Search This Blog

Wednesday, May 13, 2020

সেই সব জ্ঞানী মানুষেরা - প্রতিম দাস


 


সেই সব জ্ঞানী মানুষেরা

প্রতিম দাস

০০০০০০

 

চারদিন ঘরবন্দী থাকার পর বাজারে গিয়েছিল সুজয়। সেখানেই দেখা হয়ে গেল রতনের সাথে। করোনা ভাইরাসের নিয়ম বিধি মেনে হাত দুয়েক দাঁড়িয়ে এটা সেটা কথা বলতে বলতে সুজয় বলল, সেদিন তোর টাইমলাইনে গিয়েছিলাম। দেখলাম জনৈক প্রতিম দাস নামের এক ভদ্রলোক প্রাচীন পৌরানিক সাত জ্ঞানী মানুষের কথা লিখবেন বলে জানিয়ে তোকে ট্যাগ করেছেন। সে লেখাটা পোস্ট হলে আমাকে জানাস তো।

রতন বলল, ঠিক আছে মেসেজ করে দেব।  কিন্তু কবে উনি লিখবেন কে জানে? সেদিন উনার সাথে চ্যাট হচ্ছিল। দুঃখ করে বললেন, রতন বাবু টিজার দিলে প্রচুর লোক পড়ব পড়ব বলে কমেন্ট করে। তারপর পোস্ট করলে তাদের আর পাত্তা মেলে না। তাই লেখাটা শুরু করেও শেষ করার উৎসাহ পাচ্ছি না। আমি বলেছিলাম , হুম এটা ভুল বলেননি। কিন্তু আমাদের মত কিছু মানুষও তো আছি যারা আপনার লেখা নিয়মিত পড়ি। এরপর অনেকক্ষন চ্যাট হয়েছিল আমাদের ভেতরে। মোটামুটি উনি সব কিছুই বলে দেন ওই বিষয়ে। তুই কি পড়তে চাস সেই চ্যাট?

সুজয় বলল, পাগলা খাবি কী? এ আবার কেউ জিজ্ঞেস করে। বাড়ি গিয়েই কপি করে পাঠিয়ে দে ।

আরে কপি আগেই করে রেখেছি । উনি নিজেই বলেছেন বন্ধুরা চাইলে পড়তে দিতে।

পাঠিয়ে দিয়েছিল রতনসুজয় পড়তে শুরু করল।

রতন – আপনার এই বিষয়ে লেখার আগ্রহ হল কেন?

প্রতিম - আমি গিলগামেশ মহাকাব্যের গদ্যরুপ অনুবাদ করার পর ওটার একটা শব্দ কোষ লিখতে গিয়ে এই বিষয়ে জানতে পারি।  মনে প্রশ্ন জাগে এই মানুষেরা কারা?  কেন তারা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন? এই বিষয়ে আরো একটু   খোঁজ করতে গিয়ে দেখি নানান দেশের প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনী ও কিংবদন্তিগুলিতে এই  সাতজন জ্ঞানী মানুষ বা ঋষির উল্লেখ আছে এই অসাধারণ জ্ঞানী মানুষেরা উপস্থিত রয়েছেন  ব্যাবিলন, সুমের, চীন বা প্রাচীন গ্রীসের পৌরাণিক কাহিনী ও উপকথায় ।   

রতন – আচ্ছা ভারতের সপ্তর্ষিরাও কি এই সাত জ্ঞানী মানুষ ?   

প্রতিম – একদম ঠিক ধরেছেন। মনে আছে তাদের কথা?

রতন – ওই একটু একটু। ভারতীয় সংস্কৃতিতে তো সপ্তর্ষি একটি অতি পরিচিত শব্দ পৌরাণিক গাথা অনুসারে এরা  ব্রহ্মার সাত  মানস পুত্র রাতের স্নিগ্ধ আকাশের দিকে তাকালে অনেক সময়েই কোটি কোটি তারার ভিড়ে টি অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্রের সন্নিবেশ আলাদাভাবে চোখে পড়ে বৈদিক শাস্ত্র মতে এই টি নক্ষত্র সপ্তঋষি নামে পরিচিত এরা হলেনভৃগু, মরীচি, অত্রি, পুলহ, পুলস্ত্য, ক্রতু, বশিষ্ঠ

প্রতিম – আরে বাঃ আপনার তো ভালঈ মনে আছে। আমি আর একটু জুড়ে দিই। মনন্তর কাকে বলে জানেন তো?

রতন – হ্যাঁ দুর্ভিক্ষ ।

প্রতিম – সেটা ঠিক তবে পৌরানিক মতে মনুর এক অধিকার কাল বা শাসন কালকেও মনন্তর বলা হয় ।

রতন – এই অধিকার কালের বিস্তার কত?

প্রতিম – তিরিশ কোটি সাতষট্টি লক্ষ কুড়ি হাজার বছর। যাই হোক সপ্ত ঋষিগন জীবের কল্যাণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্রে পরিভ্রমণ করে থাকেন সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মা তার মন থেকে এই সাতজন ঋষিকে সৃষ্টি করেছিলেন এজন্য তাদেরকে ব্রহ্মার মানসপুত্র বলা হয় শ্রীমদ্ভাগবতম ছাড়াও বিভিন্ন শাস্ত্রে এই সপ্ত ঋষির উল্লেখ পাওয়া যায় সপ্ত ঋষিগণ হচ্ছেন মানবজাতির তত্ত্বদ্রষ্টা পথপ্রদর্শক গাথা অনুসারে তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে এই ব্রহ্মান্ডের সমস্ত জীবকে প্রকৃত পারমার্থিক শিক্ষা দিয়ে ভগবদধামে প্রেরণ করা অনন্ত মহাকাশের বুকে উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়িয়ে সপ্তঋষিগণ কি আমাদের জীবনের সেই পরম উদ্দেশ্য সাধনের আহবান জানাচ্ছেন ? না, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, বিভিন্ন মনন্তরে এই সাতজন ঋষির পরিবর্তন হয়  

রতন – সাধারন জ্ঞানের বইতে একটু একটু পড়লেও এত কিছু জানতাম না।

প্রতিম – তাহলে আরো একটা কথা জানাই। আমাদের চেনা ইতিহাসের পাতার এক নায়ক সম্রাট অশোক। তার সাথে জড়িয়ে আছে এক মিথ কাহিনী।

রতন – আপনি কি উনার সেই রহস্যময় নয় জন সহচরের কথা বলছেন?

প্রতিম – হ্যাঁ। যদিও সংখ্যাটা সাত না হয়ে নয়, তবুও অনেক গবেষক এদের ওই সাত জ্ঞানী পুরুষের রূপান্তর বলেই মনে করেন। এই বিষয়েও আপনার একটু জানা আছে বলেই মনে হচ্ছে।

রতন – ওই আপনাদের মত মানুষের লেখা পরেই জেনেছি।

প্রতিম – বাঃ, তা একটু শুনি আপনি কী জানেন।

রতন – আরে আমার জানা কি আর আপনার মত হবে। তবুও বলছেন যখন... একটা সময় পার করে আসার পর সম্রাট অশোক সমস্ত ধর্মকে সম্মান জানিয়েছিলেন এবং  ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে শান্তির প্রচার করেছিলেনসমস্ত জীবের সুরক্ষা, শান্তি, সুখ এবং স্বাধীনতায় বাস করা্র অধিকার পাওয়া উচিত এটাই বলতেন তিনি  নিরামিষ খাওয়ার পক্ষে প্রচারের সাথে সাথে  নিষিদ্ধ করেছিলেন মদ্যপান   এবং পশু হত্যা।  একই সাথে সম্রাট অশোক   বুঝতে পেরেছিলেন যে মানুষের বুদ্ধি, বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত যুগান্তকারী কৌশলগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খারাপ কাজে  ব্যবহার করা হয়। আর এই জন্যই উনি  তাঁর রাজত্বকালে   বিজ্ঞান গবেষনাকে গোপনীয়তার চাদরে আবৃত করেছিলেন। মিথ অনুসারে  এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিলেন নয়জন অজানা জ্ঞানী পুরুষ

প্রতিম – কী সুন্দর অল্প কথায় ব্যাপারটা বললেন। আমি পারতাম না।

রতন – কী যে বলেন।  আমি আপনার গিলগামেশ লেখাটা পড়েছি। ওখানে তো শুধু সাত জ্ঞানী মানুষ উরুকের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন ব্যাস এটুকুই লেখা আছে। ব্যাবিলন বা সুমেরীয় সভ্যতায় এদের সম্পর্কে আর কিছু পাওয়া যায় না?

প্রতিম – অবশ্যই । সেটা তো সবার আগে খুঁজে দেখেছি। সুমেরীয় সভ্যতায় এদের পরিচয় ছিল ডেমিগড রূপে ।

রতন – মানে উপদেবতা?

প্রতিম – হ্যাঁ। ব্যাবিলনীয় পৌরাণিক কাহিনী ও কিংবদন্তিগুলিতে আপ্কাল্লু হিসাবে এদের উল্লেখ করা হয়েছে  দেবতা এনকি এই উপদেবতাদের সৃষ্টি করেছিলেন বলে   বর্ণনা করা হয়। এদের প্রধান কর্তব্য ছিল একটি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা এবং মানবজাতির সভ্যতার বিকাশ ঘটানো  এরা মহাপ্লাবনের  আগে এনকির পুরোহিত এবং সুমেরের প্রথম দিকের রাজাদের পরামর্শদাতা   হিসাবে কাজ করতেন

মা বা পৃথিবীর নিচে অবস্থিত   কুর বা ভূগর্ভস্থ জগতের মহাশুন্যতায় থাকা  আদিম জল রাশি বা আব্জু থেকে এই  আপ্কাল্লুরা উঠে আসতেন। এরা ছিলেন মৎস মানব বা মার পিপল। 

রতন – মারপিপল! এদের কথা হ্যারি পটারের  কাহিনীতে পড়েছিলাম মনে হচ্ছে।

প্রতিম হ্যাঁ। জে কে রাউলিংয়ের লেখার অনেক কিছুই কিন্তু প্রাচীন পৌরাণিক ভাবনা থেকে নেওয়া। কয়েকটা লিখেও ছিলাম, পোস্টও করেছিলাম।

রতন - হ্যাঁ পড়েছি। আর লিখবেন না?

প্রতিম - হ্যাঁ লিখব। যাকগে সে নিয়ে না হয় পরে আলোচনা করা যাবে। আপাতত জেনে রাখুন কিউনিফর্ম অক্ষরে লেখা সুমেরীয় পুরাণ সাহিত্যে বেশ কয়েকবার এই আপকাল্লুদের উল্লেখ মেলে।

এরা নামের এক  মহাকাব্যে দেবতা মার্ডুক একটি প্রশ্ন করেছিলেন। তা এরকম – “আপ্সুর [আব্জু] সেই সাতজন জ্ঞানী মানুষ কই, যারা আসলে পুরাডু মাছ, যারা তাদের প্রভু ইয়ার মতো উচ্চমাত্রার জ্ঞানের অধিকারী ? "

রতন – বুঝলাম, এই সুত্রেই এদের মৎস মানব বা মার পিপল বলা হয়েছে।

প্রতিম – এবার প্রাচীন গ্রীসের সাত জ্ঞানী ব্যক্তির কথা বলি আপনাকে। অ্যাথেনীয় দার্শনিক প্লেটো (৪২৭-৩৪৭)র সুত্র ধরে আমরা এই  সাতজন বিজ্ঞ ব্যক্তির কথা জানতে পারি। যারা  তার উল্লেখ অনুসারে  "স্পার্টান সংস্কৃতির প্রেমিক, উৎসাহদাতা এবং প্রচারক "

রতন – আর  খুব চেনা কার লেখায় এদের উল্লেখ মেলে?

প্রতিম - দার্শনিক  সক্রেটিসেরতার কথানুসারে,   "বর্তমানে কিছু বয়স্ক এবং যুবক   আছেন যারা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, স্পার্টান হওয়ার অর্থ  শারীরিক অনুশীলনের  চেয়ে প্রেম তথা জ্ঞানের প্রতি অনেক বেশি ভালবাসাযারা  এই জাতীয় মানসিকতায় জারিত তারাই   একজন নিখুঁত শিক্ষিত ব্যক্তি রূপে বিবেচিত হন

রতন – এদের নামও নিশ্চয় লেখা আছে?

প্রতিম – হ্যাঁ আছে। তবে একটা কথা জানেন তো ইতিহাস বা এরকম কাহিনী লেখা হয় শাসকের অনুগ্রহে। ফলে একাধিক কাহিনী পাওয়া যায় যেখানে সাতজনের নামের পরিবর্তন হয়েছে সময়ে সময়ে। তবুও মূলত যে সাতজনের নাম পাওয়া যায় তারা হলেন, মাইলেটাসের থ্যা্লেস – একজন দার্শনিক ও অঙ্কবিদ, মাইটিলিনের পিট্টাকাস – মিরসিলাসের সাথে ইনি মাইটিলিন বা লেসবস শাসন করতেন। আভিজাতদের ক্ষমতা কমিয়ে সাধারন মানুষকে গুরুত্ব দেওয়ার কারনে ইনি খুব জনপ্রিয় ছিলেন, প্রিনের বায়া্স – ৬ষ্ঠ খ্রিস্ট পূর্ব সময়ের রাজনীতিবিদ ও লেজিসলেটর,  এথেন্সের সোলন – অ্যাথেনিয়ান গণতন্ত্রের মূল নির্বাহক কারন এর সৃষ্ট আইনের কারনেই তা রুপ পায়, লিনডাসের ক্লিওবিউলাস – ৬০০ খ্রীস্ট পূর্ব সময়ে ইনি রোডস দ্বীপের শাসক ছিলেন,   চেনাইয়ের মাইসন - খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের মানুষ এবং   সপ্তম জন স্পার্টার চিলন – ইনি স্পার্টার সমাজে মিলিটারী মানসিকতার জন্ম দেওয়ার জন্য বন্দিত ছিলেন।

এরা  একটা বিশেষ ভাবনাকে সবাই মেনে চলতেন বা বলা যায় একটা দর্শন মেনে চলতেন বলেই জানা যায় ।

রতন – কি সেই ভাবনা?

প্রতিম – এমন এক ভাবনা যার সাথে ভারতীয় দর্শন ভাবনার অদ্ভুত মিল। কঠোপনিষদে বলা হয়েছে- 'আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরং রথমেব তু। বুদ্ধিং তু সারথিং বিদ্ধি মন: প্রগ্রহমেব চ।। (//) অর্থাৎ এই দেহই রথ আর আত্মা দেহরূপ রথের রথী। আর ঈশ্বর থাকেন অন্তরে। প্রাচীন কালের ঋষি রা বলতেন নিজেকে জানো।

গ্রীসের সেই বিজ্ঞ মানুষেরাও নাকি এটাই বলতেন, নিজেকে জানুন এবং তার চেয়ে খুব বেশি জানার প্রয়োজন নেই।  আসলে এটাই ছিল একদা প্রাচীন মানব সভ্যতার দর্শনের মূল কথা।

রতন -  দারুন।

প্রতিম - এই সাতজন মানুষই পরবর্তী সময়ে গ্রীক দর্শনের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। কিন্তু একটা সমস্যাও আছে যা ঐতিহাসিক যার কথা একটু আগেই  বললাম।     এদের নামগুলো সম্পর্কে  সকলে একমত নন। ঐতিহাসিক এফোরাস,  মাইসনের বদলে আনাচারসিসের নাম উল্লেখ করেছেন।   আবার হ্যালিকারনাসাসের  হেরোডোটাসের লিখিত ইতিহাসে পাওয়া যায় একজন অনামা স্কাইথিয়ান জ্ঞানী মানুষের উল্লেখ।    প্লেটোর পরের  প্রজন্মের ঐতিহাসিক   অ্যারিস্টটলের শিষ্য ফ্যালেরামের ডিমিট্রিয়াস মাইসনকে পছন্দ করতেন না । ফলে   তিনি তাকে  খ্রিষ্টপূর্ব ৬-৭ শতকের করিন্থের   শাসক পেরিয়ান্ডারের নাম উল্লেখ করেন। এরকম ব্যাপার কিন্তু সপ্ত ঋষি দের একটা নামেও ঘটেছে।

রতন – কী রকম?

প্রতিম – আমি ভৃগুর নাম লিখেছি। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উনার বদলে অঙ্গিরার নাম পাওয়া যায়।

রতন – বুঝলাম। যাকগে নামে কী আসে যায়। আমাদের তো আসল বিষয়টা জানাই উদ্দেশ্য। আর কোন দেশে এই সাত জ্ঞানীর কথা পাওয়া গেছে?

প্রতিম –এরকম জ্ঞানীদের কথা প্রায় সব দেশের উপকথাতেই আছেটুকরো টাকরা ভাবে । আসলে জ্ঞানী মানুষদের নাম জুড়ে দিয়ে ধর্ম বলুন বা রাজনীতি বা দর্শন সব কিছুর প্রচার করাটাও একটা উদ্দেশ্য রূপে ব্যবহার হয়েছে দেশে দেশান্তরে।

রতন – এটা ভালো বল লেন। আমার ও মনে হয় মাঝে মাঝে,  নানান জ্ঞানী মানুষের যে সব কথা আমরা পড়ি বা শুনি সবই কী তার নিজের?  আপনার কী মত?

প্রতিম - আমি অন্তত মনে করি না। দেশে দেশে ভ্রমণ করার সময় এক জায়গার মানুষ যখন অন্য জায়গায় গিয়েছে, সেখানে সে  তার যেমন নিজেদের দেশের দর্শনের কথা বলেছে ঠিক তেমন ই অন্য দেশের ভাবনার কথাও শুনেছে। আর এসবই মিলে মিশে গেছে দেশে দেশান্তরের দর্শন উপকথায়।

রতন – এই জন্যই বোধ হয় একদেশের আচার ব্যবহার প্রথার সাথে অন্য দেশের ্মিল আমরা দেখতে পাই।

প্রতিম- হ্যাঁ। আমরা মূল আলোচনা থেকে সরে যাচ্ছি । এবার চীন দেশের সাত জ্ঞানী মানুষের কথা শুনিয়ে এই বিষয়ের আলোচনা শেষ করি।

রতন – বেশ বেশ । তাই হোক।

প্রতিম - খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর সাত চৈনিক পণ্ডিত, লেখক এবং সংগীতজ্ঞকে ওদের মানুষ বাঁশবনের  সাতজন ঋষি বলে উল্লেখ করে থাকেন

রতন - বাঁশবনের  সাতজন ঋষি! এরকম অদ্ভুত নাম কেন?

প্রতিম - এই সাতজন মানুষ   চীনা ইতিহাসের রাজনৈতিক জীবনের ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি ও দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বাঁচতে চেয়েছিলেন  তার জন্য, তারা শ্যানইয়াংয়ের (বর্তমানে হেনান প্রদেশে) জি ক্যাংয়ের  বাড়ির কাছে অবস্থিত একটি বাঁশ বনে সহজ সরল দেহাতী জীবন যাপন   শুরু করেন।  আর সেই সুত্রেই এই নাম।

রতন – আচ্ছা, বুঝলাম। তা এরা কি আগে থেকেই একে অপরকে চিনতেন?

