রূপান্তর
প্রতিম দাস
পড়াশোনায় খুব একটা ভালো ছিল না সুদর্শন।তবে নামটা সার্থক রেখেছিলেন ওর বাবা মা। সত্যিই রাজপুত্রের মতো
দেখতে। সপ্রতিভ এবং ভুল ভ্রান্তির তোয়াক্কা না করে কাজ চালানোর মতো ইংরেজিটা বলতে
পারতো।কিন্তু শুধু ভালো চেহারা দিয়ে কিছু হয় না। ফলে ৩২ বছরেও একটা ভালো কাজ
জোটেনি ওর। এমতাবস্থায় ওর এক বন্ধু দিলো এক অদ্ভুত কাজের খোঁজ। এরকম কাজের কথা সুদর্শন
আগে কোনও দিন শোনেনি। অবশ্য শুধু ও কেন খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ ছাড়া খুব বেশি
মানুষ এই বিষয়টা জানেনও না। এই কাজটা যারা করেন তাদের বলা হয় আন্ডারটেকার।
মৃত মানুষকে কফিনে শোয়ানোর আগে ভালো পোশাক
পড়িয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে দেওয়াটাই এদের মূল কাজ।সাথেই কবরস্থও করতে হয় প্রয়োজন মতো।
এরকম একটা কাজ তার ওপর যেতে হবে গোয়া।যাবে কি যাবে না এই সিদ্ধান্ত নিতেই সুদর্শণের
কয়েকদিন চলে গেল। সব সমস্যার সমাধান অবশ্য করে দিলো মোটা পে প্যাকেটের আশ্বাস।
প্রথম প্রথম একটু বাধো বাধো ঠেকলেও আস্তে আস্তে
সুদর্শন হয়ে উঠলো ওই সংস্থার এক নম্বর কর্মী। এক্ষেত্রে ওর রুপটাই কাজে দিলো বেশি।
মৃত মানুষটির বাড়ি গিয়ে করণীয় কাজ গুলো ওই করার ডাক পেতো সবচেয়ে বেশি। কোনও কোনও
সময় .৩-৪ দিন দেহ রেখে দিতো মৃতের পরিবার। আর সেক্ষেত্রে সেটাকে শোভনসুন্দর করে
দেখানোর কাজটা বেশিরভাগ করতে হতো সুদর্শনকে। এর জন্য ভালই উপরি জুটত , ফলে হাসি
মুখেই এক্সট্রা কাজগূলো নিত সুদর্শন।
এভাবেই কেটে গেল তিনটে বছর। কাজের চাপ এখন আরো বেশী। প্রায় গোটা গোয়াতেই সবাই চায় সুদর্শনদের সংস্থা
কাজটা করুক। গত সাতদিনে ১১টী মানুষ ণাওয়া খাওয়া ভূলে কাজ করেছে।আজ মিলেছে ফুরসত।সুদর্শন
কালকেই জানিয়ে দিয়েছিলো আজ একটু দেরী করে অফিসে আসবে।
মোবাইল ফোণে চটূল গোয়াণীজ সুরটা যখণ বাজলো ঘড়িতে
তখন সাড়ে এগারোটা। ঘুম ঘুম চোখে কোনোক্রমে দেখতে পেল boss কথাটা। উঠে বসলো। সবুজ
বাটণে চাপ দিয়ে বললো – ইয়েস....
মিসেস সুজান মোলনারের সাথে সেটাই প্রথম দেখা সুদর্শণের।
সংস্থা মালিক মিস্টার গণসাল্ভেজের অফিসরুমে। সুদর্শনকে দেখেই সম্পূর্ণ কালো পোষাকে
আবৃতার উদ্দেশ্যে মিস্টার গণসাল্ভেজ বললেন – ওহ, হিয়ার কেম আওয়ার ফাইনেস্ট ম্যান
অফ দ্য বিজনেস। মিসেস মোলনার আশা করছি আপনার কাজটা ভালো ভাবেই হবে।কোন রকম
অভিযোগের সুযোগ আপনি পাবেন না।
মুখের সামনের টুপি থেকে ঝুলতে থাকা পাতলা
কাপড়ের আচ্ছাদনটা সরিয়ে সুদর্শনের দিকে তাকালেন। ঠিক যেন শ্বেত পাথরে তৈরি একটা
মুখ।সহসাই যেন ভদ্র মহিলার চোখদুটো কিছু পাওয়ার আনন্দে যেন চকচক করে উঠলো, মনে হল সুদর্শনের।সম্মোহিত
হয়ে গেল ও। যতক্ষণ না ওর বস বললেন – মিসেস মোলনার প্লীজ ফিল আপ দিস ফর্মঃ সুদর্শন
তাকিয়েই রইলো।
ধীরে ধীরে ফর্মটা ফিল আপ করতে করতে আরও কয়েক
বার মিসেস মোলনার তাকালেন সুদর্শনের দিকে।আর প্রত্যেকবারই এক অজানা শিহরনে কেঁপে
উঠলো সুদর্শন।মিস্টার গণসাল্ভেজের এটা চোখ এড়ালোনা। ফর্মটা ফিরে পেয়ে একবার দেখে
নিলেন মিস্টার গণসাল্ভেজ এবং বললেন – ওকে মিসেস মোলনার আধ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের লোক
পৌঁছে যাবে আপনার বাসভবনে। অগ্রিম টাকা মিটিয়ে বিদায় নিলেন মিসেস মোলনার। তবে
যাওয়ার আগে আরো একবার আচ্ছাদন সরিয়ে দেখে নিলেন সুদর্শনকে।
মিস্টার গণসাল্ভেজ সুদর্শনকে বললেন – গেট রেডি
এন্ড বী কেয়ারফুল।মহিলার নজরটা আমার ভালো ঠেকল না। আমাদের সংস্থার সম্মান কিন্তু
তোমার হাতে। বেস্ট অফ লাক।
২য় কিস্তি আগামীকাল
আমার লেখা একটি রোমাঞ্চ কাহিনী ...... আজ
দ্বিতীয় কিস্তি ...
মৃত মিঃ মোলনার যে অগাধ টাকাকড়ির মালিক ছিলেন
সেটা বাড়িতে পা দেওয়ার পর থেকেই বুঝতে পারছিল সুদর্শন। শোকজ্ঞাপনকারীদের শেষ
শ্রদ্ধা প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়ার জন্য দেহটি যে হল ঘরে রাখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে
সেটা শীত তাপ নিয়ন্ত্রিত।সেখাঙ্কার আসবাবপত্রর মান সিনেমাকেও হার মানায়। একটি
সুদৃশ্য কাঠের চেয়ারে বসে সুদর্শনকে একভাবে লক্ষ্য করে যাচ্ছিলেন মিসেস মোলনার
। আবরণের আড়ালে থাকা সত্ত্বেও কাজে ব্যস্ত
থাকতে থাকতে সেই দৃষ্টির ছোঁয়াচ কেমন যেন অনুভব করতে পারছিল সুদর্শন।ওর সহকর্মী
মহারাস্ট্রের বিণোদ তাম্বেকর তো বলেই ফেলল- আরে ইয়ার ইয়েহ হাসিনা তো তুঝপে ফিদা হো
গ্যয়ী । জলদি মেহফিল কে ইন্তেজাম হোনে বালা হ্যায়। সুদর্শন ওর কথায় কোনও উত্তর না
দিলেও অফিসে দেখা চোখ দুটোকে মন থেকে মুছতেও পারছিল না।
সাজানোর কাজ শেষ হয়েছে সুদর্শন যখন বললো,
মহিলার কণ্ঠস্বর প্রথম শোনা গেল। এক কথায় সুললিত।
-থ্যাঙ্কস আপনারা আমার রবার্টের জন্য যা করলেন
তা সত্যিই অসাধারন।
পরের গোটা দিনটাতে অসংখ্য মানুষ জানিয়ে গেল শেষ
শ্রদ্ধা । কাজের অঙ্গরুপে যে সমস্ত ফুলের তোড়া বা রিং লোকে দিচ্ছিলো সেগুলো একপাশে
গুছিয়ে রাখার কাজ করে গেল সুদর্শন।মিসেস মোলনার আগতদের আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকলেও সুদর্শনকে
দৃষ্টিহারা করছিলেন না। গতকাল অস্বস্তি হলেও আজ বেশ উপভোগ করছিল ও। সত্যি বলতে হলে
ও বলতে বাধ্য হতো, যে এরকম কোনও সুন্দরী মোহময়ী মহিলার সান্নিধ্যে ও আগে কোনোদিন
আসেনি।
পরবর্তী দিনটিতে রবার্টেকে সমাধিস্ত করার কথা
ছিল কিন্তু মিসেস মোলনার সুদর্শনকে জানালেন আরও একদিন রাখা হবে দেহটিকে। আরও অনেক
মানুষ নাকি আসবেন। অসুবিধা না হলে সুদর্শন যেন কালকের দিনটাতেও এখানে চলে আসে। মিসেস
মোলনার মিস্টার গণসাল্ভেজের সাথে কথা বলে নেবেন। আপত্তির কোনও কারনই নেই সুদর্শনের।
বরং আরও একদিন এই মোহময় সান্নিধ্য পাওয়া যাবে এটা ভেবেই ও পুলকিত। মৃদু হেসে
সম্মতি জানালো ও।
বিকেলের পর থেকেই লোক আসার পরিমাণ বেশ কমে
গিয়েছিল। সাড়ে সাতটার পর তো মানুষ আসা বন্ধ হয়ে গেল একেবারে। ঘড়িতে আটটা বাজলো।
মূখের আচ্ছাদনটা সরিয়ে বেশ কিছুক্ষন সুদর্শনের দিকে তাকিয়ে থাকলেন মিসেস মোলনার। তারপর বললেন -আপনি দারুন কাজ করেছেন মিঃ রয়।
সকলে বলছিল , রবার্টকে কি সুন্দর আর সজীব দেখাচ্ছে।
-এটাই তো আমাদের কাজ মিসেস মোলনার।
- প্লিজ কল মি সুজান, মিঃ রয়।
অদ্ভুত
ব্যাপার আর একটাও লোক এলোনা এরপরে । অনেক
অনেক কথা হল দুজনের মধ্যে।রাত যখন ১০ টা বাজলো সুদর্শন বললো এবার সে ফিরতে চায়।কাল
আবার আসতে হবে।
- তুমি কি সত্যিই যেতে চাও সুদর্শন?
কেমন যেন করে
উঠলো মাথাটা সুদর্শনের। যন্ত্রের মতো বললো – না মানে একবার অফিসেতো যেতেই হবে।
- বেশ যাও তাহলে.... বাট আই উইল ওয়েট ফর ইউ।
অফিসে পৌঁছে সুদর্শন দেখলো
মিস্টার গণসাল্ভেজ ওর অপেক্ষাতেই বসে আছেন।
-তোমার জন্যই বসে আছি।
কামাল করে দিয়েছ হে। মিসেস মোলনার এক্ষুনি ফোন করেছিলেন। বললেন তোমার কাজে উনি খুবই
খুশী।এক্সট্রা ৫ হাজার এবং তোমার জন্য অতিরিক্ত ২ দেবেন জানালেন। গুড সুদর্শন।
ভেরি গুড।
সুদর্শন বোকার মতো একটু
হাসলো।
-ও হ্যাঁ সুদর্শন। কাল সকালে
যদি ওখানে যাওয়ার আগে অফিসটা একটু খুলে দিয়ে যাওতো ভালো হয়। আমি একটা কাজের জন্য
একটু ব্যস্ত থাকবো। ডিসুজাকে বলা আছে ও এসে যাবে ।ও এলেই তুমি চলে যেও।
- নো প্রবলেম স্যার।
-থ্যাঙ্কস। ওকে গুডনাইট।
নিজের ভাড়া নেওয়া বাস
স্থানের দিকে ফেরার পথে মটোরসাইকেল চালাতে চালাতে সুদর্শনের মাথায় মিসেস মোলনারের
“বাট আই উইল ওয়েট ফর ইউ“ কথাটা ফিরে ফিরে আসতে থাকলো। সহসাই পথটা পরিবর্তন করলো ও।
.....
-আমি জানতাম তুমি ফিরে
আসবে সুদর্শন।
অবাক হয়ে সুদর্শন দেখল মিসেস
মোলনারের পরনে কালো গাউনের বদলে এখন একটা লাল রঙের চোখ ঝলসানো আলখাল্লা জাতীয়
পোষাক। বড় বড় অজানা ফুলের ছাপ তার ওপর। মাথায় পড়ে আছে অচেনা তীব্র গন্ধ যুক্ত
ফুলের মুকুট।
-এসো ভেতরে এসো । ছন্দময় ভাবে হাতের আঙুলগুলো সুদর্শনের মুখের সামনে নেড়ে বললো সুজান।
ম্যাজিক শোয়ে দেখা
হিপনোটাইজ মানুষে পরিণত হল যেন সুদর্শন। অনুসরন করলো মিসেস মোলনারকে। সেই হলঘর। বাসি
ফুলের গন্ধে ভারি হয়ে আছে বাতাস। কিন্তু সেসব গন্ধ ছাপিয়ে নাকে আসছে এক অজানা
মিষ্টি গন্ধ। ও আরও অবাক হল এটা দেখে যে মিঃ রবার্টের দেহটা কফিন থেকে বার করে
বাইরে মেঝেতে শোয়ানো আছে। যাকে ঘিরে ছকোনা তারার আকৃতিতে জ্বালানো অসংখ্য মোমবাতি। শিখাগুলো একটুও কাঁপছেনা। মুখ ফিরিয়ে
একটু হাসলেন মিসেস মোলনার। যা দেখে গোটা শরীরের রোম খাড়া হয়ে গেল সুদর্শনের। কেন?
ও জানে না। কেমন যেন মনে হচ্ছিলো নিজের দেহের রাশ আর ওর হাতে নেই।
-বুঝতে পারছি এসব দেখে
তুমি অবাক হচ্ছো। আসলে এটা একটা অজানা বিষয়। এর খবর জানে পৃথিবীর গুটিকয় পরিবার। এ
এক সুপ্রাচীন পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জ্ঞান। সব তৈরি । শুধু তোমার
একটু সহযোগিতা পেলেই ....
হাতটা বাড়িয়ে দিলেন সুদর্শনের দিকে – আমার
হাতটা ধরো, এসো ....
মোম বাতীগুলোর কাছে এসে আগুনের তাপ অনুভব করেই
বোধহয় সম্বিত ফিরে পেল সুদর্শন। বললো – এটা কি ঠিক হচ্ছে সুজান? মানে আমি বলতে চাইছি...
-ডোন্ট ওরি সু । এখানে শুধু তুমি আর আমি এবং
রবার্ট। রবার্ট কাওকে কিছু বলবে না। ইন ফ্যাক্ট ওরও এটাতে সম্মতি আছে।
চমকে উঠলো সুদর্শন। “সম্মতি আছে “ মানেটা কি???
ততক্ষণে বাতাস আরও ভারি হয়েছে বদ্ধ ঘরটায় অজানা
গন্ধ আর মোমবাতির তাপে। শ্বাস নিতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে সুদর্শনের। সেটা লক্ষ্য করে মিসেস
মোলনার বললেন – একটু অসুবিধা হচ্ছে তাই না ডিয়ার? কিছুক্ষন বাদে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মিসেস মোলনার সুদর্শনকে নিয়ে বসলেন মিঃ মোলনারের
শায়িত দেহটির পাশে। সামনে রাখা এক বিচিত্রদর্শন পাত্র থেকে ছোটো দুটো কাঠের বাটিতে
মিসেস মোলনার ঢাললেন রক্ত বর্ণ তরল।দুহাতে দুটো বাটি তুলে নিয়ে ডানহাতেরটা এগিয়ে
ধরলেন সুদর্শনের দিকে। - খাও সু ...
সুদর্শনের ইতস্তত ভাব দেখে বামহাতের পাত্রটায় আগে চুমুক দিলেন মিসেস
মোলনার। পরক্ষনেই ডানহাতের বাটিটা চেপে ধরলেন সুদর্শনের মুখে। কিছু না বুঝেই এক
চুমুক গিলে ফেললো ও। অতিরিক্ত মিষ্টিতে ওর মুখ বিকৃত হয়ে এলো। সেই একই রকমের গন্ধ, যেটা ছড়িয়ে আছে এই ঘরের আনাচে কানাচে।
- এটা তৈরি করা
শিখিয়ে ছিলেন আমার মা। আমি তখন কিশোরী। কতশত বছর কেটে গেল।
না জানা কি এক টানে এবার সুদর্শন নিজেই পাত্রটায় এক চুমুক দিলো। ওর কষের ফাঁক দিয়ে
গড়িয়ে এলো কয়েক ফোঁটা রক্ত বর্ণ তরল।খিলখিলিয়ে হেসে উঠলেন মিসেস মোলনার।হিমশীতল এক
রোমাঞ্চর স্রোত গড়িয়ে গেল সুদর্শনের শিরদাঁড়া বেয়ে। উঠে দাড়াঁলেন মিসেস মোলনার।
ধীর লয়ে মাথা ও শরীর ঝাঁকিয়ে হাতের মোচড় এবং পায়ের তালে শুরু করলেন এক সম্মোহনকারী
নাচ। সাথেই অনেক দূর থেকে যেন একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো সুদর্শন।
- ওহ ডিয়ার , কতদিন ধরে আমরা অপেক্ষা করে আছি তোমার মতো একটা মানুষের জন্য। রবার্টের
আত্মার খুবই দরকার ছিল তোমার মতো একটা শরীরের।
প্রথম কিছু কথা
মাথায় ঢুকলেও পরের গুলো কিছুই বুঝতে পারলো না সুদর্শন।অদ্ভুত পাত্রের তরল সে তখন
নিজেই ঢেলে ঢেলে খাচ্ছে ।ওদিকে রবার্টের শায়িত শরীরের ওপর থেকে মিসেস মোলনার তুলে
নিয়েছেন একটা লম্বা চকচকে তীক্ষ্ণ ছোরা। অসংখ্য মোমবাতির আলোয় ঝলসে উঠলো তার
ফলাটা।
-আমার মা এ প্রথা
শিখেছিলেন তার মার কাছে। ভালবাসার মানুষ্ কে চিরকালের জন্য জীবিত রাখার এক অমোঘ
উপায়। রবার্ট সময় এসে গেছে রূপান্তরের। এবার তোমায় স্নান করাবো সুদর্শনের সতেজ
জীবনস্রোতে। আবার তুমি ফিরে আসবে ...।
রক্তবর্ণ পানীয়ের
প্রভাবে কিম্বা অজানা গন্ধের আচ্ছন্নতায় প্রায় অচৈতন্য সুদর্শন অনুভব করলো একটা
জ্বলন্ত আগুন যেন ঢুকে গেল ওর হৃদপিণ্ডে.....
................
অফিসের সামনে
প্রয় আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন মিস্টার গণসাল্ভেজ।বাকি কর্মীরাও হাজির। শুধু সুদর্শনেরই
পাত্তা নেই। ডুপ্লিকেট চাবিটাও আনেন নি মিস্টার গণসাল্ভেজ। কারন সুদর্শনের ওপর
ভরসা করা যায়। কিন্তু কি হল আজ ওর? সুদর্শনের মোবাইল স্যুইচ অফ জানান দিচ্ছে।
বিনোদ গিয়েছিল সুদর্শনের বাসস্থানে। ওর স্কুটি আর মিসেস মোলনারের গাড়ি একসাথে এসে
থামলো অফিসের সামনে।
বিনোদ বললো- স্যার সুদর্শন বাড়িতে নেই। ওর
ল্যান্ডলেডী বললেন গতরাতে ও নাকি ফেরেইনি!
মিস্টার গণসাল্ভেজ বিস্ফারিত মুখে বললেন –
হোয়াট? কি বলছো তুমি!!
এসময় গাড়ির কাঁচটা নামিয়ে মিসেস মোলনার
প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন –হোয়াট হ্যাপেন মিস্টার গণসাল্ভেজ? এনিথিং রঙ? সবাই তাকিয়ে
দেখলো আজ আর কালো পোশাক পড়ে নেই উনি।মুখে নেই আবরণ। মুখটাও অনেক বেশী
প্রানোচ্ছলতায় ঝকঝক করছে।বিষাদের চিহ্ন মাত্র নেই একফোঁটা।
-নাথিং সিরিয়াস ম্যাম। সুদর্শন, আই মিন সুদর্শন
রয়।
- হ্যাঁ কি হয়েছে ওর? আজ আমার ওখানে গেলনাতো এখনো?
ভেবেছিলাম ওর হাত দিয়েই পেমেন্টটা ...
- হ্যাঁ জানি।কি হয়েছে সেটাই বুঝতে পারছি না...
ও এখনো আসেনি ... ডোন্ট ওরি, আমি অন্য লোক পাঠিয়ে দিচ্ছি । আপনি চিন্তা করবেন না।
মিসেস মোলনার বললেন – তার আর দরকার নেই মিস্টার
গণসাল্ভেজ। আমরা সিদ্ধান্ত বদলেছি। দেহ সকালেই কবরস্থ করা হয়ে গেছে।আর কাওকে
পাঠাতে হবে না। এই নিন আপনার পেমেন্টটা। এক্সট্রাটাও আছে ওখানে। মিঃ রয় কে দিয়ে
দেবেন।
একটা বাদামী প্যাকেট বাড়িয়ে ধরলেন গাড়ির ভেতর
থেকে।
- থাঙ্কস মিসেস মোলনার।উই আর রিয়্যালি ফিল সরি ফর ইয়োর গ্রেট লস।
- ইটস ওকে মিস্টার গণসাল্ভেজ । সাচ ইজ লাইফ।
বসের ইশারায় বিনোদ এগিয়ে গেল প্যাকেটটা নিতে।
আর তখনই ওর নজর পড়লো মিসেস মোলনারের পাশে বসা লোকটার দিকে। চমকে গেল ও। মনে মনে বললো,
আই ব্বাস এত মিল হতে পারে দুটো মানুষের!!! এতো হুবহু মিঃ রবার্ট মোলনার !!!
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment