Search This Blog

Sunday, August 2, 2020

এরিয়া ফিফটি ওয়ানের কিসসা - ১ ও ২



এরিয়া ফিফটি ওয়ানের কিসসা - প্রাক ইতিহাস

  খুব কম মানুষই আছেন যিনি অদ্ভুত রহস্য নিয়ে পড়াশোনা করেন অথচ এই বিশেষ রুপে বিখ্যাত নামটা শোনেননি অনেকেই সেখানকার অদ্ভুত কিম্ভুত সব ঘটনাগুলোর কথা জানেন বা শুনেছেন। এ এমন এক জায়গা যা গোপনীয়তার চাদরে ঢাকা। একাধিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব লুকিয়ে রেখেছে নিজের আস্তিনে। অনেকের মতে এই স্থান আঙ্কেল স্যামের বিশেষ এক ভবন। যেখানে অতিমাত্রায় বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন গোপন বিমান লুকিয়ে রাখা আছে। কারো মতে সেখানে আছে মৃত এলিয়েনদের দেহ। কেউ বলেন ওখানে ইউ এফ ও ক্র্যাশ হয়েছিল। যার সুত্রে পাওয়া বহিঃ জাগতীয় প্রযুক্তির চর্চা চলছে

অতিমাত্রায় সুরক্ষিত এই এলাকার গোপনীয়তা রক্ষণের দায়িত্বে আছে যারা, তারা প্রয়োজনে মানুষ মারতে দ্বিধা করেন না। বহুবিধ এবং বৈচিত্র্যময় গোপনীয়তা রক্ষা করতে মারাত্মক শক্তি ব্যবহারের অধিকার রয়েছে এখানকার কর্মকর্তাদের হাতে।

এরকম একটি স্থানের পারিভাষিক নাম এরিয়া ফিফটি ওয়ান।

নেভাডা মরুভূমির ভেতর একটি গোপনীয় কোন পরীক্ষাগার ধরনের কিছু স্থাপন করা হয়েছে এই গুজব সম্বল করে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ আলোচনা করেই চলেছে। কাপের পর কাপ চা উড়ে গেছে আড্ডায় এর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দিতে দিতে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার এটাই যে ওই এলাকায় বসবাসকারী কিছু মানুষ আর কিছু আধিকারিক ছাড়া এই জায়গার কথা ১৯৮০ সালে আগে কেউ জানতোই না বলা যায়।    

বব লাজার নামের এক বিতর্কিত চরিত্র তার চমকপ্রদ গল্প শোনায় মানবজগতকে। সে বলে   ১৯৮৮ সালের শেষেরদিকে সে এরিয়া ৫১ র এস - ৪ এলাকায় কিছুদিন কাজ করেছে। সেখানে যে কাজ হচ্ছিল, তা নাকি ওখানে থাকা একাধিক এলিয়েন মহাকাশযানের বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান।    হ্যাঁ, যা পড়লেন ঠিক তাই মার্কিন সরকারের একটি গোপন আস্তানা আছে বাইরের মহাজগত তথা গ্যালাক্সী বা ছায়াপথ থেকে আসা যানবাহন সংরক্ষন করে রাখার জন্য!

এটা খুব আশ্চর্যের বিষয় নয় যে এরকম কোন গল্পের জন্য মিডিয়া অপেক্ষা করেই থাকে।  স্বাভাবিকভাবেই এ গল্প মিডিয়ায় শিরোনাম হয়ইউএফ ও নিয়ে করতে থাকা নানা  সম্প্রদায়  ধৈর্য সহকারে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করেছিল এমন যুগান্তকারী খবরের জন্যই।   

 এটা নিশ্চিতভাবেই ছিল এক আশ্চর্যজনক চমকপ্রদ খবর, তাতে সন্দেহ নেই। কল্পনার জগতে প্রবেশ করার চাবিকাঠি হিসাবে এরিয়া ৫১ উপস্থিত হয়েছিল জনগনের সামনে। আর সে কারনেই হয়ত একাধিক টেলি সিরিয়াল, সাই-ফাই ভিত্তিক শো এর পাশাপাশি নির্মিত হর অন্তহীন টেলিভিশন ডকুমেন্টারি। পাঠকপাঠিকারা নিশ্চয় বিখ্যাত এক্স-ফাইলস সিরিয়াল আর ব্লকবাস্টার মুভি ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’ এর কথা ভুলে যাননি।

অতএব সরকার না চাইলেও এরিয়া ৫১ পেয়ে যায় বিশ্বব্যাপী পরিচিতিঅদ্ভুতভাবেই মার্কিন পপ সংস্কৃতির একটা অংশে পরিণত হয় ঐ রহস্যময় এলাকাএকে আর বদলানোর কোন সুযোগ থাকে না কারোর হাতেই। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের জিনির মতোই এ বিষয়ে গল্পগুল ভুরভুর করে বের হয়েই চলেছে

 কীভাবে এবং কেন এই এরিয়া ৫১ চালু হল?

কী কী গল্প লুকিয়ে আছে ওই রহস্যময় এলাকায়?

 00000000

 শুরু করা যাক তাহলে

মোটামুটিভাবে বেশিরভাগ লোক যখনই এরিয়া ফিফটি ওয়ানের নাম শোনে, তখনই  তাদের মনে ফুটে ওঠে এমন এক অজানা স্থানের ছবি, যেখানে একেবারে মাঝখানে নিশ্ছিদ্র পাহারার ভেতর একটা দুর্ভেদ্য দুর্গসম কিছু অবস্থান করছে কিন্তু সত্যি করে বললে এতেও সম্পূর্ণ গল্পটা বলা হয় না। লাস ভেগাস, সিন সিটি থেকে একশো মাইলের কম দূরত্বে এর অবস্থান। সোজা কথায় চাইলেই বিশ্বখ্যাত জুয়া নগরী থেকে ঘন্টাখানেকের ভেতরেই আপনি ওখানে পৌছে যেতে পারেন। এরিয়া ফিফটি ওয়ান এর মূল এলাকা শুধু নয়, এর চারদিকে দশ মাইল এলাকাই দুর্ভেদ্য   সাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা সশস্ত্র প্রহরীরা মরুভূমিতে টহল দেয়অজস্র মোশন-ডিটেক্টর সেন্সর লাগানো আছে নানান স্থানে। সি সি টিভির মত ক্যামেরা সম্ভাব্য সব ধরনের অনুপ্রবেশকারীদের জন্য চারদিকের বিশাল প্রেক্ষাপট সব সময় স্ক্যান করে চলেছে।  আপনি যদি এসব সত্বেও এগিয়ে যেতে চান ... তাহলে কয়েকটা গরম সীসের টুকরো আপনাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেবে!   

না, আমি কোনো রং চড়ানো গল্প শোনাচ্ছি না।!  এটাই সত্যি!

আসলে  এরিয়া ফিফটি ওয়ান বিষয়ে আমরা নিজেরাই তেমনভাবে কিছুই জানি না বলে মনে হবে যখন এটা জানব যে, এরিয়া ফিফটি ওয়ান আসলে মোটেই একটা কোন জায়গা নয় এবং এটাও সত্যি!

এটা সেই সমস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি মাত্র, যা N T & T R বা নেভাডা টেস্ত অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জের অন্তর্ভুক্তঅবশ্য এটাও ঠিক যে ১৯৫০ সালের আগে অবধি এরিয়া ফিফটি ওয়ানে সেভাবে তেমন গতিবিধি কিছু দেখা যায়নি।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকের সময়েতে এখানে   গোপনীয়তার প্রয়োজন আছে এমন কাজ করা শুরু হয়।

অতএব এই রহস্যম্য স্থানের গতি প্রকৃতি, ইতিহাস এবং কেন একে ব্যবহার করা শুরু হল  বুঝতে হলে টাইম মেশিনে চেপে চলে যেতে হবে ৮০ বছর আগে – ১৯৪০ এর দশকে – তাহলে চলুন সেটাই করি।

নেভাডার বিশালাকার যে অংশটিতে এরিয়া ফিফটি ওয়ানের অবস্থান তার বেশ ভালই একটা ইতিহাস আছে।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক যুগে এই জমির কিছু অংশ ছিল স্বরাষ্ট্র বিভাগের হাতে। ওখানে পশুদের জন্য সংরক্ষণ এবং অভয়ারণ্য  তৈরি করার একটা  বড় মাপের পরিকল্পনা ছিলকিন্তু সেই ভাবনা উল্ট পাল্ট হয়ে যায় যখন এক ‘অদ্ভুত’ উন্মাদ রক্তলোলুপ মানুষ অ্যাডলফ হিটলার ইউরোপে তার  ‘পেশী শক্তি’  থুড়ি অস্ত্রশক্তি প্রদর্শণ করতে শুরু করেন। যা থেকে ১৯৩৯ এ শুরু হয়ে যায় ২য় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪১ এ ৭ই ডিসেম্বর জাপানিদের দ্বারা পার্ল হারবারের  ওপর ভয়ানক, মারাত্মক হামলার পরে  আমেরিকাকেও সেই যুদ্ধে যোগ দিতে হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারে যে,  অনিবার্য ভাবেই তাদেরকে এ যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে হবেই কারন  হিটলারের বাহিনী ইউরোপের উল্লেখযোগ্য অংশকে এক অস্বাভাবিক গতিতে দখল করা শুরু করেছে। উপদেষ্টামন্ডলীর কিছু মানুষ ইঙ্গিত দেন যে, হিটলারের তালিকায় সম্ভাব্য পরবর্তী নাম      আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র হতেই পারে।   

সমুদ্র ঘেরা দ্বীপ হওয়ার কারণে তাৎক্ষনিক আক্রমণ থেকে বেঁচে গেলেও রাতের বেলায় জার্মান বিমান বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। পার্ল হারবারের ঘটনা এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাকাটাকে জোরের সাথে ঘুরিয়ে দেয়।  

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটাই যে, সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কা ও সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য মার্কিন সরকার ইতিমধ্যেই কয়েকটি গোপন পদক্ষেপ নিয়ে নেয়।  

যুদ্ধের উপরোক্ত আশঙ্কার কথা ভেবে  বিভিন্ন নিত্য নতুন সুবিধা যূক্ত সামরিক জিনিসপত্র নিজেদের বাহিনীকে সরবরাহ করার জন্য  সারা দেশ জুড়ে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই এই সব কাজ হতে থাকে গোপন স্থানে। এই সময়েই নেভাডায় চালূ হয়  টোনোপাহ বোম্বিং রেঞ্জ।  

আজ অবধি একটি বিতর্কের সমাধান হয়নি। ঠিক কতটা জমি জাতীয় সুরক্ষার নামে এরিয়া ফিফটি ওয়ানকে হস্তান্তর করা হয়েছিল ঠিক কত মানুষকে তাদের জমি জায়গা ফেলে বিতাড়িত হতে হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই।  

১৯৪০ সালের ২৯ শে অক্টোবর মার্কিন সরকার বেশি সাড়া শব্দ না করেই নেভাডার এক বিশাল পরিমাণ বাসযোগ্য জমি দখল করে। কারন দেখায়  টোনোপাহ বোম্বিং রেঞ্জ নির্মাণ। এর পর সময় যত গ্রায় সেখানে যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন সুযোগ সুবিধা। বদলাতে থাকে নাম।  টোনোপাহ জেনারেল রেঞ্জ, টোনোপা গানারি অ্যাান্ড বোম্বিং রেঞ্জ,  লাস ভেগাস জেনারেল রেঞ্জ ইত্যাদি ইত্যাদি। মরুভূমি প্রধান নেভাডা ক্ষনে ক্ষনে বদলাচ্ছিল তার রুপ।   

আর সেখান থেকে জন্ম নিল এই  বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময়, ‘কুখ্যাত’ এবং গুরুত্বপূর্ণ এক গোপনীয়তায় ভরা অঞ্চল । নাম, আপনারা ভাল করেই জানেন।

০০০০০

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অগ্রগতির সাথে সাথে এটি স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল অ্যাডলফ হিটলার আর তার নাজি বাহিনীকে খুব সহজে হারানো যাবে না । ফলতঃ, নেভাদায় সামরিক সুযোগ-সুবিধার আরও বিকাশ ঘটানো শুরু হল। চতুর্থ এয়ার ফোর্স বোম্বিং অ্যান্ড গানারি রেঞ্জ, টোনোপাহ আর্মি এয়ার ফিল্ড এবং ইন্ডিয়ান স্প্রিংস অক্সিলারি আর্মি এয়ার ফিল্ড তৈরি করা হল। 

১৯৪৫ সালে নাজিরা হেরে গেল। এবার মরুভূমির এই গোপন গবেষণাগারে এল ভাবনাগত     পরিবর্তন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর সময়ে দারুনভাবে কাজে লাগা বা বলা যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা কিছু বিভাগ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হল। আর যা বন্ধ করা হল না, তাদের কাজের ক্ষেত্র সীমিত করে দেওয়া হল। আর এর সাথেই এই অদ্ভুত ক্ষেত্রের জীবন প্রবাহে এল নতুন দিকনির্দেশনতুন পরিবর্তনের হাওয়া।   

যুদ্ধ উত্তর সময়ে, টোনোপাহ এয়ার ফোর্স বেস এবং  লাস ভেগাস এয়ার ফোর্স বেস পেল নতুন ভূমিকাযার কৃতিত্ব দিতে হবে অ্যাটমিক এনার্জি  কমিশনকে। তাদের  পরিকল্পনাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার  অনুমোদন দিল। যার সুত্র ধরে  ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৫০ সালে পুরানো নেলিস এয়ার ফোর্স গানারি অ্যান্ড বোম্বিং রেঞ্জ রূপান্তরিত হয়েছিল নেভাদা প্রুভিং গ্রাউন্ডেপ্রায় সাতশো বর্গমাইল স্থানীয় জমি এনপিজিকে দেওয়া হয়েছিল যাতে কাজটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।  জনগণের  প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যায় ওই এলাকায়। এইভাবে অতি  সাবধানে এবং ধীরগতিতে অগণিত বর্গ মাইল জমি বাজেয়াপ্তকরণ শুরু চলতে থাকে। 

  নেভাদা প্রুভিং গ্রাউন্ডে  বাস্তবিক পক্ষেই  যা ঘটতে থাকে তাকে একই সাথে গ্রাউন্ডব্রেকিং এবং অশুভ দুটোরই তকমা দেওয়া যায়।  অনলাইন নেভাডা নোট অনুসারে, "২৭ শে জানুয়ারী,১৯৫১, থেকে  নেভাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোল্ড ওয়ারের কন্টিনেন্টাল নিউক্লিয়ার প্রভিং গ্রাঊন্ডে প্রিন্ট হল। কারন সেদিন একটা এক কিলোটন পারমাণবিক ডিভাইস বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেখা হল।   মার্কিন অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন (এইসি) ওনেক ভাবনা চিন্তা করে  নেভাডা টেস্ট সাইটটিকে  বেছে নিয়েছিল। একইসাথে বিজ্ঞান, জাতীয় নীতি, ভূ-রাজনীতি, সুরক্ষা এবং জনসংযোগ সব দিকে চিন্তা করতে হয়েছিল তাদের।

বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর জায়গাটি লাস ভেগাস থেকে  ছিল মাত্র পঁয়ষট্টি মাইল দূরে রেডিয়েশনের ব্যাপারে কী ভাবনা চিন্তা করা হয়েছিল কেউ জানে না। এরপর  পরমাণু বোমা পরীক্ষণ চলতেই থাকে। এসব নিয়েও কেউ [পড়ুন সাধারন মানুষ] মাথা ঘামায়নি বা বলা চলে জানতেই পারেনি। তবে ১৯৫৫ সালে এরিয়া ফিফটি ওয়ান বাস্তবিক পক্ষে তার কার্যকরী ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়। সে গল্পে পরে আসছি।

 আপাতত নেভাডায় টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং নিয়ে আর কিছু কথা জানা যাক।

  ১৯৫৫ সালেরই ঘটনাজুলাই মাস।  কিংবদন্তি ইউ- টু গুপ্তচর বিমান গ্রুম লেকে NT & TR এর বিশাল রানওয়েতে উড়ান পরীক্ষা করে। যার ফলে এই রেঞ্জের ভিত্তির মাটি আরো পোক্ত হয়  বিমান উড়ানের ইতিহাসেটোনোপা টেস্ট রেঞ্জকে ঘিরে থাকা আরও জমি এই সূত্রে দ্রুত দখল করা হয়। ১৯৬০ এর দশক শুরু হয়ার আগেই পরিকল্পনা শুরু হয়ে যায় টোনোপাহ টেস্ট রেঞ্জ বিমানবন্দর এর বিশ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের সুবিশাল রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা থাকে সেখানে। কী উড়বে ওখান থেকে টেরেস্ট্রিয়াল নাক এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল কিছু? যাই উড়ুক এরকম কিছুর কথা এর আগে কেউ ভাবতেই পারেনি।

জমি দখলের গল্প কিন্তু ওখানেই শেষ হয়নি।  সবে শুরু হয়েছিল। এবার দখল হতে থাকে ভেতরের জমি।   ১৯৬১ সালে,  পূর্বে বিমান বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত প্রচুর জমি  তুলে দেওয়া হয় অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের হাতে।  এয়ার ফোর্সের উচ্চপদস্থ সব কর্তা ব্যাক্তি এই বিষয়টাকে ভাল চোখে দেখেননি। 

ভিয়েতনাম যুদ্ধে যে সমস্ত পাইলটদের ব্যবহার করা হচ্ছিল তাদের প্রশিক্ষণের প্রধান স্থানের ভূমিকা পালন করেছিল নেভাডা টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জ। ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিক থেকে এই রেঞ্জের কর্মীরা কোন এক অত্যন্ত গোপন প্রোগ্রামের কাজ শুরু করেন। অত্যন্ত এই শব্দটি কিন্তু খুব মারাত্মক।  কর্মীদের প্রাথমিক কাজ ছিল এই রেঞ্জের ভেতর পরীক্ষা করা কিছু ‘দুর্ভাগ্যের শিকার হওয়া  "স্টিলথ" বিমান [?]এর ধ্বংসাবশেষ মাটির নিচে পুঁতে ফেলা।  সোভিয়েত মহাকাশ উপগ্রহগুলো যাতে কোন ভাবেই এই সব দূর্ঘটনাগ্রস্থ বিমানের ছবি তুলতে না পারে সেদিকে ছিল বিশেষ নজর । তার জন্য বুলডোজার ব্যবহার ওসব মরুভুমির নিচে ওদের পুঁতে ফেলতে হয়!!!  হাস্যকরভাবে, বয়ান দেওয়া হয় যে রাশিয়ানরা এই রেঞ্জের মধ্যে কী ঘটছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলআর সেটা করতে গিয়েই নাকি   ১৯৮৪ সালে  একটি রাশিয়ান মিগ -২৩ বিমান ভেঙ্গে পড়ে সেটাকেই মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।

০০০০০

 চলুন এবার  নেভাডা টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জের সবচেয়ে রহস্যজনক বিষয়টাতে নজর বোলানোর সময় এসে গেছে। এরিয়া ফিফটি ওয়ান, যার টপ সিক্রেট ব্যাপার স্যাপারের কথা  প্রায় সবাই শুনেছেন, কিন্তু সম্ভবত কেউ আসল কথা জানেন না, যদি না তিনি ওই সেক্টরে কাজ করা মানুষ হন। এই মুহুর্তে, এই পৃথিবীর সিংহভাগের চেয়েও বেশিভাগ মানুষ একটা ঝলক অবধি দেখার সুযোগ পাননি ওখানকার।  চেষ্টা করা যাক এই দেখাটাকে একটু বদলানোর। অন্তত যতটা সম্ভব।   

 কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক  কর্মকর্তা রিচার্ড এম বিসেল জুনিয়র ১৯৬১ থেকে ১৯৬২ সাল অবধি  সুপার-সিক্রেট ন্যাশনাল রিকনেইস্যান্স অফিস বা এন আর ও এর প্রথম কোডিরেক্টর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেনএই সংস্থা আমেরিকার স্যাটেলাইট বেসড  নজরদারি প্রযুক্তির বেশিরভাগটা দেখাশোনা করে। ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে  এন আর ও তে নিজের কর্ম জীবন শুরু করার আগের সময়টাতে বিসেল অনুভব করেছিলেন, সোভিয়েতরা কী ঘোঁট পাকাচ্ছে  সে সম্পর্কে সতর্ক নজর রাখা দরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ধরনের সুরক্ষার জন্য এক বিশেষ ধরনের বিমানের প্রয়োজন । যা একই সাথে খুব দ্রুতগামী হবে এবং অত্যন্ত উঁচু দিয়ে উড়তে পারবে । তারসাথেই সক্ষম হবে  গোপনে সোভিয়েত আকাশসীমায় প্রবেশ করে গুপ্তচরবৃত্তি করতে   আর সেই বিমান বানানোও হয়, লকহিড ইউ -২এই অপারেশনের কোড নেম  প্রজেক্ট অ্যাকোয়াটোন

  পৃথিবীর সব দেশ সব সময় একে অপরের সাথে একটা অদ্ভুত খেলায় মেতে রয়েছে। তার নাম গোপনীয়তার। সবাই এতে জিততে চায়। তার জন্য চলে নিত্য নতুন কৌশলের পরিকল্পনা।   মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সূত্র জানিয়ে দেয়  সোভিয়েতদের গুপ্তচর তাদের দেশের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই বসে রয়েছেঅতএব আপাতদৃষ্টিতে দারুন সুরক্ষিত কোন স্থানেই এই নতুন প্রকল্পর কাজ করা যাবে না। দরকার সম্পূর্ণ নতুন, বিশেষভাবে  নির্মিত কোন জায়গা। আর সেটাই করে দেখালেন বিসেল।

 উনি সবার আগে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্রের যত্ন সহকারে অধ্যয়ন করলেনখূঁজতে থাকলেন এমন কোন জায়গা যেখানে সহজে পৌঁছানো অসম্ভব।  স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য দ্বারা   সুরক্ষিত এবং এটির আশেপাশের প্রেক্ষাপট এমনই যা দেখে  সেখানে কিছু করা হচ্ছে এরকম   ভাবনাই কারো মাথায় আসবে না।   

বিসেল যাদের সাথে কথা বলেছিলেন তাদের মধ্যে একজনের নাম  ক্লারেন্স "কেলি" জনসন।   অত্যান্ত দক্ষ বিমান ইঞ্জিনিয়ার এবং ডিজাইনারযার মাথা কাজ করেছিল ইউ-টু  এবং এস আর -৭১ ব্ল্যাকবার্ড বিমান নির্মানের পেছনে। এই মানুষটাই খুঁজে বার করেন সেই স্থান যা  বিসেল এবং সি আই এ খুঁজছিলেন 

জনসন বিসেলকে জানিয়েছিলেন নেভাডা টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জের বিশাল, শুকনো গ্রুম লেকের কথা। জন্ম নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল এরিয়া ফিফটি ওয়ানের।   

  যে স্থানের কথা  বলা হল সেখানে  মরণান্তক গরম, চূড়ান্ত রকম ধরনের অবসবাসযোগ্য এক এলাকা। শুকনো খটখটে মরুভূমি, শুকনো  ফুটিফাটা জমি এবং পাহাড় ছাড়া সেখানে কিছুই নেই।   জনসন এর নয়া নামকরণ করলেন প্যারাডাইস র‍্যাঞ্চ।  ১৯৫৫ সালের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়ে গেল হালচাল। এসে গেল সমীক্ষক দল। বিশাল একটি  রানওয়ে নির্মাণের সাথে যুক্ত বিষয় আসয় খতিয়ে দেখা শুরু হল। শুধু রানওয়ে বানালেই তো হবে না। সাথে কর্মক্ষেত্র ভবন, এক জোড়া সাধারন দর্শন বিমান  হ্যাঙ্গার এবং সাথেই  শ্রমিকদের থাকার জায়গাও বানানো হল। সেই সময় এরিয়া ফিফটি ওয়ানকে আমরা উত্তর মেরুর আউটপোস্টের মত একটা কিছুর সাথে তুলনা করতেই পারি। ফারাক শুধু এটা ছিল মরুভুমির ভেতর। কয়েক মাস যেতে না যেতেই সেখানে  খেলাধুলা করার জায়গার সাথে সাথেই স্থাপিত হল একটা ছোট সিনেমা হলরিয়া ফিফটি ওয়ান বাড়ছিল আকারে প্রকারে।

 এখানে কী হচ্ছে সে্টা রাশিয়ানরা  যাতে কোন ভাবেই জানতে না পারে সেটা নিশ্চিত করার    প্রতিটি মুহুর্তে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলসাইটে লোকের সংখ্যা ন্যূনতম রাখা হয়েছিল। কাউকেই খুব দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে থাকতে দেওয়া হত না।  শ্রমিকদের লকহিড প্ল্যান্ট থেকে নিয়ে আসা যাওয়ার গোপন ব্যবস্থা করা হয়েছিল। লাস ভেগাস থেকে মাত্র একশো মাইলের দূরত্ব কী  চলছে তা নিয়ে আলোচনা সর্বাধিক মাত্রার কঠোরতা দিয়ে  সীমাবদ্ধ করার ব্যস্থা হয়েছিল।

 ১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে দুটি ঘটনার পর, একটি ছোট কিন্তু স্থায়ী সিআইএ টিম এর ঘাঁটি স্থাপন করে এবং  প্রথম ইউ – টু বিমান ওখানে নিয়ে আসা হয় বিরাট মাপের একটা কার্গো বিমানে চাপিয়ে, গোপনীয়তার মাত্রা আর বেড়ে যায়। এর কয়েক দিন পরেই,  লকহিড বারবাঙ্ক ফেসিলিতি আর এরিয়া ফিফটি ওয়ানের ভেতর শুরু হয়ে যায় বিমানের আনাগোনা।  

এর পরের বছরগুলিতে, চমকে দেওয়ার মতো নজির সৃষ্টিকারী কিছু বিমানের টেস্টিং হয় এখানে। যার ভেতর ছিল  ইউ – টু,  ব্ল্যাকবার্ড এবং এ –টুয়েলভ। মূলত, সোভিয়েত ন জরদারিকে ন্যূনতম রাখার উপায় হিসাবে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হাইলি ক্ল্যাসিফায়েড লেজিলেশন পাস করায়। যার সূত্রে অফিসিয়াল ক্লিয়ারেন্স বিনা ওই এলাকায়   আকাশসীমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। 

১৯৭০ এর দশক যখন গড়িয়ে চলছে  তখন এরিয়া ফিফটি ওয়ানের লোকেরা  মন দিয়েছে একটি দুর্দান্ত বিষয় উদ্ভাবনে। বিশেষ এক স্টিলথ প্রযুক্তিন এমন এক বিমান বানানোর চেষ্টা চলছে যা যে কোন রকম রাডারের নজর থেকে ব্যবহারিকভাবে অদৃশ্য থাকবে।

তৈরি হয়েও গেল  এফ -১১৭ নাইটহক, পরিচিতি   স্টিলথ ফাইটার নামে এবং নরর্থপ বি - টু স্পিরিট  ওরফে স্টিলথ বোম্বারএই সময় বাস্তবিক পক্ষেই এরিয়া ফিফটি ওয়ানের আকার দাঁড়িয়েছে ‘বিশালকায়’। অগুনতি বিমান  হ্যাঙ্গার, অসংখ্য ভূগর্ভস্থ ল্যাবযাদের প্রাকৃতিক সুরক্ষার বেষ্টনীতে ঘিরে রেখেছিল আশেপাশের পাহাড়  

 মিলিটারির কিছু উচ্চ স্তরের ব্যক্তিত্ব,  বিশেষ গোয়েন্দা বিভাগ এবং মার্কিন সরকার ছাড়া ১৯৫০ এর শুরু থেকে ১৯৮০ র দশকের শেষভাগ পর্যন্ত কেউই এরিয়া ফিফটি ওয়ানে ঠিক কী কাজ  চলছে কেউ জানতেই পারেনি। আশির দশকের শেষের দিকে  সব কিছু হঠাৎ বদলে গেল।  এরিয়া ফিফটি ওয়ান হয়ে উঠল একটা ফেনমেনন।  আর তখন থেকেই চিরস্থায়ীভাবে এর সাথে ইউ এফ ও শব্দটাও জড়িয়ে গেল।   

১৯৮৯ সালের মার্চ মাসে জন্ম নিল কিংবদন্তিসেই বিশেষ রাতে রবার্ট স্কট ল্যাজার নামের এক  লাস ভেগাস মিডিয়া সুত্রে জন্ম দিলেন এমন এক ঝটকার। যাতে কেঁপে  উঠল এরিয়া ফিফটি ওয়ানের সাথে যুক্ত কর্মীবৃন্দ এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিরা।  

 লাজারের মতানুসারে মতে যিনি অবশ্য "ডেনিস" ছদ্মনামে কথা বলেছিলেন – তিনি ১৯৮৮ সালের শেষের দিকে এরিয়া ফিফটি ওয়ানের একটি সহায়ক এলাকায় কয়েক মাসের জন্য কাজ করেছিলেনযার নাম এস – ফোর। KLAS-TV টিভির টক-শো হোস্ট জর্জ ন্যাপ, মন দিয়ে শুনেছিলেন লাজারের গল্পঅস্বীকার করার উপায় নেই, তৎকালীন সময়ে সে গল্প ছিল গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতই । এমন কী আজও আমরা ল্যাজারের  কথাগুলো নিয়ে ভেবেই চলেছি। তার প্রমান আমার এই লেখা। 

ল্যাজার দাবি করেছিলেন, এরিয়া ফিফটি ওয়ানে কমপক্ষে নটি ভিনগ্রহী মহাকাশযান সংরক্ষণ করে রাখা আছে। যে গুলোকে অত্যন্ত গোপনে বৈজ্ঞানিদের একটি ছোট দল নিরন্তর  পরীক্ষা করে চলেছে। সে পরীক্ষায় সাফল্য বা ব্যর্থতার নানান মাত্রা  দেখেছে ল্যাজার। কারন সেখানে চেষতা হচ্ছিল বহিরাগত আপাত অবাস্তব প্রযুক্তিটিকে বোঝার এবং নকল করার নিশ্চিতভাবেই এই রহস্য ফাঁস করে দিয়ে ল্যাজার  হয়ে গিয়েছি্লেন কিছুটা ফাঁদে পড়া ইদুরের মত । যা মোটেই ভাল কথা নয়। 

১৯৮৯ সালে জর্জ ন্যাপকে  ল্যাজার যা দেখার দাবি করেছিলেন তা এরকম। ইউ এফ ও গুলোকে বিমান হ্যাঙ্গারের এলাকায় রাখা ছিল। যার কিছু একেবারে আদিম স্তরের। যতদুর তার মনে আছে  দুটো সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।   

ল্যাজার জানান  পরিস্থিতির গুরুত্বের বিশালত্ব উনি সেদিন স্পষ্ট করে বুঝতে পারেন, যেদিন তাকে, পৃথিবীতে বহিঃ জগতের সত্তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে পড়ার জন্য হাই ক্ল্যাসিফায়েড ফাইল পড়ড়তে দেওয়া হয়।  সেখানে এলিয়েনদের সাথে ধর্মের সম্পর্ক, তাদের প্রযুক্তি, এলিয়েন শরীরের ময়নাতদন্তর প্রতিবেদন, চমকপ্রদ অমানবিক প্রযুক্তির নকল করার চেষ্টা সব বিষয়েই নোটস ছিল।  

 এসবের ভিত্তিতে অনুমান করে নেওয়া যেতেই পারে এরিয়া ফিফটি ওয়ান নিঃসন্দেহে এই গ্রহের  সবচেয়ে গোপনীয় এবং  বিতর্কিত একটি স্থান। 

০০০০০০


এরিয়া ফিফটি ওয়ানের কিসসা

ইউ এফ ও বিষয়ক একটি ফাঁস হওয়া নথি এবং ...

 

খুব অল্প সংখ্যক অফিসিয়াল ডকুমেন্টেশন এরিয়া ফিফটি ওয়ান বিষয়ে প্রকাশ্যে এসেছে তার ভেতর কিছু নথি আবার একটু বিশেষ ধরনের বলা যায় যাদের বলা যেতে পারে  ওই গোপন এলাকায় কাজ করতে থাকা কর্মীদের দ্বারা  ফাঁস হওয়া নথি যা ইউ এফ ও গবেষণাকারীদের হাতে আসে এসব নথির একটাই সমস্যা এগুলো আসল না নকল তার সঠিক কোন প্রমান নেই   

 ফাঁস হওয়া নথি নিয়ে কাজ করা সময়  ইউ এফ ও গবেষকদের সব সময় ভাবতে হয় যা পেলেন তা আসল নাকি সরকার থেকে ইচ্ছে করে তৈরি করা বিভ্রান্তি যা বোঝা প্রায় অসম্ভব 

 ১৯৯৪ সালে এরিয়া ফিফটি ওয়ান নিয়ে এ জাতীয় একটি দলিল পাওয়া যায় যা প্রমান দেয়   ঐ রহস্যময় স্থানে ঠিক কী ঘটছে তা বোঝা কতটা মুশকিল  

 নথিটি আসল হলে  এরিয়া ফিফটি ওয়ান সম্বন্ধে অনেক উল্লেখযোগ্য তথ্য সামনে আসবে যার ভেতর অবশ্যই ইউ এফ ও ক্র্যাশ হওয়া এবং তাদের ফিফটি ওয়ানের এলাকায় নিয়ে যযাওয়ার ব্যাপারটাও আছে আবার যদিও  মিথ্যে হয়, তাহলেও একটা প্রশ্ন কিন্তু সামনে এসেই যায় -    কেন  অভ্যন্তরীন সরকারী কর্মচারীরা এটা দেখাতে চাইছেন  অবিশ্বাস্য ইউএফও বিষয়ক কিছু  এরিয়া ফিফটি ওয়ানের ভেতর ঘটে চলেছে? 

 এই নথিটিকে অতি সাবধানতার সাথে অধ্যয়ন করেন গবেষক  পিতা-পুত্র ডঃ রবার্ট উড এবং রায়ান উড যারা বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের  বিপুল সংখ্যক প্রশ্নচিহ্ন সম্বলিত নথির সত্যিটা জানার চেষ্টা করে চলেছেন  

 আনঅফিসিয়ালি এভাবে  প্রকাশিত নথিগুলির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয়টার কথা এবার বলা যাক   

সে এক দীর্ঘ নথি যা স্পেশাল অপারেশনস ম্যানুয়ালহিসাবে পরিচিত   

 ১৯৯৪ সালে আন ডেভেল পড ৩৫ মিমি ফিল্মের রুপে কুইলিনস ড্রাগ স্টোর থেকে  স্পেশাল অপারেশনস ম্যানুয়াল এস ও এম ১-০১  আসে লেখক এবং ইউ এফ ও গবেষক ডন বার্লিনারের কাছে ডেভেলপ করার পর দেখা যায় ওটা ১৯৫৪ সালের এপ্রিল মাসের এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল এন্টিটিজ অ্যান্ড টেকনোলজিস-রিকভারি অ্যান্ড ডিসপোজালশিরোনামের একটি ম্যানুয়াল   

 যা থেকে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে স্পষ্টত উদ্দেশ্য ছিল, যা ঘটছে তাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে এবং জনসাধারণকে যেভাবেই হোক বোঝাতে হবে  সেই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই ক্র্যাশ হয়নি

 উড লক্ষ করেন যে, সন্দেহপ্রবণ প্রকৃতির ইউ এফ ও গবেষকেরা ওটা পড়ে মোটেই প্রভাবিত হননিতার কারণ ওই নথিতে থাকা পরস্পরবিরোধী বা বিতর্কিত তথ্য কেউ বলেন নথিটি সরকারী প্রোটোকল অনুসরণ করেনি উড অবশ্য এই সুত্রে বলেন এরিয়া ফিফটি ওয়ানের মত গোপন বিষয় যখন সংযুক্ত থাকে তখন  নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে চলার ব্যাপারটা অনেক ক্ষেত্রেই    অপ্রাসঙ্গিক বিবেচিত হয়এটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়

ওই ডকুমেন্ট ডিসইনফর্মেশন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বানানো উন্নত মানের জালিয়াতি হতেই পারে যদি তাই হয় তাহলে সেক্ষেত্রে এরকম একটা বিষয়, প্রোটোকল, সংক্রান্ত ব্যাপারটা নিয়ে তারাও ভাববেন না এটা কী সম্ভব? তারা কী অতি বোকা যে এরকম একটা ব্যাপার বাকিদের মাথাতে আসতে পারে সেটা ভাববেন না?

 নথিটির মুল বক্তব্য এরকম। আমেরিকায় একটি  ইউ এফ ও ক্র্যাশের মত ঘটনা ঘটেতাকে ঢাকতে একটি কভার স্টোরি বানানো হয় ।  ওই  ইউ এফ ও আসলে একটা আমারিকার নিজস্ব হোম মেড স্পেস স্যাটেলাইট।   

কিন্তু এই যুক্তি মানার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। প্রথম মহাকাশ উপগ্রহসোভিয়েত ইউনিয়নের স্পুটনিক ১ তখনো উৎক্ষেপণ হতে তিন বছর বাকি। তারিখটা মনে আছে নিশ্চয় পাঠক পাঠিকাদের। ১৯৫৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর।

 আশা করি কী বলতে চাইছি আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। কিছু বিশেষ মিথ্যে ধামাচাপা দিতে একটা অন্য মিথ্যে বলা হয়েছে ওই নথিতে।

 এরিয়া ফিফটি ওয়ানের কিসসা যারা পড়েছেন তারা জানেন ১৯৫৫ সালে এরিয়া ফিফটি ওয়ানের তথাকথিত শিলান্যাস বা কাজ কর্ম শুরু হয় । কিন্তু এই বিশেষ নথি যদি সামান্যতম সত্যিও বলে থাকে তাহলে তার অনেক আগে থাকেই ওখানে কাজকর্ম শুরু হয়ে গিয়েছিল।

 কিন্তু স্যাটেলাইটের গল্পই ফাঁদা হল কেন? তার কারন সেই সময় মানুষের মনে এই স্যাটেলাইট বিষয়ক আলোচনার একটা সুত্রপাত ঘটেছিল। যে ভাবেই হোক জনগন আন্দাজ করেছিল স্যাটেলাইট জাতীয় কিছুর গবেষনা চলছে। টাইম ম্যাগাজিনে একটি আর্টিকলও প্রকাশিত হয় এ বিষয়ে।  সুতরাং জনসাধারণের মনে এ নিয়ে একটা ছবি তৈরি হয়ে ছিল, আর সেটাকেই সুকৌশলে ব্যবহার করা হয়।    

১৯৫৪ সালে এরিয়া ফিফটি ওয়ানের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল না এটা যদি ধরে নেওয়া হয়, তাহলে এই নথি যে জাল সেটাই মেনে নিতে হবে কিন্তু লাস ভেগাস রিভিউ জার্নাল এর একটি সংখ্যা থেকে একটা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যা প্রমান দিচ্ছে ১৯৫১ সালে ইন্ডিয়ান স্প্রিং এর কাছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বিরাট মাপের কন্সট্রাকশন নির্মানের কাজ চলছে আমারা যে ধরনের পরীক্ষাগারের কথা জানতে পেরেছি এর আগের নিবন্ধ সুত্রে তাতে এটা বেশ ভাল পরিমাণ অর্থই বলা যায় যাদিয়ে ওইসব অনায়াসে নির্মাণ করা সম্ভব   

 প্রথমেই বলেছি এ পরস্পর বিরোধী তথ্য সম্বলিত নথি যাকে বিশ্বাস করা বেশ কঠিন কেন সেটা এবার দেখা যাক নথিতে মহাকাশযান বা অন্যান্য কিছুর একেবারে নিখুঁত বিবরণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে ১৯৫০ সালের রাডার ব্যবহার করে তা করা নাকি অসম্ভব। কিন্তু যেখানে উন্নত [এলিয়েন?] প্রযুক্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে, সেখানে উন্নত রাডার থাকবে না এটাও বোধহয় মেনে নেওয়া যায় না অতএব ওই ম্যানুয়াল নথিকে বিশ্বাস করাই যায় সোজা কথায়  ইউ এফ ও বিশেষজ্ঞরা ঐক্যমতে আসতে পারেননি

 এই নথির  ছিল কভারে লেখা ছিল রেস্ট্রিকটেড শব্দটি। যা টপ সিক্রেট বিষয়ের সাথে মানানসই নয় বলেই দাবি একাধিক গবেষকের রেস্ট্রিকটেড শব্দটি যে ব্যবহার হয় না তা নয় তবে তাকে কনফিডেনশিয়াল শব্দর গুরুত্বের থেকে কম মাত্রার বলে মনে করা হয়। আসলে রেস্ট্রিকটেড বাসীমাবদ্ধশব্দের এরকম অর্থই হয় যে, নির্দিষ্ট কিছু মানুষ এতা ‘অ্যাক্সেস’ করতে পারবেন।   ম্যানুয়ালটির প্রকাশক  হয়তো সেটাই চেয়েছিলেন কারন টপ সিক্রেট কিছু নির্দেশ নামা ওখানে ছিল। 

একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।  ১৪ই জুলাই, ১৯৫৪, একটি মেমো যাচ্ছে  কাটলারের কাছ থেকে টোয়াইনিং এর কাছে। যার ট্যাগ, ‘টপ সিক্রেট রেস্ট্রিক্টেড সিকিউরিটি ইনফর্মেশন’।  যেখানে ন্যাশনাল সিকিউরটি কাউন্সিলের এম জে – ১২ বিষয়ক স্পেশ্যাল স্টাডিজ প্রোজেক্ট মিটিং  এর স্থান কাল পরিবর্তন করার আবেদন জানানো হয়েছে।   মেমোটির উৎস ন্যাশনাল আর্কাইভ এবং এটি প্রমান দিচ্ছে এম জে -১২র অস্তিত্বের  

এভাবেই, আসল হোক বা নকল এই অদ্ভুত নথি বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় দুলিয়েছে সবাইকেই। হাতে লেখা এই নথি দেখে কেউই কিন্তু এর আসল কপি খুঁজে দেখার চেষ্টা করেননি। কারন তারা বলেছেন যদি আসল টা খুঁজতে গিয়ে না পাওয়া যায়, তার অর্থ তো এটাই দাঁড়াবে এরকম কোন কিছুর অস্তিত্ব কোথাও ছিল না। অর্থাৎ না চাইলেও সবাই যেন মনে মনে বিশ্বাস করতে চেয়েছেন এরকম কিছু থাকুক।

তবে পাওয়া না গেলেই যে এরকম কিছু কোন দিন ছিল না তাও ভেবে নেওয়াটা ঠিক নয়। কারন আগে ছিল পড়ে নেই এরকম হয়েই থাকে। বিশেষ করে কোন ফাঁস হওয়া নথি যা থেকে জাতীয় সুরক্ষার পক্ষে প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে  এমন সম্ভাবনা দেখা দিলে আসল নথি অনেক সময় সরকার থেকেই নষ্ট করে দেওয়া হয় বা অতি গোপন ক্ল্যাসিফিকেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যা বাইরে আসার আর সুযোগই থাকে না। সোজা কথায় তাদের অদৃশ্য করে দেওয়া হয়।   

 একটা  কথা বলাই যায়, এরকম নথি আসল কিনা তা প্রমান করা খুব কঠিন। কিন্তু নকল বা জাল বলে দেওয়াটা খুব সোজা। আবার সত্যিই সেটা নকল কিনা তা প্রমান করা আরো কঠিন হয়ে যায় যদি তার পেছনে থাকে রহস্যমাখা এরিয়া ফিফটি ওয়ান।

 বিতর্কিত এই নথি বিষয়ে নিশ্চিতভাবে যা বলতে পারা যায় তা হ'ল, এটি এলিয়েন প্রযুক্তি নিয়ে অতি উচ্চমাত্রার গোপনীয় গবেষণা যে কয়েক দশক ধরে নেভাডায় চলছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন, তার দাবিগুলোকে আরও জোরদার করেকিন্তু তার সুত্র ধরে মহাকাশ থেকে আগত এলিয়েনদের গল্পগুলোর পেছনে দৌড়ানো সঠিক কাজ হবে কিনা সেটা বিতর্কের বিষয়।  

 যাইহোক এরপর খুব জলদি নিয়ে আসছি সেই এলিয়েনের গল্প

“কিংম্যান শহরের এলিয়েন রহস্য”

 


2 comments: