Search This Blog

Friday, August 18, 2017

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৩৭-৪৩) চতুর্থ অধ্যায়- **লিলি নামের একটি মেয়ে**[ সম্পূর্ণ] প্রতিম দাস

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ (৩৭-৪৩)
**লিলি নামের একটি মেয়ে**
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০০০০০০


০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
**লিলি নামের একটি মেয়ে  **  
ভিক্টোরিয়া স্টেশন, কেনিয়া
১৯৯৬ – ২০০৬
০০০০০
ভিক্টোরিয়া স্টেশন
দক্ষিন কেনিয়া
১৯৯৬ – ২০০৬
ঐতিহাসিক সেই আলোচনা সভার পর গার্জিয়ান দলটি কেনিয়াতে চলে আসে। শুরু হয়  ওখানেই থাকা, নানান কাজ করা এবং বিশেষ ট্রেনিং নেওয়া। জায়গাটা তাঞ্জানিয়ার সীমান্তে এক প্রান্তিক এলাকা। আকাশে মেঘ না থাকলে দক্ষিন দিকে তাকালে মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর শিখর দেখতে পাওয়া যায় দিগন্ত রেখায়।
এ জায়গা অনেক দূর পশ্চিমের দুনিয়া থেকে।
অনেক দূর শত্রুদের থেকে।
ফার্মটা – বিশেষ উদ্দেশ্যেই – স্থাপন করা হয়েছে এক ফাঁকা প্রান্তরের মাঝখানে। চারদিকে অন্তত দুমাইল করে স্থান একে বাড়ে ন্যাড়া - শুনশান। একটাও গাছ নেই।
অযাচিত কোন আগন্তুক এখানে আসুক কেউ সেটা চায়না।
স্থানীয় মানুষদের কাছে এই মানুষ গুলো  একটা কৌতূহলের বিষয় হয়ে ছিল প্রথম প্রথম 
কেনিয়াবাসীদের কাছে ভিক্টোরিয়া ষ্টেশন আর পাঁচটা ফার্মের মতোই যেখানে কাজকর্ম হয়।    কিছু বিদেশীও আছে তাদের সেখানে যারা এক বয়স্ক মানুষের অধীনে কাজ করে । নাম এপ্পার। সাথে আছে ওর সুন্দরী স্ত্রী ডরিস। ধূসর চুল, শান্ত , নম্র এবং ভদ্র। কানাডা থেকে ভদ্রমহিলা চলে এসেছেন স্বামীর কাছে এই মিশনে কাজ করার জন্য । এরকম একটা ঠাকুমা সুলভ চরিত্রের খুব দরকারও ছিল এই ফার্মটাকে ঠিকভাবে দেখাশোনা করার জন্য।
কিছুদিনের মধ্যে স্থানীয় মানুষেরা এটাও জেনে গেল যে এদের সাথে একটা ছোট্ট মেয়েও আছে । মাঝে মাঝেই হয় ডরিস না হলে ওদের অধীনে কাজ করে এমন কোন একজন শহরে যায় বাচ্চাটার জন্য  খাবার বা দুধ বা ডাইপার বা কখনো খেলনাপাতি কেনার জন্য।
কেনিয়ানরা ধরেই নিয়েছে ওই ফার্মে যে সোনালী চুলের তরুণী আছে তারই মেয়ে ওই শ্যামলবরণা বাচ্চাটি। আর নিশ্চিতভাবেই ওই ফার্মে থাকে এমন কোন একজন পুরুষ ওর স্বামী।
স্থানীয় মানুষেরা অবশ্য এটা লক্ষ্য করে উঠতে পারেনি যে প্রতিদিন রাতে সবসময় যে কোন দুজন লোক ফার্মের পুরো জায়গাটা ঘুরে ঘুরে পাহারা দেয়।
লিলি বড় হচ্ছে বেশ দ্রুতই।
সত্যিই ও ছোট্ট কচি মিষ্টি একটা বাচ্চা থেকে অবিরাম বকবক করতে থাকা একটা মেয়েতে খুব তাড়াতাড়িযেন বদলে গেল। যখন হাঁটতে শিখলো , সেটা এক চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ালো ওর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে।
প্রায়ই  দেখা যাচ্ছিলো সাত জন অতি প্রশিক্ষিত কম্যান্ডো চেয়ার সরিয়ে,   টেবিল নড়িয়ে বিছানার চাদর তুলে বা খড়ের গাদা হাতড়ে একটা পুঁচকে বাচ্চাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে বাড়ীময়। লিলিরও যেন অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল যেখানে সেখানে পালিয়ে যাওয়ার।
 এর পর শিখল কথা বলা । আর শিখলো  বই পড়তে।
আসলে ওর ওপর নানান রকম মানুষের প্রভাব পড়ছিল।
যখন লিলি দেখলো সা্লাদিন হাঁটু গেড়ে বসে মক্কার দিক নির্দেশ করে বসেছে, জানতে চাইলো এটা সে কি করছে। সালাদিন ওকে শিখিয়েছিল ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে । একদিন সালাদিন বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল যখন চার বছরের লিলি জানতে চেয়েছিল কিছু ইসলামিক মহিলা মাথা থেকে পা  পর্যন্ত ঢেকে বোরখা পরে কেন।
‘যদি ওরা বোরখা না পড়ে , কিছু মানুষ এমন আছে এ জগতে যারা...ইয়ে ...ওদের সম্মান দেখাবে না,’ বার দুয়েক কেশে সালাদিন উত্তর দিয়েছিল।
লিলি সঙ্গে সঙ্গে বলেছিল, ‘জো তো বোরখা পড়ে না।’
দলের অনেকেই কাছে বসে খাওয়া দাওয়া করছিল। জো, এপ্পার, ওয়েস্ট । হাসলো ওরা। জো সালাদিনের দিকে তাকালো কি উত্তর দেয় শোনার জন্য।
‘না মানে, ওর দরকার নেই। কারন ও মুসলমান নয় ।’
‘কিন্তু তুমি তো ওর মাথাটা দেখতে পাও তাই না?’ লিলি জানতে চাইলো।
‘হ্যাঁ...’


‘তার মানে ইসলাম ধর্ম অনুসারে তুমি ওকে সম্মান করো না।’
সালাদিনের মুখটা লাল হয়ে গেল লজ্জায়। ‘আরে না না ... মোটেই তা নয়। আমি মিস জোকে যথেষ্ট সম্মান করি। ’
‘তাহলে বলো কেন মুসলিম মহিলারা বোরখা পড়ে থাকে?’
সালাদিনকে অসহায় দেখায়।
জো এই অবস্থায় বাঁচায় সালাদিকে । বলে, ‘ লিলি, সব মানুষ তো আর আজিজের মতো ভদ্র নয়। অনেক মানুষ আছে যারা মহিলা দেখলে    নিজেদেরকে সামলাতে পারে না । যেটা আজিজ পারেন।’
‘সামলাতে পারে না মানে?’ লিলি আবার জানতে চাইলো। ব্যাপারটা বেশ নতুন ওর কাছে।
জো উত্তর দেয়, ‘তুমি আর একটু বড় হও তারপর  এটা নিয়ে তোমার সাথে কথা বলবো । ঠিক আছে?’

লিলি এখানে যবে থেকে এসেছে   রান্না ঘরে রেফ্রিজারেটরের গায়ে চুম্বক দিয়ে আটকিয়ে একটা কাগজের টুকরোঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ।– ওটার গায়ে সাতটা বাক্স আঁকা। যেগুলোর ভেতরে অদ্ভুত রকমের লেখা ।
আসলে ওগুলো ক্যালিম্যাচুসের পান্ডুলিপির প্রধান সাতটা লেখনীর নকল।


ওটা দেখতে এই রকম –
ওটা এমন ভাবে লাগানো আছে যাতে প্রতিদিন সকালে যেন জ্যুস আনতে গিয়ে লিলির চোখে পড়ে। ওটায় কি লেখা আছে জানতে চেয়েছিল একবার। ডরিস এপ্পার উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমরা কেউই সেটা জানি না লিলি । আশা করছি একদিন তুমি ওটা পড়তে পারবে আর আমাদের জানাবে কি লেখা আছে ওখানে।’
লিলির যখন পাঁচ বছর বয়েস হলো, ম্যাক্স এপ্পার দায়িত্ব নিলেন ওর পড়াশোনার। শিখাতে শুরু করলেন অঙ্ক, বিজ্ঞান, প্রাচীন ইতিহাস এবং ভাষা – বিশেশ করে ল্যাটিন, গ্রীক এবং কিউনিফর্ম ।
কিছু দিনের ভেতরেই বোঝা গেল ওর ভেতরে একটা সহজাত প্রতিভা আছে ভাষা বোঝার, শিখেও নিচ্ছিল অতি সহজে – মনে হচ্ছিল এসব যেন ও আগে থেকেই জানে।
৭ বছর বয়সে, ল্যাটিন আর গ্রীক পুরো আয়ত্ব করে ফেললো।
৮ বছর বয়সে, ইজিপশিয়ান হিয়েরোগ্লিফিক্স অনুবাদ করে অবাক করে দিলো সবাইকে।
৯ বছর বয়সে, কিউনিফরম ভাষার ব্যবহারে পেছনে ফেলে দিলো স্বয়ং এপ্পারকে – বিসিতুন মনুমেন্টের তিনটে প্রাচীন ভাষার লেখাকেই অনুবাদ করে ফেললো অতি সহজে।
আর আধুনিক ভাষাগুলোর কথাতো ছেড়েই দেওয়া যাক। ওর মাল্টি ন্যাশানাল গার্জিয়ানদের সাথে লিলি তাদের ভাষাতে অনর্গল বকরবকর করে যেতো। ওর সবচেয়ে পছন্দের ভাষা ছিল আইরিশ জো আর লিয়াম কিসানের  কঠিন গ্যালিক টানযুক্ত মাতৃভাষা।
এপ্পার নিজে একজন দারুন শিক্ষক।
লিলি ওকে খুবই পছন্দ করতো – নীল শান্ত চোখের বুদ্ধিদৃপ্ত বয়স্ক মুখাবয়বটা ওর ভালো লাগতো। সাথেই পড়ানোর পদ্ধ্বতিটাও ।
এপ্পারের নতুন নামকরন করেছিল লিলি – উইজার্ড ।
প্রতিদিন সকালে, এই ফার্ম হাউসের পূর্ব দিকের পড়ার ঘরটায়   অত্যন্ত আগ্রহের সাথে ছুটে যেত নতুন এবং ইন্টারেস্টিং কিছু শেখার জন্য।
“দ্য চার্জ অফ দ্য লাইট ব্রিগেড” ধরনের কবিতাগুলো রীতিমতো অঙ্গভঙ্গী করে আবৃত্তি করে শোনাতেন এপ্পার।
সাধারন অঙ্ক ও ছবির মতো করে এঁকে বুঝিয়ে দিতেন।
আর বিজ্ঞান সেখাটাতো ছিল অত্যন্তই মজার ব্যাপার –বাস্তবিক পক্ষেই। উইজার্ড তার নানান রকম আবিষ্কারগুলো করতেন এই ফার্মের ওয়ার্কশপেই। নানান রকম গ্যাজেট আর যন্ত্রপাতি বানিয়েই যেতেন তার ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম এর সাথে পরীক্ষা নিরিক্ষা চালিয়ে।
একবার লিলিকে বলেওছেন তিনি অনেক দিন আগে আমেরিকার স্যান্ডিয়াতে একটা ল্যাবরেটরিতে কাজ করতেন। একটা গোপন জায়গা যেখানে নানান রকম গোপন জিনিষপত্র বানানো হতো।
লিলির এগুলোতে আলাদা আগ্রহ ছিল। গোপন জিনিষ বিষয়ে।

দলের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকেও ও পেয়ে যাচ্ছিলো বিভিন্ন রকম শিক্ষা।
যদিও সেরকম বয়েস হয়নি তবুও জো ওকে শিখিয়ে দিচ্ছিলো অনেক কিছুই – যেমন , কিভাবে নিজের চুল আঁচড়াতে হয়, নখ কাটতে হয় এবং কি ভাবে ছেলেদের দিয়ে সুযোগ মতো কাজকর্ম করিয়ে নিতে হয়।
মাতাদোর, স্প্যানিশ ট্রুপার দিনের অনেকটা সময় কাটাতো ফার্ম হাউসে বানানো একটা ছোট ঘরের ভেতরের জিমে । প্রথম দিকে লিলিকে  দেখতে দিতো  মাতাদোর,  কি  করে ও। একটু বড় হয়ে উঠতেই ওকে বসিয়ে দিতো সেই বেঞ্চটার উলটো দিকে যেটা ধরে ও ব্যায়ামগুলো করতো। শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে লুফে নেওয়াটাও লিলির খুব পছন্দের একটা খেলা ছিল।

জামাইকান কম্যান্ডো , উইচ ডক্টর, ওকে শেখাতো কি ভাবে নিঃশব্দে কাজ করতে হয়। ওরা এটা করে মাঝে মাঝেই ডরিস এপ্পারকে ভয় পাইয়ে দিতো যখন উনি বারান্দা একা একা বিকেলের সূর্যের শোভা নিরীক্ষণ করতেন।
ওয়েস্ট উইজার্ডের পেছন থেকে বেড়িয়ে এসে দাঁড়ালো সামনে।
‘আরে! হ্যালো জ্যাক,’ আরচার চেনা মানুষ দেখার স্বরে বললো, ‘সেই ডেজারট স্টরমের পর এই প্রথম তোমার দেখা পেলাম। শুনেছিলাম বাসরাতে স্কাড বেসে তোমার কীর্তিকলাপ। দারুন ব্যাপার। ইজ্রায়েল তোমার কাজের খুব প্রশংসাও করেছিল। যদিও আমরা ঠিকঠাক জানিনা তুমি ওখান থেকে কি করে বেড়িয়ে এসেছিলে। আমার বসেরা বলেই ছিল তুমি এর সাথে যুক্ত আছো। আর সে কারনেই ওরা আমাকে এই মিশনে পাঠিয়েছে। ওদের মনে হয়েছে একেবারে একজন অচেনা মানুষের বদলে তুমি আমাকে সহজেই দলে অন্তর্ভুক্ত করে নেবে।’
‘ওরা একেবারে সঠিক ভাবনা ভেবেছেন, বেন,’ ওয়েস্ট উত্তর দিলো। ‘ ওই কারনেই তুমি এখনো পর্যন্ত বেঁচে আছো।’
‘দূতকে কখনো গুলি করতে হয় না।’
‘কেন, অসুবিধা কোথায়?’ ওয়েস্ট উত্তর দিলো। আরচারের মুখ দেখে মনে হলো ওর আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে।
ওয়েস্ট বললো, ‘ বেন, আমি নিজে খুব একটা হাত পা চালাতে পছন্দ করি না । আর এখানে তুমি সরাসরি আসার সাহস দেখিয়ে আমাদের সবাইকে হাতে বন্দুক তুলে নিতে বাধ্য করেছো।’
আরচার এবার গম্ভীর ভাবে বললো, ‘এটা সত্যিই একটা বিরাট মাপের বিষয়। অ্যাফেয়ার্স অফ স্টেট । গোটা বিশ্বের ভবিষ্যত আর কি কি সব। ইউরোপ আর আমেরিকার ভেতর এই লড়াইটা অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। শুধু এটা বলতে পারি ইজ্রায়েল সব সময়ে চেয়েছে  এটার সাথে যুক্ত হতে। এই কথাটা যদি তোমাকে খুশি করে থাকে, তাহলে আমাকে নির্দেশ দেওয়া আছে আমি যেন সরাসরি  তোমার আন্ডারে কাজ করি।’
ওয়েস্ট একটু ভাবলো।
তারপর বললো, ‘  পরিবারের সাথে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না। যত দিন না মিশন শেষ হবে মোসাদের কাছে কোন রিপোর্ট পাঠানো যাবে না।’
‘আমাকে অন্তত একবার রিপোর্ট করতেই –’
‘কোন ভাবেই মোসাদকে  রিপোর্ট করা যাবে না বেন। হয় এটা মেনে নাও অথবা এই মুহূর্তে আমি তোমার খুলি উড়িয়ে দিতে বাধ্য হবো। ’
আর চার দুহাত উপরে তুললো , হাসলো , ‘এ নিয়ে আর আর কথা বাড়ানোর মানেই নেই। তোমার কথা মতোই কাজ হবে।’
পুরো টিম স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল – কিন্তু ওরা জানে এ ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই ওদের সামনে।
আরচারকে এই দলে নিতেই হবে নচেৎ ইজ্রায়েলীরা এই মিশনের সব খবর আমেরিকানদের সরবরাহ করে দেবে।
ইজ্রায়েলীরা কিভাবে এই মিশনের খবর পেল ওরা জানে না- কিন্তু এটা সবাই জানে মোসাদ হ লো এই পৃথিবীর সবচেয়ে ক্রুরতম এবং সবচেয়ে দক্ষ গোয়েন্দাদের দপ্তর।
তবে এই মুহূর্তে এটা ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে ইজ্রায়েল চায় না ওই ক্যাপস্টোন আমেরিকা বা ইউরোপ কেউ পাক। যার একটাই অর্থ ইজ্রায়েল চায় এই মিশনটা সফল হোক । সেটা বেশ ভালো খবর।
সাথে সাথেই বড় প্রশ্ন এটাও যে ইজ্রায়েলের আসল চাহিদাটা কি? এই মিশনের শেষে ওরা কি করার কথা ভাবছে? সে ক্ষেত্রে আরচার এবং ইজ্রায়েলীদের বিশ্বাস করা যায় কি?
প্রথম প্রথম আরচারের সাথে কেউ কথাই বলতো না – চরম ঠান্ডা মাথার মানুষ বেন এব্যাপারটা খুব একটা গায়ে মাখেনি।
কিন্তু কোন মানুষতো আর একাকী একটা দ্বীপের মতো নয় মোটেই। যে কারনেই একদিন বেনের ডাক এলো  ওয়েস্টের কাছ থেকে  কিছু রিপেয়ারিং এর কাজ করার জন্য ... আর এভাবেই সেও এই টিমটার সাথে জুড়ে গেল  । ধীরে ধীরে , অনেকটা সময় পার করার পর, দলের সাথে কাজ করে, ঘাম ঝড়িয়ে, ট্রেনিং নিয়ে  হয়ে গেল দলের অন্যতম গুরুত্ব পূর্ণ সদস্য।
এই দলের একজন সদস্য কিন্তু সব সময়ে সন্দেহের তালিকায় রেখে দিলো আরচারকে।    সালাদিন।
একজন আরব এবং একজন মুসলমান রুপে , সে মোটেই এই ইজ্রায়েলীকে বিশ্বাস করতে পারত না । যদিও বুঝে গিয়েছিল কেনিয়াতে আরচারের উপস্থিতির গুরুত্ব 
  মাঝে মাঝেই বলতো আরচারের উপস্থিতি ও জোর করে মেনে নিচ্ছে, এটা ওর মোটেই পছন্দ নয়।

এসব ঘটনার মাঝেই লিলি বড় হয়ে উঠছিল ।
সবসময় সব দিকে ওর কৌতূহল। সব কিছুতেই ওর ন জ র।
লক্ষ্য রাখে সালাদিনের সেই বড় কুটিরটার দিকে, যেটা ওদের বিস্ফোরক বানানোর ওয়ার্ক শপ। প্রায়ই ভেতর ঢুকে যায় । মোটা সোটা মানুষটার আচার আচরণ  লিলির খুব মজার মনে হয়। ওর একটা নতুন নাম দিয়েছে লিলি,  পুহ বিয়ার।
নতুন যে মানুষটা এসে দলে যোগ দিয়েছে তার দিকেও ওর নজর আছে। দেখে মানুষটা পশ্চিম দিকের ফাঁকা জায়গায় গিয়ে আলট্রা লং ব্যারেট স্নাইপার রাইফেলটা দিয়ে অনেক অনেক দূরের লক্ষ্য কি সহজেই ভেদ করে। একবারও মিস করে না। খুব মন দিয়ে ওর গতিবিধি লক্ষ্য করে লিলি । এমন কি যখন বন্দুকটা টুকরো টুকরো করে খুলে রাখে সেটা মন দিয়ে দেখে। লম্বা আর রোগা মানুষটার নাম দিয়েছে স্ট্রেচ। ওই নামটা ধরেই ডাকে লোকটাকে। [ও এটাও লক্ষ্য করেছে, কারনটা অবশ্য জানে না, পুহ বিয়ার আর স্ট্রেচ একে ওপরের সাথে কথা বলে না।]
উইচ ডক্টরের মুখ দেখার জন্য লিলিকে মাথা ওপরের দিকে ওঠাতে হয়। অল্প বয়েস থেকেই ওই মানুষটার জিরিজিরি চুলের স্টাইলটা ওর খুব পছন্দের একটা বিষয় । ওর নাম রেখেছে ফাজি। 
মাতাদোর আর গানম্যানতো ওর বন্ধুর মতো। ওরা দুজনে একসাথে জগিং করে। একসাথে ট্রেনিং নেয় এমন কি একসাথে এক বোতলে জলটাও খায়। নডি আর বিগ ইয়ার্স হয়েছে ওদের নতুন নাম।

আর অবশ্যই , জো এর দিকে ওর নজর থাকে সবচেয়ে বেশী।
ও জো এর মতো হতে চায়।
জো’র বয়েস কুড়ির একটু ওপরে এটা লিলি জানে । ফলে এটা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু না যে এরকম একটা মেয়ের মতো হতেই চাইবে লিলি।
জো কিসানেও কারোর রোল মডেল হওয়ার পক্ষে আদর্শ মেয়ে। যে কোন রকম ফিটনেস টেস্টে ওর ধারে কাছে কেঊ নেই। ডিনার টেবিলে ওর মতো হাসি ঠাট্টাও আর কেউ করতে পারে না। আবার সেই মেয়েই গভীর রাত পর্যন্ত ইতিহাস বই পড়ায় মগ্ন থাকে।
জো এর নকল করে লিলিও রোজ রাতে খাওয়ার পর একটা বই নিয়ে আরাম কেদারায় শুয়ে পড়তে শুরু করে । যদিও একটু সময় যেতে না যেতেই ভেতরেই ঘুমিয়েও পড়ে।  আইরিশ তরুণীর পদাঙ্ক অনুসরণ ও শুরু করে দিয়েছে।
লিলির কাছে ওর ডাক নাম প্রিন্সেস জো।

আর এদের সবাইকে বাদ দিয়ে আর একটা মানুষ আছে যাকে লক্ষ্য রাখাটা লিলির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র।

২০০০ সালের   সেই দিনটার কথা লিলি  কোনো দিন ভুলতেই পারবে না যেদিন উইজার্ড ওয়েস্টকে একটা চকচকে রুপালী রঙের যান্ত্রিক হাত দিয়েছিলেন।
জো এর সাহায্য নিয়ে উইজার্ড সারাদিন ধরে ওয়েস্টের বাম কনুইয়ের পরের অংশটায় হাই-টেক হাতটা লাগানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মাঝে মাঝেই থমকে দাঁড়াচ্ছিলেন। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে   কথা বলছিলেন নিজের মনেই, ‘কিছু একটা থেকে হাতটার সিপিইউ কাজ করতে গিয়ে বাধা পাচ্ছে । আজিজ, টেলিভিশনটা একটু বন্ধ করবে প্লিজ।’ কিছুক্ষণ বাদে কিছু ফ্রিকোয়েন্সী বদলে দিতেই হাতটা একেবারে যেরকম চেয়েছিলেন ঠিক সেরকমভাবে কাজ করতে শুরু করে দিলো । 
চার বছরের লিলি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে ওদের কাজকর্ম দেখেছিল সেদিন একমনে।
লিলি শুনেছে ওর জন্মদিনে ওকে বাঁচাতে গিয়েই  ওয়েস্ট  তার হাতটা খুইয়েছিল। যে কারনে মনে মনে চাইছিল নতুন  হাতটা যেন ভালো ভাবে কাজ করে।
দিনের শেষে , সেট হয়ে গেল যান্ত্রিক হাত। ওয়েস্ট মনের ইচ্ছায় নড়াতে পারছিল আঙুলগুলোকে। ওর এই যান্ত্রিক হাত ওর আসল ডান হাতের থেকেও ভালোভাবে কোন জিনিষকে ধরতে বা নাড়াতে পারে এখন
উইজার্ড তার কথা রেখেছেন।  উনি বলেইছিলেন এমন হাত বানিয়ে দেবেন যা ওর আসল হাতের থেকেও ভালো কাজ করবে।
  
ওয়েস্টের  যেসব ব্যাপারে লিলিকে অবাক করে দিতো –
দলের অন্য মানুষগুলোর তুলনায় ওয়েস্ট ওর সাথে কম মেলামেশা করে।
ওর সাথে একদমই খেলা করে না।
ওকে কোন বিশেষ কিছু শেখায় না।
বেশীর ভাগ সময় পুরনো কিসব বইপত্র নিয়ে নাড়াঘাঁটা করে।  - খুবই পুরনো সব বই। প্রাচীন ইজিপশিয়ানদের স্থাপত্য পদ্ধতি, ইমহোটেপ এবং আমুন-রা এর স্থপতিবৃন্দ । এ ছাড়াও একটা অতি প্রাচীন গুটানো পুঁথি যার নাম গ্রীক ভাষায় লেখা – আ কালেকশন অফ ওয়ান্ডারস ফ্রম অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড।
লিলির এই পড়াশোনার ব্যাপারটা অবশ্য খুব ভালো লাগে।
মানুষটার ঘরের দেওয়ালে অনেক রকম চমক দেওয়ার মতো সব জিনিষপত্র টাঙানো আছে। স্যান্ডস্টোন ট্যাবলেট বে কয়েকটা, একটা কুমীরের মাথার খুলি, কিছু বাঁদরে মতো জন্তুর কঙ্কাল- জন্তুগুলো কি লিলি সেটা বুঝতে পারেনি এবং ঘরের এক কোনায় প্রায় লুকানো অবস্থায় রাখা আছে একটা কাঁচের জারে অদ্ভুত দর্শন মরচে লাল রঙের বালি।   একদিন রাতে চুপিচুপি ঢুকেছিল ওয়েস্টের ঘরে। যা ও মাঝে মাঝেই করে গোটা বাড়িটায়।  তখনই ওই জারটার খোঁজ পায়। ঢাকনাটা খুব টাইট করে আকানো ছিল। ওর ক্ষমতায় কুলায়নি ওটা খুলে দেখার। ওর ভেতরে কি আছে এটা লিলির কাছে আজও এক রহস্য।
একটা দেওয়ালে একটা হোয়াইট বোর্ড লাগানো আছে। সেটা নানা রকম নোটস আর ছবিতে ভর্তি। যেমন –
হাওয়ারড কার্টার [১৮৭৪-১৯৩৯]
খুঁজে বার করে ছিলেন তুতান খামেনের সমাধি ; আবিষ্কার করেছিলেন রানি হাতসেপসুত এর ব্যবহার না হওয়া সমাধি (কে ভি ২০) ভ্যালি অফ কিংস এলাকায়। ১৯০৩ সালে। ফাঁকা সামধি ঘরটা ব্যবহার করাই হয়নি কখনো। সমাধিকক্ষের পূর্ব দেওয়ালেই একমাত্র দেখতে পাওয়া যায় একটি ছবি। যা দেখাচ্ছে গ্রেট পিরামিডের পর রাখা ক্যাপস্টোনের ভেতরের সরু নল বেয়ে সূর্যালোক প্রবেশ করছে।

এর পরে ওয়েস্ট লিখে রেখেছে – রানি হাতসেপসুত একমাত্র মহিলা ফ্যারাও, বিশেষ ধরনের ওবেলিস্ক এর নির্মাণকারিণী।

বোর্ডের আর একটা নোট লিলির নজর কেড়েছিল।
একেবারে নিচের এক কোনায় লাগানো ছিল ওটা , অন্যান্য নানরকম নোটসের তলায়। ইচ্ছে করেই এটা করা হয়েছিল বলেই ওর ধারনা। সোজাসুজি একটা কথা লেখা ছিল ওটাতে – ‘আমার  জীবনের চারটে হারিয়ে যাওয়া দিন – করোনাডো ?’
একদিন গভীর রাতে লিলি দেখেছে, ওয়েস্ট ওই লেখাটার দিকে তাকিয়ে নিজের দাঁতে পেন্সিলের টোকা মারছে। গভীর চিন্তায় ডুবে থাকা অবস্থায়।
যখনই ওয়েস্ট কাজ করে ওর স্টাডিতে , ওর ফ্যাল্কনটা বাধ্য ছেলের মতো ওর কাঁধের অপর বসে থাকে – আশেপাশে কেউ এলেই একটা চিৎকার করে ওয়েস্টকে সতর্ক করে দেয়।
লিলির আর এক কৌতূহলের বিষয় এই হোরাস।
দারুন একটা পাখি, সব সময় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। লিলির সাথে খেলাই করে না। লিলি অনেক চেষ্টা করেছে ওকে কাছে ডাকার, সাড়াই দেয়নি।
বল গড়িয়ে দিয়েছে ওর দিকে, নকল ইঁদুর ছুঁড়ে দিয়েছে কিছুতেই কিছু হয়নি ।  ফ্যাল্কনটা লিলির ইশারাকে পাত্তাই দেয়নি।  উল্টে এমন ভাবে তাকিয়েছে হোরাস যেন লিলির এসব কাজে ও বিরক্ত হচ্ছে।
হোরাস , বোঝাই যায়, একটা মানুষের প্রতি ওর সব আনুগত্য।
 জ্যাক ওয়েস্ট ।
আর এটা লিলি নিশ্চিত হয়েছে কিছু পরীক্ষা করার পরএকদিন , হোরাস যখন কিছুতেই ওয়েস্টের কাঁধ থেকে উঠলো না তখন লিলি রবারের ইদুরটাকে ওয়েস্টের দিকে ছুঁড়ে মারলো।
এক ঝটকায় ফ্যাল্কনটা লাফিয়ে উঠলো।
ছোঁ মেরে ধরে নিলো ইঁদুরটাকে অতি সহজে – শূন্যে, লিলি আর ওয়েস্টের মাঝ খানে – খেলনাটাকে চেপে ধরেছিল দুটো থাবার ধারালো নখ দিয়ে ।
মরা ইঁদুর।
শিক্ষা হয়ে গেল লিলির।
তবে ওয়েস্ট শুধু পড়াশোনাই করে না।
লিলি লক্ষ্য করে দেখেছে ও যখন পড়ায় ব্যস্ত থাকে হান্টসম্যান পশ্চিম প্রান্তের পাহাড়ের কাছের পুরনো খনিগুলোতে গিয়ে ঢোকে। সেই এরোপ্লেনটা যেখানে রাখা আছে তার থেকে একটু দূরে জায়গাটা। অবাক লাগে ওই সময় ওয়েস্ট এক অদ্ভুত রকমের পোশাক পড়ে। একটা ফায়ারম্যান হেলমেট আর ক্যানভাসের জ্যাকেট। হোরাস সব সময় ওর সাথেই যায়।
লিলিকে কঠোরভাবে নিষেধ করা আছে সে যেন ওই খনিতে একদম না যায়।
আসলে, ওখানকার সুড়ঙ্গে উইজার্ড নানা রকমের ট্র্যাপ বা ফাঁদ বানিয়েছেন  - সেই সব ফাঁদ যাদের কথা উনি এবং ওয়েস্ট পড়েছে প্রাচীন নানা বইয়েতে – হান্টসম্যান সেই সব ফাঁদগুলো কি করে এড়ানো যায় তারই অভ্যাস করে ।
লিলির কাছে জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়ার মানুষটাই রহস্যময়।
ওর মাঝে মাঝে মনে হয়, যেমনটা একটা বাচ্চা ভাবতেই পারে, ওই মানুষটা আদপেই কি ওকে ভালবাসে।
লিলির ভাষা শিক্ষার ব্যাপারটা খুব গুরুত্ব দিয়ে নজরে রাখা হচ্ছিল।
‘দিনকে দিন ওর উন্নতির মাত্র ক্রমশঃ বাড়ছে,’ উইজার্ড জানালেন লিলির যখন নয় বছর বয়েস হল। ‘ ওর অনুবাদ করা এবং তাকে বোঝার ক্ষমতা যে মাত্রার সেরকম আমি অন্তত আগে কারোর ভেতর দেখিনি। তার চেয়েও বড় কথা নিজেই জানে না ও কি করছে। ভাষা নিয়ে যেটা করে সেটাকে সেরেনা উইলিয়ামসের টেনিসে স্পিন করানোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে – সত্যিই ও ভাষাটাকে নানাভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে দেখতে ও বুঝতে পারে। এমন এক পদ্ধতি যেটা আমি বা আমরা ভাবনাতেও আনতে পারি না।’
বিগ ইয়ার্স জানায়, ‘ ও শারীরিক ভাবেও দারুন ফিট। ছটফটে । যদি দরকার পড়ে লিলি টানা ছ’মাইল দৌড়ে যেতেও পারবে।’
ওয়েস্ট বললো, ‘ও তো আমার পড়াশোনার প্রতিটা অক্ষর চেনে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার উঁকি ঝুকি মারে আমার ঘরে।’
জো বললো, ‘আমি জানি এটা মিশন সম্বন্ধীয় কথা নয় তবুও জানিয়ে রাখি লিলি কিন্তু ব্যালে নাচে দারুন দক্ষ হয়ে উঠেছে। কেবলে দেখেছে ওই নাচ। জানি যে অনেক মেয়েই নাম করা ব্যালে ড্যান্সার হতে চায়, কিন্তু লিলির যেন এ বিষয়ে সহজাত একটা দক্ষতা আছে। কারন তো কারোর কাছে শেখেও নি। অন্তত কুড়ি সেকেন্ড ও এক আঙ্গুলের অপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে – যেটা একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। মেয়েটা ব্যালেটা মন থেকে ভালোবাসে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব না। এটা কেবল মাত্র মেয়েরাই বোঝে। উইজার্ড,  সম্ভব হলে এর পর যখন আপনি নাইরোবি যাবেন ওর জন্য কিছু ব্যালের ডিভিডি নিয়ে আসার চেষ্টা করেন।’
‘অবশ্যই করবো।’
‘ব্যালে, তাই  বললেতো তুমি ...’ ওয়েস্ট বলে উঠলো।

একদিন সকালে লিলি ব্রেকফাস্ট আনতে গিয়ে   অবাক হয়ে গেল – যথারীতি আজকেও ফ্রিজের কাগজটা দেখে ওর কোনো কিছুই মনে হয়নি – দেখতে পেলো রান্নাঘরে ওয়েস্ট ওর জন্য অপেক্ষা করছে। একা। সেজে গুজে রেডি কোথাও যাওয়ার জন্য।‘
‘হেই কিড্ডো, যাবি নাকি একটা মজা দেখার জন্য, আমার সাথে?’
‘শিওর, কেন যাবো না ।’
সেই মজাটা ছিল একটা প্রাইভেট প্লেনে চেপে কেপটাউনে গিয়ে, সাঊথ আফ্রিকান রয়্যাল ব্যালে ট্রুপের “দ্যা নাট ক্র্যাকার স্যুট ” দেখা।
লিলি পুরো অনুষ্ঠানটা বড় বড় চোখ করে অবাক বিষ্ময়ের সাথে দেখলো। অভিভুত হয়ে গেল।
ওয়েস্ট পুরো সময়টা দেখে গেলেন লিলিকে – আর একবার, সম্ভবত একবার হেসেও ছিলেন।
২০০১ সালে লিলি দেখলো লর্ড অফ দ্য রিংস সিনেমার প্রথম পার্ট । ওই বছর ক্রিসমাসে, স্কাই মনস্টার, যে নিজেকে খুব গর্বিত মনে করছিল নিউজিল্যান্ডার হিসাবে  ওই সিনেমাটার টিমের সাথে যুক্ত থাকার কারনে – লিলিকে উপহার হিসাবে টল্কিয়েন এর   রিংস সিরিজের তিনটে বই দিলো শুধুমাত্র দেওয়াই নয় একসাথে দুজন মিলে পড়েও ফেললো বইগুলো
এর ভেতরেই ২০০৩ সালে তৃতীয় সিনেমাটা মুক্তি পেয়ে গেল ওই সিরিজের লিলি আর স্কাই মনস্টার আবার বই তিনটেকে প্রথম থেকে শেষ অবধি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লো ।
আর এই দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস পড়েই লিলি নিজের সংকেত নামটাও খুঁজে পেলো।
স্কাই মনস্টার ওই নামটা ধরে ওকে প্রথম ডাকে । আর ওটাকেই ও বেছে নেয়  , এই বইয়েতে ওর প্রিয় চরিত্র।
ইয়ন।
রোহানের সেই অসম সাহসীনী শিল্ডমেইডেন যে আ্যঙ্গমার এর উইচ-কিং  - সেই রিংরেইথ যাকে কোন মানুষের পক্ষে হত্যা করা অসম্ভব - কে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়।
 লিলির এই সংকেত নামটা খুবই পছন্দ হয় ।
এরপর এক এক করে দিন যায়। লিলি রান্নাঘরে ঢোকে জ্যুস নেয় – তাকায় কাগজটার দিকে , যা আটকানো আছে ফ্রিজের গায়ে - লক্ষ্য করে অদ্ভুত লিপিগুলোকে ।
দশম জন্মদিনের কয়েক দিন আগের সকালে লিলি কাগজটার একেবারে ওপরের বক্সের লেখগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, ‘আমি বুঝতে পারছি। হ্যাঁ বুঝতে পারছি । ওটায় কি লেখা আছে ।’
ওই সময় রান্না ঘরে ছিলেন ড রিস, উইজার্ড, পুহ বিয়ার এব জো। সকলেই একসাথে ঘুরে তাকায় লিলির দিকে।
নিজের উত্তেজনা সামলে, ঢোঁক গিলে , উইজার্ড বলে ওঠেন, ‘কি লেখা আছে ওতে লিলি? ’
‘এ এক অদ্ভুত ভাষা। একই সাথে অক্ষর আবার ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে শব্দ সৃষ্টি করার জন্য। ওটায় বলা আছে –
কলোসাস
দুটো প্রবেশ পথ, একটা সোজা, আরেকটা নয়,
বানিয়েছিলেন পঞ্চম মহান স্থাপত্যবিদ,
মহান সোতেরের দশম খনিতে।
সহজ পথটা ডুবে আছে পুরোনো মুখের তলায়, যদিও
নুবিয়ার জলাভুমিতে , দক্ষিনে সোতেরের খনি
সোবেকের সেনা বাহিনীর সাথে
খুঁজে নাও নিচের রাজত্বের চার প্রতীক
সেখানেই লুকিয়ে আছে কঠিন পথের মুখ ।” ’
পরের দিন , পুরো দল ভিক্টোরিয়া স্টেশ ছেড়ে চেপে বসলো হ্যালিকারনাসসাসে। চললো সুদান অভিমুখে।
ঠিক ওই দিনেই সূর্য তার অক্ষে ঘুরলো। ছোট্ট সেই সৌর কলঙ্ক যাকে ইজিপশিয়ানরা বলেন রা’য়ের বানী প্রচারক সে হাজির হলো সূর্যের দেহাবরণে।
আর সাতদিনের মাথায় , ২০ শে মার্চ , টারটারাসের ঘূর্ণন সম্পন্ন হবে।


০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

No comments:

Post a Comment