Search This Blog

Wednesday, June 7, 2017

আমেরিকান মিথস অ্যান্ড লেজেন্ডস - আদি মাতা

করন[Corn] মাদার
নিউ ইংল্যান্ড উপজাতির কাহিনী
বাংলা অনুবাদ – প্রতিম দাস।
আদি মাতা
 সব কিছু বানিয়ে ছিল যে তার নাম ক্লোস্কুরবে। সে যখন এই পৃথিবীতে ছিল তখন একটাও মানুষ ছিল না। কিন্তু যেদিন সূর্য অনেক উঁচুতে উঠে গেল তখন এক তরুনের আবির্ভাব হলো এবং সে ক্লোস্কুরবেকে ডাকলো, ‘মামা!’ সম্বোধন করে । ছেলেটির জন্ম হয়েছে সমুদ্রের ফেনা থেকে। হাওয়ার ফলে একত্র হয়েছে আর সূর্যের তাপে হয়েছে শক্ত ও উষ্ণ । আর এই উষ্ণতা কারনেই ও পেয়েছে জীবন। এরপর তরুণটি ক্লোস্কুরবের প্রধান সহকারীরুপে থেকে গেল।
ওরা দুজন কতো কিছু বানাল এই পৃথিবীর জন্যএরকম সময়ে একদিন যখন সূর্য আবার একেবারে মাথার ওপর ওদের কাছে এল এক সুন্দরী কন্যা।  এক ফোঁটা শিশির ঝরে পড়েছিল একটি সবুজ গাছের পাতায়। তাকে উষ্ণতা দিয়েছিল সূর্য। আর তার ফলেই প্রান পায় এই কন্যা।
‘আমি হলাম ভালোবাসা,’ বললো কন্যা। ‘আমি শক্তিদায়িনী। আমি সব কিছুর পালিকা। আমিই সমস্ত মানুষ আর প্রানীর রুপদানকারিনী। ওরা সবাই আমাকে ভালোবাসে।’
ক্লোস্কুরবে অজানা মহাশক্তির উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানালো এই কন্যাকে ওদের কাছে পাঠানোর জন্য। আর সেই তরুণের সাথে ওর বিয়ে দিলো । ওদের একটি বাচ্চা হলোওই কন্যা হল এ ধরাতলের প্রথম মানবী মা । ক্লোস্কুরবে ওদের শেখালেন মানুষদের কি কি দরকার হয় বেঁচে থাকার জন্য সেই বিষয়ে। ওদের সন্তানদেরকেও দিলেন অনেক রকম শিক্ষা জীবন ধারনের। এরপর চলে গেলেন উত্তরের দিকে। জানিয়ে গেলেন ফিরে আসবেন যদি কোনোদিন দরকার পরে।
এরপর পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বাড়লো । সবাই খাবারের জন্য শিকার করতো । কিন্তু এর ফলে কমে যেতে থাকলো শিকার করার মতো প্রানী। এক সময় ঠিকঠাক শিকার না পেয়ে অনেককেই অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছিল। আর এটা দেখে সেই প্রথম মানবী মা খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন।
ছোটো ছোটো শিশুরা তার কাছে বললো, ‘আমাদের খুব খিদে পেয়েছে গো! আমাদের কিছু খেতে দাও!’ কিন্তু দেওয়ার মতো কিছুই ছিল না সেই মানবীর কাছে । কিছু দিতে না পেরে উনি কেঁদে ফেললেন। তারপর কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘তোরা অপেক্ষা কর বাছারা। আমি কিছু খাবারের ব্যবস্থা করছি যাতে তোদের পেট ভরে।’
স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে ক্লোস্কুরবের ভাগ্নে বললো, ‘তুমি কাঁদছো কেন? কি করলে আমি তোমার মুখে হাসি ফোটাতে পারি সেটা বলো?’
‘একটাই উপায় আছে এই কান্না থামানোর।’
‘আমায় বলো, কি সেই উপায়?’
একটু চুপ করে থেকে মানবী বললেন, ‘একটাই উপায়। আর সেটা হলো তুমি আমাকে হত্যা করো।’
‘এ কি বলছো তুমি! এ আমি পারবো না!’
‘তোমাকে পারতেই হবে গো। তা না হলে আমার এই কান্না কোনো দিনই থামবে না ।’
কোন উত্তর না দিয়ে প্রথম পিতা  ওখান থেকে চলে গেলেন । তারপর অনেক পথ ভ্রমণ করে পৌছালেন পৃথিবীর শেষপ্রান্তে । দেখা পেলেন তার গুরু তার মামা মহান নির্দেশক ক্লোস্কুরবের। জানতে চাইলেন এখন তার কি করা উচিত।
উনি বললেন, ‘তোমার সেটাই করা উচিত যা ওই মানবী চায়।’
প্রথম পিতা ফিরে এলেন নিজের আস্তানায়। ভবিষ্যৎ কাজটির কথা ভেবে এবার উনি নিজেই কেঁদে ফেললেন। কিন্তু সেই মহান মানবী মা বললেন, আগামি কাল সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপর উঠবে তুমি আমায় হত্যা করবে। তারপর আমার দুই সন্তানকে বলবে আমার চুল আর পা ধরে চারদিকের জমির ওপর যেন ঘষটে ঘষটে নিয়ে যায় । এই করতে করতে একসময় আমার সব মাংস দেহ থেকে খসে যাবে । পড়ে থাকবে শুধু হাড়। সেই হাড়গুলো একসাথে করে মাটির তলায় পুঁতে দেবে । তারপর সেখান থেকে চলে আসবে।’
মানবী মা এবার একটু হাসলেন, বললেন, ‘সাত মাস অপেক্ষা করার পর ওইখানে যাবে । দেখতে পাবে আমার দেহ থেকে খসে যাওয়া মাংস আবার ফিরে এসেছে । সেই মাংস যা ভালোবাসা থেকে জন্ম নিয়েছে । সেই মাংস যা তোমাদের লালন পালন করবে আর শক্তি দেবে চিরটাকালের জন্য।’
প্রথম পিতা পালন করলেন তার স্ত্রীর নির্দেশ। তার ছেলেরাও সেটাই করলো যা তাদের মা বলেছিলেন। গোটা পৃথিবী ঢেকে গেল প্রথম মানবী মায়ের মাংসে । তারপর একেবারে মাঝখানে ওরা পুঁতে দিলেন হাড়গুলোকে  এবং ফিরে এলেন কাঁদতে কাঁদতে।
সাত মাস পর প্রথম পিতা, তার ছেলেরা, তাদের সন্তানরা সবাই মিলে হাঁটা দিলেন সেই স্থানের দিকে যেখানে পোঁতা হয়েছিল হাড়গুলো। যাওয়ার পথে ওরা দেখতে পেলেন রুক্ষ শুষ্ক ধরাতল আর নেই। সব জায়গায় গজিয়েছে লম্বা লম্বা সরু গাছ । আর সেই সব গাছের ফলেছে এক অদ্ভুত ফল । সোনালী হলুদ রঙের ছোট্ট ছোট্ট দানায় লম্বাটে সেই ফলের গা ভর্তি। হ্যাঁ, সে ফল হলো ভুট্টা। প্রথম মানবী মায়ের দেহের মাংস আবার ফিরে এসেছে । এই ফলের রুপ ধরে । যাতে তার সন্তানেরা খাবার পায় শক্তি পায় । ওরা খেয়ে দেখলো সেই ফল । আহা কি মিষ্টি, কি সুস্বাদু । মনে হচ্ছে যেন মাতৃ দুগ্ধের স্বাদ আবার তারা নতুন করে পাচ্ছে। ওদের মা বলে গিয়েছিলেন সব ফল যেন ওরা খেয়ে নষ্ট না করে । কিছুটা গাছেই ছেড়ে যেতে  বলেছিলেন। ওরা সেটাই করলো ।
এরপর থেক প্রতি সাত মাস অন্তর ওই ভুট্টা গাছগুলো নতুন নতুন করে জন্মালো আর এই পৃথিবীর প্রথম মানব প্রজাতির সন্তানদের খাবার অভাব থাকলো না।
যেখানে প্রথম মানবী মায়ের হাড়গুলো পোঁতা হয়েছিল সেখানে জন্ম নিয়েছিল এক আলাদা গাছ । তার বড়ো বড়ো পাতা এবং সুন্দর গন্ধ যুক্ত। এই গন্ধ আসলে তাদের মায়ের নিঃশ্বাস। আর সেই নিঃশ্বাসের তালে শোনা গেল তাদের মা বলছেন, “এই পাতাগুলোকে পোড়াও। তার যে ধোঁয়া সেটা টেনে নাও নিঃশ্বাসের সাথে  । এটা অতি পবিত্র । এই গন্ধ তোমাদের মনকে পরিষ্কার করবে । প্রাথনায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে। হৃদয়কে আনন্দ প্রদান করবে।”
প্রথম পিতা প্রথম গাছগুলির নামকরন করলেন স্কারমুনাল বা করন বা ভুট্টা। আর দ্বিতীয় গাছটির নাম দিলেন উতারমার-ওয়াইয়ে বা টোবাকো বা তামাক।
প্রথম পিতা তার সন্তানাদিকে বললেন, ‘এই কথা সব সময় মনে রাখার চেষ্টা করবে  যে এই স্কারমুনাল তোমাদের মায়ের শরীর। এর যত্ন নিয়ো। ওতে মিশে আছে ওর সব ভালোটুকু । সাথেই যত্ন নিয়ো এই উতারমার-ওয়াইয়ের । কারন এর মাধ্যমে তোমরা তোমাদের আদিমায়ের ভালোবাসার নিঃশ্বাস নিজের শরীরে গ্রহন করার সুযোগ পাবে। সব সময় খাওয়ার আগে তার উদ্দেশ্যে জানাবে তোমাদের কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা । তিনি নিজের প্রান দিয়েছিলেন বলেই আজ তোমরা বেঁচে আছো । আসলে উনি কিন্তু মারা যান নি । বেঁচে আছেন আমাদের সবার মধ্যে।’
[অনুবাদকের কথা – অনেকের হয়তো মনে হবে এই কাহিনী ধুম্রপান করাকে উৎসাহ দিতে লেখা হয়েছে বা হয়েছিল বা প্রচার করা হতো । আমার  ও যে সেটা মনে হয়নি তা নয় । মনে রাখতে হবে দেশ কাল আচারের প্রেক্ষিতে আমাদের কাছে ব্যাপারটা অন্য রকম মনে হলেও নেটিভ রেড ইন্ডিয়ান কালচার অনুসারে ধুম্রপান টা বিশেষ সম্মানের ব্যাপার। হয়তো এ কাহিনী প্রচারের সাথে কোন এক সময়ে ব্যবসায়িক স্বার্থ কিছু জড়িয়ে ছিল যা আজ আর জানা সম্ভব নয়।]

No comments:

Post a Comment