Search This Blog

Thursday, June 15, 2017

দ্যা লাস্ট ম্যান... মেরি শেলী... বাংলা অনুবাদ[১] – “শেষের সেইজন”- প্রতিম দাস

দ্যা লাস্ট ম্যান
মেরি শেলী
বাংলা অনুবাদ – “শেষের সেইজন”
প্রতিম দাস
পর্ব এক
অবতারনা
১৮১৮ সালে আমরা নেপলস গিয়েছিলাম। ৮ই ডিসেম্বর, আমি আর আমার সাথী সমুদ্র পেরিয়ে সেই সমস্ত প্রাচীন পুরাবস্তুগুলো দেখতে গেলাম যা বেইয়ের সমুদ্রতটে ছড়িয়ে পড়ে ছিল।
শান্ত সমুদ্রের স্বচ্ছ ঝকঝকে জলের তলায় শুয়ে ছিল   প্রাচীন রোমান ভবনের ধ্বংস অবশেষগুলো। ওগুলোর গায়ে জড়িয়ে ছিল সমুদ্রের গুল্ম লতা  জলের ওপর আলো পড়ে মাঝে কাজে ওগুলো থেকে হীরের দ্যূতির মতো ঝিলমিলিয়ে উঠছিলনীল স্বচ্ছবস্তুগুলো দেখে মনে হচ্ছিল গালাশিয়া যেন তার মাদার অফ পার্লের গাড়িটাকে সুন্দর ভাবে সাজিয়েছে। বা এটাও বলা যায়  ক্লিওপেট্রা তার জাদু জাহাজে যাওয়ার পথটাকে বোধ হয় এভাবেই দেখতে চেয়েছিলেন। যদিও শীতকাল তবু আবহাওয়ার হাবভাবে মনে হচ্ছিল বসন্তের শুরু হয়েছে । আর তার ফলে  দারুন একটা উষ্ণতার মনোরম অনুভুতি হচ্ছিল ।   এই বেইয়ের সমুদ্রতট ছেড়ে যাওয়ার  ইচ্ছে কোন    ভ্রমণকারীর  আছে বলে মনে হচ্ছিল না।
  ঘুরে ঘুরে দেখলাম এলিশিয়ান প্রান্তর আর অ্যাভেরনাস নামে পরিচিত স্থানগুলোচাক্ষুস করলাম অনেক অনেক ভগ্ন মন্দির, স্নানাগার এবং বিখ্যাত স্থানকিউমাইয়ান সিবিল এর আধো আলো ছায়া ঘেরা গুহাতেও ঢুকেছিলাম।   লাজেরনি মশালটা জ্বালানোর পর তার  লালছে আলোয় নোংরানিচু পথটা আরো আলো পাওয়ার জন্য যেন ছটফট করছিল। আর এই পরিবেশে  উৎসাহ আর উত্তেজনায় আমাদের কৌতূহলের পারদ চড়ছিল। আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম সেই রহস্যময় পথ ধরে। যদিও সাধারণত এরকম পথগুলোতে চলার শেষে যা হয় সেটাই হলো সেই ভ্যাপ্সানো ভিজে ভিজে পথের শেষে কোনও রহস্য ছাড়াই আমরা আবার শুকনো পথ পেয়ে গেলাম পায়ে চলার।
আরো খানিকটা পথ চলার পর আমরা উপস্থিত হলাম একটা বড়, রুক্ষ, অন্ধকার গুহায়ল্যাজেরনি জানালো এটা হলো সিবিল এর গুহা। দেখে বেশ খানিকটা হতাশ হলাম- যদিও তন্ন তন্ন করে   খুঁজে দেখতে ছাড়লাম না এর পাথুরে ফাঁকা দেওয়ালে যদি একটু আধটু চিহ্নও অবশিষ্ট থাকে সেই মহাজাগতিক ভাবনা চিন্তারএকটা দিকে গুহার দেওয়ালের গায়ে দেখা গেলো একটা কাটা অংশ । মনে প্রশ্ন জাগলো, কোথায় যাওয়া যায় ওটা দিয়ে?   জানতে চাইলাম সেটা, ওটার ভেতরে ঢোকা যাওয়া যাবে ? মশালধারী  বুনো ধরনের মানুষটা বললো, ‘কোয়েস্তো পোই, নো। চাইলে একটু উঁকি মেরে দেখতেই পারো।   সামান্য একটু এগিয়েও যেতে পারো।    ওটা কেউ দেখতে যায় না। ’
আমার সঙ্গী বললো, ‘ যা হবে   হোক। আমি একবার চেষ্টা করে দেখবোহয়তো ওটাই আমাদের আসল গুহায় নিয়ে যাবে। কিহে আমি একাই যাবো নাকি তুমি আমার সাথে যাবে?’
আমিতো এক পায়ে খাড়া ছিলাম কিন্তু আমাদের গাইড বারন করলোকণ্ঠে এক অদ্ভুত রহস্যময়তা এনে নেপলস এর আদি ভাষার তান মিশিয়ে সে বলে চললো – যার অনেক কিছুই বুঝতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল আমাদের। তবু মোদ্দা ব্যাপার হলো, ভেতরে গেলে ওপর থেকে নাকি পুরাতন  ছাদ খসে পড়তে পারে। চলার পথটাও খুব সরু। তা ছাড়া মাঝে মাঝেই জল ভর্তি গর্ত আছে। আমরা সেখানে পড়ে ডুবে যেতেও পারি।
আমার সঙ্গী সহসাই ওর কথার মাঝে ওর হাতের মশালটা ছিনিয়ে নিলো আর কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গেল সে ওই খোলা জায়গাটার দিকে।
 পথটা সত্যিই আতঙ্ক জাগাতে সক্ষম। গাইডের কথা মতোই আস্তে আস্তে সরু হতে শুরু করলো  এবং বেশ বুঝতে পারছিলাম ক্রমশ আমরা নেমে যাচ্ছি  নিচের দিকে। সোজা হয়ে হাঁটার উপায় ছিলনা আর। প্রায় হামাগুড়ি দেওয়ার অবস্থা। তবু এগোনো থামালাম না । আরো কিছুটা যাওয়ার পর পৌছালাম একটা অপেক্ষাকৃত চওড়া জায়গায়। মাথার ওপরে ছাদটাও  আগের তুলনায় এখন বেশ খানিকটা ওপরে । আমরা একে অপরকে এরকম একটা জায়গায় পৌছানোর জন্য সবে উৎসাহ দিতে গেছি একটা হাওয়ার দমকায় আমাদের মশাল গেল নিভে। চারদিকে এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার ।
গাইডের সাথে মশালটাকে পুনরায় জ্বালানোর মালমশলা  ছিল কিন্তু আমাদের কাছে  কিছুই নেই। একমাত্র যে পথে এসেছি সে পথে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।   আমরা হাতড়ে হাতড়ে খুঁজেও পেলাম সেই পথটা যেখান দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কেন জানিনা মনে হলো এটা সেই পথটা নয়। আরেকটা পথ । এটাকেও আগের পথটার মতই ব্যবহার করা হয় না আর। কিছুটা চলার পর মনে হলো একটা আবছা আলো যেন ভেসে আছে দূর থেকে। আরো খানিকটা এগিয়ে যেতেই বুঝতে পারলাম আলোটা সোজা আসছে না। আসছে ওপর থেকে। এবার আর সামনে কোন পথ নেই আমাদের উঠতে হলো  একটা ধনুক আকৃতির নিচু খিলানের ওপর। যেখান থেকে তুলনামূলক ভাবে একটা ভালো পথ পাওয়া গেল সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। আলোটাও এখন অনেক বেশী। এভাবেই চলতে চলতে আমরা আবার একটা পথ খুঁজে পেলাম আর একটা গলিপথ। যেখানে আলো আরো বেশী। আর সেটা আমাদের নিয়ে গেল নতুন একটা গলিপথে। একেবারে ঠিক আগেরটার মতোই এটাও।
এই পথটা ধরে এগিয়ে গিয়ে আমরা পৌছালাম একটা বড় গুহার ভেতর যার ছাদটা গোল গম্বুজের মতো। তার ঠিক মাঝখানে একটা ছিদ্র দিয়ে এক স্বর্গীয় আলো প্রবেশ করছে ভেতরে। কিন্তু সেটার অনেকটাই ঢেকে আছে গুহার গায়ে জন্ম নেওয়া এক গুল্মের ডাল পালায়। মনে হচ্ছে আলোটায় যেন একটা ঢাকনা পড়ানো আছে।  সেই আলো আঁধারীতে গুহাটায় এক ধর্মীয় উপাসনা কক্ষের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলেই মনে হচ্ছিল গুহার ভেতরে অনেকটা জায়গাপ্রায় গোলাকার। বসার জন্য একটা পাথর  রাখা আছে । যা একটা প্রমান মাপের সোফার মতো দেখতে। অন্য এক প্রান্তে এমন একটা জিনিষ যা প্রমান দিচ্ছে এখানে কখনো  প্রান ছিল। একটা ছাগলের ধপধপে সাদা কঙ্কাল।  মনে হয় ওটা ওপরের পাহাড়ে চড়তে এসে ওই আলো আসার পথ দিয়ে নিচে পড়ে গিয়েছিল।   সে ঘটনার পর কত যুগ চলে গেছে।   এই ধ্বংসাবশেষ ঢেকে গেছে গাছ পালায় শত শত  বছরের ঋতু পরিবর্তনের নিজস্ব ছন্দে।
এছাড়াও গুহার ভেতরে আর যা যা দেখা যাচ্ছিলো সেগুলো হল প্রচুর শুকনো পাতার মতো কিছুর স্তূপ, ভাঙা গাছের ডাল এবং এক ধরনের সাদা প্রায় স্বচ্ছ ধুলোর মত কিছু। যা দেখে ভারতীয় কচি ভুট্টার সবজেটে সাদা অংশের কথা মনে পড়ে গিয়েছিলএতোক্ষন পথ চলার ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তাই দুজনেই গিয়ে বসলাম সেই পাথরের বেদিটায়  ঠিক তখনই ওপর থেকে ভেসে এলো ভেড়ার গলার বাঁধা থাকে এমন ঘণ্টার শব্দ, সাথেই কোন এক রাখাল বালকের কন্ঠস্বর।
 কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পর আমার সঙ্গী মেঝেতে পড়ে থাকা কয়েকটা পাতা তুলে খানিকক্ষন নেড়েচেড়ে দেখে বললো, ‘ কোনো সন্দেহই নেই যে এটাই সেই সিবিলের গুহা। আর এগুলো সিবিলাইন ভূর্জপত্র’ হাতে নিয়ে দেখলাম, আরে তাইতো, এখানে যা কিছু পড়ে আছে সে সবে কিছু না কিছু লেখা আছে ।   অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম  সেই লেখাগুলো  পরীক্ষা করে দেখতে গিয়ে   কারন সেগুলো বিভিন্ন ভাষায় লেখা। কিছু আমাদের অজানা, কিছু প্রাচীন চ্যাল্ডেই আবার কিছু ইজিপশিয়ান হিয়েরোগ্লাফিযাদের প্রাচীনত্ব পিরামিডের কালের । আর অদ্ভুত যেটা সেটা হলো এদের মধ্যে কিছু আবার আধুনিক সময়ের। তাতে ইংরেজি আছে আবার আছে ইতালিয়ান। ঝাপসা আলোয় খুব অল্পই  ওগুলো পড়া যাচ্ছিলো  তবে যতদূর বুঝেছি এগুলো সব প্রফেসী বা ভবিষ্যৎবানী। বিস্তারিতভাবে বলা আছে বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে যা ঘটে গেছে বা ঘটতে চলেছেএমন সব নামও ওগুলোতে  লেখা আছে যা আমরা চিনি। আধুনিক সময়ের তারিখ দিয়েও অনেক জয় পরাজয় দুশ্চিন্তার কথা বলা হয়েছে। এটা নিশ্চিত ভাবেই সেই সিবিলের গুহা। অবশ্য ভারজিল যে ভাবে বর্ণনা দিয়ে গেছে সেরকম নয় মোটেই।  এই এলাকাটায় আগ্নেওগিরির কারনে হওয়া ভুমিকম্পে অনেক কিছু উল্টে পালটে হয়ে গেছে। আর সেই উলটপালট মোটেই ভালো ফল আনেনি। সময়ের থাবা এর গুরুত্বকে নষ্ট করে দিয়েছে। কোন এক সময়ের দুর্ঘটনা এই গুহার প্রবেশ পথকে করেছে রুদ্ধ। হয়তো এই পাতাগুলো ভালো করে পড়ে দেখলে কি ছিল সেই দুর্ঘটনার কারন সেটাও হয়তো জানা যাবে। যত তাড়াতাড়ি পারলাম  যে ভূর্জপত্রগুলোর লেখার ভাষা আমাদের চেনা সেগুলো কুড়িয়ে নিলাম। তারপর বিদায় জানালাম  রহস্যময় সিবিলের গুহাকে এবং অনেক গলিপথ  গোলক ধাঁধা পার হয়ে বেরিয়ে এলাম আমাদের চেনা পৃথিবীতে । আর দেখাও পেয়ে গেলাম সেই গাইডের ।
এরপর যতদিন নেপলস এ ছিলাম আমরা অনেকবার ওই গুহায় গিয়েছি এবং সংগ্রহ করে এনেছি আরো অনেক অনেক লেখনী।   নিজস্ব  কাজের ফাঁকে ফাঁকে    শুরু করে দিয়েছিলাম ওই সমস্ত পবিত্র লেখার মর্মোদ্ধার করা। আর সেই কাজ করতে করতে আমি কখনো অবাক হয়েছি, কখনো চমকে গিয়েছি আবার কখনো দুঃখ পেয়েছি মানব চরিত্রের নানান দিকের সন্ধান পেয়ে। যে কারনে একাজ করতে গিয়ে আমি কখনোই একাকীত্ব অনুভব করিনি।  সময় বয়ে গেছে।   বেছে বেছে আনা সেই সব লেখনীর অর্থ উদ্ধার করতে করতে আমার একান্ত ব্যক্তিগত অনুভুতিগুলো দুমড়ে মুচড়ে কিভাবে যেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছে –
দাই মি টেনেরে ফ্রন্ডি আলত্রো লাভোরো
ক্রেদিয়া মস্ত্রেত; এ কুয়াল ফেরো পিয়ানেতা
নে’ এনভিদিও ইন সিমি, ও মিও নবিল তেসোরো?
[আমার নিজের কথা যদি বলি তাহলে আমি আরো কাজ করতে চাই
বিশ্বাস করাই কঠিন এই গ্রহের প্রকৃতি কি রুক্ষ!
আমি জানি না আমার কি হবে অথবা আমার এই সব অমূল্য সম্পদের?
অনুবাদকের কথা- ইতালিয়ান ভাষায় দেওয়া ওই তিন লাইনের কবিতাটির,  ইংরেজি অনুবাদ মূল লেখায় ছিল না, অনুবাদ আমি নিজের মতো করে করলাম। যেরকম বলেছেন এই কাহিনীর কথক এর পরের  অংশে তার  রচনাটির বিষয়ে ।  এখানে আরো একটি  তথ্য জানিয়ে রাখি।  প্রাচীন গ্রীসে যে মহিলারা  যে ভবিষ্যৎবা্নী লিখে দিতেন তাদের বলা হতো সিবিল। ]
এই সব সিবিলাইন ভূর্জপত্রগুলো থেকে যে  কাহিনী আমি আবিষ্কার   করেছি তা পাঠক পাঠিকাদের জন্য তুলে ধরছিবুঝতেই পারছেন খাপছাড়াভাবে পাওয়া তথ্যর ভিত্তিতে এ লেখা প্রস্তুত হয়েছে । তারজন্য একটু লেখক সুলভ স্বাধীনতা নিয়ে তাদের একত্র করেছি মনের মাধুরী মিশিয়ে। যাতে একটা সামগ্রিক কাহিনীর রুপ পায়অবশ্য মূল কাহিনীকে আমি একেবারে এক রেখে দিয়েছি যেমনটা ওই সব কবিতাগুলোর ভেতর লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন কোনও এক কিউমিয়ান সুন্দরী। যা তিনি জানতে পেরেছিলেন স্বর্গ থেকে প্রাপ্ত বিশেষ অনুমান ক্ষমতার সাহায্যে।
মাঝে মাঝে আমি কবিতাগুলোকে অনুবাদ করতে গিয়ে থমকে গেছি।  এতটাই অস্পষ্ট এবং দুর্বোধ্য সেগুলোআমি নিশ্চিত সেই প্রাচীনা সুন্দরী আমার কাছে ঋণী হয়েছেন এই নতুন রুপে লেখাটিকে সাজানোর জন্য। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম হয়েছে বলা যেতে পারে কোন এক বিখ্যাত চিত্র শিল্পীর আঁকা একটি ছবির কিছু কিছু অংশ আর এক বিখ্যাত চিত্রশিল্পীকে দিয়ে যদি পুনঃ নির্মাণ করতে বলা হয় তাহলে সেটা একটা নতুন রুপ পরিগ্রহ করে। মূল ছবি এক থাকলেও তাতে মিশে যায় পরবর্তী শিল্পীর মানসিকতা। অনেক ক্ষেত্রেই প্রায় ঝাপসা হয়ে আসা কিউমিয়ান সিবিলের লেখনী আমাকে গড়ে নিতে হয়েছে নতুন করে।   এরজন্য আমি একটাই কৈফিয়ত দেবো আমার পাঠক পাঠিকাদের । ওই কাজটা না করলে, আপনাদের দুর্বোধ্য আর অদ্ভুত বলেই মনে হত এ কাহিনী  । সাথে সাথে উৎসাহও পেতেন না পড়ার।
আমার একাকী পরিশ্রম আমাকে নিয়ে গিয়েছিল এমন এক জগতে , যে জগত তার সহৃদয় মুখটা আমার দিক থেকে সরিয়ে রেখেছিল। অথচ ঝকঝক করছিল এক কল্পনাশক্তির আলোকে। কি জানতে চাইছেন? তবুও কিভাবে আমি  ওই লেখনীর মর্ম বুঝলাম? এটাই আমাদের চরিত্রের বলুন বা প্রকৃতির এক অজ্ঞেয় রহস্য। যে রহস্য আমাকে তার নিয়ন্ত্রনের কঠিন পাশে জড়িয়ে ধরে নিয়েছিল, যেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনও পথ আমার সামনে খোলা ছিল না। আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি কাহিনী বয়ে চলার সাথে সাথে আমি যেন নিজের সত্তার নড়াচড়া করার ক্ষমতটাই হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি অবসাদগ্রস্থ হয়েছিলাম বা বলতে পারেন এক চরম বেদনা অনুভব করছিলাম ওই সব কবিতাগুলো পড়তে পড়তে। আর তাদেরকেই লিখেছি এখনকার পাঠযোগ্য ভাষায় বিন্দুমাত্র অদলবদল না ঘটিয়ে । আর কি অদ্ভুত এই মানব প্রকৃতি! সেই চরম বেদনাকে আমি দু হাত বাড়িয়ে গ্রহন করেছি নিজের ভেতর । সেই কল্পনা, সেই  ভূমিকম্প আর বিক্ষুব্ধতার চিত্রকল্প বা আরো বিচ্ছিরী রকমের ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ ক্লেদাক্ত মানবিক  আন্তরিক চাহিদা আমার সমস্ত নিজস্ব দুঃখকে বিলীয়মান করে দিয়েছিল। আমায় যেন পড়িয়ে দিয়েছিল এক অলীক পোশাক, যাকে ভেদ করার ক্ষমতা কোন জাগতিক কষ্টের তীক্ষ্ণ ফলার নেই ।

আমি জানিনা এই দীর্ঘ কৈফিয়ত লেখার কোন দরকার ছিল কিনা। জীর্ণ ভঙ্গুর ওই সব সিবিল পাতায় লেখা   কাহিনীকে আমি কতটা ঠিকঠাক আপনাদের সামনে বোধগম্য ভাবে পেশ করতে পারলাম আমার অনুবাদ এবং আত্মস্থ করার ক্ষমতায়  এবার সেটা আপনারাই বিচার করুন।

** অবতারনা সমাপ্ত**
শীঘ্র আসছে মূল পর্ব - প্রথম পরিচ্ছেদ

No comments:

Post a Comment