Search This Blog

Monday, June 5, 2017

অদল বদল [কল্প বিজ্ঞানের গল্প]

কল্প বিজ্ঞানের [Science Fantasy] গল্প
“অদলবদল”
শারদ সংখ্যা "ইষ্টিকুটুম" ১৪২৩ এ প্রকাশিত

ক্যুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি ম্যানের কাছ থেকে লালরঙের রয়াল সাইজ খামটা হাতে পেয়ে ভাবলাম বছরের  মাঝামাঝি সময়ে কে আবার গ্রীটিংস কার্ড পাঠালো। ওপরে কালো মোটা স্কেচ পেন দিয়ে আমার নাম ঠিকানা লেখা থাকলেও কোন প্রেরকের উল্লেখ নেই। ডাক টিকিটও নেই যে অনুমান করবো।
বেশী মাথা না ঘামিয়ে খুলেই ফেললাম খামটা। ভেতর থেকে বের হল একটু ছোটো মাপের আর একটা হলদে খাম । যার ওপর লেখা, ইংরাজিতে ।। ফ্রম রিচারড জন বোল্টন, ৩/৭ মেইলর স্ট্রিট, লন্ডন, ইউ কে। জনের চিঠি এতদিন পর!!!
“  হেল্লো ...গুডমর্নিং... আই অ্যাম রিচারড জন বোল্টন ফ্রম লন্ডন।”-কানে ভেসে এলো বছরকয়েক আগে শোনা কণ্ঠের ধ্বনি।সেদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম গ্লোবট্রটার জাহাজের দোতলার ডেক রেলিংএ। উপলক্ষ্য, ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবারগ এর সাথে যুক্ত একটি সংস্থা আয়োজিত ‘সেমেস্টার অ্যাট সি’। বিদেশের বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীদের একই সাথে দেশভ্রমণ ও বিশেষ ডিগ্রী লাভের সুযোগ হয় এতে।আয়োজক সংস্থার অনুরোধে ভারতীয় চিত্রকলা বিষয়ে চার সপ্তাহের অনারারী ইন্টার পোর্ট লেকচারারের দায়িত্ব পেয়েছিলাম।
জাহাজে তৃতীয় দিন ছিল সেটা।ঘূরে তাকাতেই দেখতে পেলাম ক্রিকেটার ডেভিড গাওয়ারের মতো দেখতে একটি মানুষ আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।
“গুডমর্নিং মিঃ বোল্টনডিউক ব্যানারজী ফ্রম ইন্ডিয়া।”
প্রাথমিক আলাপচারিতা শেষে জন আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কিছু সময় ওর সাথে কাটানোর জন্য। কোন কাজ ও ক্লাস না থাকায় আপত্তির কোন ব্যাপারই ছিল না। একঘণ্টার বেশী সময় ধরে চলেছিল আমাদের কথাবার্তা। বাকি দিনগুলোতে এরকম একাধিক আড্ডায় আমরা একে অপরের অনেক কথাই জেনে ফেলেছিলাম।
ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবারগ এ জন গবেষণা করছিল শরীর ও মনের ওপর বিশেষ সম্পর্ক নিয়ে। নিরিবিলি সেই কাজের ব্যাপারে আরও কিছু ভাবনা চিন্তার জন্য এই সফরে ও এসেছে ডেপুটি অ্যাডমিন হয়ে। পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান। দাদা বউদি কাজ করতেন সেক্রেটারিয়েট ডিপার্টমেন্টে। এক মর্মান্তিক অ্যাকসিডেন্টে জনের ভাইপোটি ছাড়া সকলেই মারা যায়। পারিবারিক সুত্রে অগাধ সম্পত্তির মালিক।
কোনো ভ্রমণ শেষে যা হয় এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।প্রথম তিন চার মাসে বেশ চিঠি পত্রের আদানপ্রদান। তারপর আস্তে আস্তে সব থেমে গেলশেষের দিকে পর পর দুটো চিঠির  কোনো উত্তর না পেয়ে আমি আর উৎসাহ দেখাইনি। এতদিন বাদে জনের মনে পড়লো তাহলে আমাকে... তাও আবার রহস্যময় লাল খামে হলুদ খাম।
ভাবনা চিন্তার জগতে তালা দিয়ে হলুদ খামটাও খুললাম। ভেতরে হাল্কা সবুজ রঙের একটা ভাঁজ করা কাগজ শুধু। ভালো করে দেখলাম , না আর কিছু নেই। দামী কাগজে চিঠি লেখা জনের একটা শখ। আগের সব চিঠিগুলোই তার প্রমান। শখের পরিবর্তন হয়েছে নাকিরে বাবা? ভাঁজ খুলে আরও বিস্ময়! কিছুই লেখা নেই কাগজটায়। একি ধরনের রসিকতা। কি মনে হতে আলোর দিকে তলে দেখলাম। না কিছু সারি বদ্ধ বারকোড ধরনের দাগ ছাড়া আর কিছু নজরে এলো না। কাগজ কোম্পানির ওয়াটার মার্ক হবে সম্ভবত। হ লুদ খামটা আরও একবার দেখলাম। নাহ । জনের কোনও ফোন নাম্বার ও নেই। ও ফোন ব্যবহারই করে না। ওরমতে ওটা কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর আদর্শ জিনিষ। কি যে করি ???
চিঠিটা পাওয়ার পর সময় স্রোতে বয়ে গেছে ঘণ্টা ছয়েক। এখন সময় বিকেল চারটে দশ। নিতান্তই কৌতূহল বশে সবুজ কাগজটার একটা ফটো কপি করে কাছের চেনা মলটায় গিয়েছিলাম। ওদের বারকোড টার্মিনাল ওয়ান্ডটার ওপর ওটা রেখেও কোন লাভ হয়নি।
দুটো ইমেইল করেছি ইতিমধ্যে। প্রথমটা দিল্লীতে। কমপিউটার বিশেষজ্ঞ বন্ধু নক্ষত্র প্রকাশ রায়কে। ফটোকপিটার স্ক্যান করা ফাইলটা অ্যাটাচ করে। আর দ্বিতীয় ই-মেল পাঠিয়েছি ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবারগ এর অফিসে।
সন্ধে সাতটার মধ্যে দুটো ইমেলেরই জবাব এসে গেল।নক্ষত্র জানিয়েছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আ্মাকে  দিল্লী যেতে হবে। দ্বিতীয় উত্তরটা বেশ চিন্তাজনক। ওটার বয়ান অনুসারে রিচারড জন বোল্টন অনেকদিন আগেই ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবারগ থেকে বিদায় নিয়েছে। এখন ও কোথায় আছে কি করছে সেটা ওরা জানেন না।
তিনদিন পর....
পৌঁছে গেছি দিল্লী।নক্ষত্রর বাড়িতে।
ফোর সি থ্রী । নক্ষত্রর তৈরি বিশেষ ডিকোডার ডিভাইস। যার সাহায্যে পাঠ উদ্ধার হয়েছে সবুজ চিঠির। সেটাই আমি পড়ছি ল্যাপটপে।
ডিউক, মাই ডিয়ার ইন্ডিয়ান ফ্রেন্ড
জানিনা এ চিঠি কোনও দিন তোমার কাছে পাঠানোর দরকার হবে কিনা। না হলেই ভালো । আমার ওপর তুমি অনেক অভিমান করে আছো আমি নিশ্চিত। তোমার পাঠানো শেষ দুটো চিঠির উত্তর দিনি কারণ স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছিলাম গবেষণাটা দ্রুত শেষ করবো বলে। অনেকটা তোমাদের মুনিঋষিদের তপস্যার মতো বলতে পারো।
ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও সহকারীর কাজটা আমার ভাইপো স্টিফেনই করে দিতো। তোমায়তো জানিয়েইছিলাম ওর বাবামা এর কথা। মানসিক ভাবে ওকে আমি আমার ছেলের মতই মানুষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাই বিয়েটাও করিনি। ২০১৪ এর প্রথম দিকে আমি সফল হয়েছি আমার গবেষণায়। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে গণ্ডগোল। স্টিফেন কেমন যেন বদলে গেছে। ছুতোনাতায় জানতে চাইছে বুঝতে চাইছে আমার গবেষণার খুঁটিনাটি। কি বিষয়ে আমি কাজ করছি এটা ওর জানা থাকলেও, কি ভাবে কি করছি বা হচ্ছে সেটা ওকে আমি জানাই নি।
গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি ও ভিনদেশীয় কিছু মানুষের সাথে ইদানীং মেলামেশা করছে। সাথেই খোঁজ খবর নিচ্ছে পারিবারিক সম্পত্তির।
এই চিঠি আমি আমার এটর্নি মিঃ ফ্রেড স্ট্যাফোরডকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না স্টিফেনকে। এখন থেকে রোজ মিঃ  স্ট্যাফোরডকে সকালে একবার করে ফোন করবো। পর পর তিনদিন আমার ফোন না পেলে এই চিঠি যেন তোমায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় তার নির্দেশও দিয়ে দেব ওকে।
জানিনা কেন তোমায় বিশ্বাস করছি। ভরসা করছি। হয়তো ভারতীয় বলেই।

আর কিছু লেখা ছিল না। দুজনেই চুপ করে বসেছিলাম। নিস্তব্ধতা ভাঙল নক্ষত্রই।
-      কিরে কিছু বল?
-      তোর কি অভিমত?
-      আজকের কাগজে রাশিফলটা দ্যাখতো একবার...
-      মানে!!! তোর আবার এসব বাই কবে থেকে হল?
-      হয়নি তো । কুম্ভ আর বৃশ্চিক রাশিতে বিদেশ ভ্রমণ লিখেছে কিনা জানতে খুব ইচ্ছে করছে।
-      তারমানে আমরা যাচ্ছি।
-      ইয়েস ডিয়ার ফ্রেন্ড। এতটা বিশ্বাস যখন তোর ওপর ওই মানুষটার তাকে কি করে অস্বীকার করবি...
সাতদিন  পর...
লন্ডন। নক্ষত্রএর ওপর মহলে পরিচিতির সুবাদে ভিসা বার করতে বেশি সময় লাগেনি।
আমরা বসে আছি এটর্নি মিঃ ফ্রেড স্ট্যাফোরড এর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত চেম্বারে। বিখ্যাত আইন ব্যবসায়ী ‘স্ট্যাফোরড এ্যন্ড ক্রিপস’দের চেম্বার খুঁজে বার করতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
পরিচয় জানানোর কিছুক্ষনের মধ্যেই হাজির হয়েছিলেন মিঃ ফ্রেড স্ট্যাফোরড বয়স ৫০-৫৫ হবে। সাদর অভ্যর্থনার বহরেই প্রমানিত জন বেশ ভালোই দক্ষিনা দেয় এদের।
মিনিট চল্লিশ পর যখন বেরিয়ে এলাম স্ট্যাফোরড এ্যন্ড ক্রিপস হাউস থেকে তখন ভবিষ্যৎ দিশার ভাবনায় দুজনেই বাক্যহারা।
উনি আমাদের আরও দুটো খাম দিয়েছেন। যার মধ্যে এক্তিতে আছে একটি মাইক্রো চিপ। আর অন্যটিতে ১০ হাজার পাউন্ড। এরকমই নাকি নির্দেশ দেওয়া আছে মিঃ রিচারড জন বোল্টন দ্বারা।

ওইদিন বিকেল। স্থান – ৩/৭ মেইলর স্ট্রীট।
দেখা পেয়েছি স্টিফেন বোল্টনের।উচ্চতা জনের মতোই তবে স্বাস্থ্য আরও ভাল।আচরণে কেমন একটা ইতস্তত ভাব। মুখ চোখে অপরাধীসুলভ ছাপ। জানালাম , আমরা রিচারড এর ভারতীয় বন্ধু । বেড়াতে এসেছি লন্ডনে। দেখা করতে চাই ওর সাথে।
শুনে বললো- কিছু দিন আগে এলে সুস্থ দেখতে পেতেন।
-      সেকি!!কি হয়েছে জনের?
-      সেটা যদি জানতে পারা যেত তাহলে তো ভালই হতো।
-      ডাক্তার দেখানো হয়নি।
-      হবে না কেন। পারিবারিক ফিজিসিয়ান রোজ আসছেন। কিন্তু তিনিও তো কিছুই বুঝতে পারছেন না। আঙ্কল কোনও কথাই বলছেন না।
নক্ষত্র বললো – একবার দেখা করা যাবে?
স্টিফেনের মুখে অনিচ্ছার ভাব ফুটে উঠলেও কিছু একটা ভেবে নিয়ে ও রাজি হয়ে গেল।
নিয়ে গেল  বাড়িটার ভেতর। বাড়িতো না যেন প্রাচীনকালের দুর্গ। ঘরের উচ্চতা সাধারন মাপের তিন চার গুন। বড় একটা চত্বর পেরিয়ে স্টিফেন আমাদের নিয়ে গেলে একটা তালা বন্ধ ঘরের কাছে। জানলার বাইরের কাঠের খড়খড়ি তুলে দিতেই দেখতে পেলাম জনকে। ছয় ফুট উচ্চতার মানুষটা কুঁজো হয়ে হেলেদুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা ঘরটায়। জন বলে ডাকতেই একবার তাকালোও আমাদের দিকে। তারপরই একলাফে উঠে গেল একপাশে রাখা টেবিলটার ওপর। আশ্চর্যের বিষয় এই ঠাণ্ডায় জনের গায়ে কেবল মাত্র একটা পাতলা জামা। তার বেশিরভাগ বোতাম খোলা। আর একটা বারমুডা প্যান্ট। কিছু আধখাওয়া ফল পড়ে আছে এদিক ওদিকে।
মাস খানেক হতে চললো এই অবস্থা, জানাল স্টিফেন। মিঃ স্ট্যাফোরড ও সকালে জানিয়েছিলেন, বর্তমান মাসের তিন তারিখে এসেছিল শেষ ফোন। আজ ২৮ তারিখ। তিনি নিজে এসেছিলেন ৭ তারিখে। আমরা যা দেখছি তিনিও প্রায় একই অবস্থা দেখেছিলেন। শুধু সেদিন ঘরের এক কোনে চার হাতপা এক করে কুঁকড়ে বসে ছিল রিচারড। এরপর পরই উনি চিঠিটা আমার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেন।

একই দিন। সময় রাত ৯টা। স্থান মিঃস্ট্যাফোরড মনোনীত হোটেলের ঘর।
ফিরে আসার পর থেকে নক্ষত্র ল্যাপটপ আর চিপটা নিয়ে খুটুর খুটুর করেই চলেছে। পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড চিপ ফলে কি তথ্য অতে সঞ্চিত আছে তা এখনো অজানা। একের পর এক কল্পিত পাসওয়ার্ড ‘ডিনাই’ করার শব্দ ভেসে আসছিল কানে। মোট ১৮টা ক্যারেক্টার আছে পাসওয়ার্ড টায়। যার মধ্যে দুটো ব্ল্যাঙ্ক স্পেস আছে, জানিয়েছে নক্ষত্র
আরও কিছু সময় কেটে যাওয়ার পর আমি বললাম, ডিয়ার ফ্রেন্ড চল ডিনার টা সেরে আসি। পেটে খাদ্য আর মাথায় ফ্রেস হাওয়া লেগে যদি বুদ্ধিটা খোলে।
-      ওয়েট আ সেকেন্ড! কি বললি ... তাইতো ...
কথাটা বলেই কি বোর্ডে ঝটপট কিছু একটা টাইপ করলো নক্ষত্রআর সাথে সাথেই ধ্বনিত হলোও কাঙ্খিত সেই শব্দ যার অর্থ পাসওয়ার্ড অ্যাকসেপ্টেড।
রুম সার্ভিসে ফোন করে খাবারটা ঘরেই পাঠিয়ে দিতে বল ডিউকপ্রথম দুটো শব্দ আগেই ধরে ফেলেছিলাম, তৃতীয়টার নাগাল পাচ্ছিলাম না। তোর উদ্দেশ্যে চিপ অর্থাৎ তুই, তার মানে ডিউক। চিঠিতে লেখা তিনটে শব্দ ভুলে যাসনি বোধ হয় - “হয়তো ভারতীয় বলে”- ভারতীয় মানে ইন্ডিয়ান। বিশ্বাস কাকে করা যায়? এটাই ধরতে পারিনি। তোর সাথে রিচারডের সম্পর্ক টা মাথা থেকে বেমালুম হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। বন্ধু অর্থাৎ ফ্রেন্ড। আসলে পাসওয়ার্ডটা তোকে পাঠানো চিঠির সম্বোধনেই দেওয়া ছিল। ডিউক মাই ডিয়ার ইন্ডিয়ান ফ্রেন্ড
ডিনার সারার পর দেখলাম চিপের তথ্য ভান্ডার। তিনটে ফোল্ডার। ১. বাড়ির নকশা, ২. গবেষণার বিষয় এবং ৩. রিচারডের আশংকা সম্বলিত বয়ান।

নকশা নিয়ে কিছু বলার নেই। গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়টা যথেষ্টই কৌতূহলজনক। মাইন্ড এক্সচেঞ্জ। মনের অদল বদল। কেরলমাত্র মানুষ নয় মানবেতর প্রানীদের ও মন আছে এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে তবেই এ গবেষণার সূচনা করে রিচারড। একাগ্র তপস্যার ফলও মেলে। প্রথম সফলতা আসে দুটি মানবেতর প্রাণীর মধ্যে মানসিক অদল বদল ঘটিয়ে। পাল্টে যায় তাদের আচার আচরণ খাদ্যাভাস। ক্রমে ক্রমে বড় প্রানীর ক্ষেত্রে পরীক্ষণের সফলতা বাড়িয়ে দেয় আশার পারদের উচ্চতা। এবার ল ক্ষ্য স্থির হয় মানুষের সাথে মানবেতর প্রানীর মনের রদবদল ঘটানোর। স্টিফেন যেচে এ পরীক্ষায় গিনিপিগ হতে রাজি হয়।। এক্ষেত্রেও ১০০% সফলতাই প্রাপ্তি হয় গবেষকের। স্টিফেনকে ফিরিয়ে আনে আগের সত্তায়। আর এ ঘটনার পর থেকেই বদলে যায় স্টিফেনের মতিগতি। চিঠিতেই জানিয়ে ছিল স্টিফেনকে বিশ্বাস করতে পারছে না রিচারড। চিপ এর আশঙ্কা বয়ান পড়ে জানতে পারলাম প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছিল গবেষণার ফর্মুলা হাতে পাওয়ার জন্য। রিচারড লিখেছে – “ডিউক প্রানের ভয় আমার নেই। গবেষণার সফলতাতেই আমার সব পাওয়া হয়ে গেছে এ জীবনে। স্টিফেন আমাকে মেরে ফেলার সাহস দেখাবে না এটা বুঝতে পারছি। কারন তাহলে ফর্মুলা হাত ছাড়া হবে। কেবলমাত্র যন্ত্রপাতি দেখে কিছু করার মতো বোধবুদ্ধি ওর নেই। আমার ভয় অন্য জায়গায়। লোভের বশে বোকামো করে আমার কোনও রকম অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে উলটো পালটা কিছু না করে দেয়। কিন্তু উলটো পালটা কি করবে সেটাও আমি ঠিক বলতে পারছি না। কিন্তু কেন জানিনা আমার মনটা কুডাক ডাকছে।”
সকালে মেইলর স্ট্রীটের বাড়িতে দেখা রিচারডের ভাবভঙ্গী ভেসে উঠলো মনের পর্দায়। হেলে দুলে হাঁটা। ঘরে পড়ে থাকা ফলের ভুক্তাবশেষ। শীতের অনুভুতি না হওয়া। নাহ, আশংকা ভুল ছিল না রিচারডের। স্টিফেন উল্টো পালটা কাজটা করেই ফেলেছে। ঘটিয়েছে অদল বদল। কিন্তু কোন প্রাণীর সাথে? কি ভাবে করলো?
নক্ষত্রর দিকে তাকালাম। ও বললো – একই কথাই আমরা ভাবছি মনে হয়। মিঃ স্ট্যাফোরডকে একটা ফোন কর। জানিয়েদে কাল সকাল দশটায় আমরা ওর অফিসে যাচ্ছি।
-মিঃ স্ট্যাফোরড...কিন্তু...
- কোনও কিন্তু নয়। এ ব্যাপারে যা কিছু সাহায্য এক মাত্র উনিই করতে পারবেন আমাদের। আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে।
পরেরদিন। স্ট্যাফোরড এ্যন্ড ক্রিপস হাউস।
আমার ক্লায়েন্ট মিঃ রিচারডের নির্দেশ অনুসারে আমার পক্ষে সম্ভব যে কোনও রকম সাহায্য আপনাদের করতে আমি দায়িত্ববদ্ধ।
মিঃ স্ট্যাফোরড একথাটা বলতেই নক্ষত্র কিছু প্রশ্ন করলো এবং কিছু কাজ করার নির্দেশ দিল ওনাকে।
দুদিন পর। হোটেল। বিকেল বেলা।
ফোন বেজে উঠলো। নক্ষত্রই ধরল।
-      ওকে, আমরা যাচ্ছি।
মোবাইল ফোনটা পকেটে পুরেই জানালো মিঃ স্ট্যাফোরড এর ফোন। মক্কেলরা হাজির। চল যাওয়া যাক।
১০ মিনিট পর... মিঃ স্ট্যাফোরডের চেম্বার।
ঘরে আমরা চারজন। মিঃ স্ট্যাফোরড, নক্ষত্র, আমি এবং বব গুড উইন। শেষজন  জীবজন্তু সরবরাহকারী ও ট্রেনার। জন্মসূত্রে আফ্রিকান। চেহারা সাদামাটা। গায়ে লাল হলুদ স্ট্রিপ দেওয়া জ্যাকেট আর ডেনিম জিন্স এর ট্রাঊজার। পায়ে স্নিকার।
নক্ষত্রর নির্দেশ মত মিঃ স্ট্যাফোরড নিজের চেনা পরিচিতির গণ্ডি কাজে লাগিয়ে ববকে খূঁজে বের করেছেন। রিচারডের গবেষণার জীবজন্তু ববই যোগান দিত।
নক্ষত্র শুরু করলো জিজ্ঞাসাবাদ।
-      মিঃ বব কতদিন ধরে তুমি মিঃ বোল্টদের চেনো?
-      বছর চারেক হবে।
-      কি ভাবে?
-      জীবজন্তু সাপ্লাই এর সূত্রে।
-      আইন মেনে কাজটা হয়?... নক্ষত্রর আওয়াজে কাঠিন্য।
-      না ...মানে সব সময় সম্ভব হয় না।
-      শেষ কি দিয়েছিলে ওখানে মনে আছে?
-      হ্যাঁ । একটা শিম্পাঞ্জী। আমারই পোষা।
উত্তরটা শুনেই আমি নক্ষত্রর দিকে তাকালাম। ওর ঘাড়ও ঘুরেছিল আমার দিকে।
-কতদিন আগে?
একটু চিন্তা করে বব বললো – তা মাস পাঁচেকতো হবেই।
-      ওটা কেনার ব্যাপারে কে যোগাযোগ করেছিল তোমার সাথে? ...জানতে চাইলাম আমি।
-      অন্যান্য বারের মতই মিঃ স্টিফেন।
-      কততে বিক্রি করেছিলে ওটাকে?
একটু ইতস্তত করে বব জানালো – আট হাজার পাউন্ড।
নক্ষত্র বলল – শোনো বব তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।
-কি কাজ?
- শিম্পাঞ্জীটাকে স্টিফেনের কাছ থেকে কিনে আনতে হবে।
- মিঃ স্টিফেন কি রাজি হবেন?
- যাতে হন তার ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে। আপাততঃ ১০ হাজার পাউন্ড দিচ্ছি। যদি বেশী লাগে দেব আর কমে করতে পারলে যা থাকবে সেটা তোমার।
চকচকে চোখে উৎ সাহের সুরে বব বললো – দেন ওককে।
নক্ষত্র বলল – মিঃ স্ট্যাফোরড ওকে ১০ হাজার পাউন্ড দিয়ে দেবেন এখান থেকে যাওয়ার সময়।
মিঃ স্ট্যাফোরড সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে সেক্রেটারিকে নির্দেশটা দিয়ে দিলেন।
 আর একটা কথা মিঃ বব , সম্ভবত শিম্পাঞ্জিটা তোমার সাথে আসতে চাইবে না।
-      ও নিয়ে ভাব্বেন না স্যার। নিক্সিকে আমি ছোট থেকে মানুষ করেছি। ও আমায় ভালোমতই চে...
-      আমি বলছি ও আসতে চাইবে না। ...কথাগুলো কেটে কেটে উচ্চারন করলো নক্ষত্র... তুমি এই কাগজটা ওকে দেখাবে। তবেই ও রাজি হবে।

কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো বব।  অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলো ওটাকে। ওটা রিচারডের পাঠানো হলুদ খামের ভেতরের সবুজ রঙের কাগজটা। তার পর যন্ত্রের মতো ‘গুডবাই’ বলে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। নক্ষত্র ওকে থামালো।
-      কে বা কারা শিম্পাঞ্জিটাকে কিনতে চাইছে সেটা জানার অহেতুক কৌতূহল দেখিয়ো না। সাথে সাথেই স্টিফেন কে কিছু বলার চেষ্টাও কোরো না। ২৪ ঘণ্টা তোমার ওপর পুলিসের নজরদারি থাকবে যতক্ষণ না কাজ হাসিল হয়। নিক্সির ডেলিভারি কোথায় নেব সেটা তোমার ফোন পেলে জানাবো।
বব ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। নক্ষত্র বলল – এবার আপনাকে দ্বিতীয় কাজটা করতে হবে মিঃ স্ট্যাফোরড
-      ওহ ইয়েস। ... পুনরায় ফোন করলেন , বললেন – মিস ব্লেয়ার,  সেন্ড ডাঃ স্টুয়ারট হোপ ইন মাই কেবিন।
আরো দু দিন পর। হোটেলের ঘর। সময়, বিকেলবেলা।
একটি বিশেষ ধরনের চেয়ারে হাত পা ও কোমরে  স্টিল বেল্ট দিয়ে আটকানো অবস্থায় বসে ছটপট করছে রিচারড বোল্টন। ডাঃ হোপ মিঃ স্ট্যাফোরড এর নির্দেশ মতো[নক্ষত্রর কথানুসারে] মানসিক হাস পাতালে নিয়ে যাওয়ার ছুতোয় রিচারডকে এখানে পৌঁছে দিয়েছেন। ওদিকে জানলার পাশে একটি চেয়ারে বসে আছে একটি জামা প্যান্ট পড়া শিম্পাঞ্জী। যার সামনে রাখা আছে নক্ষত্রর ল্যাপটপটা।
বব কাজ হাসিল করেছে কোন রকম সমস্যা ছাড়াই। মাত্র ৫ হাজার পাঊন্ডে স্টিফেন নিক্সিকে ওর হাতে তুলে দিয়েছে। বাকি ৫ হাজার পেয়ে ববতো দারুন খুশী। শুধু জানতে চেয়েছিল নিক্সি ওকে চিনতে পারলো না কেন? ওকে বলা হয়েছে বৈজ্ঞানিক এক্সপেরিমেন্ট এর কারনে এটা হয়েছে।
দরজায় দুবার টোকা এবং শোনা গেল মিঃ স্ট্যাফোরড এর কণ্ঠ – মে আই কাম ইন।
ইয়েস প্লিজ মিঃ স্ট্যাফোরড ... উত্তরটা আমিই দিলাম
ঘরে ঢুকেই থমকে গেলেন উনি যখন শিম্পাঞ্জিটা চেয়ার থেকে নেমে হেলে দুলে এগিয়ে এলো ওর দিকে। হাতটা হ্যান্ডসেকের জন্য বাড়াতেই উনি এক লাফে পিছিয়ে গেলেন বেশ খানিকটা। সাথেই আতঙ্কের সাথে কোনোমতে বললেন – মিঃ বানারজি!!!
-      কোনো ভয় নেই মিঃ স্ট্যাফোরড। আপনি স্বচ্ছন্দে হ্যান্ডসেক করুন এবং বসুন।... বললো নক্ষত্র
কোনক্রমে হ্যান্ডসেকটা সেরে চেয়ারে গিয়ে বসলেন মিঃ স্ট্যাফো্রড। শিম্পাঞ্জীটাও ফিরে গেল নিজের চেয়ারে।
-      কফি মিঃ স্ট্যাফোরড? নাকি হার্ড ড্রিঙ্কস বলবো?
-      ক...কফি... কিন্তু আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আওয়াজেই মালুম হল উনি এখনও ধাতস্থ হননি।
থারমোফ্লাস্ক থেকে কফি ঢালতে ঢালতে নক্ষত্র প্রশ্ন করলো – মাইন্ড এক্সচেঞ্জ বলে কোনো কথা শুনেছেন মিঃ স্ট্যাফোরড?
-      মাইন্ড এক্সচেঞ্জ!! নাহ । কেন?
-      আপনার মন আমার শরীর, আমার মন আপনার শরীর। ব্যাপারটা কেমন হবে বলে আপনার মনে হয়?
    -হোয়াআআ...ট!!! আপনার মন আমার শ রী ...কথা থেমে গেল মিঃ স্ট্যাফোরড এর বিস্ময়ের আধিক্যে।
 **প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , যদিও বাহুল্য, কথাবার্তা সবই হচ্ছিল ইংরাজিতে। গোটা ব্যাপারটা নিয়ে বলার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি নক্ষত্রর ওপর। আসলে প্রথম থেকে প্ল্যান পরিকল্পনা সবইতো ও করেছে। আমি দর্শক মাত্র। মিঃ স্ট্যাফোরডকে সব কথা খুলে বলার অনুমতি অবশ্য দিয়েছে স্বয়ং রিচারড।**
-ঠিক তাই। তার প্রমান আপনার সামনে এই ঘরেই। যে শিম্পাঞ্জী চেয়ারে বসে আছে তার মধ্যে ই আপাতত অবস্থান করে আছে আপনার ক্লায়েন্ট মিঃ বোল্টন এর মন। আর স্টীল বেল্ট বন্দী রিচারড শিম্পাঞ্জীর মনের ধারক।
মিঃ স্ট্যাফোরড এর মুখ চোখে অবিশ্বাস আর বিস্ময়ের ছাপ সুস্পষ্ট। কুঁচকে গেছে কপাল, নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে নিঃশ্বাসের চাপে।
নক্ষত্র আবার বলা শুরু করলো – জানি বিশ্বাস করা অসম্ভব। আমাদেরও হয়নি প্রথমে। বলে রাখা ভালো মিঃ স্ট্যাফোরড এটাই মিঃ রিচারড জন বোল্টনের যুগান্তকারী গবেষণার গোপন ফলাফল।যার সুযোগ নিয়েছে ওর ভাইপো স্টিফেন। রিচারডের সামনে যে ল্যাপটপটা রাখা আছে ওটাতে আপনি যা খুশী একটা প্রশ্ন করুন টাইপ করে। দেখুন তো কি জবাব পান । আশা করি সেটা আপনার সন্দেহ নিরসনে সহায়তা করবে।
মিঃ স্ট্যাফোরড জানতে চাইলেন ‘স্ট্যাফোরড এ্যন্ড ক্রিপস’ অফিসের ঠিকানা । কিবোর্ডে ধীরে ধীরে টাইপ করে যার উত্তর দিতে কোনও সমস্যাই হল না শিম্পাঞ্জিরুপী রিচারডের।
দারুন কোন ঘটনা যেভাবে মানুষকে হতভম্ব করে দেয় মিঃ স্ট্যাফোরড ও তার প্রভাব এড়াতে পারলেন না। ধপ করে বসে পড়লেন কাছের চেয়ারটায়।
এবার আমি বললাম লাল খাম পাওয়া থেকে এ পর্যন্ত ঘটনার খুঁটিনাটি বিবরণ।
সবশুনে তৎক্ষণাৎ স্টিফেনকে গ্রেপ্তার করার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন মিঃ স্ট্যাফোরডবাধা দিল নক্ষত্রবললো- এখনো পর্যন্ত যখন সব ঠিক ঠাক প্ল্যান মাফিক এগোচ্ছে তখন শেষটাও হতে দিন। প্লিজ মিঃ স্ট্যাফোরড
-      ওকে অ্যাজ ইউ লাইক।
শিম্পাঞ্জিরুপী রিচারড ও দুবার টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানালো নক্ষত্রর কথায়।
-      মিঃ স্ট্যাফোরড আপনি অফিস ফিরে গিয়ে স্টিফেনকে ডেকে পাঠান। বলুন রিচারডের সম্পত্তি হস্তান্তর নিয়ে কিছু আলোচনা আছে। যেভাবেই হোক ঘণ্টা দুয়েক ওকে আটকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিতে হবে আপনাকে। এসময়টার খুব প্রয়োজন মিঃ বোল্টন কে নিজের মন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। সাথে সাথেই পুলিসে খবর দিন এবং মিঃ বোল্টনের বাড়িতে আমাদের ঢোকার ব্যবস্থা করে দিন। স্টিফেন এ টোপ গিলবেই আমার ধারনা। ও চেম্বারে এসে পৌঁছালেই আপনি আমাকে ফোন করবেন। আমরা রওনা দেব।
মিনিটের কাঁটা পঞ্চাশবার পাক দেওয়ার আগেই মিঃ স্ট্যাফোরডের ফোন এসে গেল। আমরা চললাম রিচারডের বাড়ির পথে।
দু ঘণ্টা পর। স্ট্যাফোরড এ্যন্ড ক্রিপস হাউস।
মিঃ স্ট্যাফোরড এর সাথে চেম্বারে খোসগল্পে মগ্ন স্টিফেন। দরজায় নক না করেই দুজন মানুষ প্রবেশ করলো ঘরটিতে। তার পেছনে আমরা। সবার শেষে রিচারড। এবার নিজের দেহ ও মন সহ।
-      গুড এভিনিং মিঃ স্ট্যাফোরড... অ্যান্ড ইউ টু মাই ডিয়ার স্টিফেন!
চেনা গলা শুনে ফিরে তাকালো স্টিফেন। রিচারডকে দেখে আতঙ্কে বিস্ময়ে সাদা কাগজের মতো রক্তশূন্য হয়ে গেল ওর মুখাবয়বদুবার ঢোক গিলে খসখসে স্বর ধবনিত হল ওর গলায় – আ...আঙ্কল!! হাও...ইউ ...হি ...
-      কন্সপিরেসি ফর অ্যাটেম্পট টু মার্ডার মিঃ রিচারড জন বোল্টন, অফিসার প্লিজ অ্যারেস্ট মিঃ। স্টিফেন বোল্টন...... ভারি গলায় বলে উঠলো নক্ষত্র
পরের দিন। ৩/৭ মেইলর স্ট্রীট।
সব কিছু এত সহজে সমাধান হবে আমি আশাই করিনি। সৎ উদ্দেশ্য ছিল বলেই বোধহয় কোনো রকম বাধার সম্মুখীন আমাদের হতে হয়নি। হোটেল ছেড়ে আমরা আপাতত রিচারডের অতিথি। ভিসার মেয়াদ আছে আরও দিন কয়েকের। এই কদিনের ব্যস্ততায় লন্ডন ঘুরে দেখাই হয়নি। সে দায়িত্ব নিয়েছে রিচারড স্বয়ং। ওরও তো এখন অখণ্ড অবসর।
কাহিনীর সমাপ্তি এখানে টানলে পাঠক পাঠিকারা আমাকে ক্ষমা করবেন বলে মনে হয় না। তাই স্টিফেন বোল্টনের স্বীকারোক্তিটা পেশ করাই শ্রেয় বলে মনে করলাম।
“আই অ্যাম স্টিফেন বোল্টন। সন অফ টিমোথি এ্যন্ড সান্দ্রা বোল্টন।.... পড়াশোনায় খারাপ ছিলাম না। কিন্তু কুসঙ্গে সে সব সোজা পথে কাজে লাগাতে পারিনি।.... রেস আর জুয়ার নেশায় সব বরবাদ হয়ে গিয়েছিল। কলেজ জীবনেই এর সূত্রপাত। হারতে হারতে রোখ চেপে গিয়েছিল বড় দাঁও মারার। বরাদ্দ হাত খরচে আর চলছিল না। শুরু করি ধার করা। একসময় সেটা এমন পরিমাণ হয়ে দাঁড়ালো যে তা শোধ করা আমার অসাধ্য। এরই মধ্যে কোনও ক্রমে বায়োলজির ডিগ্রীটা হাসিল করি। যেটা দেখে আঙ্কল আমাকে তার সহকারী করে নেন। আর্থিক চিন্তায় জেরবার আমি সে কাজেও মন দিতে না পারায় উনি ভাবতেন আমি একটা অপদার্থ, বোকা। ফলে খুব একটা আড়াল রেখে উনি গবেষণার কাজটা করতেন না।মনোযোগী ছাত্র না হলেও বোকা আমি মোটেই নই। ফলে আঙ্কল কি করছেন না করছেন সবটা না বুঝলেও একবারে না বোঝার মত আকাট অবস্থাতেও ছিলাম না।
রেস কোর্সেই পরিচয় হয় টমের সাথে। একদিন নেশার ঝোঁকে ওকে বলেছিলাম আঙ্কলের গবেষণার কথা। দিনকতক বাদে ও আমাকে প্রস্তাব দেয় ফর্মুলাটা এনে দেওয়ার। বিনিময়ে এত অর্থের লোভ দেখায় যে আমি রাজি হয়ে যাই। কিন্তু মুস্কিল হল গবেষণার খূঁটিনাটি উনি কোথায় লিখে রাখেন সেটা খুঁজে বার করতে পারলাম না। খুন করিয়ে সব হাতিয়ে নেওয়ার ভাবনাও বাদ দিতে হয় ঐ জন্যই। কারন তাতে তো ফর্মুলাটা পাওয়া যাবে না।
অনেক ভেবে চিন্তে সমগ্র পদ্ধতিটা কি ভাবে কি করছেন দেখার জন্য নিজেকে মানব রুপী গিনিপিগ  এর মতো সমর্পণ করি আঙ্কলের হাতে। আঙ্কল সফল হবেন কিনা জানা ছিল না। কিন্তু এই জুয়াটা খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কোন পথ আমার সামনে খোলা ছিল না।
এবার কিন্তু আমার ভাগ্য আমার সাথে থাকে। আঙ্কল সফল হন তার পরীক্ষায়। শিম্পাঞ্জীর চোখ দিয়ে স্টেপ বাই স্টেপ দেখে নিয়ে ছিলাম সব খূঁটিনাটি।
নিজ রুপে ফিরে আশার একদিন পর আঙ্কলের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিই। তার পরই ঘটাই মাইন্ড ট্রান্সফারের ব্যবস্থা। স্মৃতি ঠকায়নি আমাকে। যা চেয়েছিলাম তাই ঘটে। জানতাম কি হবে এর ফলশিম্পাঞ্জী কথা বলতে পারবে না। আর আঙ্কল চিরন্তন ডাক্তারি পরীক্ষায় পাগল প্রমানিত হবেন। কারোর ক্ষমতা হবে না আসল ঘটনা কি হয়েছে বোঝার। একমাত্র ওয়ারিশ রুপে আমি হয়ে যাবো সব সম্পত্তির মালিক। টমকে ফর্মুলা না বেচেও আমি সব ধার শোধ করে দিতে পারবো।
পারিবারিক চিকিৎসক ডাঃ হোপ যখন আঙ্কল কে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেন আমি কথা বড়ালাম না। কারন আমিও তো সেটাই চেয়েছিলাম। সায় দিয়ে দিলাম। এর ফলে দুটো প্রাণীর কাছা কাছি আশার সম্ভাবনা আর থাকবে না। উপরি পাওনা রুপে এসে গিয়েছিল ববশিম্পাঞ্জিটা কিনতে। মেঘ না চাইতেই জল। চলে যাক ওটা যেখানে খুশী। আমি একবারে নিশ্চিন্ত। এবার আমার লাক খুলে গেছে। তখন তো জানতে পারিনি এর পেছনে......
মিঃ স্ট্যাফোরড যখন সম্পত্তি নিয়ে আলোচনার জন্য ডেকে পাঠালেন তখন পর্যন্ত ভেবেছিলাম আমার স্বপ্ন সফল হতে চলেছে.... বাট, দ্যাট টু ব্লাডি ইন্ডিয়ানস ...”
আর একজনের কথা না বলাটাও অপরাধ হবে। সে হল নিক্সি। মনের আদানপ্রদানের কারনেই বোধহয় ও এখন রিচারডকেই ওর প্রিয়জন রুপে ভাবে। আর রিচারডও ওকে পেয়ে বেশ আনন্দেই আছে।
সমাপ্ত।      
















1 comment: