?’
জ্যাক তাকালো ভেতরের দিকে । ‘কোনটা?’
‘ওই যে লাল রঙের কি লেগে আছে!’
না বুঝতে পারার ভঙ্গী করলো জ্যাক ।
হেনরী ইয়ার্কির সুরে বললো, ‘ভ্যাম্পায়ারের আধ খাওয়া রক্ত ।’
হেসে উঠলো জ্যাক ।
‘সবেতেই ইয়ার্কি ভালো লাগে না ।’
‘ঠিক! ঠিক! তা ম্যাডাম ব্যাপারটা কি বলা যাবে কি?’
উত্তরটা হেনরী দিলো, ‘ডেবির মনে হয় ধারনা হয়েছে ওখানে কাউকে খুন করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে । উওওওওওওও!!! বাবারে! আমার ভয় লাগছে!’ বলেই হি হি করে হেসে উঠলো ।
‘ তা হতেও পারে । আমাদের ম্যানেজার যা রাগী মানুষ । কেউ বোধ হয় ফ্রী পপকর্ণটা মিইয়ে গিয়েছিল বলে উনাকে টেম্পার দেখিয়েছে আর উনিও দিয়েছেন তার গলা কেটে।’
‘এটাও হতে পারে,’ হেনরী বললো গম্ভীর ভাবে, ‘স্ন্যাক্স বারে বার্গারের সাথে আচারের প্যাকেটটা ছোটো দিয়েছিল বলে কেউ গালিগালাজ করেছে, ব্যাস!! খ্যাচাং!!’
‘আচারের প্যাকেট ছোটো দিয়েছিল বলে...উও ওওও ...পারিস বটে হেনরী তুই,’ বলেই হেসে হো হো করে হেসে উঠলো জ্যাক । তাতে যোগ দিলো হেনরীও।
‘সত্যি তোমাদের সাথে সিরিয়াস কথা বলে আরাম নেই। সবেতেই ইয়ার্কি।’ 
‘ওহ, কাম অন ডেবি । তুই বোধ হয় জানিস না আমাদের স্ন্যাক্সবারে মূরগী জবাই করা হয় । ওটা তারই রক্ত হবে সম্ভবত ।’
০০০০০
ঘণ্টাখানেক বাদে হাতের কাজগুলো সেরে ডেবি আবার ১৩ নম্বর ঘরটার কাছে গেল । ঠেলে দেখলো । একই রকম, লকড ।
‘ডেবি?’
গলাটা শুনেই ঘুরে তাকালো ডেবি । জেসিকা। একেবারে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে । চমকে একপা পিছিয়ে গেল ।
‘ওখানে কোনও দরকার আছে নাকি?’
‘না তো, কেন?’
‘না মানে বার কয়েক দেখলাম তুমি দরজাটার কাছে এলে । বার কয়েক টেনেও দেখলে।’
‘না না, সেরকম কিছুই নয় ।’
জেসিকা বার কয়েক এদিক ওদিক আকিয়ে দেখে ফিসফিস করে বললো, ‘তুমি বোধহয় লক্ষ্য করেছো তাই না? যে আমি কিছু মানুষকে ওই ঘরে যেতে বলেছি।’
ডেবি পুতুলের মতো মাথা নাড়লো ।
‘তুমি কি জানতে চাও তার কারন?’
‘ইয়ে...মানে ...’
‘আরে অত চিন্তার কি আছে। ঠিক আছে আমি দেখাবো তোমাকে ওখানে কি হয়।’ জেসিকা কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে একটা চাবি বার করে দরজা খুলে ডেবিকে ইশারা করলো ভেতরে যাওয়ার জন্য ।’
ডেবি ভেতরে ঢোকার পর ওর পেছন পেছন জেসিকাও ঢুকলো ।
‘অন্ধকারে কিছুই তো দেখতে পাচ্ছিনা!’
‘ভয় নেই, আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যাও।’
হাল্কা আলো ফুটে উঠলো ঘরে । একটা টেবিলের অন্য দিকে বেশ কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সামনে একটা কেক রাখা ।
‘হ্যাপি বার্থ ডে ডেবি,’ শোনা গেল জেসিকার কন্ঠস্বর ।
‘কিন্তু আজতো আমার জন্মদিন নয় ...’
‘জানি তো । আমরা সব কিছু একটু আগেই পালন করি ।’
‘এর মানে কি এটাই যে তোমরা ওই সব লোক যাদের এঘরে ঢুকতে দাও তাদেরও জন্মদিন পালন করো । সারপ্রাইজ পার্টি?’
‘একদম তাই,’ জেসিকা উত্তর দিলো ।‘ কত মানুষ আছে যারা একা থাকেন । যাদের কোনও বন্ধু বান্ধব আত্মিয় স্বজন নেই । আমরা তাদের খুঁজে বার করে সিনেমার টিকিট পাঠাই পোস্টে । তারপর এরকম বার্থ ডে পার্টি করে একটু আনন্দ দিই।’
সব শুনে ডেবি যখন প্রায় উত্তেজনা ঝেড়ে ফেলেছে অর চোখ গেল ঘরের একটা কোনায় । কালো কম্বল চাপা দিয়ে কি একটা রাখা আছে। ভালো করে তাকাতেই দুটো মানুষের পা বেরিয়ে আছে দেখতে পেলো ডেবি । 
ওটা কার পা? যার পা সে কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে?
যদি মরা হয় তাহলে? জেসিকারা কি বেছে বেছে একাকী মানুষদের এখানে লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসে...এমন মানুষদের যাদের খোঁজ করার কেউ নেই ...তারপর তাকে মেরে তার শরীরের নানান অংশ বিক্রি করে দেয় ... সে নিজেও তো একাই থাকে ... এবার কি তার পালা?
‘আগে হৃদপিন্ডটাকেই কাটা যাক, নাকি?’ চকচকে একটা চাকু মোমবাতির আলোয় ঝলসে উঠলো সামনের মানুষটার হাতে ।
ডেবি বুঝে গেল পালানোর আর পথ নেই। বল লো, ‘যা খুশী করো তোমরা!’
লোকটা থমকে দাঁড়িয়ে গেলো । মুখে বিস্ময় । তারপর বললো, ‘বেশ তাই হোক। একটা বড় টুকরো কেটে নিলো কেকটা থেকে । লাল দিয়ে বানানো হার্ট এর আইসিংটা সমেত। ‘ হ্যাপি বার্থ ডে। এই নাও!’ হাসি মুখে ডেবির দিকে প্লেটটা এগিয়ে ধরলো ।
কালো কম্বলটার তলা থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলো জ্যাক ।
সবাই একসাথে গেয়ে উঠলো সেই চিরন্তন সুরটা । ডেবির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে এলো । যদিও জন্মদিন নয় তবু এটা ওর জীবনের সেরা সারপ্রাইজ পার্টি ।
০০০০০
এরপর থেকে ডেবি আর কোনোদিন ১৩ নম্বর হল নিয়ে মাথা ঘামায়নি । কেউ যখন ওটার ভেতরে যায় তখন দরজাটা আপনা আপনি দরজাটা লক হয়ে যায় । ভেতরে না গিয়েও ডেবি ছবির মতো দেখতে পায় সেই মানুষটার সাথে কি হচ্ছে । 
ও কথা দিয়েছে কাউকে বলবে না ১৩ নম্বর হলের ভেতরে কি হয় । সে রহস্য ওর সাথেই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। সারা পৃথিবীর চোখে ওটা এই মাল্টিপ্লেক্সের নিছক একটা স্টোর রুম ।
তবুও ওর কেন জানি না মনে হয় ও “সত্যি”ই জানে না একাকী মানুষগুলোর সাথে “আসলে” কি হয় যখন কেউ বিশেষ টিকিটটা পায় সিনেমা দেখার ... ১৩ নম্বর হলে । কেউতো বেরিয়ে আসে না !!!
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment