Search This Blog

Thursday, June 22, 2017

অলীক নগরী [POLARIS - H P LOVECRAFT]

অলীক নগরী
প্রতিম দাস

আমার ঘরের উত্তরদিকের জানালা দিয়ে  তাকালেই ধ্রুবতারার    অলৌকিক আলোটা দেখা যায়। চারকোনা নারকীয় ঘন কালো অন্ধকারের মধ্যেওটা চক চক করে।  শরতকালে যখন গোঙ্গানির শব্দ তুলে উত্তরের হাওয়া  অভিশাপের মতো বয়ে যায়; সকালবেলার কিছুটা সময়ে জলাভুমি সংলগ্ন লাল পাতার গাছগুলো কাস্তে আকৃতির মলিন চাঁদের সামান্য আলোয় একে অপরের সাথে এক অলীক নাচে মেতে ওঠে ঠিক সেই সময়ে আমি কাঁচের পাল্লা লাগানো জানলার পাশে বসেতাকাই ওই তারাটার দিকে।   সময় বয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ঝলমলে ক্যাসিওপিয়া তার আলো ছড়িয়ে দেয়। বাষ্পের কুয়াশায় ঢেকে থাকা রাতের বাতাস মাখা গাছগুলোর ভেতর থেকে উঠে আসে সপ্তরষি মণ্ডল । ভোর হওয়ার সামান্য আগে দূরের পাড়াড়ের পাদদেশে স্থিত কবরস্থানের ওপর থেকে   স্বাতী নক্ষত্রচোখ টেপে আর রহস্যময় পূর্ব দিক থেকে কোমা বেরেনিসেস নামের নক্ষত্র মন্ডলটি পাগলের মতো কাঁপতে থাকে।কিন্তু ওই ধ্রুবতারা কালোর চাদরের মাঝে নিজেকে এক জায়গায় স্থির রেখে এক দৃষ্টে সব কিছু দেখে যায়।  মাঝে মাঝে যেন তার চোখ পিট পিট করে কোন এক উন্মাদ পর্যবেক্ষকের মতো । মনে হয় সে যেন কোন এক বার্তা দিতে   চায়।  তবু কিছুতেই যেন মনে আনতে পারে না কি সেই বার্তা যা তার দেওয়ার কথা ছিল।  আর এসবের মাঝে  কখনও কখনও আকাশ যদি মেঘলা হয় তবেই আমি ঘুমাতে পারি
আমার মনে পড়ে বিশেষ মেরু জ্যোতি বিচ্ছুরিত সেই রাতটার কথা , যেদিন জলাভুমি এক শয়তানি আলোকজ্যোতি বিচ্ছুরনের  খেলা আমায় দেখিয়েছিলসেই আলো ঢেকে দিতে  আকাশে হাজির হয় মেঘের দল আর আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
সেটাই ছিল প্রথমবার যখন   আমি কাস্তে চাঁদের স্তিমিত আলোর নিচের নগটাকে দেখেছিলাম। বিষাদগ্রস্থ স্তব্ধ হয়ে ওটা দাঁড়িয়েছিল, ফাঁপা অদ্ভুত কিছু শিখর চুড়ার মাঝখানে এক রহস্যময় অধিত্যকার ওপর ।  বিভ্রান্তিকর মৃতবৎ মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরী  ছিল সেই নগরটার দেয়াল , তার টাওয়ারগুলো, তার স্তম্ভ গুলো,  যত গম্বুজএবং গলিপথমার্বেল পাথর নির্মিত রাস্তায় ছিল সারি সারি  মার্বেল পাথরের পিলার। যারউপরের অংশগুলিতে দাড়িওয়ালা বিভিন্ন পুরুষদের মুখ খোদাই করা ছিল। ওখানে বাতাস  ছিল উষ্ণ এবং নিথর আর তার ঠিক ওপরে আকাশে  একেবারে  নগরটার মাঝখান থেকে   দশ ডিগ্রী দুরত্বে প্যাট প্যাটে উজ্জ্বল চোখে চেয়েছিল ওই ধ্রুবতারাদীর্ঘ সময় ধরে আমি নগরটার দিকে লক্ষ্য রেখেছিলামকিন্তু কখনোই দিনের আলো পড়তে দেখিনি সেখানে বৃষ রাশির উজ্জ্বল লাল আলডেবারান তারা, আকাশে নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ছিল কিন্তু কখনোই স্থির হয়ে  থামেনি কোন এক নির্দিষ্ট জায়গায় ।  দিগন্তের চারপাশে এক চতুর্থাংশ জুড়ে হামাগুড়ি দিয়ে সে চলে  গিয়েছিল। ওই সব বাড়ী এবং রাস্তায় প্রতিফলিত হতে দেখেছিলাম সে তারার আলোর চলন্ত ঝলক।  সে আলোতে অবয়বগুলো বিকৃত রুপে দেখা দিচ্ছিল। কেবলমাত্র একবারই ওদের রূপ পরিষ্কারভাবে দেখতে পেয়েছিলাম পরিচিত চেহারায়। ওরা হেঁটে চলে যায় দূরে  সেইস্থানে যেখান  মলিনতম কাস্তে চাঁদের আলোয় ওই নগরের পুরুষেরা তাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা চালাচ্ছিল। আমি ওদের  সব কথা বুঝতে পারছিলামকিন্তু সে ভাষা   আমার চেনাজানা কোনও ভাষা ছিল না । লাল আলডেবারান দিগন্তরেখার  অর্ধেক পথ গুটি গুটি এগিয়ে যেতেইআবার সব অন্ধকার হয়ে গেল। নেমে এলো নীরবতা ।
এরপর আমি যখন ঘুম থেকে জেগে উঠি, তখন আমি  আর আগের সেই আমি ছিলাম না। আমার স্মৃতি পটেনগরটার ছাপ গেঁথে বসে গিয়েছিল।  আমার আত্মার মধ্যে এক  অন্যরকমের অনিশ্চিত ভ্রাম্যমান স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছিল। যার প্রকৃতি বিষয়ে আমি কোন ধারনাই করতে পারছিলাম না। পরবর্তী সময়ে , কোনও মেঘলা রাতে যখন আমি ঘুমাতে পারতাম, তখনমার স্বপ্নে প্রায়ই নগরটিকে     দেখতামকখনও কখনও সেখানে থাকতো কাস্তে চাঁদের মলিন আলো, আবার কখনো কখনো সূর্যের  হলুদ রঙা উষ্ণ আলোকিন্তু কোনটাই স্থায়ী হতোনা,  দিগন্তের চারপাশে নিচের দিকে চক্কর মেরে মিলিয়ে যেতোপরিষ্কার রাতে ওই ওপর থেকে ধ্রুবতারা এমন ভাবে তাকাতো যেন আগে একে কোন দিন দেখেইনি।
ধীরে ধীরে আমি অবাক হয়ে ভাবতে শুরু করলাম ,,ওই অদ্ভুতশিখরগুলোর মাঝে  ততোধিক বিস্ময়কর অধিত্যকার  পটভূমিতে অবস্থিত ওইনগর, তার সাথে আমার কি যোগাযোগ থাকতে  পারে।  দৃশ্যপটটিকে প্রথম দফায় এক সাধারন চোখে দেখছিলাম। এখন আমি ওটার সাথে আমার সম্পর্ককে বুঝে উঠতে আগ্রহী।  আমার মন চাইছে, ওই সব গম্ভীর বিষন্ন মানুষগুলো যারা   প্রতিদিন ওই চত্বরেকথোপকথন করে, তাদের সাথে কথা বলতে। আমি নিজেকে বোঝাতে পেরেছিলাম, "এটা কোন স্বপ্ন নয়কিন্তু কি ভাবে আমি প্রমান করবো ওই পাথরের অট্টালিকাগুলোতে , শয়তানি জলাভূমির এলাকায়  এবং  পাহাড়ের পদপ্রান্তের কবরস্থানে অন্য ধরনের প্রানের প্রকৃতই অস্তিত্ব আছে? যেখানে প্রতি রাতে আমার উত্তর জানলা লক্ষ্য করে   জ্বলজ্বলে দৃষ্টি মেলে ধ্রুবতারা তাকিয়ে থাকে? "
এক রাতে আমি সেই বিশাল চত্বরে  বড় বড় ওই সব মূর্তিদের আলোচনা বক্তৃতা শুনছিতখনই প্রথমবার আমি ব্যাপারটা অনুভব করতে সক্ষম হয়েছিলাম এবং বুঝতে পেরেছিলাম অবশেষে আমি পেয়েছি  এক শারীরিক অবয়ব ওই নগরে প্রবেশেরনোটন এবং কাদিফোনেক পর্বত শিখরের মাঝে  সারকিসের অধিত্যকায় অবস্থিত্লাথোয়ের রাস্তায়আমি আর মোটেই অচেনা আগন্তুক নই আমার বন্ধু অ্যালোস  বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তার কথা আমার আত্মা ও মনকে  সন্তুষ্টি প্রদান করছিল । কারন  সে বক্তৃতা ছিল এক সত্যিকারের দেশপ্রেমিক মানুষের। ঐ রাতে ডাইকোসের পতনের খবর এসেছিল এবং সাথেই এসেছিল নোতুদের এগিয়ে আসার সংবাদ । এখন থেকে পাঁচ বছর আগে পশ্চিমের অজানা স্থান থেকে জবরদখলকারী নারকীয় পীতাভ  রঙের পাষণ্ডের দল  আমাদের রাজ্যে এসেছিল আমাদের শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছে নিয়ে। কিন্তু কিছু করতে না পেরে ঘিরে রেখে দেয় নগরটাকে পাহাড়ের পাদদেশে ঘাঁটী গেড়ে বসে থাকে।  এখন তাদের সামনে খুলে গেছে এই অধিত্যকায় প্রবেশের পথ এ শহরের  প্রত্যেক নাগরিককে এখন দশনের সমান  শক্তি নিয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।  ওই জবরদখলকারী নারকীয় জন্তুগুলো  যুদ্ধ কলায় নিপুন।  জানে না  বিবেক কাকে বলে বা সম্মান কাকে দিতে হয়। আর এতেই আমরা ওদের কাছে হেরে যাচ্ছি।    আমাদের লম্বা, ধুসর চোখের অধিকারী লোমার পুরুষদের নিষ্ঠুর এ যুদ্ধে পিছিয়ে পড়া থেকে সেটাই প্রমানিত হয়েছে।
আমার বন্ধু অ্যালোস এই অধিত্যকার সব বাহিনীর অধিনায়কওকে ঘিরেই ছিল আমাদের দেশের শেষ আশা ভরসাএই উপলক্ষ্যে ও জানায় কি ভীষণ  বিপদের মুখোমুখি  আমরা হয়েছিপূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য লোমারিয়ানদের মধ্যে যারা সবচেয়ে সাহসী, সেইলাথোয়ের মানুষদের ও উৎসাহিত করতে চেষ্টা করছিলোসেই পূর্বপুরুষেরা যারা একসময় যোবনা থেকে দক্ষিনে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন বিশাল বরফের চাদরের স্থান পরিবর্তনের কারনে (হয়তো এই লোমার ভুখন্ড থেকেও আমাদের বংশধরদের সব ছেড়ে একদিন চলে  যেতে হবে)আর সে সময়ে চলার পথে তারা সহসাই আক্রান্ত হন দীর্ঘদেহী লোমশ, সশস্ত্র, নরকের কীট নরখাদক যনফকেহদের দ্বারা।  ভয় পাননি মোটেই বরং সাহস এবং বেপরোয়া উদ্যমকে হাতিয়ার করে   তারা হারিয়ে দিয়েছিলেন যনফকেহদের আমাকে লো তার  যোদ্ধার দলে স্থান দেয়নি। এর একটাই কারণ আমি দুর্বল প্রকৃতির তাছাড়াও কোনো রকম চাপ এবং কষ্টের সম্মুখীন  হলেই অদ্ভুত ভাবে যখন তখন অজ্ঞান হয়ে যেতাম  । তবে  আমার দেখার ক্ষমতা ছিল নগরের মধ্যে সেরা। দীর্ঘ সময় ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা  আমি পনাকোটিক পাণ্ডুলিপি এবং যোবনারিয়ান মহান পিতৃ -পিতামহদের জ্ঞান লেখনীর পাঠ উদ্ধার করায় মগ্ন থাকতাম। এজন্যই আমার বন্ধু আমাকে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়নি। তার বদলে আমাকে দায়িত্ব দেয় এক গুরুত্বপূর্ণ কাজেরথাপনেনের ওয়াচ-টাওয়ারে আমাকে পাঠিয়ে দেয়, আমাদের সেনাবাহিনীর দায়িত্বপূর্ণ নজরদার‘চোখ হিসাবে কাজ করার নোটন শিখরের পাশের সঙ্কীর্ণ পথ দিয়ে  ইনুতোরা আক্রমণ করে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে সেনাদলকে এরকম একটা সম্ভাবনা আছে । সেজন্যই   আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার এবং আগুনের সংকেত দিয়ে জানানোর জন্য । যাতে অপেক্ষমাণ আমাদের বাহিনী  সে দুর্যোগ থেকে শহরকেক্ষা করতে পারে
সেই টাওয়ারে উঠে  আমি একাকী শুরু করি নজরদারি।    কোন অবয়ব আমার নজর এড়িয়ে  যাবে সে সম্ভাবনা রইলো না বিন্দুমাত্র। দিনের পর দিন ধরে ঠিক মতো ঘুমাতে না পেরে আমার মস্তিষ্ক  একই সাথে উত্তেজনা এবং ক্লান্তির অনুভুতির আবেশে মথিত হচ্ছিল। তাসত্বেও আমি নিজের কাজে একটুও ফাঁকি দিচ্ছিলাম না। কারন  জানতাম এই কাজ আমার জন্মভুমি লোমারকে রক্ষা করবে । নোটন ও কাদিফোনে শিখরের মাঝে অবস্থিত   মার্বেল পাথরের শহর ওলাথোয়কে বাঁচাবে। 
 টাওয়ারের একেবারে ওপরের ঘরে গিয়ে দাঁড়ালাম। দূরবর্তী বানোফের উপত্যকায় কাস্তে দর্শন চাঁদের গা শিউরানো লাল আলো গায়ে মেখে  ঠান্ডা হাওয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভেসে থাকা কুয়াশা কাঁপতে কাঁপতে ভেসে বেড়াচ্ছিল।  ছাদের ওপরে একটি খোলা জায়গা দিয়ে  ফ্যাকাশে ধ্রুবতারা তার মিট মিটে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছিলো। মনে হচ্ছিল ওটা যেন জীবন্ত , শয়তানি কুটিল চোখে  তাকিয়ে আছে   মনে হলো ফিস ফিস করে ওই শয়তান অনুরোধ করছে তার নারকীয় সাঙ্গপাঙ্গদের ;   শ্রান্ত ক্লান্ত আমার দেহমনকে   এক প্রতিশ্রুতি সঙ্গীত বারবার শোনানোর জন্য, যাতে আমি বিশ্বাসঘাতক ঘুমের স্নিগ্ধতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারি:
"ঘুমিয়ে পড়ো, নজরদার , ততক্ষন যতক্ষন না ছয় গোলকের পথ  আর  বিশ হাজার বছর অতিক্রান্ত হয় এবং আমি আবার ফিরে আসি সেই স্থানে যেখানে   এখন নিজের আলো বিচ্ছুরন  করছিঅন্য তারারা উঠবে জেগে আকাশের অক্ষ পথে; সেই তারাদের কেউ দেবে শান্তি আবার কেউ করবে আশীর্বাদ, যেখানে মিশে থাকবে এক সুন্দর ভুলে যাওয়ার নেশা। শুধু আমার বৃত্তাকার পথে ভ্রমণ যখন সমাপ্ত হবে তখন অতীত এসে বিরক্তিকর ধাক্কা দেবে তোমার দ্বারে।"
এক অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলাম আমার শ্রান্ত ক্লান্ত মনটাকে সজাগ রাখার প্রচেষ্টায়। পনাকোটিক পাণ্ডুলিপিতে পড়েছিলাম আকাশের শব্দমালা থেকে ওপরের ওই  রহস্যময় কথাগুলো  । আমার মাথা ভারি হয়ে আসছিল, ঝিম ঝিম করছিল । ঝুঁকে পড়ছিল   বুকের ওপর।  এরপর  যখন আমি চোখ মেলে  তাকালাম যা দেখলাম তাছিল এক স্বপ্নের জগতপাগলের মতো মাথা নাড়তে থাকা স্বপ্নময় জলাভুমি সংলগ্ন গাছগুলোর ওপরের   একটা জানলা দিয়ে সেই ধ্রুবতারা আমার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছিল ।
আমি কিন্তু স্বপ্নই দেখছিলাম।
লজ্জা এবং দুশ্চিন্তায় আমি মাঝে মাঝে চিৎকার করে  ঊঠেছি। আমার চারপাশের ঘোরাফেরা করতে থাকা  স্বপ্নচারী-প্রাণীগুলোর কাছে  ভিক্ষা করেছি আমাকে জাগিয়ে দাও । ওদিকে ইনোতুরা নোটন শিখরের পাশ দিয়ে নিঃশব্দে ঢুকে মূল দুর্গ দখল করে সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে আর এদিকে জঘন্য  নরকের কীট প্রাণীগুলো আমার দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি হেসে জানান দেয় ,  আমি মোটেই স্বপ্ন দেখছি  না। রা  আমার ঘুম নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ  করে ।  ঠাট্টা করে বলে, তুমি ঘুমাচ্ছিলে বুঝি!  ওদিকে পীতাভ শত্রু বাহিনী চুপি চুপি ঢুকে পড়েছে তোমাদের নগরে। এর একটাই অর্থ, আমার দায়িত্ব পালনে আমি ব্যর্থ    বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে গেল মার্বেল শহর ওলাথোয় এর সাথে   ।  আমার বন্ধু আমাদের নেতা অ্যালোসের সিদ্ধান্তকে আমি  মিথ্যা সাব্যস্ত করে ফেললাম
  কিন্তু এখনও রোজ আমাকে স্বপ্নের ওই কালো ছায়া তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেচেনা পরিচিত  মানুষজনেরা বলছে লোমার নামে আদপেই কোন দেশ কখনোই কোথাও  ছিল না , ওসব আমার নৈশকালীন কষ্ট কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। যেসব অঞ্চলে যেখানে ধ্রুবতারা তার  উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করে  এবং লাল আলডেবারান তারাকে দিগন্তের কাছাকাছি নেমে আসতে দেখা যায়,  সেখানে হাজার হাজার বছর ধরে বরফ ও তুষার জমে না এটা মোটেই  সম্ভব নয়।  এস্কুইমক্স নামের কোন পীতাভ মানুষদের  সেনাবাহিনীর কারোর পক্ষেই সেই চরম ঠাণ্ডাকে সহ্য করে  বেঁচে থাকা সম্ভব ব্যাপার
যে যাই বলুক আমি যে আমার নিজের দোষ ভুলতে পারছি না  । ক্ষমা করতে পারছিনা নিজেকে। পাগলের মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি  সেই নগরটাকে বাঁচানোর , যার ভবিষ্যত বিপদের মাত্রা প্রতি মুহূর্তে বেড়েই চলেছে।
  দূরে পাহাড়ের পাদদেশের কাছে  সমাধিক্ষেত্রসেটার কাছেই এক  নারকীয় স্বপ্নে ভরা জলাভূমির   দক্ষিনে  পাথর ও ইটের তৈরী বাড়িটায় বসে আমি  ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সেই অপ্রাকৃত অজ্ঞেয় স্বপ্নটা থেকে মুক্তি পাওয়ার তান এবং ভয়ঙ্কর  ওই ধ্রুবতারা এক ভাবে তাকিয়ে আছে মিশকালো  আকাশে ভাসমান অবস্থায় ।  চোখ পিট পিট করে চলেছে,  লুকিয়ে লুকিয়ে এক উন্মাদ পর্যবেক্ষকের মতো শুধু দেখে যাচ্ছে।  বুঝতে পারছি  খুব চেষ্টা করছে কিছু একটা কথা বলার ।  দিতে চাইছে  কোনো এক বিশেষ বার্তা  ।  কিন্তু  কিছুতেই যেন মনে করতে পারে না কি ছিল সেই বার্তা যা তার দেওয়ার কথা ছিল কোন এক সময়।

সমাপ্ত
POLARIS (1918)
H P LOVECRAFT


No comments:

Post a Comment