সপ্তম দিনের গল্প আবার
পার্সিয়ান টেলস থেকে “দ্য উলফ-আন্ট”
ডি এল আর লরিমার এবং এ ও
লরিমার এর ইংরেজী অনুবাদ থেকে আমার করা বঙ্গানুবাদ।
লোভ ভালো নয়
একদা একজন মানুষ শুকনো গাছের
ভাঙা ডালপালা জঙ্গল থেকে কুড়িয়ে এনে সেগুলো বিক্রি করে পরিবারের ভরনপোষন করতো । বোঝাই যাচ্ছে মানুষটা গরীব। বউ ছাড়াও ওর ছিল সাত সাতটা মেয়ে। সারা দিন প্রচুর খাটাখাটনি করেও দুবেলা পেট
পুরে খাবার যোগানোর ক্ষমতা মানুষটার ছিল না । তবে ওর বঊ আর বড় দুই মেয়ে কিছু কিছু
সেলাই ফোঁড়াই এর কাজ জানতো বলে কোনও মতে দিন চলে যেত ওদের।
এরকমই একদিন কাঠ কুড়িয়ে আনতে
আনতে সন্ধে হয়ে গেছে। ওদিকে শোনা যাছে আজানের ধ্বনি । অতএব রাস্তার একপাশে কাঠের
বোঝা নামিয়ে একপাশে নমাজ পড়ার জন্য তৈরী হলো লোকটি । এমন সময় কিছুটা দূরে একটা সাদা বাড়ীর দরজা খুলে এক বয়স্কা
মহিলা বার হয়ে এলেন । গায়ে কালো দামী বোরখা সাথেই মাথায় সাদা ওড়না জড়ানো।
লোকটাকে কিছুক্ষন দেখে নিয়ে
অপেক্ষা করলেন নমাজ শেষ হওয়ার । তারপর এগিয়ে এলেন কাছে । বললেন, ‘আরে! আবদুল্লা
তুই? আমায় চিনতে পারছিস? কতদিন পর দেখা হলোরে
তোর সাথে!’
লোকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে
থাকলো। এটা দেখে মেয়েটি মুখের আবরণ সরিয়ে বললো, ‘কিরে এবার চিনতে পারছিস?’
লোকটা চিনতে পারলো মেয়েটাকে।
ওর অনেক দিন আগে হারিয়ে যাওয়া দিদি।
‘দিদি তুই? আমার যে
কি আনন্দ হচ্ছে তোকে এতোদিন পর দেখে।‘
মেয়েটি এরপর কথায় কথায় জেনে
নিলো ভাইয়ের অবস্থা । আবদুল্লাও সহানুভূতির স্বর চিনতে পেরে নিজের দুঃখ কষ্টের কথা মন খুলে বললো সদ্য খুঁজে পাওয়া দিদিকে।
দিদি সান্তনার স্বরে বললো, ‘আর কোনও চিন্তা করতে
হবে নারে ভাই । আমার এখন অনেক সম্পত্তি । অভাব নেই কোনও। ফেলে ছড়িয়ে খেলেও সাত
পুরুষের চলে যাবে। তুই আমার নিজের ভাই। তোকে কি করে কষ্টে দিন কাটাতে ভেবো বলতে
পারিস। ভুলে যাসনি নিশ্চয় আমি ছোট ছোট বাচ্চাদের কি ভালোবাসতাম। তোরতো বললি সাত
সাতটা মেয়ে। আমার না একটাও ছেলে মেয়ে নেই। শোন এক কাজ কর কালকেই তোরা এখানে বাক্স
প্যাঁটরা গুছিয়ে চলে আয়। তকে আর খেটে খেতে হবে না । জীবনের শেষদিনগুলো একটু আনন্দে
কাটিয়ে নিই দুই ভাইবোনে।’
আরো কিছু কথাটথা বলে মহিলাটি বাড়ীতে ঢুকে গেলেন । আর আবদুল্লা
ফিরে গেল নিজের আলয়ে। সব কথা
খুলে বললো নিজের স্ত্রীকে। ‘ওগো
এবার মনে হচ্ছে ওপরওয়ালা মুখ তুলে চেয়েছেন। ছোটো বেলায় আমার যে দিদিটা হারিয়ে
গিয়েছিল আজ আবার তাকে খুঁজে পেলাম। সে এখন খুব ধনী। দিদি চাইছে আমরা যেনএই বাড়ী
ছেড়ে দিয়ে ওর বাড়ীতে গিয়ে বসবাস করি ।’
পরের দিন ওরা সবাই বাক্স
প্যাঁটরা গুছিয়ে চলে গেল আবদুল্লার ফিরে পাওয়া দিদির বাড়ী। যাওয়া মাত্র উনি
আবদুল্লাকে বেশ কিছু অর্থ দিলেন ভালো ভালো পোশাক কিনে আনার জন্য । সাথেই দারুন
দারুন সব খাবার দাবার খেতে দিলেন ওদের। দুটো বড় বড় ঘর দিলেন ওদের থাকার জন্য।
এভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েকটা দিন।
একদিন আবদুল্লার স্ত্রী বললো, ‘দ্যাখো রোজ রোজ দিদি আমাদের খাওয়াচ্ছেন এটা ভালো
দেখায় না। আজ তুমি কিছু কিনে নিয়ে এসো। আমি আজ রান্না করে ওনাকে খাওয়াই।’
আবদুল্লা স্ত্রী এর কথা মতো
আনাজপাতি কিনে আনলো। ওর স্ত্রী বানালো একটা মুখরোচক রান্না । তারপর সেটাকে একটা
পাত্রে সাজিয়ে ছোটো মেয়ের হাতে দিয়ে বললো দিয়ে আসার জন্য।
খাবারের পাত্রটি নিয়ে মেয়েটি
গেল পিসিমনির ঘরের দিকে। দেখলো দরজাটা ভেজানো আছে। খাবারের পাত্রটা এক হাতে ধরে
আস্তে করে ঠেললো দরজাটা। তারপর উঁকি মেরে যা দেখলো তাতে ওর রক্ত হিম হয়ে গেল। কোনো
মতে কাঁপতে কাঁপতে ফিরে এল নিজেদের ঘরে এবং অজ্ঞান হয়ে গেল।
জ্ঞান ফেরার পর জানালো সে কি
দেখেছে। আবুদুল্লার দিদি আসলে এক রুপ বদলকারিনী মানুষরুপী নেকড়ে। ওই সময় নেকড়েটা
একটা মানুষের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিলো।
আবদুল্লা ঘণ্টা খানেক বাদ
ফিরে এলো বাড়ীতে। ওর
স্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে জানালো সব কথা
এবং বললো, ‘ আর এখানে থেকে দরকার নেই । চলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা এই বাড়ী ছেড়ে
নিজেদের জায়গায় ফিরে যাই।’
আবদুল্লা সব শুনে বললো, ‘আরে
ধুর, ও ছোট মেয়ে কি দেখতে কি দেখেছে। কি অকৃতজ্ঞ গো তুমি। এতদিন আমার দিদির কাছে
এত আদর পেয়ে আজ তারই বদনাম করছো। ামি আর খাটতে টাটতে পারব না । আরে বাবা উল্টোটাও
তো হতে পারে। কোনও নেকড়ে ঢুকে আমার দিদিকে খেয়ে ফেললো নাতো। সেটা দেখেছো কি?’
বলেই ছুটলো দিদির ঘরের দিকে।
আবদুল্লার স্ত্রী অবশ্য আর
এক মুহূর্ত থাকলো না । সাত মেয়েকে নিয়ে ওই মুহূর্তে হাঁটা দিল নিজেদের বাড়ীর পথে।
এদিকে আবদুল্লা গিয়ে দেখলো
দিদি ঘরে বসে আছে সেজে গুজে। এটা দেখে স্বস্তি পেয়ে আবদুল্লা সব কথা খুলে বললো।
দিদি হাসলো একটু। জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পেলো আবদুল্লার বউ চলে যাচ্ছে। দ্রুত
ঘরের দরজার কাছে গিয়ে বললো, ‘ কি আর করা যাবে। আমার কিছু অর্থ বৃথাই গেল।
ভেবেছিলাম ওদের গায়ে একটু মাংস জমলে এক এক করে খাবো।’
আবদুল্লা বললো, ‘মানে! আমার
ছোটো মেয়ে যা দেখেছে তা সত্যি?’
মহিলাটি নিজের রুপ পরিবর্তন
করে বললো, ‘একদম সত্যি। তোর মতো লোভী আর বোকা মানুষেরা আছে বলেই তো আমরা খেয়ে পড়ে
বেঁচে আছি । এবার বল তোকে কোন দিক থেকে খাবো?’
দিদিকে নেকড়ের রুপে বদলে
যেতে দেখে আবদুল্লার শরীরের সব শক্তি এমনিই চলে গিয়েছিল। উত্তর দেওয়ার আগেই ওর ওপর
ঝাঁপিয়ে পড়লো রুপ বদলকারিনী নেকড়ে।
আমার গল্প ফুরালো, নটে গাছটি
মুড়ালো।
ফিরে আসবো কিছু দিনের মধ্যেই কঙ্গোর আর একটি উপভোগ্য গল্প নিয়ে।
No comments:
Post a Comment