প্রতিম - এই সাত জনের বাস্তবিক  অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু তাদের ভেতর আগে থেকে পারস্পরিক  সংযোগ ছিল কিনা এ বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য  মেলে না।   এই সাতজনের ভেতর বেশ কয়েক জন কাও ওয়েই রাজ্যের  দাওবাদী স্কুল  কিংটান এর সাথে যুক্ত ছিলেন এটা জানা যায়।    "কনফুসিয়ান" জিন রাজবংশ (সিমা ক্ল্যান) ক্ষমতায় আসার পর চীনে এই সাতজন ঋষিদের অস্তিত্ব বিপদজনক হয়ে পড়েদাওবাদী সাহিত্য রচনা করা ছাড়াও এদের মধ্যে কয়েকজন তৎকালীন আদালত এবং প্রশাসনের সমালোচনা করে কবিতা লিখেছিলেন তবে সাতজনের সকলেই এই ভাবনায় জারিত ছিলেন না। 

রতন – তারমানে এটা বলতেই পারি ওরা রাজ রোষ থেকে বাঁচতেই বাঁশ বনের নিভৃত গোপন স্থানে বসবাস শুরু করেছিলেন।

প্রতিম – অবশ্যই। একে অপরের কাজ নিয়ে আলোচনা করা ছাড়াও তাদের উদ্দেশ্য ছিল সহজ সরল জীবন যাপন করে জীবনের আসল আনন্দ লাভ হয় এটা প্রচার করা।  যা সেই সময়ের রাজ পরিবার তথা নগর জীবনের বিলাসবহুল জীবন যাত্রার সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। এই সাতজন মানুষ চৈনিক জীবনের অন্যতম অঙ্গ হিসাবে ঘরে বানানো মদপান,  ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, স্বতঃস্ফূর্ততা এবং প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে থাকাকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলেন।   

এই সাতজন মানুষের   জীবন যাত্রা ভাবনাচিন্তা পরবর্তী সময়ে  প্রতীক হয়ে ওঠে  চৈনিক কবিতা, সংগীত, শিল্প এবং সামগ্রিক সংস্কৃতির।

রতন – কত কিছু জানতে পারলাম আপনার সাথে আজকের এই চ্যাটে। পুরো চ্যাটটা আমি কপি করে রেখে দেব।

প্রতিম – শুধু সেভ করে রাখলে হবে না। পারলে আপনার বন্ধু বান্ধদের সাথে শেয়ার করুন। অরাও হয়ত আগ্রহী হবেন। আমি লেখাটা কবে লিখব তার তো কোন ঠিক ঠিকানা নেই।

রতন – অনুমতি যখন দিলেন তখন অবশ্যই করবো।

প্রতিম - প্রাচীন কিংবদন্তি এবং বহু সভ্যতাতেই   এরকম মানুষদের কথা পাওয়া যায়।    সন্দেহ নেই যে প্রাচীন কাল থেকেই সাত বা তার বেশী জ্ঞানী লোকের উপস্থিতি সব সমাজেই ছিল। তারা মানবজাতিকে নিত্য নতুন ভাবনা দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন সভ্যতার পথে। তবে জ্ঞানী মানুষের সংখ্যা সাত জন ই ছিল   এই ধারণাটি সম্ভবত  একটি প্রাচীন জনজাতির সুত্রে [সেটা ভারত হতে পারে বা সুমেরীয়ান]   অন্যান্য জন জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে

সমাপ্ত

তথ্যসূত্র – ইন্টারনেটের নানান সাইট

 

 

 

 

 

 

 

 

 

No comments:

Post a Comment