BBC চ্যানেলের একটি জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞান
ফ্যান্টাসী সিরিয়াল “DOCTOR WHO” ... তারই একটি গল্প “হন্টেড” ... লেখক - জোসেফ লিডস্টার ... অবলম্বনে
আমার
লেখা গল্প
ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম। বেশ ঠান্ডা লাগছিল।
চারদিক অন্ধকার এবং আমার সত্যিই দারুন ঠান্ডা লাগছিলো।
আমি কোথায় ? এটা কোন জায়গা?
সিলিং থেকে একটা বাল্ব ঝুলছিল।
চারদিকে কেমন একটা স্যাঁতসেঁতে ভ্যাপসা গন্ধ। মনে হচ্ছে আমি মাটির তলায় কোনো জায়গায়
আছি। পুরানো ইটের দেয়াল চারপাশে এবং কোথাও কোন জানালাও নেই । অতএব এটা নিশ্চিত ভাবেই
ভূগর্ভস্থ কোনও ঘর। কিন্তু
কোন জায়গা এটা?
একটু একটু করে আমার সব মনে পড়ে গেল। এসবের শুরু
হয়েছিল অতিরিক্ত সাহস দেখানোর ইচ্ছে
থেকে। অতিরিক্ত সাহস !
নিজেকে সাহসী
দেখানর ইচ্ছেটা শুরু হয়েছিল বছর কয়েক আগে যখন আমি খুব ছোটো ছিলাম। আর ভুল
করে একবার মিসেস লতিফকে "মম"
বলে ডেকে ফেলেছিলাম সবার সামনে। যা শুনে সবাই
হাসতে শুরু করেছিল । ড্যান হিনচিলফ, আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু, সেও
হেসেছিল । ক্লাসের অন্যরা ড্যানকে পছন্দ করতো কিন্তু আমাকে
পাত্তা দিতো না। আমার এখন ১৩ বছর
বয়েস। নাম রস ম্যাকনামারা। সবাই বলে
আমি একটু অদ্ভুত প্রকৃতির । আমি বুদ্ধিমান , যে কারনে আমার টিচাররা আমাকে পছন্দ করেন ।
কিন্তু কোনও সমবয়সী আমাকে পছন্দ করে না।
আর সেটাই অন্যতম কারন এই স্কুল বেসমেন্টে আসার। ড্যানের কারনেই আমি বেসমেন্টে
নেমেছিলাম। ভুতটাকে খুঁজে বার করার জন্য। বেসমেন্টে এসেছিলাম ঠিকই আছে কিন্তু ...
আমি এখনো এখানে কেন? কি এমন ঘটেছে?
মাঝে
মাঝে মায়ের বয়ফ্রেন্ড টেরি ঘুম থেকে ঊঠে মনে করতে পারেন না আগের দিন রাতে তিনি ঠিক
কি কি করেছেন। মম বলেছে এর কারণ নাকি বেশী মদ্যপান । আর ঠিক এই কারনেই আমি মনে করি প্রত্যেকের উচিত নিজে আসলে কি করছে বা না করছে সেদিকে একটু
মনোযোগ দেওয়া।
কিন্তু আমি এখনো বেসমেন্টে কি
করছি? আমাকে কি ভুতে আক্রমণ করেছিল ?
ভূত
কি মানুষকে আক্রমণ করে? না! ভূত বলে
বাস্তবে কিছু নেই । ওই যারা সাত আট বছরের
বাচ্চা তারা ভুতে বিশ্বাস করে। আমি ভুতে
বিশ্বাস করি না । কারণ আমি এমন কিছু বিশ্বাস করি না যা বিজ্ঞান সম্মতভাবে
প্রমাণিত নয় । সে তার জন্যেই আমি
এখানে এসেছি। সত্যি বলছি, এটা করে আমি কিছু প্রমান করতে চাইনি বা এটাও চাইনি যে এরপর থেকে ওরা আমাকে পাত্তা দিক।
ভূত বাস্তব নয় এবং আমি সেটা প্রমাণ
করতেই এখানে এসেছি।
কিন্তু বুঝতেই পারছি না আমি এখনও
এখানে কেন?
উঠে এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে । মনে একটা ভয় জাগছিল
ড্যানরা আমাকে এখানে ইচ্ছে করে
তালা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়নি তো? এরকম দুষ্টুমি ওরা প্রায়ই করে থাকে। দরজার হাতলটা ধরে টান দিলাম ...... আরে এটাতো খোলাই আছে দেখছি! দ্রুত বেসমেন্টটা থেকে বেরিয়ে এলাম এবং
থমকে দাঁড়ালাম। কি হলো ওটা ? আমার পিছনেই কিসের একটা শব্দ হলো না ... ঠিক যেন
কেউ কিছু আঁচড়ালো ? পুরনো ইটের
দেওয়ালে কিছু ঘষটে গেল যেন!
ছুঁচো বা ইঁদুর হবে বোধ হয়। ভুত নয়
মোটেই। ভুত হতেই পারে না।
সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলাম ওপরে , করিডোরে।
আলোগুলো সব জ্বলছে । কিন্তু । কাউকে দেখতে
পেলাম না আশেপাশে। তারপর এটাও বুঝতে
পারলাম আশেপাশে কোনো শব্দও শোনা যাচ্ছে না । এটা যথেষ্টই
অদ্ভুত একটা ব্যাপার। একটি স্কুল এরকম অদ্ভুত রকমের চুপচাপ! পুরো করিডোরটা ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে সাজানো হয়েছে। এই সাজানো ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগে। নানান রকম
জিনিষের সাথে সাথেই ফাদার ক্রিসমাস আর ক্রিসমাস গাছের যত উৎকট ছবি ঝুলিয়েছে । সবই ঠিক
আছে কিন্তু কোথাও কোন শব্দ নেই। কেউ
হাসছে না! কেউ ছোটা ছুটি করছে না! কারো চিৎকার নেই কোথাও! ... শৌচাগার থেকেও ভেসে আসছে না কোন
শব্দ! বুঝতে পেরেছি, স্কুল ছুটি হয়ে
গেছে। দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে
দেখলাম ... ৮:৪৭ । বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অন্ধকার হয়ে
গেছে তার মানে ওটা রাত ৮:৪৭ ।
আমি স্কুলের ভেতরে আটকে থেকে গেছি। সবাই
ক্রিসমাস ছুটির জন্য বাড়ি চলে গেছে আর আমি একা স্কুলের ভেতর ! আমার ওই কি যেন বলে ... হ্যাঁ , প্যানিক হওয়া
উচিত তাই না? কিন্তু আমি ষ্টুপিড নই।
আমি জানি স্কুল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দরজাটা কোথায়। চারদিকের নিস্তব্ধতাটা
একটা গা ছমছমে ধরনের তবে বেশ ভালোই লাগছে । কেন জানি না মনে হচ্ছে অন্য ছেলেপিলেদের বাদ
দিয়েই স্কুলটা একটা ঠিকঠাক জায়গা আমার
জন্য।
আপাতত আমাকে
বাড়ি যেতে হবে। মমকে সাহায্য করতে হবে
টেরির জন্য উপহার কেনার ব্যাপারে। নীরব স্কুলের শব্দহীন করিডোর ধরে আমি
শুরু করলাম হাঁটা ।
ট্যাক...ট্যাক...ট্যাক । আমার পায়ের শব্দের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছিলো বেশ জোরে
জোরেই। মাঝে মাঝে আমি থমকে গিয়ে সেই শব্দটা শুনছিলাম। বেশ মজার ব্যাপার।
ট্যাক ... ট্যাক ... ট্যাক ...
ট্যাক...
কিরকম হলো!!
শেষ
শব্দটাতো আমার জুতোর নয়!
আমি ঝট করে দাঁড়িয়ে গেলাম। তারপর একপা এগোলাম।
ট্যাক...
অপেক্ষা করলাম...
ট্যাক...
না এটা আমার জুতোর শব্দ নয় ! অন্য কেউ এখানে আছে!
ট্যাক ... ট্যাক ... ট্যাক ...
ট্যাক...
কেউ একজন এখানে আছেনই । আর তিনি আমার সাথে মজা করছেন। এটা মোটেই পছন্দ হচ্ছে না আমার । রেগে যেওনা রস! কেন রেগে যাচ্ছো রস? মনে মনে এটা বললাম রাগটা সামলানোর জন্য। আমি না রেগে গেলে ওরা ক্ষেপে যায় । বার বার চেষ্টা করে
কিভাবে আমাকে রাগানো যায়। আবার রেগে
গিয়ে কিছু বলি সেটাও কেউ পছন্দ করে না। সবাই আমাকে ঘৃণা করে। এরকম মানসিকতা যাদের তাদের বন্ধু
হিসাবে আমার কোনও দরকার নেই । বুঝতেই পারছি এটা ভুতের কারবার নয় । বাজি ধরে বলতে
পারি , এটা ড্যান করছে।
প্রধান দরজার কাছে পৌঁছে
কাচের ভেতর দিয়ে বাইরে
তাকালাম। অন্ধকার এবং কিছুই
দেখতে পাওয়া যাচ্ছেনা । দরজাটায়
ধাক্কা দিলাম। জানি যদিও খুলবে না । সেটাই স্বাভাবিক। স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ক্রিসমাসের
ছুটির দিনগুলোর জন্য । আমার কাছে ফোনটাও নেই। টেরি হারিয়ে ফেলেছেন ওটা। আমি মোটেই ভয় পাবো না...প্যানিক করবো না! যদিও শুনতে পাচ্ছি আমার পেছন থেকে ওই শব্দ ভেসে
আসছে ... ট্যাক ... ট্যাক
... ট্যাক ... ! ক্রমশই এগিয়ে আসছে ওটা । আমি মোটেই ভয় পাচ্ছি না । আমি কি
বাচ্চা নাকি। আমার ১৩ বছর বয়েস। আমি মোটেই ভয় পাচ্ছি না ।
কাছের বড় জানলাটার কাছে গেলাম। ওটাকেও সাজানো
হয়েছে, কাগজের তুষার কুচি
দিয়ে। কি করে ওটার
পাল্লা খোলা যায় সেটা খুঁজে দেখলাম। অদ্ভুত ব্যাপার ! কিছুই খুঁজে
পেলাম না। জোরে একটা ধাক্কা দিলাম । ওটা খুললো না। দরজাটাও খুলতে পারা
যাবেনা । এই জানলাটাও খোলার কোনও উপায় নেই।
না না আমি ভয় পাচ্ছি না! আমি এখানে যতগুলো জানলা আছে সবগুলো খোলার চেষ্টা করবো।
ট্যাক ... ট্যাক ... ট্যাক ...
শব্দটা অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে এখন । তার সাথেই শোনা যাচ্ছে আর এখন একটি অন্যরকম শব্দও হচ্ছে ওরই সাথে।
ছিক... ছিক... ছিক ...
করিডোরের নিচের দিকে তাকালাম... ক্লাস ঘরগুলোর দিকে তাকালাম ...
সোজা তাকালাম সেই দরজাটার দিকেও যেটা দিয়ে আমি বেসমেন্ট থেকে বেরিয়ে
এসেছি। ওকি! একটা একটা করে আলো নিভে যাচ্ছে কেন... একটা একটা
করে...
ছিক... ছিক... ছিক ...
পায়ের শব্দটাও এগিয়ে আসছে ...
ট্যাক... ছিক... ট্যাক... ছিক
...ট্যাক ... ছি--
সহসাই একটা গুম গুম শব্দ ধ্বনিত হলো চারপাশ কাঁপিয়ে... একটা হাওয়ার স্রোত যেন
ধেয়ে গেল চারপাশ দিয়ে ... কাগজের যত তুষারকনা ছিটকে গেল চারদিকে... ...
ম্যাজিকের মতো সেক্রেটারির অফিসের
সামনে একটা বড় নীল বাক্সের আবির্ভাব হলো। একটা দরজা খুলে
গেল ওটার গায়ে ... খোলা
উজ্জ্বল আলোতে ধাঁধিয়ে গেল চোখ। একজন বয়স্ক মানুষকে দেখতে পেলাম দরজাটার
মুখে । এগিয়ে এলেন । কিছুটা রাগী
রাগী চেহারা। আমার দিকে তাকিয়ে অবশ্য
হাসলেন ।
"হ্যালো!, আমি ডক্টর।"
তারপর অন্ধকারে করিডোরটা একবার দেখে
নিয়ে বড় বড় চোখে আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, “ভাগো!”
আমরা ছুটছিলাম । ডক্টর
বলে নিজের পরিচয় দিলো যে সে আর আমি
। আমরা পালাচ্ছিলাম ভুতটার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য।
ডক্টর বললেন, "ভুত বলে কোন জিনিস
নেই"। আমি তাকে বললাম যে আমিও সেটাই মনে করি কিন্তু ওটা ভুত ছাড়া আর কি হতে
পারে। আলোগুলো এক এক করে নিভেই চলেছে আর
তার সাথে ট্যাক... ট্যাক... ট্যাক... শব্দ করে
পায়ের আওয়াজটা আমাদের অনুসরণ করছে। পাশেই একটা ক্লাস ঘর খোলা
দেখে আমরা সেটার ভেতর ঢুকে পড়লাম এবং দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।
"এটাতো অন্য কিছুও হতে পারে। তোমার
কেন মনে হচ্ছে যে ওটা একটা ভূত?
" উনি আমাকে কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই আমি
বলতে শুরু করলাম।
"আমাদের স্কুলটা একটা ভুতুড়ে স্কুল ।
মানে সবটা না , শুধু বেসমেন্টটা । এটাই সবাই বলে। " উনি আমার দিকে না তাকিয়ে এক মনে দরজাটা লক্ষ্য করছিলেন। সেটা দেখে আমি থেমে
গেলাম। উনি হাত নেড়ে ইশারা করলেন বলার জন্য।
" একবার নাকি প্রায় একশ বছর আগে এখানে একটা বাচ্চা ছেলে স্কুলের ভেতর
আটকে থেকে যায়। কেউ জানতে পারেনি যে বাচ্চাটা এখানে আটকে গেছে। ফলে সে বেচারা
এখানেই মারা যায়। ঠান্ডায় মারা যায় নাকি না খেতে পেয়ে মারা যায় তা জানি না। এই স্কুলের যারা সিনিয়র স্টুডেন্ট তারা
জুনিয়রদের এই গল্প শোনায়। বলে সে নাকি সবসময়
ঘুরেঘুরে বেড়ায়। সব সময় এখান থেকে বার
হওয়ার একটা পথ খোঁজে। "
"যত্তসব," ডক্টর নাক
সিঁটকে বললেন। “কোন প্রমান পেয়েছ
কি এসবের ? কেউ
দেখেছে ওকে ? তুমি দেখেছ? এই যে, তোমার নামটা কি বলোতো ?"
বললাম, আমার নাম রস
ম্যাকনামারা এবং আমার বয়স ১৩ ।
"ওয়েল, রস ম্যাকনামারা, তুমি কি নিজের চোখে দেখছো ভুতটাকে ?"
"না, কিন্তু ... ওই
পায়ের ট্যাক ট্যাক শব্দ ...আলোগুলোর এক এক করে নিভে যাওয়া এবং- " হঠাৎ আমি
থেমে গেলাম । " আচ্ছা আলোগুলো
জ্বলছিল কেন? স্কুল যখন বন্ধ হয়ে গেছে এবং কেউ এখানে নেই, তখন তো এটা হওয়া উচিত
না। এরকম করলে আমরা
যে এনভায়রন ফ্রেন্ডলি তার প্রমান হয় না। অথচ আমাদের স্কুল এ বিষয়ে পুরস্কার জিতেছে।"
ডাক্তার আমার দিকে অদ্ভুত চাহনিতে তাকালেন। যার অর্থ হয় একটাই, আমি এমন
কিছু বলেছি যা অতি বুদ্ধিমানের মতো অথবা
বোকার হদ্দের মতো। আমার দিকে এগিয়ে এসে
উনি হাঁটু গেড়ে বসে আমার চোখের দিকে সরাসরি
তাকালেন।
"না, যা ভেবেছিলাম তা
না ..." বিড় বিড় করে বললেন হাসার আগে।
"দারুন বলেছ, রস । তুমি মোটেই বোকা হাঁদা নও। "
আমি হতভম্বের মতো তার দিকে তাকালাম, আর উনি আলোগুলোর দিকে হাতটা নাড়লেন। ক্লাসঘরটা ভালো করে
দেখলেন । বিভিন্ন
রঙ্গিন কাগজের জিনিষ দিয়ে সাজানো হয়েছে
ঘরটাকে। জিজ্ঞাসা করলেনন, "এটা কি ক্রিসমাসের সময়?"
আমি অবাক হয়ে হাসলাম। কি আজব মানুষ রে
বাবা! সবাই জানে এখন ক্রিসমাসের সময়।
উনি চাপা গলায় বললেন, "আমার ক্রিসমাস পছন্দ হয় না।
যাই হোক । তোমার কথাই ঠিক। ওটা কোনও ভূত নয়। আমরা দুজনেই এবিষয়ে একমত । কি তাইতো ?"
সত্যি বলতে এ বিষয়ে আমি মোটেই এক মত নই তবু কেমন যেন মনে হলো তর্ক না করাই এক্ষেত্রে
ভালো।
উনি একটা আলোর তলায় গিয়ে দাঁড়ালেন
। ওনার মুখের চামড়া চাঁদের জমির মতো এবড়োখেবড়ো। পরনে ভেলভেটের জ্যাকেট এবং
কিরকম একটা অদ্ভুত টাইপের যেন উনি। বলে
বোঝানো মুস্কিল ঠিক কেমন সেটা। কিছু একটা
বৈসাদৃশ্য আছেই ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।
উনি চারদিকটা দেখছিলেন।
"এলিয়েনও হতে পারে," বললেন
কাঁধ নাচিয়ে। "অথবা তোমার কোন
বন্ধু তোমার সাথে মজা করছে।”
একটু থেমে উনি আমার দিকে তাকালেন।
"এলিয়েন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি,"
আমি
শান্তভাবে বললাম ।
উনি হাসলেন কিন্তু ও অনেকটাই আমার মমের মতো দুঃখের হাসি।
উনি বুঝতে পেরেছেন আসলে আমি কি বলতে চেয়েছি।
উনি হাসলেন । "খারাপ না কি বলো? বিরক্তিকর বন্ধু অথবা উত্তেজনাপূর্ণ এলিয়েন কিছু
একটা তো বটেই। কি বলো? কিন্তু সে যেই
হোক বা যাই হোক, সে কি করতে চায়,
রস
? কি চায় সে?
"
আমি কেবলমাত্র একটা বোকার মতো হাসি ফিরিয়ে দিলাম ওনাকে। ।
আর সাথে সাথেই ওনার মাথার অপরের আলোটা দুম করে ফেটে গেল। গোটা ঘরে নেমে এলো মিশকালো ঘুটঘুটে
অন্ধকার। খুব চেষ্টা করেও নিজেকে বাচ্চা
ছেলের মানসিকতা থেকে বাঁচাতে পারলাম না। এক ছুটে দৌড়ে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার ভয় করছিল! এক জোড়া হাত আমাকে আলিঙ্গন করলো । সেটার মালিক ডক্টর। আমার কেন জানিনা মনে হ লো উনিও ভয় পেয়েছেন।
"আমি বেশ ভালোই আছি,"
বিড়বিড়
করে বললেন। "কার কি দরকার জানিয়ে দিলে ভালো হয়?"
এমন সময়, ক্লাস রুমের দরজার উপর সজোরে কেউ আঘাত করলো । ধড়াম!!! বোঝাই গেল খুব বড়সড় চেহারার
কিছু একটা আছে অপাশে।
ডক্টর কর্কশ স্বরে বললেন, "ভেতরে আসার এতই
ইচ্ছে যখন এসো , কি আর করা যাবে!
দেখি কি রকম দেখতে তোমাকে !"
কিছুক্ষন নীরবতার পর দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে গেল। মিশকালো অন্ধকারে অবশ্য
শুধু শব্দটাই শুনতে পেলাম। দেখতে কিছুই পেলাম না।
কিছুই নজরে আসছে না । দমবন্ধ করে অপেক্ষা করছি। মনে হয় ডক্টরও একই কাজ করছেন। কারণ আমি তার কাছ থেকেও কোনও শব্দ শুনতে পাচ্ছি না ...
চরম নীরবতা ......
দরজার চারপাশে
লাগানো টুনি লাইটের একটা সারি সহসাই জ্বলে
উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে নিভেও গেলো। কিন্তু সেই সামান্য আলোর ঝলকের মাঝেই আমরা
দুজনেই দেখেছি ... কিছু একটা...….
একটা
ভূত!
আমরা দরজার কাছ থেকে পিছিয়ে গেলাম। আলোটা আবার জ্বলে
উঠলো। কিন্তু অবয়বটা আর ওখানে ছিল না । তার মানে ওটা এখন এই ঘরের
মধ্যে ঢুকে পড়েছে , আছে
আমাদের আশেপাশেই কোথাও ! এবার কিছুটা দূরে
টিচারের টেবিলের উপর রাখা একটি ফাদার ক্রিসমাস খেলনার আলো জ্বলে উঠলো। বাজতে শুরু
করলো গান । আমরা ছিটকে সরে এলাম ওটার কাছ
থেকে।
আমাদের ঠিক পিছনেই আবার
শোনা গেল, ট্যাক ... ট্যাক
...ট্যাক... সাথে সাথেই দেওয়ালে ঝোলানো
হোয়াইটবোর্ডটি আমাদের পায়ের কাছে খসে পড়লো এবং ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে
গেল। আমি চিত্কার করে ডক্টরকে ছেড়ে
মারলাম দৌড়। সোজা দরজার দিকে। ওদিকে টুনি
লাইটগুলো নেভাজ্বলা করেই চলেছে আর ফাদার ক্রিসমাসের পুতুল তাকিয়ে আছে আমার
দিকে। ক্লাসরুমের দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে আমি ঘরের
ভেতরের দিকে তাকালাম।
"ডক্টর!" আমি অন্ধকার ঘরের দিকে তাকিয়ে ডাকলাম।
উত্তর এলো, "একটু অপেক্ষা
করো। কিছু একটা করার চেষ্টা করছি।"
আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার
নেই আমার। অগত্যা দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে থাকলাম।
ক্লাসরুমের ভেতরেতো কিছুই দেখা
যাচ্ছিলো না, যেকারনে করিডোরের দিকে ফিরে তাকালাম। ওখানেও
অন্ধকার তবে ... কিছুটা দূরে কিসের একটা আলো আবার
দেখা যাচ্ছে। বেসমেন্ট এর দরজাটার
কাছেই । চোখ কুঁচকে মন দিয়ে কিছু সেখানে আছে কিনা দেখার চেষ্টা করলাম ।
আর ঠিক সেই মুহূর্তে অনুভব করলাম
আমার ঘাড়ের পিছনে... একটা আঙ্গুলের
স্পর্শ। বরফের মত ঠান্ডা
আঙুল।
"ড ক্ট র ..." আমি দম আটকানো স্বরে বললাম।
"আমি খুঁজে পেয়েছি রস, একটু ..." উনি উত্তর দিলেন কিন্তু ... ওর গলাতো শোনা গেল ক্লাসরুমের ভেতর থেকে! বেশ খানিকটা দূরে... ওই মিশকালো অন্ধকারের ভেতর থেকে ... তারমানে
...
ওনার আঙুল আমাকে স্পর্শ
করেনি...
সহসাই এক আশ্চর্যজনক উজ্জ্বল নীল আলোর বন্যায় যেন ভেসে গেল চারপাশ। অনেক কষ্টে ঘাড় ঘোরালাম পেছন দিকটা দেখার
জন্য। কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে!! একটি ছেলে...ঝাপসা মুখাবয়ব... তাকিয়ে
আছে আমার দিকে!! একটা অশরীরী ...ভুত... আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে... সেহাত আমার কাঁধের ওপর
রাখা। অশরীরী অবয়বটার ভেতর দিয়ে দেখতে
পাচ্ছিলাম ডক্টরকে। উঁচু করে ধরে
আছেন একটি সরু লম্বা অদ্ভুত দর্শন
ধাতব যন্ত্র । উজ্জ্বল নীল আলোর বিচ্ছুরণ ওটা থেকেই হচ্ছে। ডক্টর
হাসছেন।
"এটা একদম ঠিকঠাক কাজ করছে!"
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম । সেই
ভুতটার ভেতরে দিয়েই।
"নতুন সোনিক স্ক্রু ড্রাইভার এটা,"
ডক্টর
জানালেন। "আর দাঁড়িয়ে থেকো না! ভাগো ! "
দেখলাম উনি আমার দিকেই ছুটে আসছেন। একই সাথে দেখলাম অশরীরীও তাকিয়ে আছে আমার
দিকে। এক ঝটকায় ওর হাতটা কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে লাগালাম ছুট!
ছুটে চললাম যে করিডোরের দিক থেকে
এখানে এসেছিলাম সেদিকেই। কাগজের তুষারকনাগুলো আমাদের ছুটে চলার ফলে হাওয়ার
ধাক্কা লেগে ছিটকে যাচ্ছে এদিকে ওদিকে।
পেছন থেকে শুনতে পাচ্ছি ...ট্যাক...ট্যাক ... ট্যাক... শব্দ তুলে ধেয়ে আসছে
সেও! ডাক্তার তার যন্ত্রটাকে ওপরের দিকে
তুলে ধরলেন - তার সোনিক স্ক্রু ড্রাইভার – ঝুলতে থাকা বাল্বগুলো দু একবার চিড়িক চিড়িক
করে জ্বলেই আবার অন্ধকারে হারিয়ে গেল।
ছিক...ছিক ... ছিক... আমরা ছুটেই চলেছি । সামনের দিকে আলোটাই আমাদের লক্ষ্য।
"আমরা আবার বেসমেন্টেই ফিরে যাচ্ছি!" চিৎকার করে বললাম।
ডক্টর ব্যঙ্গের স্বরে বললেন, " হ্যাঁ যেখানে এর
শুরু হয়েছিল।"
" ওটাও তো মনে হচ্ছে সেটাই চাইছে যে আমরা ওখানে ফিরে যাই! "
ছুটতে ছুটতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, "বোঝাই
যাচ্ছে তোমার বুদ্ধি আছে রস।" মনে হলো ওনার কিছু একটা মনে পড়েছে, হাসি মিলিয়ে গেল মুখ থেকে। তারপর চেঁচিয়ে বললেন, "এসো আমার সাথে !"
ছুটতে ছুটতেই আমি কয়েকবার ফিরে
তাকিয়েছি , দেখতে পেয়েছি
সেই অশরীরী পিছু ছাড়েনি। দৃষ্টি একভাবে
আমার দিকে নিবদ্ধ। মুখটা আমার কেমন যেন চেনা চেনা
মনে হলো। তা কি করে হতে পারে!
ডক্টর হেঁকে বললেন, "বারবার ওটার
দিকে তাকিয়ো না! বরং আমায় বলো দেখি ওই
বেসমেন্টে তুমি কি করতে গিয়েছিলে?”
ছুটতে ছুটতেই আমি ওনাকে খুলে বললাম
সবকিছু। সব, সব- বন্ধুদের
কাছে পাত্তা না পাওয়া থেকে শুরু করে ড্যানের দুষ্টমির কথাও । সত্যিটা
বলেই ফেললাম, "আমি শুধু চেয়েছিলাম ... ওদের ইম্প্রেস করতে। চেয়েছিলাম ওরাও আমাকে
ওদের মতোই সম্মান দিক, পছন্দ করুক!
"
"নাহ! এবার কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি একটা তস্য বোকা," উনি বললেন।
আমরা বেসমেন্টের দরজার কাছে পৌঁছালাম এবং দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। এখানেও অন্ধকার
তবে ছাদ থেকে ঝুলন্ত একটা বাল্ব এখানে জ্বলছে। ডক্টর ওটার দিকে
তাকালেন । "আরে বাব্বা এতো দেখছি
একশো বছরের পুরনো একটা জিনিষ । সেই সময়েই
শেষের বছরগুলোয় এগুলো বানানো হতো । " আমি
বাল্বটার দিকে তাকালাম। ইতিহাসের
বিশেষ জ্ঞান আমার নেই কিন্তু ...
"১৯০০ সালে কি এরকম আলোর বাল্ব
ছিল ?!"
ডক্টর থমকে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, " তারমানে কি বলতে
চাইছো তুমি?"
" না মানে , আপনি ... আপনি বললেন যে এই বাল্বটা একশ বছরেরও বেশি
বয়সী।"
আমার আবার সেই ঠান্ডার অনুভুতিটা হলো । ভূতটা মনে হচ্ছে এখানেও …
"রস," ডক্টর জিজ্ঞেস
করলেন, "এটা কোন সাল?"
"২০১৫," আমি উত্তর
দিলাম।
" এটা মোটেই ২০১৫ নয় এটা ২১১৫ ।"
সেই ছেলেটি এক ক্রিসমাসের দিনে আটকে পড়েছিল স্কুলের ভেতর। অনেক অনেক খুঁজেছিল পথ বের হয়ে আসার। ট্যাক... ট্যাক... ট্যাক... ছিক...ছিক... ছিক... এই জন্যেই ওই মুখটা অত
চেনা চেনা মনে হয়েছিল।
" তারমানে ...আমি ... আমিই ওই ভূতটা?" আমি ফিস্ ফিস্ করে বললাম। "আমি মরে গেছি?"
অনন্তকালের নীরবতার মত মনে হচ্ছিল সব কিছু। মনে পড়ছিল কিভাবে আমি
জানলা খোলার কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না । আমি কোন জানলাই খুলতে পারছিলাম না। আলো কেন
জ্বলছিল এবার বুঝতে পারছি ... ওরা আসলে আমার অস্তিত্ব বুঝতে পারছিল... এবার আমিও
বুঝতে পারছি ... আমি ভবিষ্যতে চলে এসেছি ... এটা ২১১৫ সাল। আমি কবেই মরে গেছি ... আমি ভুত।
"ওহ, বোকার মতো কথা বো্লোনা রস ,"
ডক্টর
বললেন। "তুমি মোটেই ভূত নও। ওসব ভাবনা থামিয়ে এখন বলো দেখি, তোমার যখন জ্ঞান ফেরে তুমি কোথায় ছিলে?
আমি চোখ বন্ধ করে গোটা কয়েক গভীর
শ্বাস নিলাম। এ্টা আমাকে শিখিয়েছিল অন্য
এক ডাক্তার । যখনই কোন চিন্তা ঘিরে ধরবে তা থেকে মুক্ত হওয়ার একটি কৌশল
। তারপর দেখালাম দূরে ঘরের কোনের দিকটা।
উনি সেই সোনিক স্ক্রু ড্রাইভারটা আবার বার করলেন। এগিয়ে ধরলেন কোনার দিকে অন্ধকারে । উজ্জ্বল নীল আলোতে ... সেখানে... দেখা গেল ...
একটা মহাকাশযান । মানে একটা মহাকাশ যানের কিছুটা অংশ।
আমি হেসে ফেললাম, পাগলের মতো... বোকার মতো। একটা
মহাকাশযান আমার স্কুলের বেসমেন্টের ভেতরে!
আর আমি কোথায় ? ২১১৫ সালে! সেখানে আমাকে ভুতে তাড়া করেছে! সব মিলিয়ে মিশিয়ে কি যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
তবে পুরো ব্যাপারটা সত্যিই সত্যিই বেশ
মজার । আর সবটাই বাড়ী ফিরে টেরির জন্য অপেক্ষা করার থেকে অনেক অনেক ভালো । কারন সে
মানুষটা কোন মূডে থাকবেন সেটা একটা চিন্তার ব্যাপার।
আমাকে হাসতে দেখে ডক্টর বললেন, “হাসছো বটে, তবে এটা জেনে রাখো
আমি কিন্তু এরকম প্রচুর স্পেসশিপ
ভূগর্ভস্থ ঘরগুলো থেকেই পেয়েছি। তুমি কি জানো আমাদের বেশীর ভাগ বাড়ী ঘরগুলোর
তলাতেই এরকম সব জিনিষ আছে?”
আমি কিছু একটা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়েও থেমে গেলাম । কারন বুঝতে পারলাম ওটা
আসলে একটা মাথামুণ্ডুহীন প্রশ্ন মাত্র।
যাকে বলে কথার কথা। ডাক্তার ঝুঁকে নিজের
মনে বিড় বিড় করতে স্পেসশিপের দেওয়ালটা পরীক্ষা করছিলেন। সহসাই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বল লেন।
"হেলেস্টিক্যান!"
আমি হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকলাম।
" ওটা একটা হেলেস্টিক্যান স্পেসশিপ। ওদের একটা বিশেষ কি
ক্ষমতা আছে সেটা জানো কি?’ "
আমি বোকার মতো চেয়ে রইলাম।
" রস, ওরা সময় ভ্রমণ
এর প্রযুক্তি আবিষ্কার করে ফেলেছে। আর
তোমার সাথে কি হয়েছে বুঝতে পারছো ? "
"আমি ..." কথা থেমে গেল। কিন্তু কিছু বলার মতো কথাতো আমার
আছেই। কিন্তু সে তো শুধুমাত্র লজিক্যাল
ব্যাখ্যা। "আমি সময় ভ্রমণ করেছি এটাই বলতে চাইছেন?"
"ঠিক তাই! ওই দ্যাখো, ওখানটায়
একটা গর্ত মতো দেখতে পাচ্ছো বোধ হয় ... ওই যে ওখানে ... যেখান দিয়ে কিছু একটা বেরিয়েছে এই জগতে। সম্ভবত ক্রোন্যাল ভেপার জাতীয় কিছু। আর সেটাই তোমাকে ভবিষ্যতের পথে একশো বছর এগিয়ে দিয়েছে । "
"বুঝলাম। আর ওই ভুতটা ?"
ডাক্তার দরজার দিকে ইশারা করলেন। অশরীরী অবয়ব ওখানে দাঁড়িয়ে আমাদের লক্ষ্য
করছিল। "ওটা কোনো ভুত নয় । ওটাকে একটা প্রতিধ্বনি বা ইকো বলতে পারো।
যেহেতু ঘটনাচক্রে তোমাকে ভবিষ্যতে চলে আসতে হয়েছে
সেহেতু ভারসাম্য রাখতে তোমার একটা প্রতিধ্বনি তোমার সময়ে ফিরে চলে
গেছে। আর সেটাই দেখা যাচ্ছে এত বছর পরেও । এটাই সময়ের এক অদ্ভুত
জাদু। সবসময় যা পাশাপাশি চলে সর্বত্র। এটাই আমাদের জানা শোনা
সব ভুত প্রেতদের অস্তিত্বের ঘটনা। "
আমি জানি না উনি যেসব কথা বলছেন সেগুলো সিরিয়াস কিনা তবে এটা ভাবতে ভালোই
লাগছে যে উনি সত্যিই বলছেন।
"কিন্তু বাকি সব ব্যাপারগুলো ... ওগুলোর বিষয়ে আপনি কি বলেন ? আলো এবং আর সবকিছু যা ঘটলো! "
"ক্রোনাল ভেপার এর যৌগ আর মানব দেহ একসাথে মেশানো
যায় না।
জলকে আগুনের সাথে মেশানোর মতই ব্যাপার বলতে পারো।
যা করলে অনেক শব্দ এবং আর চমকে যাওয়ার
মতো ছাড়া আর কিছুই ঘটে না। আর সেই সবই ঘটে চলেছে আমাদের আশেপাশে।"
" এখন তাহলে আমরা কি করব?"
আমি
জানতে চাইলাম। চেষ্টা করছিলাম ভয় যে পাচ্ছি সেটা প্রকাশ না করার। কিন্তু সত্যি
বলতে এখন আমার খুবই ভয় করছিল। আমি কি
ভবিষ্যতের এই ফাঁকটাতে বন্দী হয় থেকে যাবো?
"ওহ চিন্তা করছি কেন! আমিতো আছি। স্পেসশিপটাকে সারিয়ে ফেললেই হয়ে
যাবে । যাতে ওটা ঠিকঠাক কাজ করে
। তারপর আমি তোমাকে
বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসবো।"
শুনে মনে হচ্ছিল ব্যাপারটা কত সহজ। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম এটাও একটা কথার
কথা। ওদিকে আমার ভুতটা আগের চেয়ে অনেক ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। আমরা ওটার ভেতরে দিয়েই ডক্টর এর নীল বাক্সটার কাছে ফিরে
গিয়েছিলাম। জানা গেল ওটার নাম টারডিস
এবং ওটা যে কোনও সময় এবং স্থানে ভ্রমণ
করতে পারে। আমার মন চাইছিল কি করে সেটা সম্ভব তার একটা একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
জানার । কিন্তু গত এক ঘন্টার ভিত্তিতে
এখন আমি সব কিছুই ব্যাখ্যা ছাড়াই বিশ্বাস করতে প্রস্তুত ।
টারডিসের ভিতরটা অনেক বড়ো। বাইরে থেকে ওটাকে দেখতে আমার পোশাকের
আলমারির আকার ও মাপের । কিন্তু ভেতরে একটা
ছোট খাটো শহর ঢুকে যাবে। না আমি আর
অবাক হচ্ছি না!
ডাক্তার দরজা বন্ধ করলেন। কিছুবাদেই
ওটায় নানারকম শব্দ শোনা গেল। একটা মৃদু কম্পন অনুভব
করলাম একই সাথে। বুঝলাম ওটা
নড়ছে। আমি হাসলাম কিন্তু কেন তা বলতে
পারবো না। ডক্টর আমাকে দেখছিলেন এবং ভান
করার চেষ্টা করছিলেন যে গম্ভীর থাকার। একটা বাটনে চাপ
দিলেন, দরজাটা খুলে গেল আবার । আমি এগিয়ে গিয়েও থমকে গেলাম...
আমরা আকাশে ...ভেসে উঠে যাচ্ছি ওপরের দিকে ... !
নিচে আমার স্কুলটা দেখা যাচ্ছে ...
আমরা মহাশূন্যে উড়ে চলেছি । ডক্টর তার
সোনিক স্ক্রু ড্রাইভারটাকে স্কুলের দিকে তাক করলেন । একটা বিশাল বিস্ফোরণ ঘটলো নিচে ! ডক্টর আমার
স্কুলটাকে ধ্বংস করে দিলেন ! আর সেই আগুনের ভেতর থেকে প্রতিভাত হচ্ছে একটা ... একটা স্পেসশিপ! একটা আসল স্পেসশিপ!
যেমন দেখা যায় সিনেমায়।
"হেলেস্টিক্যানরা এবার ফিরে যাবে ..." ডক্টর বললেন, মহাকাশযানটির দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন । আমি দেখছিলাম আমার
স্কুল বাড়িটার কি দশা হয়।
ডাক্তার হেসে বললেন "স্কুল
ভ্যানিস, বাচ্চাদের একটা স্বপ্ন হলো, কি বলো ?"
"আমি কিন্তু স্কুল পছন্দ করি,"
বললাম।
"সেটা ভালো কথা। কিন্তু
পরিস্থিতি অনুসারে সব চাওয়া কি আর পূর্ণ হয় !" গোমড়া মুখে বললেন। দরজা বন্ধ করে ফিরে গেলেন কন্ট্রোল
ইউনিট এর টেবিলে। আবার কয়েকটা বাটন আর স্যুইচ টিপলেন।
"২০১৫ তাই তো ?" উনি জিজ্ঞাসা
করলেন।
ঘাড় নেড়ে বললাম "ক্রিসমাস!"
টারডিস আবার কাঁপতে শুরু করলো। উনি
আমার কাছে এলেন এবং খুব শান্ত স্বরে বললেন, ““তোমার বন্ধু ড্যান, একদিন বুঝতে পারবে যে সে ভুল করেছিল। কিন্তু তুমি ... তুমি, রস,
আমাকে প্রতিশ্রুতি দাও। নিজে সবসময় সৎ থাকবে।
সম্প্রতি আমি ... যাকগে, আমি অন্য কিছু একটা হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু ... " উনি
কাঁধ ঝাঁকালেন। "কেউ আমাকে বোঝাতে পেরেছে
যে আমার অন্য কা্রোর মতো হওয়ার দরকার
নেই। আমার বয়স হয়েছে , সময় এবং স্থান সম্পর্কে ইদানিং গণ্ডগোল পাকিয়ে
ফেলছি। খুব খারাপ নয় যদিও সেটা। রস, ডিয়ার অন্যরা তোমায় কি বললো, কি ভাবলো সে দিকে মন
না দিয়ে নিজের দিকে নজর দাও। তুমি বোকা নও মোটেই । যথেষ্টই খুবই বুদ্ধিমান । তুমি যেটা করতে গিয়েছিলে
তাতে হয়তো সত্যি সত্যিই ওই ভুতটা হয়ে যেতে হতো
তোমাকে ! তাই অন্য বোকা বদমাইশদের ইম্প্রেস
করার জন্য আর কখনোই এভাবে বেসমেন্টে একা একা যাওয়ার চেষ্টা করবে না, ঠিক আছে।” আমার কেমন যেন কান্না পাচ্ছিল। যদিও কাঁদছিলাম না । উনিও আর
কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়েছিলেন।
ফিরে যখন তাকালেন আমি ওনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
"ডক্টর," আমি বললাম,
"আপনি চলুন না আমার সাথে
আমাদের বাড়ীতে ক্রিসমাস সেলিব্রেট করার জন্য ?"
"রস," উনি ঘাড় চুলকে বললেন,
"আমি সত্যিই ক্রিসমাস পছন্দ করিনা ।
তবে, তুমি যাও, মজা করো যত খুশী
। "
উনি দরজায় দিকে ইশারা করলেন। ওটা আবার খুলে গেছে... এবং বাইরে দেখা যাচ্ছে ... আমার বাড়ীর
বারান্দা ।
"কিন্তু ... আপনি কি করে জানতে পারলেন
আমার বাড়ীটা ঠিক কোথায় ?"
ডাক্তার হাসলেন, " ওটা গোপনই থাকুক রস। ওহ আর একটা কথা টেরি বোধ হয় একটা ভালো চাকরির খোঁজ পেয়েছেন। হয়তো এবার থেকে ওই মানুষটাও
বদলে যাবে। ... হয়তো। "
আমি ডক্টরের দিকে তাকালাম। মানুষটাকে আমার জাদুকর মনে হচ্ছিল। ছুটে গিয়ে আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম। এখানে তো আমাদের দেখে ফেলার মতো কেউ নেই। উনিও আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
বেরিয়ে এলাম টারডিস থেকে। চোখের সামনে
ওটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
আমি ছুটে গেলাম বাড়ির ভেতর।
সমাপ্ত
**ভালো লাগলে জানাবেন ... আগামিদিনে নিয়ে আসবো ডক্টর হু এর আরো কিছু গল্প**
**ভালো লাগলে জানাবেন ... আগামিদিনে নিয়ে আসবো ডক্টর হু এর আরো কিছু গল্প**
আহা
ReplyDelete