Search This Blog

Saturday, August 5, 2017

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ[২৮-৩৬] ৩য় অধ্যায় - **আট দেশের আলোচনা সভা** [সম্পূর্ণ] প্রতিম দাস

#প্রাচীন_সপ্তাশ্চর্যের_খোঁজ[২৮]
**আট দেশের আলোচনা সভা**
প্রতিম দাস
০০০০০০০০০০০০০০০০০


কাউন্টি কেরি, আয়ার ল্যান্ড
২৮ শে অক্টোবর
সাত মাস পর
০০০০০
ও’শিয়া ফার্ম
কাউন্টি কেরি, আয়ার ল্যান্ড
২৮ শে অক্টোবর, ১৯৯৬,  বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট
পাহাড়ের ওপর অবস্থিত বাড়ীটার আটলান্টিকের দিকে মুখ , জানা না থাকলে দেখে মনে হবে , এটা আর পাঁচটা সাধারন পুরোনো ফার্ম হাউসের মতো একটা বাড়ী। কিন্তু যারা চেনে , তাদের কাছে এটার গুরুত্ব আলাদা। এসব লাইনে যারা কাজ করে তারা হয়তো নজর করতে পারবে অন্তত কুড়ি জন আইরিশ কম্যান্ডো হেভি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে  এই এলাকাটাকে পাহারা দিচ্ছে।
নিশ্চিতভাবেই বলা  যায় এক আন্তর্জাতিক মানের মিটিং এর জন্য এটা একটা অদ্ভুত জায়গা। আসলে এ মিটিং এমন যার সাথে যুক্ত মানুষেরা চান না এর খবর জানাজানি হোক।
এই মুহূর্তে এ বিশ্বের অবস্থা বেশ গম্ভীরজনক। ইরাককে কুয়েত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও  তারা আপাতত লুকোচুরি খেলে চলেছে ইউ এন অস্ত্র পরীক্ষকদের সাথে। ইউরোপ ক্ষুব্ধ আমেরিকার ওপর, স্টীলের দাম বাড়ানো নিয়ে। ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে খটাখটি লেগেই আছে। দুজনেই নিউক্লিয়ার ওয়েপন ক্লাবের সদস্য হওয়ার পথে পা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এসব তো গেল বড় বড় রাষ্ট্রর ব্যাপার। আজ এখানে যে সমস্ত ছোট ছোট দেশের প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছে তারা বিশ্ব বাজারে ওই সব বড় গেম খেলার জন্য নয়। এরা ছোটো দেশ – ইঁদুর বলা যেতে পারে, সিংহ নয় মোটেই – সহজ কথায় বিশ্বপ্রেক্ষিতে এরা কচিকাঁচার দল।
তবে সেটা বেশি দিনের জন্য নয় মোটেই।
এবার ইদুরেরাও গর্জন করবে।

ফার্ম হাউসের প্রধান বসার ঘরে আট দেশের মধ্যে সাতটি প্রতিনিধি দল  চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছে অষ্টম দলের  প্রতিনিধিদের জন্য। প্রতি দলে দুই বা তিন জন সদস্য – একজন সিনিয়র ডিপ্লোম্যাট, সাথে এক বা দুই জন মিলিটারী পারসোনেল ।
জানলা দিয়ে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তা শ্বাসরুদ্ধকারী – আটলান্টিকের বিশাল বিশাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সমুদ্র তটে – যদিও এ ঘরের কারোরই সেদিকে নজর নেই।
আরবেরা অধৈর্য ভাবে বার বার নিজেদের ঘড়ি দেখছে । কপাল কুঁচকাচ্ছে । ওদের নেতা একজন বয়স্ক শেখ , নিবাস সংযুক্ত আরব আমির শাহি। নাম আনজার আল আব্বাস। বললেন, ‘গত ছয় মাস ধরে প্রফেসর এপ্পার এর কাছ থেকে একটাও কথা শোনা যায় নি। কি মনে হয়, তিনি কি আদপেই আসবেন আজ?’
কানাডিয়ান সদস্যরা চুপ করে ধৈর্য ধরে বসে ছিল। ওদের দলনেতা শান্ত গলায় বললেন, ‘ উনি এসে যাবেন।’
আব্বাস গলা খাঁকাড়ি দিলেন।
যখন উনি অপেক্ষা করছিলেন তার সামনে রাখা ফাইলটার কাগজ উলটে উলটে দেখছিলেন। এখন আবার ওটা পুনরায় পড়তে শুরু করলেন। এই আলোচনা সভায় আগত সবাইকে ওই ফাইল একটা করে দেওয়া হয়েছে । যেটা একটা রহস্যময় বইয়ের সারাংশ।
শিরোনামে লেখা – দ্য গোল্ডেন ক্যাপস্টোন
যখন মানুষ পাহাড় বানিয়েছিল – পিরামিড
ফ্রম- বাই ক্রিস এম ক্যামেরন
[ম্যাক্ মিলান, লন্ডন , ১৯৮৯]
পিরামিডের নানান রহস্যের মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ রহস্য বোধহয় এটাই – গ্রেট গিজার পিরামিড যে উচ্চতায় আছে তার থেকে নয় ফুট বেশী উঁচু হওয়া উচিত ছিল।
কোনো এক সময়ে এর শিখরে স্থাপন করা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক এক বস্তু।
দ্যা গোল্ডেন ক্যাপস্টোন।
ইজিপশিয়ানরা যাকে বলতো বেনবেন।
আকারে একটা ছোট্ট পিরামিডের মতো  দেখতে। ক্যাপস্টোনের উচ্চতা ছিল নয় ফুট এবং প্রায় পুরোটাই বানানো হয়েছিল সোনা দিয়ে। এর সারা গায়ে হিয়েরোগ্লিফিক এবং অন্যান্য কিছু অজানা রহস্যময় ভাষার লিপি খোদাই করা আছে ।  অন্য একটা দিকে , দক্ষিন দিক – খোদাই করা আছে হোরাসের চোখ ।

প্রত্যেকদিন সকালে ওটা একটা রত্নর মতো ঝিক মিক করে উঠতো সূর্যের প্রথম আলোর স্পর্শ পেয়ে – এই ধরাতলের প্রথম বস্তু যার ওপর এসে পড়তো পবিত্র আলোর প্রথম রশ্মি।

গ্রেট ক্যাপস্টোনটা আসলে বানানো হয়েছিল সাতটা আলাদা আলাদা টুকরো দিয়ে। পিরামিডের আকৃতি ভাগ করা ছিল সাতটা আনুভূমিক ভাগে। যার ফলে নিচের ছ’টি অংশ ট্র্যাপিজোডিয়াল আকৃতির এবং একেবারে ওপরের অংশটি পিরামিডের মতই [ছোট্ট একটা পিরামিড, যাকে ওরা বলতো পিরামিডিয়ন্স] ।

ক্যাপস্টোনটা প্রায় পুরোটাই সোনা দিয়ে তৈরী বলার কারন গোটা ক্যাপ স্টোনটা সলিড সোনা দিয়ে বানানো হলেও এর ভেতরে ঠিক মধ্যে ছিল একটা সরু নলের মতো ফুটো । যার অবস্থান শীর্ষ বিন্দু থেকে ভিত্তি পর্যন্ত , উলম্বভাবে। 
এই নলটি চওড়ায় দু ইঞ্চি । সাতটি টুকরোতেই গর্ত চলে গেছে একেবারে মাঝখান দিয়ে ।  প্রত্যেকটা গর্তের ভেতর বসানো ছিল একটি করে স্ফটিক পাথর। মোটেই  ম্যাগনিফাইং লেন্স জাতীয় নয়। সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপরে উঠে যেত ওই সাতটি স্ফটিক পাথরের ভেতর দিয়ে সোজা নেমে যেত তার আলো ।

এই ব্যাপারটাই গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক বিশেষজ্ঞ গবেষণা করার সময়   প্রমান পেয়েছেন যে এই ফ্যারাও খুফুর বানানো এই বিশাল পিরামিড অদ্ভুতভাবে এক সৌর ঘটনার সাথে সম্পর্ক যুক্ত। যার নাম টারটারাস রোটেশন । এই বিশেষ ঘটনার সাথে সূর্য, তার শক্তিশালী সৌর কলঙ্ক এবং পৃথিবীর এক সারিতে এসে যাওয়ার একটা সম্পর্ক আছে।
ইজিপশিয়ানরা ছিলেন দক্ষ সৌর গবেষক। ওরা নিশ্চিত ভাবেই জানতেন সূর্যের চলন, তার সৌর কলঙ্ক এবং সেই বিশেষ সৌর কলঙ্কটির কথা যাকে আমরা বলি “টারটারাস” । এর সাংঘাতিক রকম তাপের কথা মাথায় রেখে ওরা ওটার নাম দিয়েছিল “রা’য়ের সং হারক”। [ওরা সেই ছোট্ট সৌর কলঙ্কটার কথায় জানত যা আসে টারটারাসের সাতদিন আগে। যাকে ওরা নাম দিয়েছিল ‘সংহারকের বানী প্রচারক’ ।]

শেষ টারটারাস রোটেশন ঘটেছিল ২৫৭০ খ্রিষ্ট পূর্বে । ওই গ্রেট পিরামিড বানানোর কিছু বছর পরেই। আপাতত যেটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সেটা হলো আগামী ২০০৬ সালের ২০ সে মার্চ মহাবিষূবের দিনে পুনরায় ঘটবে টারটারাস রোটেশন। ওই দিন সূর্য পৃথিবীর ওপর নিখুঁতভাবে খাড়খাড়ি  অবস্থান করবে।
সেই সমস্ত গবেষক এবং থিয়োরিস্টরা যারা ওই পিরামিডের সাথে টারটারাসের সম্পর্কের কথা বিশ্বাস করেন তারা এটাও বিশ্বাস করেন ওই ক্যাপস্টোন বিশেষ রকমের  সৌর শক্তি আহরণে সক্ষম । এর সাথেই আরো উচ্চ শক্তির কল্পনাকারী লেখকগন বিশ্বাস করেন ওই শক্তি আসলে এক চরম মাত্রার প্যারানরম্যাল শক্তিকেই বহন করে।
এত সব কথার পরেও একটা কথা মনে রাখতে হবে যে ওই গোল্ডেন ক্যাপস্টোন খুব অল্প সময়ের জন্যই পিরামিডের ওপরে অবস্থান করে ছিল।

২৫৭০ খ্রীষ্ট পূর্বে টারটারাস রোটেশনের পরেরদিনই ক্যাপস্টোনটাকে সরিয়ে ফেলা হয়। তারপর লুকিয়ে ফেলা হয় কোন এক গোপন স্থানে। ২০০০ এর বেশী বছর ধরে যার আর কোন খোঁজ মেলেনি।
ইতিহাসের পাতা থেকে ওটা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর সাম্প্রতিক অতীতে অভি্যান চালিয়ে গিজার পিরামিডের যে স্থানে ওটা ছিল সেখানে একটি লেখনী আবিষ্কার হয় –

ওহে  মানবের দল, তোমরা যারা ভয়ের চাপে অতীষ্ঠ, হতাশা গ্রস্থ... ভুলে যেও না যিনি ক্ষমতা দেন তিনি সে ক্ষমতা কেড়েও নিতে পারেন...
সেই আশঙ্কা থেকেই বেনবেনকে রাখা হয়েছে এক অতি পবিত্র স্থানে, এক অতি পবিত্র ভুমি্তে,  এক অতি পবিত্র উচ্চতায় ... যখন সাত সূর্যাস্ত আগে মহান রা’য়ের বানী প্রচারক এর আবির্ভাব হবে... সপ্তম দিনের চরম মুহূর্তে মহান রা’য়ের ক্ষমাহীন সংহারক তার বিধ্বংসী অগ্নিশিখায় সব কিছু পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে আমাদের সবাইকে গ্রাস করবে...

কোথাও একটা দরজার পাল্লা সজোরে খুলে যাওয়ার আওয়াজ হয়। আব্বাস ফাইল পড়া থেকে মুখ তুলে তাকান।
পায়ের শব্দ শোনা যায়।
আলোচনা কক্ষটির দরজা খুলে যায়, প্রবেশ করেন –
- প্রফেস র ম্যাক্স টি এপ্পার এবং ক্যাপ্টেন জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র।
এপ্পারের পরনে একটি চিরন্তন প্রফেসর সুলভ টুইডের কোট । সে সময়েও ওনার দাড়ি ততটাই সাদা এবং লম্বা যতটা আমরা দশ বছর পরে দেখেছি ।
ওয়েস্ট পড়ে আছে ওর খনি শ্রমিকের জ্যাকেট এবং একেবারে নতুন ষ্টীলের সোল লাগানো বুট। বরফ শীতল লেজারের মতো তীক্ষ্ণ  নীল চোখ দিয়ে খুব ভালো করে গোটা ঘরটাকে দেখে  নিলো।
বাঁ হাতটা কনুইয়ের পর থেকে কাটা ।
এটা সবার চোখে পড়লো ।

একটা গুঞ্জন শোনা গেল ঘরে।
‘সেই মানুষ যে নাট্যালয়ের সঙ্গীতকারের পাণ্ডুলিপি খুঁজে ...’ একজন আরব ফিসফিস করে বললো।
‘ এপ্পার হলেন ডাব্লিন ট্রিনিটি কলেজের প্রত্নতত্বেরপ্রফেসর । সাংঘাতিক বুদ্ধিমান । আবার একই সাথে ফিজিক্স আর ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক্সেও ডক্টরেট ...’
‘আর হান্টস ম্যান?’
‘ একসময় মিলিটারীতে ছিল। এখন আর নেই। ৯১ সালে আমেরিকানদের হয়ে ইরাকে যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু তারপর আমেরিকানদের সাথে ওর কিছু একটা হয় ওখানে, যাই হোক –’
‘ কিন্তু ওর হাতের কি হলো?’

আব্বাস উঠে দাঁড়ালেন, ‘সেই মেয়েটি কোথায় ম্যাক্সিমিলিয়ন? আমিতো ভেবেছিলাম তুমি ওকে সাথে করে নিয়ে আসবে।’
এপ্পার জানালেন, ‘ওকে একটা সুরক্ষিত জায়গায় রেখে এসেছি। এই মুহূর্তে ওর সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই আলোচনা সভায় ওর উপস্থিতি মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয় মাই ওল্ড ফ্রেন্ড আনজার।’

এপ্পার এবং ওয়েস্ট বাকি সাত দেশের সদস্যদের সাথে টেবিলে  নির্দিষ্ট চেয়ারের দিকে এগোলো ।
কানাডিয়ানদের কাছেই বসলেন এপ্পার।
ওয়েস্ট বসলো একা, সাত দেশের কোন সদস্যের সাথে ও সংযুক্ত নয়। ও একেবারে আলাদা, একক প্রতিনিধি। ওর দেশের পক্ষ থেকে আর কোন প্রতিনিধি পাঠায় নি । কারন তারা জানে ওয়েস্টের একার উপস্থিতিই যথেষ্ট ।
দেশটির নাম – অস্ট্রেলিয়া ।

এই আলোচনা সভার স্বাগতিক দেশ আয়ারল্যান্ড। তাদের নেতা জেনেরাল কলিন ও’হারা। সূচনা করলেন আলোচনার ।
‘ মিসেস কিসানে এবং উপস্থিত ভদ্র মহোদয় বন্ধুগন, আয়ারল্যান্ডে আপনাদের স্বাগত জানাই। সাথেই স্বাগত জানাই এন এক আলোচনা  সভায় যার গুরুত্ব অসীম। বেশি কথা না বাড়িয়ে আমি সরাসরি মূল বিষয়ে ঢুকে পড়ছি । সাত মাস আগে, ইউরোপিয়ান মিলিটারী- প্রত্ন তত্ব দল উগান্ডার এক গোপন জায়গায় অর‍্যাকল অফ সিওয়ার গর্ভবতী পত্নীকে খুঁজে পায় । যদিও জানা যায়নি কিভাবে তারা মহিলাটিকে খুঁজে পায়। শুধু এটুকু জানতে পেরেছি ওই ইউরোপিয়ান অভিযানের নেতা ছিলেন বিশিষ্ট ভ্যাটিক্যান ঐতিহাসিক ফাদার ফ্রান্সিস কো ডেল পিয়েরো । ওই মানুষটা  প্রাচীন ইজিপ্সিয়ান আচার প্রথার একজন বিশেষ রকমের বিশেষজ্ঞ। সাথেই অপরিমেয় জ্ঞান সূর্য উপাসনা বিষয়ে।
‘প্রাচীন ইজিপশিয়ান সূর্য মতবাদের রীতি মেনে ডেল পিয়েরো এবং তার দল ওই গর্ভবতী মহিলাকে নিয়ে যায় উগান্ডার এক আগ্নেওগিরির ভেতরে। দিনটা ছিল ২০শে মার্চ, মহাবিষুব ।
‘ মহাবিষুবের ঠিক দুপুর বেলায় , তথাকথিত “বিশুদ্ধ” সূর্যের আলোর ছোঁয়া মেখে ওই আগ্নেওগিরির ভেতরে বানানো এক কক্ষের ভেতরে অর‍্যাকলের স্ত্রী জন্ম দেন এক পুত্র সন্তানের। যাকে  ডেল পিয়েরো ওই মুহূর্তেই নিজের দখলে নেয় ।
‘ডেল পিয়েরো আর তার মিলিটারী দল বাচ্চাটাকে নিয়ে ওখান থেকে চলে যায়। বাচ্চাটির অসহায় মাকে ফেলে যায় মরে যাওয়ার জন্য।
‘আর তখন এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে।
‘ডেল পিয়েরোর দল ওখান থেকে চলে যাওয়ার পর , অর‍্যাকলের স্ত্রী আর একটি বাচ্চার জন্ম দেন । একটি কন্যা সন্তান। অতি নাটকীয় এবং বিশ্বাসের অতীত ক্ষমতার নিদর্শন স্থাপন করে   প্রফেসর এপ্পার এবং ক্যাপ্তেন ওয়েস্ট ওই বাচ্চাটিকে বাঁচান, জীবিত এবং সুস্থরুপে ...’

শুনতে শুনতে ওয়েস্ট ভাবলো, আরো অনেক কাহিনী আছে এর সাথে  ।
সে এবং এপ্পার অর‍্যাকলের স্ত্রীকে ইউরোপিয়ানরা খুঁজে পাওয়ার একদিন আগেই হদিশ পেয়েছিল। ওর নাম ছিল ম্যালেন ওকম্বো। লুকিয়ে ছিল এক গোপনস্থানে। নিজের স্বামীকেই ছিল ওর ভয়। যে বর্তমানে অর‍্যাকল অফ সিওয়া। অর‍্যাকলের উত্তরাধিকারী [বা উত্তরাধিকারীদের] কে পেটে নিয়ে সে পালায় তার এক বদমেজাজি উচ্ছন্নে যাওয়া স্বামীর ক্রোধের হাত এড়িয়ে। ওয়েস্ট ব্যাপারটা জানতে পেরে সব রকম সাহায্য করবে বলে ঠিক করে । কিন্তু ইউরোপিয়ানদের লোকবল বেশি থাকায়  ম্যালেনাকে বাঁচানো তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ওরা ওকে অপহরণ করে নিয়ে চলে যায়। এর পরেই ঘটে ওই আগ্নেওগিরির অভ্যন্তরের ঘটনা।

ও’হারা ওদিকে বলেই চলেছিলেন – ‘এক অদ্ভুত ভাগ্যের চাল চালেন বিধাতা   ওখানে – জন্ম হয় এক দ্বিতীয় অর‍্যাকলের – আর সেকারনেই আমরা আজ একত্রিত হয়েছি। প্রফেসর এপ্পার এবার যদি আপনি ...’

এপ্পার উঠে দাঁড়ালেন । ‘ধন্যবাদ কলিন।’ কথা বলা শুরু করলেন উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে।
‘ সম্মানীয় অতিথিবৃন্দ । আমরা আটটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশ আজ একত্র হয়েছি ইতিহাসের এক চরম সন্ধিক্ষণে।
‘ফাদার ডেল পিয়েরো এবং তার দল উগান্ডাতে যে কাজ করেছেন তার একটাই অর্থ, কিছু একটা বিপদজনক হতে চলেছে। ইউরোপিয়ানরা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। ২০০০ বছর ধরে খোঁজ চলার পর ওরা সেই চাবিকাঠির সন্ধান পেয়েছে যার দ্বারা খুঁজে পাওয়া যাবে  মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মূল্যবান গুপ্তধন – গ্রেট পিরামিডের গোল্ডেন ক্যাপস্টোন।’
এপ্পার বললেন, ‘ব্যাপারটা খুলে বলার অনুমতি চেয়ে নিচ্ছি।’
‘আশা ছি এর মধ্যেই আপনারা সাথে দেওয়া ফাইল থেকে সংক্ষিপ্তসার পড়ে নিয়েছেন। ওতে বলা হয়েছে যে গ্রে পিরামিডের মাথার ওপরে এক সময় একটা গোল্ডেন ক্যাপস্টোন ছিল। যা ওই গ্রেট পিরামিড নির্মাণের কয়েক বছর পরেই সরিয়ে নেওয়া হয় ।

‘কিন্তু আজ অবধি প্রাপ্ত কোন ইজিপশিয়ান তথ্য ভান্ডারের লেখনী থেকেও জানা যায় নি সেই স্থানটা কোথায়   যেখানে ওটাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।


‘এরপর সময় বয়ে গেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী । গোল্ডেন ক্যাপস্টোন পরিণত হয়েছে অগুনতি গল্প কথা আর মিথে। পারশিয়ান রাজা , ক্যামবাইশেস, চেষ্টা করেছিলেন ওটাকে খুঁজে বার করার। পশ্চিম মরুভূমি এলাকায় সিওয়া মরুদ্যানে অভিযান চালিয়েছিলেন। লাভ কিছুই হয়নি, শুধুই ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। আর তার কারন নাকি ছিল এক অতি ভয়ঙ্কর মরুঝড়।
‘জুলিয়াস সিজার চেষ্টা করেছিলেন ওটার হদিশ করার, কিন্তু সফল হতে পারেন নি। নেপোলিয়ান একটা পুরো বাহিনি নিয়ে ইজিপ্টে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ওটাকে খোঁজার জন্য, কিন্তু অসফল হন । জ্যাসন এবং আরগোনটসদের যে পৌরানিক কাহিনী – যেখানে ওরা গোল্ডেন ফ্লিস বা সোনালী ভেড়ার চামড়া  উদ্ধার করতে যায় – যা লিখেছিলেন রোডসের অ্যাপ্পোলোনিয়াস । অনেকেই বিশ্বাস করেন আসলে ওটা গল্পের আড়ালে সেই গোল্ডেন ক্যাপস্টোন খোঁজার আখ্যান।
‘তবে সব গল্প কথার ভেতরে একটা জিনিষে মিল আছে। সব গল্পেই বলা হয়েছে ক্যাপস্টোন হলো এক বিশেষ ধরনের বস্তু । বলা হয়েছে ওটার নাকি বিশেষ ক্ষমতা আছে। বলা হয়েছে ওটার সাথে জড়িয়ে আছে এক অক্ষয় গতি সূত্র । বলা হয়েছে ওটা নাকি একটা সোলার পোলারাইজার, যা  সূর্যের রশ্মিকে টেনে আনতে সক্ষম।
‘আর এর সাথেই আছে অকাল্ট মিথগুলো – কারো মতে ক্যাপস্টোন আসলে এক শয়তানের তাবিজ। যার সাথে জড়িয়ে আছে অতিলৌকিকবাদী পুরোহিতদের নৃশংস রক্তাক্ত সব প্রথা। কারো মতে এই জিনিষ যে রাষ্ট্রের কাছে থাকবে তারা অজেয় হয়ে যাবে এবং তাদের নিজস্ব রাস্ট্র কোনোদিন কার পদান হবে না। আবার এটাও বলে থাকেন কেউ কেউ ওই ক্যাপস্টোন আসলে এক ভিনগ্রহী উন্নত  সভ্যতার দান । যারা এ পৃথিবীতে এসেছিল হাজার হাজার বছর আগে।‘
নিউজীল্যান্ড এর প্রতিনিধি বললেন, ‘এখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সেটাকেই চাইছে –’
‘মনে তো হয় না,’ ও’হারা বললেন। ‘এই সব দেশগুলো মোটেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি নয়। আয়ারল্যান্ড এবং স্পেন  ইউ এর সদস্য। কিন্তু ফাদার ডেল পিয়েরো তো আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন নি। এটাকে অবশ্য বলা হচ্ছে ই ইউ মিশন। আসলে  ওটা চারটে “আদি ইউরোপিয়ান” রাষ্ট্রের সমাহার – ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালী আর ভ্যাটিকান।’
ফ্রান্সের নাম উচ্চারিত হতেই নিউজিল্যান্ডের সদস্যদের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। অকল্যান্ড হারবারে ১৯৮৫ সালে রেইনবো ওয়ারিয়র নামের গ্রিন পিস বোটের ওপর ফরাসী এজেন্টদের বোমাবাজির পর থেকে সম্পর্কটা মোটেই ভালো নেই। ‘ওকে, আদি ইউরোপিয়ান, বেশ তাই হলো । তা সেই আদি ইউরোপ চাইছে ক্যাপস্টোন দখল করতে। আপনারা কি এব্যাপারে নিশ্চিত যে ওদের শত্রুরা এই ব্যাপারটা জানে –’
‘ হ্যাঁ জানে,’ আব্বাস দৃঢ় গলায় বললেন। ‘আমেরিকানরাও ইতিমধ্যেই একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতা মূল অভিযান শুরু করে দিয়েছে।’
‘এক সেকেন্ড,’ জামাইকান প্রতিনিধিদের প্রধান বললেন, ‘আমেরিকা আর ইউরোপ একে অপরের শত্রু নাকি?’
‘প্রাক্তন বন্ধু বলা যেতে পারে খুব বেশি হলে,’ এপ্পার বললেন। ‘ ই ইউ এর ডানায় ভর দিয়েই  এই আদি ইউরোপ গত পাঁচ বছর ধরে অর্থনৈতিক একটা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকার সাথে। এর শুরু হয়েছিল সেই সময় যখন আমেরিকা নিজেদের স্টীল ইন্ডাস্ট্রিকে বেআইনি ভাবে সাব সিডি দিতে শুরু করে। যার ফলে ইউরোপিয়ান ব্যবসায়ীদের পাততাড়ি গুটাতে হয়।’
স্পেন বললো, ‘আমেরিকা চাপ দিচ্ছে অন্য রাষ্ট্রগুলোকে তাদের বাজার “ওপেন” করার জন্য । কিন্তু নিজেদের ঘরের বাজারের দরজা তাদের জন্য খুলে দিচ্ছে না । নিজেদের দুর্বল ব্যবসাগুলোকে স্টীলের মতো সাব সিডি দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । ’
কানাডা সম্মতি জানিয়ে বললো, ‘আর প্রাক্তন বন্ধুতো প্রাক্তন স্ত্রী বা প্রাক্তন স্বামীর মতো । শত্রুতা করার সব রকম রসদ তাদের হাতে থাকে। ইউরোপ আর আমেরিকা এখন একে অপরকে ঈর্ষা করছে। আর যত দিন যাচ্ছে ওদের শত্রুতা ক্রমশ খারাপ রুপ নিচ্ছে।’
এপ্পার বললেন, ‘আর এইজন্যই আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। আমরা আটটি ছোট রাষ্ট্র ইউনাইটেড স্টেট বা আদি ইউরোপের শত্রু নই। আমরা অনেক বার ওদের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে, আমরা হাতে হাত রেখে চুপচাপ বসে থাকতে পারি না। যেখানে ওই দুই তথাকথিত “গ্রেট পাওয়ারস” মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রত্নবস্তু দখলের লড়াইয়ে নামছে।
‘একদমই এটা হতে দেওয়া যায় না। আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি কারন আমরা বিশ্বাস করি ক্যাপ স্টোন কোন একটা সুপার পাওয়ারের হাতে থাকা উচিত নয়। ওটার শক্তি সত্যিই অসাধারন । সহজ কথায় বললে আমরা আজ এখানে জড় হয়েছি এই বিশ্বকে বাঁচানোর জন্য।’
‘বেশ, তা সে শিশুকন্যাটির কি ব্যাপার-‘ আব্বাস জানতে চাইলেন।
এপ্পার হাত উঠালেন । ‘এক্ষুনি আসছি তার কথায়, আনজার। আর একটু অপেক্ষা করো । সামান্য সময় চাইছি প্রেক্ষাপটটা বলার জন্য । ইতিহাসের গতি পথ দেখলে বোঝা যায়, ক্যাপস্টোন দখলের চেষ্টা চালিয়েছেন অনেক অনেক শক্তিধর পুরুষ। জুলিয়াস সিজার, অগাস্টাস সিজার, রিচারড দ্যা লায়ন হার্ট, নেপোলিয়ন, লর্ড কিচেনার এবং কিছু বছর আগেও অ্যাডলফ হিটলার এবং তার নাজি বাহিনী। এটার পুজা করেছে উপাসনা করেছে  টেম্পলার এবং  দ্য ফ্রি ম্যাসনের মতো সংস্থাগুলো।  আরো আশ্চর্যের বিষয় মনে হবে যদি বলি  এ পথে আছে ক্যাথলিক চার্চও । সকলেই সেই একই জিনিষ বিশ্বাস করে – যে ওই ক্যাপস্টোন খুঁজে পাবে এবং প্রাচীন প্রথা পালন করবে ওটার সাথে সে আগামী এক হাজার বছর এই পৃথিবীতে রাজত্ব করবে। ’
গোটা ঘরে চরম নীরবতা।
এপ্পার বলে চললেন ।
‘একজন মানুষকেই মনে করা হয় যিনি সত্যি করেই ক্যাপস্টোন নিজের  হেফাজতে আনতে পেরেছিলেন এবং অর্জন করেছিলেন অসীম শক্তি । সাথেই সাথেই এটাও বিশ্বাস করা হয় তিনিই সেই মানুষ যিনি ওটাকে , গল্প কথা অনুসারে, সাতটি টুকরোয় ভাগ করেছিলেন – যাতে কোনো দিন আর কোন মানুষ ওটাকে একত্র করতে সক্ষম না হয়। সাত টুকরো করার পর সেই ব্যক্তি পৃথিবীর সাত জায়গায় লুকিয়ে রেখে দেন ওগুলোকে। সাতটি অতিকায় মনুমেন্টের ভেতরে । তার যুগের সাতটি সবচেয়ে বড় স্থাপত্যের ভেতরে।’


‘কে তিনি?’ আব্বাস সামনের দিকে ঝুঁকে জানতে চাইলেন।
‘ সে মানুষ যিনি তার সময়ে গোটা জগতে রাজত্ব করেছিলেন,’ এপ্পার বললেন। ‘আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট।’
‘সাতটি অতিকায় মনুমেন্ট ?’ আব্বাস উৎসুক ভাবে বললেন। ‘ তুমি কি প্রাচীন যুগের সাত আশ্চর্যের কথা বলছো? আলেকজান্ডার ক্যাপস্টোনের সাত টুকরো করে ওই সব সপ্তাশ্চর্যের ভেতরে লুকিয়ে রেখে দিয়েছিলেন?’
‘হ্যাঁ,’ এপ্পার বললেন, ‘যদিও তার জীবন কালে ওগুলোর পরিচয় প্রাচীন যুগের সপ্তাশ্চর্য বলে ছিল না। এই নাম পরে দেওয়া হয়। ২৫০ খ্রিস্ট পূর্বে । সিরেনের ক্যালিম্যাচুস , আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক এই নাম দেন ওদের। সাতটার মধ্যে পাঁচটা আশ্চর্য, ৩২৩ খ্রিষ্ট পূর্বে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর আগে বানানো হয়েছিল কেন?’
‘আমার প্রাচীন ইতিহাসের জ্ঞান বড়ই ঝাপসা ঝাপসা,’ আব্বাস বললেন । ‘তুমি আমাকে আগে ওই সপ্তাশ্চর্যর নামগুলো বলবে প্লিজ?’

এর উত্তর দিলো এক অল্পবয়সী আইরিশ তরুণী, খুব দ্রুত এবং বিজ্ঞের মতো, ‘বানানোর সময় অনুসারে যদি বলা হয় তাহলে বলতে হবে – গ্রেট পিরামিড অফ গিজা। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান। এফিসাসে আরটেমিসের মন্দির। অলিম্পিয়াতে জিউসের স্ট্যাচু । হালিকারনাসসাসের কারুকার্য খচিত সমাধি মন্দির । আলেকজান্দ্রিয়ার লাইট হাউস এবং  রোডসের কলোসাস ।‘

‘থ্যাঙ্ক ইউ জো, ‘এপ্পার বললেন।

আব্বাস বললেন, ‘আমি তো মনে করতাম ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান নেহাতই গল্প কথা।’
এপ্পার বললেন, ‘ কোন একটা জিনিষ খুঁজে পাওয়া যায় নি বলেই যে সেটা গল্পকথা হবে তার কোন মানে নেই, আনজার। কিন্তু আমরা সেটাই করে থাকি। যাকগে আমারা মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে যাচ্ছি। নিজের জীবদ্দশায় তিনি পাঁচটা আশ্চর্য স্থাপত্য নিজের চোখে দেখছিলেন । কিন্তু লাইট হাউস আর কলোসাস – শেষ দুটি আশ্চর্য বানিয়েছিল তার বন্ধু এবং জেনেরাল প্রথম টলেমী । যে পরে ইজিপ্টের ফ্যারাও পদে আসীন হয়।
‘এটাই এক কৌতূহল উদ্দীপক যোগাযোগ – যদি একসাথে ভাবা হয় । এই দুই মহান মানুষ তাদের নিজেদের জমানায় সবকটি আশ্চর্য স্থান ঘুরে দেখেছিলেন। যাদের এখন আমরা প্রাচীন যুগের সপ্তাশ্চর্য বলছি।
‘নিশ্চিত ভাবেই তাদের মৃত্যুর পর এই প্রাচীন যুগের সপ্তাশ্চর্যর ভাবনাটা মাণুষের সামনে আসে।
‘কিন্তু বোকার মতো ভাবলে চলবে না। ওটা কোন সাধারন ব্যাপার ছিলনা মোটেই । যেমনটা আমি একটু আগেই বলেছি জগতের সপ্তাশ্চর্য এই ভাবনাটা প্রথম মানুষের সামনে আনেন সিরেনের ক্যালিম্যাচুস ২৫০ খ্রিষ্ট পূর্বে । আর সেটা উনি করেছিলেন একটা লেখায়। যার নাম “জগতের সপ্তাশ্চর্যর এক সংগ্রহ” । যাকে এখন সোজা কথায় আমরা বলি ক্যালিম্যাচুসের পাণ্ডুলিপি।
‘ক্যালিম্যাচুস কিন্তু যা ইচ্ছে তাই ভাবে এই তালিকা নির্মাণ করেননি । উনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি আলিকজান্ডার, প্রথম টলেমী এবং ক্যাপস্টোন বিষয়ে সব খবর জানতেন।
‘ওই সাতটি বিশেষ স্থাপত্যকেই কেবলমাত্র উল্লেখ করা হয় – বিশ্বাস হোক বা না হোক সেই সময়ে ওগুলোর মতোই মনকে অবাক করে দেওয়ার যোগ্য আর অনেক স্থাপত্য ছিল । কিন্তু তাদের নাম উনি তালিকায় উল্লেখ পর্যন্ত করেন নি। ক্যালিম্যাচুস আসলে একটা মানচিত্র এঁকেছিলেন। এক পরিষ্কার নিখুঁত মানচিত্র। । কোথায় কোথায় গোল্ডেন ক্যাপসস্টোনের টুকরোগুলো রাখা আছে তার মানচিত্র।’

‘ক্যালিম্যাচুসের পাণ্ডুলিপি অনুসারে, ক্যাপ স্টোনটাকে এই ভাবে সাতটুকরো করা হয়েছিল।’
এপ্পার হোয়াইট বোর্ডের ওপর একটা পিরামিড এঁকে তাকে আনুভূমিক ভাবে সাতটা ভাগে ভাগ করলেন।
‘সাতটি টুকরো – একটা পিরামিড সদৃশ শীর্ষ টুকরো , আর ছ’টি ট্র্যাপেজোডিয়াল অংশ। সবগুলো আলাদা আলাদা মাপের। এদের আমরা ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সাতটা নম্বর দিচ্ছি। এক থেকে সাত। আর এদেরকেই লুকানো হলো   প্রাচীন যুগের সপ্তাশ্চর্যর ভেতরে। ’

‘দাঁড়াও, দাঁড়াও!’ আব্বাস বলে উঠলেন, ‘প্রাচীন যুগের সপ্তাশ্চর্যগুলো কবেই সব ভেঙে চুরে গেছে বা  অদৃশ্য হয়ে গেছে। যাদের কোন অস্তিত্বই নেই এই মুহূর্তে,  আমরা সেগুলোকে কি ভাবে  খুঁজে পাবো?’
এপ্পার মাথা নাড়লেন সম্মতির ভঙ্গীতে। ‘এটা একটা ভালো প্রশ্ন। গ্রেট পিরামিডের কথা বাদ দিলে, বাকী ছয় স্থাপত্যের কোনোটাই আজ আর নেই। কিন্তু ক্যালিম্যাচুসের পাণ্ডুলিপিটা আছে।
‘এবার আমি সব পরিষ্কার করে বলি তাহলে । যদিও এতে ক্যালিম্যাচুসের নাম আমরা দেখতে পাই তবু উনি একমাত্র মানুষ নন যিনি এটা লিখেছিলেন । এই পান্ডুলিপি আসলে অনেক মানুষের হাতে লেখা । সময়ের সাথে সাথে এর পরিবর্ধন পরিমার্জন হয়েছে। আর সেটা করেছে এক গোপন মতবাদে বিশ্বাসী মানুষের দল। যারা ১৫০০ বছর ধরে ওই পাণ্ডুলিপি সং রক্ষন করেছে। তারা সব সময় নজর রেখেছে প্রতিটি আশ্চর্য স্থাপত্যের দিকে । এমন কি    সেগুলো ভেঙে যাওয়ার পরেও। আরো বিস্তারিত ভাবে বললে আসলে তারা নজর রেখেছে ক্যাপস্টোনের টুকরোগুলো কোথায় যাচ্ছে সেদিকেও । এবার আমি সেটাই বিস্তারিতভাবে বলবো আপনাদের।’

‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট সম্বন্ধে একটা বহু প্রচলিত গল্প আছে। পার্সিয়াতে অভিযানে যাওয়ার আগে, আলেকজান্ডার এক অর‍্যাকল বা ভবিষ্যতবক্তার কাছে গিয়েছিলেন । স্থানটা ছিল  ইজিপ্টের মরুভূমিতে সিয়া মরুদ্যান। সেই অর‍্যাকল নাকি আলেকজান্ডারের এক বিশেষ বিশ্বাসকে সমর্থন করে । আলেকজাণ্ডার বিশ্বাস করতেন উনি আসলে দেবতা, জিউসের সন্তানের থেকে কোন অংশেই কম নন।
‘এর সাথেই, খুব অল্প মানুষ জানে, সিয়া থেকে চলে আসার সময়  সেই অর‍্যাকল আলেকজান্ডারকে একটাবিশেষ উপহার দেন । যা কেউ দেখতে পায় নি অবশ্য। কিন্তু ইতিহাস লেখক ক্যালিস্থেনেস এর লেখনী অনুসারে, ওটা ছিল একটা সম্পূর্ণ ঢাকা দেওয়া মাল বহনকারী গাড়ি যা টেনে নিয়ে গিয়েছিল আটটা গাধা।
‘অর্থাৎ যাই উপহার সেটা হোক না কেন , ওজনে সেটা ছিল হেভি। আলেকজান্ডার ওটাকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন পার্সিয়া অভিযানে। সব সময় ওটা ঢাকাই রাখা থাকতো।’

আব্বাস এবার বললেন, ‘তুমি নিশ্চয় মনে করো যে ওই অর‍্যাকল আলেকজান্ডারকে ক্যাপস্টোন দিয়েছিল?’

‘অবশ্যই করি। সাথে এটাও বিশ্বাস করি ওই অভিযানের সময়েই আলেকজান্ডার রীতিমতো পরি কল্পনা করে ওটার টুকরো করেন এবং তৎকালীন পাঁচটি অতিকায় স্থাপত্যের ভেতর  সেগুলোকে লুকিয়ে রাখেন। শেষ দুটো টুকরো তুলে দেন বিশ্বাসী বন্ধু প্রথম টলেমীর হাতে।  আমরা জানি প্রথম টলেমী এর পরের দুটো আশ্চর্য বানিয়েছিলেন।


‘এর থেকেই বোঝা যায় সেই সিয়ার অর‍্যাকল সাধারন উপাসক ছিলেন না মোটেই। সেই অর‍্যাকল ছিলেন- যারা আজকের দিনেও আছেন – প্রাচীন সূর্য মতবাদের যাকে বলা হয়ে থাকে আমুন-রা এর উপাসনা, তারই প্রধান পুরোহিত। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, ইজিপশিয়ান রেকর্ড অনুসারে এদের কথা সে সময়ের মানুষ জানতো।  এই উপাসকদের পরিচিতি ছিল ক্যাপস্টোনের পুরোহিত রুপে । আর এটাই এক বিরাট সত্যি । ওরাই ওই ক্যাপস্টোনটাকে স্থাপন করে ছিল গিজার পিরামিডের মাথায়। আবার ওরাই ওটাকে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়েছিল।
‘এই আমুন-রা এর উপাসনা বর্তমান দিনেও প্রচলিত আছে। নানান রকম ছদ্মবেশের আড়ালে। উদাহরণস্বরুপ বলতে পারি নাইটস অফ সেইন্ট জন অফ মাল্টা এবং ক্যাথলিক চার্চের নানান শাখা প্রশাখা।
‘ ফ্রি ম্যাসনেরাও ওই গ্রেট পিরামিডের সাথে গভীর ভাবে সম্পর্ক যুক্ত। মাঝে মাঝে ওদেরকে আমুন-রা এর উপাসকদের নবপ্রজন্ম বলেও দোষারোপ করা হয়ে থাকে। এই সম্প্রদায়ের এক বিখ্যাত মানুষের নাম নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। যাকে পিরামিডের ভেতরে কিংস চেম্বারে এই সম্প্রদায়ের সবচেয়ে উচ্চস্তরের পদে আসীন থাকার সম্মান প্রদান করা হয়েছিল।
‘আমুন-রা এর এই উপাসনার সাথে আর যে সমস্ত মানুষেরা যুক্ত ছিলেন তারা হলেন থমাস জেফারস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টির ডিজাইনার ফ্রেড্রিখ-আউগুস্ত-বারথোল্ডি, বিখ্যাত নাজি প্রত্নতত্ববিদ ডঃ হান্স কোয়েনিগ এবং আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি অয়ালেস। সেই মানুষ যিনি কুখ্যাত হয়েছেন আমেরিকান এক ডলারের নোটের ওপর  ক্যাপস্টোন সহ পিরামিডের ছবি প্রিন্ট করিয়ে।

‘আমাদের কাজের সুবিধার জন্য মনে রাখতে হবে আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরীর সব প্রধান গ্রন্থাগারিকই ছিলেন ওই বিশেষ মতবাদের গুরুত্বপূর্ণ দলীয় সদস্য । যার মধ্যে ছিলেন রোডসের অ্যাপোলোনিয়াস এবং সিরেনের ক্যালিম্যাচুস।
এপ্পার বলতে থাকলেন, ‘কালের ধারাস্রোতে একসময় সবকটা আশ্চর্য ধূলিসাৎ হলো। ক্যালিম্যাচুসের কাজের সাথে যুক্ত পরবর্তী সমস্ত আমুন-রা এর উপাসকরা নজর রেখে যাচ্ছিলেন ক্যাপস্টোনের টুকরোগুলো কি হচ্ছে কোথায় যাচ্ছে সেদিকে। আর সে সব নথিবদ্ধ করে চলেছিলেন ক্যালিম্যাচুসের পান্ডুলিপিতে। 
‘উদাহরণ হিসাবে বলি, যখন রোডসের  লোসাস মূর্তি ভেঙে পড়ে গেল ভুমিকম্পে, ইজিপ্টের ওই ধর্মবিশ্বাসীরা মাথাটাকে নিয়ে পালিয়ে গেল। ক্যাপস্টোনের একটা টুকরো ওরা রেখে ছিলো ওটার নেকলেসের ভেতরে।লোসাসের মাথা কোথায় রাখা হল সেটা নথিভুক্ত হলো পান্ডুলিপিতে। কিন্তু এক গোপন ভাষায়।

বন্ধু আনজার, এখানেই ওই ছোট্ট মেয়েটি গুরত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ালো।
‘লক্ষ্য করলে দেখতে পাবে, ক্যালিম্যাচুস আর তার সাথীরা সব কিছু লিখেছিল এক প্রাচীন ভাষায়। এমন এক ভাষা যার সাথে আমাদের মানব ইতিহাসের কোনো ভাষার মিল নেই। এমন এক ভাষা যার অনুবাদ ৪৫০০ বছর ধরে করা সম্ভব হয়নি। এমন কি সুপার কম্পিউটার ও পারেনি।
‘এ এক রহস্যময় ভাষা। যার নাম থথের শব্দাবলী।
‘এখন আমাদের বিশ্বাস যে ফাদার ডেল পিয়েরোর কাছে ওই ক্যালিম্যাচুস পান্ডুলিপির একটা কপি আছে যা তিনি ভ্যাটিকান থেকে পেয়েছেন। ১৩ শতকে অতি গোপনে ভ্যাটিক্যানের এক গুপ্তচর যেটার কপি করেছিল। কিন্তু সে ওটার অনুবাদ করতে পারেনি। আর সে কারনেই সেই মানুষটা এই পৃথিবীতে খুঁজতে থাকে এমন একজন মানুষকে যে থথের শব্দাবলী পড়তে সক্ষম। আর সেই মানুষ  হলো অর‍্যাকল অফ সিয়া।
‘এর ভেতরে আলেকজান্ডার এসে দেখা করে চলে গেছেন অর‍্যাকলের সাথে। সেই অর‍্যাকল অফ সিয়ারা আজও আছে, আফ্রিকার কোন এক গোপন এলাকায় লুকিয়ে ।
‘একটাই রক্ত সূত্র অর‍্যাকলদের ৪৫০০ বছরের বেশী সময় ধরে টিকে আছে । সে অর‍্যাকল নারী বা পুরুষ, যে কেঊ হতে পারে – নিয়ম মেনে একটা করেই সন্তানের জন্ম দেয়। আর সেই সন্তান কোন এক অজানা রহস্যময় কারনে অর্জন করে দিব্য দৃষ্টি । যার সাথে যোগ থাকে পূর্ববর্তী অর‍্যাকলদের । একজন মারা গেলে পরের জন হয়ে যায় নতুন অর‍্যাকল।
‘এই দিব্যদৃষ্টি প্রাপ্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তর্কবিতর্ক চলে আসছে। কিন্তু এ অর‍্যাকলদের এক অদ্ভুত ক্ষমতার কথা লিখে গেছে ইজিপশিয়ান, গ্রীক এবং রোমান  লেখকেরা একই ভাবে। আর তা হ লো – অর‍্যাকল অফ সিয়া  এক মাত্র জীবিত মানুষ যে জন্ম নেয় থথের শব্দাবলী পড়ার ক্ষমতা নিয়ে।
‘ ১৪ শতকের কোন এক সময়ে ক্যালিম্যাচুসের অনুগামীরা সব মারা যায়। ফলে ওই অর‍্যাকলই একমাত্র মানুষ বেঁচে থাকে এই জগতে যে ক্যালিম্যাচুসের পান্ডুলিপির মর্ম উদ্ধার করতে পারবে। আর তার ফলেই উদ্ঘাটিত হবে সাত প্রাচীন সপ্ত আশ্চর্যের ঠিকানা।

‘যেহেতু একটু আগেই এখানে বলা হলো , ফ্রান্সিস কো ডেল পিয়েরোর নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান কোয়ালিশন অর‍্যাকলকে খুঁজে বার করতে পারেনি। কিন্তু তার গর্ভবতী স্ত্রীকে পেয়ে গিয়েছিল। সেটাও কম কিছু পাওয়া নয়। আসল অর‍্যাকল , এক  জঘন্য নোংরা মানসিকতার মানুষ । মাতাল । মারা যায় ওর বাচ্চার জন্মের দুমাস বাদে এক দুর্ঘটনায়। ওই মানুষটাকে যদি আগে খুঁজে পাওয়া যেত তাহলে নিশ্চিত ভাবেই এই কাজটা করা অনেক সহজ হয়ে যেত এবং শুরুও তাড়াতাড়ি করা যেত।
‘এখন ব্যাপার হ লো এই যে, ইউরোপিয়ান দের কাছে এক সদ্যোজাত অর‍্যাক ল আছে – একটি ছেলে – যার অর্থ সে যখন জ্ঞান লাভ করার মতো বয়সে পৌছাবে সে ওই পাণ্ডুলিপি ডিকোড করতে সক্ষম হবে। প্রাচীন ত থ্য অনুসারে নতুন অর‍্যাক ল দশ বছর বয়সে পৌছালেই তার রহস্যময় ক্ষমতা গুলো কাজ করতে শুরু করে।


‘একবার ডেল পিয়েরো ওই ক্যালিম্যাচুস পাণ্ডুলিপির অর্থ উদ্ধার করতে পারলেই ওর ইউরোপিয়ান সাথীরা ঝাঁপিয়ে পড়বে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গুপ্ত ধনটাকে হাসিল করার জন্য। শুরু করে দেবে গোল্ডেন ক্যাপস্টোনের সাতটি টুকরোর খোঁজ।’


আইরিশ তরুণী, জো কিসানে, সমানের দিকে ঝুঁকে বললো, ‘তবে এই ক্ষেত্রে, কাকতালীয়ভাবে , ওই অর‍্যাকলের স্ত্রী যমজ বাচ্চার জন্ম দেয় । আর আমরা পেয়ে যাই দ্বিতীয় বাচ্চাটিকে – একটি মেয়ে।‘
‘কারেক্ট!’ এপ্পার বলেন। ‘এর সাথেই শুরু হচ্ছে এক প্রতিযোগিতা।  এমন এক প্রতিযোগিতা যার শুরু হবে দুটি বাচ্চার সেই বয়সে পৌঁছানোর যখন তারা সক্ষম  হবে নিজেদের ক্ষমতার ব্যবহার করতে। পড়তে পারবে থথের শব্দাবলী। মর্মোদ্ধার করবে ক্যালিম্যাচুসের পান্ডুলিপির রহস্য।’
‘এর অর্থ ওই বাচ্চাটির ঠিকঠাক বড় হয়ে ওঠাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,’ ও’হারা বললেন। ‘সবসময় ওর সুরক্ষার দিকে নজর রাখতে হবে। ভালোভাবে ও যাতে বড় হয়ে ওঠে সেদিকেও খেয়াল দিতে হবে।  তারপর সেই সময় আসবে,  যখন ও সক্ষম হবে ওই লেখনী পাঠে তখন   আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে সেই আশ্চর্য উদ্ধারের পথে। আর সেটা করতে হবে ইউরোপিয়ান বা আমেরিকানরা পৌছানোর আগে।’
এপ্পার সম্মতির ভঙ্গীতে মাথা নেড়ে বললেন, ‘ এতে এক চুল ভুল করা যাবে না। পুরো কাজটাতেই আমরা ওদের থেকে অনেকাংশেই পিছিয়ে আছি। থাকবোও। আমেরিকা  এবং ইউরোপিয়ান উভয় দল তাদের ভালো ভালো বিজ্ঞানীদের এই কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। যখন আসল সময় আসবে ওরা বিশাল বাহিনী পাঠিয়ে দেবে ওই সাতটা টুকরো খুঁজে আনার কাজে।
‘আমাদের কাছে ওদের মতো অত সম্পদ নেই বা নেই লোকবল। তবে এটাও বলতে পারি , আমরা মোটেই ওদের থেকে পিছিয়েও নেই।
‘প্রথমেই যেটা উল্লেখ করা দরকার ওই দুই মহা শক্তি জানেনা যে আমরাও এটার জন্য ভাবনা চিন্তা করছি। ওরা এটাও জানে না যে আমাদের কাছে মেয়েটা আছে।
‘দ্বিতীয় ব্যাপার হলো, আমাদের প্রতিযোগিতা সব কটা টুকরোর জন্য নয় । আমাদের দরকার মাত্র একটা টুকরো  । আমরা যদি সেটা করতে পারি, আমরা ওদের আটকে দিতে পারবো । ওরা  পুরো ক্যাপস্টোনটার ক্ষমতা ব্যহার করতেই পারবে না। বুঝাতে পেরেছি আশা করছি। তবে হ্যাঁ একটা টুকরো উদ্ধার করে নিয়ে আসাটাও কিন্তু মোটেই সহজ কাজ হবে না এটাও জানিয়ে রাখা ভালো।‘
এপ্পার ঘরের সবার মুখের দিকে তাকালেন।
‘এর দায়িত্বভার খুবই বেশী। এতটাই বেশি যে একটা দেশের পক্ষে সেটা নেওয়া সম্ভব পর হবে না। আর এই জন্যই আজ আমরা এখানে একত্র হয়েছি। ছোট ছোট কিছু দেশ একসাথে হয়ে একটা শক্তি বানিয়ে এক বিশেষ লড়াই লড়ার জন্য । এই মুহূর্তের সবচেয়ে শক্তিধর দুটো শক্তির সাথে। অতএব শুনে নিন আমাদের আগামী ভাবনা চিন্তা – এই গ্রুপের সাথে যুক্ত থাকা দেশগুলি একটি করে সৈন্য  দেবে ওই বাচ্চাটিকে রক্ষা করা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য । তারা শুধু বাচ্চাটির বড় হওয়ার পথেই সাহায্য করবে তাই নয় তারাই অংশ নেবে আগামীদিনে আমাদের চরম লক্ষ্য ক্যাপস্টোনের ওই টুকরো উদ্ধারের কাজে।
‘আমি আগে থেকেই সতর্ক করে দিতে চাই যে এটা একটা দীর্ঘকালীন মিশন। কয়েক মাসের নয় মোটেই, কয়েক বছরের। সব সময় এর সাথে জড়িয়ে থাকবে সতর্কতা, আত্মবলিদান এবং নিয়মানুবর্তীতা। যে সৈন্যরা এর জন্য নির্বাচিত হবে তারা ক্যাপ্টেন ওয়েস্ট আর আমার সাথে যাবে সেই গোপন স্থানে যেখানে মেয়েটিকে রাখা আছে। সেখানে আমরা ওর দেখা শোনা করবো, ওকে বড় করে তুলবো নিশ্ছিদ্র গোপনতার সাথে। যতদিন না সে আমাদের কাজের উপযুক্ত হয়ে ওঠে।’

সাত দেশের সদস্যরা একে অপরের সাথে আলোচনায় মগ্ন হলেন। চলতে থাকলো ফিস ফিস গুঞ্জন। যেহেতু ওয়েস্ট নিজেই নিজের দেশের একমাত্র প্রতিনিধি সে এর ভেতর ঢুকলো না।
কিছুক্ষন বাদেই থামলো আলোচনা। যে যার আসনে ফিরে এলেন। প্রতিটা দেশ তাদের “গার্জিয়ান” সেনাকে পেশ করলো।

কানাডার পক্ষ থেকে ম্যাক্স এপ্পার জানাই ছিল।
শেখ আব্বাস বললেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে আমি আমার দ্বিতীয় পুত্র ক্যাপ্টেন আজিজ আল আনজার আল আব্বাসকে মনোনীত করলাম।’
আলোচনা চলাকালীন সময়ে  মানুষটা  শেখ আব্বাসের পাশে বসে ছিল । মোটা সোটা চেহারা, খুব একটা লম্বা নয় । মাথায় পাগড়ি আর মুখে ঘন কালো দাড়ি।
‘ক্যাপ্টেন আজিজ আল আনজার আল আব্বাস, ভারী আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরক ব্যবহারে সক্ষম । ফার্স্ট কম্যান্ডো স্কোয়াড্রন । হাজির । সংকেত নাম – সালাদিন।’
এবার স্পেনের প্রতিনিধি উঠে দাঁড়ালো । লম্বা, সুন্দর দেখতে এবং ছিপ ছিপে অ্যাথলেটিক দেহের গঠন। রিকি মারটিনের মতো দেখতে কিছুটা। শুধু একটু রুক্ষ। ‘লেফটেন্যান্ট এনরিক ভেলাক্রুজ। ইউনিড্যাড ডে অপেরাসিওনেস এস্পেসিয়ালেস, স্প্যানিস মেরিন। আন্ডার ওয়াটার ডেস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোলিশন। সংকেত নাম – মাতাদোর।’
জামাইকানদের পক্ষ থেকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল এক লম্বা জিরি জিরি চুলের মানুষকে। নাম সার্জেন্ট ভি জে উইদারলি। সংকেত নাম – উইচ ডক্টর।
দাড়িওয়ালা এক বিরাট মাপের মানুষ উঠে দাঁড়ালো নিউজীল্যান্ডের পক্ষ থেকে। এন জেড এ এফ পাইলট । ডাক নাম – স্কাই মনস্টার।
সব শেষে আয়ারল্যান্ডের পক্ষ থেকে দুজন প্রতিনিধিকে পেশ করা হ লো । তাদের মধ্যে এক জন ,এই নানান দেশীয় মানুষে গড়া  দলটিতে একমাত্র মহিলা সদস্য।
জো কিসানে এবং ওর ভাই, এক ছোট খাটো দৈত্য বিশেষ, যে ওর পাশেই বসে ছিল । লিয়াম । দুজনেই আইরিশ কম্যান্ডো ইউনিট সিয়াথান ফিয়ানোগ্ল্যাচ অ্যান আইয়ারম এর সদস্য।
দুজনেই নিজের পরিচয় দিলো। ‘সারজেন্ত জো কিসানে, হোস্টেজ রেস্কিউ, অ্যাড ভ্যান্সড মেডিক্যাল। সংকেত নাম – ব্লাডি মেরী।’
ভাই  জানালো, ‘করপোর‍্যাল লিয়াম কিসানে, হোস্টেজ রেস্কিউ, বম্ব ডিস্পোজাল । ভারী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে সক্ষম। সংকেত নাম – গান ম্যান।‘
চওড়া টেবিল ঘিরে দাঁড়ালো এই গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে আটটি ছোট দেশের   নয় জন নির্বাচিত প্রতিনিধি। প্রত্যেকেই তৈরী তাদের জীবনের সবচেয়ে  আকর্ষণীয় মিশনে পথে পা বাড়ানোর জন্য।
এই দলে এসে যোগ দেবে খুব শীঘ্র দশ নম্বর সদস্য – স্ট্রেচ, ইজ্রায়েল থেকে – কিন্তু সে মোটেই এই দলের মনোনীত সদস্য নয়।


০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
ওরা তৈরী এখান থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য। একটা প্লেন অপেক্ষা করছে ওদের নিয়ে যাবে আয়ার ল্যান্ডের বাইরে সেই গোপন সেফ হাউসে যেখানে বাচ্চাটা আছে।
দরজার কাছে , আব্বাস তার ছেলে, সালাদিনের উদ্দেশ্যে আরবীয় ভাষায় কিছু বল লেন, যার মধ্যে একটি শব্দ , ‘বিন্ত’ ।
ছোখাটো মোটা মানুষটা আনত হলো।
ঠিক সেই মুহূর্তেই ওয়েস্ট ওদের পাশ দিয়ে দরজার বাইরে যাচ্ছিলো।
‘যদি আপনারা ওই মেয়েটির ব্যাপারে কথা বলতে চান তাহলে প্লিজ,’ ওয়েস্ট বললো, ‘ ওই “মেয়েটি” বলা ছাড়ুন। ওর একটা নাম আছে, এটা আপনাদের জানা দরকার।’
সালাদিন অবাক হয়ে বললো, ‘আপনি ওর নামকরন করেছেন?’
‘হ্যাঁ,’ ওয়েস্ট জবাব দিলো। ‘ওর নাম দিয়েছি লিলি।’
শুরু হলো ওদের যাত্রা সেফ হাউসের পথে।
আফ্রিকা, কেনিয়াতে ওটার অবস্থান। কিন্তু বিশেষ গোপনতা রক্ষার জন্য ওরা নানান পথ ঘুরে ওখানে পৌছালো ।যার জন্য বেশ কিছু দিন সময় লাগলো এবং অনেকবার প্লেন বদল করলো ওরা।
এরকমই একটি প্লেন সফরে সালাদিন এপ্পারের কাছে জানতে চাইলো, ‘মিটিং এ আমাদের একটা বই এর সারাংশ পড়তে দেওয়া হয়েছিল। ওটাতে ক্যাপস্টোনের সাথে টারটারাস সৌর কলঙ্কের কথা লেখা ছিল। এই টারটারাস সৌর কলঙ্ক ব্যাপারটা কি? আর এর সাথে গিজার পিরামিড এবং ক্যাপস্টোনের সম্পর্কটাই বা কি?’
এপ্পার মাথা নেড়ে বললেন, ‘খুব ভালো প্রশ্ন। ওদের মধ্যে এক কৌতূহলজনক সম্পর্ক আছে। তার মধ্যে একটা ব্যাপার এই মুহূর্তে পুরো বিষয়টাকে এক নতুন মাত্রা প্রদান করেছে।’
‘কেন?’
‘কারন আর দশ বছরের মাথায় ,  ২০০৬ এর মার্চে, আমরা আধুনিক সময়ে দ্বিতীয়বার সূর্যের ঘূর্ণন দেখতে চলেছি। এমন এক ঘটনা যা গত ৪৫০০ বছরে একবার ও ঘটেনি।’
লম্বা দাড়ি ওয়ালা আরবটা ভ্রু কুঁচকালো । ‘দ্বিতীয়বার সূর্যের ঘূর্ণন? সেটা কি জিনিষ?’
‘ সেটা এমন জিনিষ যা তুমি বা আমি খালি চোখে দেখতে পাবো না।  আসলে ওই সূর্য ও তার নিজের অক্ষে ঘোরে যেম আমাদের পৃথিবী ঘোরে। পার্থক্য হলো সেটা আমাদের মতো এত সহজ সরল ভাবে ঘটে না। বলতে পারো এই ঘূর্ণনে সূর্য সামান্য লাফিয়ে অপর দিকে ওঠে বা নিচে নেমে যায়। এর সাথেই প্রতি ৪০০০-৪৫০০ বছরে , সূর্যের একটা বিশেষ অংশ – একটা সৌর কলঙ্ক যার নাম টারটারাস সৌর কলঙ্ক – সেটা আমাদের গ্রহের সাথে এক রেখায় চলে আসে। এটা একটা খুব খারাপ ব্যাপার।’
‘কেন?’
‘কারন টারটারাস নামে পরিচিত ওই সৌর কলঙ্ক স্থানটি একটি বিশেষ একক হটেস্ট পয়েন্ট  সূর্যের দেহত্বকে,’ বললো জো কিসানে । উঠে এসে বসলো ওদের কাছে। ‘প্রাচীন গ্রীকের মানুষ তাদের   পাতাল জগতের দুটো বস্তুর মধ্যে একটার নামে ওটার নামকরন করেছিল।  ভালো বস্তুটার নাম এলিশিয়ান ফিল্ড – একটা অনন্ত খুশী আনন্দের জায়গা । আর খারাপটা এক চিৎকার, আগুন এবং শাস্তির নরক , নাম টারটারাস প্লেইনস ।’
‘বিশ্বে উষ্ণতার মাত্রা গত কুড়ি বছর ধরে বেড়েই চলেছে,’ এপ্পার বললেন। ‘কারন টারটারাস সৌর কলঙ্ক এগিয়ে আসছে। যখন ওটা সরাসরি পৃথিবীর উপর এসে যাবে , যেমনটা এর আগেও হয়েছে, অন্তত দু সপ্তাহ ধরে অবস্থান করবে, তাপমাত্রা আরো বেড়ে যাবে। এক অসহ্য মাত্রায়, প্রায় ১১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে।
‘বৃষ্টি বনগুলো শুকিয়ে যাবে। নদী ফুটতে শুরু করবে। মানুষকে ঢুকে থাকতে হবে ঘরের ভেতরে। এক অগ্নিপ্রবাহ বইতে থাকবে গোটা পৃথিবীর উপর দিয়ে। যদিও এর থেকে বাঁচা যাবে।
‘সমস্যাটা যেখানে সেটা হলো মেরু বরফ ব্যাপক পরিমাণে গলে যাবে। যার ফলে ধেয়ে আসবে বিশ্বব্যাপী এক ভয়ঙ্কর বন্যা । সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাবে প্রায় ১৫ মিটার। সমুদ্র তীরবর্তী বিভিন্ন শহরগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে বিশ্রী ভাবে। কিন্তু ওই যে বললাম এর থেকে বাঁচাও যাবে। আগে থেকে সতর্ক করে দিতে হবে।’
‘ও...কে...’ সালাদিন বললো।
এপ্পারের কথা শেষ হয়নি। ‘আমাদের কাছে অতীতে এরকম বিশ্বব্যাপী জলস্তর বেড়ে যাওয়ার ভৌগোলিক তথ্য আছে । যা ঘটেছিল ১৫০০০ খ্রীষ্ট পূর্বে, ১০৫০০ খ্রীষ্ট পূর্বে এবং ৬৫০০ খ্রীষ্ট পূর্বে।
‘১৫০০০ খ্রীষ্ট পূর্বে যে বন্যা হয়েছিল মনে করা হয় সেটা ছিল এতটাই বিশাল যে পারশিয়ান খাঁড়ি এলাকাগোটাটা জলের তলায় চলে গিয়েছিল। ১০৫০০ খ্রীষ্ট পূর্বের বন্যার বিশেষ পরিচিতি “গ্রেট ফ্লাড” রুপে । যার উল্লেখ আছে নানান ধর্ম গ্রন্থে। বাইবেলে নোয়ার বন্যা রুপে। সুমেরিয়ান লেখাতেও এর উল্লেখ আছে। এমন কি অস্ট্রেলিয়ার আদিম উপজাতির লোকেরা তাদের স্বপ্নে দেখা কাহিনীতেও এর উল্লেখ করে।


‘সবচেয়ে কাছের ঘটনার প্রমান ৬৫০০ খ্রীষ্ট পূর্বে। বিশ্ব জুড়ে যার পরিচয় ফ্লান্ডারিয়ান ট্র্যান্সগ্রেশন নামে। এই সময়ে নাকি সব সমুদ্রতট অন্তত ২০ মিটার জলের তলায় চলে গিয়েছিল।’
এপ্পার সামনের দিকে ঝুঁকে বললেন , ‘এই তিনটে বন্যাই হয়েছিল টারটারাসের ঘূর্ণন কালে।
‘ভাবনার বিষয় এই যে,’ নিজের একটা আঙুল উঠিয়ে বললেন, ‘২৫৭০ খ্রীষ্ট পূর্বে যে টারটারাসের ঘূর্ণন হয়েছিল  সে সময়ে এরকম কোন বিশ্বব্যাপী বন্যার নিদর্শন পাওয়া যায় না।’
সালাদিনের ভুরু আবার কুচকে গেল। ‘আপনি কি এটাই বলতে চাইছেন যে কোন একটা বিশেষ কিছু সেই দুর্যোগকে রুখে দিয়েছিল? এর সাথে কি ওই পিরামিডের যোগাযোগ আছে?’
‘ হ্যাঁ, একদমই তাই,’ এপ্পার বললেন। ‘ব্যাপারটা খুব জটিল কিন্তু ভেবে দেখো ২৬৬০ খ্রীষ্ট পূর্ব সময়ের ইজিপ্টের সম্রাট জোসের এর পর থেকে ইজিপ্টে আর পিরামিড বানানো হয় নি। বা ওরা বানায় নি বলতে পারো। ২৫০৩ খ্রীষ্ট পূর্বে মেনাকাউরের পর থেকে ওই দৈত্যাকার স্থাপত্য বানানো ওরা বন্ধই করে দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো টানা ১৬০ বছর ধরে  ইজিপশিয়ানরা পাগলের মতো পিরামিড বানিয়ে গেছে। যার মধ্যে সেরা কাজ হল গিজার পিরামিড। এর পর আর ওরা একটাও পিরামিড বানালো না ।
‘একেবারে বন্ধ করে দিলো... ২৫৭০ খ্রীষ্ট পূর্বে টারটারাসের ঘূর্ণন হয়ে যাওয়ার পর। এর পরেও অবশ্যই ইজিপশিয়ানদের স্থাপত্যে বিশাল বিশাল কাজ হয়েছে, কিন্তু ওরা আর একটাও পিরামিড বানায়নি।’
‘তার মানে আপনি বলতে চাইছেন ইজিপশিয়ানরা টারটারাস সৌর কলঙ্ক বিষয়ে সব কিছু বুঝতে পেরেছিল?’ সালাদিন বললো। ‘ এর মানে কি এরকম কিছু, যে ভিনগ্রহ থেকে কিছু প্রানী এসেছিল । যারা ওদের বলে একটা গ্রেট পিরামিড বানাও আর তার মাথায় ওই ক্যাপস্টোনটা স্থাপন করো?’
এপ্পার নাকীয় ভঙ্গীতে নিজের ঘন ঝোপ সদৃশ ভুরু যুগল উঠিয়ে সালাদিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ আমি জানিনা কেন ইজিপশিয়ানরা পিরামিড বানানো শুরু করেছিল। কিন্তু ওরা করেছিল। এমন এক দ্রুততায় এবং এমন এক মাত্রায় যা তার আগে কেউ দেখেনি বা তার পর থেকে আজ অবধি ঘটেনি। আর কোনো এক বিশেষ কারনে ২৫৭০ খ্রীষ্ট পূর্বে টারটারাসের সৌর কলঙ্ক পৃথিবীতে কোন ধ্বংসলীলা চালাতে পারেনি। গ্রেট পিরামিড বানানো হয়েছিল - সৌর কলঙ্ক আসে এবং চলেও যায় – কোন ক্ষতি করতে পারে না – ইজিপশিয়ানরা ক্যাপস্টোনটা নামিয়ে নেয় এবং পিরামিড বানানো বন্ধ করে দেয়।
সালাদিন আবার জানতে চাইলো, ‘সব মিলিয়ে আপনার মতামতটা কি?’
‘ সমস্ত অকাল্ট তত্বের বইপত্র এক পাশে সরিয়ে রেখে আমি বলছি, আমি বিশ্বাস করি ওই ক্যাপস্টোনের ভেতরের নলে থাকা স্ফটিকগুলোই হল আসল জিনিষ । ক্যাপস্টোনটা আসলে একটা পোলারাইজার, এক স্ফটিক পাথরের সমাহার যারা টারটারাস সৌর কলঙ্কের অতিমাত্রার তাপকে টেনে নিতে পারে। এর ফলে ওটা তার ক্ষমতা হারায়। কোন ক্ষতি হওয়ার আর সুযোগ থাকে না ।’
‘আর অকাল্ট তত্বের বইপত্র অনুসারে? ওই যে হাজার বছর ধরে এর কারনে রাজত্ব করার যে গল্প কথা প্রচলিত আছে সেটা?’
এপ্পার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল। ‘আমার ভেতরে যে বিজ্ঞানী সত্তা সে ওগুলোকে ঘৃণা করে।  কিন্তু কিছু একটা ব্যাপার আছে যা আমাকে ওগুলোকে একেবারে অগ্রাহ্য করতেও দেয় না। আমি আমার জীবনে এমন অনেক কিছু দেখেছি যা বিজ্ঞানের তত্বকে নস্যাত করে দেয়।
‘গ্রেট পিরামিডে পাওয়া লেখা থেকে জানা গেছে বেনবেনকে  – ক্যাপস্টোনের আরেক নাম – পবিত্র স্থানে, পবিত্র ভুমিতে, পবিত্র উচ্চতায় রাখতে বলা হয়েছে ছোট সৌর কলঙ্ক রা’য়ের সং হারকের বানী প্রচারক আসার সাত দিনের ভেতরেই।
‘এটা আসলে এক প্রাচীন প্রথাকে নির্দেশ করছে। এক প্রথা যার প্রচলন আছে আমুন-রা এর মতবাদে। এক প্রথা যা পালন করা হয় টারটারাস সৌর কলঙ্কের আগমনের আগে। এই প্রথার সাথে যুক্ত হয়ে আছে এক পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণ । যে মন্ত্র লেখা আছে ওই ক্যাপস্টোনের টুকরোগুলোতে।
‘তবে এই প্রথা দুভাবে পালন করা যায়। একটা ভালোর জন্য, আর একটা খারাপ করার জন্য। গ্রেট পিরামিডের ওপর ক্যাপস্টোন স্থাপন করে তুমি যদি সৎ ভাবনার মন্ত্র – যাকে বলা হয় শান্তি আনয়নের প্রথা – উচ্চারন করো তাহলে এই জগত টারটারাসের অত্যাচার থেকে বেঁচে যাবে এবং জীবন চলতে থাকবে তার নিজের পথে। আর এটাই আমাদের আর একটা লাভ। আমরা যদি একটাও টুকরো হাসিল করতে নাও পারি , আমরা অন্তত পক্ষে ভালো মন্ত্রের উচ্চারন করে ক্যাপস্টোনকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে সক্ষম  হবো।’
‘আর খারাপ মন্ত্রের ব্যাপারটা?’ সালাদিন একটু ইতস্তত ভাবে প্রশ্নটা করলো।
এল্লারের মুখটা একটু বিকৃত হলো।
‘খারাপ মন্ত্র – শক্তি আহরণের প্রথা – সেটা দিয়েও এই পৃথিবীকে টারটারাসের চরম দাবদাহ থেকে বাঁচানো যাবে। সেখানেও ক্যাপস্টোনের স্ফটিকেরা সৌরশক্তি শুষে নেবে । কিন্তু দিতে হবে এক ভয়ঙ্কর মূল্য। 
‘প্রাচীন পুঁথিপত্র অনুসারে , যখন সম্পূর্ণ ক্যাপস্টোনটাকে সপ্তম দিনের দুপুরে সঠিক স্থানে রাখা হবে তখন কোন এক দেশের পবিত্র মাটি ওর ভেতরে দিয়ে দিতে হবে এবং শক্তি আহরণের মন্ত্র পাঠ করতে হবে। সেটা করা হলে ওই দেশে আগামী ১০০০ বছরের জন্য সমস্ত জাগতীয় শক্তি সঞ্চারিত হবে।‘
এপ্পার সালাদিনের দিকে তাকালেন । ‘ক্যাপস্টোন আসলে মানুষের চরমতম পরীক্ষা নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখার। দুর্বিপাকের মুহূর্তে দাঁড়িয়ে , নিঃস্বার্থ ভাবে বিশ্বের ভালো করতে চাও নাকি স্বার্থপরের মতো চরম ক্ষমতা আহরন করতে চাও তারই পরীক্ষা।‘
‘অথবা আরো একটা দিক আছে । তৃতীয় ভাবনা,’ সালাদিন বললো, ‘আমরা যা করতে চাই। আমরা যদি একটা টুকরো হাসিল করতে পারি তাহলে জগতকে দু সপ্তাহের জন্য এক বিপুল দুর্যোগ উপহার দেবো । কিন্তু একই সাথে বাঁচিয়ে দেবো ১০০০ হাজার বছরের দাসত্ব করা থেকে। দুটো খারাপের ভেতর থেকে কম খারাপটাকে বেছে নেওয়া যাকে বলে। তাইতো ডঃ এপ্পার?’
‘হ্যাঁ প্রায় সেরকম বলতেই পারো, ‘ এপ্পার বললেন শান্তভাবে। ‘ যে কোনোদিক থেকেই , হে  আমার  আরবীয় বন্ধু এই বিশ্বের ভাগ্য এখন আমাদের কাজের ওপর নির্ভর করছে।’

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

No comments:

Post a Comment